সুখের_নেশায়,১০,১১

0
988

#সুখের_নেশায়,১০,১১
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___১০

রাতের হিম শীতল পবনে চৈত্রিকার মাথায় চাপানো লাল পাতলা ওড়না টা সরে গেছে। এক গুচ্ছ কেশ বাতাসের আলিঙ্গনে মুক্ত হয়ে গেল। উড়তে শুরু করে অবাধে। চৈত্রিকাকে জ্বালাতনে মত্ত চুলগুলো। এক হাতে ফ্লাস্ক আঁকড়ে ধরে অন্য হাতে চুলগুলো ঠিক করে ওড়না টেনে মাথায় দিল চৈত্রিকা। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ঝলমল করছে চারপাশ। আকাশের চাঁদ আজ দীপ্ততা ছড়াচ্ছে না। চাঁদ বোধ হয় নত হয়েছে মেঘের কাছে। তাই তো এক ফালি কালো মেঘ উড়ে এসে ঢেকে দিয়েছে চন্দ্রিমা। চৈত্রিকা ধীর ধীর পা ফেলে সাফারাতের কাছে এল। ঠিক কাছে নয় মধ্যিখানে দূরত্ব এক হাত। অথবা তার চেয়ে অধিক। সাফারাতের কৃষ্ণচূড়ার ন্যায় রাঙা মুখশ্রীতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল চৈত্রিকা মাথা উঁচু করে। চৈত্রিকা যে খাটো এমন নয়,যথেষ্ট লম্বা সে। কিন্তু সাফারাত তার থেকে একটু বেশিই লম্বা। বয়সের ব্যবধান এক কি দু’মাস হবে অথচ সে কত চিকন। মনে হয় ফুঁ দিলেই উড়তে পারবে অনায়সে। উল্টো সাফারাতের সুঠাম,বলিষ্ঠ দেহ। হাত দুটো পেশিবহুল। বাহ্যিক গঠন প্রকাশ করে সাফারাত বোধ হয় চৈত্রিকা থেকে অনেক বড়। এমন তো কিছুই নয়। দু’জনেই তো সমবয়সী। চৈত্রিকা আগে বিনাবাধায় মন খুলে সবকিছু সাফারাতের কাছে ব্যক্ত করলেও আজ আর পারে না। সময় বদলে গেছে। পেরিয়ে গেছে বহু বছর। বছর খানেক পর সাফারাত কে খুঁজে পেল চৈত্রিকা এক নতুন সাফারাত হিসেবে। যার নিকটে একটা শব্দ বলতেও চৈত্রিকার বুকে একদফা তোলপাড় হয়ে যায়।

সাফারাত লাল চক্ষুজোড়া নিয়ে চৈত্রিকার দিকে তাকিয়ে আছে স্থির,নির্নিমেষ। আচমকা জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আপনার গাল দুটো লাল রঙে ছেয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে আয়না নেই। নয়ত আরশিতে দেখতে পেতেন আপনি,আপনার স্নিগ্ধ রক্তিম রূপ টুকু। ‘
চৈত্রিকা নিষ্প্রাণ,নির্বাক। কি বলল এটা সাফারাত?সত্যিই কি তার কপোলে ছেয়ে আছে লাল আভা?থাকলেই বা সাফারাত অকপটে পারল বলে দিতে!লজ্জা কাটানোর জন্য তড়িঘড়ি করে বললো,
‘ কেমন আছেন? এতোদিন পর হঠাৎ এত রাতে?আপনার চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন?আপনি কি অসুস্থ?’

চৈত্রিকার অনর্গল প্রশ্নে সাফারাত ভ্রুঁ উঁচিয়ে চাইল। তাতেই দমে গেল চৈত্রিকা। তার ভিতরকার সত্তা সাফারাতের এই কাজে দুর্বল হয়ে পড়ছে। বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটা শব্দ হচ্ছে অনবরত। কথা বলার মতো উপযুক্ত শব্দ হারিয়ে বসল চৈত্রিকা। সাফারাত এগিয়ে এলো। খুব কাছাকাছি। চৈত্রিকার শ্বাস ভারি হয়ে আসতে শুরু করে ক্রমশ। সাফারাতের হুটহাট এতো কাছাকাছি তার শিরা উপশিরায় কাঁপন ধরিয়ে দেয়। শিহরণ জাগায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে।

