#স্পর্শ
#পর্ব_১৫
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
তুবাকে কাঁদতে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে ইরার!একটু ও খারাপ লাগছে না..কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল তোর জন্য অনেক কিছু হারিয়েছি…একটা মেয়ে হয়ে কি করে পারলি আরেকটা মেয়ের ক্ষতি করতে..মর এবার..
আসিফের সামনে এসে হাতের চুড়ি গুলো একটা পেছনে নিলো।তারপর ইচ্ছে মত কত গুলো ঘুষি দিলো নাকে।নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছে তবুও থামছে না ইরা..
আরে আরে ইরা থাম তো কি করছিস মরে যাবে বলেই চেঁচিয়ে উঠলো নিহান।সবাই হাসছে কিন্তু ইরা থামছে না..নিহান উঠে গিয়ে ইরার কোমড় জড়িয়ে ধরে দূরে সরিয়ে নিয়ে এলো।
হাত লাগা রক্তটা ধুয়ে দিচ্ছে নিহান।আর ইরা আসিফের দিকে তাকিয়ে বলছে জানেন জোবায়ের ভাইয়া_ ও চশমা পড়ে কানা সেজে আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছে সিমপ্যাথি নিয়ে..!ওই হারামিটার সব দোষ!একদম ভাইটার মত জানোয়ার হয়েছে.. আসিফ ঘাড় কাত করে পড়ে ছিলো..কোনো রকম মুখের ট্যাপটা একটু আলগা করে বলল আমার ভাই নিয়ে কথা বলিস..তোকে তো আমি…
হাতের শার্ট ফোল্ড করতে করতে নিহান এগিয়ে সামনে যেয়ে বলল উহুম উহুম ওকে কিছু করার জন্য তুই আগে জীবিত থাকলে তো..
বয়ান রেকর্ড করে যা করার কর শান্ত আমি আসি রাত হয়ে গেছে অনেক..
শান্ত বলল ওকে তুই যা ইরার খেয়াল রাখিস আমরা এদিকটা সামলে নিচ্ছি..
আচ্ছা দোস্ত
ইরা…একটু জোড়ে ডাকল শান্ত
ইরা ঘাড় ঘুরিয়ে বলল জ্বি ভাইয়া..
ভেজাম মিটিয়ে তোমাদের বাসায় যাবো..ভালো করে রান্না করে রেখো..কব্জি ডুবিয়ে যেন খেতে পারি..
ইরা দাঁত বের করে হেসে বলল আপনার বন্ধু আমার চাইতে ভালো রাঁধে..
সবাই উচ্চ স্বরে হেসে উঠে হাত তালি দিতে দিতে বলক বাহ!বাহ!তাহলে নিহান তুই করে রাখিস বন্ডু
আবার…
হো হো হো ওকে যা!
আসছি..
ইরাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো নিহান!
রিকশা উঠেই মুখ উঁচিয়ে শ্বাস নিচ্ছে.. নিহান আস্তে করে চুলগুলে খুলে দিলো..ইরা নিহানের দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালো..নিহান আলতো করে ইরার কপালে চুমু খায়।আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় ইরা..!
.
.
.
.
.
.
.
বাসায় পৌঁছানোর আগে খাবার নিয়ে ফিরে নিহান।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইরার ফ্রেস হয়ে খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে
চুলগুলো খোলা! ফ্যান ফুল স্প্রীডে ঘুরছে আর তার বাতাসে মৃদু উড়ছে.. হালকা কোঁকড়ানো চুল গুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে..
নিহান মুগ্ধ হয়ে দেখছে ইরাকে।এই দেখার মধ্যে এতটাই মগ্ন ছিলো যে ইরা কখন তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সে টের-ই পায় নি!তুড়ি বাজিয়ে ইরা বলল কি ভাবছেন এত স্যার!সাড়া না পেয়ে একটু জোড়ে বলল_এই নিহান ভাই..
ইরার কথায় ঘোর কাটল নিহানের!ভ্রুযুগল কুঁচকে ইরার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে চেয়ার টেনে বসল..
