#স্পর্শ
#পর্ব_১১,১২
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
১১
ইকবাল সাহেব স্ত্রীর উপর বিরক্ত হয়ে বললেন নিহান তোমার মেয়ের মত যা-তা নয়।ও যথেষ্ট ভালো আর শান্ত মনের ছেলে।বাহিরে ডেকোরেশনের লোক এসেছে।
সালমা বেগম অবাক হলেন বটে তবে চোখের পানি মুছে বলল।ঠিক করেছো।এ মেয়ের দ্বারা ডাক্তারি পড়া হবে না।
ইকবাল সাহেব গভীর ভাবনায় ডুবে গেলেন।
একটা মাত্র মেয়ে চাওয়া-পাওয়ার কোনো কমতি রাখেন নি তিনি।তবুও কেনো যে এমন করছে..কাদের সাথে মিশছে কি চায় কে জানে।সবচেয়ে বড় কথা যে মেয়ে নিহানের কথায় উঠতো বসতো সে মেয়ে কি না এত অপমান করলো যা নয় তা বলে অথচ এরকম অপমান নিহান কারো কাছ থেকে আদৌ জীবনে হয়েছে কিনা সন্দেহ তার।নিহানকে সে তার মেয়ের মতই ভালোবাসে।বরং এখন একটু বেশিই ভালোবাসে।আর যাইহোক বাপ মা মরা ছেলেটাকে সে কিছুতেই কষ্ট পেতে দেবে না।ওর যে আপন বলতে আর কেউ নেই।হাআআহ..দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন ইকবাল সাহেব।
সালমা বেগম কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইকবাল সাহেব বললেন যাও মেয়েকে ডাকো।আজ থেকে ওর বাড়ির বাহিরে যাওয়া বন্ধ। বই খাতা হয় পুড়িয়ে দাও নয় বেঁচে দাও নয় কাউকে দিয়ে দাও।ওকে আমি আর পড়াবো না।ওর পেছনে আর একটা টাকাও খরচ করবো না আমি।পরীক্ষা ও দিতে হবে না।
সালমা বেগম বললেন খুব তো নেচে ভর্তি করেছিলে।ওই কোচিং সেন্টারেই কোনো দোষ আছে।সালমা বেগমের কথায় বেশ চটে গেলেন ইকবাল সাহেব। গলা খাঁকারি দিয়ে বললো ওওহ দায় এখন আমার তাই না।নিজে তো মা।একটা মাত্র মেয়ে।জন্ম দিশেই কি দায় শেষ??কি করো সারাদিন যে মেয়ের খোঁজ নিতে পারো না কই যায় কি করে।থাকো তো সারাদিন জলসা নিয়ে।
অগ্নিকাণ্ডের মতো জ্বলে উঠলেন সালমা বেগম।আমি জলসা নিয়ে পড়ে থাকি?তাহলে তোর ঘরের কাজ করে কে?তোর মেয়েকে খাবার দেয়া পড়তে বসার খেয়াল রাখা রান্না বান্না করা থালাবাসন দোয়া জামাকাপড় দোয়া এসব করে কে তোর পিয়ন,?হ্যা
ইকবাল সাহেব আরো রেগে গেলেন তুইতুকারি শুনে।দু কথা শোনাতে শুরু করলো।এক দফা ঝগড়া হয়ে গেলো তাদের মধ্যে।তুমুল ঝগড়া হয়েছে বলা চলে।স্ত্রীর সাথে কথায় পারবেন না ইকবাল সাহেব। দোষটা আসলে একদিক দিয়ে দুজনেরই। তারা দুজনে পারে নি সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে খেয়াল রাখতে।আরেক দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যাবে দোষ তাদের দু’জনের কারোরি না।মেয়ে বড় হয়েছে।লেখা পড়া করে।পাঁচ দশ জন বন্ধু বান্ধবীর সাথে মিশে।সব টা তো বাবা মায়ের দেখে রাখা সম্ভব না।বাচ্চা না যে কোলে বসিয়ে পড়াবে খাওয়াবে স্কুলে নিয়ে যাবে।আবার দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন ইকবাল সাহেব।
যাও মেয়েকে ডাকো..
