প্রিয়_ডাক্তার – ৪

0
1495

#প্রিয়_ডাক্তার – ৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

মহুয়া ভীষন মিশুক মেয়ে বিধায় আদরের বোন আরুর সাথে খুব সহজেই মিশে গেল। আরু সর্বদা মহুয়ার সাথে লেগে আছে। মহুয়ার কি প্রয়োজন, কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি-না! এসব আরু রেখেছে নিজের নখদর্পনে। মহুয়া এতে অবাক হচ্ছে। মহুয়ার মত সম্পূর্ন অচেনা এক মেয়ের সাথে আরু কি করে এত সহজে মিশে গেল? আরু কি পূর্ব থেকে মহুয়াকে চেনে? না, চিনবে কেমন করে? মহুয়ার সাথে আরুর এই প্রথম দেখা। আরুর মন ভালো, তাই হয়তো মিশেছে। মহুয়া বোধহয় একটু অতিরিক্ত ভাবছে।

‘ আরু, মা ডাকছে। ‘
আদরের কথা শুনে আরু চোখ টিপে আদরের দিকে চায়। মহুয়া আরুর পাশে বসে বাঁকা দৃষ্টিতে আদরের দিকে চেয়ে আছে। আদর আজ লাল শেরওয়ানি পড়েছে। খোঁচা দাড়ি বোধহয় একটু শেভ করেছে। হাতে সুন্দর একটা কালো ঘড়ি পড়ে রাজা লাগছে একদম। আদর রাজা! মহুয়া ভেবে আনমনে কিটকিটিয়ে হেসে উঠে।
আজ বিয়েতে আসা সকল পুরুষ লাল শেরওয়ানি পড়েছে। আর মহিলারা পড়েছে খয়েরী রঙের শাড়ি। সবাইকে খুব মানিয়েছে। শুধু মহুয়া বাদে। মহুয়া তো খয়েরী রঙের শাড়ি পড়েনি। বেগুনি রঙের ত্রি পিস পড়েছে। মহুয়াকে নিশ্চয়ই খুব বাজে দেখাচ্ছে। ইশ! মহুয়া কান্না আসছে। তার এই বিয়েতে আসাই উচিৎ হয়নি।
আরু যেতে চায় না। আদর চোখের ইশারায় শাসায় আরুকে। আরু ভয় পায়। বাড়ির সবার কাছে আরু যতটা আদুরে, আদরের কাছে ততটা আদুরে নয়। আদরকে আরু ভীষন ভয় পায়। আরু কেন বাড়ির সকল ছোটরাও ভয় পায় আদরকে। তার কারণ, আদরের খিটখিটে মেজাজ। কখন কার উপর রেগে যায়, বলা মুশকিল। আদরের এই রাগের কারণে সবাই আদরের থেকে একটু দূরে দূরে থাকে।
‘ মহু আপা, তুমি বসো। আমি দেখে আসি, মা কি বলে। ‘
মহুয়া মাথা নেড়ে সায় দেয়। আরু চলে যায়। তবে আদর যায় না। সে এখনো দরজায় হেলান দিয়ে তীক্ষ্ম চোখে মহুয়ার দিকে চেয়ে আছে। আদরকে ঠায় চেয়ে থাকতে দেখে মহুয়ার বুক ঢিপঢিপ করছে। হাসফাঁস করছে তার ছোট্ট কিশোরি মন। মহুয়া চোখ নামায়। অন্যদিকে চেয়ে আদরকে না দেখার ভান করে। আদর টিপটপ পায়ে মহুয়ার দিকে এগুয়। মহুয়ার গলা শুকিয়ে খা খা করে। পানি পিপাসা পায়। আদর মহুয়ার পাশে ঘা ঘেঁষে বসে। ভয়ে মহুয়ার হাত পা অবশ হয়ে আসে। চোখ বুজে পায়ের নখ দ্বারা খামচে ধরে কার্পেট। আদর সব লক্ষ্য করে। তার অবুঝ প্রেমিকা অনুভূতি সামলাতে জানে না! প্রেমে পড়তে ভয় পায়। স্পর্শের গভীরতা মাপতে পারে না। হায়!
