#তোমাতেই_আমি_মগ্ন ?
#পর্ব_০৬ (বোনাস পর্ব),০৭
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
০৬
অন্নার চোখে পানি চলে আসলো।আবির অন্নার দিকে মুখ মলিন করে তাকিয়ে আছে।আবির অন্নার দিকে একটা টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললো,
অনুলতা কান্না করার কিছু নেই।আমাকে সবটা বলো।(আবির)
অন্না আবিরের থেকে টিস্যুটা নিয়ে চোখ মুছলো।অন্না নিজেকে স্বাভাবিক করে আবিরকে সবটা বললো।আবির চোখ-মুখ লাল করে বসে আছে।দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড রেগে গেছে।অন্না আড়চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।সে আবিরের রিয়াকশন বোঝার চেষ্টা করছে।আবির অন্নার দিকে তাকিয়ে বললো,
যে এমনটা করেছে তার নাম কি?(আবির)
অন্না কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
ফাহাদ হোসেন।(অন্না)
তার মানে ওই বিজনেস ম্যান ফাহাদ?(আবির)
হুম।(অন্না)
ওর তো খবর আছে।(আবির)
আবির বসে বসে রাগে ফুসছে।অন্না চুপ হয়ে বসে আছে।সে নিশ্চিত আবির তাকে দূরে সরিয়ে দিবে।আবির অন্নাকে অবাক করে তার এক হাত টেনে ধরলো।
অনুলতা আমি এতোটা অমানুষ না যে এমন একটা বিষয় জানার পরে তোমাকে দূরে সরিয়ে দিবো।আমি তোমাকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি।যা এমন ছোট ইস্যুতে উড়ে যাবে নাহ্।(আবির)
অন্না আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।অন্না নিজেকে শক্ত করে আবিরের হাতটা সরিয়ে দিলো।
এগুলো আবেগ আবির বাবু।আপনি যদি এই বিষয়টা নিয়ে একবার ভালো করে ভাবেন তখন আপনার এই ভালোবাসা আর থাকবে না।(অন্না)
তুমি তো আর নিজের ইচ্ছাতে ধর্ষিত হওনি।ওই লোক জোর করে তোমার সাথে এমনটা করেছে।(আবির)
সবকিছুর পরেও আমি একজন ধর্ষিতা।(অন্না)
আবির চোখ বন্ধ করে বসে আছে।অন্না উঠে হাঁটা শুরু করলো।
কারো হাতের স্পর্শে আবির চোখ খুললো।পিছনে তাকিয়ে দেখে নিশান তার কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আবির উঠে নিশানকে জড়িয়ে ধরলো।
কখন আসলি তুই?(আবির)
আমি অনেক আগেই এসেছি।এতোক্ষণ ধরে পাশের টেবিলে বসে তোদের সব কথা শুনলাম।আবির আর যাই করিস উনাকে না মানে কি জানি নাম ইয়াহ্ অন্নাকে ঠকাস না।এমনিই মেয়েটা অনেক কষ্টে আছে।যদি তোর সত্যটা জানতে পারে তাহলে আরো আপসেট হয়ে পড়বে।(নিশান)
নিশান ওটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট।আর তুই তো জানিস আমি শুধু অনুলতাকেই ভালোবাসি।(আবির চোখ রাঙিয়ে বলল)
জানি আমি।তবে অন্নাকে তোর সবটা জানানো উচিত।নাহলে তুইও ওর সাথে অন্যায় করবি।(নিশান)
তুই কি এইসব বলতে এখানে এসেছিস?(আবির ধমক দিয়ে বলল)
রিলাক্স ব্রো।তোর যা মনে হয় তাই কর।আমার যেটা মনে হলো সেটা বললাম।বাই দ্যা ওয়ে আঙ্কেল কোথায়?(নিশান)
ডেড মেইবি অন্নার বাবা-মার সাথেই আছে।তবে কোথায় আই ডোন্ট নো।(আবির)
তুই কি রেগে আছিস?(নিশান)
না!আচ্ছা চল।ওয়েট অনুলতা কোথায় গেল তুই দেখেছিস?(আবির)
দেখলাম তো হোটেলের দিকে যেতে?(নিশান)
আচ্ছা চল গিয়ে দেখি হোটেলে ঠিক ভাবে পৌছেছে নাকি!(আবির)
আবির আর নিশান হাঁটছে।
আচ্ছা নিশান তুই কখন দেশে আসলি?(আবির ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো)
সকালে ঢাকায় এসে সোজা সিলেটে।কারণ রাতে তুই তো বললি সোজা সিলেট আসার কথা।আর তুই তো জানিস এই দুনিয়ায় আমার আপন বলতে কেউ নেই।শুধু তোর জন্যই দেশে আসা।(নিশান)