স্বামীর এ কথার উত্তরে কিছু বললেন না সালমা বেগম।এক গ্লাস পানি খেয়ে মেয়ের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন।
ইকবাল সাহেব সোফায় বসলেন স্থীর হয়ে।খুব খিদে পেয়েছে তার।মনে হচ্ছে খুদায় ইঁদুর দু হাত পা পেট ইত্যাদি ইত্যাদি স্থানে দৌড়াদৌড়ি করছে।তবে মেয়ের চিন্তায় কিচ্ছু খেতে ইচ্ছে করছে না তার।
.
.
.
.
.
সালমা বেগম দরজায় বেশ কয়েকবার টোকা দিলেও ভেতর থেকে ইরার সাড়া শব্দ পেলো না।এবার ছিটকিনি ধরে ইচ্ছে মত বাড়ি দিতে লাগলেন।শব্দে তারই মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে ইরা কি আর ঘুমে থাকতে পারে।উঠে বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে।চোখে এখনো ঘুম।
কি হয়েছে টা কি।এ বাড়িতে কি একটু শান্তিতে ঘুমানো-ও যাবে না নাকি!হ্যা _হাই দিতে দিতে বলল ইরা।
তড়িৎ গতিতে ইরাকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ডুকে পড়লেন সালমা বেগম।ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে।
কেনো?
তোর বিয়ে
কি বললে
তোর আর নিহানের বিয়ে।পরশু হলুদ করতে চাচ্ছি।ডেকোরেশনের লোক চলে এসেছে।একটু পরেই কাজ শুরু করবে।আজই কল করে সব রিলেটিভদের বলে দিবো।যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
মায়ের কথা ইরা যেন হাজার ভোল্টের শক খেলো।চোখ থেকে ঘুম উধাও।
জোর গলায় বললো কি বলছো এসব?
যা শুনেছিস তাই বলেছি।
তোমার মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে?পরশু আমার ভর্তি পরীক্ষা।এখন এসব কি করে সম্ভব। তাছাড়া আমি বিয়ে করতে পারবো না।এখন তো কিছুতেই না।
তোমার মতামত কেউ শুনতে চায় নি।বলেই উঠে টেবিলের কাছে এলেন সালমা বেগম।এক এক করে সব বই খাতা জড়ো করতে লাগলেন ইরা।ইরা চিৎকার করে পুরো বাড়ি মাথায় করে ফেললো।সালমা বেগম একের পর এক বইজড়ো করেই চলেছেন।
এমন সময় কল বেজে উঠল ইরা।ইরা থেমে যায়।একবারে মায়ের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার ফোনের দিকে।যেই না ফোনটা ধরতে যাবে অমনি খপ করে ফোনটা নিয়ে নেয় সালমা বেগম।ইরা বার বার বলছে ফোনটা দিয়ে দাও মা ফোনটা দিয়ে দাও।সালমা বেগম ইরার কথা কর্নপাতই করছেন না।বই জড়ো করার কাজে ব্যস্ত।
এক সময় ইরা কেড়ে ফোনটা নেয়ার চেষ্টা করে।সালমা বেগম ও শক্ত করে ধরে আছে।টানাটানির ফলে খুব জোড়ে ধাক্কা খায় সালমা বেগম।টাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলেই ধরে ফেললো নিহান।হাত থেকে ফোনটা নিয়ে সাইলেন্ট করে পকেটে ডুকিয়ে নিলো।খুব শান্ত গলায় বললো হলুদ অনুষ্ঠান কিছু হবে না।ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে কাজী এসেছে।বিয়ে এখনি হবে।কিহ বলে চিৎকার করে উঠল ইরা।
