#তোমাতেই_আমি_মগ্ন ?
#পর্ব_০২,০৩
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
০২
আবির কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অন্নার বাবার পাশে গিয়ে বসলো।
আচ্ছা আঙ্কেল অন্নার কি কিছু হয়েছে?(আবির)
কই না তো।আমার জানা মতে তো কিছু হয়নি।(অন্নার বাবা মঈন সাহেব)
না আপসেট দেখালো মনে হয়!(আবির)
ও যা দুষ্টামি করে।মনে হয় ভার্সিটিতে পাগলামি করে এসেছে এতোক্ষণ তাই ক্লান্ত।একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।(অন্নার বাবা)
আবির অন্নার বাবার কথা শুনে মুচকি হাসি দিল।
?
অন্না রুমে এসে ব্যাগটা বিছানায় ফেলে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে শুরু করলো।অন্না নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারছে না।কি করবে সে!
দরজায় দাঁড়িয়ে মেয়ের নাম ধরে ডাকছেন অনেমা বেগম।তার বুকের মাঝে অজানা ভয় কাজ করছে অন্নাকে নিয়ে।যেই মেয়ে ভার্সিটি থেকে দৌড়ে এসে রান্নাঘরে যায় মাকে দেখতে সেই মেয়ে নাকি রুমে দরজা লাগিয়ে বসে আছে।
অন্না মা, দরজাটা খোল।তোকে সেই কালকে দিয়ে দেখি না।তুই তো জানিস তোকে না দেখে থাকতে আমার কতোটা কষ্ট হয়!(অন্নার মা)
অন্না তার মায়ের গলা পেয়ে উঠে বসলো।ওড়না দিয়ে তাড়াতাড়ি নিজের চোখ মুছে ফেলে।তবে তার শ্বাস খুব দ্রুত গতিতে চলছে।একভাবে কান্না করার জন্য এমনটা হচ্ছে।অন্না জোরে জোরে শ্বাস ফেলে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।মুখে হাসির রেখা টেনে দরজা খুলে দিলো।
অনেমা বেগম অন্নার মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার মনে এক ধরনের খটকা লাগছে।কারণ অন্নাকে দেখে ভালো করেই বুঝতে পারছে অন্না এতোক্ষণ কেঁদেছে।তবে কান্নার কারণ কি সেটা সে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে নাহ্।
অন্না তার মায়ের সামনে থেকে রুমে চলে আসলো।অনেমা বেগম মেয়ের পিছনে পিছনে রুমে ঢুকলেন।
অন্না কি হয়েছে তোর?(অন্নার মা)
অন্না স্বাভাবিক ভাবে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
কি আবার হবে আম্মু?আমার বড্ড খিদে পেয়েছো।খেতে চলো।(অন্না)
অন্না আমাকে মিথ্যা বলিস না।তোর চোখ ফুলে গেছে।তার কারণ হলো তুই এতোক্ষণ কেঁদেছিস।তবে কেন সেটা আমি জানতে চাই।(অন্নার মা)
অন্না কিছুক্ষণ চুপ থেকে হাসি দিয়ে বললো,
আরে আম্মু তুমি-ও না কি যে বলো!আমি কাঁদবো কিসের জন্য?আসলে কি হয়েছে জানো আমার প্রচুর এলার্জি হচ্ছে কারণ আমি দিশাদের বাড়িতে ইলিশ মাছ খেয়েছিলাম।তুমি তো জানোই ইলিশ খেলে আমার কেমন এলার্জি হয়।(অন্না)
অন্না যেটা নিষেধ সেটা কেন খেতে গেলি?আমার কোন কথাই তো তুই শুনবি নাহ্।আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।আবির আর তোর বাবা বসে আছে তোর জন্য।(অন্নার মা)
আবির বাবু কেন এসেছে আম্মু?(অন্না)
