একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_১০

0
6886

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_১০
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
প্রাইভেটে তানভীর জিজ্জাসা করে – দুষ্টু পুতুল কি পড়া শিখেছে ?
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে না করে ।
– কেন শিখোনি ? রেগুলার তুমি পড়া শিখে আসবেনা , মাথায় উল্টাপাল্টা চিন্তা ভাবনা নিয়ে ঘুরবে, পড়া ধরলে পড়বেনা এগুলো কি ? এভাবে চলতে থাকলে আমিতো তোমাকে পড়াবোনা । সাত নাম্বার অংক টা করো । hurry up .
লাবিবা অংক কষতে বসে মাথা চুলকায় শুধু । কাল পড়িয়েছে কিন্তু কিছুইতো বুঝেনি । একদম মনোযোগী ছিলো না । এখন কি করবে ভেবে পায়না ।
তানভীর – finish ?
লাবিবা – no sir .
তানভীর – you cant? মনোযোগ কোথায় থাকে ?
লাবিবা চুপ ।
– I ask you something.
লাবিবা চুপ ।
টেবিলে হাতের তালু দিয়ে বাড়ি দিয়ে বলে – answer me.
নুপুর সহ লাবিবা চমকে উঠে । তানভীরের রাগ সম্পর্কে লাবিবার বেশ ভালোই জানা আছে । কলিজা কাপে ওর । তানভীরের দিকে ভীরু চোখে তাকিয়ে থাকে । লাল চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে চোখ পিট পিট করে । ঠোট দিয়ে ঠোট কামড়ে ধরে ভয়ে ।
তানভীর – কুচকে আছো কেন ? ভয় পাচ্ছ ? তোমার ব্যপারে অনেক কথাই শুনি । অনেক famouse তুমি । রাতের বেলা জিন ধরো তুমি । এসব কেন ? কি ধরনের পাগলামি এসব ? বড় হচ্ছো তো । তাহলে বুদ্দ্বি কেন বাড়ছেনা আম্মুনিকা হরলিক্স খাওয়াকা বাচ্চিকা ? ?
লাবিবা থর থর করে কাপতে থাকে । তানভীর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে – দুষ্টু পুতুল , সামনে তোমার পরিক্ষা । to be serious yarrr .. জিন কেন ধরতে হয় তোমার ?
লাবিবা ভয়ে ভয়ে ওর ইচ্ছার কথা আর সপ্নের কথা বলে । তানভীর যেন পাগল হয়ে যাবে এমন অবস্থা । এরোকম অদ্ভুত ইচ্ছা কার থাকে ? দুষ্টু পুতুল বলেই মনে হয় সম্ভব । গম্ভীর ভাবে বলে
– শোন ,কাল থেকে যেনো পড়া না মিস হয় । কয়েকদিন থেকে তোমার এসব অযুহাত দেখে যাচ্ছি । আর দেখবোনা । কাল না পারলে তুমাকে punished করবো আমি ।
may i come in ? দরজার দিকে তাকায় তানভীর । চোখ আটকে যায় দরজায় দাড়ানো মেয়েটির দিকে । নুপুর আপু বলে উঠে যায় মেয়েটির দিকে । তারমানে এই আখি । নুপুরের বোন । কিন্তু এতো সুন্দরী ..নুপুর ও সুন্দরী কিন্তু আখির সৌন্দর্যের তুলনায় কিছুই নয় । সাদা থ্রি পিচ পড়া আখি সাদা শরীরে ..অপরুপ মুখের গঠন অনেক সুন্দর লম্বা চুল মিলিয়ে হুর পরীর ন্যায় । তানভীরের চোখ সরছে না । খুতিয়ে খুতিয়ে আখিকে দেখতে থাকে । কেমন যেনো চেনা চেনা লাগে তার কাছে । নুপুরের সাথে কিছুটা গড়নে মিল আছে । তাই হয়তো চেনা লাগছে । চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো
– yes , come in .
আখি রুমে ঢুকে বললো – কেমন আছেন তানভীর ভাইয়া? আমি পড়তে চেয়েছিলাম আমাকে কেন নিতে চাননি ?