সাফারাত হাত বাড়ালো। মুহুর্তে চৈত্রিকার ভ্রুঁ যুগল ললাট ছুঁয়ে দিল। হকচকিয়ে গেল বেশ। নিজের হাত টা শূন্য অনুভব করতেই অপ্রতিভ হয়ে পড়ে। সাফারাত ফ্লাস্ক টা নিজের কাছে নিয়ে নিয়েছে অথচ টেরই পেল না। শ্রবণ গ্রন্থিতে পৌঁছে অনুরোধ সূচক ভরাট কন্ঠস্বর,
‘ আপনার হাত টা একটু ধরি চৈত্রিকা?’
এতো মায়া মিশানো আবেগি অনুরোধ অবজ্ঞা করতে ব্যর্থ হলো চৈত্রিকা। ছোট্ট করে প্রতুত্তর করে,
‘ হু!’
সাফারাত যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল। নরম, কোমল হাত টা ধরতেই আঁতকে উঠে চৈত্রিকা। পা দুটো থামিয়ে বিচলিত,অস্থির কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আপনার গায়ের তাপ অনেক বেশি সাফারাত। এতো জ্বর নিয়ে গভীর রাতে এখানে কি করছেন?’

সাফারাতের অভিব্যক্তি স্বাভাবিক। যেন চৈত্রিকা এমন প্রশ্ন করবে, অস্থির হয়ে উঠবে সে আগে থেকেই জানত। উত্তর দিল না। দুর্বোধ্য হাসল কেবল। চৈত্রিকা চমকে উঠে। উত্তরের আশায় চেয়ে আছে নিঃশব্দে। সাফারাত নিষ্প্রভ স্বরে তাড়া দিয়ে বললো,
‘ চলুন চৈত্র। রিকশাওয়ালা চাচা সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছেন।’

চৈত্রিকা দাঁড়িয়ে রইল। সাফারাতের আলতো টানে এক পাও নাড়ালো না সে। জেদ চেপেছে মনে। সাফারাতের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া তার মনে দাগ কেটেছে। মন হচ্ছে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে সাফারাত। অবহেলা করছে। বাধ্য হয়ে সাফারাত বলে উঠল,

‘ আপনি তো আমার খবর নেন নি। তাই আমি চলে এলাম আপনাকে দেখতে। নির্মলিত চক্ষুদ্বয়ে যদি আপনার প্রতিচ্ছবি ভাসে, তাহলে স্বচক্ষে, বাস্তবে কেন একটা বার আপনাকে দেখার জন্য ছুটে আসতে পারব না চৈত্র?’
সাফারাতের স্বাভাবিক বাক্য অস্বাভাবিক ভাবে চৈত্রিকার মস্তিষ্ককে গিয়ে বিধঁল। আমতা আমতা করে বললো,
‘ মানে?’
‘ অদ্ভুত হলেও সত্যি আপনি আমার স্বপ্নে এসেছিলেন। তাই ভাবলাম অসুস্থ শরীর নিয়ে বিছানায় পড়ে না থেকে একটা বার দেখে আসি আপনাকে। এবার চলুন।’

গলায় গম্ভীরতা এঁটে বললো সাফারাত। চৈত্রিকা চুপ করে শুনে গেল। সে ক্ষণিকের জন্য অন্য কিছু ভেবে বসেছিল। অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে ক্ষীণ নিঃশ্বাস ফেলল। যথাসাধ্য চেষ্টা করল নিজের মুখ ভঙ্গি সাফারাতের কাছ থেকে লুকাতে। আমরা যাকে ভালোবাসি সেই মানুষটাও আমাদের ভালোবাসুক এটাই তো প্রত্যাশা করি। চৈত্রিকা এক মুহুর্তের জন্য ধরে নিয়েছিল মিমের কথা সত্যি। সাফারাতের মনে হয়ত তার জন্য অনুভূতি আছে। কিন্তু পরক্ষণেই সে ভুল প্রমাণিত হলো।

‘ ওইদিকে তাকিয়ে আছেন কেন?যাবেন না?’
‘ কোথায়?’
‘ আমাকে বেশি প্রশ্ন করলে বিরক্তি ধরে যায় চৈত্র। বিশ্বাস রেখে চলতে পারেন। নাকি আগের মতো বিশ্বাস নেই? ‘
সাফারাতের কন্ঠে স্পষ্ট বিরক্তির ছোঁয়া। চৈত্রিকা উত্তেজিত সুরে বললো,
‘ কেন থাকবে না?সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্বাস ঠুনকো হয় না। যদি অপর মানুষ টা বিশ্বাস রাখতে জানে।’
কথাটা বলে চৈত্রিকা হাঁটতে শুরু করে সোজা। আবছা আঁধারে একটা রিকশা দেখা যাচ্ছে। ওইদিকেই এগিয়ে গেল দু’জনে। রিকশাওয়ালা চাচা সাফারাত কে দেখে বিস্তর হাসল পান খাওয়া লাল লাল দাঁত গুলো দেখিয়ে। চৈত্রিকা বুঝল সাফারাত নিশ্চয়ই তাকে এখন রিকশায় উঠতে বলবে! তাই বলার পূর্বে উঠে বসল। চেপে গেল খানিকটা। সাফারাত পাশে বসে গা ঘেঁষে। এক রিকশায় দু’জন মানুষ, মাঝখানে থাকবে দূরত্ব তা ভাবা ভুল।

