মৃগতৃষ্ণা-১৩

0
1017

#মৃগতৃষ্ণা-১৩
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★গোসলখানায় পানির ঝর্ণার নিচে ক্রন্দনরত অবস্থায় বসে আছে পঙ্খি। নিজেকে আজ তার দূর্গন্ধযুক্ত পঁচা আবর্জনা মনে হচ্ছে।শ,রীর থেকে যেন তীব্র দূর্গন্ধ নির্গত হচ্ছে। হাত পা ডলতে ডলতে চামড়া প্রায় তুলে ফেলেছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। কেন ওর সাথেই বারবার এমন হয়? কি দোষ ওর? মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াটাই কি ওর সবচেয়ে অপরাধ? দুনিয়ায় সব মেয়েকেই কি এমন দূর্বিষহ পীড়া ভোগ করতে হয়? নাকি আমিই শুধু এমন দূর্ভাগা?আজ নিজের বাড়িতে থেকেও এমন হলো ওর সাথে। এত প্রশ্নের কোন জবাব নেই পঙ্খির কাছে। একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনায় তার শরীর মন বিষাক্ত বিষের ন্যায় কলুষিত হয়ে উঠেছে। চেয়েও সেই জঘ,ন্যতম ঘটনা টা ভুলতে পারছেনা। আল্লাহর রহমতে শেষমেষ ও বেঁচে গেছে। নাহলে আজ কি হতে পারতো ভাবতেই ওর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।

মারুফ যখন ওকে পেছন থেকে মুখ চে,পে ধরে,ঠিক তখনই দরজার বাইরে কিছু পড়ে যাওয়ার বিরাট একটা শব্দ হয়। মারুফ ঘাবড়ে যায় তখন।ভয়ে পঙ্খিকে ছেড়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে বেলকনি দিয়ে লাফ দিয়ে চলে যায়। পঙ্খি তখন থেকেই গোসলখানায় এভাবে বসে আছে। একবার ভেবেছিল বাইরে গিয়ে সবাইকে বলবে। কিন্তু আবার ভাবে তাতে কিবা লাভ হবে? ওই জ,ঘন্য লোকটা একটা কথা তো ঠিকই বলেছে। মেয়েদের সাথে যাই হোকনা কেন সমাজ তো সবার আগে মেয়েদেরই দোষারোপ করবে। তাদেরই কল,ঙ্কিত করবে। বদনামের আঙুল গুলো শুধু তাদের দিকেই উঠবে। তাইতো আর কাউকে কিছু বলেনা পঙ্খি। প্রতিবারের মতো নিজের মাঝেই সব কষ্ট সামিয়ে নেয়।

কিছুক্ষণ পর গোসলখানার দরজায় কেউ করা নাড়ল। পঙ্খি হকচকিয়ে উঠে ঝর্ণা বন্ধ করে দিতেই দরজার বাইরে থেকে ছায়ার কন্ঠ স্বর শোনা গেল। হয়তো খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছে ওকে। নিজেকে কোনরকমে সামলে নিয়ে কাপড় পাল্টে বাইরে বেড়িয়ে এলো পঙ্খি। রুমে এসে দেখলো ছায়া খাবার রুমেই নিয়ে এসেছে। খাবার প্লেট টেবিলে রাখতে রাখতে ছায়া বলে উঠলো।
–আজ খাবার ঘরে বাইরের লোক আছে। তাই আমি তোমার খাবার রুমেই নিয়ে আসলাম। তুমি তো আবার বাইরের লোকজনের সামনে যাওনা তাই।