তুই তো জানিস সবটা।(অন্নার মা)
আম্মু উনাকে এগুলো বাদ দিতে বলো।আমি আগেও রাজি ছিলাম না আর এখন……..(অন্না)
অন্না এটুকু বলে থেমে গেল।তার চোখ ছলছল করছে।তবে সে নিজেকে সামলে রাখার অযথা চেষ্টা করছে।
অন্না তাড়াতাড়ি তার মায়ের সামনে থেকে কার্বাডের সামনে চলে গেল কাপড় বের করতে।অনেমা বেগম তার মেয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।তার মন বলছে অন্নার সাথে কিছু ঘটেছে।আর অন্না সেটা তার থেকে লুকানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
অনেমা বেগম অন্নার কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখলো।
অন্না তুই যে আমার থেকে কিছু লুকানোর চেষ্টা করছিস আমি তা বুঝতে পারছি।তবে হ্যাঁ মায়ের কাছে থেকে কিছু লুকানো-টা ঠিক নয়।(অন্নার মা)
অনেমা বেগম মৃদু হাসি দিয়ে অন্নার মুখ থেকে চলে গেলেন।অনেমা বেগম যেতেই অন্নার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
আম্মু তোমাকে আমি সত্যিটা বলতে পারলাম নাহ্।(অন্না)
অন্না ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে আসলো।আবির অপলক দৃষ্টিতে অন্নার দিকে তাকিয়ে আছে।তাকিয়ে থাকাটা স্বাভাবিক।অন্নাকে অপূর্ব লাগছে লাল-কালো থ্রি-পিসে।তবে অন্নার মুখটা দেখে আবিরের মনে বিভিন্ন প্রশ্নের দানা বাঁধছে।অন্নার মুখটা এমন মলিন কেন?সে কেন-ই বা এমন আনমনে হাঁটছে?যেই মেয়ে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে সে এমন চুপ হয়ে আছে কেন?
অন্না এসে তার মায়ের পাশের চেয়ারে বসলো।আবির অন্নার সোজাসুজি বসে আছে।অন্না একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো।
অন্না খাবার খাচ্ছে না শুধু নাড়ছে।
তুই খাচ্ছিস না কেন পাখি মা?(অন্নার বাবা অন্নাকে আদর করে ডাকে)।
আমি-ও অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছি।অন্না তুমি খাচ্ছো না কেন?এনিথিং ইজ রং?(আবির)
না সব ঠিক আছে।আর বাবা আমি খাচ্ছি তো।আসলে শরীরটা ভালো লাগছে না।তাই খেতে মন চাচ্ছে না।(অন্না)
আমি খাইয়ে দিলে ঠিকই খেতে ইচ্ছে করবে।(অন্নার মা)
অন্নার মা ভাত মাখিয়ে অন্নার মুখের সামনে ধরলো।অন্না মুচকি হাসি দিয়ে খেয়ে নিলো।আবির এক দৃষ্টিতে মা মেয়ের দৃশ্য দেখছে।আবিরের চোখের কোণে পানি জমে আসলো।অনেমা বেগম আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখেন আবিরের চোখে পানি।
আবির তুমি কাঁদছো কেন বাবা?(অন্নার মা)
আবির চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
আসলে মায়ের কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল।মা তো আমাদের মাঝে নেই।নাহলে হয়তো মা-ও আমাকে এভাবে খাইয়ে দিতো।(আবির)
অনেমা বেগম মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
আমি-ও তোমার মা তাই-না!হা করো আমি তোমায় খাইয়ে দিবো।(অন্নার মা)