চাচা হুডি তুলে দিতে চাইলে বাঁধা দেয় সাফারাত। রিকশা চলার সাথে সাথে হুড় হুড় করে প্রবল হাওয়া ছুঁয়ে দিচ্ছে দেহের সর্বাঙ্গে। চৈত্রিকার জামা টা পাতলা হওয়ার দরুন নিদারুণ ভাবে কাঁপতে লাগল সমস্ত দেহ। জড়োসড়ো হয়ে বসল কিছুটা। হাত টা বার বার সাফারাতের লোমশ হাতে লেগে যাচ্ছে। নাসারন্ধ্রে গিয়ে ঠেকছে চিরচেনা পারফিউমের মৃদু মৃদু সুবাস। সাফারাত গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,
‘ একটু নিচু হন তো চৈত্র। নাহলে আপনার মাথায় হাত লেগে যাবে।’

চৈত্রিকা বুঝল না। কিন্তু কথামতো মাথা ঝুকালো। সাফারাত নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে চৈত্রিকার পিঠে দিয়ে দিল। দুর্বল কন্ঠে বললো,
‘ এটা পড়ে নিন।’
‘ কিন্তু আপনি?’
‘ আমাকে আপনার মতো কাঁপতে দেখেছেন?শীত না আসতেই এতো কাঁপছেন। ‘

চৈত্রিকা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেল। জ্যাকেট টা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আঁড়চোখে তাকাল সাফারাতের দিকে। চেয়ে রইল অনিমেষ। ভিতর থেকে রোমাঞ্চকর অনুভূতি জেগে উঠছে। নতুন করে প্রেমে পড়ছে চৈত্রিকা। নতুন ভাবে মনে আবারও ভালোবাসা বেড়ে চলেছে পাশে থাকা মানুষটার জন্য। চৈত্রিকার অবচেতন মন সাফারাতের দিকে ঝুঁকে পড়লেও সচেতন মস্তিষ্ক জানিয়ে দিল–‘ সাফারাত ভালোবাসে না তোকে চৈত্র। ভালোবেসে বন্ধুত্ব নষ্ট করিস না। তাছাড়া নিজেদের পরিস্থিতি দেখ। রাত পোহালে হয়ত রাস্তায় ঠাঁই হবে তাই সাফারাতের মতো ছেলেকে চাওয়া নিতান্তই বোকামি।’
সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছেড়ে সামনে তাকাল। একটা টং দোকান দেখা যাচ্ছে। এই গভীর রাতেও মানুষ চায়ের সাথে আড্ডা জমিয়েছে জমপেশ। সাফারাত রিকশাওয়ালা কে বললো,
‘ চাচা এখান থেকে তিনটা চায়ের কাপ নিয়ে আসুন। একেবারে কিনে নিয়ে আসবেন। তাহলে আর ফেরত দিতে হবে না।’
এই বলে সাফারাত ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে চাচার দিকে বাড়িয়ে দিল। রিকশাওয়ালা চলে গেল কাপ আনতে। চৈত্রিকার মুখ টা থমথম হয়ে গেছে অকস্মাৎ। তার উচিত ছিল সাথে তিনটা কাপ নিয়ে আসার। একবারও মাথায় আসে নি চা খাবে কিভাবে! কাপ নিয়ে আসতেই সাফারাত চা ঢেলে প্রথমে চাচাকে দেয়। চাচা মুখে হাসি ফুটিয়ে নিয়ে নিলেন। খুশি হলেন খুব,তা চেহারায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে চৈত্রিকা। আরেক কাপ চৈত্রিকার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সাফারাত নিম্নস্বরে বললো,

‘ চাইলেই এখান থেকে চা খেতে পারতাম। কিন্তু আজ আপনার হাতের চা খেতে ইচ্ছে হয়েছিল চৈত্র। কষ্ট দিলাম একটুখানি। ‘

চৈত্রিকা যতই সাফারাতের কথা শুনছে তীব্র অবাক হচ্ছে। রিকশা আবারও চলছে। চৈত্রিকা চোখ ঘুরিয়ে চারপাশ টা দেখছে। গাঢ় তমসার ভিড়ে রিকশায় চড়ে শহর দেখবে তা কল্পনাতীত ছিল চৈত্রিকার। দৈনন্দিন জীবনের কঠিন পরিস্থিতি, কষ্ট, দুঃখ, ক্লান্ত এক নিমিষেই ভুল গেল চৈত্রিকা। ক্ষণিক সময়ের জন্য। ক্লান্ত আঁখিদ্বয় বুঁজতেই কর্নধার হলো সাফারাতের মাদকতাপূর্ণ কন্ঠস্বর,

‘ আপনি আমাকে দেখতে কেন গেলেন না চৈত্র?’

