মৃগতৃষ্ণা-৬

0
895

#মৃগতৃষ্ণা-৬
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

গোসল শেষে কাপড় নেড়ে দিতে উঠোনে এলো পঙ্খি। দেরি দিয়ে গোসল করায় ছাঁদে আজ কাপড় দেওয়ার জায়গা পায়নি। তাই উঠোনে টানানো দড়িতে কাপড় নেড়ে দিতে এসেছে সে।লেখিকা-মেহরুমা নূর। কাপড় নেড়ে দিতে দিতে হঠাৎ কাচারি ঘর থেকে কারোর কথার আওয়াজ শুনতে পেল সে। একটু খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো এটা ইন্ধনের গলা। তার কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে সে ফোনে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে। নিশ্চয় তাকে খুব ভালোবাসেন উনি। উনার কন্ঠে কতো আবেগ প্রকাশ পাচ্ছে। ইন্ধন বলছে,
–আই মিস ইউ সো মাচ। মাই লাভ তোমাকে ছাড়া আর ভালো লাগছে না। আবার কবে যে তোমার সাথে দেখা করতে পারবো? বলোনা কবে আসবে তুমি? অপেক্ষা যে সহ্য হচ্ছে না। একবার আসলে আর দূরে যেতে দিবোনা। বিয়ে করে একেবারে ঘরে তুলে নিবো।

কাপড় নেড়ে দিয়ে ওখান থেকে সরে এলো পঙ্খি। এভাবে কারোর ব্যাক্তিগত আলাপ শোনাটা ঠিক না। তাই সে আর দাঁড়াল না। মৃদু পায়ে হেঁটে শান বাধানো পুকুরের নিচের সিঁড়িতে এসে বসলো। মনটা অকারণেই কেমন উদাসীন হয়ে গেল। ভালোবাসা বুঝি অনেক সুন্দর হয়। আচ্ছা ওই লোকটা বেঁচে থাকলে কি আমাকে ভালোবাসতো? তখন কি সেও আমাকে নিয়ে এভাবেই বলতো? পানির মাঝে তাকিয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পেল পঙ্খি। তার প্রতিবিম্বটাও যেন তার মতোই বেরঙ। কোন রঙ নেই তার মাঝে। কে এই মানবি? কি তার পরিচয়? কিবা তার মঞ্জিল? কোন জবাব এলো না। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পানিতে হাত নাড়িয়ে ঘোলা করে দিলো। এসব ভাবনাও যে ওর জন্য বৃথা। ভালোবাসা ওর কাছে শুধুই মৃগতৃষ্ণা।
___

বিছানায় রতি,ক্রিয়া শেষে ঘর্মাক্ত বি,বস্ত্র শরীরে বালিশে ঠাস করে শুয়ে পড়লো জুবায়েদ। পাশেই বিথী চাদর টেনে ন,গ্ন শরীর কিছুটা ঢাকলো। মহিলা ওয়ার্ড কমিশনার হওয়ার আশায় জুবায়েদ কে খুশি করছে সে। তবে জুবায়েদের শরীর তৃপ্ত হলেও তার মন যে এখনো অতৃপ্ত। চোখের সামনে কচি নারীকে দেখেও তাকে না পাওয়ার হাহাকার তাকে শান্তি দিচ্ছে না। বারবার পঙ্খির সুন্দর কোমল বদনের ছবি চোখের সামনে ভাসছে। লুকিয়ে লুকিয়ে আর কতদিন দেখবে ওকে। সেদিন রাতে তো একটুর জন্য ধরা পড়ে যায়নি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? ওই মোহময় নারীকে বিছানায় না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি আসছে না। কিছু না কিছু করতেই হবে। লেখিকা-মেহরুমা নূর।

পাশ থেকে বিথী জুবায়েদের বুকের ওপর এসে বললো।
–তো জুবায়েদ সাহেব আপনি খুশিতো? এবার আমার ওয়ার্ড কমিশনার হওয়া পাকা তো?