ইরার হাসিমুখে বসল নিহানের পাশের চেয়ারে..
প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বলল মুখটা হঠাৎ বাংলার পাঁচের মত করলে কেন!
ভাই ভাই আর ভাই!ভাই হই আমি তোর?
ইরা মিটিমিটি হাসছে..
হাসছিস যে বড়..
না আসলে..
আজ বুঝাবো মজা..খাওয়া শেষ কর
ইরাও মুখ ভার করে বলল আমি কি বাড়ির কাজের মেয়ে তুই তুকারি করো যে
এ্যাহ টুই টুকালি কলো যে হাহ তো তোকে তুই বলবো না তো কি আপনি আজ্ঞা করবো?
ইরা একটা কথাও আর বলল না..চুপচাপ বাকি খাওয়াটা শেষ করে নিলো।।
.
.
.
.
.
.
.
খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিহানের থেকে ফোন নিয়ে মায়ের কাছে ফোন দিলো..
হ্যালো মা
হ্যালো
কেমন আছো?
ভালো
কবে আসবে মা?
আমায় দিয়ে তোর কি দরকার?আমি আর ফিরবো না
মা এখনো অভিমান করে আছো?সরি মা..আসলে..
সালমা বেগম ফিল করছেন তার মেয়ের কন্ঠটা কেমনে বদলে গেছে ক্ষনিকেই..
একটু থেমে বলল আর দুদিন পরে আসবো!তোর মামার অবস্থা ভালো না!খালাই তো আমাদের মানুষ করেছে তাই শোক সামলাতে পারছে না..বলেই আবার ও চুপ করে রইলেন তিনি!
আচ্ছা মা সাবধানে থেকো।নিজের খেয়াল রেখো
বাবা?
তোর বাবা ভালো আছে।এখান থেকেই অফিস করে।তা আমার নিহান বাবাটা কেমন আছে রে মা?
ভালোই আছে!ওর কথা জিগ্যেস করবে না তো।
কেন?কি হয়েছে?
তুই তুই করে দেখো না..আমি কি কাজের মেয়ে নাকি বলো তো..আমি তো এখন ওর বউ..কই মিষ্টি করে ডাকবে ইরা ইরাআআ এদিকে শোনো তো
তা না ইরা ইরা এদিকে আয় খেয়ে নে। এটা কর সেটা কর..
সালমা বেগম মিটিমিটি হাসছেন।ফোনের এপারে তা বেশ বুঝতে পারলো ইরা..
মা বলে একটু চেঁচালো!
তোর মামী ডাকছে রাখি বলেই কুট করে ফোন কেটে দিলো সালমা বেগম।আঁচলে মুখ চেপে হাসতে লাগলেন মেয়ের কথায়!
এদিকে ইরা মায়ের কাছেও পাত্তা না পেয়ে রেগে ফায়ার..গাল ফুলিয়ে হন হন করে সোফার ঘর থেকে নিজের ঘরে চলে গেলো!ঠাস করে দরজা আটকে দিলো।
.
.
.
.
.
.
.
খট খট করে দরজার কড়া নাড়ছে নিহান।ইরা শুয়ে পড়েছিলো কাঁথা মুড়ি দিয়ে.. শব্দ পেয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসল.. আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দিলো।
নিহান রাগি রাগি মুখ করে বলল আধ ঘন্টা যাবৎ ডাকছি এরকম মহিষের মত ঘুমাচ্ছিস ক্যান?
ঔষধ না খেয়ে।
ইরা চোখ ডলতে ডলতে বিছানায় বসল।নিহান ঔষধ হাতে এনে গ্লাসে পানি নিয়ে এসে বসল ইরার পাশে।মুখে ঔষধ দিয়ে পানি দিতেই ইরা গিলে শুয়ে পড়লো।
নিহান ও লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো ইরার পাশে।
নীল ড্রীম লাইটের আলোতে খুব মায়াবী লাগছে ইরাকে।নিহান বেশ কিছুক্ষন অপলক তাঁকিয়ে রইলো মুখপানে! ইরার আরেকটু গা ঘেঁষে শুয়ে ওর মাথাটা নিজের বুকে নিলো।
ইরাও বিড়াল ছানার মত গুটিসুটি মেরে নিহানের বুকে শুয়ে রইলো!ঠোঁটের কোণে প্রশান্তি আর জয়ের হাসি ফুটে উঠল নিহানের!
