স্পর্শ #পর্ব_২

0
1260

#স্পর্শ
#পর্ব_২
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ

ইরার ঘুম ভাঙল মুখে পরা পানির ছিটায়।ধড়ফড় করে উঠে বসে।~কি হইছে কি হইছে??
~ফ্রেশ হয়ে পড়তে বস।কয়েকদিন পরই তো ভর্তি পরীক্ষা!
~সবে এক্সাম শেষ হলো এখন আবার বই, এরকম কেনো করো নিহান ভাই!হাই হাই তুলতে তুলতে বললো ইরা।
~এই তোকে কতবার বলেছি নিহান ভাই নিহান ভাই করবি না শুধু নিহান বলে ডাকবি।চোখ রাঙিয়ে বলল নিহান।
~তুমিও ও তো আমায় তুই তুই করো।তুমি বলো না তাছাড়া তুমি তো আমার ভাই-ই।স্বামী হলে আর ডাকবো না।গলায় ওড়না নিয়ে এলো-মেলো চুলে খোঁপা করলো ইরা।
~হবু স্বামী তো?এতেই চলবে।আর ভাই ভাই করবি না শুনতে ভালো লাগে না।
~স্বামী তো আর হও নি আগে হয়ে নাও তখন ট্রাই করবো।এখন কয়টা বাজে গো?
~মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ।কয়টা বাজে জানি না মোবাইল সাথে নেই।তা তুই এখনো উঠছিস না যে??
~কোলে নাও..
~কিইইই??দিন দিন লাই পেয়ে পেয়ে মাথায় উঠছিস তুই।বলে কি না কোলে নাও।মামার বাড়ির আবদার তো..!যা উঠে পড়তে বোস।
~এরকম কেনো করছো?সামান্য কোলেই তো নিতে বললাম।
~এটাই তোর ঘোর অপরাধ হয়েছে।আজই খালামণিকে বলবো ছেলে দেখতে।বিয়ে হলে এসব ছেলেমানুষী কমবে।
~আমি তো তোমাকেই বিয়ে করবো নিহান ভাই।সব দাঁত বের করে হেসে বলল ইরা।
~আমি তো তোকে বিয়ে করবো না।আমি তোর থেকে সুন্দরী কাউকে বিয়ে করবো!
~কি বলছো এসব।এই সবে না বললে তুমি আমার হবু স্বামী।তাহলে..কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল ইরা।
~এখন এই মুহূর্তেই ডিসিশন পাল্টে ফেলেছি।এখন যা পড়তে বস।যত্তাসব আজাইরা কথা বার্তা।বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নিহান।
!
!
!
!
ইরার আর রাতে পড়া হলো না।কান্না করতে করতেই সময় পাড় করে দিলো।
নিহান সেই সন্ধ্যায় বাসা থেকে বেরিয়েছিলো।ফিরেছে ৯.৩০ এ।এসেই হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে পড়ল।
টেবিলে ইকবাল সাহেব আর সালমা বেগম আছেন।ইরাকে না দেখতে পেয়ে নিহান বললো_ইরা খেতে আসে নি খালামনি?
~বললো তো খিদে নেই তুই বরং খেয়ে নে।খিদে পেলে একাই আসবে।
ইকবাল সাহেব বললেন_আমিও ডেকে এসেছি।উল্টোদিকে ফিরে বসে রইল।খিদে নেই বলল।আর ফিরলোই না।
ইরাকে ছাড়া কখনোই খায় নি নিহান।আজও খেতে পারলো না।খালু উঠতেই নিহান হাত ধুয়ে ফেলল।
~কিরে হাত ধুয়ে ফেললি কেন??
~একটা প্লেটে ভাত তরকারি রেখে বাকিসব ঘুছিয়ে ফেলো খালামনি।
সালমা বেগম বেশ বুঝতে পেরেছে ইরার সাথে খাবে বলেই। মনে মনে একটু হাসলো শুধু।
!
!
!
!
নিহান আস্তে আস্তে ইরার ঘরে গেলো।দরজাটা চাপিয়ে ইরার পাশে যেয়ে বসল।ইরা যে কাঁদছে বুঝতে বাকি রইলো না।থেকে থেকে কেঁপে উঠছে।
এ কান্নার মানেই খুঁজে পেলো না ও।সামান্য একটা কথায় এত কান্না??
বেশকিছুক্ষন বসে থেকে ইরাকে নিজের দিকে ফেরায় নিহান।ইরা মুখ ভার করে মাথা নিচু করে বসে আছে।নিহান আলতো করে ইরার মাথাটা নিজের বুকে নেয়।হু হু করে কেঁদে ওঠে ইরা।দুহাতে আঁকড়ে ধরে নিহানকে।।কান্নার গতি যেন আরো বেড়েছে।নিহান মাথাটা তুলে চুলগুলো সরিয়ে দেয়।চোখ মুছে দিয়ে বলল_
এভাবে কেন কাদঁছিস পাগলি।আমি কি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো বল?আলতো করে ইরার কপালে চুমু দেয় নিহান।

