অনুভবী_হিয়া,৩৩,৩৪

0
791

#অনুভবী_হিয়া,৩৩,৩৪
#মাইশাতুল_মিহির

৩৩.

মিহিরের এক্সাম শেষ হয়েছে আজ দুই দিন। এতোদিন মিহিরকে ভার্সিটিতে মাহিন দিয়ে আসতো আর এক্সাম শেষে নিয়ে আসতো। এতো দিন যেনো মাহিন একটা আতংকে ছিলো। তার নিজের জন্য না বরং তার কাছের মানুষ গুলোর ক্ষতি হওয়ার ভয়ে। সুহার সাথেও দেখা করে না এখন। শুধু মোবাইলে যোগাযোগ রেখেছে সে। সুহা জানতে চাইলে সে কিছু বলে না। মাহিন চাই না সুহাকে দেখে জিহান সুহার ক্ষতি করার চেষ্টা করুক। এতো চিন্তার মাঝে মিহির আর তার মাকে সেভ রাখার জন্য সেও সিদ্ধান্ত নেয় তাদের কে কুমিল্লা পাঠানোর আর সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। প্রথমে ওদের নিরাপত্তার দরকার। তার পর নাহয় জিহানের ব্যবস্থা করা হবে।
_________________

মিহিরের দুই মামা আজমির আর রাজমির। দুইজন এ কুমিল্লা শহরের বড় পলিটিশিয়ান। আজমিরে এক ছেলে দুই মেয়ে, সবুজ, রিয়া, সিয়া। আর রাজমিরের এক মেয়ে হায়া।

মিহিররা কুমিল্লা এসেছে আজ দুই দিন। আসার পর থেকেই সকলে ব্যস্ত হয়ে পরে তাদের জন্য। এতো দিন পর মিহুকে পেয়ে যেনো রিয়া হিয়া হায়া উন্মাদ হয়ে গেছে। তারা সবাই মিহু বলতে পাগল।

দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া, সিয়া আর হায়া। রিয়া দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে, ‘মিহু আপু? ঘুমিয়ে আছো?’

‘না ভেতরে আয়।’ অনুমতি পেয়ে তিন জন রুমে ঢুকে। বিছানায় বসে আড্ডা জুড়ে দেয় সবাই।

‘জানো আপু? এতো দিন তুমি ছিলে না বাড়িটা আমাদের জন্য একেবারে ফাঁকা ফাঁকা লেগেছিলো।’ হায়া মন খারাপ করে বললো। মিহির হেসে বলে, ‘এতো এতো মানুষ থেকেও বলছিস ফাঁকা ফাঁকা লেগেছে?’

‘আরে ওরা সব কাজের লোক। আর বড়মা ছোট মা রা তো কাজে ব্যস্থ থাকে। সবুজ ভাইয়া শান্ত ভাইয়া মাহিন ভাইয়া তো থাকেই না। তুমি থাকলে অনেক অনেক মজা করতে পারি।’ প্রফুল্লিত হয়ে বলে সিয়া।

মিহির হেসে বলে, ‘ওলে বাবা রে। যা এবার থেকে এখানেই থাকবো। কেমন হবে?’

তিন জন বিস্ফোরিত হয়ে বলে, ‘সত্যি??’ মিহির মাথা নাড়ায়। সবাই খুশী হয়ে মিহিরকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘লাভ ইউ আপুইইইইইইইই!’
______________

থুতনিতে হাত রেখে ভাবছে শুভ। তার পাশে বসা আদিল সামির রাহুল বিস্ফোরিত হয়ে তাকিয়ে আছে। সামির গলা ঝেড়ে বলে, ‘তুই সিউর যে মিহু কুমিল্লা চলে গেছে?’

