তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার,12,13

0
1934

#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার,12,13
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব১২
আজকে রাতে বারবিকিউ পার্টি।ছেলেরা রান্না করবে।আর মেয়েদের ছুটি।কিন্তু বোর হয়ে যাচ্ছি বসে থাকতে থাকতে।তখনই অয়ন বলল এখন একটা গান হলে কেমন হবে?শুভ্র তুই অনেক ভালো গান গাইতে পারছ।তুই গান কর।
কিন্তু শুভ্র কোনো ভাবেই রাজি হচ্ছিল না গান গাইতে। কিন্তু আমি অনেক রিকোয়েস্ট করার পর গান গাইতে রাজি হলো।অয়ন রুম থেকে গিয়ে গিটার নিয়ে এলো।শুভ্র গিটার হাতে নিয়ে গান শুরু করল
রাতের সব তারা আছে
দিনের গভীরে,
বুকের মাঝে মন যেখানে
রাখবো তোকে সেখানে,
তুই কি আমার হবি রে?

মন বাড়িয়ে, আছি দাঁড়িয়ে
তোর হৃদয়ে, গেছি হারিয়ে
তুই জীবন-মরন সবই রে..
তুই কি আমার হবি রে?

আমার পথটা চলে যায়, তোরই দিকে
চোখের কলম, শত কবিতা লিখে,
এই হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে
সেই কবিতা শুধু তোকে নিয়ে।

চোখ ভোরে তুই, দেখ পড়ে তুই
প্রেম কবিতায় তোকে ছুঁই
তুই চিনে নে সে কবি রে ..
তুই কি আমার হবি রে ?

(বাকিটুকু নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)
শুভ্র গানের প্রতিটি কথা আমার দিকে তাকিয়ে গাচ্ছিলো।যেন আমাকে ডেডিকেট করে গানটি গাওয়া।ওই সময় আমার নিজেকে সবচেয়ে হ্যাপি গার্ল মনে হচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল শুভ্রকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি।কিন্তু সবাই সামনে থাকার কারনে চুপচাপ বসে থাকি।আর সবার সাথে হাততালি দেই। এরপর আনায়া বলে অয়ন তুমি একটা গান কর।সাথে আমি ও তাল মিলিয়ে বললাম করো না অয়ন।অনেক বছর ধরে তোমার গান শুনি না।শুভ্র ও বলল অয়ন তুই একটা গান কর সবাই যখন রিকোয়েস্ট করছে আমি গিটার বাজাচ্ছি।

আমি পারিনি তোমাকে
আপন করে রাখতে
আমি পারিনি তোমাকে
আবার আমার করে রাখতে।
তুমি বুঝোনি, আমি বলিনি
তুমি স্বপ্নতে কেন আসোনি
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে
সব গেয়েছি।
গানে-গানে, সুরে-সুরে কত কথা
বলেছি তোমাকে
তুমি বুঝোনি, বুঝোনি।

কখনো যদি আনমনে চেয়ে
আকাশের পানে আমাকে খুঁজো
কখনো যদি হঠাৎ এসে
জড়িয়ে ধরে বলো ভালোবাসো।
আমি প্রতি রাত, হ্যাঁ, প্রতিক্ষণ
খুব অজানায় কত অভিনয়
করে বসি তোমায় ভেবে।
আমার অযথা সব লেখা গান
সব শুনে মন করে উচাটন
তুমি বোঝোনি কেন আমাকে।
তুমি বুঝোনি, আমি বলিনি
তুমি স্বপ্নতে কেন আসোনি
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে
সব গেয়েছি।
(বাকিটুকু নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)
গানটা শেষ হতে না হতেই আমি ওঠে চলে যেতে নিই।তখনই শুভ্র বলল,নিরাপাখি চলো আমরা রিসোর্টটা ঘুরে দেখি।হয়তো বুঝতে পেরেছিল যে আমার এখানে ভালো লাগছে না।

শুভ্র আর আমি একসাথে হাটছি। আজকের ওয়েদারটা ও অনেক সুন্দর। আবার পূর্নিমার রাত হওয়ার কারনে আকাশে বৃত্তাকার চাঁদ। শুভ্র বলেছিল যে এই ওয়েটারে আমি যেন শাড়ি পড়ি।ওর আবদার রাখতেই আমি আজকে শাড়ি পরেছি।হালকা বাতাসের কারনে চুলগুলো উড়ছে।তাই আমি চুলগুলো একটা খোঁপা করে নিতেই শুভ্র বলল, কিছু কিছু জিনিস অবাধ্য থাকাই সুন্দর। চুলগুলো খোলে দাও।আচ্ছা নিরাপাখি তুমি কি আমাকে বিয়ে করে হ্যাপি না?তুমি কি আমাকে হাসবেন্ড হিসেবে মানো না? নাকি এখনো অয়ন কে!