আবির নিশানকে জড়িয়ে ধরলো।
একদম এভাবে বলবি না।তুই আমার বন্ধুর চেয়ে বেশি।তুই আমার ভাই।আর আমরা আছি এতেই হবে আর কাউকে লাগবে না।(আবির)
নিশান মুচকি হাসলো।আবির নিশানকে ছাড়লো।
আচ্ছা ওরা কেমন আছে?(আবির)
ভালো আছে।তবে তোর কথা আমাকে অনেকবার জিগাসা করেছিল।আমি কিছু বলিনি।(নিশান)
আবির আর কিছু না বলে হাঁটা ধরলো।নিশানও আবিরের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটছে।
////
অন্না একটা বেঞ্চে বসে আছে।চারিপাশটা নির্জন তবে পরিবেশটা সুন্দর।অন্য সময় হলে এমন একটা জায়গায় অন্না ভয়েও একা বসতে পারতো না।কিন্তু আস্তে আস্তে তার জীবন থেকে ভালো লাগা,ভয় সব চলে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে কয়েকটা ছেলে এসে অন্নার সামনে দাঁড়ালো।অন্না কিছুটা অবাক হলো।অন্না কিছু না বলে উঠে হাঁটা শুরু করলো।কিন্তু ছেলেগুলো অন্নার পিছনে হাঁটছে আর বাজে মন্তব্য করছে।অন্নার প্রচুর রাগ হচ্ছে।শুধু নতুন জায়গা বলে কিছু বলছে না।
হঠাৎ করে একটা ছেলে বললো,
কি গো সুন্দরী এই রাতের বেলা এমন নিরিবিলি পরিবেশে কোন মজনুর জন্য অপেক্ষা করছিলে নাকি?
তারপরে আরেকজন বললো,
সমস্যা নেই মজনু আসেনি তো কি হয়েছে।আমরা মজনুর মজা দিয়ে দিবো।
অন্না আর রাগ সামলাতে না পেরে পিছনে ফিরে দুইটা ছেলের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।অন্য যেই ঘুরে হাঁটতে যাবে তার আগে একটা ছেলে অন্নার হাত ধরলো।
হাতটা ছাড়ুন আমার।(অন্না চোখ রাঙিয়ে বললো)
ছেলেটা বাঁকা হাসি দিয়ে গাল চুলকাচ্ছে।ছেলেটার এমন হাসি দেখে অন্নার ফাহাদের কথা মনে হতেই চোখে জল চলে আসলো।
ছেলেটা কিছু বলতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করে ছেলেটার হাতে একটা লাঠি কেউ ছুড়ে মারলো।
অন্নার হাতটা মুক্তি পেল।অন্না তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত দিয়ে।ছেলেটা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে মুখটা দেখা যাচ্ছে না।
গুন্ডাগুলো ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলো।ছেলেটা একটা একটা করে গুন্ডাকে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে দিচ্ছে।অন্না হা হয়ে তাকিয়ে আছে।যেই ফাইট সে সিনেমায় দেখতো তা আজ বাস্তবে দেখছে।অন্না যখন সিনেমায় দেখতো নায়করা নায়িকাদের এমন মারামারি করে গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচায়।তখন অন্নার-ও ইচ্ছা হতো এমন একটা স্বপ্নের নায়ক পাওয়ার।তবে অন্নার সব ইচ্ছা দিনদিন মরে যাচ্ছে।
ছেলেটার হাতে মার খেয়ে গুন্ডাগুলো সব দৌড়ে পালালো।ছেলেটা অন্নার দিকে এগিয়ে আসলো।ছেলেটার গায়ে কালো রঙের একটা জ্যাকেট,গলায় মাফলার ঝুলানো আর মুখে মাস্ক পড়া।ছেলেটার মুখ দেখা একে বারেই অসম্ভব বললে চলে।
রাতের বেলা এমন নিরিবিলি পরিবেশে একা বসে থাকা ঠিক না।বিভিন্ন বিপদ হতে পারে।তার চেয়ে বড়ো কথা এই ঠান্ডার মধ্যে আপনি এমন পাল্টা একটা ওড়না গায়ে প্যাঁচিয়ে ঘুরছেন কিভাবে?(ছেলেটা)
সেটা আপনার না জানলেও চলবে।(অন্না)
আমার জানারও কোন ইন্টারেস্ট নেই।(ছেলেটা)
ছেলেটা পিছনে ঘুরে যেতে যাবে এমন সময় অন্না বললো,
থ্যাংকস।(অন্না)
ছেলেটা পিছনে ঘুরে তাকিয়ে আবার পকেটে হাত ঢুকিয়ে হেঁটে চলে গেল।
!!!!