ছোট করে উত্তর দেয়, ‘হুম। অফিসে যখন রিজাইন দিয়েছিলো তখন বলেছে আমাকে এক্সাম শেষে নাকি কুমিল্লা চলে যাবে।’

রাহুল মাথা চুলকে বলে, ‘তোদের এই প্রেম কাহিনী ইতিহাসের পাতায় লিখা উচিত ছিলো।’

আদিল বললো, ‘কুমিল্লা চলে গেলে তুই মিহুকে কিভাবে কনভেন্স করবি? এমনিতেও এই সাত আট মাসে পারিস নি।’

সামির বলে, ‘ভেবেছিলাম ওদের বাসায় তোর আব্বুকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠাবো। কিন্তু মিহুরা যদি কুমিল্লা থাকে তাহলে সেটা কিভাবে সম্ভব?’

রাহুল বিরক্ত হয়ে বলে, ‘ক্লাস নাইনে পিথাগোরাসের উপপাদ্য এতো কঠিন লাগে নাই, যতো টা কঠিন তোর এই প্রেম কাহিনী লাগতাছে।’
________________

রেস্টুরেন্টে বসে আছে মাহিন শুভ। সামনে রাখা আছে ধোয়া উঠা কফির কাপ। দুজনের মাঝেই নিরবতা বিরাজমান। মাহিন তার কাজের জন্য ঢাকা এসেছিলো গতকাল। আজ কুমিল্লা যাবে কিন্তু তার আগেই শুভ দেখা করতে বলে বিধায় সে আসে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে শুভ, ‘দেখো মাহিন আমি সত্যি অনেক সিরিয়াস। মিহি কে ভালোবাসি, বিয়ে করতে চাই ওকে। ভেবেছিলাম তোমাকে কনভেন্স করে তোমাদের বাসায় আব্বুকে পাঠাবো। কিন্তু তার আগেই তোমরা কুমিল্লা চলে গিয়েছো।’

‘কুমিল্লা যাওয়াটা দরকার ছিলো।’

‘হ্যা সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু এখন কিভাবে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। নিজেকে ছন্নছাড়া লাগছে মাহিন। আমার মিহি কে চাই। আমাকে বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ।’

লম্বা দম ফেলে মাহিন। শুভকে বিশ্বাস করে সে। তার বোনকে যে ভালোবাসে আর খুব ভালো রাখবে সেটাও জানে। জ্বিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলে, ‘আমি মিহুর সাথে কথা বলবো। মিহুর ইচ্ছার বিরোধে তো যাবো না। মিহুর সম্মতির পর নাহয় মায়ের সাথে কথা বলবো।’

‘তুমি যদি চাও আব্বু কুমিল্লা তেও যেতে রাজি।’

অবাক হয়ে বলে মাহিন, ‘আপনার বাবা মা জানে মিহুর সম্পর্কে?’ মৃদু হাসে শুভ। তারপর বলে, ‘আমাদের রিলেশনের প্রথম থেকেই সবাই জানে। সুহা তো মিহি বলতে পাগল।’

হেসে ফেলে মাহিন। হাসি থামিয়ে শান্ত কন্ঠে বলে, ‘সুহাকে একটু সাবধানে রাখবেন।’

কপালে সূক্ষ্ম ভাজ পরে শুভর। বিস্মিত গলায় বলে, ‘আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে মিহি দের কুমিল্লা নিয়ে যাওয়ার পিছে বিশেষ কোনো কারণ আছে। আর এখন সুহার কথা বলছো? কারণ টা পরিষ্কার করে বলো তো মাহিন।’

স্বাভাবিক কন্ঠে বলে মাহিন, ‘ওই দিন ট্রাক আসা টা এক্সিডেন্ট ছিলো না। মিহুকে মা:রার জন্য ট্রাক তার সামনে আসে।’

বিস্ফোরিত হয়ে শুভ। তারপর বললো, ‘মিহির সাথে কার শত্রুতা আছে?’

‘উহুম মিহু নয় আমার সাথে।’ মাহিনের কথায় অবাক হয়ে বলে শুভ, ‘মানে? কে সে? তোমার সাথে শত্রুতামী কেনো?’