সালমা বেগম কাঁদতে শুরু করলো আর বলতে লাগলো ও আমার মেয়ে আমার?ভাবতেও ঘৃণা লাগছে আমার এতটা খারাপ হতে পারে কি করে।মাকে কি না ছিহ…ওকে মেরে ফেল নিহান।মেরে ফেল।বলেই কাঁদতে কাঁদতে ছুটে বসার ঘরে চলে গেলো।
নিহান দরজাটা আটকে দেয়। এক পা দুপা করে ইরার দিকে এগিয়ে আসে।ইরা স্থীর দাঁড়িয়ে।চোখে মুখে তীব্র রাগ স্পষ্ট।
বিয়েটা হয়ে যাক ফোনটা পেয়ে যাবি।যা ফ্রেশ হ।
আমায় ভোগ করার তাড়া সইছে না বুঝি।চোখ মুখখিটে বললো ইরা।
নিহানের এই মুহুর্তে মন চাচ্ছে ইরারকে সজোরে কয়েকটা থাপ্পড় মারতে।কিন্তু এতে পরিস্থিতি বিপরীতে চলে যাবে। দাঁতে দাঁত চেপে ইরার দুইহাত পেছনে নিয়ে ধরল নিহান।ইরা মোচড়ামুচড়ি করছে হাত ছাড়াতে।নিহান দেয়ালের সাথে ঠেসে দাঁড়া করালো ইরাকে।যে কাজটা সে কখনো করে নি তাই আজ করলো।দুবার ভাবলো না।ইরার ঘাড়ে মুখ ডুবালো।ঠোঁট দিয়ে ছুয়ে দিচ্ছে সারা ঘাড় গলা।ইরা মুহুর্তে জমে গেলো।মোচড়ামুচড়ি থেমে গেলো।পাথরের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।মুখ ডুবানো অবস্থায় বললো একটু আগে যে কথাটা বললি তা কিন্তু আমি যখন ইচ্ছে করতে পারতাম অনেক সুযোগ ছিলো এমনকি একটু পর তো বিয়ে আমি চাইলে এখনো করতে পারি।কিন্তু তুই আমার ভোগের বস্তু না ইরা তুই আমার ভালোবাসা।বলেই
আস্তে আস্তে নিহান ইরার গলা ঘাড় ছেড়ে ঠোঁটের দিকে এগুতে লাগলো।
আমি ব্রাশ করি নি বলে দু ঠোঁট চেপে রাখলো ইরা।নিহান সঙ্গে সঙ্গে ইরাকে ছেড়ে দিলো।আজকের এ কাজের জন্য সে একটু অনুতপ্ত নয়।এটা ইরার কর্মফল।সে চেয়েছিলো শুদ্ধ ভাবে শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করে তারপর এভাবে ছোঁবে ইরাকে।কিন্তু ইরার কথা…. আর ভাবলো না নিহান ইরার হাত টেনে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো।নিজে হাতে দাঁত ব্রাশ করিয়ে মুখ ধুয়িয়ে ঘরে এনে বিছানায় বসাল।ইরা রেগেমেগে একাকার। তবে সে মুখ দিয়ে কিচ্ছু বলছে না।
নিহান আলমারি খুলে একটা লাল টকটকে শাড়ি ব্লাউজ বের করলো।
আমি ওদিক ফিরছি ব্লাউজ পেটিকোট পরে নে।
আমি ওয়াশরুম থেকে পরে আসি।তাতে কি?দেখার ধান্দা খালি বুঝি না মনে হয়।
নিহান রাগী চোখে তাকিয়ে বলল ওয়াশরুমে যেয়ে যদি দরজা আটকে দিস।তখন তো হবে আরেক কেলেংকারী। আমি দেখবো না তাকাবোও না। রেডি হ।বলেই উল্টো ঘুরে চেয়ার বসলো নিহান।ইরা একশটা বকা দিয়ে রেডি হতে লাগলো।কি করবে নিরুপায় সে।
.
.
.
.
