একটু_ভালোবাসি,২৬,২৭

0
1505

#একটু_ভালোবাসি,২৬,২৭
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব-২৫

“এই এদিকটায় ফুল লাগাও। হচ্ছে না ঠিক করে লাগাও।…..
এই যে আংকেল,আপনি আসবেন কবে বলুন তো? পরশু বিয়ে আর আপনার এখনো হদিস নেই।……না কোন কথা শুনছি আপনি যে করেই হোক কাল আমাদের বাসায় থাকবেন এটাই ফাইনাল কথা।”

ইলা আজ খুব ব্যস্ত।কিছুক্ষণ আগেই ইলা তার রিলেটিভের সাথে কথা বলল।দেখতে দেখতে মেঘা আর পিহুর বিয়ের দিনও এগিয়ে এলো।ইলা এখন পুরোপুরি সুস্থ সারা বাড়ি দৌড়ে বের হলেও কেউ কিচ্ছু বলবে না। মেঘা আর পিহুর বিয়ে চৌধুরী বাড়িই হবে এই জন্য চৌধুরী বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। ইলা আর অর্ণব এতোই ব্যস্ত যে নিজেদের খোঁজ নেওয়ারও সময় হয় নি। তবে ডেকোরেশন নিয়ে একে অপরের মধ্যে হাজারবার ঝগড়া হয়ে গেছে।ইলা ফুলে লাগানোর দিকে কাজ করছে আর অর্ণব লাইটং এর দিকটা দেখছে।সীমান্ত আর বিহান যেহেতু বর মানুষ তাই তারা বিয়ের কোন কাজই করছে না যার ফলে অর্ণবের উপর চাপ পড়েছে।

“এই যে ভাইয়া এই মিষ্টি গোলাপি ফুলটা ওদিকে সাজান বেশ ভালো মানাবে।”

“একদম না।এই লাল ফুল দরজায় লাগানো হবে।”

হটাৎ অর্ণবের আবির্ভাবে ইলা একটু বিরক্ত সাথে রাগও হয়।অর্ণব ডেকোরেশনের লোককে বলে,

“ভাইয়া আপনি এই লাল ফুলটা দরজায় দিন সুন্দর লাগবে।”

ইলা অর্ণবের কথার মাঝেই বলে,”ওয়েট ওয়েট।এখানে লাল ফুল কোথায়?”

অর্ণব মিষ্টি গোলাপি ফুল ধরেই বলে, “এই যে এটা লাল ফুল।”

“এই যে মিস্টার অর্ণব চৌধুরী মাথার সাথে সাথে কি চোখটাও গেলো নাকি?এটা লাল নাহ মিষ্টি গোলাপি।”

“সে লাল হোক বাহ মিষ্টি গোলাপি সেটা দিয়ে কাজ নেই এই ফুল দরজায়ই লাগানো হবে।”

“আহহহহহা বলেছে আপনাকে এই ফুল জানলায়ই লাগানো হবে।নিজে রং চিনে না আসছে ফুলের বাহার নিয়ে।”

“ফুল লাগাতে রং চিনা লাগবে এটা আবার কেমন সাইন্স?”

ইলা বড্ড ভাব নিয়ে বলে,”দিস ইজ কল্ড নিউ সাইন্স।”

“হে যতোসব আজগুবি সাইন্স।এই যে ভাই দরজায় গিয়ে ফুলটা লাগান।”

ডেকোরেশন লোকটা যেতেই নিবে তখনই ইলা আটকায়।

“এই যে ভাইয়া, আমি কি আপনাকে যেতে বলেছি?”

ডেকোরেশনের লোকটা একটু ভয় পেয়েই বলে,”নো ম্যাম।”

“তাহলে কেনো যাচ্ছেন? এই ফুল দরজায় না জানলায় লাগানো হবে।”

অর্ণব ইলার কথা শুনে বলে,”কিই আমি বলেছি এই ফুল দরজায় লাগানো হবে।সো এটা দরজায়ই লাগানো হবে।”

“আমি বলেছি জানলায় লাগানো হবে সো জানলায়ই লাগানো হবে।”

“দরজায় বলছি।”

“জানলায় বলেছি।”

“দরজা।”

“জানলা”

“তুমি আমার চেয়ে বেশি বুঝো?”

ইলা পাল্টা ঝাড়ি মেরে বলে,”আপনি আমার চেয়ে বেশি বুঝেন?”