‘আপনি হয়তো জানেন না আমি একজন সিক্রেট এজেন্ট।’

আরেক দফা অবাক হয় শুভ। সে ভাবতেও পারেনি মাহিন এমন একটা কাজের সাথে জড়িত। কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাহিন তাকে থামিয়ে বলে, ‘আমাদের কেউ একজন ফলো করছে শুভ।’

অস্থির হয়ে যায় শুভ। কিছু বলার আগেই মাহিন বলে, ‘উত্তেজিত হবেন না শুভ। চুপচাপ বসে থাকেন। আমার সানগ্লাসের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করে দেখেন আপনার পিছনের টেবিলে কালো হুডি পরা একটা লোক।’

মাহিনের কথা অনুসারে তার চোখে থাকা সানগ্লাসে খেয়াল করে দেখে। মাহিন কিছুক্ষণ গভীর ভাবে চিন্তা করে। শুভ কিছু বুঝার আগেই তাদের টেবিলে থাকা ফ্লাওয়ার বেজ হাতে নিয়া তাৎক্ষণাৎ কালো হুডি পরা লোকটার মাথায় ঢিল দেয়। সাথে সাথে লোকটা আর্তনাদ করে উঠে। মাহিন লোকটাকে ধরে নাক বরাবর কয়েকটা ঘুষি দেয়। লোকটা সেখানেই শুয়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। শুভ এইসব দেখে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই মুহূর্তে মাহিনকে সাইলেন্ট কিলারের সাথে তুলনা ছাড়া চলে না।

মাহিন লোকটার কলার চেপে বলে, ‘কে তুই? তোকে কে পাঠিয়েছে সত্যি করে বল?’

‘আমি লুকমান। আমাকে ছেড়ে দিন। আপনার কোনো ক্ষ:তি করবো না।’ ব্যাথ্যা কাতরে বলে।

‘কে পাঠিয়েছে বল? নয়তো ম:র। ম:রতে না চাইলে সত্যি করে বল। ‘ লোকটার নাক বরাবর ঘুষি দিয়ে বলে।

‘বলছি বলছি। আমাকে জিহান স্যার পাঠিয়েছে। আপনার সম্পর্কে সব আপডেট উনাকে জানানোর জন্য।’

মাহিন আরো কয়েকদফা মা:রে তাকে ফলে জ্ঞান হারায়। পুলিশকে ইনফোর্ম করে মাহিন। উপস্থিত থাকা সকলে তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। ম্যানেজার কিছু বলার আগেই মাহিন তার পরিচয় দিয়ে ক্ষতিপূরণ করে। পুলিশ এসে লুকমান কে নিয়ে যায়। মাহিন শুভ বেরিয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে।

চলবে???

#অনুভবী_হিয়া
#মাইশাতুল_মিহির

৩৪.

ঢাকায় লুকমানের ঝামেলা শেষে মাহিন কুমিল্লা ফিরে মাঝ রাতে। পরদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ভাবেই চলছিলো। দুপুরের খাওয়ার পর পারিবারিক ভাবে বৈঠক বসে ড্রয়িংরুমে। সবাই উপস্থিত শুধু বাড়ির মেয়েরা বাদে।

নিরবতা ভেঙ্গে বলে আজমির, ‘রাশেদা তুই তো জানিস মিহুকে আমার ছেলের বউ করতে চেয়েছি অনেক আগে থেকেই। তাছাড়া রাহিমের সাথেও কথা হয়েছিলো আমার। রাহিম বলেছিলো যদি মিহু রাজি থাকে তো তার আপত্তি নেই। আমি জানি মিহু বড়দের সিদ্ধান্তে না করবে না। তুই কি চাস?’

বিস্মিত হয়ে যায় মাহিন। তার বাবা যে এমন কিছু ভেবেছিলো সেটা তার কল্পনার বাহিরে ছিলো।

রাশেদা বললো, ‘দেখেন ভাইজান। মাহিনের আব্বু যদি বলে থাকে তাহলে আমার আপত্তি নেই। সবুজও ছেলে হিসেবে ভালো আমাদেরই আপন মানুষ সে।’

মাহিনকে চোখের ইশারায় কিছু বলতে বলে শান্ত। এই মুহূর্তে কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না মাহিন। মাহিনকে চুপ থাকতে দেখে শান্ত বলে উঠে, ‘কিন্তু আঙ্কেল মিহুর মতামত নেওয়া উচিত আমাদের।’

