একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৬

0
6976

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৬
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
তানভীর পেট চেপে ধরে উপরে তুলে ফেলে নিজের বুকের সাথে লাবিবার পিঠ মিশিয়ে নেয়। লাবিবা ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর পা আস্তে আস্তে মাটি থেকে উপরে উঠে যাচ্ছে । পেটে চাপ দেওয়াতেও ব্যথা পাচ্ছে । ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার তানভীরের দিকে তাকিয়েই ভয়ে চোখ বন্ধ করে হাত পা ছুড়াছুড়ি করতে থাকে । যার কারনে তানভীরের ধরে রাখতে সমস্যা হচ্ছিলো তাই আরো চেপে ধরে । ব্যথা পেয়ে লাবিবা চিল্লাতে থাকে
” ও আমার আল্লাহ গো ডলফিন আমাকে খেয়ে নিলো গো ।আমি আর এই দুনিয়ায় থাকবো না গো । ডলফিনের পেটে নাড়িভুড়ির সাথে mixed হতে হবে গো । ও আম্মুনি গো ..তোমার বাচ্চাটাকে আর দেখতে পাবে না গো ..তোমার বাচ্চাটা ডলফিনের পেটে গিয়ে সাতার কাটবে গো । তোমার বাচ্চাটা আর নাদুস নুদুস থাকবেনা গো ..সব এই ডলফিন এর পেটে পটি হয়ে যাবে গো …আমাকে বাচাও গো ..।
তানভীর চিল্লানো সহ্য করতে না পেড়ে হাত ছেড়ে দেয় । লাবিবা ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায় । কোমড়ে ব্যথা পায় । কিন্তু কাদার কোন আওয়াজ পাওয়া যায় না । চোখ দুটো ভরে আসে । তানভীর লাবিবার দিকে ঝুকে কানের কাছে এসে মুখ দিয়ে সিসসসসসস…… শব্দ করে । লাবিবার শরীরের পশম গুলো সব দাড়িয়ে পড়ে । ভিতু ভেজা চোখে তানভীরের দিকে তাকিয়ে চোখ পিট পিট করে । বড় বড় পাপড়ি গুলো ভিজে মোটা দেখায় । বড় ডাগর নয়নের ভেজা পাপড়ির সেই পিট পিট করার সাথে সাথে তানভীরের বুক ও যেন ধুকপূক ধুকপুক করতে থাকে । তানভীর হাত এগিয়ে দেয় উঠার জন্য । লাবিবা আগের ন্যায় তাকিয়েই থাকে । তানভীর হাত বাড়িয়ে লাবিবার হাত ধরে টান দেয় । তানভীর বুঝতে পারেনা সে কি ধরেছে । মুখ ফেটে বলেই ফেলে
” oh my god, it’s your hand !! So very very soft . তুমি কি আদৌ মানুষ ?? I have a great doubt . এত্তো দুষ্টু তুমি .. আর এত্তো নরম কারো হাত হয়?হাত ধরেছি নাকি তুলোর বালিশ ধরেছি বুঝতেই পারছিনা ।”
লাবিবা চোখ বড় বড় করে ফেলে । মুখটা হা হয়ে যায় ।
– ” আপনি কি এখন আমার উপরে মাথা রেখে শুবেন ? আমি যদি আপনার মাথার ভরে আলু ভর্তা , বাগুন ভর্তা হয়ে যাই তখন কি হপ্পে ????”
– ” কি আর হপ্পে .. তোমায় মজা করে খেয়ে নিবো । এমনিতেই তোমাকে চিবুতে ইচ্ছা করছে । তোমার সাহস তো কম না তুমি তানভীর খানের গোলাপ গাছের গোলাপ চুরি করতে আসো ?। চুন্নি কথাকার । ”
– ” কিহ আমাকে চুন্নি বলা ?? আপনার সাহস তো আমার উপর দিয়ে । আমাকে চুন্নি বলা হচ্ছে । আমি চুন্নি না আপনি চুন্নি । আপনার নানী চুন্নি , আপনার ভাবী চুন্নি, আপনার শালী চুন্নি , আপনার ফুপি চুন্নি , আপনার দাদি চুন্নি , আপনার বউ চুন্নি , আপনার বউয়ের দাদি চুন্নি , হুস হুস ।”
– unfotunetly এদের মধ্যে আমার কেউ নেই । তুমি কি কিছু হবে এদের মধ্যে ?? ‌
– কাভি নেহি ।
– তো এবার বলো তোমাকে কি করা উচিৎ । চুরি করতে এসে ধরা পড়েছো । এবার কি হপ্পে তোমার ??
