#আমার_ভুল,৯,১০
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ৯
ইদানীং ইউনিভার্সিটিতে যেতেও মন চায় না। কেমন যেন অসহ্য লাগে। হতাশা কাজ করে।
বন্ধুবান্ধবদের সাথেও দেখা করতে ভালো লাগে না।
সেদিন ইউনিভার্সিটির এক বান্ধবীর সাথে দেখা হয়েছিলো। দুতিন মিনিট আলাপচারিতার পর জিজ্ঞেস করলো আমার হাজবেন্ড কি করে। বললাম কলেজে পড়ান। তারপর সে জানতে চাইলো সরকারি চাকরি কিনা। বেসরকারি বলতেই ঠোঁট উল্টালো। অদ্ভুত রকম একটা মুখোভঙ্গি করলো। ওর বর মেজিস্ট্রেট। স্বামী স্ত্রী আলাদা বাসা নিয়ে থাকে। নিজস্ব ফ্ল্যাট। গাড়িও আছে। শ্বশুর শাশুড়ি গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
কথাবার্তায় স্পষ্টত দাম্ভিকতা প্রদর্শন করলো।
আমি বাসায় এসে ওর নাম্বার ব্লকলিস্টে ফেলে দিলাম। এমন অহংকারী, দাম্ভিক প্রকৃতির বান্ধবীর আমার প্রয়োজন নেই।
ডিপার্টমেন্টে নতুন শিক্ষক যোগ দিয়েছেন। অভিজাত চেহারার হাসিখুশি ভদ্রলোক। এসেই সবার সঙ্গে দারুণভাবে মিশে গেলেন। আমাকে দেখে স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করলেন বিয়ে হয়েছে কি না। আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালাম।
উনি জানতে চাইলেন হাজবেন্ড কি করে। বললাম বেসরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন।
‘প্রেমে বিয়ে?’ উনি মুখটিপে হেসে এমনভাবে প্রশ্নটা করলেন যেন ইউনিভার্সিটি শিক্ষিকা হয়ে বেসরকারি কলেজের একজন শিক্ষককে বিয়ে করা খুবই অসম্ভব ব্যাপার। পূর্বে এমন কাজ কেউ করে নি। কিংবা বাংলাদেশে এই আমিই প্রথম!
আমি ব্রিবত হলাম। কিন্তু মুখে প্রকাশ করলাম না। অনেকসময় ভেতরে ভেতরে অনেককিছু বলতে ইচ্ছে করলেও আমি বলতে পারি না। তাই নিজের ভেতরের উষ্মাটুকু চেপে রেখে হাসিমুখে বললাম,’জি না স্যার।’
এবার উনি আমার বিয়ের ইতিহাস জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠলেন। ভাব দেখে মনে হলো রসাত্মক কোনো কাহিনী শোনার অপেক্ষায় আছেন। কিংবা আমার চারিত্রিক কোনো দোষের বর্ণনা। যার ফলে বাবা বাধ্য হয়ে একজন বেসরকারি কলেজের শিক্ষকের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছেন।
আমি শরীর খারাপের বাহানা দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম।
কিন্তু এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকলো।কলেজের বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে গেলাম সেখানেও আমার স্বামীর পদমর্যাদা মূখ্য হয়ে উঠলো সবার কাছে।
পেশায় আমি একজন শিক্ষিকা। বান্ধবীদের মধ্যে সবচাইতে বেশি মেধাবী। কিন্তু আমার নিজের আইডেন্টিটির কোন দাম নেই। ওদের সবার স্বামীদের মতন আমার স্বামী বড় সরকারী কর্মকর্তা নয় বলে আমার কথায় যথাযথ মর্যাদা নেই। সবার কেমন যেন গাছাড়া ভাব আমার প্রতি।
যদি কোনো অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত মানুষজন এমন কাজ করতো তাহলে আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম এই বলে যে, ওদের জ্ঞানের পরিধি ক্ষুদ্র, সুশিক্ষিত হতে পারে নি। ওদের ক্ষমা করাই মহৎ কাজ।
কিন্তু আফসোস! এই নিচু মনমানসিকতা প্রদর্শনে আমার পরিচিত অনেক শিক্ষিত এবং উচুস্তরের লোকজনও জড়িত ছিলো।যাদের কাছে একটা মানুষের মেধা, মনন, চারিত্রিক গুণের চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তাঁর টাকাপয়সা, বাড়ি,গাড়ি এবং পদমর্যাদা। অর্থ দেখে ওরা মানুষকে সম্মান প্রদর্শন করে।
আত্মীস্বজনদের কোন প্রোগ্রামে গেলেও একই অবস্থা। দেশের নামকরা এক ইউনিভার্সিটির টিচার, রাষ্ট্রপতি পদক প্রাপ্ত ছাত্রী হিসেবে আমার আরো অনেক ভালো জায়গায় বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।
কিন্তু আমার বিয়ে হলো কিনা ছাপোষা একজন লেকচারারের সঙ্গে। তাও আবার বেসরকারি কলেজের! এই চাকরির কোন নিশ্চয়তা আছে!