অর্ণব একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,”হে বুঝি।”

“তো আমি দশহাত বেশি বুঝি।আর আপনার এখানে কি আপনি না লাইটিং এর দিকে তো এখানে কি?যান লাইটিং এর কাজে যান।”

“যাবো তবে এই ফুল নিয়েই।”

এই বলেই অর্ণব ডেকোরেশন লোকটার কাছে ফুলটা নিয়েই দৌড় দিলো।এদিকে ইলাও রেগে ফুলের জন্য অর্ণবের পিছে দৌড়াতে লাগলো।এক পর্যায়ে দৌড়াতে গিয়ে অর্ণব ভুলবশত ফুলটা সুইমিং পুলে ফেলে দেয়।ইলা তো তা দেখে রেগে বোম হয়ে যায়।

“অর্ণব্বব্বব্বব্বব্বব্বব্বব।”

ইলার চিৎকারে অর্ণব একেবারে হাওয়া হয়ে যায়।ডেকোরেশনের লোকটা ভয়ে ভয়ে বলে,”ম্যাম আমাদের কাছে সেম ফুল আরো আছে?আমরা কি সেগুলো জানলা আর দরজায় লাগাবো?”

ইলা রেগেমেগে বলে,”দরকার নেই কোন ফুলের আপনাদের যেভাবে ভালো লাগে সেভাবে সাজান।”

বলেই ইলা রাগ হয়ে চলে যায়।এদিকে ডেকোরেশনের লোকটা অবাক হয়ে বলে,

“যাহ বাবা এতোক্ষণ যেই ফুলের জন্য এতো ঝগড়া সেই ফুল শেষ পর্যন্ত কেউই নিলো না।আজব জুটি! ”

_________________________

আজ মেঘা আর সীমান্ত, পিহু আর বিহানের গায়ে হলুদ।মেয়েরা সবাই হলুদ শাড়ি,খোঁপা চুল আর চুলে গাজরা দিয়ে সেজেছে আর ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি।

অর্ণবকে আজ হলুদ পাঞ্জাবিতে যথেষ্ট সুন্দর লাগছে।মনে হচ্ছে হলুদ রং টা অর্ণবের জন্যই সৃষ্টি। অর্ণব গিয়েই সীমান্ত আর বিহানের সাথে দেখা করলো।সীমান্ত আর বিহানকেও আজ অনেক সুন্দর লাগছে।অবশ্য সুন্দর লাগারই কথা বর মানুষ বলে কথা।অর্ণবকে দেখে সীমান্ত বলে উঠে,

“আরে ব্রো আজ কার গায়ে হলুদ তোর নাকি আমাদের?বুঝাই তো যাচ্ছে না।”

সীমান্তের সাথে তাল মিলিয়ে বিহানও বলে,”রাইট ব্রো।অর্ণব তোকে আজ যা লাগছে এখানের সব মেয়ে তো আজ তোকে দেখে জাস্ট ফিদা হয়ে যাচ্ছে।”

অর্ণব মুচকি হেসে বলে,”সব মেয়ে না জাস্ট তোর ভাবি ফিদা হলেই যথেষ্ট।”

সীমান্ত বলে,”বাব্বাহ আমাদের অর্ণব এখন বেশ লয়াল হয়ে গেছে।”

বিহানও তাল মিলিয়ে বলে,”হুম তাই তো দেখছি।”

প্রতিউত্তরে অর্ণব কিছুই বলে না।হটাৎ অর্ণব নুপুরের আওয়াজ শুনতে পায়।নুপুরের আওয়াজ অনুসরণ করে সিড়ির দিকে তাকালেই তার চোখে পড়ে ধারালো পরি।যে অর্ণবের নজর কেড়ে নিয়েছে।

ইলা শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে নিচে নামতেই অর্ণবকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখতে পায়।অর্ণবকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইলা একটু লজ্জা পায় সাথে একটু ইতস্ত হয়। অর্ণব ইলার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই নিজের অজান্তেই ডান হাতটা বাম বুকে নিয়ে যায়।

ইলাও অর্ণবের এমন অবস্থা দেখে মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আছে।যেই ভাবা সেই কাজ ইলা অর্ণবকে চোখ টিপ মারে।অর্ণবকে আর কে আটকায় বুকে হাত দিয়ে পিছনে পড়ে যেতে নিলেই সীমান্ত আর বিহান ধরে।

অর্ণবের পড়ে যাওয়া দেখে পিহু,মেঘা আর ইলা একসাথে হেসে দেয়। বিহান অর্ণবকে সোজা করতে করতে বলে,

