তোমাতেই_আমি_মগ্ন ? #পর্ব_১২,১৩

0
1205

#তোমাতেই_আমি_মগ্ন ?
#পর্ব_১২,১৩
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
১২

এভাবে সাত দিন কেটে গেলো।আজকে চৌধুরী পরিবার কানাডার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছে।

অন্না তার ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আছে।আজকে তাদের ভার্সিটিতে সুবর্ণজয়ন্তী।পুরনো সকল স্টুডেন্টরা আসবে।অন্না নিজেকে সাজিয়েছে নীল রঙের শাড়িতে।একদম হালকা সাজে পরিপাটি।অন্না কখনোই বেশি মেকআপ করা পছন্দ করে না।তাই সে সিম্পল ভাবেই নিজেকে সাজায়।

ফারাবী এসে তাজের সাথে বসে আছে।তার চোখ জোড়া একজনকে খুঁজছে।কিন্তু তাকে দেখতেই পাচ্ছে না।এর জন্য ফারাবীর মনটা একটু খারাপ।

হঠাৎ ফারাবীর সামনে বসে থাকা একটা মেয়ে চিৎকার করে বললো,

এই অন্না এদিকে আয়।(মেয়ে)

মেয়েটা যেদিকে তাকিয়ে ডাক দিয়েছে ফারাবী সেদিকে তাকালো।তাকিয়ে দেখে অন্না এগিয়ে আসে।অন্নাকে দেখে ফারাবী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অন্নাকে নীল শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে।অন্না কিছুটা কাছে আসতেই ফারাবী উঠে অন্নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

অন্না হা করে ফারাবীর দিকে তাকিয়ে আছে।তার এখন আর ফারাবী আর ফাহাদের মধ্যে পার্থক্য করতে কষ্ট নাহ্!তবে সে এটা ভেবে অবাক হচ্ছে ফারাবী এখানে আসলো কিভাবে?

আপনি হয়তো এটাই ভাবছেন আমি এখানে আসলাম কিভাবে?(ফারাবী)

হুম।(অন্না)

আসলে আমি এই ভার্সিটিতে এক বছর পড়েছিলাম।তারপরে……

এটুকু বলে ফারাবী থেমে যায়।অন্না ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,

তারপরে কি?(অন্না)

থাক ওতো কিছু জানতে হবে না।বাই দ্যা ওয়ে আপনি একটা জিনিস খেয়াল করেছেন?(ফারাবী)

কি খেয়াল করবো?(অন্না)

আপনি নীল শাড়ি পড়েছেন আর আমি নীল পাঞ্জাবি।তাহলে ভেবে দেখুন আমাদের মনের কতো মিল রয়েছে।(ফারাবী)

অন্না ফারাবীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।আসলেই ফারাবী-ও নীল পাঞ্জাবি পড়েছে।অন্না চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,

এখানে অজস্র ছেলে-মেয়ে নীল পোশাক পড়েছে।সবার কি তাহলে মনের মিল রয়েছে?(অন্না)

আল্লাহ যাকে যার জন্য তৈরি করেছেন তাদের-ই মনের মিল রয়েছে মিস.অনুমা।(ফারাবী মুচকি হেসে বলে)

ফারাবী অন্নার সামনে থেকে চলে যায়।অন্না কিছুক্ষণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে তার বান্ধবীদের কাছে চলে যায়।

সারাদিন দিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলে।রাত হয়ে গেছে অনেক।অন্না ভার্সিটির সামনে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু কিছু পাচ্ছে না।তিথি আর নিতু থাকে হোস্টেলে।আর দিশা জ্বরের কারণে অনুষ্ঠানে আসতে পারেনি।এখন অন্নাকে একাই বাড়ি ফিরতে হবে।এমন রাতে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে অন্নার কিছুটা ভয় লাগছে।কারণ এমনই একদিন ফাহাদ তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেছিলো।অন্না কিছুটা সাহস করে রাস্তার পাশে দিয়ে হাঁটা শুরু করলো।হঠাৎ অন্নার সামনে দুটো ছেলে এসে দাঁড়ালো।অন্না ছেলেগুলোকে চিনে।কারণ এরা তার ভার্সিটির বড় ভাই।তবে দুজনে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে আছে।অন্না তাদের সাইড কাটিয়ে যেতে যাবে এমন সময় একটা ছেলে তার হাত টেনে ধরলো।

অন্নার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যাবে এমন সময় কে জেনো এসে ছেলেটার হাত চেপে ধরে অন্নার হাতটা ছাড়িয়ে দেয়।অন্না ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা ফারাবী।অন্নার মুখ থেকে আতঙ্কের ছাপ কেটে হাসি ফুটে।