সুতরাং আমার যে চরিত্রে খুঁত ছিলো এটা নিখুঁত ভাবে ধরে নেওয়া যায়। নিশ্চয়ই আব্বা কোনো প্যাঁচে পড়ে এমন কাজ করেছেন।
আমি দোষটা ঠিক কাকে দেবো বুঝতে পারছিলাম না। আব্বাকে? প্রিন্সকে? নিজেকে? নাকি আমার ভাগ্যকে?
দিনে দিনে আমি অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিলাম। হতাশা বোধ করতে শুরু করলাম! চারদিকে এত হীনমন্যতা! কেন?
একথা সত্যি যে, ইউনিভার্সিটিতে সবার নিজস্ব বাড়ি নেই। গাড়িও নেই। কিন্তু তাদের আমার মত যোগ্যতাও নেই। যাদের যোগ্যতা আছে তারা আমার চাইতে অনেক অনেক ভালো পজিশনে বিলং করছে।
গতকাল আমার এক জুনিয়রের সঙ্গে দেখা হয়েছিলো। ও অন্য ডিপার্টমেন্টের। আমার পরে চাকরিতে জয়েন করেছে। কাল শুনলাম ওর বরের সঙ্গে কানাডা যাচ্ছে পিএইচডি করার জন্য।
ধীরে ধীরে আক্ষেপ শুরু হলো আমার। একটা সময় সেটা বাড়তে বাড়তে আগ্রাসী হয়ে উঠলাম। কোন কারণ ছাড়াই প্রিন্সকে সহ্য করতে পারছিলাম না। অথচ সংসারে আমাদের কোনো কিছুরই অভাব ছিলো না। বিলাসবহুল গাড়িবাড়ি না থাকলেও শান্তি,ভালোবাসা, স্বচ্ছলতা ছিলো।
কিন্তু আমার হতাশা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং আবেগের কারণে নতুন করে যেই অভাব দেখা দিলো সেটা হলো উনার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধের অভাব! এই অভাব আমাকে একের পর এক ভুল করার জন্য উস্কে দিলো!
আমি চিরকালই মুখচোরা স্বভাবের। ইটের জবাব পাটকেলে দিতে জানি না। আর জানি না বলেই আমার ভেতরে এত রাগ। এত জেদ। যাকে আমার আঘাত করার কথা নয় আমি তাঁকেই বারবার আঘাত করে বসলাম।
অথচ যারা আমাকে প্রতিনিয়ত মানসিক ভাবে দূষিত করে দিচ্ছিলো তাদের প্রতি আমি কখনো কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করতে পারি নি।
#আমার_ভুল
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ১০
আত্মীয়স্বজনরা প্রথম প্রথম আমার আর প্রিন্সের বিয়ে নিয়ে নানারকম কথাবার্তা বললেও এখন আর বলেন না। ধীরে ধীরে সব পুরাতন হয়ে গেছে। কিন্তু আমি ভুলতে পারলাম না। দিনদিন আমার হতাশার মাত্রা বাড়তে শুরু করলো।
যখন দেখি বান্ধবীরা বরের সঙ্গে বিদেশে ঘুরতে গিয়ে একেরপর এক ছবি আপলোড দিচ্ছে, নিজের জুনিয়র মেয়েটা আমার পরে ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করে পিএইচডি করতে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে, আমার স্বল্প শিক্ষিত কাজিনগুলো বড়বড় চাকরি করা বরের বাড়ি গাড়ি নিয়ে বাহাদুরি করছে তখন আর নিজেকে সামলাতে পারি না। বুক ফেটে কান্না আসে। ব্যর্থ মনে হয় সারাজীবনের পরিশ্রম! পড়ালেখা!
ওরা দেশের বাইরে বর নিয়ে ঘুরছে, বরের দামী বাড়িগাড়ি নিয়ে বাহাদুরি ঝাড়ছে অথচ আমি নিজের ক্যারিয়ারের জন্য পিএইচডি করার সুযোগটুকু পর্যন্ত পাচ্ছি না। এই এক অযুহাত দিয়ে আমি উনার সঙ্গে অনেক অন্যায় ব্যবহার করেছি।
একথা সত্য যে, যোগ্যতা থাকার পরেও নিজেকে মেলে ধরতে না পারলে কষ্ট হয়। খুব কষ্ট। সেই কষ্ট একমাত্র ভুক্তভোগী বুঝতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে না পড়লে কেউ বুঝবে না!
