অতিথি তুমি END PART

0
884

অতিথি তুমি
END PART
Write : Sabbir Ahmed

-তাহলে কি চান? (ইরা)
-ভালোবাসতে দিবেন? (শুভ)
-আবারও সেই একই কথা। দেখেন আমি সুস্থ না, ডাক্তার এর রিপোর্ট অনুযায়ী আমার বাঁচার সম্ভাবনা কম
-রিপোর্টে ভুল আছে, আপনাকে যে ঔষধ গুলো দিয়েছে সেগুলো খেলেই ঠিক হয়ে যাবে
-আপনি বেশি ছেলেমানুষী করছেন৷ এটা কিন্তু ঠিক না। আমি আপনাদের মেহমান। মেহমানের সাথে কেউ এমন করে?
-আমাকে কি বাচ্চা পেয়েছেন? ভুলভাল একটা বুঝ দিয়ে থামিয়ে রাখবেন? পৃথিবীতে যদি আপনি চারদিনও বেঁচে থাকেন সেই চারদিনই আমি আপনার পাশে থাকবো আপনার হয়ে
-মানে?
-আমি বিয়ের ব্যবস্থা করবো, আপনি শুধু একবার রাজি হন
-আরে কি বলেন আপনি! মাথা ঠিক আছে আপনার? আমি আগে সুস্থ হয়ে নেই তারপর
-সুস্থ হওয়া লাগবে না,
-দেখেন এমন করলে আপনি অনেক কষ্ট পাবেন। কিছুদিন পর তো আমি মরেই যাবো
-বললেই হলো নাকি?
-রিপোর্ট তো সেটাই বলে
-ভুল বলে, আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন
-হ্যাঁ সে সম্ভাবনা আছে, তবে খুব কম
-কমটাই কাজে দিবে
-আচ্ছা আমি সুস্থ হলে আপনার বিষয় টা ভেবে দেখব
-আর এখন?
-এখন কিছু বলতে পারবো না
-না না আমি এখন বিয়ে করবো
-এমন কেনো আপনি?
-আপনার জন্য?
-এতো উতালা হয়েছেন কেনো?
-আপনার অনেক সেবাযত্ন দরকার। আর আমি সেটা আপনার খুব কাছে থেকে করতে চাই
-হুহহহ, আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটাতে কেউ রাজি হবে না
-রাজি করানের দায়িত্ব আমার, শুধু আপনি হ্যাঁ বলেন তাতেই হবে
-এখানে এসে আরেক বিপদে পড়েছি আমি
-বিপদ না, আপনিও আমাকে ভালোবাসেন
-কচু বাসি
-জানি আমি
-আপনি বিশাল এক ভেজাল লাগিয়ে দিবেন। বাবা এটা শুনলে কি যে করবে কে জানে। এসব শুনে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হয়। উনি রাজি না হয়ে যদি এখান থেকে আমাকে নিয়ে যায় তখন?
-আপনিও ভয় পাচ্ছেন। আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি। আমি বিয়ের ব্যবস্থা করি
-এই না না ওয়েট ওয়েট
-বলেন
-তাড়াহুড়ো কেনো করেন?
-আমি আপনার থেকে দূরে থাকতে চাই না৷
-শোনেন বাবা আংকেল তো কাল বিকেলে আসবে তখন বইলেন। এখন একটু শান্ত হন
-হুমমম
-চেয়ার দেই বসবেন???
,,
ইরার কথায় চেয়ারে বসতে যাবো ঠিক তখনই মা এসে হাজির…
-শুভ একটু আমার রুমে আয় (মা)
-এখন যাবো না (আমি)
-আমি আসতে বলেছি
-এখন গেলে তুমি আবার মাইর দিতে পারো, আমি যাবো না
-তোর কেনো মনে হলো তোরে মাইর দিবো?