সালমা বেগম বসার ঘরে যেয়ে দেখলেন কাজী সহ দুই তিন জন মুরব্বী লোক বসে আছেন।মাথায় ঘোমটা টেনে সালাম দিলেন।স্বামীকে ইশারায় আড়ালে ডেকে জানতে চাইলেন সবটা।ইকবাল সাহেব খুলে বললেন।আসলে ধুমধাম করে লোক জানিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করলে সবার সামনে যদি ইরা সিনক্রিয়েট করে তখন এ বাড়ির সম্মানই যাবে।তাই নিহান বললো আপাদত কাজী সাহবে বিশেটািন তারপর ইরা চাইলে একটা রিসেপশন করে নেয়া যাবে।তাই এসব কিছু।
সালমা বেগম মাথা নাড়িয়ে বললো আমার ছেলেটার বুদ্ধি আছে।অনেক বোঝে।আর কিছু না বলেই রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন তিনি।ইকবাল সাহেব আগের জায়গায় এসে স্থীর হয়ে বসলেন।পাঁচ মিনিট পরই ইরাকে নিয়ে এসে বসার ঘরে বসল নিহান।কাজী সাহবে খাতা খুললেন।
চলবে_
#স্পর্শ
#পর্ব_১২
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
পুতুলের মত বসে আছে ইরা।কাজী সব লিখালিখি শেষ করে বললো দেনমোহর কত দিবো?ইকবাল সাহেব নিহানকে বললো তুই ই বল বাবা।নিহান বললো পকেটে এখন দুই হাজার টাকা আছে।আপনি বরং একহাজার এক টাকা লিখুন।আমি চাই আমাদের বিয়েটা একদম হালাল হোক।দশ বিশ লাখ টাকা দিয়ে লোক দেখাতে চাই না।কারণ আমার সামর্থ্য নেই এতটাকা দেয়ার।
খালামনি তোমাদের কোনো আপত্তি আছে।
সংসার করবি!আমি তো আমার মেয়েকে বেঁচে দিচ্ছি না।
আর কেউ কোনো কথা বললো না।তিনবার কবুল পড়ে মোনাজাত করে সম্পন্ন হলো ইরা-নিহানের বিয়ে।ইরার খুব শরীর খারাপ করছে।কাউকে কিছু না বলে উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো।ইরার চলে যাওয়ার পর ইকবাল সাহেব বললেন দেখ নিহান এবার কি হয়েছে কিছু জানতে পারিস কি না।নিহানের হাত ধরে বললো বুঝিয়ে বলিস।তুই তো জানিস কখনো আমি ওর গায়ে হাত তুলি নি।মারিস না বাবা।নিহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই সালমা বেগম তেড়ে গিয়ে বললেন শাসন না পেয়েই তো ওমন বখে গেছে।জানো আজ আমায় ধাক্কা মেরেছে।ও আমার মেয়ে ভাবতেও পারছি না আমি।ইকবাল সাহেব স্ত্রীর কথায় কিচুটা অবাক চোখে তাকালো তার দিকে।মাথা নিচু করে ফেললো টুপ করে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।তার চোখের পানি কারো চোখ এড়ালো না।সালমা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন চলো ঘরে চলো।তোমার আবার শরীর খারাপ করবে।নিহান-ই সামলাতে পারবে।ইকবাল সাহেব নিহানের কাঁধে হাত রেখে বললেন যা বাবা ঘরে যা।আর চাইলে তুই তোর জিনিস ইরার ঘরে শিফট করতে পারিস বা ইরারগুলো তোর ঘরে।ভেবে আমায় জানাস।আমি কাল-ই লোক দিয়ে ঘুছিয়ে দিবো।নিহান মাথা নাড়লো শুধু।
ইকবাল সাহেব নিঃশব্দে হেঁটে নিজের ঘরে চলে গেলেন। পিছুপিছু সালমা বেগম ও।
নিহান লম্বা দম নিয়ে ইরার ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
.
.
.
.
.
.
.