কি ভাই রাতের বেলা মেয়েদের হাত ধরে টানাটানি করছেন কেনো?(ফারাবী)

একটা ছেলে ফারাবীর পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বলে,

কে রে তুই?আমার হাত চেপে ধরিস।(ছেলে)

ফারাবী ছেলেটার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এক ঝটকা দিয়ে ছেলেটার হাত কলার থেকে ছাড়িয়ে ফেলে।তারপরে ছেলেটার কলার চেপে ধরে বলে,

তোর বাপ।(দাঁতে দাঁত চেপে বলে)

ফারাবীর চোখ-মুখ দেখে একটা দৌড়ে পালিয়েছে।ফারাবী ছেলেটার কলার ছেড়ে দেয়।

এরপরে যদি আমার অনুমা-র হাত ধরার সাহস করিস তাহলে তোর হাত আর হাতের জায়গায় থাকবে না।(ফারাবী চোখ রাঙিয়ে বলে)

অন্না ফারাবীর কথা শুনে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ফারাবী কি বললো?সেটা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

ছেলেটা ভয়ে চুপচাপ টলতে টলতে হেঁটে চলে যায়।ফারাবী গিয়ে অন্নার সামনে দাঁড়ালো।

আচ্ছা আপনি যেখানে যান সেখানে কি সঙ্গে করে এমন বখাটেগুলোকে নিয়ে যান।?(ফারাবী)

কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?(অন্না ভ্রু কুচকে বলে)

না মানে সিলেটে গিয়ে আপনার হাত টেনে ধরে আবার ঢাকায় বসেও আপনার হাত টেনে ধরে!(ফারাবী)

অন্না কিছু না বলে হাঁটা শুরু করে।ফারাবী দৌড়ে গিয়ে অন্নার সামনে দাঁড়ায়।

আপনি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন কেনো?(অন্না)

আমি আপনাকে আপনার বাড়িতে দিয়ে আসবো।রাস্তায় আরো বিপদ ঘটতে পারে।(ফারাবী)

আমি একা চলে যেতে পারবো।(অন্না)

সব বিষয়ে জেদ দেখানো ভালো না অনুমা।আমি জানি হয়তো এমন কোনো কারণ আছে যার জন্য আপনি আমাকে ইগনোর করেন।তবে আমি সেই কারণটা জানতে চাই।(ফারাবী)

আপনি সেই কারণ জেনে কি করবেন?(অন্না)

আমি না জানলে আর কে জানবে?(ফারাবী)

অন্না কিছু না বলে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ফারাবী কিছু না বলে অন্নার সামনে থেকে চলে যায়।গাড়ি এনে অন্নার সামনে দাঁড় করিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয়।

অন্না ফারাবীর দিকে এক পলক তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।ফারাবী অন্নাকে তার বাড়িতে দিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যায়।

/?/

অন্না তার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে আর ফারাবীর কথা ভাবছেন।

আমার কেনো জানি মনে হয় মি.খান আমার প্রতি দূর্বল।উনাকে আমার সবটা জানাতে হবে।তাহলে উনি আর আমার প্রতি আসক্ত হতে পারবেন না।(অন্না)

পরক্ষনেই অন্নার মনে পড়ে তার কাছে তো ফারাবীর নাম্বার নেই তাহলে সে কি করে ফারাবীকে তার সাথে দেখা করতে বলবে!

অন্না তার রুম থেকে বের হয়ে তার বাবার কাছে যায়।

বাবা তোমার কাছে ফারাবী খানের নাম্বার আছে?(অন্না)

কেনো পাখি মা? কি করবি?(অন্নার বাবা)

একটু দরকার আছে বাবা।(অন্না)

ওয়েট কর মা।(অন্নার বাবা)

মঈন সাহেব অন্নাকে ফারাবীর নাম্বার দিলো।অন্না নাম্বারটা নিয়ে তার রুমে চলে গেলো।

আচ্ছা অন্না ফারাবীর নাম্বার দিয়ে কি করবে?(অন্নার মা)

হয়তো ফারাবীকে পছন্দ হতে পারে।আর পছন্দ হবে নাই বা কেনো!এতো ভদ্র ছেলে সচারাচর দেখা যায় না।(অন্নার বাবা)

অন্নার তার রুমে এসে মেবাইল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার অনেকটা সংকোচ বোধ হচ্ছে ফারাবীকে কল করতে।

!?!