-আমি পূর্বাভাস বুঝতে পারি
-ভালোই বুঝেছিস। আমি আড়াল থেকে তোদের কথা শুনলাম। তুই ওরে এতো বিরক্ত করছিস কেন? (অনেক রেগে)
-না না আন্টি আমি রা রাজি (ইরা ভয়ে ভয়ে বলে ফেলল)
,,
আমি আর মা দুজনই অবাক। ইরা এইভাবে রাজি হওয়ার জন্য। ইরা এখন কিছু না বললে মা সত্যি সত্যি কেলানি দিতো।
মা আর দাঁড়িয়ে থাকলো না চলে গেলো। আমি মনে মনে খুব ভয়ে আছি। কারণ কাল যে কি ঘটবে। ইরার বাবার মনের অবস্থা ভালো নেই। মেয়েকে নিয়ে টেনশনে তার মধ্যে আমি এসব পাকিয়ে ফেলেছি। আমার চুপচাপ থাকা দেখে ইরা বলল…
-এই কি ভাবছেন? (ইরা)
-কই কিছু না (আমি)
-আবার পিছু হটবেন নাকি?
-এহহহ আমি এ ব্যাপারে সিরিয়াস
-….(ইরা মুচকি হাসছে)
-হাসেন কেনো?
-আপনার হাব ভাব সিরিয়াসনেস দেখে
-কেনো? আপনি সিরিয়াস না?
-একটু একটু
-একটু কেনো? অনেক হওয়া লাগবে
-আপনি ঘূর্ণিঝড় এর মতো যা শুরু করছেন আমি যে আপনাকে নিয়ে কিছু একটা ভাববো তার সময় কই?
-বিয়ে টা হোক তারপর ভাববেন
-আর যদি না হয়। ধরেন বাবা আমাকে নিয়ে দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, তখন কি করবেন?
-আমার রুমের জানালা থেকে যে দূর পাহড়ের ঝর্ণা টা দেখা যায়, সেখানে যাওয়ার খুব ইচ্ছে আমার। সেখানে গিয়ে পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে হারিয়ে যাবো
-ওরে ওরে ওরে ভালোবাসা। হয়েছে এসব কথা বলতে হয় না৷ এখন রুমে যান
-না আমি আপনার সাথেই থাকবো
-আমার ভালো লাগছে না আমি একটু শুয়ে থাকবো
-আপনি শুয়ে থাকেন, আমি আপনার পাশে বসে থাকবো
-আপনি যাবেন না?
-না
-নাছোড়বান্দা
-হুমম অনেক আগে থেকেই
,,
পরদিন সকাল সকাল ইরাকে নিয়ে ঘুরতে বের হই। আগের দিনই ইরা তার বাবার কাছে থেকে অনুমতি নিয়ে রাখেছিলো। বেশ কয়েকটা জায়গা ঘুরে দেখার পর দুজন ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরি দুপুরের পর পর।
,,
-কয়েকদিন হলো কলেজ নেই লেখাপড়া নেই, তুই আছিস শুধু তার পেছনো (মা)
-সে বেশি ইম্পর্টেন্ট (আমি)
-আমি বললে তো শুনবি না, তোর বাবা আসুক আজ বুঝবি
-আমি বাবাকে ম্যানেজ করে নিবো
-হে দেখবোনি কত পারিস
,,
বাবা আর আংকেল সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে। মা আগেই বাবাকে আগাম কিছু বলে রেখেছিলো আমার আর ইরার ব্যাপারে। এখন রাত নয়টা ইরা আর আমাকে নিয়ে আলোচনায় বসেছে মা, বাবা আর আংকেল।
আমি আমার রুম থেকেই তাদের আলোচনা শুনছিলাম।
,,
প্রায় আধ ঘন্টা আলোচনা হলো।
ইরার বাবা এ ব্যাপারে কোনোমতেই রাজি হলেন না। আমার বাবাও নারাজ। তবে মা ঠিকই রাজি ছিলো।
শেষমেশ ইরার বাবা ডিসিশন নিলো তারা কাল পরশু চলে যাবে।
,,
বাবার মুখের উপর কিছু বলার সাহস নেই। পরিস্থিতি যা দেখছি সেটা উন্নতি হওয়ার কোনো চান্স নেই।
আমার শেষ ভরসা ইরা। ও যদি আমার সাথে থাকতে রাজি হয় তাহলে ঠিকঠাক হবে।
,,
কিন্তু ওর মত নেওয়ার জন্য ওরে ডাকছে না কেউ। সবাই আলোচনা শেষ করে যখন উঠে যাচ্ছিলো তখন ইরা তাদের মাঝে প্রবেশ করলো। সে যা বলছিলো…
