#স্পর্শ
#পর্ব_১৮
#লেখায়ঃস্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ
এলিনা জামাটা নিয়ে উৎফুল্লের সাথে ইরার কাছে গেলো!ইরা মাথায় শাড়ি দিয়ে ঘোমটা দিয়ে দেখছে নিহান।তারপর প্রায় ৬-৭ টা লাল শাড়ি হাতে দিয়ে বলল ট্রায়াল দিতে।ওদের মধ্যে কথা বার্তা হওয়ায় এলিনা পারলোনা জামাটা দেখাতে।এসে অহনার কাছে গেলো সেও দেখলো না।জিসান জাকির মামা ও দেখলো না।সবাই নিজের জামা কাপড় পছন্দ করতে ব্যস্ত! মন খারাপ করে চলে এলো এলিনা।এক কোণায় একটা চেয়ারে এসে বসে রইলো।
দুপকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে কেউ একজন দেখছিলো তাকে।গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলো এলিনার দিকে।বাহ এলিনা তোমার জামাটা তো দারুণ সুন্দর। তোমার পছন্দ আছে বলতে হবে।
পেছন থেকে বলল শান্ত।
এলিনা শান্তর আপাদমস্তক দেখলো একবার।
আপনি আমার নাম জানেন কি করে?আর আমায় চেনেন?ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল এলিনা।
আমি নিহানের ফ্রেন্ড।ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে বেস্ট ফ্রেন্ড। আর ওরা যখন তোমাকে নিয়ে বলছিলো তখনই নামটা শুনেছি!
কি বললো?
বলল তোমায় বিয়ে দিয়ে দেবে।
কার সাথে? কবে?অনেকটা উত্তেজিত কন্ঠে বলল এলিনা।
কি বিয়ে পাগল মেয়েরে বাবা..
মোটেই না।আমার কখনো বিয়ে হবে না।তাই এরকমভাবে বললাম।
কেন হবে না?
দেখছেন না আমি কত কালো
কালো মেয়েদের বিয়ে হয় না বুঝি।
হয়।মা যখন রাতে আমাকে ফর্সা হওয়ার ক্রিম দেয় তখন বলে কালো মেয়েদের বিয়ে হলে সংসার বেশি দিন টিকে না।স্বামী পর নারীতে আসক্ত হয়।তাই যেন একটু ফর্সা হই।তাই আমি ঠিক করেছি আমি বিয়েই করবো না।একটা চাকরী করবো। সে টাকায় বাকী জীবনটা কাটিয়ে দেবো কারো উপর নির্ভরশীলও হতে হবে না।
শান্ত এলিনার আরেকটু কাছে এগিয়ে বসল।তুমি কি জানো তোমার নাকটা চিকন।আর ভ্রু যুগল সুক্ষ্ম! কালো হয়েছো বলেই তোমার এ সৌন্দর্য টা প্রকাশ পেয়েছে।ফর্সা হলে পেতো না।
এলিনা হা হয়ে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে।সত্যি ই কি আমার নাক ভ্রু সুন্দর?ভাবছে এলিনা।
তোমার কি সন্দেহ আছে?
শান্তর কথায় হকচকিয়ে গেলো এলিনা।মনের কথা বুঝে ফেললো কিভাবে?
কখনো কখনো বোঝা যায়!
আবার…বুঝে ফেললো।
আয়নায় দাঁড়িয়ে আজ নিজেকে টানা দশমিনিট দেখবে!তাহলেই খুঁজে পেয়ে যাবে তোমার সৌন্দর্য! তখন না হয় জানিও আমি ভুল বলেছি নাকি ঠিক!
কিছুটা লজ্জা পেলো এলিনা।
কিছুটা মুচকি হেসে সেখান থেকে সরে পড়লো শান্ত।
এলিনা তাকিয়ে আছে শান্তর যাওয়ার পানে।
.
.
.
.
.
সবার শপিং প্রায় শেষ।আজ শুধু জামা কাপড় কেনা হয়েছে।তাও আবার সব নিহানের টাকায়!নিজের উপার্জনের টাকা!