ফারাবী বেলকনিতে বসে তার গিটারটা নিয়ে টুংটাং করছে।আর অন্নার কথা ভাবছে।হঠাৎ করে তার ফোনটা বেজে উঠলো।রুমে এসে দেখে আননং নাম্বার থেকে কল এসেছে।এতো রাতে আননং নাম্বার থেকে কল এসেছে দেখে ফারাবী প্রথমে ধরতে চায়নি।পরে আবার কি ভেবে কলটা রিসিভ করলো।

হ্যালো কে বলছেন?(ফারাবী)

ফারাবীর কন্ঠ শুনে অন্না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তার কিছু বলতেই কেমন জানি লাগছে।

হ্যালো কে আপনি?(ফারাবী)

এবার অন্না নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বললো,

আমি অন্না।(অন্না)

ওয়াও!মিস.অনুমা আমাকে কল করেছে।বাই দ্যা ওয়ে নাম্বার কোথা থেকে পেলেন?(ফারাবী)

বাবার থেকে নিয়েছে।কালকে আমার সাথে………. রেস্টুরেন্টে দেখা করবেন বিকাল চারটায়।(অন্না)

অন্না কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিলো।তার কেমন জানি অস্থিরতা ফিল হচ্ছিল।তাই সে কলটা কেটে দিয়েছে।মোবাইল টা বালিশের পাশে রেখে অন্না শুয়ে পড়লো।

ফারাবী মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।

কি মেয়ে রে বাবা!কথা শুরু হওয়ার আগেই শেষ করে দিলো।(ফারাবী হেসে দিলো)

|?|

জানালার পর্দা সরিয়ে সকালের সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে ফাহাদ।তার মনটা ভিষণ খারাপ।কারণ সে এখনো মিমিকে খুঁজে পায়নি।তারপরে আবার জানতে পেরেছে তার বাবা-মা আর ভাই আবার ঢাকাতে এসেছে।খবরটা পাওয়ার পরেও সে লজ্জায় তাদের দেখা করতে যায়নি।কোন মুখে তাদের সামনে দাঁড়াবে সে!এতো অনুতপ্ত বোধ কাজ করার পরেও তার মধ্যে পরিবর্তন আসেনি।সে এখনো আগের মতোই রয়েছে।

বিছানা শুয়ে থাকা মেয়েটা পোশাক পড়ে ফাহাদের কাঁধে হাত রাখলো।ফাহাদ পিছনে ফিরে দেখে রাকা দাঁড়িয়ে আছে মুচকি হেসে।ফাহাদ পিছনে ফিরতেই রাকা ফাহাদের গলা জড়িয়ে ধরলো।

রাতটা কেমন কাটলো ফাহাদ বেবি?আজ রাতে কি আবার আসবো নাকি?(রাকা)

ফাহাদ বাঁকা হাসি দিয়ে মেয়েটার হাত তার গলা থেকে ছাড়িয়ে নিলো।অন্যদিকে ঘুরে বললো,

ফাহাদ হোসেন ইউজ করা জিনিস আর ইউজ করে না।সো তুমি এখন আসতে পারো ডার্লিং।(ফাহাদ)

///

অন্না কফিশপে এসে বসে আছে।ফারাবী এখনো আসেনি।আসলে অন্না-ই কিছুটা আগে চলে এসেছে।অন্না সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে ফারাবী তার দিকে এগিয়ে আসছে।অন্না ফারাবীকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।ফারাবী এসে অন্নার সামনে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি কি সেলিব্রিটি নাকি?যে আমাকে দেখে উঠে দাঁড়াতে হবে।(ফারাবী)

আমি আপনাকে এখানে আসতে বলেছি।একটু সিমপ্যাথি তো দেখাতেই হয়।(অন্না)

ওকে ম্যাডাম বসে পড়ুন।(ফারাবী)

অন্না মুচকি হেসে বসে পড়লো।ফারাবী-ও বসলো।

তা বলুন কি খাবেন?(অন্না)

ডেকেছেন আপনি।কিন্তু খাওয়াবো আমি।(ফারাবী)

অন্না কিছু বলতে যাবে ফারাবী ইশারা করে চুপ থাকতে বললো।অন্না ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার দিলো।

কি জন্য ডেকেছেন সেটা বলুন।(ফারাবী)

আপনি আমার জীবন সম্পর্কে সবকিছু জানেন না।আমি একজন ধর্ষিতা।(অন্না)

ফারাবী কিছুটা অবাক হলো।তারপরে নিজেকে শান্ত করে বললো,

কি বলছেন এইসব?(ফারাবী)

হ্যাঁ যা বলেছি একদম ঠিক।(অন্না)