ইকবাল সাহেব সিগারেট ফেলে চলে আসতে নিলেই এ দৃশ্য দেখে ফেলে।চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে
ঘরে চলে আসে।সালমা বেগম পান চিবুতে চিবুতে টিভির চ্যানেল পাল্টাচ্ছে। ইকবাল সাহেব তার পাশ ঘেঁষে বসলেন।বুঝলে ইরার মা ইরা আর নিহানের বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে হবে।ওদের এরকম চলাফেরা আর কতদিন?
~ইরা মেডিকেলে চান্স পাক নিহানের চাকরীটা হোক তারপরেই!
~কিন্তু ওদের এভাবে বাহিরে যাওয়া,সময় দেয়া ওঠাবসা এটাও কেমন না??
~শোনো আমার মেয়ে আর আমার বোন পুতের ওপর আমার অনেক বিশ্বাস আছে।ওরা এমন কিছু করবে না যাতে আমাদের বিশ্বাস,আস্থা ক্ষুন্ন হয়।নিহান কখনোই কোনো বাজে কাজকে সমর্থন করে না আর নিজেও করবে না আমি ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।করলে অনেক আগেই করতো।আজকাল ধরে তো ওদের চলাফেরা দুষ্টামি না..ইরা বড় হওয়ার পর থেকেই..কখনো কি দেখেছো নিহানকে ইরার সাথে বাজে কিছু করতে বা কুনজরে দেখতে??
ইকবাল সাহেব জোর গলায় বলেন_না আমি দেখি নি।আর এ ব্যাপারটা আমি অনেক ফলো ও করেছি।ইরাকে নিহানের কাছে রেখে বাহিরে যেয়ে।ও কোনো রকম খারাপ আচরণ করে নি ইরার সাথে।সবসময় আগলে রেখেছে।আমি ওকে এ জন্যই এত বিশ্বাস করি,ভালোবাসি।ও আমার মেয়েটাকে আমার মতই ভালোবাসে।
~তাহলে?
~আসলে বড় হয়েছে তো দুজন তাই মনে হয় ওদের ও তো একটা মতামত আছে।হয়ত ওরা চায় স্বামী স্ত্রী হয়ে যেতে আমাদের বলতে পারছে না।
~যেদিন এ বিষয়টা আমার মনে হতে শুরু করবে সেদিন সাথে সাথেই ওদেরকে বিয়ে দিয়ে দেবো।এখন হলে দুজনের ক্যারিয়ারই নষ্ট হবে।
~তবুও…
~শোনো ওরকম চুমু তুমিও আমায় বিয়ের আগে খেয়েছিলে..!মুখে চুন দিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে বলল সালমা বেগম।
ইকবাল সাহেব স্ত্রীর কথা শুনে বোকা বনে গেলো।মাথা চুলকাতে চুলকাতে হেবলার মত বিছানায় চলে গেলেন।
!
!
!
ইরাকে শান্ত করে খাবার এনে খায়িয়ে দিলো নিহান।নিজেও খেয়ে নিলো।হাত ধুয়ে প্লেট রান্না ঘরে রেখে এসে ইরাকে শুয়িয়ে দিলো।শরীরে কাথা টেনে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।ঘুমিয়ে যেতেই লাইট অফ করে দরজা চাপিয়ে নিজের ঘরে চলে এলো নিহান।
নিজের ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো।
!
!
!
খুব ভোরেই ঘুম ভাঙল নিহানের।হাই তুলে উঠে বসল।জানালাগুলো খোলা।তারমানে ইরা উঠে গেছে।যেদিনই ইরা ভোরে উঠে সেদিনই নিহানের ঘরে এসে জানালা খুলে পর্দা সরিয়ে দিয়ে যায়।
মুচকি হেসে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকলো। আর অবাক ও হলো।কলাপাতা রংয়ের জামা পড়ে বাগানে হাঁটছে একটা মেয়ে।এটা যে ইরা বুঝতে এক সেকেন্ড ও দেরী হলো না।কাথাটা সরিয়ে ওয়াশরুমে যায় নিহান।ফ্রেশ হয়ে দ্রুত বাগানে চলে যায়।একটা জটলা গাছের পাশে দাঁড়িয়ে ইরার হাতে ধরে হেঁচকা টান দেয়।
ও মা গো…..বলে চিৎকার করে ওঠে ইরা।
নিহান ইরাকে আমগাছে ঠেস দিয়ে মুখ চেপে ধরে।
~এই এরকম চিৎকার করছিস কেন?মনে হয় কুকুরে কামড়ে দিয়েছে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখ তোর এরকম কর্কশ চিৎকারে সব পাখিগুলো উড়ে চলে গেছে।
ইরা মুখ চেপে ধরা হাতের দিকে ইশারা করলো।নিহান হাত সরাতেই জোড়ে জোড়ে হাপ ছেড়ে দম নেয় ইরা।
~এরকম কেউ করে?তোমারই তো দোষ এভাবে টানলে কেন?
~উহ তোমালই তো দোষ এভাবে তানলে কেন?হুহ ডং কত..!তাই এভাবে চিৎকার করতে হয়?এসব ন্যাকামি একদম সহ্য হয় না আমার!
~আমি ন্যাকামি করি??নাক টেনে কান্না ভাব নিয়ে বললো ইরা।
~এই যে এখন আবার করছিস।চল হাঁটি। আর কথা পেঁচাস না।
ইরা নিহানকে মুখ ভেংচি দিয়ে হাঁটা ধরল।নিহান অন্য দিকে তাকিয়ে হাত ধরল ইরার।দুজন খালি পায়ে ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটতে লাগলো।

চলবে_

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here