“ব্রো সাবধান।তুই তো হার্ট এট্যাক করবি।”

অর্ণব ইলার হাসি মুখ দেখেই বলে,”হার্ট এট্যাক করবো না করে ফেলেছি।”

এরপরে বর আর কনে পক্ষকে হলুদ দেওয়া হয়।অর্ণব ঠিক করেই রেখেছে আগে ইলাকে কেউ হলুদ দেওয়ার আগেই সে ইলাকে হলুদ দিবে তাই ইলাকে ছাদে ডেকে পাঠায়।

অর্ণবের মেসেজ দেখে ইলা যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও ইলা ছাদে যায়।ছাদে গিয়ে ইলা কাউকেই দেখতে পায় না।পিছনে ফিরতেই অর্ণবকে দেখে ইলা একটু রেগেই বলে,

“আমাকে এতো জরুরি তলব দেওয়ার কারণ?”

“আজ আমার দুই বন্ধুর গায়ে হলুদ আর আমার গায়ে হলুদ হবে না তা কি করে হয়?তাই আমি তোমার জন্য হাতে করে কিছু হলুদ নিয়ে এসেছি।”

“কিইইই দেখুন আমি হলুদ দিবো না।”

“দিতে তো তোমাকে হবেই ইলা মনি।”

বলেই অর্ণব ইলাকে ধরতে গেলে ইলা অর্ণবের হাতের বাধন থেকে পালিয়ে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে কিন্তু তার আগেই অর্ণব ইলাকে ধরে ইলাকে খুব কাছে নিয়ে আসে।ইলা চোখ মুখ খিঁচে বলে,

“দেখুন অর্ণব আমাকে হলুদ দিতে এলে কিন্তু ফল ভালো হবে না।”

“ওহ আচ্ছা তাই বুঝি?”

“হুম।”

অর্ণব ইলার দিকে হলুদের হাত বাড়াতে গেলেই ইলা সুযোগ বুঝে অর্ণবের দিকেই ওর হাত জোরে ওর গালে মারে।যার ফলে অর্ণব নিজেকেই নিজে হলুদের সাথে থাপ্পড় মারে। ইলা অর্ণবের হলুদমাখা গাল দেখে হাসতে হাসতে বসে পড়ে।ইলা হাসতে হাসতেই বলে,

“হা হা হা আমি বলেছিলামই আমাকে লাগাতে এসো না।শুনো নি এখন মজা ভুগো। হলুদের সাথে থাপ্পড় ফ্রি মানে বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি হা হা হা।”

ইলার হাসি দেখে অর্ণবের বেশ রাগ উঠে।

“ওরে খুব হাসি তাই না।দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।”

বলেই অর্ণব ইলার কাছে গিয়ে যে গালে হলুদ লেগেছে সেই গাল দিয়ে ইলার গাল ঘষতে লাগলো।আকস্মিক অর্ণবের কাছে চলে আসায় ইলা পুরো ফ্রিজ হয়ে যায়।অর্ণব ইলার অপর গালে কিস করে। আবেশের বশে ইলাও চোখ বন্ধ করে ফেলে।অর্ণব ইলার সামনে ইলা মুখ তুলে দেখে ইলার লজ্জায় টুইটুম্বর হয়ে গেছে।অর্ণব ইলার লজ্জারত মুখ দেখে বলে,

“ভালোবাসো আমায়?”

অর্ণবের কথায় ইলা চমকে যায়।এতোক্ষণ অর্ণবের কাজ কর্মে ইলা একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছিলো এখন সেই ঘোর থেকে বের হয়।ইলা কোন প্রকার উত্তর না দিয়েই দৌড়ে ছাদ থেকে চলে যায়।অর্ণব ইলার যাওয়ার পানে মুচকি হেসে বলে,

“আমি তোমাকে দিয়ে বলিয়েই ছাড়বো ইউ লাভ মি।বাট ইলারাণী তুমি কিন্ত বড্ড লাজুক যা আমার মনকে ছুইয়ে উতাল পাথাল করে দেয়।তোমাকে আমার প্রতি আসক্ত করে দেয়।তোমাকে আমি চাই খুব করে হলেও তোমাকেই চাই।”

#চলবে

#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ২৬ (মেহেদী অনুষ্ঠান)

চারিদিকে হইচই।হইচই হবে না কেনো?বিয়ের উৎসব লেগেছে বলে কথা।চারিদিকে রংবেরঙের লাইটের আলোয় ঝিকিমিকি করছে।