বিস্মিত হলো চৈত্রিকা। তৎক্ষনাৎ জিজ্ঞেস করল,

‘ কোথায় দেখতে যায় নি?’
‘ বহু বছর আগে যখন আমি জ্বরে কাতরাচ্ছিলাম তখন। আপনি খোঁজ নেন নি আমার। অভিমানে জার্মান পাড়ি জমিয়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনাকে ছাড়া আমার কত কষ্ট হচ্ছিল। আম্মু কে অনেক বার বলেছি আমার কষ্ট হচ্ছে চৈত্র কে ছাড়া। আম্মু আমায় আশ্বাস দিয়েছিল আপনার খোঁজ করবে। আপনাকে দেখতে যাবে। নিজের কাছে যত্ন করে রাখবে আপনাকে যেন জার্মান থেকে ফিরেই আমি আপনাকে পেয়ে যাই। কিন্তু আম্মু রাখে নি নিজের দেওয়া কথা। চলে গেছে আমায় অমানুষগুলোর কাছে রেখে। ‘

এলোমেলো কন্ঠে অনেক কিছু বলতে লাগল সাফারাত। চৈত্রিকা হতবিহ্বল। সাফারাতের কথা বুঝে উঠতে পারছে না। সাফারাত কি কলেজ জীবনের কথা বলছে!

লাগাতার বিড়বিড় করে যাচ্ছে সাফারাত। চৈত্রিকা প্রথম কথাগুলো স্পষ্ট শুনলেও এখন আর শুনছে না। ভয়ার্ত নেত্রে সাফারাতের দিকে তাকাল। গায়ে স্পর্শ করতে বুকটা ধ্বক করে উঠে। কন্ঠে এক রাশ উৎকন্ঠা,
‘ চাচা উনার বাড়িতে নিয়ে চলুন। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে। ‘
‘ কোথাও নিবেন না চাচা। আপনি বলার কে চৈত্র?চাচা শুধু আমার কথা শুনবে।’

সাফারাতের ধমকে চৈত্রিকা করুন দৃষ্টিতে তাকাল। হয়ত জ্বরের ঘোরে ধমকেছে সাফারাত। নদীর ধারে রিকশা থামতেই সাফারাত দুর্বল দেহ টা নিয়ে নেমে পড়ল। চৈত্রিকা কে হাত ধরে নামিয়ে হাঁটতে শুরু করে। নিজে একটা বেঞ্চে বসে চৈত্রিকাকে বসতে ইশারা করল। চৈত্রিকা বসল,অনেকখানি দূরত্ব রেখে। মাঝখানে আরো দু’জন বসতে পারবে।

‘ আমার জ্বর কিন্তু আমায় কাবু করতে পারছে না চৈত্র। ‘

নিষ্প্রাণ স্বরে আওড়ালো সাফারাত। চৈত্রিকার মনে হচ্ছে সাফারাত শুরু থেকেই সম্পূর্ণ জ্বরের ঘোরে। আচ্ছা এতো সুন্দর মুহুর্ত গুলো কি ভুলে যাবে সাফারাত জ্বর সাড়লেই?হতাশাজনক নিঃশ্বাস ফেলে বিরস মুখে পাশের মানুষটার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সঙ্গে সঙ্গে সাফারাত নিঃসংকোচ এক আবেদন করে বসে,

‘ আপনার মনে আছে চৈত্র আপনার বাবার একবার হার্ট এট্যাক হয়েছিল?সেদিন কলেজে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে বাচ্চাদের মতো কেঁদেছিলেন আপনি। এখন কি বাবার জন্য কষ্ট হয় না আপনার?কষ্টগুলো উজাড় করে দিবেন আজ আরো একবার আমার বুকে?’

নিস্তব্ধতা চৈত্রিকাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে যেন। বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সম্মুখে দাঁড়ানো সাফারাতের দিকে। হোক না জ্বরের ঘোরে তবুও সাফারাতের প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে কাঁদার সুযোগ তো মিলেছে।সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে হামলে পড়ে বুকে। নিঃশব্দে কাঁদে চৈত্রিকা। অজস্র কষ্ট অশ্রু রুপে ঢেলে দেয় সাফারাতের বুকে। ভিজিয়ে দেয় বুক আবৃত করে রাখা সাদা গেঞ্জি টা। কতকাল কষ্ট ভাগ করে দেওয়ার মানুষ পায় নি চৈত্রিকা!সাফারাত চৈত্রিকার পিঠে হাত রাখে। বক্ষে মাথা গুঁজে রাখা মেয়েটাকে শক্ত করে আবদ্ধ করে নিজের মাঝে।
____________________