খুব শরীর করছে ইরার।গা গুলিয়ে আসছে।সারা শরীর থরথর করে কাপছে।মাথার খোপাটা খুলে কাধের ছিপটিপিনটা খুলে বিছানায় বসে ইরা।ওমনি ঘরে প্রবেশ করে নিহান।ইরাকে ওভাবে কাঁপতে দেখে দ্রুত এসে পাশে বসে নিহান।হাত ধরে নিয়ে জিগ্যেস করলো কি হয়েছে তোর।এমন কাঁপছিস ক্যান ইরা।
কথা বলো না তো।বিরক্তি নিয়ে বলল ইরা।কোনরকম টেনে শাড়িটা খুলে ফ্লোরে ফেলে দৌড়ে ওয়াশরুমের সামনে গেলো।ওমনি গলগল বমি করে দিলো ওয়াশরুমের দরজায়।নিহান তড়িৎ গতিতে গিয়ে মাথায় চেপে ধরে।ইরা শরীর ছেড়ে হেলে পড়েছে। নিহান পানি এনে কুলি করিয়ে কোলে তুলে নিলো।বিছানায় বসিয়ে দরজা আটকে দিয়ে নিজেও ইরার কাছে এসে বসল।
বালতি ভর্তি পানি ঢেলে ওয়াশরুম ধুয়ে মগে করে পানি এনে ইরার মুখ হাত ধুয়ে দিলো।ইরা তখনও কাঁপছে। নিহান দু’হাতে আকড়ে ধরে কাছে টেনে নিলো।ইরাও নেতিয়ে গেছে।সব ভর নিহানের উপর ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।একসময় ঘুমিয়ে গেলো ইরা।নিহানের ভেতরটা অস্থিরতায় ফেটে যাবে মনে হচ্ছে। কি হলো কেনো এমন করছে ও।ভয়ে ভেতরটা কুঁকড়ে যাচ্ছে।ইরার মুখের দিকে তাকিয়ে সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই বসার ঘর থেকে চিৎকার শুনতে পায়।তড়িঘড়ি করে উঠে দরজা খুলে বসার ঘরে যেতেই দেখে খালামনি চিৎকার করে বিলাপ করে কাঁদছে।খালু কাকে যেন বারবার ফোন করেই যাচ্ছে।নিহান আস্তে করে বলল কি হয়েছে খালু।উত্তরে ইকবাল সাহেব কিছু বললেন না।যেন কথাটা তার কানেই যায় নি।নিহান খালামনির কাছে বসে বলল কি হয়েছে খালামনি।সালমা বেগম নিহানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলে।নিহান তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিগ্যেস করলো শান্ত হও খালা মনি বলো না কি হয়েছে।
ইকবাল সাহেব ফোনের ওপাশের কাউকে বললেন কালু ভাই সিনএনজি নিয়ে মোড়ের পাড় এসো।সেন্ট্রাল হসপিটাল যাবো।
হসপিটালের কথা শুনে নিহান কিছুটা আঁচ করতে পারলো।হয়ত কারো কিছু হয়েছে।
ফোন কান থেকে সরিয়ে ইকবাল সাহেব নিহানকে উদ্দেশ্য করে বললেন_নিহান বাবা তোর খালমনির খালা মারা গেছেন
নিহান সঙ্গে সঙ্গে ইন্না-লিল্লাহ পড়লো।
তুই তো জানিস সালমার মা মারা যায় ৬ বছর বয়সে তখন থেকে খালার হাতে মানুষ।উনি স্টোক করেছেন।হসপিটালে আছেন।আমি আর তোর খালা যাচ্ছি।
নিহান কিছু বললো না।শুধু মনে মনে ভাবল একের পর এক দুঃসংবাদ কেন আসছে এ দুটো মানুষের কাছে।সামলানোর শক্তি দাও আল্লাহ্!
.
.
.
.
.
.
.
.
ইকবাল সাহেব সালমা বেগমকে ধরে উঠালেন।মোড়ে সিনএনজি আসবে।অতটুকু তো হেঁটে যেতে হবে।আগাও।সালমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে হাঁটা ধরল।
ইকবাল সাহেব নিহানের কাছে এসে জিগ্যেস করলো ইরা কি করে নিহান।এলো না..
ও তল ঘুমায় খালু!
এখন বাবা বলে ডাক।বলছিলি তো শ্বশুর হও তখন বাবা ডাকবো এখন ডাক।
ডাকবল বাবা..
আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিস বাবা।কবে ফিরবো জানি না।অফিস থেকে ছুটিও নিই নি।তুই ওর খেয়াল রাখিস।তলর খালা তো যেয়ে আরো ভেঙে পরবে।চার পাঁচ দিনের আগে ফিরতে পারবো না।ইরাকে দেখে রাখিস।হাত ছাড়া করিস না।আমি বরং সময় পেলে জোবায়ের আর শান্তকে কল করবো।১০-১২ দিন না হয় ওরাই আরদ সামলাবে।
আচ্ছা বাবা!