আজ সন্ধ্যায় মেহেদী অনুষ্ঠান। সবাই সেই জন্যই সাজাগোজ করছে।সীমান্ত নীল,বিহান মেরুন আর অর্ণব কালো কালারের পাঞ্জাবি পড়েছে।সবাই নিচে বসেই অপেক্ষা করছে কনেদের জন্য।

তখনই সব লাইট বন্ধ হয়ে গেলো,ফোকাস পড়লো সিড়ির দিকে।ইলা,পিহু আর মেঘাকে আজ অপরুপ সুন্দর লাগছে।কনেদের তো এমনিই সুন্দর লাগবে কিন্তু ইলা কনেদের সাথে আসে বলে ওকেও কনেই মনে হচ্ছে।

ইলা কফি কালারের সিম্পল লেহেঙ্গা পড়েছে, খোলা চুল,গায়ে কিছু সিম্পল ওর্ণামেন্ট আর সিম্পল সাজ। এতেই ইলাকে কনেদের থেকে কম লাগছে না।পিহু লাল রঙের লেহেঙ্গা আর মেঘা নীল রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে।মেঘা খোঁপা করেছে পিহুর খোলা চুলে ফুল দেওয়া, গায়ে কিছু ওর্ণামেন্ট।

তিনজন একসাথে সিড়ি দিয়ে নামছে। বররা অপরুপ চোখে তাদের প্রিয়তমাদের রুপ দেখতে ব্যস্ত।দেখতে দেখতে ইলা,পিহু আর মেঘা তাদের পার্টনারদের পাশে এসে দাঁড়ায়।

বিহান পিহু কানে কানে বলে,

“তোমারে দেখিয়া পরাণও ভরিয়া আসমান জমিন ছাড়িয়া।”

বিহানের গান শুনে পিহু একটু লজ্জা পায়।সীমান্ত মেঘাকে কিছু বলার আগেই মেঘা বলে,

“ওয়াও আমার বরটাকে তো আজ জোস লাগছে।হায় হায় কারোর নজর না লেগে যায়।”

বলেই মেঘা চোখের পাশ থেকে কাজল নিয়ে সীমান্তের ঘাড়ে লাগিয়ে নেয়।সীমান্ত মেঘার কথা শুনে হাসি পেলেও সেটা আটকিয়ে বলে,

“কমপ্লিমেন্টটা আমার করা দরকার ছিলো?”

“তো কি আমিই করে দিলাম।আই নো আ’ম লুকিং সো গর্জিয়াস এন্ড বিউটিফুল। তোমার তাকানিতেই আমি বুঝে গেছি আমাকে কতটা কিউট লাগছে।”

“একদম পুরো নেশা ধরিয়ে দিয়েছো।ইচ্ছে করছে সারাজীবন এভাবেই চেয়ে থাকি।”

“চেয়ে থাকাথাকি বিয়ের পরেও করতে পারবেন মিস্টার।”

বলেই দু’জনে মুচকি হাসি দেয়।

ইলা অনেকক্ষণ ধরে অর্ণবের পাশে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু অর্ণব ইলার কোন প্রশংসাই করছে না।

ইলা অর্ণবকে কয়েকবার খোঁচাও দিয়েছে কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া পায় নি শেষে বাধ্য হয়ে অর্ণবকে জিজ্ঞেস করে,

“এই যে মিস্টার লেজকাটা হনুমান আমাকে কেমন লাগছে?”

অর্ণব ইলার দিকে না তাকিয়েই বলে,”মিস ঝগড়ুটে কে যেমন লাগে তেমনই লাগছে।”

অর্ণবের এমন কমপ্লিমেন্ট শুনে ইলা বোম হয়ে কিছুদূরে যেতেই মাইকের আওয়াজ শুনতে পায়।অর্ণব মাইকের সামনে গিয়ে বলে,

“হ্যালো লেডিস এন্ড জেন্টালমেন্ট।আপনারা সবাই কেমন আছেন?নিশ্চয়ই ভালো আছেন।আমার স্ত্রী মিসেস ইলা চৌধুরী সুন্দর করে সেজে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে তাকে কেমন লাগছে?অবশ্য এটা প্রত্যেকটা স্ত্রীই তার স্বামীর কাছে জানতে চায়।আমার বেলাও ব্যতিক্রম নয়।এখন আমি কোনভাবেই প্রকাশ করতে পারছি না তাকে কেমন লাগছে? আমাকে কি আপনারা উপায় বলবেন তাকে কেমন লাগছে সেটা প্রকাশ করার জন্য?”