আন্টি তার কিন্তু কোন দরকার ছিল না।(আবির)
তোমাকে বললাম না হা করতে।(অন্নার মা)
আবির আর কথা না বাড়িয়ে হা করলো।অনেমা বেগম আবিরকে খাইয়ে দিলো।
–
–
–
আচ্ছা রাফসান কালকের মেয়েটাকে কেমন লেগেছিল তোমার?(ফাহাদ)
ভালোই তো স্যার।মেয়েটা কিন্তু অনেক সুন্দর ছিল।(রাফসান)
রাফসানের কথায় ফাহাদ বাঁকা হাসি দিল।
ঠিকই বলেছো তুমি।আমি তো ও-কে ভুলতেই পারছি না।(ফাহাদ)
স্যার আজকে কাউকে নিয়ে আসবেন না?(রাফসান)
না মুড নেই।(ফাহাদ)
ফাহাদ হুইস্কির বোতল হাতে নিয়ে টলতে টলতে তার রুমের দিকে চলে গেল।রাফসান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
__?__
অন্না তার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।তার মুখে এক চিলতে পরিমাণ হাসি নেই।এই জগতের সবকিছু তার কাছে বিরক্ত লাগছে।তার মন চাইছে এই ব্যস্ত শহরের কোন এক অজানা পথে হারিয়ে যেতে।যেখানে গেলে তার জীবনের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
হালকা কাশির শব্দে অন্নার ধ্যান কাটলো।পিছনে ফিরে দেখে আবির উজ্জ্বল মুখে তার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।
আপনি এখানে?(অন্না)
তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।(আবির)
ভিতরে আসুন।(অন্না)
আবির রুমের ভিতরে এসে অন্নার সামনে দাঁড়ালো।
আপনি কি সেই আগের কথাগুলো বলতে এসেছেন?এই যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন?আমাকে বিয়ে করতে চান?এম আই রাইট?(অন্না)
তোমার জ্ঞানের প্রশংসা করতে হয় দেখছি।তবে কি জানো আমি আজ এই ধরনের কিছুই বলতে আসিনি।(আবির)
তাহলে কেন এসেছে এখানে আবির বাবু?(অন্না)
একটা জিনিস জানো তোমার মুখে ‘আবির বাবু’ ডাকটা শুনতে বড্ড ভালো লাগে।(আবির)
আমি যেটা জানতে চেয়েছি সেটার উত্তর দিন।(অন্না)
আবির হাসি দিয়ে বললো,
দুই বছর আগে তোমাকে বিরক্ত করা ছেড়ে দিয়ে কানাডায় চলে গিয়েছিলাম জেনো তুমি শান্তিতে থাকো।আসলে তোমাকে না আমি অনেক ভালোবাসতাম।বাসতাম বললে ভুল হবে এখনো বাসি।কিন্তু কি জানো আমার ভালোবাসা তোমার কাছে নিতান্তই মজা!কারণ তোমার মতে বড়লোকের ছেলেরা ভালোবাসতে জানে না।তারা নাকি মেয়েদের সাথে নোংরামি,বদমাশী করে!সেই জন্য তোমাকে যতবার বলেছি ‘ভালোবাসি’ তুমি ফিরিয়ে দিয়েছো।তাই এখন ডিসিশন নিয়েছি তোমাকে আর এই ভাঙা রেকর্ড বলে জ্বালাবো না।আমার বিশ্বাস তুমি নিজে একদিন আমাকে বলবে,’আমি আপনাকে ভালোবাসি আবির বাবু’।আমি সেই অপেক্ষায় না হয় থাকবো অনুলতা।(আবির)
‘অনুলতা’ ডাক শুনলে অন্নার বুকটা কেঁপে উঠে।আবিরের মুখে অনুলতা ডাক শুনলে অন্নার মাঝে এক অজানা ভালো লাগা কাজ করে।কারণ আবির অনেক ভালোবাসা জড়িত কণ্ঠে ‘অনুলতা’ বলে ডাকে।
আবির অনেক আগে থেকেই অন্নাকে অনুলতা বলে ডাকে।তবে এর কারণ এখনো অজানা অন্নার কাছে।