–আরে হ্যাঁ জানেমন এটা আবার বলতে হয়? মনে করো তুমি ওয়ার্ড কমিশনার হয়ে গেছ।

–কিন্তু শুনেছি আপনার চাচাতো ভাই ইন্ধন নাকি সামনের ইলেকশনে দাঁড়াবে। এমনিতেও গ্রামে তার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। তাহলে কি আপনার আর কোন ক্ষমতা থাকবে? তখন না আবার আমাকে ইন্ধনের কাছে মেহনত করতে হয়।

জুবায়েদ বিথীর চুলের মুঠি ধরে চোয়াল শক্ত করে বললো।
–শা* তোর শরীরের জ্বালা বুঝি মেটেনি এখনো? ইন্ধনের বিছানায় যাওয়ার জন্য ছটফট করছিস মনে হচ্ছে। তোর জন্য শুধু এই মজুমদারই যথেষ্ট। খবরদার আর কখনো আমার ক্ষমতা নিয়ে কথা বলবিনা। কালকের ছোকরা এই জুবায়েদ মজুমদারকে কখনো টক্কর দিতে পারবেনা।
কথাগুলো বলে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো বিথীকে। বিথীর ওপর রাগ ঝাড়লেও তার মনে ঠিকই সংশয় হানা দিচ্ছে। ইন্ধনের পপুলারিটি তাকে একটু হলেও নাড়া দিচ্ছে। ইন্ধন ইলেকশনে জিতে গেলে সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি ওরই। আর ও সেটা হতে দিতে পারে না। কিছু না কিছু তো করতেই হবে। ইন্ধনের ডানা কাটতেই হবে।
__

আবারও একই স্থানে বসে আছে রাজকন্যার অপেক্ষায়। রোজ এইসময়ে আসে মেয়েটা। গত এক সপ্তাহে রোজই মেয়েটার সাথে দেখা করতে আসে সে। এটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। সারাদিন অপেক্ষা করে থাকে মেয়েটার সাথে দেখা করার জন্য। মেয়েটার মিষ্টি কথার ফুলঝুরি শুনতে অনেক ভালো লাগে তার। মনে হয় সারাদিন শুধু মেয়েটার কথাই শুনুক। নিজেকে এখনো সে রাজকন্যাই বলে। আর তাকে রাজপুত্র। ছেলেটাও তাকে রাজকন্যা বলেই ডাকে। মনে হয় যেন সত্যি করে কোন রুপকথার রাজ্যে চলে গেছে তারা। সময়টা কখন কেটে যায় বোঝাই যায় না।

ছেলেটার ভাবনার মাঝেই রাজকন্যা চলে এলো।কি নিস্পাপ তার হাসি মুখটা। দেখলেই যেন মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। রাজকন্যা রাজপুত্রের কাছে এসে বসলো। রাজপুত্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
–এই নাও।

–কি এটা?

–এডো দলিয়া (চাউলের গুড়ার তৈরি)। আমাগেরে বাড়িতে বানাইছে।তাই তোমার জন্য নিয়ে আসলাম। খাও দেখ মেলা মজা।

রাজপুত্র মুচকি হেসে একটা দলিয়া নিলো। খেয়ে তেমন মজার কিছু বুঝলো না। তবে মেয়েটার মুখের হাসি যেন এর স্বাদ হাজার গুন বাড়িয়ে দিলো। খেতে খেতে রাজপুত্র খেয়াল করলো রাজকন্যার হাতে কেমন কেটে গিয়ে লাল দাগ হয়ে আছে। বুকের কেমন যেন একটা ব্যাথার অনুভব হলো রাজপুত্রের। সে মেয়েটার হাত টান দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
–কি হয়েছে তোমার হাতে? এভাবে কাটলো কি করে?

