এবারও_তুমি_বুঝলেনা,পর্ব_৬

0
1234

#এবারও_তুমি_বুঝলেনা,পর্ব_৬
#Alisha_Anjum

— তুমি কি তিশুর জন্য নিউজ ছাপাতে চাইছো?

মায়ের প্রশ্নে অধর চঞ্চল চোখে চাইলো মায়ের দিকে। অধরের মা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেই উৎসুকভাব উবে দিতে অধর বলল

— হ্যা। চারদিন হয়ে গেল তিশুর কোন খোঁজ নেই।

ছেলের কথায় অনামিকা খানের মনটা যেন ভীষণ বিরক্ত হলো। মুখে নেমে এলো ভয়াবহ বিতৃষ্ণা। তিনি রূঢ় কন্ঠে বলে উঠলেন

— কোন নিউজ ছাপানো হবে না।

মায়ের কথায় অধর যেন বিস্ফোরিত হলো। তার অনুভূতি যেন শুণ্যের কোঠায় পা রাখলো। তিশুর চার দিন মানে ছিয়ানব্বই ঘন্টা হলো কোন খোঁজ নেই আর সে খুঁজবে না? অধর অবাক হয়ে বলল

— আম্মা আপনি কি বলছেন এসব? তিশুর আজ চারটা দিন হলো খোঁজ নেই। আমি ওকে খুঁজবো না? নিউজ ছাপাতে কি সমস্যা?

— নিউজ ছাপালে অনেক সমস্যা। লোকে আমাদের দেখে হাসবে। তিশু আদৌও তোমার আছে নাকি অন্য কারো হাত ধরে গেছে এটা তুমি জানো? হতেও পারে…..

মায়ের অবশিষ্ট কথা অধর সম্পূর্ণ করতে দিল না। সে সইতে পারলো না মায়ের শেষের বাণী। আকস্মিক উচ্চসরে অধর বলে উঠলো

— ব্যাস আম্মা! আপনি আর কিছু বলবেন না দয়া করে। আমার তিশু এমন না। আমি তিশুকে খুব ভালো করেই চিনি।

অনামিকা খান দমলেন না ছেলের দৃঢ় কথার পিঠে। ঠাট বজায় করে আবারও বলে উঠলেন

— সে তোমার ব্যাপার। কিন্তু আমি ভালোভাবে বলছি আমার বাড়ি থেকে কোন নিউজ বের হবে না। আমার মানসম্মান আছে।

কথাটা বলে হনহনিয়ে প্রস্থান করলো অধরের মা। অধর আচ্ছন্ন হয়ে তাকিয়ে রইল মায়ের যাওয়ার পানে। আজীবন তার মা শুধু তাকে নিয়েই ভেবে গেল। সব ইচ্ছে দবিতে পক্ক করে আদায় করলো অধরের থেকে। কখনো না সূচক বাঁক অধর মুখে আনেনি। বিষ দিলে কষ্ট হলেও মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সে বিষই পান করেছে। আজ নিজের বউ, সংসারও কি মায়ের কথায় নির্বাচন করতে হবে? আজব! অধর হাসলো। অবজ্ঞার এক হাসি। অধরের বাবা সম্মুখেই বসে আছে। অধর চাইলো বাবার দিকে। হঠাৎ তার মুখ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বেরিয়ে এলো একটা কথা

— বাবা আপনারা কখনো আমার ইচ্ছের দাম দিলেন না। তবে আম্মা যদি ভেবে থাকে সে তিশুর থেকে আমায় আলাদা করবে তাহলে তাকে বলে দিয়েন দাদিমা যেমন আপনার থেকে আমার জেদী, একরোখা, কাঠখোট্টা মাকে আলাদা করতে পারেনি। আমাকেও আমার মা পারবে না তিশুর থেকে আলাদা করতে।