ছায়ার কথায় পঙ্খি মনে মনে তিরস্কার করলো।মেয়েটা তো আর জানে না যে, বাইরে না গিয়েও ও নর’পিচাশের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। তবে ছায়ার কার্যে পঙ্খি বরাবরের মতোই আবারও অবাক হলো। ছায়া যেন আজকাল একটু বেশি বেশিই ওর খেয়াল রাখছে। হঠাৎ করেই কেমন ওর প্রতি বেশি দায়িত্বশীল হয়ে পড়েছে। মনে হয় এটা ও না,অন্য কেউ। ব্যাপার টা ওর ভালো লাগলেও আবার কেমন যেন একটা খটকাও লাগে। যেকোনো জিনিসেরই হঠাৎ পরিবর্তনের পিছে কোন না কোন কারণ অবশ্যই থাকে। তাহলে কি ছায়ার এসব কাজের পেছনেও কোন কারণ আছে? থাক,আমি হয়তো একটু বেশিই ভাবছি। মেয়েটা আমার এতো খেয়াল রাখছে এটাতো আমার জন্য একটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এবাড়িতে এক ছায়া আর রাবেয়া চাচীই তো আছে যে ওকে আপন ভাবে।

রাতের প্রায় শেষ প্রহর তখন। ঘুমে আচ্ছন্ন পঙ্খি। তার পাশেই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে ছায়া। অনেক রাত অব্দি পঙ্খির চোখে ঘুম আসছিল না। মন মস্তিষ্ক অশান্ত থাকলে ঘুম আসবেই বা কি করে। অনেক চেষ্টা করে রাত চারটার দিকে ঘুম নেমেছে পঙ্খির চোখে। বেশি দেরি করে ঘুম আসায় এখন পঙ্খি গভীর ঘুমে। হঠাৎ ঘুমের মাঝেই হালকা আভাস হলো কেউ ওর হাতটা ধরেছে। ওর হাত ধরা অপর হাতটির মৃদু কম্পনও অনুভব হলো। কিছুক্ষণ পর নরম উষ্ণ কোন কিছুর স্পর্শ পেল হাতে। তারপর হঠাৎ হাতের ওপর ঠান্ডা কিছুর অনুভব হলো। যেন হাতের ওপর ঠান্ডা কোন প্রলেপ পড়ছে। পঙ্খি ঘুমের মাঝেও এসবের হালকা আভাস পেলেও চোখ মেলে তাকাতে পারলোনা। মনে হলো ওর চোখের ওপর হাজার মন ওজনের পাথর চেপে আছে। চেয়েও চোখ খুলে তাকাতে পারলোনা। এমনিতেও ছায়া ওর পাশে থাকায় এখন আর আগের মতো ভয় করেনা। ঘুমের মাঝে ছায়া অনেক বার গায়ের ওপর হাত পা তুলে দেয়। যাতে ও অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই আজকের এই আলাদা স্পর্শটাও খুব একটা নড়াল না ওকে। গভীর ঘুমে বিভোর থাকায় কিছু বুঝতে পারলো না সে।
__

আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে তাকালো পঙ্খি।দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো সে। ইশশ আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। হয়তো রাতে দেরিতে ঘুমানোয় এমন হয়েছে। ফজরের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে। পঙ্খি তাড়াহুড়ো করে নামতে নিলেই হঠাৎ ওর হাতের দিকে চোখ গেল। কাল রাতে হাতের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। হাত ডলে ডলে লাল হয়ে ছিলে গিয়েছিল। ভীষণ জ্বালাও করছিল। কিন্তু এখন তেমন কোন জ্বাল যন্ত্রণা নেই। আর লাল ভাবটাও অনেক কমে গিয়েছে। কিন্তু একা একাই এমন সেরে গেল কিভাবে? নামায কাযা হওয়ার ভয়ে আপাতত সব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে পঙ্খি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে গেল।

সালাত আদায় করা শেষে পঙ্খি ঘরের মেঝে ঝাড়ু দিয়ে ময়লা ফেলার জন্য দরজা খুলে বাইরে আসতেই দেখলো দরজার বাইরের ফুলদানি টা নিচে ভেঙে পড়ে আছে। তাহলে কাল বোধহয় এটাই পড়ার শব্দ হয়েছিল তখন। কিন্তু এটা ভাঙলো কিভাবে? এখানে কি কেউ এসেছিল? পঙ্খি হাতের ঝাড়ু দিয়ে ফুলদানির টুকরো গুলো ঝাড়ু দিয়ে বেলচায় তুলতে নিলেই খেয়াল করলো, কিছু টুকরোর সাথে র’ক্তের দাগ লেগে আছে। পঙ্খি ভাবনায় পড়ে গেল। কার র”ক্ত হতে পারে? এখানে কে এসেছিল?
__