রাজমির বলে, ‘বড়দের মাঝে কথা বলো না শান্ত। বড়রা যা সিদ্ধান্ত নিবে অবশ্যই ভেবে চিন্তে নিবে। মিহু অনেক লক্ষি মেয়ে আমাদের মতের অসম্মান সে করবে না।’

চুপ হয়ে যায় শান্ত। শুধু মাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে সে।

আজমির বলে, ‘সবুজ দুই দিন পর দেশের বাহিরে যাবে ব্যবসায়ীক কাজের জন্য। তাই আমরা চাই আজ রাতেই তাদের আকদ করাতে। আত্তীয়স্বজনরা উপস্থিত থাকবে। আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।’

রাজমির মাহিনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তোমার কিছু বলার আছে মাহিন?’

নির্বিকার কন্ঠে বলে মাহিন, ‘আমি মিহুর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করতে চাই না।’

আজমির মিহুকে ডেকে পাঠায়। মিহু দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবার কথোপকথন শুনছিলো। ডাক দেওয়ার পর চুপচাপ মাহিনের পাশে এসে দাঁড়ায় সে।

আজমির বললো, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ সবুজের সাথে তোমার আকদ হবে। তোমার কিছু বলার আছে?’

মিহির স্থব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মামা দের সে যথেষ্ট সম্মান করে আর ভয় পায়। এই মুহূর্তে মামা দের না করা মানে তাদের অসম্মান করা। আর মনের মাঝে ভয়, জড়তা তো আছেই। মিহির চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। রাশেদা বেগম বলে, ‘মিহু কি সিদ্ধান্ত নিবে? আমরা বড়রা যা করছি তাদের ভালোর জন্যই করছি। ভাইজান আপনি বিয়ের কাজ শুরু করে দেন।’

আর এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না মিহির। চলে যায় এখান থেকে। মাহিন শান্ত দুজনই নির্বিকার হয়ে আছে। সবুজ জানতো না শুভর কথা তাই হয়তো সেও রাজি বিয়েতে। সবুজ তো মিহুকে সেই ছোট বেলা থেকেই পছন্দ করে।

পারিবারিক বৈঠক শেষ হয়। শুরু হয় বিয়ের আমেজ। সবাই ব্যস্থ হয়ে পরেছে বিয়ের আয়োজন নিয়ে। মিহিরের ছোট মামি তাকে শাড়ি গয়না দিয়ে গেছে। বিছানায় চুপটি মেরে বসে আছে সে। কখনো শুভকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করে নি। আজ অন্য কারোর বউ হচ্ছে সে? কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে তার।

মাহিনও কাজে ব্যস্ত হয়ে আছে। তাকে তার মামা রা এই কাজ ওই কাজের দায়িত্ব দিচ্ছে। সময় পাচ্ছে না মিহিরের সাথে একান্তে কথা বলার। দুনিয়া উল্টে গেলেও সে মিহিরের মনের বিরুদ্ধে কিছু হতে দিবে না।

বিয়ে পরানো হবে রাত সাড়ে দশ টা। এখন ছয় টা বিশ বাজে। মাহিন এতো কাজের মাঝে শান্ত কে বললে শান্ত তাকে সুযোগ করে দেয় মিহিরের সাথে কথা বলতে।

মাহিন সোজা মিহিরের রুমে এসে দেখে মেয়ে রা সবাই মিহিকে ঘিরে আনন্দ করছে। তাই মিহিকে নিয়ে সে ছাদে চলে যায় কথা বলার জন্য।

ছাদের রেলিং ঘেঁষে আকাশে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিহির। তার পাশেই দেয়ালে হেলান দিয়ে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে মাহিন।

‘তুই বিয়ে তে রাজি?’