দুপুরের খাওয়াদাওয়া করে বিকেলে আবার ও শপিং করলো। এবার জুতো কেনার তোড়জোড়!সবাই কেনে নি!যার ইচ্ছে হয়েছে সে-ই কিনেছে।
ইরা নিহান সবর্ক্ষন পাশাপাশি হাঁটছে। কখনো নিহান ইরার হাত ধরে আছে কখনো এটা সেটা দেখাচ্ছে সবার পেছন পেছন হাঁটছে এলিনা।তার হাতে শুধু সেই জামাটা। আর মাথায় শুধু শান্তর বলা কথাগুলো।
এলিনাকে নজরবন্ধী করে রেখেছে শান্ত। মেয়েটাকে ভীষন মনে ধরেছে তার।এক দেখাতেই কারো চোখের মায়ায় পড়ে যাবে কখনো ভাবে নি সে।তার মত একটা গুন্ডা উদ্রান্ত টাইপের ছেলে কোনো মেয়ের প্রেমে পড়ছে ভাবা যায়?
শপিং শেষ করে সবাই গাড়ির কাছে গেলো।অহনা অবন্তি এলিনা এক গাড়ির পেছনের সিটে বসে পড়লো।
নিহান ইরা সামনে বসতে যাবে ওমনি শান্ত বলে উঠলো নিহান বাইকে তোরা যা আমি বরং গাড়িতে যাই।বাইকে ঠান্ডা লাগছে খুব।এলিনার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল।
নিহান খুকখুক করে কেশে উঠলো।তারপর বললো ভালো ভালো..মুচকি হেসে চাবি নিয়ে ইরাকে নিয়ে বাইকে করে চলে গেলো নিহান।
শান্ত ড্রাইভিং সীটে বসে পড়লো। লুকিং গ্লাস বরাবর বসেছে অবন্তি।শান্ত মুখটাকে ত্যাড়া করে লুকিং গ্লাসটা এলিনার দিকে দিলো।এলিনা ওদের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত তাই খেয়াল করে নি।
পাশে বসল জিসান।বাকিরা অন্য গাড়ি করে চলে গেলো।
.
.
.
.
.
সন্ধ্যায় সবাই মিলে বসে আছে ড্রয়িং রুমে।নিহানের জন্যই বিয়ের অনুষ্ঠানটা তাড়াতাড়ি হচ্ছে। সবে এত বড় একটা ঘটনা ঘটল।মানুষকে তো একদিন পরপারে যেতেই হবে।কিন্তু তার জন্য এভাবে সবাইকে অসুস্থ হয়ে যেতে দেখতে পারছিলো না নিহান।তাই একটু আয়োজন। মন ভালো করার।
সবাই মিলে মুড়ি মাখা খাচ্ছে।আজ থেকে নিহানের বন্ধুরাও থাকবে এখানে।আরো কিছু আত্নীয় স্বজনও আসবে।কাল বাদে পরশু হলুদ।
শান্ত ভেবে নিয়েছে আর কেউ থাকুক বা না থাকুক সে এখান থেকে নড়ছে না।
.
.
.
.
.
এলিনা সেই যে বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছে আধ ঘন্টা যাবৎ নিজেকে দেখেই চলেছে।কেনো যেন আজ নিজেকে বড্ড ভালো লাগছে তার নিজের কাছেই।আফসোস করছে একা একাই কেনো যে এতদিন দেখলো না এ সৌন্দর্য। সত্যিই তো সে সুন্দর।সত্যি ই সুন্দর সে।
ঘর থেকে বেরিয়ে এদিকে ওদিকে কাউকে খুঁজছে এলিনা।হঠাৎ কানের কাছে কেউ ফিসফিসিয়ে বলল কাকে খুঁজছো।এলিনা মাথা নুয়িয়ে ফেললো।
বলো কাকে খুঁজছিলে।
কই কাউকে না তো।
বুঝি বুঝি…চলো এলিনা একটু বাগানে যাই
এই রাতে?