আবির হোটেলে এসে দেখে অন্না নেই।আবির হোটেলের চারিপাশে খুঁজে অন্নাকে না পেয়ে চিন্তায় পড়ে যায়।আবির ঘুরতে ঘুরতে একটু সামনে এগিয়ে দেখলো অন্না হেঁটে হেঁটে হোটেলের দিকে আসছে।আবিরের মুখে হাসি ফুটলো।
অন্না সামনে তাকিয়ে দেখে আবির তার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে।অন্না এসে আবিরের সামনে দাঁড়ালো।
অনুলতা কোথায় গিয়েছিলে তুমি?(আবির)
অন্না কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা এড়িয়ে গেলো।
কোথাও না।আমি একটু ঘুরে দেখছিলাম চারিপাশটা।(অন্না)
আমাকে বললে পারতে!(আবির)
আমি একা একা ঘুরতেই পছন্দ করি।(অন্না)
অন্না হোটেলের ভিতরে চলে গেলো।আবিরও তার পিছু পিছু গেলো।অন্না রুমে গিয়ে দেখে তার মা আর দিশা বসে আছে।
কি রে অন্না কোথায় ছিলি তুই?(অন্নার মা)
আম্মু আমি তো একটু সামনে হাঁটছিলাম।(অন্না)
তোর কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো।এমন অপরিচিত জায়গায় একা গিয়ে ঠিক করিসনি।(অন্নার মা)
আম্মু মেয়েদের সতিত্ব টাই তো বড়।আর আমার তো সেটাই……(অন্না)
অন্না এটুকু বলে থেমে গেলো।অন্না নিজেকে সামলে হাসি দিয়ে বলো।
আম্মু একদম চিন্তা করো না।আমার কিছুই হবে না।(অন্না)
অনেমা বেগম অন্নার গালে একটা চুমু দিয়ে ছলছল চোখে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
অনু তুই একদম ঠিক করিসনি।তুই তো আমাদের সাথে যেতে পারতি।(দিশা)
হয়েছে এতো বকবক না করে এখন খেতে চল।হোটেলের রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেয়ে আসি চল।(অন্না)
–
–
–
অন্না আর দিশা রুমের বেলকনিতে বসে কফি খাচ্ছে।আর আড্ডা দিচ্ছে।হঠাৎ করে তাদের রুমের দরজায় কেউ কলিংবেল বাজালো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১২:৫০।
এই এতো রাতে কে আসলো?(দিশা)
আমি কিভাবে বলবো?(অন্না)
ভূত-প্রেত নাই তো আবার এই হোটেলে?(দিশা)
চুপ কর তো।পাগলি একটা।(অন্না)
আমি দরজা খুলতে পারবো নাহ্।তুই গিয়ে খোল।(দিশা)
ওকে আমি খুলতেছি।(অন্না)
অন্না উঠে দরজা খুললো।তাকিয়ে দেখে দরজার সামনে কেউ নেই।দিশা তো ভয়ে চুপসে দাঁড়িয়ে আছে।অন্না-ও কিছুটা অবাক হলো।তবে বিষয়টা নিয়ে তেমন মাথা ঘামালো নাহ্।কিন্তু দিশা ভয়ে কাঁপছে।অন্না দরজা লাগিয়ে দিশার কাছে আসলো।
দেখলি এই হোটেলে ভূত আছে।(দিশা কাঁপাকাঁপা গলায় বললো)
আরে গাধি হতে পারে কেউ এসেছিল।দরজা খুলতে লেট হওয়ায় চলে গেছে।(অন্না)
তুই সবটা বুঝতে পারতেছিস।তবে আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এটা বললি।(দিশা)
অন্নার-ও কিছুটা ভয় হচ্ছে।তবে সে যদি দিশার সাথে তাল মেলায়।তাহলে দিশা এখনি পাগলামি করবে।তাই অন্না নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে।
আরে তেমন কিছু না।এখন চল তো অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে হবে।(অন্না)
আমার ঘুম শেষ।(দিশা)
ভালো কথা।তাহলে সারারাত তাকিয়ে বসে থাক।(অন্না)
অন্না গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।দিশা তার বিছানায় না শুয়ে অন্নার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