বেলা ১১টার দিকে পঙ্খি বসার ঘরে কোন দরকারে আসতেই দেখলো রাবেয়া তার ছেলে ইন্ধনের মাথায় হাত বোলাচ্ছেন আর আহাজারি করছেন। গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে রাবেয়ার কথা কানে এলো পঙ্খির। তিনি ব্যাথিত কন্ঠে বলছেন।
–কি হইছে তোর বাপ? সারারাত কই ছিলি?ফোনও ধরলি না। জানিস তোর চিন্তায় সারারাত ঘুমাতে পারিনি? আর হাত কাটলো কিভাবে? ইশশ কতখানি কেটেছে। তুই এমন ক্যারে গ্যাদা? নিজের একটুও খেয়াল রাখিস না। দুদিন আগেই কি ভয়ংকর জ্বর বাধায় নিলি। ডাক্তার কইলো ১০২ ডিগ্রি জ্বর উঠছিল তোর। আরেকটু হলে তোকে বাঁচানাও কঠিন হয়ে যেত। তুই তো জানিসই তোর বৃষ্টির পানি সয়না তাহলে ভিজেছিলি কেন? আর আজ সেই অসুখ সারতে না সারতেই আবার হাত কেটে নিলি। তুই কি আমাকে একটুও শান্তি দিবি না?

–আজব, এখানে এতো কাঁদার কি হলো মা! কিছুই হয়নি আমার। কান্নাকাটি বন্ধ করোতো।

পঙ্খি একবার আরচোখে তাকিয়ে দেখলো ইন্ধনের হাতে ব্যান্ডেজ করা। সত্যিই হাত কেটেছে। হয়তো আবারও কারোর সাথে মারপিট করতে গিয়েছিল। লোকটাকে জনদরদী ভেবেছিল সে। কিন্তু লোকটা যে এতো ক্রুর আর উগ্র তা কে জানতো? উনার বাবা হয়তো এই কারণেই উনাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিল। আসলেই উনি এখানে থাকার যোগ্যই না। বিদেশেই থাকলে ভালো হতো।

পানি খেয়ে গ্লাস টা রেখে চলে আসতে নিলেই দরজা দিয়ে জুবায়েদ আর কনিকাকে আসতে দেখলো পঙ্খি। কনিকার কাছে এগিয়ে গেল সে। কনিকাকে কেমন নির্জীবি দেখাচ্ছে। চোখ মুখ একেবারে ফ্যাকাসে হয়ে আছে। যেন ওর মাঝে কোন জান নেই। পঙ্খি কনিকার হাত ধরে নরম সুরে বললো।
–ভাবি আপনি ঠিক আছেন? তেমন বড় কিছু হয়নি তো?

কনিকার কোন জবাব নেই। সে একেবারে অনুভূতি শূন্য পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। চোখের দৃষ্টি শূন্য তার। পঙ্খির চিন্তা আরও বেড়ে গেল। সে আবারও চিন্তিত সুরে বললো।
–ভাবি কি হয়েছে? কথা বলছেন না কেন? ডাক্তার কি বললো?

