স্পর্শ #সূচনা_পর্ব

0
2812

#স্পর্শ
#সূচনা_পর্ব
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

“”এ প্রেমের শুরুটা ৬ বছর আগে।তখন আমার বয়স ১৩ আর নিহান ভাই? সে ১৯ বছর বয়সী যুবক।যুবক বললে কি ভুল হবে?আমার তো মনে হয় না।

নিহান ভাই?সে আমার খালাতো ভাই..তবে তার ৫ বছর বয়স থেকেই সে আমাদের বাসায় থাকে..তখন আমার জন্ম ও হয় নি। কেন থাকে?কারন নিহান ভাইয়ের মা আমার খালামনি তাকে ৪ বছরের ছোট্ট রেখেই মারা যান।খালু নিহান ভাইয়ের জন্য ৬ মাস পরেই বিয়ে করেন।মা পায় নিহান ভাই।তবে সৎ মা।সবার সৎ মা তো আর ভালো হয় না তারও হয়নি।খুব অত্যাচার অবহেলা করতো।খালু চাইলেও কিছু করতে পারতেন না শুধু নিরবে চোখের পানি ফেলতেন।মায়ের তখন ২ বছর হলো বিয়ে হয়েছে।ঢাকায় যেয়ে এসব দেখে সহ্য করতে পারেন নি।নিহান ভাইকে নিয়ে আসেন সাথে করে রাজশাহীতে।সেই যে মা ঢাকা থেকে এসেছেন এখন অব্দি ঢাকায় পা রাখেন নি।প্রথম প্রথম খালু এসে দেখে যেতেন।কিন্তু তার বছর ৬য়েক পর তিনিও মারা যান।এসসসব আমি মায়ের থেকে আর নিহান ভাইয়ের থেকে শুনেছি।
খালু মারা যাওয়ায় অনেক একা হয়ে যান নিহান ভাই।কিন্তু সে একাকীত্ব তার উপর বেশি প্রভাব ফেলতে পারে নি আমি ছিলাম যে।তার সাথেই আমার খেলাধুলা বড় হওয়া।যখন থেকে বুঝতে শিখেছি সর্বদা ঢাল হয়ে ছিলো।তারসাথে খুনশুটি দুষ্টুমিতেই আমার বেড়ে ওঠা বড় হওয়া।কত যে স্মৃতি আমাদের তা আজ আর লিখে শেষ করা যাবে না।এখন আমি অনেকটা বড় হয়েছি।এইচএসসি পাশ করেছি।মেডিকেল কোচিং করছি।ডাক্তার হতে হবে আর্দশ ডাক্তার।বাবার স্বপ্ন। এটা আমার মনে হলেও নিহান ভাই বা মা কারোই মনে হয় না।তাদের কাছে আমি সেই ছোট্ট ইরা-ই আছি।””

ডাইরীতে কথাগুলো লিখতে লিখতেই ডাক পরলো ইরার।মা সালমা বেগম ডাকছেন।
ইরা ইরা ইরা কই গেলি…!
আসছি মা বলেই ডাইরীটা কাঠের ছোট্ট আলমারিতে তুলে রেখে এক ছুটে মায়ের কাছে গেলো।কি হয়েছে বলো??
কখন থেকে ডাকছি,এখন আসার সময় হলো তোর?নিহান এসেছে যা টাওয়াল সাবান এগিয়ে দিয়ে আয় ও গোসল দেবে।
মা প্রত্যেকটা রুমের সাথে এটাচড্ বাথরুম থাকার পরেও তাকে কেন বাহিরে গোসল করতে হবে বলো তো?
তুই কি এ বাড়িতে নতুন?ভং করছিস যে। জানিস না ও দুপুরের গোসল বাহিরে করে। এ আর নতুন কি?
আর কথা বাড়াস না যা ছেলেটা খেটেখুটে এসেছে দু মুঠো খাবে।যা জলদি।
খেটেখুটে আসলো কই?ওই তো প্রতিদিন একটা ফাইল হাতে বের হয় চাকরীর খোঁজে আর দুপুর হলেই ফিরে আসেন।কি খাটুনি এতে বলোতো?
আজকাল বেশি কথা বলিস তুই।ওর বাবা ওর নামে যে সম্পত্তি টাকা লিখে দিয়ে গেছে তাতে তোর চোদ্দগুষ্টি ১০ যুগ ধরে বসে খেতে পারবে।কিন্তু আমি চাই না বিনা পরিশ্রমে ও সে টাকায় বসে বসে খাক।তাই আমার জন্যই ও চাকরীর খোঁজে যায়।এ আমার কাছে এক পরম পাওয়া।যাহ্ এখন।
মাথা নাড়ল ইরা।তারপর ১০ যুগে কত বছর কত মাস হিসেব করতে করতে নিহানের কাছে চলে এলো।
খালি গায়ে দাঁড়িয়ে মুখে পানি দিচ্ছে নিহান।ব্যায়ামপুষ্ট ফর্সা পিঠ।ইরা সাবান টাওয়াল রেখে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিহানকে।
ইরা….আমি বাহির থেকে আসলাম সবে শরীর ঘামে ভেজা।এভাবে জড়িয়ে ধরেছিস কেন বলতো?ছাড় আমায়।
ভালো লাগে বলেই চোখ বন্ধ করে পিঠে মাথা রাখল।তাকাল হয়ত দেখতে পেতো নিহান ও ওর মতই চোখ বন্ধ করে ওর স্পর্শ অনুভব করছে।
প্রায় দশমিনিট পর নিহানকে ছেড়ে মাথা নিচু করে ঘরে চলে যায় ইরা।নিহান মুচকি হেসে গোসলে মন দেয়।