আমি তাড়াতাড়ি বললাম শুভ্র স্টপ। এরকম ননসেন্স এর মতো কথা বলছো কেনো?লজ্জা করে না নিজের বউকে জিজ্ঞেস করতে যে সে এখনো অন্য কাউকে ভালোবাসে নাকি!আমি তোমার বিয়ে করা বউ।আমি তোমাকে আমার হাসবেন্ড হিসেবে কেন মানবো না! আমি তোমাকে নিয়ে হ্যাপি থাকতে চাই।এখানে অয়নের নাম কেন আসবে?ও আমার অতীত। আর ওটা ভালোবাসা ছিল না।সাময়িক মোহ ছিল।কারন তোমার প্রতি আমার যে ফিলিংস অয়নের প্রতি ওইরকম ফিলিংস কখনোই ছিল না।তোমাকে এক মুহুর্ত না দেখলে আমার দম বন্ধ হয়ে যায়।আমার অয়নের প্রতি এমন অনুভূতি কখনোই হতো না।কারন ওটাতো সত্যিকারের ভালোবাসাই ছিল না।
শুভ্র হেসে বলল, তার মানে তুমি স্বীকার করো যে তুমি আমাকে ভালোবাসো!
হুম,যে মানুষটা আমাকে এতোটা ভালোবাসে,আমাকে নিয়ে এতোটা ভাবে,এতোটা কেয়ার করে তাকে না ভালোবেসে থাকা যায়।
শুভ্র বলল,আমার ছোট পিচ্চি তো দেখি অনেক বড় হয়ে গেছে।আজকে শাড়িতে তোমাকে পুরো বউ বউ লাগছে।ইচ্ছে করছে!
আমি আড়চোখে তাকিয়ে বললাম কি ইচ্ছে করছে?
শুভ্র আমাকে টুপ করে কিস করে বলল,আদর করতে।
হু আমি অনেক ছোট মানুষ। আর নিজের কাকাতো বোনকে এমন কথা বলতে লজ্জা করে না!নাকব বাসায় মা-বোন নেই।
শুভ্র কপাল কুঁচকে বললো, সবই আছে কিন্তু বউ নেই।
আমি বললাম, তাই নাকি!
শুভ্র একটু বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বলল,দিলে তো আমার ফিলিংসটার দফারফা করে।আর তুমি ছোট!তাহলে একটু আগে ওই কথাগুলো কে বলছিল?
হুম আমি তো ছোটই।দেখ তোমার কাঁধের সমান। আর তুমিইতো আমাকে পিচ্চি বলে ডাকো।

________ ________

কি ব্যাপার আবির ভাইয়া? আমার ননদিনীর সাথে ওপস আমার বোনের সাথে কি করছো তুমি?একটু শালিকাদেরকে ও সময় দিও।আন এখনই তোমরা সুপারগ্লুর মতো চিপকে থাকছো তাহলে বিয়ের পরতো……….

চলবে……..