অন্না ফারাবীকে সবটা খুলে বললো।ফারাবী বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে।ফারাবী নিজেকে স্বাভাবিক করে হাসি দিলো।

দেখুন এইসব নিয়ে এতোটা ভেঙে পড়ার কিছু নেই।আসলে বর্তমান যুগে এমন অনেক মেয়েই ধর্ষণ হচ্ছে।আর যারা এই পাপ কাজ করছে তাদের কোনো শাস্তি-ও হয় না।কয়দিন ধরে রাখে অপরাধীকে দ্যান সেই অপরাধী আবার ঘুরে বেড়ায়।যাক এইসব বাদ দেন।আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই।(ফারাবী)

অন্না ভেবেছিলো ফারাবী হয়তো এইসব শোনার পড়ে চলে যাবে।কিন্তু সে নাকি তাকে কিছু বলতে চায়!

অন্না নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,

জ্বী বলুন।(অন্না)

ফারাবী পকেট থেকে একটা আংটির বক্স বের করলো।তারপরে অন্নার চেয়ারের সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো।অন্না ততক্ষণে দাঁড়িয়ে গেছে।

কি করছেন আপনি?(অন্না)

ফারাবী বক্স থেকে আংটিটা বের করে অন্নার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

আমি আপনাকে প্রেম করার প্রস্তাব দিবো না।কারণ বিয়ের পরে প্রেম করে সবচেয়ে বেশি মজা।আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।Will you marry me Miss.Onuma.(ফারাবী মুচকি হেসে বললো)

অন্না অনেকটা চমকে গেছে।আশেপাশের সবাই অন্নাকে বলছেন ফারাবীকে একসেপ্ট করতে।অন্নার অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে তার হাত বাড়িয়ে দিলো।ফারাবী মুচকি হেসে অন্নার হাতে আংটিটা পড়িয়ে দিলো।চারিপাশের সবাই হাততালি দিলো।

ফারাবী আর অন্না রেস্টুরেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।

আচ্ছা আমি তাহলে আসি।(অন্না)

আমি কিন্তু আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে পারি।(ফারাবী)

দরকার নেই।আমি যেতে পারবো।(অন্না)

অন্না পিছনে ঘুরে যেই হাঁটতে যাবে হঠাৎ তার মাথা ঘুরতে লাগলো।অন্না পড়ে যেতে যাবে তার আগে ফারাবী তাকে ধরে ফেললো।তাকিয়ে দেখে অন্না সেন্সলেস হয়ে গেছে।ফারাবী কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।ফারাবী অন্নাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে খুব দ্রুত হসপিটালে যায়।ডাক্তার অন্নাকে চেক-আপ করে।অন্নার জ্ঞান ফিরেছে।

কি হয়েছে উনার ডক্টর?(ফারাবী)

ডাক্তার বললো,
She is pregnant.(সে প্রেগন্যান্ট)

ফারাবী কিছুটা চমকে যায়।ফারাবী নিশ্চিত এটা ওই ধর্ষকের পাপের ফল।অন্নার তো চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ফারাবী গিয়ে অন্নার একটা হাত শক্ত করে ধরে।

আচ্ছা কে করেছে এমনটা?(ফারাবী)

ফাহাদ হোসেন।(অন্না)

নামটা শুনে ফারাবীর আত্মা কেঁপে উঠে।ফারাবী নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়ায়।

চলুন আমার সাথে।(ফারাবী শক্ত গলায় বলে)

কোথায়?(অন্না)

আমি আজই আপনাকে বিয়ে করবো।(ফারাবী)

অন্না ফারাবীর কথা শুনে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।ফারাবী অন্নার হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে বসায়।

দেখুন আপনি এগুলো কি পাগলামো করছেন?আমাদের ফ্যামিলি বলেও একটা বিষয় আছে।(অন্না)

আপনি একদম চুপ করে থাকুন।আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না।(ফারাবী গম্ভীর কণ্ঠে বললো)

অন্না ফারাবীর এমন কণ্ঠ কখনো শুনে নাই।সে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।অন্না চুপ করে বসে আছে।

#চলবে………

#তোমাতেই_আমি_মগ্ন ?