জুবায়েদ এবার পাশ থেকে মিথ্যে হাসির রেখা টেনে বললো।
–আরে তেমন কিছু না। কনিকা একদম ঠিক আছে। আসলে জার্নি করে এসেছে তো।আর ও আবার গাড়িতে বমি করে। তাই হয়তো ক্লান্ত লাগছে। একটু রুমে গিয়ে আরাম করলেই ঠিক হয়ে যাবে।

কথাগুলো বলে জুবায়েদ কনিকার হাত ধরে এক প্রকার টেনেই ওখান থেকে নিয়ে গেল।জুবায়েদের উক্তি পঙ্খির কাছে কেমন গ্রহনযোগ্য মনে হলো না। কনিকার অবস্থা অন্য কিছু বয়ান করছে। কি হয়েছে তার?
__

সন্ধ্যার হালকা আভা ছড়িয়েছে চারদিকে। ছাঁদের কাপর চোপড় গুলো নিতে এসেছে পঙ্খি। ছাঁদে আসতেই ঠান্ডা দমকা বাতাস ছুঁয়ে গেল তাঁকে। রেলিঙের কাছে এসে ভালোভাবে বাতাসের সান্নিধ্যে নিতে চাইলো সে। বর্ষা কালের বাতাস অন্য মৌসুমের চাইতে একটু বেশিই শীতল আর স্নিগ্ধ হয়।মনে হয় বৃষ্টি বুঝি বাতাসকেও ভিজিয়ে দিয়েছে। “ভেজা বাতাস”। নিজের মনে কথাটা আওড়িয়ে, নিজে নিজেই হালকা হাসলো পঙ্খি।হঠাৎ কারোর কথা বলার আওয়াজ কানে এলো। আওয়াজের উৎস খুঁজতে পঙ্খি এদিক ওদিক চোখ বোলালো। তখনই দেখতে পেল ছাঁদের আরেকপাশে ইন্ধন হেঁটে হেঁটে ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। এক হাত তাঁর চুলের মাঝে চালান করে আছে। মুখের হাসি দেখে বোঝা যাচ্ছে উনি নিশ্চয় উনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে।কিছু কথা পঙ্খির কানেও এলো। ইন্ধন বলছে,
–তুমি জানো এইমুহূর্তে আমার সবচেয়ে বেশি তোমার প্রয়োজন। একমাত্র তুমিই আমার অশান্ত মনকে একটু শান্ত করতে পারো। আই ব্যাডলি নিড ইউ।

পঙ্খি ভাবছে উনার মতো এমন উগ্র মেজাজের লোক আবার কাউকে ভালোও বাসতে পারে? যে ক্রুর লোক উনি। গার্লফ্রেন্ড কোনো কথা না শুনলে দেখা গেল তাঁর নাক মুখ ফাটিয়ে দিলো। বেচারি উনার গার্লফ্রেন্ড। তার জন্য বড্ড মায়া হচ্ছে।কোন কুলক্ষণে যে বেচারি উনার কবলে পড়েছিল। আল্লাহ তাকে হায়াত দরাজ করুক।

পঙ্খি ফিরে আসতে নিলেই হঠাৎ তার নজর গেল গেটের বাইরে। আজও সেই বৃদ্ধ মহিলাকে দেখতে পেল সে। মহিলাটি গেটের সামনে এসে কেমন উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। পঙ্খির যথেষ্ট সন্দেহ হলো। ভাবলো চুরি টুরি করতে আসেনি তো? কিন্তু এতদূর থেকে তো আর মহিলাটাকে ধরা যাচ্ছে না। আবার এখান যেতে যেতে হয়তো চলেও যেতে পারে। আজতো মহিলাকে হাতে নাতে ধরতেই হবে। পঙ্খি ভাবলো এইমুহূর্তে একমাত্র ইন্ধনই ওর কাছাকাছি আছে। উনার কাছ থেকে সাহায্য চাবে নাকি? কিন্তু উনি যে বদমেজাজি। আবার উল্টো কথা না শুনিয়ে দেন। তবে এইমুহূর্তে আর কোনো উপায় নেই। মহিলাটাকে ধরতে হলে উনাকে বলতেই হবে। যতযাই হোক বাড়িতে তো আর চোর ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এই ভাবনা মোতাবেক পঙ্খি ইন্ধনের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আস্তে করে ডাক দিলো।
–ভাইয়া শুনোন,

পঙ্খির ডাক ইন্ধনের কর্ণ গুহায় পৌঁছাল কিনা তা বোঝা গেল না।তবে সামনে থেকে ইন্ধনের কোনো প্রতিক্রিয়া এলোনা। উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকায় তার মুখশ্রীও দেখা যাচ্ছে না। অগত্যা পঙ্খি আবারও ডাকলো। আগের থেকে স্বর একটু উঁচু করে বললো।
–ভাইয়া শুনছেন! ভাইয়া!