তুই আমার পাশে শুতে আসলি কেন?(অন্না)
আমার প্রচুর ভয় করতেছে।প্লিজ আমাকে ওই বিছানায় একা শুতে বলিস না।(দিশা)
অন্না দিশার কথায় মিটিমিটি হাসছে।
||?||
সকালে ঘুম ভাঙতে আবির দেখলো নিশান রুমে নাই।আবির ফ্রেশ হয়ে এসে রুম থেকে বের হলো।
নিশান রুম থেকে বের হয়ে হাঁটছে।হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লাগলো।পিছনে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
চোখে দেখেন না আপনি?মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিতে হয় নাকি?(দিশা)
এই একদম বাজে কথা বলবেন না।আমি খেয়াল করিনি।(নিশান)
চুপ করুন।আপনি যে ইচ্ছা করে ধাক্কা দিয়েছেন আমি তা ভালো করে জানি।(দিশা)
অন্না তাকিয়ে দেখে নিশান আর দিশা ঝগড়া করছে।অন্না এসে দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পড়ে।
অন্না তুই মাঝখানে আসলি কেন?(দিশা)
উনি আবির বাবুর বন্ধু নিশান(অন্না)
তো!আবির বাবুর বন্ধু দেখে ছাড় পেয়ে যাবে নাকি?এমনি কালকে রাতের ঘটনা নিয়ে ভেবে মরে যাচ্ছি।তার মধ্যে উনি এসে সকালে ধাক্কা দিচ্ছে।(দিশা)
তিথি আর নিতু এসে হাজির।নিশান কিছু না বলে হেঁটে চলে গেলো।
কালকে রাতে কি হয়েছে রে দিশা?(তিথি)
আর বলিস না।কালকে রাতে কে যেন আমাদের রুমের দরজায় কলিংবেল বাজালো দ্যান যখন দরজা খুললাম তখন দেখি কেউ নেই।(দিশা)
আবির দূরে থেকে দিশার কথা শুনে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো।
আসলে কাল রাতে আমিই বেল বাজিয়েছিলাম।কারণ হলো নিশানের হাত কেটে গেছিলাম।যদি কোনো মলম পাওয়া যায় তার জন্য বেল বাজিয়ে ছিলাম।তারপরে দেখলাম দরজা খুলতে লেট হচ্ছে তাই আর ডিস্টার্ব না করে নিচে চলে গেছিলাম হোটেলের।তারপরে ওখান থেকে মলম এনে নিশানের হাতে লাগাই।(আবির)
আমি কত ভয় পেয়েছিলাম জানেন?(দিশা)
সরি।(আবির)
আবির তাদের সামনে থেকে চলে গেলো।
আচ্ছা অন্না তুই জানিস কিভাবে উনি আবির ভাইয়ার বন্ধু?(দিশা)
কারণ উনি অনেক আগে আবির বাবুর সাথে আমাদের বাসায় এসেছিলো।তখন জানতে পেরেছি।(অন্না)
“✨”
তা মিমি বল কালকে আমার সাথে ঘুরে তোর কেমন লাগলো?(ফাহাদ)
তোর সাথে ঘুরে ভালোই লেগেছে।তবে রাতে যখন নেশা গ্রস্ত হয়ে জোর করে আমার কাছে আসলি তখন আর ভালো লাগেনি।(মিমি)
ফাহাদ মাথা নিচু করে বসে আছে।
ফাহাদ মাথা নিচু করে বসে না থেকে নিজেকে পাল্টানোর চেষ্টা কর।মানুষের চরিত্রটা আসল।কিন্তু তোর তো সেটাই নেই।(মিমি)
মিমি চোখের পানি মুছে বিছানার চাদর গাঁয়ে প্যাচিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।ফাহাদ বিছানার পাশের টেবিলে রাখা পানির গ্লাস ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।যা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।
/\/
আচ্ছা নিশান সাহেব আপনার হাত কাটলো কিভাবে?(দিশা)
আর বলবেন না।কালকে রাতে বিয়ারের বোতল খুলতে গিয়ে হাত কেটে ফেলছি।(নিশান কথাটা বলে জিহ্বায় কামড় দিলো)
দিশা চোখ রাঙিয়ে নিশানের দিকে তাকিয়ে আছে।
#চলবে……….