#পর্ব_১৩

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

ফারাবী গাড়ি নিয়ে সোজা কাজি অফিসে গেলো।ফারাবী আর অন্নার বিয়ে হয়ে গেলো।অন্নার কাছে সবটা ধাঁধার মতো লাগছে।

অন্না গাড়িতে বসে আছে।ফারাবী গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছে তার বাবার সাথে।

অন্নার মাথা কাজ করছে না।সে প্রেগন্যান্ট এটা কিভাবে বাবা-মা কে বলবে!আর ফারাবীর বাবা-মা যদি জানতে পারে তাহলে তো কখনোই তাকে মেনে নিবে না।কেউই চায় না একজন ধর্ষিতাকে তাদের বাড়ির বউ করতে।

ফারাবীর কথা বলা শেষ হলে সে গাড়িতে এসে বসলো।

অনুমা আমি বাবাকে সবটা জানিয়েছি।বাবা শুনে অনেক খুশি হয়েছেন।আর এখন তোমার বাড়িতে যাবো।তোমার বাবা-মাকে-ও তো সবটা জানাতে হবে।আর হ্যাঁ আমি এখন থেকে তোমাকে তুমি করেই বলবো।আফটার অল তুমি আমার বউ।(ফারাবী মুচকি হেসে বললো)

আর আমি যে প্রেগন্যান্ট এটা আপনার বাবা-মাকে জানাবেন না?(অন্না)

দেখো তুমি আমার বউ।আমি কাকে বিয়ে করবো এটা আমার ডিসিশন।আর বাবা-মাকে সময় হলেই সবটা জানাবো।তা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।(ফারাবী)

অন্না আর কিছু বললো না।কারণ সে জানে ফারাবীকে কিছু বলেও লাভ নেই।

ফারাবী গাড়ি স্টার্ট দিয়ে অন্নাদের বাড়িতে গেলো।অন্না দরজার সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

কি হলো?কলিংবেল বাজাবে না?(ফারাবী)

অন্না ফারাবীর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।এমনি টেনশনে মরে যাচ্ছে।তার উপরে ফারাবী আরেকটা ঝামেলা বাধিয়েছে।

ফারাবী অন্নার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কলিংবেল বাজালো।কলিংবেল বাজতেই অন্নার মা এসে দরজা খুললো।অনেমার বেগমের মুখে হাসি।

আসো বাবা ভিতরে আসো।(অন্নার মা)

অন্না বুঝতে পারছে না তার মা ফারাবীকে এতো যত্ন করে বাড়ির ভিতরে কেনো নিতে চাচ্ছেন।

অন্না আর ফারাবী দুজনে ভিতরে গেলো।

আসলে আমি আপনারাদের কিছু বলতে চাই।(ফারাবী)

আমরা সবটা জানি।খান সাহেব আমাদের কল করে জানিয়েছেন।(অন্নার বাবা)

যাক তাহলে তো আমার শ্বশুর মশাই আর শাশুড়ি মা আমাদের উপর রাগ করে নাই যা চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।(ফারাবী)

তুমি আমার মেয়েটাকে একটা নতুন জীবন দিয়েছো।কিন্তু বাবা তুমি তো বোধহয় একটা বিষয়ে জানো না।(অন্নার মা)

উনি সবটা জানে আম্মু।আমি উনাকে সবটা জানিয়েছি।(অন্না)

সবটা জানার পরেও তুমি……(অন্নার বাবা)

অন্নার বাবাকে থামিয়ে ফারাবী বললো,

শ্বশুর মশাই এইসব নিয়ে আর কথা বলার দরকার নেই।(ফারাবী)

/?/

অন্নাকে অনেমা বেগম জোর করে একটা লাল শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছেন।যতই হোক নতুন বউ প্রথম তার শ্বশুরবাড়ি যাবে বলে কথা!

অন্না আর ফারাবী খান বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে।অন্নার হৃদকম্পন বেড়ে চলেছে।তার খুবই ভয় হচ্ছে।

যাক আমার পছন্দের পাত্রীকেই তাহলে বউ করে আনলি।(ফারাবীর মা)

ফারাবীর মায়ের কথা শুনে অন্না চমকে যায়।

রুমানা বেগম এক গাল হাসি নিয়ে অন্নার দিকে এগিয়ে যায়।অন্নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আস্তে করে অন্নার থুতনিতে হাত দিয়ে অন্নার মুখটা উপরে তুলেন।

খুব সুন্দর লাগছে আমার বউমাকে।(ফারাবীর মা)

ফারাবী সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে।তুই অন্না মাকে নিয়ে তোর রুমে যা।মেয়েটার চোখ-মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে।(খান সাহেব)

ফারাবী আর কথা না বাড়িয়ে অন্নাকে নিয়ে তার রুমে আসলো।ফারাবী ওয়াশরুমে গিয়েছে ফ্রেশ হতে।অন্না ফারাবীর রুমের ইজিচেয়ারে বসে আছে।সবকিছুর সাথে সে ঠিক তাল মেলাতে পারছে না।কি থেকে কি হয়ে গেলো!তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ওই ফাহাদ নামক নরপিশাচের বাচ্চা তার পেটে!