মিহির চুপচাপ নির্বিকার, কিছু বলছে না। মাহিন দির্ঘশ্বাস ফেলে মিহিরকে তার দিকে ঘুরিয়ে বলে, ‘আজ কিছু লুকাবি না আমার কাছে। সত্যি করে বল তুই কি শুভ কে এখনো ভালোবাসিস? যদি হ্যা হয় তো তোর মতের বিরুদ্ধে কেউ যাবে না। এই বিয়ে ভেঙ্গে দিবো আমি। শুভর সাথে তোকে বিয়ে দিবো।’

ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে মিহির। মাহিনকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ভাইয়া আমি শুভকে অনেক ভালোবাসি। আমি শুভ ছাড়া অন্য কাউকে হাসবেন্ড হিসেবে কল্পনা করতে পারবো না। প্লিজ ভাইয়া আমি বিয়ে করবো না। শুভকে চাই আমার। ভালোবাসি শুভকে।’

মাহিনের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। মিহিরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে, ‘পাগলি মেয়ে কাঁদিস না। ভরসা আছে তো ভাইয়ের উপর?”

মিহির মাথা নেড়ে ‘হ্যা’ সম্মতি দেয়। মাহিন বলে, ‘তাহলে যা মামিরা যেভাবে বলবে সে ভাবেই সাজ। কাঁদবি না একদম।’

মিহির ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার পর মাহিন শুভর নাম্বারে কল দেয়। কিন্তু শুভ ফোন ধরছে না। পরপর কয়েকটা কল দেওয়ার পরেও যখন রিসিভ হচ্ছে না তখন মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো মাহিনের। রাগ সংযত করে রাহুল কে কল দিলো। রাহুল কল রিসিভ করার পর তার সাথে কথা বলে ছাদ থেকে নেমে যায় মাহিন। নিচে যাওয়ার পর শান্ত চোখের ইশারায় কি হয়েছে জানতে চাইলে মাহিন বাঁকা হাসে শুধু। শান্তর আর বুঝতে বাকি নেই টুইস্ট এখনো বাকি।
_______________

ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলো শুভ, সুহা আর আয়াজ। তখনি হতভম্ব হয়ে ছুটে আসে রাহুল। তাকে এভাবে আসতে দেখে অবাক হয় সবাই। রাহুল হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, ‘শা:লা তুই চিল করোস আর ওই দিকে যে মিহুর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে সে খবর কি তোর আছে?’

বিরক্ত হয়ে যায় শুভ। ঝাঁঝালো গলায় বলে, ‘ফালতু কথা বাদ দে।’ দাঁতে দাঁত চেপে কড়া গলায় বলে রাহুল, ‘থাপ্রা:ইয়া তোর দাঁত ফালামু। তোর মোবাইল কই? মাহিন কখন থেকে তোরে কল দিতেছে তুই কল ধরস না বলে আমারে দিছে। আদিল, সামির বাহিরে গাড়িতে অপেক্ষা করছে। যে করেই হোক দশ টার আগে কুমিল্লা যেতে হবে। তাড়াতাড়ি আয়!’

শুভ বিস্মিত হয়ে আছে। কাঁপাকাঁপা গলায় বলে, ‘রাহুল তুই সিরিয়াস?’

ফুঁশ করে নিশ্বাস ফেলে রাহুল। নিজেকে শান্ত রেখে বলে, ‘হ্যাঁ আমি সিরিয়াস। তুই শার্ট, আর মোবাইল নিয়ে আয়।’

তাৎক্ষণাত শুভ দৌড়ে রুম থেকে নীল শার্ট আর মোবাইল ওয়ালেট নিয়ে আসে। রাহুলের সাথে বেরিয়ে যায় কাউকে কিছু না বলে। আয়াজ আর সুহা দুইজনই বিস্মিত হয়ে গেছে। সুহা নিজের রুমে গিয়ে মাহিনকে কল দিলে জানতে পারে সব। চিন্তা হচ্ছে তার ভাই সঠিক সময়ে পৌছাবে তো?
___________________

তুমুল বেগে গাড়ি হাইওয়ে তে চলছে। অন্ধকারের পিনপিন নিরবতা বিরাজমান চারদিকে। গভীর মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে সামির। গাড়ির কাচ নামিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে শুভ। ভীতরে ঝড়ের ন্যায় উত্তালপাতাল চলছে। হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত নয়টা পনেরো। অস্থিরতা বিরাজমান মনে। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। বার বার সামির কে বলছে, ‘আরেকটু স্প্রিড বাড়া। নাহয় আমাকে দে আমি ড্রাইভ করি।’