ইলা অর্ণবের এমন কথায় হা হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।ইলা মনে মনে ভাবতে থাকে,

“অর্ণব কি পাগল হয়ে গেলো নাকি?কি’সব বলছে এসব?”

সীমান্ত আর বিহান খুব উৎসাহের সাথে একসাথে বলে,

“বউয়ের জন্য গান গেয়ে প্রকাশ করো।”

“ওকে যথা আজ্ঞা।”

অর্ণব মাইকটা হ্যান্ডেল থেকে ছুটিয়ে গান গাওয়া শুরু করলো সাথে নাঁচতেও লাগলো।অর্ণবের সাথে সাথে বিহান আর সীমান্তও তাল মিলাতে লাগলো।

লেগে গেছে আগুন কেন জানি মন পাড়ায়
হঠাৎ চলে এলি তুই এই কল্পনায়
তরী কিউটনেস দেখে এই মন হারায় (অর্ণব মাইকটা হাতে নিয়ে ইলার চারপাশ ঘুরতে ঘুরতে)

লেগে গেছে আগুন কেন জানি মন পাড়ায়
হঠাৎ চলে এলি তুই এই কল্পনায় (সীমান্ত মেঘার হাত নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে)
তরী কিউটনেস দেখে এই মন হারায়
তরি হটনেস আমার এ মন পড়ে (বিহান পিহুকে দেখিয়ে নিজের বুকে হাত রেখে বোঝায়)

হেটে হেটে খুজি তোকে মনেতে এদিক সেদিক
দেখি চোখে তোকে তাকায় আমি যেদিক
পথ ভুলেছি আমি যাচ্ছি কোথায় চলে
গোলে যাই নিমিষেই তুই কিউট স্মাইল দিলে

হেটে হেটে খুজি তোকে মনেতে এদিক সেদিক(ইলা চলে যেতে নিলে অর্ণব পথ আটকায়)
দেখি চোখে তোকে তাকায় আমি যেদিক (বিহান পিহুকে নিয়ে কাপল স্টেপ দিয়ে বলে)
পথ ভুলেছি আমি যাচ্ছি কোথায় চলে
গোলে যাই নিমিষেই তুই কিউট স্মাইল দিলে(সীমান্ত মেঘাকে নিয়ে নাঁচতে নাঁচতে বলে)

আমি তোর ব্ল্যাক কফি তুই আমার সুগার
আমি তোর কোকা কোলা তুই আমার বার্গার
তোর ওই হটনেস যে জলে আমি ছারখার
পারছিনা আর বেবি তোকে খুব দরকার।(অর্ণব, বিহান আর সীমান্ত একসাথে নাঁচের স্টেপ ফেলে তাদের প্রিয়তমাদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে। কিন্তু ৩ জনই হাত না ধরে পিছনে ফিরে যায়।)

চলে আইনা ফেলে সব বায়না
আমি দাড়িয়ে ‍আছি রাস্তায় (বিহান পিহুর পথ আটকিয়ে বলে)
কতো মেয়ে এলো গেল পায়নি তো কেউ মন দিয়েছি তোকে সস্তায়(সীমান্ত মেঘার হাত ধরে বলে)

চলে আইনা ফেলে সব বায়না
আমি দাড়িয়ে ‍আছি রাস্তায়
কতো মেয়ে এলো গেল পায়নি তো কেউ মন দিয়েছি তোকে সস্তায়(অর্ণব ইলার কাধে হাত দিয়ে পিছনে ফিরিয়ে এটিটিউড নিয়ে বলতে লাগলো)

হেটে হেটে খুজিঁ তোকে মনে তে এদিক সেদিক
দেখি চোখে তোকে তাকায় আমি যেদিক
পথ ভুলেছি আমি যাচ্ছি কথায় চলে
গোলে যায় নিমিষেয় তুই কিউট স্মাইল দিলে (অর্ণব ইলার দিকে তাকিয়ে বলে)

আমি তোর ব্ল্যাক কফি তুই আমার ‍সুগার (অর্ণব ইলার দিকে ইশারা করে)
আমি তোর কোকা কোলা তুই আমার বার্গার (সীমান্ত মেঘাকে ইশারা করে)
তোর হটনেস এ জ্বলে আমি ছারখার
পারছিনা ‍আর বেবি তোকে খুব দরকার (বিহান পিহুকে নিয়ে কাপল ডান্স করতে করতে বলে)