ফারাবী ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে অন্না চোখ বন্ধ করে আছে আর তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ফারাবী গিয়ে আলতো করে অন্নার চোখের পানি মুছে দেয়।আচমকা হাতের ছোঁয়া পেতে অন্না শিউরে উঠে।তাকিয়ে দেখে ফারাবী তার দিকে তাকিয়ে আছে।অন্না ফারাবীকে দেখে উঠে দাঁড়ালো।

কেনো আমাকে বিয়ে করলেন?নিজের জীবনটা নষ্ট করার খুব ইচ্ছা জেগেছে তাই-না?(অন্না)

অনুমা কি সব বলছো তুমি?তোমাকে বিয়ে করলে আমার জীবন কেনো নষ্ট হবে?(ফারাবী)

অন্না ফারাবীর কলার ধরে জোরে চিৎকার করে বললো,

হ্যাঁ!হ্যাঁ!আমাকে বিয়ে করার জন্য আপনার সুন্দর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।আমি একজন কলঙ্কিত নারী।(অন্না)

অন্না কথাগুলো বলে ফারাবীর বুকে মাথা ঠেকে কেঁদে দিলো।অন্নার কান্না দেখে ফারাবীর অনেক কষ্ট হচ্ছে।ফারাবী অন্নাকে জড়িয়ে ধরলো।অনেকক্ষণ যাবৎ এভাবেই কাটলো।অন্না কাঁদছে আর ফারাবী মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।অন্না উপলব্ধি করতে পারলো সে ফারাবীকে জড়িয়ে ধরে আছে।অন্না ফারাবীকে ছেড়ে চোখের পানি মুছে নিলো।

ফারাবী অন্নার হাত ধরে বললো,

তুমি কোনো কলঙ্কিত নারী নাহ্।এরপরে যদি তোমার মুখে এমন কথা শুনি তাহলে দেখবে এই ফারাবী খান কি করতে পারে!আর তোমাকে বিয়ে করে আমার জীবন একদমই নষ্ট হয়নি।তোমাকে বিয়ে করে আমার জীবনে সুখবিলাস নিয়ে এসেছি।(ফারাবী)

ফারাবী মুচকি হেসে অন্নার দিকে তাকিয়ে আছে।অন্না ফারাবীর মুচকি হাসির দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখ দিয়ে পানি পড়েই চলেছে।

ফারাবী ভ্রু কুচকে বললো,

ওফ!আমার শার্টটা তো নাকের জল আর চোখের জল দিয়ে পরিপূর্ণ করে ফেলেছো।আরো পানি কোথা থেকে আসছে।তোমার চোখের ভিতরে কি সমুদ্র আছে নাকি!(ফারাবী)

ফারাবীর এহেন কথায় অন্না হেসে দিলো।ফারাবীর মুখেও হাসি ফুটলো।সে তো এতোক্ষণ অন্নার মুখের এই হাসিটাই দেখতে চাচ্ছিলো।

!✨!

রাতে কিভাবে ঘুমাতে চাও বলে ফেলো।তুমি চাইলে আমি সোফায় বা নিচে শুয়ে পড়বো।(ফারাবী)

আপনার বাড়িতে এসে আমি আপনাকে কি করে নিচে শুতে বললো!আর তার চেয়ে বড় কথা বিছানাটা একদম ছোট না।দুজনেই শুতে পারবো।আর আমি আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ বিশ্বাস করি মি.খান।(অন্না)

কথাগুলো খুব সুন্দর লাগলো।বাট মি.খান বলাটা ভালো লাগেনি।আবির বাবুর মতো তো আমাকেও ফারাবী বাবু বলা যায় তাই-না!(ফারাবী)

অন্না কিছু না বলে বিছানায় শুয়ে বললো।ফারাবী-ও মুচকি হেসে অন্নার পাশে শুয়ে পড়লো।

||?||

সকালে ঘুম ভাঙতে অন্না দেখলো ফারাবী বাচ্চাদের মতো মুখ করে ঘুমিয়ে আছে।যা দেখে অন্নার মুখে হাসি ফুটলো।সে তাকিয়ে দেখে যথেষ্ট দুরত্ব মেইনটেইন করে ফারাবী ঘুমিয়ে আছে।অন্না উঠে বসলো।বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে চলে গেলো।বাইরে বৃষ্টি পড়ছে।যার কারণে চারিপাশ মেঘাচ্ছন্ন।শীতের সকালে বৃষ্টি মানে অন্যরকম ব্যাপার।