#তোমাতেই_আমি_মগ্ন ?
#পর্ব_০৭
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
নিশান চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দিশা কিছুক্ষণ চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থেকে বললো,
আপনি বিয়ার খান?(দিশা)
নিশান গলা ঝাঁঝিয়ে বললো,
ইয়ে মানে বিদেশে থাকতাম তো তাই আরকি……(নিশান)
দিশা নিশানকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
Bad habit.আচ্ছা আবির ভাইয়া-ও কি ওইসব খায়?(দিশা)
আরে না আবির অনেক ভালো ছেলে।ও ওইসব খায় না।(নিশান)
আপনিও তাহলে খাওয়া ছেড়ে দিন।কারণ ওইসব খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর।(দিশা)
আপনি যখন বলেছেন তখন তো ছেড়ে দিতেই হবে।(নিশান)
মানে?আমি বললাম বলে ছেড়ে দিবেন?(দিশা)
দিশা নিশানের দিকে তাকিয়ে আছে।নিশান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দিশার কানের কাছে মুখ এনে বললো,
আমি কিন্তু কালকে আপনাকে খুব ভালো করে নোটিশ করেছি।একটু আলাদা ভাবেই।(নিশান)
নিশান মুচকি হেসে দিশার সামনে থেকে চলে গেল।দিশা নিশানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
–
–
–
অনুলতা…..(আবির)
অন্না হোটেলের চারিপাশটা ঘুরে দেখছিল।হঠাৎ করে আবির এসে ডাক দিলো।অন্না পিছনে ফিরে দেখে আবির দাঁড়িয়ে আছে।
অন্নাকে দাঁড়াতে দেখে আবির অন্নার কাছে এগিয়ে গেলো।
কিছু বলবেন আপনি?(অন্না)
তুমি আমার সাথে এক কাপ কফি খেতে যাবে প্লিজ।আসলে কালকে পরিস্থিতিটা এমন হয়েছিল তুমি ক্যাফে থেকে বের হয়ে চলে গেলে আর আমি…..থাক এইসব বলে আর লাভ নেই।তুমি যদি যাও তাহলে আমার ভালো লাগবে।(আবির)
অন্না কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
আচ্ছা চলুন।(অন্না)
///
অন্না আর আবির ক্যাফেতে বসে আছে।
অনুলতা তুমি বসো আমি বরং অর্ডারটা দিয়ে আসি।(আবির)
অন্না মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।আবির উঠে চলে গেলো।অন্না সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে কালো কোর্ট আর প্যান্ট পড়ে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছে।ছেলেটাকে দেখে অন্না বেশ অবাক হয়েছে কারণ ছেলেটা ফাহাদের মতো দেখতে।
অন্না চোখ-মুখ শক্ত করে ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
আপনি এখানে?(অন্না দাঁতে দাঁত চেপে বললো)
ছেলেটা মোবাইল নামিয়ে বললো,
সরি।আপনি কি আমাকে চিনেন?(ছেলেটা)
আপনাকে আমি কি করে ভুলে যাই মি.ফাহাদ হোসেন।(অন্না)
আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।আমি ফাহাদ হোসেন না।আমার নাম ফারাবী খান।(ফারাবী)
ফারাবী কানে ফোন দিয়ে কথা বলতে বলতে হেঁটে চলে গেল।অন্না হা হয়ে তাকিয়ে আছে।ফারাবী ক্যাফে থেকে বের হওয়ার আগে একবার অন্নার দিকে তাকালো তারপরে ক্যাফে থেকে বের হয়ে চলে গেল মোবাইলে কথা বলতে বলতে।