কিন্তু তাই বলে নিজের শিক্ষা, জ্ঞান এসবকে তো আর আমরা অহংকারের বস্তু বানিয়ে ফেলতে পারি না! শিক্ষার ব্যবহার হবে বিনয়ের মাধ্যম হিসেবে! শিক্ষা কাউকে আঘাত করার জন্য নয়, ছোট প্রমাণিত করার জন্য। শিক্ষার সঙ্গে বিনয় এবং ধৈর্যর মেলবন্ধন থাকতে হবে। নইলে সেই শিক্ষা বৃথা।
তাই আমি নিজেকে কোনো দিন প্রকৃত শিক্ষিত বলে দাবী করতে পারি না।
★
গতকাল আমেরিকার স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে একজন প্রফেসর এসেছেন বাংলাদেশে। নিউক্লিয়ার ফিজিক্স বিষয়ক আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানী সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য দুদিনের সফরে ঢাকা এসেছেন। বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হয়েছে।
আমি ইন্টারনেট উনার আর্টিকেল গুলো পড়ি। ভদ্রলোকের গবেষণা বিষয়ক লিখাগুলো ভীষণ ইনফরমেটিভ। ইনোভেটিভ। অনেক কিছু জানা যায়।
উনার সঙ্গে দেখা করতে হলে ইনভাইটেশন কার্ড লাগবে।
চেয়ারম্যান স্যার উনার প্রতি আমার আগ্রহের বিষয়টা জানেন। তাই নিজের ইনভাইটেশন কার্ডটা আমাকে দিয়েছেন দেখা করার জন্য।
কনফারেন্স শেষ করে আজকে সন্ধ্যার ফ্লাইটে উনি দেশে ফিরে যাবেন। বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে ছয়টা, এই সময়টা ফ্রি থাকবেন। এই সময়ে হোটেলে উনার সঙ্গে দেশের অন্যান্য ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, শিক্ষিকাদের নিয়ে এক বৈজ্ঞানিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান স্যারও সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু উনি নিজে না গিয়ে কার্ডটা আমাকে দিয়ে দিয়েছেন।
প্রিন্স কলেজ থেকে ফেরে নি। জরুরী মিটিং আছে। ফিরতে দেরী হবে। আমার চাচা শ্বশুর অসুস্থ। তাই আমার শ্বশুর শাশুড়ি গ্রামে গিয়েছেন উনাকে দেখতে। ফিরতে আটটা নয়টা বাজবে। আমি একাই বেরোলাম প্রফেসরের সঙ্গে দেখার করার জন্য।
নিউক্লিয়ার ফিজিক্স নিয়ে আমি নিজেও বেশ কয়েকটা আর্টিকেল লিখেছি। কিন্তু কোথাও প্রকাশ করতে পারি নি। বয়স কম হওয়ায় সব প্রকাশকরা রিকোমেন্ডেশন চায়। ওদের ধারণা তরুণরা ভালো লিখতে পারে না। তারওপর আমার বড় কোনো ডিগ্রীও নেই।
তাই ভেবেছিলাম লিখাগুলো প্রফেসরকে দেখিয়ে উনার মতামত জানতে চাইবো। সেই সাথে দুই একটা রিকমেন্ডেশন পেলে আদায় করতে পারলে লিখাগুলো ছাপাতে পারবো।
রেডি হয়ে সবে গেট থেকে বেরোবো এমন সময় প্রান্ত আর প্রাপ্তি হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো। ওদের সঙ্গে প্রাপ্তির বর আর প্রান্তর বন্ধুবান্ধবও আছে। প্রাপ্তি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আমাকে আবার বাসায় ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে গেলো।
ওদের হাতে কেক। আজকে আমাদের এনিভার্সারি। আমার মনে ছিলো। ভেবেছিলাম ফেরার পথে কেক নিয়ে আসবো। কিন্তু ওরা আগেই সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে।
ওদের কাছে কিছুটা সময় চাইলাম প্রফেসরের সঙ্গে দেখা করার জন্য। প্রফেসরের কথাটা অবশ্য সরাসরি বললাম না। বলা যায় না, কে কি ভেবে বসে! শুধু বললাম জরুরি কাজ আছে।
কিন্তু ওরা আমাকে কিছুতেই বাসা থেকে বেরোতে দিলো না। আমি যতই ওদের বোঝাতে চেষ্টা করলাম বাইরে যাওয়াটা আমার জন্য জরুরি ওরা ততই হাসি মশকরা করে আমার কথা উড়িয়ে দিলো।
প্রাপ্তির সন্ধ্যায় ফ্লাইট। বরের সাথে দেশের বাইরে চলে যাবে ছয়মাসের জন্য। তাই কিছুতেই আমাকে ছাড়তে রাজি হলো না।
প্রিন্সকে জরুরী তলব করে বাসায় আসার জন্য মেসেজ পাঠালো। হাতে ইনভাইটেশন কার্ড থাকা সত্ত্বেও আমার প্রফেসরের সাথে দেখা করা হলো না। রাগে মন চাইছিলো কেক টেক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দরজা আটকে বসে থাকি। কিন্তু বাসায় মেহমান! নিজের রাগ দমন করে নিলাম।
সাড়ে ছয়টার দিকে প্রিন্স বাসায় এলেন। কেক কাটা শেষ হলে আমি শরীর খারাপের অযুহাত দিয়ে রুমে চলে এলাম। কিচ্ছু ভালো লাগছিলো না। এতবড় একটা সুযোগ পেয়েও কোন কাজে লাগাতে পারি নি। সংসার জীবনটা ধীরে ধীরে আমার কাছে শিকলের মত মনে হতে লাগলো। মনে হচ্ছিলো এর থেকে পালাতে পারলেই বুঝি মুক্তি!