জ্যাকেট দু’টো গুছিয়ে একটা ব্যাগে ভরে নিল চৈত্রিকা। ঘড়ির কাটা দশের ঘরে। নিজেকে কিছুটা পরিপাটি করে নিয়ে প্রস্তুত হলো জ্যাকেট গুলো সাফারাতের হাতে ফিরিয়ে দেবার জন্য। দুই দিন কেটে গেছে সেই রাতের পর। ঠিক কতক্ষণ সেদিন নদীর পাড়ে কেটেছিল তার হিসেব নেই চৈত্রিকার। শুধু এটুকুই খেয়াল আছে সাফারাত যখন তাকে নামিয়ে দিয়ে যায় গেইটের সামনে তখন ভোরের আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে। কত সহজে একটা রাত পাড় করে দিল সাফারাতের পাশাপাশি বসে থেকে নীরবে,নিভৃতে! শীতল স্রোত নেমে গেল চৈত্রিকার শিরদাঁড়া বরাবর। ফেরার সময় জ্যাকেট টা ফিরিয়ে দিতে চাইলে সাফারাত কটাক্ষ করে বলে,
‘ একসাথে দু’টো ফিরত দিলেই হবে।’

কথাটা বলে দ্রুত প্রস্থান করে রিকশায় চড়ে। চৈত্রিকা ভেবেছিল জ্বরে হয়ত সাফারাত দুর্বল হয়ে পড়েছে। পরক্ষণেই সাফারাতের গম্ভীর স্বর,চলাচলে মনে হলো জ্বরও এই পুরুষকে কাবু করতে পারে নি।

রুমে কারো পদার্পণের শব্দে চৈত্রিকা ব্যাগ টা একপাশে রেখে দিল। মিমের চিন্তিত মুখাবয়ব দেখে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হয়েছে মিমু?’

তাৎক্ষণিক মিমের কাছ থেকে জবাব এলো,

‘ বাবার বন্ধুর ছেলে তাহাফ ভাই আছেন না?উনি এবং উনার পুরো পরিবার তোমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে আপু। বাবার সাথে কথা বলছেন। মা রাজি।’

#চলবে,,!

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___১১

চৈত্রিকা ধপ করে বসে পড়ল বিছানায়। চোখে জল। টলমল চক্ষু নিয়ে মিমের দিকে তাকাল। ধরা গলায় বললো,
‘ তাহাফ ভাই কবে এসেছে?উনি না মিশনে গিয়েছিলেন? ‘
‘ জিজ্ঞেস করি নি আপু। একটু আগেই এসেছে। প্রায় দশ মিনিট হবে। এখন কি করবি?আমার মনে হচ্ছে তাহাফ ভাইয়ার সাথে তোর বিয়েটা হয়ে যাবে।’

চৈত্রিকার অন্তঃস্থলে কম্পন ছড়িয়ে দেয় মিমের কথাগুলো। বিয়ে!এই পর্যন্ত কতগুলো পাত্রের সামনে যেতে হয়েছে? মাত্র একজনের সামনেই তো। তবুও মা-বাবার জোড়াজুড়ি তে। চৈত্রিকা সেদিন মনপ্রাণে চেয়েছিল পাত্রপক্ষ তাকে রিজেক্ট করুক। অপমানিত হওয়ার পরও চৈত্রিকার ভীষণ শান্তি পেয়েছে রিজেক্ট হওয়ার ফলে। কিন্তু এখন!তাহাফ কখনও রিজেক্ট করবে না তাকে। কখনও না। কারণ টা চৈত্রিকার ভালো করেই জানা।
‘ এখন কি করবি আপু?সাফারাত ভাইকে মনের কথা বলে দে।’

মিমের কথায় চৈত্রিকার চক্ষু কোটর হতে বেরিয়ে আসার উপক্রম। প্রতুত্তরে কিছু বলতে নিলে ফাহমিদা বেগম হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকলেন। হাতে একটা নীল রঙের তাঁতের শাড়ি। বিছানায় রেখে তড়তড় করে বলে উঠলেন,
‘ শাড়ি টা পড়ে নে চৈত্র। তাড়াতাড়ি করিস।’
চৈত্রিকা এক পলক বিছানার দিকে চেয়ে চোখ সরিয়ে নিল। দৃষ্টি নিবদ্ধ করল মায়ের দিকে। ছোট্ট করে বললো,
‘ কেন আম্মু?’
‘ তাহাফের আব্বু-আম্মু অপেক্ষা করছে। জলদি কর।’