-আমার কিছু কথা আছে, আন্টি শুভ কে ডাকুন (ইরা)
,,
আমি দরজা থেকে সড়ে গিয়ে বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। তাদের কথা যে আমি শুনছি না এটা বোঝানের চেষ্টা করলাম।
মা রুমে আসলো আর আমাকে সাথে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলো।
,,
রুমে গিয়ে দেখি ইরা তার বাবার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। ইরার বাবা আর আমার বাবা একবার করে লুক দিলেন আমার দিকে। আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইলাম।
-আচ্ছা যে কথাটা আমি বলতে চাচ্ছিলাম সেটা বলি? (ইরা)
-হ্যাঁ তুমি বলো (মা)
-বাবা তোমার কাছে থেকে আমি যা চেয়েছি সেটাই পেয়েছি। আমি এতদূর ঘুরতে আসতে চেয়েছি তুমি নিয়ে আসছো। আরও অনেক জায়গায় নিয়ে গেছো। এখন আমার শেষ একটা চাওয়া,এই ছেলের সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে দাও। আমার মনে হচ্ছে সে আমার কাছে থাকলে আমি ভালো থাকবো (ইরা তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল)
-কিন্তু মা তোমার তো সমস্যা, তুমি তো সুস্থ না। এর মধ্যে যদি ওর জীবন টা পেঁচিয়ে নাও তাহলে..
-বাবা আমি সবদিক থেকে শুভকে
বুঝিয়েছি। সে সব জেনেশুনেই আমার কাছে থাকতে চেয়েছে।
-কিন্তু এটা…
-বাবা আমি রাজি। এই তুমি কিছু বলো না কেনো? (ইরা আমাকে উদ্দেশ্য করে)
-হ্যাঁ আমি আপনার সাথে থাকতেই রাজি
-..(দেখ আমি বলি তুমি আর সে বলে আপনি) [ইরা দাঁড় কিড়মিড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল]
,,
এরপর আরও কিছু কথা হলো। শেষ পর্যন্ত আমি আর ইরা জিতে গেলাম। তারা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।
ইরার বাবা ইরাকে এখানে রেখেই কাল দেশের উদ্দেশ্য রওনা হবে।
,,
উনি কিছুদিন পরে এসে আবার আমাদের সবাইকে দেশে নিয়ে যাবেন। আমি আর ইরা তো খুব খুশি৷
পরদিন ইরার বাবা চলে যাওয়ার পর মা বলল..
-তুই অনেকদিন হলো কলেজ যাচ্ছিস না, আজকে যেতে হবে (মা)
-ইরাকে নিয়ে যাই??(আমি)
-সব জায়গায় বৌমাকে নিয়ে যেতে হবে কেনো? ও অসুস্থ ও বাসায় থাকুক
-বাইরে নিয়ে গেলেও আমি খেয়াল রাখবো
-ইরাকে নিয়ে গিয়ে ক্লাস করবি তো? নাকি ফাঁকিবাজি করবি?
-না না আমি ক্লাস করবো
-ঠিক আছে তাহলে নিয়ে যা
,,
দুজন বাসা থেকে বের হয়েই কলেজের বিপরীতমুখী রাস্তায় নেমে পড়লাম। দুজন একটা নিরিবিলি জায়গা দেখে রাস্তার পাশে বসলাম।
এই রাস্তায় গাড়ি চলাচলের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় ভালোই সময় কাটানো যায়।
-যাক আমাদের একটা ব্যবস্থা হলো তাই না? (ইরা)
-হুমম একটা ব্যবস্থা হলো। আর আপনি তো পুরো আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে দিলেন (আমি)
-সব তো আমি করলাম। আপনি তো পারেন শুধু আমার সাথে জোর খাটাতে বড়দের সামনে তো কিছুই বলতে পারলেন না। আমি যদি না বলতাম এতক্ষণে আমি দেশে থাকতাম
-হুমমম তা ঠিক পুরো ক্রেডিট টাই আপনার
-কোনো ক্রেডিট দিতে হবে না। আপনি আরেকটা মেয়ে খোঁজা শুরু করুন
-কেনো?