#তুই_একমাত্র_আমার_অধিকার
#ছোহা_চৌধুরী
#পর্ব১৩

কি ব্যাপার আবির ভাইয়া? আমার ননদিনীর সাথে ওপস আমার বোনের সাথে কি করছো তুমি?একটু শালিকাকে ও সময় দিও।একমাত্র শালিকা বলে কথা।আর এখনই তোমরা সুপারগ্লুর মতো চিপকে থাকছো তাহলে বিয়ের পরতো তোমাদেরকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না।
আবির ভাইয়া শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,তাই নাকি!আর ২ ঘন্টা ধরে যে আপনি আর আপনার বর উধাও সেটা কে বলবে হুহ!
পরক্ষনেই শুভ্র এসে বলল, পিচ্চি আমার বিয়ে করা বউ। আর ভাইয়া তোমার কাছে তো এখনো আমার বোনের বিয়েই হয়নি।বিয়ের পরের জন্য ও কিছু জমিয়ে রাখো।
আবির ভাইয়া বললো,তাই নাকি মি.এক্সপার্ট! তা আপনিও বুঝি জমিয়ে রেখেছিলেন? তাহলে তো এতোদিন আমি আংকেল ডাক শোনার কথা।
শুভ্র ভাব নিয়ে বলল,আসবে আসবে।এখন ও লোডিং হয়নি।লোডিং হয়ে ডাউনলোড হবে।আমি তো আবার ফুটবল টিম বানাবো।তাই আরকি দেরি হচ্ছে।আর আমার পিচ্চিই তো এখনো বেবি।ও আগে বড় হোক তারপর তো।
ওনাদের লাগামছাড়া কথা শুনে আমি মুহূর্তেই ওখান থেকে চলে আসলাম।নয়তো আমার মান সম্মান বলে আর কিছু থাকবে না।

_______ ________

দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের ৮ মাস কেটে গেল।আমরা কয়েকমাস হলো নতুন বাসায় উঠেছি।প্রথম প্রথম বাড়ির জন্য মন খারাপ লাগলেও এখন এতোটা লাগে না।।প্রতিদিনই শুভ্রকে আমি নতুন করে চিনছি।ওনিই কি সেই আগের শুভ্র! কতো তফাত। মনে হয় যেন আগের শুভ্র আর এখনের শুভ্র দুজন ভিন্ন মানুষ। ।একটা মানুষ কি করে পারে একজনকে এমন ভাবে ভালোবাসতে!এতোটা আগলে রাখতে!আমার অতীতের কথা জেনেও,অয়নের সাথে রিলেশনের কথা জেনেও কখনো কিছু বলে নি।কখনো অবিশ্বাস করেনি আমাকে।আমার অতীত নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি।সবসময় পাশে থাকে আমার।

শুভ্র আজকে সকাল সকাল অফিসে গিয়েছে।কি যেন ইমারজেন্সি কাজ আছে নাকি ওর।ও তো আবার কয়েকদিন পরপরই চট্টগ্রাম যায় সপ্তাহ খনিকের জন্য ব্যবসায়ের কাজে।তখন আমাকে ওই বাসায় রেখে যায়।আবার যাবে মনে হয়।তাই এতো ব্যস্ত।

____________ ____________

আজকে চিন্তা করলাম শুভ্রের জন্য আমি স্পেশাল কিছু রান্না করব।সবসময় ২ জন মেইডই রান্না করে।কিন্তু আজকে আমি রান্না করব।শুভ্রের কাচ্চি বিরিয়ানি খুবই পছন্দ। ইউটিউব দেখে রান্না করবো ভাবছি।যেই কথা সেই কাজ।গিয়ে রান্না শুরু করলাম।

কিন্তু কাকাই নিরাপাখি কি মানবে এই কথা?আমার মনে হয়না নিরাপাখি সহজে মানতে পারবে।আর তুমিতো জানোই নিরাপাখি আমার কাছে ফাস্ট প্রাইরোটি।তাই সম্পূর্ণ ডিসিশন ওর ওপর ডিপেন্ড করবে বলে শুভ্র ফোন কেটে দিল।আর অফিসার থেকে বেরিয়ে গেলো।

অফিস থেকে যাওয়ার সময় একটা আইসক্রিম পার্লারের সামনে গাড়ি সাইড করে আইসক্রিম কিনে নিলো শুভ্র। নয়তো বাসায় তার জায়গা হবে না।রোজ রোজ নিরাপাখির জন্য শুভ্র কিছু না কিইু নিয়েই যায়।কারন এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে এখন।
দরজায় নক করতেই নিরা দরজা খোলে দিয়েছে।শুভ্রের সাদা শার্ট ঘেমে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে পড়েছে। খুব ক্লান্ত।কিন্তু নিরাকে কাছে পেলেই শুভ্রের সব ক্লান্তি দুর হয়ে যায়।