উনি রুমে এসে আমার মুড অফ দেখে বারবার জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে। আমি জবাব দিলাম না। ইনভাইটেশন কার্ডটা উনার সামনেই ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেললাম। তারপর গটগট পা ফেলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলাম। উনি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।
রান্নাঘর থেকে ফিরে এসে দেখলাম উনি শুয়ে পড়েছেন। টেবিলের ওপর ছোট একটা গিফট বক্স রাখা। খারাপ লাগলো। আজকের দিনে উনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করলেও পারতাম। কাছে গিয়ে আস্তে করে ডাক দিলাম,’ঘুমিয়ে পড়েছেন?’
উনি কপালের ওপর হাত রেখে শুয়ে ছিলেন। হাত সরিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,’কি?’
মুখ ভার। আমি মনে মনে অনুতপ্ত হলেও মুখে সামান্য হাসি বজায় রেখে বললাম,’মা খেতে ডাকছে।’
উনি উঠে গিয়ে খাবার টেবিলে বসলেন। আমিও পিছুপিছু গেলাম। নিচুস্বরে ফিসফিস করে বললাম,’সরি!’
উনি শুনলেন। কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।
হঠাৎ করেই আত্মঅহংকার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো! পরিস্থিতির সঙ্গে আমিও তো মানিয়ে চলার চেষ্টা করছি, চারদিকে এত সমালোচনার পরেও উনার মুখের দিকে তাকিয়ে পড়ে আছি, নিজের ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করেছি, তারপরেও উনি কেন আমার সঙ্গে ভাব দেখাবেন?
কটা মেয়ে এমন ধৈর্য ধরতে পারে?
কটা মেয়ে এমনভাবে নিজের ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইস করতে পারে? তাহলে কিসের এত অহংকার উনার! আমিই বা কম কিসে!
জানি না সেদিন কোথায় গেলো আমার লজ্জা! কোথায় গেলো আমার সেই হাতিয়ার! আত্মঅহংকারে অন্ধ হয়ে আমি শুধু উনাকে আঘাত করে গেলাম।
উনি আমার মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। একটা কথাও বললেন না। নিজের সমস্ত রাগ, জেদ, হতাশা মিটিয়ে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলাম তখন উনার বুলি ফুটলো। বিষন্ন, ছলছল চোখে চেয়ে থেকে বললেন,
-‘তুমি কি চাও কিরণ?’
আমার মনে হয়েছিলো সব কিছুর জন্য উনিই দায়ী। উনার জন্যেই আমার জীবনটা এমন নিঃস্পৃহ, নিরানন্দ হয়ে গেছে। উনাকে আঘাত করতে পারলেই আমার হতাশা কাটবে। তাই সেদিন আর কোন দেয়াল রাখলাম না।
কণ্ঠস্বর অত্যাধিক দৃঢ় করে বললাম,
-‘মুক্তি। আপনার কাছ থেকে মুক্তি চাই। আপনার এই দমবন্ধ করা সংসার জীবন থেকে মুক্তি চাই। এই শিকল থেকে মুক্তি চাই। সমস্ত প্রকার হীনমন্যতা বোধ থেকে মুক্তি চাই। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী ভালো থাকতে চাই। আপনার সঙ্গে আমি ভালো থাকতে পারছি না।’