– কি করবেন ?? সত্যি সত্যি খেয়ে ফেলবেন নাকি ?? আমাকে খেয়ে ফেললে আমার আম্মুনির আর বেবি থাকবেনা । ফোনটা দিন তো । আমি আম্মুনিকে বলে দেই আরেকটা যেন বেবি নিয়ে আসে ।আমি তো অনেক বলেছিলাম । আনলোই না । যত্তসব পাজির দল । হুস হুস ।
– চলো ।
– কোথায় ?
তানভীর লাবিবার হাত ধরে গরুর ফার্মে নিয়ে যায় । এ বাড়িতে গরুও পালা হয় । অষ্ট্রেলিয়ান গরু । দুধ খাওয়ার জন্য । গোয়ালে নিয়ে গিয়ে দড়ি দিয়ে একটা বাধন দেয় । যাতে লাবিবা চাইলেই একটানে খুলে ফেলতে পারে । কিন্তু সে দিকে লাবিবার খেয়াল নেই । সে আছে তার চিল্লানো নিয়ে । তানভীরের কানের অবস্থা ঝালাপালা একদম । চুপ বলে দেয় এক ধমক। এক ধমকে লাবিবা আত্মা উড়ে যায় । পৃথিবীর সব থেকে শান্ত মেয়ের রুপ ধারন করে ।
– এই টুকুনি পুচকে মেয়ে ..সিনিয়র দের সাথে লাগতে আসে । এখানে সারাদিন পরে থাকবে এটাই তোমার শাস্তি ।
লাবিবা চুপ চাপ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে
– আপনি না অনেক sweet একদম করল্লার মিস্টির মতো । আপনি দেখতেও অনেক cute । একদম ডলফিনের baby র মতো । আপনার voice ও অনেক সুন্দর একদম এই australian cow এর মতো । আপনি তো এত্তোগুলা gudu gudu boy . এই দড়িটা খুলে দিননা গো । জানেন আমার ব্যাগে কি আছে ? এত্তোগুলা choclate . Yammy ?? খাবেন ? আপনাকে দিবো কেমন ?? দড়িটা চটপট খুলে দিনতো ।আমি আপনাকে choclate দিই ।
– আমাকে কি তোমার বাচ্চা মনে হয় ?? তোমার আব্বু আম্মু তোমাকে শাসন করতে পারে না । দুষ্টুমি করতে করতে এবার চুরিও করতে শিখেছো । আজ এই punishment তোমার whole life মনে থাকবে ।
লাবিবা অনেক riquest করেও ছাড়া পায় না । চোখের জলে নাকের জলে এক করে কাদতে থাকে । তানভীর সামনে টুল পেতে বসে থেকে হা হয়ে সেই কান্না গিলতে থাকে । সে যেন এটাই চেয়েছিলো যে দুষ্টু পুতুল কাদুক আর সেই কান্না সে উপভোগ করুক । মিরাজ , সোহানা, মমতা(তানিয়ার মম), তানিয়া দৌড়ে আসে গোয়াল ঘরে । তানিয়া গিয়ে ওদের বলতেই ওরা বেড়িয়ে আসে। আশেপাশে কোথাও দেখতে পায় না । খুজতে খুজতে গোয়াল ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ পেয়ে ছুটে আসে । মিরাজ এসে বাধন খুলতে থাকে । সোহানা মমতা তানভীরকে ইচ্ছে মতো বকতে থাকে ।
” ফুল ছিড়তে গিয়েছে ছিড়ে নিতো । তাহলে এই পিচ্চিটার সাথে এমন করার মানে কি ? বেশি বেশি করা স্বভাব হয়ে দাড়িয়েছে । পরের মেয়ে ভয় পেয়ে এমনিতেই কাদতে কাদতে অস্থির । তোর বোন ও তো সাথে ছিলো । ওকে কিছু বলতে পারলিনা ? গোয়াল ঘরে এনে ঐ মেয়েটাকে বেধে রেখেছিস ?”