মায়ের নির্লিপ্ত ভঙ্গিমা দেখে হতবাক চৈত্রিকা। ভিতরে ভিতরে অশান্তি বয়ে যাচ্ছে তার। দম বন্ধ হয়ে আসছে। ফাহমিদা তাড়া দিয়ে বেরিয়ে যেতেই বসে পড়ল মেঝেতে। মিমের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। মিম নড়েচড়ে উঠল। বোনের মুখে কষ্টের প্রতিফলন স্পষ্ট। আমতা আমতা করে বললো,

‘ সাফারাত ভাইকে আমি সবটা বলি আপু?নাম্বার আছে তোমার কাছে?আমি উনাকে বুঝিয়ে বলব তুমি উনাকে ভালোবাসো।’
‘ তোমার বোনকে কি তোমার কাছে ছেঁচড়া মনে হয়?সাফারাত আমাকে ভালোবাসলে অবশ্যই বলত। যে বাসে না তাকে যেচে গিয়ে বিরক্ত করার মানে হয় না।’

কথাগুলো বলে আর এক মুহুর্তও স্থির থাকল না চৈত্রিকা। এলোমেলো পায়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল। মিম পরিষ্কার আঁচ করতে পারে তার বোনের কথার ভাঁজে লুকিয়ে আছে তীব্র অভিমান। সাফারাতের প্রতি নয়। নিজের প্রতি। নিজের প্রতি অভিমান ক’জন করে!কিন্তু চৈত্রিকার মনে নিজের জন্যই অভিমানের পাহাড়। ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারার ক্রোধ।
.
.
নীল শাড়ি টা পড়ে চৈত্রিকা জানালার কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের কথামতো শাড়ি তো পরিধান করে নিয়েছে কিন্তু মনটা পড়ে আছে সাফারাতের কাছে। ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে। বাবা-মা,বোন সবার মায়া ত্যাগ করে শুধু সাফারাতের বুকে লুটিয়ে পড়তে স্পৃহা জাগছে মনে। পৃথিবীর সব থেকে স্বার্থপর মানুষটা যদি হতে পারত তবে বোধহয় সবচেয়ে সুখী ব্যক্তির নাম হতো চৈত্রিকা। বুক ছিন্ন ভিন্ন করে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। চৈত্রিকার দ্বারা সম্ভব নয় পৃথিবীর সব থেকে স্বার্থপর মানুষটা হয়ে উঠা। পদধ্বনি কর্ণে পৌঁছাতেই উদাস মনে ঘাড় কাত করে চাইল চৈত্রিকা। ফাহমিদার মুখে বিস্তর হাসি। মায়ের মনে প্রশান্তি ছুঁয়ে যাওয়া হাসির প্রেক্ষিতে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুলল অধর কোণে।

‘ মাশাল্লাহ! তোকে তো খুব সুন্দর লাগছে মা। এখন চল। বসার ঘরে অপেক্ষায় সবাই। ‘

ফাহমিদা চৈত্রিকার মাথায় ঘোমটা টেনে দিলেন। মন ভরে দেখলেন মেয়েকে। হাত ধরে বাহিরে নিয়ে যেতে উদ্যত হওয়া মাত্র চৈত্রিকা মায়ের হাত ধরে আঁটকে দিল। তাৎক্ষণিক ফাহমিদা প্রশ্ন সূচনা চাহনি নিক্ষেপ করলেন। ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালেন চৈত্রিকার পানে।

‘ কি হয়েছে চৈত্র?’
চৈত্রিকা তৎক্ষনাৎ জবাব দিতে পারল না। অনেক ভেবেছে সে। কিন্তু কোনো রকমেই নিজেকে অন্যের বউ হিসেবে কল্পনা করতে পারে নি। হৃদযন্ত্রের অনুভূতির নিকট বাজে ভাবে হেরে বসেছে।তাছাড়া পরিবারের দায়িত্ব তার উপর।
‘ কিছু বলছিস না কেন?’
‘ আমি বিয়ে নামক ভেজালে জড়াতে চাই না আম্মু। তাহাফ ভাইদের ফিরিয়ে দাও।’

বিস্ফোরিত নয়নে চাইলেন ফাহমিদা। চৈত্রিকাও নিরলস ভাবে তাকিয়ে আছে। মা’কে বলতে পারছে না সাফারাত কে ভালোবাসে। কোন মুখে বলবে!ভালো তো সে বাসে, সাফারাত না। ফাহমিদা উত্তেজিত সুরে প্রশ্ন ছুঁড়লেন,