–আরে এইডা কিছুই না। আসলে কাচের চুড়ি পরবার গেছিলাম তখন চুড়ি ভাইঙ্গা হাত কাইটা গেছে।

রাজপুত্রের বিষয় টা মোটেও ভালো লাগলো না। কেন যেন তার খুব রাগ হলো। সে একটু রাগী সুরে বললো।
–কাচের চুরিতে হাত কাটে তাহলে পড়তে যাও কেন? খবরদার আর কখনো কাচের চুড়ি পড়বে না।

রাজকন্যা মুখটা ছোট্ট করে বললো।
–কিন্তু আমার তো চুড়ি পড়া মেলা পছন্দ। চুড়ি পড়তে আমার খুব ভাল্লাগে।

রাজকন্যার মলিন মুখখানা দেখে রাজপুত্র আরকিছুই বলতে পারলোনা। কিছু একটা ভাবতে লাগলো সে। সেদিনের মতো চলে এলো। পরদিন আবারও একই সময় দেখা করতে গেল সে। রাজকন্যা আসতেই তার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো।
–এই নাও এটা তোমার জন্য।

–কি এটা?

–খুলেই দেখ।

রাজকন্যা প্যাকেট খুলে দেখলো তাতে লাল আর নীল রঙের দুই ডজন প্লাস্টিকের প্যাঁচানো চুড়ি। সে আনন্দিত হয়ে বললো।
–চুড়ি?আমার লাইগা?

–হ্যাঁ তোমার জন্য। কাচের চুড়ি পড়তে গেলে হাত কেটে যায়। তাই ফেরিওয়ালার কাছ থেকে এই প্যাঁচানো চুড়ি এনেছি তোমার জন্য। এগুলো পড়তে আর হাত কাটবে না।

রাজকন্যা প্রফুল্লিত হয়ে চুড়ি গুলো দুই হাতে পড়ে নিলো। চুড়ি পড়ে সে খুব খুশি। হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে রাজপুত্রকে দেখাচ্ছে। রাজপুত্র মুগ্ধ নয়নে দেখছে রাজকন্যাকে। মেয়েটাকে খুশি দেখলে তার এতো প্রশান্তি হয় কেন? মনে হয় বুঝি এরথেকে আনন্দ কিছুতেই নেই। তাইতো রোজ ছুটে আসে মেয়েটাকে দেখতে। ওর রাজকন্যাকে দেখতে। দিন গিয়ে রাতে লুকায়, রাত পেরিয়ে প্রভাতে গড়ায়। রাজকন্যা আর রাজপুত্রের সাক্ষাৎ এভাবেই অব্যাহত থাকে। দুনিয়ার বাস্তবতার থেকে দূরে নিজেদের এক আলাদা দুনিয়া বানিয়ে নেয় তাঁরা।
___

রাতের খাবার শেষে বাদবাকি খাবার গুলো গুছিয়ে রাখছে পঙ্খি।লেখিকা-মেহরুমা নূর। কনিকাও রান্নাঘরের বাকি কাজ করছে। কাজের মাঝেই হঠাৎ কনিকা বেসিং এর কাছে গিয়ে গড়গড় করে বমি করে দিলো। আচমকা কনিকার বমি করা দেখে পঙ্খি একটু ঘাবড়ে গেল। সে এগিয়ে গেল কনিকার কাছে। বমি করে ক্লান্ত হয়ে গেছে কনিকা। পঙ্খি উদ্বিগ্ন হয়ে বললো।
–কি হয়েছে ভাবি? হঠাৎ বমি হচ্ছে কেন?

কনিকা ক্লান্ত কন্ঠে বললো।
–না তেমন কিছু না। হয়তো এসিডিটি হয়েছে।

–কিন্তু আপনাকে ইদানীং প্রায়ই কেমন অসুস্থ দেখায়। সেদিনও দেখলাম আপনার মাথা ঘুরছে। আবার বমিও হলো। ভাবি আপনি কি অন্তঃসত্ত্বা?

পঙ্খির কথায় কনিকা চকিত হয়ে তাকালো পঙ্খির পানে। চোখে মুখে তার ভয়ের ছাপ প্রকাশ পাচ্ছে। সে হঠাৎ কিছুটা তেতে উঠে বললো।
–কি যাতা বলছ? বমি করলেই পোয়াতি হয়ে যায় নাকি মানুষ? আর তোমাকে না কতবার বলেছি আমার কোন ব্যাপারে নাক গলাতে আসবেনা? তাও কেন বারবার আমাকে বিরক্ত করো তুমি? দেখ নিজের চরকায় তেল দাও। আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।