অন্না নিজেকে সামলে চোয়াল শক্ত করে বলতে শুরু করলো,
আমি যেটা ভাবতাম সেটাই সত্য।আর আমি তার প্রমাণ-ও পেয়েছি।আর আপনি যেটার অপেক্ষায় থাকবেন বললেন সেটা কখনোই পূরণ হবে না।সব ইচ্ছা পূরণ হয় না আবির বাবু।আর এখন আমি এমন জায়গায় আছি আমার সব ইচ্ছাগুলো মরে গেছে।আর আমার নিজের-ও ইচ্ছে করছে না আর বেঁ……..(অন্না)
অন্না আর কিছু বলার আগে আবির তার মুখ চেপে ধরলো।
অন্না কোন পরিস্থিতিতে মরে যাওয়ার কথা বলবে না।এটা বদঅভ্যেস।তোমার কি হয়েছে সেটা আমি জানি না।তবে আমার মন বলছে তোমার সাথে কিছু ঘটেছে।কারণ একটা মেয়ে এভাবে পাল্টে যেতে পারে নাহ্।(আবির)
আবির অন্নার মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেললো।অন্না এক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
মুখ ওভাবে ধরার জন্য সরি।আল্লাহ হাফেজ ভালো থাকবে।আমি এখন চলে যাচ্ছি।তবে হ্যাঁ আবার চলে আসবো কিন্তু!(আবির)
আবির মুচকি হাসি দিয়ে অন্নার রুমে থেকে বেরিয়ে চলে গেল।অন্না কিছুক্ষণ আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
এমন অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো?আমি আর সহ্য করতে পাচ্ছি না।নাহ্!অন্না তুই এভাবে ভেঙে পড়তে পারিস না।তোর বেঁচে থাকতে হবে আর ওই নরপিশাচকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।তবে কিভাবে?(অন্না)
—-
ব্রিজের সামনে গাড়ির উপরে শুয়ে আছে আবির।চারিদিকে অন্ধকার জানান দিচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।তবে তাতে আবিরের কোন হেলদোল নেই।সে একভাবে আকাশে পানে চেয়ে আছে।বুকের ভিতরে অজানা ব্যাথা তাকে কুঁকড়ে খাচ্ছে।অন্না কি কখনোই তার হবে না?তার কি দোষ সে একজন বড়লোকের ছেলে?
প্লিজ আমাকে এতোটা কষ্ট দিও নাহ্ অনুলতা।আমি আর সহ্য করতে পারছি নাহ্।(আবির চিৎকার করে বললো)
//
অন্না চোখ খুলতে দেখলো অনেমা বেগম তার পাশে বসে আছে।
আম্মু তুমি কখন এসেছো?(অন্না)
এই তো কেবলই।তোর জন্য কফি নিয়ে এসেছিলাম।দেখলাম তুই ঘুমাচ্ছিস তাই আর ডাকিনি।(অন্নার মা)
হ্যাঁ বোধহয় চোখটা লেগে গেছিলো।(অন্না)
অনেমা বেগম খেয়াল করলো অন্নার গলার কিছু কিছু জায়গায় নখের আঁচড়ের দাগ।যা দেখে অনেমা বেগম কিছুটা অবাক হলেন।অন্নার গলায় এমন দাগ কেন?
অন্না বিছানা থেকে উঠতে যাবে অনেমা বেগম তার হাত টেনে ধরলো।
অন্না আমাকে সত্যিটা বল।কি হয়েছে তোর?তোর গলায় নখের আঁচড়ের দাগ কেন?(অন্নার মা)
অনেমা বেগমের কথায় অন্না কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।নিজেকে সামলে বললো,
আরে আম্মু……(অন্না)
অন্নাকে থামিয়ে অনেমা বেগম বললেন,
ব্যাস!তুই এখন আমাকে মিথ্যা কোন এক্সকিউজ দেখাবি নাহ্।আমি বাচ্চা নাহ্।আমি সবটা বুঝতে পারি।(অন্নার মা)
অন্না তার মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
#চলবে………
#তোমাতেই_আমি_মগ্ন ?
