ভালোবাসা ২৩তম_পর্ব

0
546

ভালোবাসা
২৩তম_পর্ব
#মৌসুমি_চৌধুরী

বাড়ি ফিরে আসতেই মলয় দেখলো যে মেইন ডোর ওপেন। সে মনে মনে ভাবলো, উফ…এত বেখেয়ালি স্বভাবের না মেয়েটা! একে নিয়ে আর পারা গেলো না। ডোর লক না করে কোথায় সে গিয়েছে আর কি করছে কে জানে…তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দেখে, কিচেন থেকে রান্নার সুঘ্রাণ আসছে। সে পেছন থেকে এসে আচমকা পিঠে চুমু খেয়ে ফের বললো, ইউ আর সো ইরেস্পন্সিবল…বাট আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ। তারপর তাকে আর কথা বলার স্কোপ না দিয়েই গ্যাস অফ করে দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বেডরুমে যেয়ে খাটে ফেলে দিলো। তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে মিশে গেলো তার শরীরে।

ওদিকে আজাদদের বাড়িতে সকাল থেকে আজ বেশ ভালোই তোড়জোড় শুরু হলো। তাদের বাড়ি থেকে বরযাত্রী যাবে রুখসানাদের বাড়িতে। শুধু বন্ধুবান্ধব আর আজাদের মায়ের দিকের নিকট আত্মীয় যারা তাদের নিয়েই যাত্রা করবে। একই পরিবারের হওয়াতে আজাদের বাবার দিককার বেশিরভাগ আত্মীয়স্বজন কনে রুখসানাদের বাড়িতেই যাবে সরাসরি। সুজন আর বিজু সকাল থেকেই আছে আজাদের পাশে। যেকোন প্রয়োজনে সহযোগীতার পাশাপাশি ওদের হাসি-ঠাট্টা ও চলছে দেদারসে।

রওয়ানা দেবার ঠিক আগ মূহুর্তে রুখসানার কল আসতেই আজাদ লজ্জায় কাচুমাচু খেয়ে ফের সুজন আর বিজুকে পাশ কাটিয়ে কলটা ধরতেই ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে, তোমরা বেরিয়ে গেছো?

আরে নাহ…এই তো আরেকটু পরেই বেরুচ্ছি, কেন বলো তো?

সাদা গাড়িতে করে আসবে আর লাল গোলাপে যেন সাজানো থাকে…তোমাকে বলেছিলাম কিন্তু আগেই, মনে আছে তো?

আরে আছে আছে, সব মনে আছে…মুচকি হেসে বললো আজাদ।

কি মনে আছে আমরাও তো জানি… বলে আজাদের কানের কাছে এসে হাক মারলো সুজন।

আজাদ দাঁত খিঁচিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে ধীর স্বরে বললো, গেলি…

সুজন তার কাছ ঘেঁষে ফোনের পাশ থেকে বেশ জোরেই বললো, হুম…দোস্ত দোস্ত না রাহা, কি আর করা মেনে তো নিতে হবেই!!!

বিজু হাসতে হাসতে বলে, তুই ওদের কথা বলতে দে…আজ সারাদিনে তো আর কথা বলার স্কোপ পাবে না।

ফের সুজন বলে ওঠে, কবুল কবুল কবুল করে ফেলে বাড়িতে এনে এক ঘরে ঢুকিয়ে দিলেই তো হয়।

আজাদ ইশারায় মাইর দেখাতেই সুজন ব্যথা পাবার অঙ্গভঙ্গি করে, আহ উহ মরে গেলাম রে… করতেই থাকে, ফোনের ওপাশ থেকে সেটা শুনে রুখসানা হি হি করে অনবরত হাসতে থাকে।

তার খিলখিল হাসির ছন্দে বিভোর আজাদ সব ভুলে যেন সম্মোহিত হয়ে পড়ে আর তা দেখে বিজু এসে তাড়া দিতেই সে সম্বিৎ ফিরে পায়।

রুখসানা একটু লজ্জা পেয়ে ফের মনে করিয়ে দেয়, খাট সাজানো থাকবে তো? আর আমার প্রেজেন্টটা কিন্তু আজই দিতে হবে।

আজাদ মৃদু হেসে বলে, সব থাকবে সাথে আমিও থাকবো…চলবে তো?

ওয়ে হোয়ে, ক্যায়া বাত, ক্যায়া বাত…বলে হাত তালি দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে সুজন।

বিজু একপাশ থেকে জোর গলায় বলে, আগে আসেন তো ভাবী সব ব্যবস্থা থাকবে ফুল অন।

ওদের মজা করা স্বভাবের সাথে পরিচিত না হওয়ায় আচমকা রুখসানা অস্বস্তিতে ভুগে যেন একটু বেশি অপ্রস্তুতবোধ করে কলটা কেটে দেয়।

বন্ধুদের খুনসুটি দেখে আজাদের কাছে আজকের দিনটা সব অর্থেই খুব ভালো লাগতে শুরু করে।

ফের ওরা বিয়েবাড়ির গেটে পৌছাতেই এক দল তরুণী ভীড় করে এসে আজাদকে ঘিরে ধরে আর বরযাত্রীদের পথ আটকায়। তাদের খিলখিল হাসি আর গেট ধরার টাকার দাবিতে যেন মুখরিত হয়ে গেছে পরিবেশ। আজাদ হাসিমুখে সব দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত প্রবেশ করতে চাইলেও সুজন যেন ইচ্ছে করেই গেটে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণীদের সাজ-সজ্জায় মোহগ্রস্ত হয়ে ফ্লার্ট করতে থাকে। তা দেখে আজাদ চোখ পাকিয়ে তাকাতেই নিজেকে সামলে নিয়ে সুজন বলে, আলাপ-সালাপ পরে হবে এখন যে কাজে এসেছি আগে সেটাই হোক… ভারনা, দুলহা মিয়া বহুত বুড়া মান জায়েগা।

