#এবারও_তুমি_বুঝলে_না
#সূচনা_পর্ব
#Alisha_Anjum
— তিশু? তিশুউউউউউ? কই তুমি? লেট হয়ে যাচ্ছে আমার।
সকাল সকাল অধর অফিসের জন্য প্রস্তুত। তিশু রান্নাঘরে ছিল। দৌড়ে আসলো স্বামীর কাছে। আঁচলে ভেজা হাত মুছতে মুছতে বলে উঠলো
— কি হয়েছে? চুলায় ভাত বসিয়েছি। পুড়ে যায় যদি?তখন তো আবার নাক সিটকাবা। বলবা আমার কোন কাজই ভালো হয়না।
অধর হাসলো। নিঃশব্দে হাসতে হাসতে প্রত্যুত্তর’ করল
— বলবো না। আমার বউ যথেষ্ট ভালো। পাকা গিন্নি। সব কাজ পারে।
— থাক! থাক! আর পাম দিতে হবে না।
তিশুর কথায় অধর এবার শব্দ করে হেসে উঠলো। হাতের ঘড়ির দিকে তাকাতে তাকাতে বলল।
–আমি অফিস যাচ্ছি। সকালের ওষুধ খেয়েছো? নিশ্চয়ই খাওনি।একদম ঠিকঠাক ওষুধ খাও না তুমি।
অধরের মুখ নিমিষেই বিরক্তিতে ছেয়ে গেল। নিজে অগ্রসর হলো ড্রেসিং টেবিলের দিকে। বক্স থেকে প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ বুটিয়ে তিশুর দিকে এগিয়ে দিল। তিশু সাড়াশব্দ না দিয়ে নিশ্চুপ তাকিয়ে রইল অধরের দিকে। অধর ভ্রু কুঁচকে ফেললো। তিশু খিলখিল করে হেসে উঠলো। মুখটা হা করে অধরের হাতের নিকট এগিয়ে গেল। অধর হাসলো। সেই নির্মল, স্বচ্ছ হাসি। ঠোঁটের কোণে ভাঁজ পড়ল। আনমনায় তিশুর চোখ গেল সেদিকে। স্বামী একটা পেয়েছে। মাশাল্লাহ!
— তিশুউউউ? পোড়া গন্ধ আসছে। ভাত পরলো নাকি!
আধার গ্লাসে পানি ঢালছিল। তিশু দাঁড়িয়েছিল স্বামীর নিকট। তখনই অধরের মা হাঁক ছেড়ে বলে উঠলেন। তিশুর বুকটা ধ্বক করে উঠলো। সত্যি পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে নাকে। তিশু আগুন চোখে তাকালো আধরের দিকে। অসময়ে ভালোবাসা উতলে পরে মনে হয়! বেখাপ্পা বিপদে ফেলা পুরুষ মানুষ!
— তোমার অসময়ে ডাক না দিলে হয় না তাই না?
কাঁদো কাঁদো মুখে তিশু কথাগুলো আওড়াতে-আওড়াতে ভোঁ দৌড়। অধর হতভম্ব হয়ে গেল। এটা কি হলো? অধর তিশুর পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে বলে উঠলো।
–তিশু তোমার ওষুধ…
কে পায় তিশুকে! সে তো রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ভাতের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেছে। অধর অসহায় হয়ে তাকালো ওষুধ গুলোর দিকে। তার কি কোন দোষ আছে? স্বামী অফিসে যাওয়ার সময় বউকে দেখবে না? তিশু কে না দেখে অফিস গেলে তার ছটফট লাগে! মনের মধ্যে বিরহের গান বাজে।
..
মুঠো মুঠো আনন্দ বুকে এঁটে অধর অফিসে এসে পৌঁছালো। ঠোঁটে এখনো লেগে আছে এক চিলতে হাসি। সে ওষুধ নিয়ে রান্নাঘর অবধি গিয়েছিল। তিশু ইয়া বড় বড় চাহনিতে তাকে যেন গিলে খাচ্ছিল। অধর হাসছে। এত মায়াবী কেন তার তিশু? অধরের ভাবনার মাঝে তার ডাক পড়ল।
— স্যার, একজন মেয়ে এসেছে। আপনার সাথে দেখা করতে চায়। পাঠাবো?
অধর ভাবনা বিদায় করে সোজা হয়ে বসলো। পিএ আব্দুল হালিমকে কুঁচকানো ভ্রুতে জিজ্ঞেস করল।
— নাম কি? কোন মেয়ে?