নাহ, এবারও কোন সাড়া এলোনা। পঙ্খি এবার গলা উঁচিয়ে উচ্চস্বরে ডেকে উঠলো।
—ভাইয়ায়ায়া………

পঙ্খির এই ডাকের সুর মাঝপথেই থেমে গেল।যখন ডাকের সাথে সাথে ইন্ধন র,ক্তচক্ষু করে পঙ্খির দিকে ঘুরে বজ্রপাতের ন্যায় হুংকার দিয়ে উঠলো। হাতের ফোন টা এক আছাড়ে ফেলে দিলো নিচে। বেচারা ফোনটা তিন চার খন্ডে বিভক্ত হয়ে গেল। ফোনটা আছাড় মেরেই পঙ্খির দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্ষিপ্ত সুরে বলে উঠলো।
–জাস্ট শাট আপ।জাস্ট শাট আপ ইউ ইডিয়ট। ডোন্ট ইউ ডেয়ার। ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু কল মি ভা…………

এতটুকু বলে থেমে গেল ইন্ধন।মাথা একটু এদিক ওদিক ঘুরিয়ে নিয়ে আবার বললো।
–জাস্ট গেট লস্ট ফ্রম মাই আইস।

কথাটা বলে ইন্ধন নিজেই ওখান থেকে চলে গেল। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেল পঙ্খি। সে কি এমন করলো সেটাই বুঝতে পারলোনা। আর এভাবে বলার মানে টা কি? এবার যেন ব্যাপার টা পঙ্খির আত্মসম্মানে আঘাত করলো। নাহ,অনেক হয়েছে। লোকটা আজ বেশি করে ফেলেছে। এভাবে বিনা অপরাধে সে বারবার আমাকে অপমান করতে পারে না। ভদ্রতার খাতিরে কিছু বলিনা। তাই বলে উনি যা খুশি তাই বলে যাবেন আমাকে? আজতো উনাকে জবাবদিহি করতেই হবে। পঙ্খি একবার নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো সেই মহিলাটাও আর নেই। পঙ্খির রাগ যেন আরও বেড়ে গেল। আজ ওই লোকটার জন্য ওই মহিলাটা আবারও পালিয়ে গেল। এখন তো উনাকে কিছু বলতেই হবে।

মনে ক্রোধের পাহাড় জমিয়ে ছাঁদ থেকে নেমে এসে সোজা ইন্ধনের রুমের সামনে এলো। দরজা খোলা পাওয়ায় সোজা রুমের ভেতর ঢুকে পড়লো। ইন্ধন কপালে হাত রেখে শুয়ে ছিলো। পঙ্খি বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো।
–শুনুন, উঠে দাঁড়ান। কথা আছে আপনার সাথে।

ইন্ধন হাত সরিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো পঙ্খির দিকে। তারপর দায়সারা ভাবে বলে উঠলো।
–আমার কোন কথা শোনার মুড নেই। জাস্ট গেট আউট ফ্রম হেয়ার।

–শুনতে হবে আপনাকে? সমস্যা টা কি আপনার হ্যাঁ? আমি আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি শুনি? কেন অকারণে বারবার আমাকে অপমান করেন আপনি? আজতো আপনাকে জবাব দিতেই হবে।

ইন্ধন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো পঙ্খির পানে।তাকিয়ে থেকেই এক লাফে উঠে দাঁড়াল সে। পঙ্খি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পিছিয়ে গেল। ইন্ধন পঙ্খির মুখের দিকে মাথাটা হালকা ঝুকিয়ে বলে উঠলো।
–গো…….টু………হেল।