হয়তো যারা জীবনে অনেক আঘাত পেয়ে থাকে আল্লাহ তাদের জন্য এমন একজনকে পাঠিয়ে দেয়।যে আঘাত প্রাপ্ত মানুষটাকে তার ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে।আমার জীবনেও এমন একজনের আগমন ঘটেছে।আই রেলি রেসপেক্ট ইউ ফারাবী বাবু।(অন্না)

অন্না কথাগুলো বলে হেসে দিলো।

—————————–

ফারাবী আর ফারাজ খান অফিসে গিয়েছে।অন্না আর রুমানা বেগম রান্নাঘরে কাজ করছে।তবে অন্নাকে রুমানা বেগম কিছুই করতে দিচ্ছেন না।তিনি নিজেই সবটা করছেন।অন্না শুধু দাঁড়িয়ে দেখছে।

হঠাৎ করে অন্নার মাথা ঘুরতে লাগলো আর বমি বমি ফিল হতে লাগলো।অন্না তাড়াতাড়ি করে ভ্যাসিনের কাছে গিয়ে বমি করে দিলো।যা দেখে রুমানা বেগম কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন।

_?_

জরুরি তলব দিয়ে রুমানা বেগম ফারাজ খান আর ফারাবীকে বাড়িতে আসতে বলেছেন।ফারাজ খান আর ফারাবী বাড়িতে এসে দেখে রুমানা বেগম চোয়াল শক্ত করে বসে আছেন।আর অন্না এক কোণে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।

ফারাবীকে দেখে রুমানা বেগম তার দিকে এগিয়ে আসলো।

লজ্জা করে না তোর?কার না কার বাচ্চা ওই মেয়ের পেটে।আর তুই তাকে বিয়ে নিয়ে এসেছিস।আর তুই নাকি সবটা জানতি?(রুমানা বেগম কর্কশ গলায় বললো)

ফারাবী একবার রুমানা বেগমের দিকে আরেকবার অন্নার দিকে তাকালো।

তুমি কিভাবে জানলে আম্মু?(ফারাবী)

কিভাবে আবার!বমি করতে ছিলো।আমি ভয় পেয়ে ডাক্তারকে খবর দিয়েছি।ডাক্তার এসে বলে গেছে।আর ও-কে জিগাসা করতে ও বললো তুই নাকি সবটা জানিস।ভালোই তো কার না কার পাপের ফল নিজের ঘাড়ে চেপে নিয়েছিস।কোথাকার নষ্টা মেয়ে।আর আমি নাকি এ-কে বাড়ির বউ করতে চেয়েছিলাম।(রুমানা বেগম)

ব্যাস আম্মু!(ফারাবী চিৎকার করে বললো)

ফারাবীর কথায় রুমানা বেগম থমকে যায়।

ফারাবী আবার বলতে শুরু করে,

না জেনেশুনে কোনো কিছু নিয়ে কথা বলাটা ঠিক না।তুমি কিভাবে জানলে ও নষ্টা মেয়ে?তোমার কাছে কোনো প্রমাণ আছে?আর যেই বাচ্চাকে বলছো কার না কার পাপের ফল।তুমি ঠিকই বলেছে।এটা কারো না তোমার বড় ছেলের পাপের ফল।মানে ফাহাদ খানের উপ্স এখন তো সে আবার ফাহাদ হোসেন হয়েছে।তোমার ছেলেই অন্নাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছিলো।(ফারাবী চোখ রাঙিয়ে কথাগুলো বললো)

রুমানা বেগম চুপ হয়ে গেছেন।তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

তাহলে আমি ঠিকই ভেবেছিলাম।ফাহাদ আর ফারাবী জমজ ভাই।এর জন্যই এতো মিল!(অন্না মনে মনে বললো)

আর বাবাকে আমি সবটা বলেছি অফিসে গিয়ে।তোমাকে বলবো ভেবেছিলাম তার আগেই তুমি জেনে গিয়েছো।একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে।(ফারাবী)

রুমানা বেগম ধীর পায়ে অন্নার দিকে এগিয়ে গিয়ে অন্নাকে জড়িয়ে ধরলো।

মা আমাকে মাফ করে দে।আমি তোকে অনেক কিছু বলে ফেলেছি সবটা না জেনে।(ফারাবীর মা)

