#জীবনতরী
#পর্ব৭
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা
“হ্যালো আম্মাজান। ভাল আছো? পড়াশুনা কেমন হচ্ছে?”
“হ্যা আব্বা ভাল। তোমরা ভালো আছো?“
“আমরা ভাল আছি মা। কোনও সমস্যা হচ্ছে না তো? তোমার মা খুব চিন্তা করে। নাও মায়ের সাথে কথা বলো।“
“আব্বা আমাকে দাও, আপুর সাথে কতদিন কথা বলিনা।“
ফোনটা সাদিয়ার মা নেওয়ার আগেই ছো মেরে নিয়ে নিল সামিয়া।
“এই আপু, কি কর তুমি?”
“পড়তেছি রে। তুই কি করিস?”
“আমি তো টো টো কোম্পানির ম্যানেজারি করি। কাল আমার পরীক্ষা শেষ হইছে না? এই আপু তুমি চলে আসো। তালপুকুরের তেতুল গাছটার তেতুল টসটসে হইছে। এত্ত মজা!!”
“ওরে আমার বোনু টা রে। আমি তো এখন যেতে পারব না। পরীক্ষা চলে আসছে। আমার জন্য রেখে দিস।“
“আচ্ছা আপু। এই নাও মা কথা বলবে।“
সাদিয়ার মা ফোনটা কানে নিয়ে চুপ করে রইলেন। টুপ করে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে।
“হ্যালো মা? কেমন আছো?”
“ভাল আছি রে মা। তুই কেমন আছিস?“
“আম্মা তুমি কানতেছো?”
“কই না তো?”
“মিছা কথা বলবা না। আমি স্পষ্ট দেখতে পারতেছি।“
“পাকা বুড়ি! আমার পেট থেকে তুই হইছিস? নাকি তোর পেট থেকে আমি হইছি?”
“আমার পেট থেকে তুমি হইছো। আমি তোমার মা না?”
“হইছে হইছে। তাইলে আর আমাকে রেখে চলে যেতে পারতিস না।“
“মা এভাবে বইলো না। তাহলে কিন্তু আমি ব্যাগ বস্তা বাইন্ধা চলে আসব।“
“বাপের স্বপ্নপূরণ করবে কে তাইলে?”
“জানিনা।“
এক মুহুর্তের জন্য নিরবতা নেমে এলো ফোনের দুই পাশেই।
“ভাল করে পড়াশুনা কর মা। অনেক বড় হ!“
“দোয়া করো মা।“
“মায়ের দোয়া কি চাইতে হয় পাগল? মা সবসময় তোদের জন্য দুয়া করে। পরীক্ষা কবে?”
“সামনের মাসে।“
“আচ্ছা পড় তাহলে।“
“রাখি মা।“
ফোনটা কেটে থ মেরে বসে থাকল সাদিয়া। মুহুর্তের জন্য ভুলেই গেছিলো যে ও ঢাকায়। মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিল মায়ের কোলে মাথা রেখে গল্প করছে। কবে যে যাওয়া হবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বইয়ের পাতায় মুখ গুজলো সাদিয়া।
আজকে কোচিং নাই। ঘন্টাখানের পড়াশুনা করে গোসলের জন্য সিরিয়াল দিয়ে আসলো। এখন না গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে তাই। এসে দেখল নাফিসা এখনো পড়ছে, সেই সকালে নাস্তা করে বসেছে, উঠার নাম গন্ধ নেই।
“হ্যা রে, তোর কি আজকাল বাথরুম ও পায়না?”
“আর বলিস না দোস্ত, কত পড়া। কেন যে এত সময় নষ্ট করছি এতদিন।“
“আসলেই অনেক পড়া রে। আমিও কুল কিনারা পাচ্ছি না।“
“তোর ভাল কোথাও হয়ে যাবে। টিউটোরিয়ালে তো ফাটায়ে দিস বেশিরভাগ দিনই। চিন্তা তো আমার।“
“দোস্ত টিউটোরিয়াল আর আসল ভর্তি পরীক্ষা কি এক জিনিস?”
“তারপরেও…”
“এক কাজ কর। সাবজেক্ট অনুযায়ী দিন ভাগ করে নে। বেশিদিন তো নাই। সময় নষ্ট মনে হলে কোচিং বন্ধ দে কয়েকদিন।“
“আমিও তাই ভাবতেছি।“
“আচ্ছা ওকে। পড় তুই। কিছু লাগলে বলিস। তোর বালতি রেখে আসব?”
“তুই এত ভাল ক্যান? লাভিউ দোস্ত।“
হাসতে হাসতে নাফিসার বালতি হাতে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল সাদিয়া। ওর নিজের অবস্থাও নাফিসার মতই ছিল শুরুতে। তমাল ভাইয়া সে সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে কি হত ভাবে ও। প্রত্যেকটা সবজেক্ট ধরে ধরে পড়িয়েছে। প্রচুর বকা ও দিয়েছে। তবে সেটাতে ভালই হয়েছে। এখন মোটামুটি কনফিডেন্স পাচ্ছে যে কোনও না কোনও মেডিকেলে চান্স পাবে হয়ত। আসলে কি হবে সেটা তো ভাগ্যের ব্যাপার। চেষ্টা করেছে সর্বোচ্চ এইটাই বড় বিষয়।
চলবে..