পঙ্খির জমানো ক্রোধটা যেন আরও দ্বিগুণ হয়ে গেল। সে কন্ঠে দৃঢ়তা এনে বললো।
–দেখুন বেশি ইংরেজি ঝাড়ার দরকার নেই। আমারও শখ নেই এখানে থাকার। আমার জবাব দিয়ে দিন আমি চলে যাবো।

ইন্ধন ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্যের হাসি এনে বললো।
–আমি সর্বনাশীদের কোনো জবাব দেই না।

–কী সর্বনাশী সর্বনাশী লাগিয়ে রেখেছেন? কি সর্বনাশ করেছি আপনার আমি? আপনার কলিজায় চাকু ঢুকিয়েছি? নাকি আপনার মাথায় রড দিয়ে বারি মেরেছি? বলুন করেছিটা কি?

ইন্ধন চোয়াল শক্ত করে বললো।
–আমি তোমাকে কোনো কিছু বলতে বাধ্য নই। তুমি যাও এখান থেকে। এক মিনিট! এমন তো না যে,দাদী যা বলেছিল তাই ঠিক। তুমি কি ইচ্ছে করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছ?

স্তব্ধ হয়ে গেল পঙ্খি। ইন্ধনের উক্তি শুনে মনের ক্ষোভ যেন এবার ঘৃণায় পরিণত হলো। একই মানুষের এমন দুটো রুপ কিভাবে হতে পারে? এই লোকটাই কি ওকে এত বড়ো বড়ো ভাষণ দিয়েছিল? ঘৃণিত মনে পঙ্খি শুধু একটাই বাক্য বের করলো।
–ছিহ্….।
তারপর আর এক মুহুর্তও না দাঁড়িয়ে ওখান বড়ো বড়ো পা ফেলে চলে গেল সে।একবার পেছনে ফিরে তাকালে হয়তো দেখতে পেত ইন্ধনের ঠোঁটের কোনের বাঁকা হাসি।

রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমে এসে বিছানায় বসতে বসতেই, ছায়া কোথাথেকে পড়িমরি করে ওর রুমে এলো। পঙ্খির কাছে ধুপ করে বসে বিস্ময় ভরা কন্ঠে বললো।
–ভাবি জানো কি হয়েছে?

–কি হয়েছে?

–আরে ওইযে দলনেতা মারুফ আছে না? যে কাল আমাদের এখানে দাওয়াতে এসেছিল? কাল রাতে কে বা কারা যেন বড্ড নির্মম ভাবে তাঁর দুই হাত কেটে ফেলেছে।

বিস্মিত হয়ে গেল পঙ্খি।এটাতো সেই লোকই যে, কাল ওর সাথে…। কোন মানুষের বিপদে খুশি হওয়া টা ঠিক না।তবে এই খবর শুনে পঙ্খির খুব খুশি লাগছে। কলিজা যেন ঠান্ডা হয়ে গেল। এমন নি,কৃষ্ট লোকের সাথে এমনই হওয়া উচিত। কিন্তু কে কাটলো তার হাত? যেই কাটুক তাকে হাজার হাজার ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে। পঙ্খির ভাবনার মাঝেই ছায়া বলে উঠলো।
–বেচারা, এখন সে খাবার খাবে কিভাবে? খাবার নাহয় তাও কেউ খাইয়ে দিলো। কিন্তু ভাবনার বিষয় হলো সে প্রকৃতির কাজ শেষে পরিস্কার করবে কিভাবে?

কথাটা বলে নিজেই হেসে দিলো ছায়া। পঙ্খিও হেসে দিলো। তবে একটা জিনিস তাঁর কেমন খটকা লাগছে।কাল ওর সাথে ওসব হলো। আর কাল রাতেই কেউ ওর হাত কেটে ফেললো। এটা কি শুধুই কাকতালীয়? নাকি এর পেছনে অন্য কোন রহস্য আছে?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here