—–?—–

অন্না রুমে এসে দেখে ফারাবী বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।অন্না গিয়ে ফারাবীর পিছনে দাঁড়ালো।কারো উপস্থিতি টের পেতে ফারাবী পিছনে ঘুরে দেখে অন্না দাঁড়িয়ে আছে।

আই এম রেলি সরি অনুমা।আমার জন্য তোমাকে এতোগুলো বাজে কথা শুনতে হলো।(ফারাবী)

আমি কিছু মনে করিনি।আর গুরুজনরা তো শাসন করবেই।আর মায়ের রিয়েক্ট করাটা একদম স্বাভাবিক বিষয়।কারণ কোনো মা চায় না যে তার ছেলের বউ একজন ধর্ষিতা হোক তার সাথে আবার পেটে বাচ্চা।(অন্না)

জাস্ট স্টপ ইট অন্না।এইসব কথা আমি আর শুনতে চাই না।(ফারাবী ধমকে বললো)

অন্না বুঝতে পেরেছে ফারাবী অনেকটা সিরিয়াস হয়ে গেছে।কারণ আজ পর্যন্ত ফারাবী কখনো তাকে অনুমা ছাড়া অন্না বলে ডাকেনি।

দু-জনের মধ্যে নিরবতা বিরাজ করছে।

আচ্ছা একটা কথা বলবো?(অন্না)

হুম বলো অনুমা।(ফারাবী)

মানে ফাহাদ হোসেন আই মিন খান আপনাদের সাথে থাকেনা কেনো?আর উনি এমন হয়ে গেছেন কেনো?(অন্না)

ফারাবী কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,

আমার তখন অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ।কিন্তু ফাহাদ তখনও ক্লাস টেনের গন্ডি পেরোতে পারেনি।আসলে ওর পড়াশোনায় তেমন মন ছিলো না।বলতে পারো সে ছিলো বকাটে ছেলেদের লিডার।তার পড়াশোনার জেনো উন্নতি হয় সেই আশায় বাবা-মা মিলে ফাহাদকে আমাদের পাশের বাড়ির এক আপুর কাছে পড়তে দেয়।যে আমার আর ফাহাদের থেকে পাঁচ বছরের বড় ছিলো।সেই আপু ওই বাড়িতে একা থাকতো।তার বাবা-মা থাকতেন গ্রামে।অনেক কষ্টে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলো।উনারা অনেক গরীব ছিলো।আপু নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতো টিউশনি করিয়ে।পাশের বাড়িতে একটা রুম ভাড়া নিয়ে থাকতো।আর ছেলে-মেয়েদের পড়াতো।ফাহাদ-ও পড়তে যেতো।কয়দিন ভালোভাবেই কেটে যায়।কিন্তু হঠাৎ একদিন ফাহাদ ওই আপুর রুমের দরজা লাগিয়ে আপুকে….(ফারাবী এটুকু বলে থেমে যায়)

নিজেকে স্বাভাবিক করে আবার বলতে শুরু করে,

সেই আপুকে রেপ করে।আপু চিৎকার করায় সবাই দরজা ভেঙে সেখানে গিয়ে হাজির হয়।আর ফাহাদ বসে বসে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলো।সে তো খুব মহৎ কাজ করেছিলো।(লাস্টের কথাটা ফারাবী দাঁতে দাঁত চেপে বলে)

ফারাবীর চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে।ফারাবী রাগে একপ্রকার কাঁপছে।অন্না ফারাবীর কাঁধে হাত রাখলো।ফারাবী চোখ বন্ধ করে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।

অন্না ছোট্ট করে বললো,

তারপর?(অন্না)

আপুর ওমন অবস্থা করার কারণে মানুষ ফাহাদকে মারতে চেয়েছিলো তারপরে ফাহাদ পালিয়ে যায়।তারপরে থেকে মানুষ আমাদের নিচু চোখে দেখতে শুরু করে।তারপরে এখানকার মায়া ত্যাগ করে আমি আর বাবা-মা সিলেটে চলে যাই।ফাহাদের সাথে তারপরে থেকে আর কোনো যোগাযোগ ছিলো না।এখনো নেই।(ফারাবী)

ফারাবী পকেটে হাত ঢুকিয়ে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে বাইরের দিকে তাকিয়ে।

আচ্ছা ওই আপুর কি হয়েছিলো?(অন্না)

আপু এখন বিয়ে করে বিদেশে আছে।তার বেস্টফ্রেন্ড তাকে ওমন একটা খারাপ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে।দ্যান ওই বেস্টফ্রেন্ডের সাথেই বিয়ে হয়।আমি এটুকুই জানি।তাও অনেক খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছি।(ফারাবী)

#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here