‘ কেন চাস না?’
নিশ্চুপ,নিস্তেজ চৈত্রিকা!বলার মতো শব্দের অভাব পড়েছে তার কাছে। হকচকানো বন্ধ করে ধাতস্থ কন্ঠে বললো,
‘ আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোমাদের কি হবে আম্মু?বাবার অবস্থা ভালো না। ‘
‘ তোমাকে আর আমাদের চিন্তা করতে হবে না। বিয়ে করতেই হবে তোমাকে। তাহাফ খুব ভালো ছেলে। ‘
‘ কিন্তু! ‘
‘ কোনো কিন্তু না চৈত্র। আমি আর চাই না তুই এভাবে আমাদের জন্য ধুকে ধুকে জীবন পাড় কর। মা হিসেবে আমি আমার মেয়েকে কারো বউ রূপে দেখতে চাই। আমার মেয়ের সুখের সংসার দেখতে চাই।’
‘ সংসার হলেই যে আমি সুখী হবো এমনতো নয় আম্মু। ব্যতিক্রমও তো হতে পারে। হতে পারে দুঃখ আমার জন্য চিরকাল থাকবে। ‘

ফাহমিদা বিচলিত কন্ঠে বললেন,
‘ এমন কিছুই হবে না। সুখই আসবে তোর জীবনে। তাহাফের বাবা যখন তোর হাত চেয়েছে তাহাফের জন্য তোর বাবার কাছে।তোর বাবা কি বলেছে জানিস?’
চৈত্রিকা চাতক পাখির ন্যায় স্থির চেয়ে রইল বাবার জবাব কি ছিল তা শুনার নিমিত্তে। ফাহমিদা মেয়ের অস্থিরতা বাড়তে দিলেন না। বললেন,
‘ বলেছে- তুই যা সিদ্ধান্ত নিবি তা-ই হবে। আমি জানি তুই হ্যাঁ বললে তোর বাবা খুশি হবে। উনার সম্মান টা নষ্ট করিস না মা।আমি তোকে বধূ বেশে দেখতে চাই। ‘

বাবার উত্তর শুনে খুশি হলেও সেই খুশি স্থায়ী হলো না বেশিক্ষণ। সম্পূর্ন উবে গেল মায়ের শেষ বাক্যে। প্রত্যেক বাবা-মা চায় সন্তান সুখে থাকুক। চৈত্রিকা জানে,ফাহমিদা চায় তার পরিপূর্ণ সংসার জীবন দেখতে। কিন্তু!চৈত্রিকার বুক ভারি হয়ে আসতে লাগল ক্রমশ। জীবনের এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সে এক মিনিটের মাথায়। মনে পাথর চেপে বললো,
‘ বাহিরে চলো আম্মু।’
ফাহমিদা মেয়ের দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ তোর জীবনে কেউ আছে চৈত্র?কাউকে পছন্দ করিস তুই? ‘

কয়েক মুহুর্তের জন্য হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া থমকে গেল চৈত্রিকার। পরক্ষণেই সংকোচন -প্রসারণ হতে লাগল দ্রুত গতিতে। পছন্দ? পছন্দ নয় বরঞ্চ সবটুকু ভালোবাসা নিজের দখলে নিয়েছে সাফারাত অজান্তেই। চৈত্রিকার নিকট সাফারাত এখন শুধুই রাতের আকাশের চাঁদের মতো,যা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। চোখ দুটো বুঁজে নিল চৈত্রিকা। তটস্থ কন্ঠে আওড়ালো একটা মিথ্যে বাক্য,
‘ না আম্মু।’
.
.
সোফার এক কোণে শ্যামলা বর্ণের একটা ছেলে বসে আছে। মাথার চুলগুলো ছোট ছোট। চৈত্রিকা সবাইকে সালাম দিয়ে আঁড়চোখে ছেলেটার দিকে তাকাল। চোখে চোখ পড়ে গেল দু’জনের। চৈত্রিকা দ্রুত চোখ সরিয়ে আনল। তাহাফের বাবা বিলম্ব না করে বলে উঠলেন,
‘ যেহেতু চৈত্রিকা বিয়েতে রাজি। আমরা আর দেরি করব না ভাবী। আজকেই ওকে আংটি পড়িয়ে যাব। আর পরের মাসে তাহাফ ছুটি পেলে তখন শুভ কাজ টা সেড়ে ফেলব। তাহাফ আংটি টা পড়িয়ে দাও চৈত্রিকার আঙ্গুলে।’

চৈত্রিকার হাত মুঠো করে রেখেছে। সাহস পাচ্ছে না বাড়িয়ে দেবার। লজ্জা পাচ্ছে ভেবে ফাহমিদা আস্তে করে বললেন,
‘ হাত টা বাড়া।’