আদর গভীর কণ্ঠে বলে, ‘ ওদিকে কি দেখিস? এদিকে তাকা। ‘
মহুয়ার বুক ধড়াস ধড়াস করে। আদরের কণ্ঠ কতদিন পর শুনতে পেল। কি সুন্দর কণ্ঠ! মহুয়ার মনে হয়, আদরের কণ্ঠে কেউ চিনি মিশিয়ে দিয়েছে। এত মিষ্টি কণ্ঠ কারো হয় বুঝি? মহুয়া তাকায়। তবে আদরের চোখে না, নিচে। আদর প্রশ্ন করে, ‘ শাড়ি পড়তে পারিস? ‘
মহুয়া অবাক হয়। এখন শাড়ি পড়তে হবে কেন? মহুয়া ভেবে কূলকিনারা পায় না। শুধু মাথা নাড়ায়, অর্থ পারে সে। আদর মহুয়ার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দেয়। বলে, ‘এখানে শাড়ি আছে। পড়ে নে। ‘
মহুয়া বিস্ময়ে প্রশ্ন করে, ‘ আমার জন্যে? ‘
আদর বিরক্ত হয়ে বলে, ‘ না! তোর বাপের জন্যে। ‘
বোকা মহুয়া বলে, ‘ কিন্তু বাবা তো শাড়ি পড়ে না। ‘
ইশ, মহুয়া লজ্জায় পড়ে গেল। কি বলতে কি বলে ফেলল। আদর কি ভাবছে? আদর ভ্রু কুচকে মহুয়ার দিকে চেয়ে আছে। ভাবছে, মহুয়া কি বোকা! কিছু বুঝে না। কিন্তু আদর তো জানে না, মহুয়া সব বুঝে। এই যে আদর রোজ মহুয়ার স্কুলের সামনে বসে থাকে। ছুটি হলে মহুয়া যখন ব্যাগ কাধে নিয়ে বের হয়, আদর চেয়ে থাকে মহুয়ার দিকে। মহুয়াকে দূর থেকে আদর লক্ষ্য রেখে। কাছে আসে না। সব বুঝে মহুয়া! তবুও আদর সামনে এলে, কথা বললে, মহুয়ার সবকিছু গুলিয়ে যায়। বুঝদার মহুয়ার চারপাশ উল্টে পাল্টে যায়। গলার কন্ঠনালী দেবে যায়। কথা বলতে পারে না। কেন হয় এসব? আদর তো কিছুই করে না। তবুও কেন আদরের ওই বেহায়া চাওনি মহুয়া সহ্য করতে পারে না। বুক কেপে উঠে। কেন, কেন, কেন?
‘ নে, ধর। শাড়িটা পড়ে ফেল। ‘
আদর শাড়ির প্যাকেট মহুয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। স্তব্ধ মহুয়া ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থাকে প্যাকেটের দিকে। আদরের দেওয়া প্রথম উপহার! মহুয়া হাত দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দেয় প্যাকেটকে। ইশ, কি মোলায়েম! মহুয়া প্যাকেট খুলে। একটি লাল রঙের জামদানি শাড়ি। লাল কেন দিয়েছে? আদরের শেরওয়ানির সাথে মিল রেখে?
ইশ, মহুয়ার যতসব আজগুবি ভাবনা। শাড়ির সাথে ব্লাউজ, পেটিকোট সব আছে। মহুয়া শাড়ি নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।