আজাদের কথা শুনে উচ্ছ্বসিত তরুণীর দল হাসিতে ফেটে পড়লো। গেটে টাকা দেয়ার পর বিজু সবাইকে সরতে বলে বরযাত্রীদের নিয়ে অন্দরমহলের দিকে এগুতে থাকে। কাজী সাহেব আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তার লেখালেখির কাজটা তিনি সম্ভবত আগেই সেরে রেখেছিলেন আর তাই জুম্মার নামাজ পড়ে এসে মুরুব্বিরা আর যেন দেরি করতে চাইলেন না। একটা পর্দা দিয়ে আড়াল করা বর কনের স্টেজ। যদিও অল্পস্বল্প দেখতে পাচ্ছে দুজনই দুজনকে। কিন্তু তবুও আজাদের অস্থিরতার আর শেষ নেই। কবুল বলে স্বাক্ষর করে রুখসানার মুখে কবুল শোনার প্রতীক্ষায় তার কাছে মনে হলো যেন একযুগ পার হয়ে গেছে।

অতঃপর ফাইনালি কবুল বলে রুখসানা স্বাক্ষর করতেই পর্দাটা সরিয়ে দেয়া হলো। আর আজাদ যেন তীর্থের কাক হয়ে গিয়ে লাজশরমের মাথা খেয়ে রুখসানাকে অপলক নয়নে দেখতেই থাকলো। যেহেতু দু-পক্ষের আমন্ত্রিত অতিথিদের বেশিরভাগ একই পরিবারের সদস্য এবং পূর্ব পরিচিত তাই তারা বেশ হাস্য-কৌতুক করতে লাগলো। ভাই থেকে বেয়াই হয়ে গিয়ে আজাদের বাবা আর রুখসানার বাবা একে অপরের সাথে কোলাকোলি করে যেন আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলো।

তারপর খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষে আয়নায় মুখ চাওয়াচাওয়ি, মিষ্টি আর শরবত খাওয়ানো নিয়ে বেশ হাসাহাসি হলো। ফের খানিকটা কান্নাকাটির মাধ্যমে বিদায় নিয়ে রুখসানা চলে এলো আজাদদের বাড়িতে। চাচীমা বরণ করে নিয়ে তাকে ঘরে বসাতেই আজাদ যেন ভেতরে যাবার জন্যে ছটফট করছিলো আর তা দেখে সুজন আর বিজু হেসেই খুন। বিজু বললো, এত তাড়া কিসের রে ভাই…গোটা জীবন তো পড়েই আছে রুখসানার সাথে কাটানোর জন্যে।

সুজন হেসে বললো, এখন নাহয় আমাদের একটু সময় দে…পরে দেখা যাবে আমরাই আর কথা বলার সুযোগ পাবো না।

আজাদ উঠে যেতে নিতেই, বিজু আবার পথ আটকে বললো…কি রে ভাই, আমায় দুবাই থেকে ডেকে এনে এখন কই চললি তুই…নাহ, এটা কিন্তু তোর একদম ঠিক হচ্ছেনা।

ফের কপট অভিমানে যেন গাল ফোলালো বিজু।

আজাদ বেশ সিরিয়াস কন্ঠে বললো, তোরা কি শুরু করেছিস বল তো!…বেচারি একা একা নার্ভাস ফিল করছে হয়তো, আমি গিয়ে দেখে আসি।

সুজন মুচকি হেসে বললো, শালা তোর ভাবগতিক তো সুবিধার না… মতলব খারাপ আর সাধুগিরির নাটক করিস!!!

বিজু অট্টহাসিতে ফেটে পড়তেই আজাদ যেন একছুটে পালিয়ে গেলো।

আজাদের বাসর ঘরে প্রবেশ হতেই বিজু আর সুজন চাচা-চাচীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাদের যার যার বাড়ির পথে পা বাড়ালো। কিছুদূর পর্যন্ত একসাথে হাঁটতে হাঁটতে সুজন বললো, চল তোকে আরেকটু এগিয়ে দিয়ে আমি বাস ধরবো।

আমি বলে উঠলাম, তোর দেরি হয়ে যাবে পরে আর বাস পাবি না…

কিন্তু সে আমার কথা না শুনে জোড়াজুড়ি করতেই আর না করতে পারলাম না। হঠাৎ করে আমার কি জানি হলো, মনে হচ্ছিলো যেন অরুকে দেখলাম। আমি অস্ফুটে অরুর নাম উচ্চারণ করতেই সুজন আমার কাঁধ ঝাকিয়ে বললো, স্বপ্ন দেখছিস নাকি!!! কল্পনার জগত থেকে বের হ…

আমি অস্থিরতায় ভুগে এক দৌড়ে রাস্তা পার হতে গেলে হঠাৎ একটা বাস এসে যায় সামনে আর সুজন আমায় এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিয়ে রোড ক্রস করে এক পাশে দাঁড়িয়ে বকতে লাগলো।

আমায় অন্যমনস্ক দেখে ফের সে বলে উঠলো, পাগল হয়ে গিয়েছিস…সে এখানে আসবে কোথায় থেকে?

আমি ভাবনায় ডুবে থেকে আনমনে বললাম, আমি দেখেছি তাকে…আমার অরুকে আমি চিনবো না!

তোর অরু? বলে সুজন রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। ক্ষণিকের অসাবধানতায় বলা সে কথার জন্যে যেন সুজনের কাছে আমার অস্বস্তির আর কোন সীমা রইলো না।

#চলবে…

কপি করা নিষেধ, লেখা অন্যত্র ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here