কথাগুলো বলেই কনিকা দ্রুত গতিতে ওখান থেকে চলে গেল। পঙ্খি বেচারি হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। ও বুঝতেই পারলোনা, কি এমন বললো যার কারণে কনিকা এতো রেগে গেল? হঠাৎ এমন অদ্ভুত ব্যবহার করলেন কেন উনি? কিছু কি লুকাচ্ছেন উনি? ভাবনায় ইতি টেনে আপাতত নিজের কাজে মনোনিবেশ করলো সে। রান্নাঘরের কাজ সেরে নিজের কক্ষে এলো পঙ্খি। এতক্ষণ রান্নাঘরে থাকায় শরীর অনেক ঘেমে গেছে। দরজা লাগিয়ে ফ্যান চালিয়ে দিয়ে গায়ের ওড়নাটা সরিয়ে রেখে বাতাসের নিচে একটু আরাম করে বসলো পঙ্খি। কৃত্রিম বাতাসে শরীর টা জুড়ানোর প্রচেষ্টা তার। পাঁচ মিনিট অতিক্রম হতেই হঠাৎ বিদুৎ চলে গেল। অভ্যাস অনুযায়ী পঙ্খি দিয়াশলাই খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও দিয়াশলাই পেলনা সে। উপায়ন্তর না পেয়ে সে ধীরে ধীরে অন্ধকারে হাতড়িয়ে দরজা খুলে বের হলো। অন্ধকারে ওড়না টা নেওয়ার কথা আর মনে থাকলোনা তার। ওভাবেই দরজা খুলে বাইরে আসলো সে। হঠাৎ কোমড়ে কারোর হাতের স্পর্শ পেল পঙ্খি।আত্মা কেঁপে উঠল তার। পঙ্খি ভয় পেয়ে চিৎকার করতে নিলেই একটা হাত তার মুখ চেপে ধরলো। আতঙ্কে পঙ্খির জান বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। ছাড়া পাওয়ার জন্য পঙ্খি ছটফট করতে লাগলো। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। কোমড়ে থাকা হাতটার বিচরণ বাড়তে লাগলো। ধীরে ধীরে হাতটা উপরের দিকে উঠিয়ে পঙ্খির স্পর্শ,কাতর স্থানে জ,ঘন্য ভাবে স্পর্শ করলো। পঙ্খির গা গুলিয়ে আসছে। এই নি,কৃষ্ট স্পর্শ থেকে ম,রে যাওয়াও শ্রেয়। চোখ দিয়ে যেন র,ক্ত বের হচ্ছে তার। আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজেকে ছাড়ানোর। তখনই নিচ থেকে সামছুল মজুমদারের কন্ঠ শোনা গেল।
–এই বিদ্যুৎ নিয়ে এবার কিছু করতেই হবে। রোজ রোজ একই অবস্থা হচ্ছে।

সামছুল মজুমদারের কন্ঠ শুনে হঠাৎ সেই জ,ঘন্য লোকটি পঙ্খিকে ছেড়ে দিলো। পঙ্খি আশেপাশে হাতড়িয়ে কাউকেই পেলোনা। ঠিক ওইসময়ই বিদ্যুৎ চলে এলো।আশেপাশে তাকিয়েও কাওকে পেলোনা। পঙ্খির গায়ে ওড়না ছিলোনা তাই সে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল। পঙ্খি যেতেই দেয়ালের পেছন থেকে বেড়িয়ে এলো জুবায়েদ। হাতের দিয়াশলাই টা ঘুরাতে ঘুরাতে বিশ্রী ভাবে হাসলো সে। একদিন না একদিন এই রমনীকে সে পুরোপুরি ভোগ করেই ছাড়বে।