দুপুরে মা,ইরা নিহান একসাথে খেতে বসল।বাবা ইকবাল সাহেব অফিসে।সেই আটটায় যায় রাত আটটায় আসে।
খাওয়ার মাঝে দুজনের চোখাচোখি হলেও কোনো রকম কথা হলো না।হঠাৎ ই বিষম খেলো নিহান।ইরা ব্যস্ত হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে পানি খায়িয়ে দিলো।পিঠে হাত বুলিয়ে মাথায় ফু দিয়ে দিলো।সালমা বেগম ইরার কান্ড দেখে মিটিমিটি হেসে উঠে গেলো।
নিহান ইরার দিকে তাকিয়ে দেখে ইরা প্রায় কেঁদে দিয়েছে।নিহান কিছু বলতে যাবে এমন সময় ধমকে ওঠে ইরা।কিভাবে খাও।আস্তে খাওয়া যায় না?ধান কাটতে যাবে নাকি??
আরে আমি তো..
একদম চুপ থাকো যাও নিজের ঘরে যাও।আর খেতে হবে না।
তুই যাবি না
না
নিহান হাত ধুয়ে চলে গেলো।
ইরা মায়ের সাথে সব ঘুছিয়ে নিজের রুমে গেলো।মহাশয় প্রতিদিনকার মতন আজও ইরার ঘরে শুয়েছে।এটা তার পুরনো অভ্যাসের মধ্যে একটি।দুপুরে ইরার ঘরে ঘুমোবে।দক্ষিণের হাওয়া আসে তাই।আর ইরা মাঝে মাঝে নিহানের ঘরে ঘুমোয় কখনে মায়ের ঘরে কখনে বসেই বিশ্রাম নেয়।
ইরা হালকা করে দরজা চাপিয়ে ঘরের জানালা গুলো খুলে দিলো।প্রায় সাড়ে তিনটা বেজে গেছে।দক্ষিণের আমবাগানের বাতাস হু হু করে ঘরে ডুকছে।শীতল করে দিচ্ছে ঘরটা।

পুরো এক একটা বিশাল জায়গার মাঝে ইরাদের দোতলা পুরোনো বাড়িটা।দক্ষিণে শুধু আম বাগান।উত্তরে বিভিন্ন ফলে ঔষধি গাছে ভরা।পেছনে পুকুর ঘাট।সামনে ফুলের বাগান। শিউলি বকুল বেলি ফুল গাছ।বেশ এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশে থাকে ইরারা।
ইরার বয়স যত এ বাড়িটার বয়স ও তত।একটু আধটু রং ওঠা শ্যাওলা পড়া বাড়িটা।

জানালা দিয়ে বাহিরে চেয়ে ছিলো আনমনে।নিহানের কাশিতে ঘোর কাটল ইরার।মাথার কাছে এসে বসতেই বলল ঘাড়টা ব্যাথা করছে ইরা।।টিপে দে।
ড্রয়ার থেকে মুভ এনে নিহানের ঘাড়ে ম্যাসাজ করে দিলো।এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো ইরা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here