এটা কি করে সম্ভব?অবিকল ফাহাদ হোসেনের মতো দেখতে।ফাহাদ কি আমার সাথে মজা করলো?এতোটা মিল কি করে হতে পারে?উনি কি ফাহাদ নাকি সত্যি ফারাবী খান?(অন্না)
অন্নার হাত-পা কাঁপছে।অন্না ধীর পায়ে হেঁটে চেয়ারে এসে বসলো।আবির এসে দেখে অন্না মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।আবির এসে অন্নার পাশে বসলো।
অনুলতা কি হয়েছে তোমার?(আবির)
আবিরের কথায় অন্না মাথা উঠিয়ে বসলো।
না আবির বাবুকে কিছু বলা ঠিক হবে নাহ্।হয়তো গিয়ে ঝামেলা করতে পারেন।আগে আমার নিশ্চিত হতে হবে।(অন্না মনে মনে বললো)
কিছু না।আসলে হঠাৎ করে কিছুদিন আগের ঘটনা মনে পড়ে গেল তাই।(অন্না)
অনুলতা নিজেকে শক্ত করো।আর এগুলো ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো।(আবির)
যতই ভুলে যেতে চাই না কেন সেই মুখটা তো বারবার আমাকে দেখতে হয়!তাহলে কিভাবে ভুলতে পারবো আমি?(অন্না মনে মনে বললো)
–
–
–
অন্না হোটেলের রুমে এসে বসে আছে।সে ফাহাদ আর ফারাবীর মধ্যে মিল খোঁজার চেষ্টা করছে।
ফাহাদের তো নাকের ডগায় একটা ছোট তিল ছিল কিন্তু ফারাবীর তো সেটা নেই।আর ফাহাদের গলায় একটা ট্যাটু ছিল।সেটাও ফারাবীর নেই।আর ফারাবী ফাহাদের থেকে কিছুটা লম্বা হবে।ফাহাদের সাথে ফারাবীর চেহারা অবিকল মিল রয়েছে।তবে এই বিষয়গুলোয় তো মিল নেই।আর ভয়েসটাও মেইবি একটু ডিফারেন্ট।তবে ফাহাদের সাথে অনেককিছু না মিললেও কালকে রাতে আমাকে যেই ছেলেটা বাঁচিয়ে ছিলো তার সাথে অনেক মিলে যাচ্ছে।বিশেষ করে হাইট আর ভয়েস আর শরীরের গঠন তো আছেই।ওফ!আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাবো।কিছুই তো বুঝতে পারছি না।এটা কি ফাহাদ নাকি ফারাবী?(অন্না)
অন্না আনমনে বসে আছে।দিশা,তিথি আর নিতু রুমে এসে দেখে অন্না চুপচাপ বসে আছে।
কি রে অন্না তোর আবার কি হলো?(তিথি)
তিথির কথায় অন্নার ধ্যান ভাঙ্গলো।
আরে কি হবে আমার?এমনিই বসে ছিলাম।(অন্না)
আরে রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি।সন্ধ্যা তো হয়ে গেলো।পার্টি শুরু হয়ে যাবে।(নিতু)
হুম তোরা রেডি হতে শুরু কর।আমিও রেডি হচ্ছি।(অন্না)
–
–
–
সব মানুষজন চলে এসেছে।আবির দাঁড়িয়ে আছে অন্নার অপেক্ষায়।
কি রে দোস্ত!ওমন হা হয়ে গেটের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?(নিশান)
আরে অন্না এখনো আসছে না।(আবির)
আবির তুই অন্নাকে কিছু বলেছিস?(নিশান)
না।আর ও-কে কিছু আমি বলতেও চাই না।(আবির)
আবির যা করবি ভেবে চিন্তে কর।(নিশান)
নিশান প্লিজ এখন উল্টাপাল্টা কোনো কথা বলিস না।(আবির)
নিশান দেখলো দিশা একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।নিশান দিশার দিকে এগিয়ে গেলো।
কি ব্যাপার এমন একা একা দাঁড়িয়ে আছেন যে?(নিশান)
আরে ওরা তিনজনে এখনো আসছে না।(দিশা)
তিনজন মানে?(নিশান)
অন্না,নিতু আর তিথি।(দিশা)
চলে আসবে।আপনার এতো টেনশন করতে হবে না।(নিশান)
আপনি জানেন কিছু?এই বাংলোর আশেপাশে ভূত-প্রেতের বসবাস।(দিশা)