— নাম তো জানিনা স্যার। কিন্তু বলল আপনার ফ্রেন্ড সে।
অধর ভাবনায় ডুব দিতে দিতে বলল।
— আচ্ছা পাঠান। কিন্তু মেয়েদের অকারনে এলাও করবেন না।
আব্দুল হালিম বিনয়ের সাথে মাথা নোয়ালো। সম্মতি জানিয়ে চলে গেল সে। তার একটু পরেই দেখা মিলল এক অনাকাঙ্ক্ষিত রমনীর। অধরের চোখে অবিশ্বাসের খেলা। সে বসা থেকে ঝট করে উঠে দড়ালো। সামনের মেয়েটার চোখ চকচক করছে। চোখ ভরা জল নিয়ে সে হাসছে। অধর এগিয়ে গেল মেয়েটার দিকে। অবাক চাহনি নিয়ে সে মেয়েটার মাথার লম্বা বেনুনিতে টান দিয়ে বলে উঠলো
— এত দিনে বন্ধুর কথা মনে পরলো? বেইমান গুলো?
নিধি মেয়েটা জল ভরা চোখ মুছলো। অধরের দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল
— তুই কখনো খোঁজ নিয়েছিস? তুই বড় বেইমান।
অধর নিঃশব্দে নত মুখে হাসলো। দীর্ঘ আট বছরের বন্ধুত্ব তাদের। আজ দশ বছরের গন্ডিতে দেখা হলো একটার সাথে। আর চারজন কে কোথায় কে জানে? সবাই যেন আপন কর্মে ভীষণ ব্যাস্ত। তিশুর একটা লেখা ইতিমধ্যে মর্মভেদ করে দিচ্ছে অধরের।
১৬ যায় উল্লাসে
১৮ তে জানা হয় কেউ কারো নয়
২০ এ- হঠাৎ করে বন্ধু মহল গড়ে
হঠাৎ যখন বিয়ে হয় বয়স যেন হারিয়ে যায়।
কে কোথায় সংসারের ভাড়ে কারো খেই নাই।
অধরের গভীর ভাবনা। নিধি ধাক্কা দিল অধরকে। অধর থতমত খেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পরলো। নিধি বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো
— কই হারিয়ে গেছিলি?
অধর মাথায় হাত দিয়ে লাজুক হাসলো। ব্যাপারটা চাপা দিতে বলে উঠলো
— কিছু না। মুহিব কোথায়? ও আসেনি?
অধরের মুখে মুহিবের নাম শুনতেই মুখটা মলিন হয়ে উঠলো নিধির। পাশে থাকা চেয়ারে ধপ করে বসে পরলো। দু হাতে বিষন্ন মুখখানি ঢেকে নিল। ঠিক তখনই এক কোমল অনুভূতির জিনিস লক্ষ্য করলো অধর। ফুটফুটে একটা ছেলে বাচ্চা। অধর পুলক চিত্তে কোলে তুলে নিল বাচ্চাটাকে। হাসি হাসি মুখে নিধিকে সুধালো
— তোরা এতো দূর এগিয়ে গেছিস? মুহিব তো আমাকে একবারও ফোন করে বলল না তোদের বেবি হয়েছে? তোরা এতো পর করে দিয়েছিস আমাকে?
আধারের একটার পর একটা কথা। নিধির শরীরে যেন দাউ াদউ করে আগুন জ্বালছে। মুহিবের বেইমানির কথা মনে হচ্ছে বারংবার। নিধি হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো। চোখ ভরা জল নিয়ে বলে উঠলো
— চুপ কর অধর। ওর নাম আমার সামনে উচ্চারণ করবি নাা। ও একটা ধোঁকাবাজ। নিষ্ঠুর। তুই জানিস ও কি করেছে?
নিধির হঠাৎ উদ্ভট আচরণে অধর হতভম্ব হয়ে গেল। বিস্ফোরিত তার নয়ন। উৎসুক কন্ঠে সে বলে উঠলো
— নিধি কি বলছিস এসব? তোরা দুজন তো দুজনকে ভালোবেসে পরিবার উপেক্ষা করে লুকিয়ে ঘর বাধলি।
নিধি অধরের কথায় হাসলো। বেদনা যেন ছলকে পরলো সেই হাসি থেকে। তার ব্যাথাময় হৃদয় হতে উঠে আসলো বাঁক
— বেস্ট ফ্রেন্ড তুই ছিলি। বয়ফ্রেন্ড ছিল ও। একইসাথে পড়ছিলাম। ভেবেছিলাম ভীষণ ভালোবাসবে আামায় এবং বাসে। কিন্তু ও কি করলো এসব? আমার রূপকেই ভালোবেসে গেল লোভী। আমার সন্তান যখন আমার পেটে তখন ও আরেকটা বিয়ে করে আমি তা জানতাম না। আমরা তো পালিয়ে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছিলাম। মুহিব আমাকে না জানিয়ে বাড়িতে গিয়ে ওর মা বাবার সাথে আপস করে। তারপর পরিবারের পছন্দ মতে বিয়ে করে নেয়। তার একমাস পরেই ডিভোর্স পেপার পাঠায়। এই এক মাসে কিন্তু ও আমার সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি।
কথাগুলো বলে নিধি ছলছল নয়নে চাইলো অধরের পানে। অধর দৃষ্টি নিম্নগামী করলো। মানুষ এতোও নির্মম হতে পারে? ুসুন্দর ফুটফুটে একটা বাচ্চা ছেড়ে কিভাবে গেল মুহিব? সন্তান যে কতবড় একটা নেয়ামত!