লাল জামদানি শাড়ি গায়ে জড়িয়ে মহুয়া বাথরুম থেকে বের হল। আয়নায় নিজেকে দেখল। মহুয়াকে চেনা যাচ্ছে না। কিশোরি মহুয়া যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। শাড়ি পড়ে মহুয়াকে সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত নারী বোধ হচ্ছে। লাল শাড়ি যেন জ্বলজ্বল করছে মহুয়ার গায়ে। মহুয়া শাড়ি পড়ে বিছানায় এসে বসে। খানিক পর, আরু আসে। খাবারের জন্য ডাকতে। শাড়ি পড়া মহুয়াকে দেখে আরু চমকে উঠে। মহুয়াকে ছুঁয়ে দিয়ে বলে, ‘ মহু আপা, শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে। ‘
মহুয়া মুচকি হাসে। আরু এবার কৌতুক করে প্রশ্ন করে, ‘শাড়ি কে দিল? ‘
মহুয়া বলে, ‘ আদর ভাই। ‘
আরু হকচকিয়ে যায়। মহুয়া এত সহজে আদরের নাম বললে দিবে তা আরু বুঝে নি। ভেবেছিল মহুয়া লজ্জা পাবে। নাম বলবে না। অথচ মহুয়া কি সুন্দর নির্লিপ্ত ভাবে আদরের নাম বলে দিল। সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটা যুক্ত করে বুঝিয়ে দিল, মহুয়া আদরের অনুভুতি সম্পর্কে অবগত নয়। সে আদরকে শুধুমাত্র ডাক্তার বাড়ির একজন সদস্যরূপে দেখে। নিজের প্রেমিকরুপে নয়! আদর হয়তো এখনো মহুয়াকে কিছু বলে নি। আরু বুঝতে পারে। অতঃপর আরু মহুয়াকে সঙ্গে নিয়ে খাবার খেতে চলে।

আদর খাবার সবাইকে এগিয়ে দিচ্ছে। মহুয়া আরুর পাশে বসে। আদর মহুয়ার থালায় বিরিয়ানি দেয়। মহুয়া আড়চোখে আদরের দিকে চেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। আদর দাড়ায় না। শাড়ি পড়া মহুয়াকে দেখে তার মাথা ঘুরে গেছে। কিশোরি প্রেমিকার যুবতীরূপ দেখে সে পাগলপ্রায়। মন চাচ্ছে, মহুয়ার গালে চট করে এক চুমু বসাতে। অথচ পারছে না। বাঁধা আসছে। এখন মহুয়া থেকে দূরে থাকা মঙ্গল! আদর মহুয়ার থেকে বাঁচতে চট করে কেটে পড়ে।

‘ আদর, পাঁচ নম্বর টেবিলে তিন নাম্বার চেয়ারে যে শাড়ি পড়া মেয়েটা বসে আছে। সে কে রে? কার পক্ষ থেকে এসেছে? আমাদের কেউ বলে তো মনে হচ্ছে না। ‘
ইমার বড় ভাই, ফাহাদের কার দিকে চোখ পড়েছে বুঝতে বিলম্ব হলো না আদরের। আদরের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। আদর প্রশ্ন করে, ‘ কেন? তোর চোখে ধরেছে? ‘
ফাহাদ মাথা চুলকায়। হেসে বলে, ‘ আসলে…হ্যাঁ। পরিচয়টা কিভাবে জোগাড় করব? তুই চিনিস ওকে? ‘
আদর নিজের রাগ সংবরণ করে। ফাহাদের কাধে হাত রেখে মিহি হেসে বলে, ‘ ও আমার মহুয়া। ‘
‘ আমার মহুয়া’ বলতে আদর কি বুঝিয়েছে, বুঝতে দেরি হলো না ফাহাদের। ফাহাদ জিহ্বা কেটে বলে, ‘ সরি, ভাই। বুঝতে পারিনি। ‘
আদর হাসার ভান করে বলে, ‘ ইটস ওকে। ফারদার নজর একটু দেখেশুনে ফেলবি। ‘
ফাহাদ কথা বলে না। ভাইয়ের প্রেমিকাকে নিষিদ্ধ নজরে দেখেছে, ছিঃ! ভাবতে খারাপ লাগছে। ফাহাদ আদরকে ছেড়ে অন্যদিকে চলে যায়। আদরের সামনে এখন থাকা ভালো না। আদর যেকোনো সময় ক্ষেপে গিয়ে দু চার ঘা বসিয়ে দিতে পারে।
আদর দূর থেকে মহুয়ার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে চায়। বিড়বিড় করে শুধায়, ‘ সময় এসে গেছে, পাখিকে নিজের বুকে পুষে রাখার। অনেক অপেক্ষা করেছি। আর না। ‘

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here