.
.
.
.
.
.
.
সকালে নিহান ঘুম ভেঙে উঠে দেখে জানালার পর্দা সরানো!এখনো ভোর কাটে নি!ইরা পাশে নেই!নিহান আস্তে আস্তে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো! ইরার নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বের হলো ঘর থেকে।
রান্না ঘর পেরিয়ে সামনে এগুতে যেয়েও থেমে গেলো!রান্না ঘরে উঁকি দিতেই বেশ অবাক হলো নিহান।এক নীল রমনী!
গুটিগুটি পায়ে ইরার পেছনে যেয়ে দাঁড়ালো।নীল রংয়ের জামদানী শাড়ি পড়া ইরা!হাতের নীল কাঁচের চুড়ি!এক চুলায় ভাজি আরেক চুলায় রুটি ভাঁজছে!আর কাঁচের চুড়ি গুলো বারবার শব্দ করে জানান দিচ্ছে নতুন বউ রান্না করছে!
চুল গুলো পিঠ ছাড়িয়ে কোমড়ে ঠেকেছে!নিহান আলতো করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল ইরাকে।কাঁধে থুতনি রাখল।ইরা নিহানের উপস্থিতি টের পেয়েছে অনেক আগেই!তবুও শব্দ করে নি! পিছুও ফিরে নি।
গ্যাসের চুলার একটা চাবি অফ করে দিলো ইরা।
নিহানের মাথায় হাত রেখে বলল কি ব্যাপার এত ভোরে ঘুম ভাঙল আমার বরটার!
নিহান আস্তে আস্তে ইরার ঘাড়ে মুখ গুঁজল!
ইরা ছিটকিয়ে সরিয়ে দিয়ে ঠোঁটে দাঁত চেপে বলল সুরসুরি লাগে না বুঝি!
নিহান এবার হাসবে না কি কিছু বলবে ভেবে পাচ্ছে না!রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে দিলো..এত আহাম্মক কেউ হয়?
উফফফ..বিড়বিড় করে এসব বলেই দ্রুত ঘরে চলে গেলো নিহান!
টেবিলে সব নাস্তা দিয়ে নিহানকে ডাকতে গেলো ইরা!ওমনি দেখে নিহান রেডি হয়ে ওর ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে..
কোথাও যাচ্ছো?
হুম
কোথায়?
অফিসে
অফিসে…কিছুটা অবাক হয়ে বলল ইরা!
হুম বুটিকসের.. ভাবছি আজ থেকে অফিসে বসবো!
আজ-ই কিছুটা বিষন্ন স্বরে বলল ইরা!
নাস্তার টেবিলে বসতে বসতে নিহান বলল হুম আজই!
চুপচাপ নাস্তা করে উঠে গেলো নিহান!
যাওয়ার সময় বলল আসছি!
ইরা পিছু ডেকে এগিয়ে গেলো নিহান দিকে।নিহানের পায়ের উপর পা রেখে উঁচু হয়ে কপালে চুমু খেলো সাবধানে যেও!
চোখমুখ শক্ত করে নিহান বলল হুম!
নিহান বেরিয়ে যেতেই ইরা দরজা আটকে আঙুলে শাড়ির আঁচল পেঁচাতে পেঁচাতে ভাবছে তখনকার ব্যবহারে কি রাগ করলো?কিছু না বলেইই চলে গেলো..কিন্তু আমার তো সত্যিই সুরসুরি লাগছিলো ঠোঁট উলটিয়ে একা একাই এসব বলছে ইরা!
অপরদিকে নিহান বারবার ডানহাতে কপাল ছুঁয়ে মিটিমিটি হাসছে!
চলবে_