ঐদিকে তানভীরের কানে এসব কিছুই যাচ্ছে না । সে এক ধ্যেনে তার দুষ্টু পুতুলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে । মিরাজ লাবিবাকে বাসায় পৌছে দেয় । লাবিবা হন হন করে রুমে ঢুকে বিছানার উপর ব্যাগ ঢিল দিয়ে ফ্লোরে বসে কাদতে থাকে । এরকম ডলফিন কখনোই দেখেনি । বেধে রেখেছে গরুর ঘরে গরুর মতন করে । একটা গোলাপের জন্য । যেখানে আব্বু পর্যন্ত কোনদিন বাধার সাহস করেনি সেখানে ওই ডলফিন বেধেছে । আমিতো গোলাপ নিয়েই ছাড়বো । আর তোর কোন দিন বিয়ে হবে না দেখিস বেটা ডলফিন । তুই বউহীনা দেবদাস হয়ে থাকবি । এইটা এই লাবি মনির দোয়া । হুস হুস।
সাবিনা এসে দেখে মেয়ে ফ্লোরে দু পা মেলে বসে কাদছে । দৌড়ে এসে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে
– কি হয়েছে আমার বাচ্চাটার ? কে মেরেছে ? কে বকেছে ?
– বেধেছে ।
– কে ?
– আমার black rose tree লাগবে আম্মুনি । আমার black rose tree চাই ।
– আচ্ছা এনে দিবো । আব্বুকে বলবো কেমন ? তুমি কেদোনা । আসো ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবে । চলো ।

ইসমাইল চোখে চশমা দিয়ে লাবিবার মার্ক শিটের দিকে তাকিয়ে আছে । সামনে নিচ দিকে তাকিয়ে লাবিবা দাড়িয়ে আছে । চশমাটা খুলে টেবিলে রেখে ইসমাইল বলে – math এ 32% , english এ 36% mark . কেন ?
লাবিবা চুপ ।
– এতো poor mark পেলে তুমায় jsc তে golden তো দূরে থাক a+ ও তো পাবে না । তাহলে তোমাকে দিয়ে আমার লাভ টা কি ? তোমাকে দিয়ে আমার সম্মান বাড়বে । এখনতুমি যদি আমার মাথা down করো তাহলে তোমাকে দিয়ে আমার লাভটা কি ?
লাবিবা চুপ ।
– কথা বলছোনা কেন ? Answer me. কোনটার অভাব তোমার ? মাথার ভিতর গোবর জমা হয়েছে নাকি ? ?
লাবিবা এবার চোখ দুটো উপর দিক করে । হাত দিয়ে দেখে ভেজা ভেজা ঘাম পড়ছে । এই ঠান্ডা আবহাওয়াতেও ইসমাইলের ধমকের চোটে লাবিবা ঘেমে একাকার। হাত দিয়ে চটকে দেখে তেলতেলা । তার মানে চর্বি। মাথায় তাহলে তার গোবর নেই চর্বি আছে । তারমানে সবার থেকে unique . Uff lovely ?
– আব্বু আমার মাথায় চর্বি । এইই চর্বি চর্বি চর্বি বলে নিজের মাথায় নিজেই থাপ্পর দিতে দিতে লাফিয়ে লাফিয়ে নিজের রুমে চলে আসে ।
ইসমাইল চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় । করতে আসলো শাসন । মেয়ে তার গায়েই লাগালোনা । don’t care ভাব নিয়ে আরো খুশি হয়ে লাফাতে লাফাতে চলে গেলো । একে কিভাবে কন্ট্রোল করবে ভেবেই পাগল ইসমাইল ।
রুমে এসে লাবিবা ফোন নিয়ে নুপুরকে কল দেয় । নুপুর রিসিভ করতেই লাবিবা এক লম্বা চিৎকার
– দোস্ত…….??
– জানু…..??
– কি দিবি বল ? তোর দোস্ত সবার থেকে unique. New Invention .
– ওমা তাই নাকি ? ? এইবার কিন্তু golden পেতেই হবে । তারপর আমরা দুজনে arts নিয়ে scientist হয়ে যামু ।
– ইয়ে ….।
– but invention টা কি ?