সবে সাড়ে সাতটা..তাছাড়া আমি আছি তো।
কেউ যদি দেখে কিছু মনে করতে পারে।
কেউ কিচ্ছু মনে করবে না।চলো তো।বলেই এলিনার হাতটা টান দিয়ে বাড়ির বাহিরে চলে গেলো।
পাশাপাশি বসে আছে এলিনা-শান্ত।কোন ক্লাসে?
অর্নাস ফাস্ট ইয়ার
ইরা ভাবীর বড় তুমি?
হ্যা তিনদিনের বড় আমি!
মাত্র তিনদিন
হু
আচ্ছা আমায় তোমার কেমন লাগে?
কেমন লাগবে
মানে দেখতে শুনতে কেমন?
দেখতে ভালোই।
কেমন ভালো?
হ্যান্ডসাম তবে কথা বার্তাগুলো বেশি ভালো লাগে আমার।তাই মনে হয় ভালো।
আমি কিন্তু সিগারেট খাই।
কেনো ছ্যাকা খেয়েছেন?
ছ্যাকা খেলেই বুঝি মানুষ সিগারেট খায়?
তাহলে কি আপনার বাবা মার বিচ্ছেদ ঘটেছে?
কি বল এসব তুমি।তা কেনো হবে আমি আমার বোন মা বাবা। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।এখন আমি মা বাবা। হ্যাপি ফ্যামিলি আমাদের
তাহলে আপনার কি বউ মারা গেছে?
এই মেয়ে তোমার কি মাথা গেছে?
তাহলে তো আমি সিগারেট খাওয়ার কারণ দেখছি না..
ওকে ছেড়ে দিবো।
গুড বয়
আমার কাছে বিয়ে বসবে এলিনা।
হোয়াট!আপনার কি তার সব ছিড়ে গেছে মাথা থেকে?
আমি কি স্বামী হিসেবে খুব খারাপ হবো?আমি তো দেখতে ভালো তুমিই বললে আর আমি বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করি।নিহানের সাথে শেয়ারে মাছের আরদ ও আছে নিজের তাহলে?
এসব হয় না।আমাদের পরিচয় ই একদিনের।
এখন যদি তোমায় একদম অপরিচিত লোকের সাথে বিয়ে ঠিক করে তুমি কি রাজি হতে না?হতে। আর একরাতেই তার বউয়ের অধিকার সে নিয়ে নিতো।চেনা জানার আগেই সংসার হয়ে যেতো।তাহলে আপত্তি কোথায়?চেনা জানা পরে হয়ে নিবে…আমার তোমাকে চাই ব্যস
এসব কিছুক্ষণের ক্ষীণ আবেগ…এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন!আপনার সাথে আমার কোনভাবেই যায় না!
শান্ত উঠে পড়লো এলিনার পাশ থেকে।ওকে রেখেই হাঁটা ধরল।এলিনা ঠাঁয় বসে আছে।শান্ত আবার এলো এলিনার কাছে।চলো ঘরে চলো।
এলিনা উঠে দাঁড়ালো।
.
.
.
.
.
নিহানের কোলে ইরা।বসে বসে আমসত্ত্ব খাচ্ছে।আর নিহান ইরার পায়ের নখ কেটে দিচ্ছে।
এমন সময় শান্ত দরজায় নক করে বলল আসবো
আয়..
শান্ত কে ঘরে ডুকতে দেখে ইরা কোল থেকে নামতে চাইলো।নিহান একটু ও নামতে দিলো না।ঠায় বসে নক কাটছে।ইরা মাথা নুয়িয়ে রাখলো লজ্জায়। শান্ত বসল বিছানার এক কোনে।নিহান তোদের দুজনকেই খুঁজছিলাম।
বল কেনো।ইরার পায়ের নখ কাটায় মনযোগ দিয়ে বলল নিহান।
আমি বিয়ে করব!তোদের সাথেই…
নিহান একটু অবাক হলো বটে তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।তবে ইরা হা হলো তো হলোই…মুখ আর বন্ধ হচ্ছে না তার…
চলবে_