দিশার কথা শুনে নিশানের কাঁশি শুরু হলো।
আরে আপনার আবার কাঁশি শুরু হলো কেন ভাই?(দিশা)
ভূ..ভূ..ভূত মানে?এখানে সত্যি ভূত আছে?আসলে আমি অনেক ভূতে ভয় পাই।(নিশান তুতলিয়ে বললো)
নিশানের এই অবস্থা দেখে দিশা খিলখিল করে হাসছে।নিশান এক দৃষ্টিতে দিশার হাসির দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ কিছু মনে হতে নিশান মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো।দিশা হাসি থামিয়ে চশমাটা ঠিক করে বললো,
কি হলো আপনি এমন মুখ গোমড়া করলেন কেন?(দিশা)
আমি আপনার ভাই হলাম কিভাবে?(নিশান)
দিশা মুচকি হেসে বললো,
তা আপনি কি আমার জামাই হন!(দিশা)
আপনি চাইলে আমি রাজি আছি।(নিশান)
দিশা চোখ গরম করতেই নিশান চলে গেলো।দিশা দাঁড়িয়ে হাসছে।
_?_
অন্না এসে চুপচাপ বসে আছে একটা চেয়ারে।তার বান্ধবীরা গল্পে ব্যস্ত।তাকে অনেক বার ডাকার পরেও সে যায়নি।তাই রাগ করে তারা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অন্না যতই সবার সামনে নিজেকে স্বাভাবিক দেখাক না কেনো আসলে তার বুকে এখনো তীব্র যন্ত্রণাটা রয়েছে।
আবির খেয়াল করলো অন্না একা একা বসে আছে।আবির কোর্টটা ঠিক করে অন্নার দিকে এগিয়ে গেলো।
অনুলতা একা বসে আছো যে?(আবির)
এখন আমার একা থাকলেই ভালো লাগে।(অন্না)
নিজেকে সবার থেকে আড়াল করা ঠিক না।(আবির)
আপনি যান না সবার সাথে গিয়ে কথা বলেন।আর একটু পড়েই তো আপনাদের খান কোম্পানির মালিক চলে আসবে।যে আপনাদের সাথে এতোবড় একটা ডিল করেছে।(অন্না)
আবির কিছু বলার আগেই তার বাবা ডাক দিলো।আবির উঠে গিয়ে তার বাবার পাশে দাঁড়ালো।
মি.খান সাহেব এই যে আমার ছেলে আবির।আর আবির উনি খান সাহেব।(আবিরের বাবা)
আবির হ্যান্ডশেক করলো।
আমার ছেলেও আসবে।আসলে এখন সবটা ওই সামলায়।আমি তো জাস্ট নামে চলি।(ফারাজ খান)
আচ্ছা আপনি এসে বসুন।(আবিরের বাবা)
একটু ওয়েট করেন আমার ছেলে চলে এসেছে।ও এখনি ভিতরে আসবে।(ফারাজ খান)
একটা ছেলে এসে ফারাজ খানের পাশে দাঁড়ালো।গায়ে নেভি ব্লু ব্লেজার,ব্লাক প্যান্ট,ব্লাক শার্ট,চুলগুলো স্পাইক করা।ছেলেটাকে দেখে আবির হা হয়ে তাকিয়ে আছে।আবির রাগে ফুসছে।আবির নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ছেলেটার কলার টেনে ধরে।
ছেলেটা চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।
এই ফাহাদ হোসেন!তুই এখানেও চলে এসেছিস।তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।(আবির দাঁতে দাঁত চেপে বললো)
আবিরের বাবা,অন্নার বাবা,খান সাহেব সবাই আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।আবির যেই ছেলেটার মুখে ঘুষি মারতে যাবে সেই ছেলেটা আবিরের হাত চেপে ধরলো।আবিরের হাত তার শার্টের কলারের থেকে খুব ধীরে সরিয়ে দিলো।তারপরে আবিরকে হালকা ধাক্কা দিলো।যার ফলে আবির দুই কদম পিছিয়ে গেলো।
বিয়েভ ইউর সেল্ফ মি.চৌধুরী।আমি ফাহাদ না।আমি ফারাবী।ফারাবী খান।সো আমার মনে হয় না দ্বিতীয় বার আপনি সেইম ভুল করবেন।(ফারাবী স্বাভাবিক ভাবে বললো)
তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।ও আমার ছেলে ফারাবী খান।ও কোনো ফাহাদ না।(ফারাজ খান)
আবির নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে।পাশে তাকিয়ে দেখলো অন্না দাঁড়িয়ে আছে।অন্না ইশারা করে আবিরকে নরমাল হতে বললো।
আই এম সরি।আমি আসলে বুঝতে পারিনি।উনার আর ফাহাদ হোসেনের মধ্যে অনেক মিল আছে।মিল বললে ভুল হবে দুজনে এক রকমই দেখতে।(আবির)
পৃথিবীতে এক রকম দেখতে সাতজন মানুষ হয় আবির সাহেব।(ফারাবী মুচকি হেসে বললো)
হুম হতে পারে।না জেনে রিয়েক্ট করাটা আমার ভুল হয়েছে।(আবির)
ইটস ওকে।(ফারাবী)
আবির হেঁটে চলে গেলো।অন্না দাঁড়িয়ে আছে ফারাবীর উল্টো পাশে।তার চোখ ফারাবীর দিকে।ফারাবীর আচরণ দেখে তার আর ফাহাদের কোনো মিলই পাচ্ছে না।
ফারাবী তাকিয়ে দেখলো সকালের ক্যাফের মেয়েটা তার দিকে তাকিয়ে আছে।ফারাবী মুচকি হেসে অন্নার দিকে এগিয়ে গেলো।অন্নার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
কি ম্যাডাম ক্রাশ খেয়েছেন নাকি?(ফারাবী)
ফারাবীর কথায় অন্নার ধ্যান কাটলো।অন্না তাকিয়ে দেখে ফারাবী তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।অন্না মুখ ঘুরিয়ে ফেললো।
বাই দ্যা ওয়ে আবির সাহেব কি আপনার হাসব্যান্ড নাকি?(ফারাবী)
আপনার এমন কেনো মনে হলো?(অন্না)
না মানে আপনিও সকালে আমাকে ফাহাদ ভাবলেন আর উনিও আমাকে ফাহাদ ভাবলো তাই আরকি!(ফারাবী)
না জেনে কোন কিছু বলা ঠিক না মি.খান।আর ফাহাদ হলো শুধু একটা নাম না।আমার জীবনের কালো দাগ।(অন্না শক্ত কন্ঠে কথাগুলো বললো)
অন্না ফারাবীর পাশে থেকে চলে গেলো।ফারাবী অন্নার যাওয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কালো দাগ মানে কি?(ফারাবী)
/\
পার্টি শেষ হয়ে গেলো।খান সাহেব আর ফারাবী চলে যাচ্ছে।সবাই দাঁড়িয়ে তাদের বিদায় জানাচ্ছে।ফারাবী অন্নার পাশে দিয়ে যাওয়ার সময় বললো,
এমন পাতলা ওড়না গায়ে প্যাচিয়ে ঘুরে বেড়িয়েন না।এখানে কিন্তু প্রচুর ঠান্ডা।(ফারাবী)
ফারাবী মুচকি হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।
তার মানে উনিই ছিলো কালকে।যে আমাকে গুন্ডাদের থেকে বাঁচিয়েছে।যাক তাহলে আমি ঠিকই চিনেছি।(অন্না মনে মনে বললো)
//?//
অন্না রাতে বিছানায় শুয়ে আছে।দিশা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।অন্নার চোখে ঘুম নেই।তার মাথায় একটা জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে ফারাবী কি ফাহাদ?নাকি দুজনে আলাদা?
একটা মানুষের সব পাল্টানো সম্ভব বাট ভয়েস আর হাইট তো পাল্টানো যায় না।তার মানে ফারাবী কি ফাহাদের জমজ ভাই?তবে ফারাবীর সাথে ফাহাদের স্বভাবের কোনো মিল নেই।ফারাবী কি সুন্দর ভদ্রভাবে কথা বলে,মহিলাদের যথেষ্ট সম্মান দিয়ে চলে,তারপরে তার হাসিতে কোন নোংরামি নেই যা ফাহাদের হাসিতে দেখা যায়।(অন্না)
#চলবে………