বিছানায় ভয়ে জুবুথুবু হয়ে বসে আছে পঙ্খি। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। হাঁটুর ভেতর মুখ দিয়ে কেঁদে যাচ্ছে সে। ওই জ,ঘন্য স্পর্শের কথা ভুলতে পারছেনা সে। সারা শরীর রি রি করছে।মনে হচ্ছে বিষাক্ত বিচ্ছুরা ওর সারা শরীরে ছোবল মারছে। ভেতর টা যেন উল্টে আসতে চাচ্ছে। এসব কেন হলো ওর সাথে? কে ছিল ওই জ,ঘন্য লোকটা? এখন কি করবে ও?কাকে বলবে এই কথা? কেউ কি বিশ্বাস করবে? বরং ওর ওপরই আঙুল উঠবে। দুনিয়াতে দোষ সবসময় মেয়েদেরই হয়। মান সবসময় মেয়েদেরই যায়। বলবেই বা কি করে? এমন জঘন্য কথা সবার সামনে কিভাবে বলবে? ছিঃ ছিঃ ছিঃ কেন হলো এমন? কেন? কেন? কেন? এর আগে ম,রণ কেন হলোনা আমার? চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে পঙ্খির। না কাওকে বলতে পারছে, না সইতে পারছে সে। এ কেমন অসহনীয় যন্ত্রণা?

সারারাত এই যন্ত্রণার মাঝেই পার করলো পঙ্খি। একটুও ঘুমাতে পারলোনা। একা একা রুমে ভয় করলেও কোথাও যেতেও পারলোনা সে। এতরাতে কার কাছেই বা যাবে সে? কোনরকমে রাতটা পার করলো সে। সকালে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে যথারীতি সংসারের কাজে লেগে পড়লো সে। রান্নাঘরে কনিকার সাথে সকালের রান্নার কাজে লেগে আছে। কনিকার সাথে আর তেমন কথা হয়নি পঙ্খির। আপাতত সে নিজের মনের অশান্তির সাথে যুদ্ধ করছে। কাকে সে এই কথা বলতে সেটাই ভাবছে। ভাবনার মাঝেই ছায়া এসে বললো।
–ভাবি ইন্ধন ভাইয়া এক কাপ কফি চাইছে।

কথাটা বলেই ছায়া ফুড়ুৎ করে আবার চলে গেল।লেখিকা-মেহরুমা নূর। কনিকা রুটি বানাচ্ছিলো তাই সে পঙ্খিকে কফি বানিয়ে নিয়ে যেতে বললো। পঙ্খি মাথা নেড়ে কফি বানিয়ে নিয়ে গেল ইন্ধনের জন্য। কফি বানাতে সে পারতোনা। রাবেয়া তাকে শিখিয়েছে, যাতে সে ব্যাস্ত থাকলে পঙ্খি ইন্ধন কে কফি বানিয়ে দিতে পারে। কফি নিয়ে ইন্ধনের দরজার সামনে এসে দেখলো দরজা খোলাই আছে। রুমের ভেতর দুকম যেতেই পঙ্খি দেখলো ইন্ধন বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে থেকে ভিডিও কলে কারোর সাথে কথা বলছে। ফোনের স্ক্রিন পঙ্খির দিকে থাকায় পঙ্খি দেখতে পেল ফোনের স্ক্রিনে একটা সুন্দর মেয়ে। মেয়েটা বোধহয় কাঁদছে। ইন্ধন তাকে বলছে,
–আরে বাবা কাঁদছ কেন? আমারও তো তোমাকে ছাড়া খারাপ লাগে তাই বলে কি এখন কান্না করতে বসবো? আরতো কিছুদিন। তারপরই তো দেখা হবে।

পঙ্খি বুঝতে পারলো এটা নিশ্চয় ইন্ধনের গার্লফ্রেন্ড। পঙ্খি গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের উপস্থিতির জানান দিল। পঙ্খিকে দেখে ইন্ধন কেমন তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো। পঙ্খি কফির মগটা বেডের পাশের টেবিলে রেখে বললো।
–আপনার কফি।
তারপরই সে ঘুরে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যোত হলো। তখনই ইন্ধন পেছন থেকে বলে উঠলো।
–পঙ্খি এক মিনিট দাঁড়াও তো।

ইন্ধনের কথায় পঙ্খি আবারও ইন্ধনের দিকে ঘুরে দাঁড়াল। ইন্ধন কিছুক্ষণ পঙ্খিকে পরখ করে বললো।
–তোমার কি শরীর খারাপ? চোখ মুখ এমন ফোলা ফোলা আর ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে কেন? কিছু হয়েছে তোমার? দেখ তুমি চাইলে আমাকে বলতে পারো।