আজকে নিরাকে দেখে শুভ্র একটু বেশি অবাক।হালকা গোলাপি কালার শাড়ি,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চোখে কাজল।টিপ পড়েনি কারন শুভ্র টিপ পরা পছন্দ করে না কারন ইসলাম ধর্মে টিপ পরা ঠিক না।হাতে গোলাপি চুড়ি,কানে ঝুমকো,নাকে দুল আর মাথায় খোঁপার সাথে ফুল।
নিরাকে দেখে শুভ্র টিটকারি করে বলল,এইযে আফা,নিরা নামের কেউ কি বাসায় আছে?আসলে ওনার নামে একটা আইসক্রিম পার্সেল ছিল।
আমি রাগী ভাবে বললাম,আমি শুভ্র নীল আহমেদের ছোট বোন আমাকে দিনতো।কিন্তু শুভ্র বলল,আফা এইন পার্সেলট্ আফনেরে দেওন যাইবো না।নিরাকেই লাগবে পার্সেলটা নিতে।
আমি রাগীভাবে তাকিয়ে বললাম, কোথায় আমার প্রশংসা করবে তা না করে ডং শুরু করেছে।নিজের কোনো খেয়াল রাখবে না।ঠিকমতো খাবে না।চেহারার কি অবস্থা করেছে।সারাদিন ব্যস্ত আর ব্যস্ত।আবার দুদিন পর পর তো চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা আছেই। আমার এতো কিছু চাইনা।তুমি সবসময় আমার সাথে থাকলেই হবে।

শুভ্র কান ধরে বলল,ওকে ওকে,সরি রে।এভাব তো ঠান্ডা হো।এখন থেকে এতো পরিশ্রম করবো না।সত্যি
আমি ঠোঁট উলটিয়ে বললাম,কেমন লাগছে আমাকে?
শুভ্র নিজের বুকে বা সাইডে হাত রেখে বলল,আমাকে মারার প্লান করছিস তুই!তাই এভাবে সেজেছিস।এমনিতেই যাদের সুন্দর লাগে তাদের কখনো সাজতে নেই।কারনে সাজলে তাদের মারাত্মক সুন্দর লাগে যা প্রথম দেখায় যেকাউকে ঘায়েল করতে সক্ষম।
আমি হেসে বললাম,হয়েছে হয়েছে।এবার ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো।

শুভ্র মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে বললো,সামথিং ইজ রং।কারন নিরাপাখি নিজের আইসক্রিম খাওয়া বাদ দিয়ে আমার জন্য ডাইনিং এ ওয়েট করছে বিষয়টা ঠিক হজম হচ্ছে না।কথাগুলো বলতে বলতে ডাইনিং এ বসলো।আর সামনে কাচ্চি বিরিয়ানি দেখে তো অবাক।তারমানে আমার নিরাপাখি আজকে আমার জন্য রান্না করেছে।কিন্তু পিচ্চি তুমি কিচেনে না গেলেও পারতে।যদি হাত কেটে যেত বা গরম লাগতো হাতে!
আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম,এই যে মিষ্টার আমি ছোট না।ওকে।আমি বড়ো হয়েছি এখন।
শুভ্র হেসে বলল,তাই নাকি! তাহলে প্রতিদিন বাচ্চাদের মতো আইসক্রিম, চকোলেট, ফুচকার বাইনা কে করে শুনি!আর আমার কাছে তুই ওলয়েজ পিচ্চি।
আমি বললাম,বায়না করতেও অধিকার লাগে।সবার কাছে বয়না করা যায় না।আর আমার সব বায়না তো তোমার কাছেই।
শুভ্র বলল,আচ্ছা নিরাপাখি,আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।
আমি হেসে বললাম,হুম বলো।এতো ফর্মালিটিরনতো কিছু নেই।ফটাফট বলে ফেলো।
শুভ্র বললো,আমি সিরিয়াস।
আমি ঠোঁট উলটিয়ে বললাম,চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা বললে বেঁধে রাখবো।চিনো আমাকে আমি কে!আমি শুভ্রের বউ।অনেক সাহস আমার।আর যদিও চট্টগ্রাম যাও আমাকে নিয়ে যাবে বলে দিলাম।
শুভ্র বলল,তোমার ডিভিশনের উপর আমার সবকিছু নির্ভর করে।আগে শোনো তো।আসলে…
আমি বললাম,আসলে কি!বলো আমাকে। কি কোনো সমস্যা হয়েছে?তুমি আমাকে বলো।
আসলে…..

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here