#পর্ব_০৩
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
অনেমা বেগম পরম যত্নে অন্নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তবে অন্নার কান্না থামার নাম নেই।
মা কান্না থামিয়ে আমাকে সবটা বল।(অন্নার মা)
অন্না অনেমা বেগমকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছলো। নিজেকে শক্ত করে বললো,
আম্মু আমি রেপড হয়েছি!(অন্না)
অন্নার কথায় অনেমা বেগম মনে হয় অনেক বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো।তবু-ও নিজেকে শক্ত করে নরম সুরে অন্নাকে বললো,
আমাকে সবটা খুলে বল মা।(অন্নার মা)
এমন একটা কথা শুনে-ও অন্নার মা তাকে কিছু বললো না।আরো নরম সুরে জিগাসা সবটা বলতে বললো তাও মা বলে ডেকে।অন্নার মুখে হাসি ফুটলো।অন্না নিজেকে সামলে তার সাথে ঘটে যাওয়া সবটা তার মাকে বললো।
অন্না একভাবে কেঁদে চলেছে।অনেমা বেগমের চোখে পানি।তিনি অন্নাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।
মা তুই যদি নিজের ইচ্ছায় ধর্ষিত হতি তাহলে দোষটা তোর ছিল।কিন্তু তুই তো নিজের ইচ্ছাতে ধর্ষিত হসনি।তোকে জোর করে…….
এটুকু বলে অনেমা বেগম থামলেন। এমন একটা কথা বারবার উচ্চারণ করতে উনার বুকটা কেঁপে উঠছে।অনেমা বেগম চোখের পানি মুছে অন্নাকে তার সামনে বসালেন।
শোন যে তোর সাথে এমনটা করেছে তুই তাকে শাস্তি দিবি।এমন একটা ঘটনা তোর সাথে ঘটেছে বলে যে তুই চুপ হয়ে থাকবি আর ঘরে মুখ লুকিয়ে থাকবি একদম নাহ্।ওই ছেলেকে তার অন্যায়ের শাস্তি পেতে হবে।ঘুরে দাঁড়াতে শিখতে হবে।আমি চাই তুই নিজেই ওই ছেলেকে তার অন্যায়ের শাস্তি দিস।আমি আর তোর বাবা সবসময় তোর পাশে আছি।(অন্নার মা)
অন্না মুচকি হাসি দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললো।
তুমি ঠিকই বলেছো আম্মু।আমি আর নিজেকে গুঁটিতে রাখবো না।ওই ছেলের অন্যায়কে প্রশয় দেওয়া যাবে না।তবে আম্মু আমার নিজেকে বোঝাতে কিছুদিন টাইম লাগবে।(অন্না)
অনেমা বেগম মৃদু হেসে অন্নার মাথায় হাত রেখে বললো,
যতদিন সময় লাগে তুই নে।তবে দিনশেষে যেন তোর মুখে এই হাসিটা থাকে।(অন্নার মা)
অন্না তার মাকে জড়িয়ে ধরলো।অনেমা বেগম অন্নার কপালে একটা চুমু দিল।
–
–
–
অনেমা বেগম মঈন সাহেবকে সবটা বললেন।মঈন সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জোরে জোরে অন্নাকে ডাকতে শুরু করলেন।অনেমা বেগমের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে মঈন সাহেব কিনা আবার অন্নাকে বকে!