ধীরগতিতে হাত টা এগিয়ে দিল চৈত্রিকা তাহাফের দিকে। তাহাফ স্মিত হাসল। আলতো করে হাত টা স্পর্শ করল। আঁকড়ে ধরে আংটি টা পড়িয়ে দেয় আঙ্গুলে। নিঃসংকোচে বলে উঠল,
‘ আন্টি আপনাদের আপত্তি না থাকলে আমি চৈত্রর সাথে কিছু কথা বলতে চাই।’
‘ চৈত্র তাহাফ কে নিয়ে যা। এখানে তো আমরা কথা বলছি। মিমের ঘরে নাহয় তোর ঘরে নিয়ে যা।’

কিছু না বলে উঠে দাঁড়াল চৈত্রিকা। তাহাফও উঠে দাঁড়াল। পিছু পিছু রুমে এলো। দূরে হতাশ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা চৈত্রিকার দিকে বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘ তোমাকে আগের চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছে চৈত্র। ‘
‘ কেন করছেন এসব?’

ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে কাঠ কাঠ গলায় প্রশ্ন করে চৈত্রিকা। তাহাফ এতে আরো খুশি হয় যেন। উত্তরে সহজ সরল ভাষায় বললো,
‘ ভালোবাসি। ভালোবাসার কারণ টা কি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসার জন্য যথেষ্ট নয় চৈত্র? ‘
‘ আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না তাহাফ ভাই। একদমই বাসি না। একবছর আগেও আপনি যখন আমাকে বলেছিলেন ভালোবাসেন তখন সরাসরি না করে দিয়েছি। তারপরও এসবের কোনো মানে হয় না।’

তাহাফ চৈত্রিকার কাছাকাছি এসে দাঁড়াল। খুব কাছাকাছি। হকচকিয়ে দুই পা পিছিয়ে গেল চৈত্রিকা। হাতে টান অনুভব করল। শক্ত করে হাতের মুঠোয় চেপে ধরেছে তাহাফ। তাহাফের স্পর্শে চৈত্রিকা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে পারছে না। ঘৃণায় ভরে যাচ্ছে মন। হাত ছাড়ানোর প্রয়াস করতেই তাহাফ গভীর ও গাঢ় করে বাঁধন। হাতের আংটি টা কে লক্ষ্য করে বললো,
‘ তুমি আজ থেকে আমার চৈত্র। এই আংটি টা তারই সাক্ষী।’
‘ একটা আংটি দ্বারা আমি আপনার হয়ে যাব না তাহাফ ভাই। আমার মন যেদিন চাইবে সেদিনই আমি আপনার হবো সম্পূর্ণ রূপে। কিন্তু আমার মন কখনও চাইবে না। মায়ের খুশির জন্য রাজি হলেও,আপনাকে আমার হাত ধরার অধিকার অথবা অনুমতি কোনোটাই আমি দেই নি।’

তাহাফ কে তিক্ত কথাগুলো শুনিয়ে হাত টা ছাড়িয়ে আনল চৈত্রিকা। মেয়েটার এমন ব্যবহারে তাহাফ রোষপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ বউকে স্পর্শ করতে স্বামীর অনুমতির প্রয়োজন নেই। বর্তমানে তুমি আমার বাগদত্তা। কয়েকদিন বাদে বউ হবে৷ তখন তোমার এসব বলার মুখ আমি রাখব না। মাইন্ড ইট।’

চৈত্রিকা দমে যায় নি তাহাফের রূঢ় আচরণে। তাহাফ কে তার একটুও সহ্য হচ্ছে না। একটুখানিও না। মৃদু চিৎকার করে বলে উঠল,

‘ বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে। এখুনি বেরিয়ে যাবেন।’

তাহাফের চোখ লাল হয়ে এলো। ঠাটিয়ে চড় মারতে ইচ্ছে করছে তার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটা কে। হাত দু’টো মুঠো করে চলে যেতে নিয়েও থেমে গেল। নজর আটকালো ফুলদানিতে। যেখানে কতগুলো শুকনো জারবেরা পড়ে আছে স্থির। বাঁকা হাসল তাহাফ। ঘাড় ফিরিয়ে বললো,
‘ তোমার কি জারবেরা পছন্দ চৈত্র? ‘
চৈত্রিকা কটমট চোখে চেয়ে উত্তর দিল,
‘ না।’
‘ আমার পছন্দ। ভীষণ পছন্দ। ‘

কথাটা শেষ করে দ্রুত গতিতে প্রস্থান করে তাহাফ। চৈত্রিকা বাকরুদ্ধ!নির্নিমেষ দৃষ্টি মেঝেতে রেখে মিনমিন স্বরে বলে উঠল,

‘ আমি মনে প্রাণে দোয়া করি -আপনি যেন সেই মানুষ টা না হন। শুকনো এই জারবোরার মালিক টা ভিন্ন হোক। তবুও আপনি নয়।’

#চলবে,,,!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here