-কিছুদিন পর তো আমি শেষ হয়ে যাবো
-ঐ দেখ আবার এলোমেলো কথা শুরু করেছে। ইনশাআল্লাহ কিছু হবে না
-আর আমার ভালে করে সেবা যত্ন করবেন৷ না হলে আপনার কপালে দুঃখ আছে। আপনি গতপরশু রাতে এসব কথা বলেছেন। কোনো কথাই যেন ভুলে যান না আবার
-না আমি ভুলিনি, আর ভোলার প্রশ্নই উঠে না
-আরেকটা কথা
-কি??
-আমাকে অতিথি করে রাখতে হবে
-যেমন??
-অতিথিদের তো অনেক আদর আপ্যায়ন করে। তবে দূর থেকে, আমাকে ঠিক সেভাবেই করবেন। আর আমি তো কিছুদিন পর মারা সেই হিসেবে আপনার জীবনে তো আমি অতিথি তাই না?
,,
আমি ইরার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। তার মুখে বার বার চলে যাওয়া মারা যাওয়া শব্দ গুলো সহ্য হচ্ছিলো না আমার৷
সেই জায়গা থেকে পুরো রাস্তা ইরা আমার রাগ ভাঙাতে ব্যস্ত ছিলো।
সে বার বার বলছিলো এমন কথা সে আর বলবে না, কিন্তু কেন জানি আমি তার কথার কোনো উত্তর করলাম না।
,,
রাত টা কথা না বলেই পার হলো। আমি ইচ্ছে করে তার রুমে যাই নি রাতে। মা সকালে আমাকে ডেকে তুললেন। আমি ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে বললাম..
-কি হয়েছে বলো (আমি)
-রুমে ইরা (মা কথাটা বলে থেমে গেলো)
-কি হয়েছে?
-ইরাকে ডাকলাম কথা বলছে না, অনেক ডেকেছি তবুও কথা বলছে না। মেয়েটার হাত পা অনেক ঠান্ডা
,,
মায়ের কথা শুনে ইরার রুমে গেলাম।
ইরাকে দেখে মনে হলো সে আর নেই।
মা কান্না করতে লাগলে। মায়ের কান্নায় বাবার ঘুম ভাঙে উনি আসলেন ডক্টর কে কল করলেন।
আমি শুধু মনে মনে বলছিলাম এমন কিছু যেন শুনতে না হয়। বার বার দোয়া পড়ছিলাম।
,,
কিছুক্ষণ পর ডক্টর এলেন আর ইরাকে মৃত ঘোষণা করলেন।
আমার এতটুকুই মনে ছিলো সেইদিন আর কি হয়েছিলে আমার জানা নেই।
মায়ের কাছে শুনেছিলাম ইরাকে সেইদিন নাকি দেশে নিয়ে যাওয়া হয় আর সেখানে তার দাফন কাফন সম্পন্ন হয়।
,,
ইরা মারা যাওয়ার ছয়দিন এর মাথায় আমি স্বাভাবিক হই। আমি আমার অতিথিকে ছাড়া আধো পাগল হয়ে সেইদিন যেখানে শেষ তার সাথে কথা বলছিলাম সেখানে বসে থাকি।
প্রতিটা সেকেন্ড তার কথা মনে পরে আর আমার ভেতরটা পুড়তে থাকে। আমি সেদিন কেনো তার কথার উত্তর করলাম না। সে কতো অনুনয়-বিনয় করলো আমি তবুও শুনিনি তার কথা।
হয়তো আমার সাথে অভিমান করে চলে গেছে। আমি এখন কিভাবে বাঁচবো আমার অতিথি কে ছাড়া?
তার কথা ভাবতে ভাবতে হয়তো একদিন দূর পাহাড়ে সেই ঝর্ণার কাছে যাবো। আমি বলেছিলাম সেটা আমার প্রিয় জায়গা। হয়তো অতিথি সেখানে আসে আমার সাথে দেখা করতে।
তাই মনে মনে আমিও ঠিক করি আমিও চলে যাবো অতিথির কাছে একেবারে……

END

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here