সামির আড় চোখে তাকিয়ে বলে, ‘চুপচাপ বসে থাক। তোর ড্রাইভ করতে হবে না।’

শুভ ব্যস্ত হয়ে বলে, ‘তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করবি।’
_______________

লাল বেনারসি পরানো হয়েছে মিহিরকে। ভাইয়ের উপর ভরসা করে চুপচাপ আছে সে। পার্লারের মেয়েরা সাজিয়ে দিচ্ছে তাকে। রিয়া সিয়া হায়া আগেই সেজে বসে আছে। এবার বউ সাজার পালা।

ড্রয়িংরুম চারদিকে কাচা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। ফুলের ঘ্রানে চারদিকে মু-মু করছে। সবুজ একটা শেওরানি পরে বসে আছে সোফায়। তাদের পাশেই বসে আছে আজমির রাজমির। শান্ত বাহিরে গিয়েছে কাজি আনতে। অবশ্য কাজি বাড়ির সামনে এসেছে সেখান থেকেই আনতে গিয়েছে। মাহিন সবুজের পাশে নির্বিকার ভাবে বসে আছে। তার অপেক্ষা শুভ আসার। বার বার জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজাচ্ছে সে। সবুজের সাথে আলাদা কথা বলতে চেয়েছিলো কোনো এক কারনে সবুজ তাকে এড়িয়ে গেছে সেটা মাহিম বুঝতে পেরেছে তাই চুপ হয়ে যায়। যা হবার সময় বলে দিবে।

কাজি আসার পর কাজিকে সোফায় বসানো হয়। কাজির সাথে কুষলবিনীময় করে সবাই। সবুজ কাজিকে উদ্দেশ্যে করে বলে, ‘আমি যেভাবে বলেছি সে ভাবেই করেছেন তো?’

কাজি মিয়া পান খেয়ে লাল করা ঠোঁট টেনে হেসে বলে, ‘জ্বি বাজান। যেইভাবে বলেছো সেইভাবেই করেছি।’ সবুজ মাথা ঝাঁকিয়ে হাসে। তখন আজমির বলে, ‘মিহুকে নিয়ে আসো যাও।’

মিহুর মা, মামিরা মিহুর রুমে যায় তাকে আনতে। ওদের রুমে ঢুকতে দেখেই মিহিরের কলিজা ধক করে উঠে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে দশটা বাজে মাত্র। বিয়েতো সাড়ে দশটায় হওয়ার কথা ছিলো এতো আগে কেনো? শুভ কোথায়?

লাল বেনারসির আচল টেনে ঘোমটা দিয়ে সবুজের পাশে বসায় মিহিরকে। মিহির চোখ উঠিয়ে মাহিনের দিকে তাকায়। মাহিন চোখের ইশারায় আশ্বাস দেয়। খানিকটা শান্ত হয় মিহির। তবু অস্থির হয়ে আছে তার মন।

সবুজ মিহিরের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলে, ‘ওয়েট ফর সারপ্রাইজ কিউটি!’ মিহির অবাক হয়ে তাকায় সবুজের দিকে।

রাজমির বললো, ‘তো বিয়ে পরানো শুরু হোক?’ সবুজ হেসে বলে, ‘আরে চাচা এতো তাড়া কিসের? একটু অপেক্ষা করুন।’

রাজমির তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলে, ‘এখানে সবাই উপরিস্থিত তার পরেও অপেক্ষা কিসের জন্য?’

সবুজ বলে, ‘একজন অনুপস্থিত আব্বু। সে আসলে হবে।’ শান্ত মাহিন বিস্মিত হয়ে যায় সবুজের কথায়। শান্ত সাথে সাথে মাহিনের তাকিয়ে দেখে মাহিন তীক্ষ্ণ চোখে সবুজের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহিন বুঝার চেষ্টা করছে সবুজকে সে আসলে চাইছে টা কি?

চলবে..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here