– সবার মাথায় গোবর থাকে । আর আমার মাথায় চর্বি । আমি সবার থেকে unique . চর্বি গলে গলে পড়ে ।
– দোস্ত তাহলে তো তোদের রান্নার তেল কিনতে হবে না ‌
– হ তাই । তেলের টাকা বেচে যাবো । ঐ টাকা দিয়ে তুই আর আমি শনপাপড়ি খামু ।
– হাওয়াই মিঠাই ও খামু ।
– আইচ্ছা । টা টা । উমাহহ?।

ইসমাইল স্কুল থেকে শুকনা মুখে বাসায় আছসে । খুবি চিন্তিত দেখাচ্ছে । সাবিনা কি হয়েছে জিজ্জাসা করলে উত্তর না দিয়ে বলে – ছাতাটা দাও বৃষ্টি হবে ।
সাবিনা ছাতা হাতে দিয়ে বলে – খেয়ে যাও ।
– পরে খাবো ।
ছাতা হাতে বেড়িয়ে পড়ে ইসমাইল । উদ্দেশ্য এমপির বাসা । জরুরি কাজে ডেকেছে তাকে । ইসমাইল এমপির বাসায় পৌছে । কাজ নিয়ে কথা বার্তা শেষ করে ফিরোজ বলে
– ইসমাইল , তোমাকে upsad লাগছে । কি হয়েছে ?
– তেমন কিছুনা ভাইজান । মেয়েটাকে নিয়ে একটু টেনশনে আছি ।
– আবার কি করলো ?
– সামনে j.s.c. এই সময়ে সব টিচার না করে দিয়েছে প্রাইভেট পড়াবে না । ওদেরকে জোর করি কিভাবে বলেন ? কন্ট্রোল করতে পারেনা কেউ । math আর english এ খুবি খারাপ । এই অবস্থায় খুবি চিন্তায় আছি । শহরে নিয়ে যাওয়া আসায় খুব সমস্যা হবে । আমিতো সময় পাবো না । সাবিনাকেও সাথে দিতে চাইনা । রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো নয় । কখন কি জানি হয় ।
ফিরোজ কিছুক্ষন ভাবলো । সেদিনের বেধে রাখার কথাটা শুনেছে সে । তার মনে হয় তানভীর লাবিবাকে কন্ট্রোলে রাখতে পারবে । দুই তিন মাস আছেও এখানে ।পড়ালে মন্দ হয় না ।
– ইসমাইল । তানভীর বেশ কিছুদিন আছে । এ কয়দিনে তোমার মেয়েকে math আর english টা দেখিয়ে দিতে পারে । কথা বলি তানভীরের সাথে ?
– তাহলেতো ভালোই হয় । কিন্তু বেয়াদবি যদি করে ?
– আমার ছেলেকে এখনো চিনোনি ।
– না ভাইজান ভরসা আছে ।
ফিরোজ তানভীরকে ডাক পাঠায় । তানভীর এলে ফিরোজ বলে – দেখো তুমিতো এখন অনেক ফ্রি । যে কয়দিন আছো সে কয়দিন লাবিবাকে একটু পড়াও । আমি মনে করি ওকে তুমি পড়াতে পারবে , শাসন ও করতে পারবে । ছাত্রী ভালো ।
তানভীর ইসমাইলের দিকে তাকায় । মনে মনে প্রচুর হাসে । দুষ্টু পুতুলকে সে পড়াবে ।
ইসমাইলকে বলে – আংকেল কাল থেকে পাঠিয়ে দিবেন স্কুল শেষে ।
ইসমাইল এক গাল হেসে বাড়ি ফিরে আসে । লাবিবাকে বলে কাল থেকে তানভীরের কাছে প্রাইভেট পড়তে যেতে । লাবিবা যেন হাতে চাদ পায় । এই সুযোগে সেই বাড়িতে সে ডুকতে পারবে , গোলাপ ও নেওয়া হবে , তানিয়ার সাথে খেলাও হবে কিন্তু ঐ বেটা ডলফিন ? ওটা কোন ব্যপার না । স্যার রা সব সময় ঘাড় ত্যাড়াই থাকে ।

To be continue _____

®লাবিবা_____?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here