অধরের বাবা থমকে গেল অধরের কথায়। আস্তে করে চোখ নামিয়ে নিলেন। বলার মতো কিছু সত্যিই নেই। অধরের মাকে মোবারক হোসেনের মা একটুও পছন্দ করতেন না। পরতো না কোন মতই স্পষ্টভাষী, নিজ ভালো ঠুকরে নেওয়া অনামিকার সাথে তার শাশুড়ির। শেষে এমন হলো অধরের উপর অত্যধিক আধিপত্য বিস্তার করায় অধরের দাদি রেগে গেলে। অধরকে যেতে দেয় না দাদির কাছে, আত্নীয়দের সাথে মিশতে দিতে তার ঘোর আপত্তি লাগে। এমন বিদ্বেষমূলক আচরণে মোবারক হোসেনের মা কাঠ কাঠ গলায় জানিয়ে দিয়েছিলেন ছেলেকে, বউ ত্যাগ করতে। কিন্তু মোবারক হোসেন করেননি এমনটা। সে এক জীবনে একজনের হাত ধরেই পারি দিতে চেয়েছিলেন। তাই আলাদা, বহুদূরে চলে আসেন বউ বাচ্চা নিয়ে। তবে মোটেও সে মাকে পর করেননি। অত্যন্ত ব্যাস্ত থাকলেও সপ্তাহে অন্তত দুবার যেতেন মায়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে।

.
মোহনীয় দিন। আকাশ মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে। খন্ড খন্ড মেঘ দৌড়াদৌড়ি করছে মাথার উপর। নিশান মেয়েকে নিয়ে বসে আছে ছাদে। নিলীমা বাবার কোলে বসে আকাশ দেখছে। ছোট মেয়েটা হঠাৎ বাবার দিকে তাকালো চোখ ফিরিয়ে। আদুরে গলায় বলে উঠলো

— বাব্বা? দাদিম্মার ঘরে যে শুয়ে আছে সে কি আমার মা?

মেয়ের হঠাৎ বলা অস্তিত্বকর কথায় নিশান বোকা বনে গেল। সে যেন বড্ড বিপদে পরলো। নীলিমা উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। একসময় সে অধৈর্য হয়ে বলে উঠলো

— কি হলো বাব্বা বলো? তুমি না বলেছিলে আমার মা হঠাৎ একদিন আসবে। তোমার উপর রাগ করেছে বলে আসছে না। মার রাগ ভাংলে হঠাৎ একদিন আসবে।

— হ্যা মা, তোমার মা আসবে। কিন্তু এখন যে এসেছে সে তোমার মা না।

বাবার কথা নিলীমার একটুও পছন্দ হলো না। তীব্র মন খারাপ ছোট মনটাতে জায়গা করে নিল। চোখ দুটো টলমল করছে। নিশান অপরাধী চোখে দেখলো একবার মেয়েকে। ছোট মেয়েটাকে ভীষণ মিথ্যে বলতে হয়। হঠাৎ হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসে তার মা কোথায়? কবে আসবে? কিন্তু এই ছোট মেয়েটাতো জানে না, তার মা আর কখনো আসবে না। তাদের মেয়ে আর বাবাকে ফাঁকি দিয়ে সে ঐ সুদুরে পারি জমিয়েছে। তার আর কখনো ফিরবে না

— নিলীমা? মা বাবার উপর রাগ করেছো? তুমি বড় হও দেখবে ঠিক একদিন তোমার মা তোমাকে দেখতে আসবে। তোমার খোয়াবে আসবে।

নিশান কথাটা বলতেই নিলীমা ছিটকে দূরে চলে গেল নিশানের কোল থেকে। প্রচন্ড অভিযোগ করে বলল

— তুমি শুরু মিথ্যে বলো বাবা। আমার মা আসবে না। আমার মা পচা। সে আমায় দেখতে আসে না আমাকে।

কথাগুলো বলে ভেজা ভেজা চোখ নিয়ে নিলীমা পেছন ফিরলো।পেছনেই দাড়িয়ে ছিল তিশু। আকস্মিক ধাক্কা খেল নিলীমা। ছোট ছোট পায়ে সে এবার দৌড়ে বাবার কোলে চলে। বাবার উপর অভিমান ধরে রাখতে পারলো না। তিশু মিষ্টি হেসে চাইলো নিলীমার দিকে। হাত বাড়িয়ে ডেকে উঠলো