আসি।নিজের ও খেয়াল রাখিস।ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করিস।
তুমিও নিজের আর খালামনির খেয়াল রাখো।রাখবো।আসি। সদর দরজাটা আটকে দে।
আচ্ছা
ইকবাল সাহেব বেরিয়ে গেলো। নিহান সদর দরজা আটকে ঘরে এলো।পাঞ্জাবিটা খুলে চেয়ারের উপর রেখে ফ্রেশ হয়ে নিলো।চেঞ্জ করে বসল ইরার পাশে।ইরার ঘুম ঘুম চোখে তাকালো নিহানের দিকে।অস্পষ্ট কন্ঠে বলল কালো টি-শার্ট আর টাউজারে তোমাকে দারুণ লাগছে নিহান ভাই!
নিহান সবে বেডে বসে হেলান দিয়েছিলো।ইরার কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মত করে বলল তুই ঘুমাস নি?
হু ঘুমিয়েছিলাম তো।তোমায় যে সুন্দর লাগছে তাই দেখতে জেগে গেলাম।
নিহান ইরার কথা শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝছে না।কিছু বলার আগেই আবারও ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় ইরা।
নিহান ইরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে পরম যত্নে।আর মলিন মুখটা দেখছে এক দৃষ্টিতে।এমন সময় ফোন বেজে ওঠে নিহানের।উঠে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে জোবায়ের কল দেখে দ্রুত বারান্দায় চলে যায়।রিসিভ করে বললো হ্যালো বল কিছু জানতে পেরেছিস।ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জোবায়ের বলল ইরার এ অবস্থার পেছনে ওর দুই ফ্রেন্ড দায়ী।আসিফ আশিকের ভাই।আর তুবা ওর গার্লফ্রেন্ড।অনেকদিন ধরে ওরা ইরাকে টার্গেট করে রেখেছে।ইরা বিভিন্ন মাদকের প্রভাবে এরকম হয়ে গেছে। বেশ কশেকদিন ধরে বিভিন্ন নেশা জাতীয় কিছু খায় ও।খাওয়া নো হয় ওকে।আর ব্যবসার সাথেও জড়িত।অনলাইন সেল!
একদমে কথাগুলো বলে ফেলে জোবায়ের।নিহানের হাত থেকে ফোনটা পরে যায়।ওপাশ থেকে জোবায়ের হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে। সাড়া পাচ্ছে না।
টুপ করে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে নিহানের দু চোখ বেয়ে।নিজের কান কে যেন সে বিশ্বাস ই করতে পারছে না।কি শুনলো এসব।মাথাটা ভারী হয়ে আসছে তার!অস্থিরতা বেড়ে গেছে।তড়িৎ গতিতে ইরার কাছে গেলো।দুহাতে ইরাকে তুলে নিজের বুকে শক্ত করে চেপে ধরল ছোট বাচ্চাদের মত করে।যেন ছাড়লেই পালাবে।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ইরা।হাউমাউ করে ইরাকে জড়িয়ে কেঁদে ওঠে নিহান।কেনো হলো আমাদের সাথেই এমন বল না কেন।আমি ছেলে হয়েও আজ পর্যন্ত এসবের দিকে তাকায় নি পর্যন্ত আর ওরা তোকে… আর বলতে পারলো না নিহান কেঁদে দিলো।পরক্ষণেই বলল ছেলেদের তো কাঁদতে হয় না!আমি কাঁদছি কেন?আমি কাঁদবো না।আমি আমি এই বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখবো তোকে দেখিস।আর কিচ্ছু তোকে বিনষ্ট করতে পারবে না।ইরার মুখ পড়ে থাকা এলোমেলো চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে ইরার মুখে এলোপাথাড়ি চুমু খেতে লাগলো নিহান।একসময় ইরাকে বুকে রেখেই ঘুমিয়ে পড়লো সে।!
.
.
.
.
.
.
সকালে ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ইরা।চোখ কচলে উঠে বসে দেখে পায়ের দিকের পাশে ঘুমোচ্ছে নিহান।কি নিষ্পাপ লাগছে।গায়ে কাথা দিয়ে উঠে ওয়াশ রুমে চলে যায় ইরা।লম্বা শাওয়ার নেয়।এসে বেরিয়ে রীতিমতো শক খায়…নিহান ভাই…!
.
.
.
চলবে_