ইন্ধনের কথায় পঙ্খি ভাবনায় পড়ে গেল। ভাবছে কাল রাতের কথা ইন্ধনকে বলবে কিনা? হয়তো উনি আমার কোন সাহায্য করতে পারবেন। মনে মনে ঠিক করলো সে ইন্ধন কে বলবে কথা টা। ইন্ধন পঙ্খির উত্তরের অপেক্ষায় আছে। পঙ্খি যেই কিছু বলতে যাবে তখনই ওখানে খোদেজা বেগমের আগমন ঘটলো। তিনি এসেই পঙ্খির ওপর বর্ষন শুরু করে দিলো। খলবল গলায় বললো।
–ক্যারে ছেড়ি, তুই এহেনে কি হরস? তোক না কসি আমার নাতীর থাইকা ফাঁকে থাকপি? কথা কানে যায় না লো তোর? লইজ্জা শরম সব বেইচা খাসু? যা এহেন থে।

খোদেজার কথায় পঙ্খি কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে গেল। ইন্ধন দাদীর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
–দাদী বয়সের সাথে সাথে তোমার মাথার তারাগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বোধহয়। পঙ্খি আমাকে এখানে কফি দিতে এসেছিল আর কিছুই না। শুধু শুধু এসব বাজে কথা বলার কোন দরকার ছিল ওকে?

–আমি এবি এবি কুনু কথা কইনা। আমি যেডো দেইখপার পারি তুই তা পারবিনা। তাই আমাক হিকাইবার আসিস না।

ইন্ধনের রুম থেকে পঙ্খিকে চোখ মুছতে মুছতে বের হতে দেখে রাবেয়া পঙ্খিকে নিজের কাছে ডাকলো। পঙ্খিকে নিজের রুমে এনে বেডে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম সুরে বললো।
–কি হয়েছে? আম্মাকে তো চেনোই। তার কথায় মন খারাপ করোনা। আচ্ছা বলোতো তোমার কি কিছু হয়েছে? চোখ মুখ কেমন যেন দেখাচ্ছে।

পঙ্খি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে। কাঁদতে কাঁদতেই রাবেয়াকে সবটা খুলে বললো। সবটা শুনে রাবেয়া স্তব্ধ হয়ে গেল। পঙ্খি কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
–আমি এখন কি করবো চাচী? আমার খুব ভয় করছে। যদি আবারও এমন কিছু হয় তাহলে?

রাবেয়া কিছুক্ষণ ভেবে বললো।
–দেখ তুমি চাইলে এটা সবাইকে বলতে পারো।তবে আমার মনে হয় না এতে কোনো লাভ হবে। বরং সবাই তোমাকেই উল্টো দোষারোপ করবে।আমাদের সমাজ টা হলো পুরুষ শাসিত বুঝলে? পুরুষের জন্য সাতখুন মাপ।আর মেয়েদেরই সকল দোষ।তারওপর তুমি হলে একজন বিধবা। আম্মাকে তো তুমি জানোই। তিনি তোমার ওপরই আঙুল তুলবেন।ভাবিও তোমাকে ভালো চোখে দেখেন না। এসব শুনে উনি আরও মসলা লাগিয়ে তোমাকেই বেশি করে শুনাবেন।তারওপর তুমি তার চেহারাও দেখোনি। এক্ষেত্রে তুমি কারোর নামও বলতে পারবেনা। তাই আমার মতে একথা কাওকে না জানানোই ভালো হবে। আর থাকলো ভয়ের কথা তাহলে তুমি এককাজ করো। আজ থেকে তুমি রাতে ছায়ার সাথে শুবে। আমি ছায়াকে বলে দিবো।

রাবেয়ার কথায় পঙ্খি একটু হলেও শান্তি পেল।রাবেয়াকে জড়িয়ে ধরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো পঙ্খি। এই একটা মানুষই ওকে আপন ভাবে। তার কাছেই পঙ্খি নিজের মনের কথা বলতে পারে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here