— আসো। আমি একটু কোলে নেই মিষ্টিটাকে।

নিলীমা আরো শক্ত আঁকড়ে ধরলো বাবাকে। নিশান অপ্রস্তুত হেসে তিশুর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো

— যাবে না। ও কারো কাছে যেতে চায় না।

তিশু ঠোঁটে হাসি বজায় রেখেই হাত গুটিয়ে নিল। বসা থেকে উঠে দাড়াতে দাড়াতে সে বলল

— একটা কথা বলি?

নিশান ঝট করে তিশুর দিকে মাথা ঘুরালো। একটু দৃষ্টিপাত করে বলল

— হ্যা বলুন।

— ওর মায়ের কি হয়েছে?

তিশুর হঠাৎ প্রশ্নে নিশান চোখ নামিয়ে নিল। হৃদয়ে যন্ত্রণা নাড়া দিয়ে উঠলো। নিশান একবার নিলীমার দাকে চেয়ে বলল

— অন্য সময় বলবো।

তিশু আর কথা বাড়ালো না। মাথা হেলিয়ে সায় জানালো।

.
ঘরময় নিস্তব্ধতা। নিধি যেন গলায় কাটা নিয়ে বসে আছে। না গিলতে পারছে না বের করতে পারছে। প্রচন্ড রাগে, অসহায়ত্বে তার মুখ বিবর্ণ হয়ে গেছে। নিষ্পাপ নেহাল মায়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ঢলঢল তার দেহ। নিধি ছেলের দিকে কড়া দৃষ্টি তাক করে বলে উঠলো

— একটা থাপ্পড় দেবে। হারানোর জন্য আর কিছু পাসনি? তাবিজটাই হারাতে হলো তোকে?

মায়ের বকা খেতে বুঝি ভীষণ ভালো লাগলো অবুঝ নেহালের। সে শব্দ করে হেসে দিল। নিধির ভীষণ রাগ হচ্ছে। কত কষ্ট করে একটা তাবিজের ব্যাবস্থা করা হয়েছিল। এ তাবিজের গুণ এমন ছিল যে অধরের বালিশের মধ্যে রাখলে অধরের মন ঘুরে যেত। তিশুর উপর থাকা গভীর ভালো ক্ষয়ে যেত। কিন্তু নেহাল কি করলো? সবকিছু অচিরেই তার দুধের হাতে ভাসিয়ে দিল। আজ দুপুরেই সে তাবিজটা হাতে নিয়ে খেলেছিল। নিধি অবলীলায় রেখেছিল বিষয়টা। কিন্তু নেহাল রাখেছি। কচি কচি হাতে খেলতে খেলতে সে হুট করে সে ছুড়ে মেরেছে জানালার পানে। ফলস্বরূপ তাবিজ ডুব দিয়েছে ওপাশের নোংরা স্তুপে।

— নিধি আমার ফোনটা দে। নেহাল নিয়েছিল।

নিধির মন ডুবন্ত ভাবনা থেকে উঠে পরলো অধরের কন্ঠে। নিধি পেছন ফিরে চাইতেই থমকে গেল মুহূর্তের জন্য। কালো শার্ট, হালকা এলোমেলো চুল, কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামে লেপ্টে থাকা বেশ কিছু চুলে অধরকে দারুণ হট লাগছে। নিধির চোখের দৃষ্টি গাঢ় হতে গাঢ়তর হলো। অধরের পাতলা ওষ্ঠাধরের গোলাপি আভায় নিধি বেহায়ার মতো প্রেমে পরলো। নির্লজ্জের মতো নতুন উদ্দ্যমে ভেবে বসলো তার অধরকেই চাই।

— কি হলো। দে ফোনটা। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম যাবো। নিশান ভাইয়া ফোন করেছিল। বলল তিশুর খোঁজ নাকি উনি দিতে পারবেন।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here