মঈন সাহেবের ডাকার আওয়াজে অন্না রুমে থেকে দৌড়ে নিচে গেল।
কি হয়েছে বাবা?(অন্না)
মঈন সাহেব ছলছল চোখে অন্নার দিকে চেয়ে আছেন।চোখ থেকে চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রেখে চোখটা মুছে নিলেন।ধীর পায়ে অন্নার দিকে এগিয়ে গেলেন।অন্নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে অন্নার মাথায় হাত রাখলেন।
এতোকিছু ঘটে গেল একটি বার জানালি না?যাক জানাস নি সেটা তোর ব্যাপার।শোন নিজেকে সবসময় শক্ত রাখবি।একদম ভেঙে পড়বি নাহ্।আর আমি জানি তো আমার পাখি মা অনেক সাহসী।তবে একা একা কষ্ট না পেয়ে আমাদের-ও কষ্টের ভাগীদার বানালে পারতি।(অন্নার বাবা)
অন্না তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
/\
আবির একভাবে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।তাকিয়ে থাকার কারণ মোবাইলে সে অন্নার ছবি দেখছে।কানাডায় থাকতে এমন কোন দিন যায়নি যেদিন সে অন্নাকে মনে করেনি।অন্নার ছবি দেখেই সে অন্নাকে না দেখার কষ্টটা দমিয়ে রাখতো।কিন্তু এখন দু’জনে এক শহরে আছে তবে কতটা ব্যবধান।
আকরাম সাহেব আবিরের রুমে প্রবেশ করলো।চারিদিকে চোখ বুলাতেই দেখলো আবির বেলকনিতে বসে আছে।আকরাম সাহেব বেলকনির দিকে এগিয়ে গেল।গিয়ে দেখলো আবির খুব মনোযোগ সহকারে অন্নার ছবি দেখছে।আকরাম সাহেব হাসি দিয়ে আবিরের কাঁধে হাত রাখলো।আবির পিছনে ফিরে দেখে আকরাম সাহেব দাঁড়িয়ে আছে।
আবির হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
ডেড।(আবির)
আবির আকরাম সাহেবকে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিয়ে বললো,
কখন আসলে তুমি?(আবির)
এই তো একটু আগে।অন্নাকে অনেক ভালোবাসিস তাই-না?(আবিরের বাবা)
আবির মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
তুমি তো সবটাই জানো।(আবির)
সব ঠিক হয়ে যাবে বাবা।তোর সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।(আবিরের বাবা)
বলো না ডেড!(আবির)
তুই কালকে একটু অফিসে যাস।একজন নিউ বিজনেস ম্যান আমাদের সাথে ডিল করতে চাচ্ছে।তবে তাকে আমার পছন্দ নাহ্।তাই আমাকে শাসিয়ে গেছে।বুঝতেই তো পারছিস বয়স বেড়েছে এইসব ঝামেলা এড়িয়েই চলি।(আবিরের বাবা)
কার এতো বড় সাহস তোমাকে শাসিয়ে যায়?আমি-ও দেখছি উনি কি করতে পারে!(আবির)
__?__
বেলকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে অন্না।গভীর রাত চারিপাশ অন্ধকার।সবাই এই মুহুর্তে ঘুমে ব্যস্ত।তবে অন্নার চোখে ঘুম নেই।শুধু আছে চোখের কোণে পানি।অন্না একভাবে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।এই চাঁদের আলো তার বড্ড প্রিয়।তবে কেনো জানি এখন তার কাছে কোন কিছুই ভালো লাগে না!