.
অধর বসে আছে বেলকনিতে। মৃদুমন্দ বাতাসে বেলকনি শান্তিময়। আধারের মুখোমুখি বেলকনির মেঝেতে ঢলঢল চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে নিধির ছেলে। মায়াময় দেড় বছরের মুখখানিতে কান্নার ণ্ভাব ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। অধর শব্দ করে হাঁসছে। নেহালের ছোট হৃদয়টাতে কান্নার ছোয়া পরার কারণ অধর তার খেলনা নিয়ে তাকেই ফাঁকিতে ফেলছে বারংবার। আশা দিচ্ছে, এই বুঝি খেলমা দেবে কিন্তু নেহালের নাগাল পেতে না পেতেই হুট করে টান দিচ্ছে অধর। নেহাল ভ্যাঁ করে কান্নার মতো অভিব্যাক্তি মুখে জমাতেই আবারও দেওয়া হচ্ছে তাকে খেলনা। অধর এমন খেলায় মেতেছে ছোট বাবুটার সাথে। বলা বাহুল্য নেহাল অধর ভক্ত। সবসময় যেন অধরের গলাতেই ঝুলে থাকে। তিশু ঘরেই ছিল। বিছানা থেকে বেলকনি স্পষ্ট ধরা দিচ্ছে তার ব্যাথাতুর নয়নে। সাথে একেকটা খুনশুটি এসে হৃদয় বরাবর যেন তীক্ষ্ণ তীর হয়ে গেঁথে পরছে। চিন চিন ব্যাথায় কাতর হৃদয়। দপদপ করা রাগ, হিংসায় মস্তিষ্ক বিগড়ে উঠছে। কান্নাও যেন দৌড়ে পালিয়েছে। তিশুর শুধুই ছটফট দমবন্ধ লাগে। আজ সাতদিন হবে নিধি আর তার ছেলে নেহাল তিশুর সংসারে। নিধির আশ্রয় স্থল কিছু নেই। নেহাল দয়া দেখিয়ে নিয়ে এসেছে নিজের বাড়িতে। যেদিন আনে সেদিনই তিশুর বুক ধক করে উঠেছিল অজানা আশঙ্কার। এই সাত দিনের ১৬৮ টা ঘন্টায় যেন তিশুর আশঙ্কা ধেই ধেই করে বাড়তে থাকে। নিধি মেয়েটার মতিগতি একটুও ভালোলাগে না তিশুর। তার নেই সন্তান। নিঃসন্তান পরিবারে অন্য নারীর সন্তান নিয়ে প্রবেশ! পুরুষ মনের মতিগতি বোঝা কি সহজ? তিশুর কলিজা যেন ফেটে যায় যখন অধর নেহালের সাথে খুনসুটি করে। বন্ধু হলে কি হবে। নিধি যখন অধরের সাথে কথা বলে তখন কেমন কেমন যেন করে। তিশুর একদম সহ্য হয় না।
— এই তিশু? নেহালের জন্য একটা জামা নিয়ে আসো তো! মশা আছে। অসুস্থ হয়ে যাবে।
তিশুর ভাবনার মাঝেই অধরের ডাক। তিশু শুনেও না শোনার ভান করে বসে রইল। তার যেতে ইচ্ছে করছে না। এতো দরদ কেন নিধির বাচ্চার জন্য? অধর অপেক্ষায় থেকে থেকে পেছন ফিরে চাইলো। তিশু ঠাঁই বসে আছে সাড়াশব্দ হীন। অধর বিরস মুখে দেখলো। একটু পর নিজেই উঠে পরলো। নেহালকে অতি যত্নে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। তিশু একবার আড় চোখে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। একটা কথাও স্ফুট হলো না কারো মুখ থেকে।
চলবে…..
( এক চিলতে হাসি গল্পের দ্বিতীয় ধাপ এই গল্প। তিশু আর অধরকে অনেক ভালোলাগে আমার ☺️। তবে আমি হতাশও।)