আমি তোর ব্ল্যাক কফি তুই আমার ‍সুগার
আমি তোর কোকা কোলা তুই আমার বার্গার
তোর হটনেস এ জ্বলে আমি ছারখার
পারছিনা ‍আর বেবি তোকে খুব দরকার (অর্ণব ইলাকে নিয়ে ঘুরে হাটু গেড়ে বসে দু’হাত বাড়িয়ে বলে)

সবাই কাপল ডান্স দেখে হাত তালি দেয়। পরিবেশটা উৎসবমুখর হয়ে উঠে। সবার হাত তালিতে ইলার হুস ফিরে লজ্জায় চলে যেতে নেয়।এমন সময় আবেশ আর বৃষ্টির আগমন ঘটে।

আবেশকে দেখে অর্ণব বিরক্ত হলেও বৃষ্টিকে দেখে সবাই বিরক্ত হয়।বৃষ্টি প্রথমে এসেই ইলার কাছে ক্ষমা চায়।

“ইলা আমি অত্যন্ত দুঃখিত।সেদিন তোমাকে আমার ওভাবে কথা বলা উচিত হয় নি।আর অর্ণব আমাকে কোনদিন বলেও নি যে তুমি ওর স্ত্রী। তাহলে আমি কোনদিনও তোমার সাথে এমন ব্যবহার করতাম না আর নাই বাহ নিজের মনের কথা এক্সপোস করতাম।”

ইলা বিরক্তি নিয়েই বলে,”ওহহহহ তাহলে নিশ্চয়ই আপনি আমাকে অর্ণবের বউ হওয়ার সুবাদে কিছু বলতেন না।কিন্তু এই সেম কাজ যদি অন্য কেউ করতো তাহলে নিশ্চয়ই সেম শাস্তি দিতেন।”

বৃষ্টি এবার চুপ হয়ে যায়।ইলা মুচকি হেসে বলে,”এনিওয়ে এটা একটা বিয়ে বাড়ি। আর আমি।সিনক্রিয়েট করতেও চাই না।আমি তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি।”

কথাটা শোনা মাত্রই বৃষ্টি ইলাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”থ্যাংক ইউ কিউটি। এখন থেকে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড।”

জবাবে ইলা কিছু বলে না। পিহু মেঘার কানে কানে বলে,

“ওই শাকচুন্নিকে তো ইলা ক্ষমা করে দিলো তাই বলে কি আমরাও ক্ষমা করে দিবো?”

মেঘা অবাক হয়ে বলে,”মানে?”

“সামথিং সামথিং।”

বলেই মেঘাকে হাতের গ্লাস দেখালো।মেঘাও এবার পিহুর সমস্ত প্ল্যান বুঝে গেলো।বৃষ্টি ইলাকে ছাড়িয়ে যেই খুশিতে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরার জন্য এগিয়ে যাবে ঠিক তখনই মেঝে তে থাকা পানিতে স্লিপ কেটে নিচে বসে পড়ল।

অর্ণব কিছু বুঝে ওঠার আগে কাহিনি হয়ে গেলো।চারিদিকে হাসির রোল পড়ে গেল।পিহু বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“কি গো নাকানিচুাবানী বুড়ি,সব জায়গায়ই কি তোমাকে এভাবে নাকানিচুবানি খেতে হয় নাকি?হা হা হা।”

ইলার কিছুটা সন্দেহ নিয়ে মেঘা আর পিহুর দিকে তাকালে পিহু ইলাকে চোখ টিপ মারে।এতে ইলার কাছে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যায় আর মুখে ফুটে উঠে মিষ্টি হাসি।বৃষ্টি কাঁদোকাঁদো ফেস করে বলে,

“অর্ণব প্লিজ হেল্প মি?”

অর্ণব হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিকে কিছুটা উঠাতেই ইলার অগ্নিদৃষ্টির স্বীকার হয়।সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিলে বৃষ্টি পুনরায় মেঝেতে আছাড় খায়।আবার চারিদিকে হাসির রোল পড়ে।অর্ণবের আর সাহস জোগালো না বৃষ্টিকে উঠানোর।শেষে ইলাই গিয়ে বৃষ্টিকে উঠিয়ে কানে কানে বলে,

“দেখেছো তো নাকানিচুবানি খেতে কেমন লাগে?আর ভুল মানুষকে নাকানিচুাবানী খাওয়ার ফল কি?নেক্সট টাইম আমার আর অর্ণবের মাঝে আসবে না।ফল ভালো হবে না।”

বৃষ্টিও নিজের ভুল বুঝতে পেরে আর পার্টিতে অপমানিত হয়ে চলে যায়।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here