অন্না রেলিং থেকে হাত সরিয়ে বেলকনিতে থাকা দোলনায় এসে বসলো।
আচ্ছা আবির বাবু কি আমায় সত্যি ভালোবাসে?নাকি উনি-ও ওই ফাহাদের মতো!তবে কেন জানি আবির বাবুকে বিশ্বাস করার ইচ্ছা হয়।বিশ্বাস তো করেই ছিলাম।এতোদিন ধরে তো উনার আসার দিন গুণছিলাম।তবে আমার সাথে যেটা হলো তারপরে আর কোন কিছু নিয়েই আগানো আমার পক্ষে সম্ভব নাহ্।আর আবির বাবু সবটা জানলে উনি-ও নিশ্চিত আমাকে দূরে সরিয়ে দিবে।(অন্না)
–
–
–
কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব হতে অন্না চোখ খুললো।তাকিয়ে দেখে অনেমা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন।
অন্না তুই সারারাত কি এই দোলনায় শুয়ে ছিলি?(অন্নার মা)
আসলে আম্মু আমি দোলনায় বসে ছিলাম।তবে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানি নাহ্ ঠিক।(অন্না)
পাগলি একটা।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয়।কয়টা বাজে খেয়াল আছে তোর?ভার্সিটিতে যাবি না?(অন্নার মা)
আজকে ভালো লাগছে না আম্মু।আজকে যাবো নাহ্।(অন্না)
তোমার এই প্রতিদিন ভালো না লাগা রোগের জন্য তোমাকে উত্তর-মধ্যম দিতে হবে।(অন্নার মা)
অন্না হেসে দিলো।অনেমা বেগম মুচকি হেসে অন্নার দিকে তাকিয়ে আছেন।এই হাসিটা দেখার জন্যই তো অপেক্ষায় ছিল।
অন্না হাসি থামিয়ে বললো,
যে নাকি আমাকে একটা ফুলের টোকা দেয় না সে আবার উত্তম-মধ্যম দিবে?(অন্না)
এতোদিন কথা শুনেছিস তাই কিছু বলিনি।কথা না শুনলে তো দিতেই হবে।(অন্নার মা)
প্লিজ আম্মু আমি আজকে যাবো না।(অন্না)
আচ্ছা ঠিক আছে যেতে হবে না।ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় তোর বাবা তোর জন্য নাস্তা নিয়ে বসে আছে।(অন্নার মা)
ওকে তুমি যাও আমি আসছি।(অন্না)
||?||
ফাহাদ হোসেন চৌধুরী গ্রুপের অফিসে এসে বসে আছে আকরাম চৌধুরীর অপেক্ষায়।তার অপেক্ষার অবসান ঘটলো।
আকরাম চৌধুরী সঙ্গে করে তার ছেলে আবির চৌধুরীকে নিয়ে অফিসে প্রবেশ করলো।যা দেখে ফাহাদ হোসেনের মুখে হাসি ফুটলো।
আবির আর আকরাম সাহেব ফাহাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
হ্যালো মি.চৌধুরী সাহেব।(ফাহাদ)
বাবা তুমি তোমার কেবিনে যাও।আমি দেখছি।(আবির)
ফাহাদ আবিরের দিকে তাকালো।
আই সি!মনে তো হচ্ছে চৌধুরী সাহেবের ছেলে।আই এম রাইট?(ফাহাদ)
আকরাম সাহেব উনার কেবিনের দিকে চলে গেলেন।আবির চেয়ারে বসে মুচকি হেসে বললো,
ইয়েস ইউ আর রাইট।আমি-ই চৌধুরী সাহেবের ছেলে মানে আবির চৌধুরী।(আবির)
ওহ্ আচ্ছা যাক ভালোই হলো।দেখুন আমি আপনার বাবার সাথে ডিল করতে এসেছিলাম বাট উনি রাজি হচ্ছেন ন।বিকজ উনি অন্যায় কাজ করতে নারাজ।আসলে বুড়ো হয়েছে তো এতোকিছু বুঝে না।কিন্তু আপনি তো টাটকা যুবক আছেন।আপনার মাথায় এইসব ঢুকবে।সো ডিলটা কনফার্ম করে ফেলুন।(ফাহাদ)
আবির মুচকি হাসি দিলো,
আপনার শিক্ষা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি।একজন মানুষের বয়স বাড়লে যে সে কিছু বুঝে না সেটা আপনাকে কে বলেছে?আপনি এখানে এসেছেন আমাদের জুসের মধ্যে আপনার কোম্পানির মদ মিলিয়ে দিয়ে বিজনেস বাড়াতে তাই-না?আপনার মদ বসে বসে আপনি গিলুন আর নিজেকে মাতাল হিসেবে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিন।আপনি যে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে এখানে এসেছেন তা আপনার কথা শুনেই বুঝেছি।মানুষের ক্ষতি করে আপনাদের মতো আমরা ব্যবসা করি না।(আবির)
আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন আবির সাহেব।(ফাহাদ)
জাস্ট গেট আউট।(আবির চিৎকার করে বললো)
ফাহাদ উঠে দাঁড়ালো।কিন্তু সে দাঁড়াতে পারছে না টলছে।রাফসান এসে ফাহাদকে টেনে ধরলো।
আমি আপনাদের দেখে নিবো।(ফাহাদ)
আবির রাফসানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
এই যে ফাহাদ সাহেবের চামচা।উনাকে এই মুহূর্তে এখান থেকে নিয়ে যান।(আবির)
রাফসান কিছু না বলে ফাহাদকে ধরে ধরে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে গেল।আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার বাবার কেবিনে গেল।
//
রাফসান গাড়ি ড্রাইভ করছে।ফাহাদ তার পাশে বসে রাগে গজগজ করছে।
আমি তো ওই আবিরকে দেখে নিবো।(ফাহাদ)
বস ঝামেলা করে তো লাভ নেই।(রাফসান)
তুমি চুপচাপ গাড়ি চালাও।(ফাহাদ বিরক্তির সাথে বললো)
গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে ফাহাদের চোখ আটকে গেল।
রাফসান গাড়ি থামাও।(ফাহাদ)
রাফসান এক সেকেন্ড দেরি না করে গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড়া করালো।
গাড়ি থামাতে বললেন কেন বস?(রাফসান)
ওই যে দূরে দাঁড়িয়ে আছে ওই মেয়েটা।(ফাহাদ)
রাফসান তাকিয়ে দেখলো অন্না দাঁড়িয়ে আছে।ফাহাদ গাড়ি থেকে নেমে ধীর পায়ে অন্নার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।
হেই সুইটহার্ট!(ফাহাদ)
গলার আওয়াজটা কানে যেতেই অন্নার রুহু কেঁপে উঠলো।পিছনে ঘুরতে দেখলো ফাহাদ বাঁকা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে অন্না বাইরে এসেছিল।এখানে এসে যে নরপিশাচের সাথে দেখা হবে তা তার কল্পনার বাইরে ছিল।
অন্না কিছু না বলে হাত-মুখ শক্ত করে হাঁটা শুরু করলো।ফাহাদ দৌড়ে গিয়ে অন্নার সামনে দাঁড়ালো।
ওফ!অনেক রাগ হয়েছে তাই-না?কথা বলবে না আমার সাথে?(ফাহাদ)
পথ ছাড়ুন।(অন্না শক্ত গলায় বললো)
যদি না ছাড়ি?(ফাহাদ)
তাহলে এই রাস্তা ভর্তি মানুষের সামনে আপনার গালে সজোরে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় মারবো।(অন্না চোখ রাঙিয়ে বললো)
অন্নার কথায় ফাহাদ জোরে হেসে দিলো।
আহা!কি সুন্দর ডায়লগ বললে।আমার মনটা একদম ভরে গেল।তোমাকে মেইবি আরেকদিন আমার রুমে নিতে হবে।(ফাহাদ)
ফাহাদের কথাগুলো শুনে অন্না আর সহ্য করতে পারলো নাহ্।ঠাস ঠাস করে ফাহাদের গালে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।ফাহাদ গালে হাত দিয়ে চোখ রাঙিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চারিপাশে মানুষ এসে ভীড় জমিয়েছে।
তোকে এই দুইটা থাপ্পড় না তোকে জুতো দিয়ে মারলেও আমি শান্তি পাবো না।(অন্না)
অন্না চোখ গরম করে ফাহাদের সামনে থেকে চলে আসলো।ফাহাদ দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসি দিলো।
এইসবে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি মিস.অন্না।তবে তোমার এই তেজটা কিন্তু জোস লাগলো।(ফাহাদ)
ফাহাদ গাড়িতে উঠে চলে গেল।
#চলবে………..