-আলহামদুলিল্লাহ । আমি প্রাইভেট পড়াই না । লাবিবা আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও হয় । আর ওদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো তাই আমি পড়াতে চেয়েছি । তোমার বোন ওর বান্ধুবী তাই এসেছে । এখন তোমাকে কিভাবে নেই বলোতো ? After all , i am not a tutor . অনান্য স্যারের কাছে পড়তে পারোতো ।
– স্যার পড়াতে চাইলেও পারে না । student রা কোন batch এ আমাকে allow করে না । আমার জন্য নাকি তাদের স্যার পড়ায় না । শুধু আমাকেই পড়ায় ।
তানভীর বুঝতে পারে । এরোকম একজন চোখ ধাধানো সুন্দরী সামনে থাকলে আর কারো যে পড়া হবে না তা ভালো করেই জানে । তার নিজের ই চোখ বার বার চলে যাচ্ছে । চাইলেও আটকাতে পারছে না । চোখ বন্ধ করে নেয় তানভীর । আশ্চর্য জনক ভাবে লাবিবার নিষ্পাপ মুখটা ভেসে উঠে । লাবিবার কথা মনে পড়ে যায় । এতোক্ষন অনেক বকাঝকা করেছে । পিছনে তাকিয়ে দেখে জড়োসড়ো হয়ে চুপ চাপ বসে আছে । নুপুরকে বলে – তোমার ছুটি । আপুর সাথে চলে যাও। নুপুর ব্যাগ নিয়ে চলে যেতে নিলে আখি বলে
– তানভীর ভাইয়া ..পড়াবেন না আমায় ?
– না আপু পড়াবোনা । আমি কোন tutor নই।
আখি নুপুর চলে যায় । লাবিবা বই গোছাতে থাকে । ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে পা বাড়ায় চলে যাবার জন্য । তানভীর ডাকে
– দুষ্টু পুতুল ..come to me .
লাবিবা এগিয়ে এসে সামনে দাড়ায় । তানভীর নিচু হয়ে লাবিবার মেঘে ঢাকা মুখটা দেখে । সামনে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে কানের পিছু গুজে চিবুক ধরে উপরে তুলে মুখটা । দু গালে দু হাত রেখে চোখে চোখ রাখে । লাবিবা উৎসুক চোখে তানভীরের দিক তাকিয়ে । মনে মনে ভাবছে স্যার কেন তার গাল ছুল ? একটু আগে বকলো এখন কেন আদর করছে ? অদ্ভুত একটা ডলফিন জিন । ইসস.আবারো জিনের কথা ভাবছি আমি । তুই মানুষ হলিনা লাবিবা । স্যার তো অনেক সুন্দর । জিন রা কি স্যারের মতো সুন্দর ?নাকি আরো বেশি সুন্দর ?
তানভীর – Fairy princess লাবিবা তানহা এলিজা , আপনি devil lover কবে হলেন ?
হকচকিয়ে উঠে লাবিবা । খাতায় Fairy+Devil লেখা ছিল ডিজাইন করে । ঐটা দেখে ফেলেছে নাকি ?
তানভীর ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে থাকে । লাবিবা কি বলবে বুঝতে পারে না । এমনিতেই মুখটা তানভীরের দু হাতের মাঝে । নিচের দিকে তাকতেও পারছে না । ঠোটে ঠোট কামড়াতে থাকে ।
তানভীর – Fairy .. Prince না চেয়ে devil কেন চাইলো ? জানতে পারিকি ? Devil এর মাঝে কি এমন পেল সে যে এই বয়সেই তার মনে devil উকি ঝুকি দেয়? নির্ভয়ে বলতে পারো । I promise you কাউকে বলবোনা ।
– আমিতো human fairy তাই human good devil এর কথা বলেছি । human good devil দের আমার অনেক ভালো লাগে ।
– কেন ?
– আমার আব্বু একটা devil আম্মুনিকে বকে আমাকে বকে মারে ..but he loves us onkmuch . আমার জেঠু devil .. সব সময় বড় আম্মুর সাথে দাতে কিরমির করে কথা বলে , কিন্তূ বড় আম্মু অসুস্থ হলেই কাদে আর বলে সখিনা আমি তোমাকে অনেক ভালুপাসি তুমি তারাতারি আমার বুকে সুস্হ হয়ে ফিরে আসো । আমার এত্তোগুলা ভালো লাগে । আমার বিনাপুকে কয়েকদিন পর পর ই ভাইয়া বকে । devil একটা । আপু রাগ করে বাসায় চলে আসে । কিন্তু ভাইয়া একটা রাত ও আপু ছাড়া থাকে না । রাত তিনটা বাজলেও চলে আসে । বিনাপু আর জেমি আমাদের বাসায় থাকলে প্রতিদিন ই দরজা খুলে রাখা হয় । সবাই জানে ভাইয়া আসবে । এরা হচ্ছে good devil. যাদের এত্তোগুলা ভালো লাগে আমার । good devilরা অনেক ভালুপাসে অনেক care করে । আপনিও devil. অনেক বকেন কিন্তু আপনি সুন্দর করে পড়া বোঝান । মানুষের উপকার করেন । good devil . আর যারা বলে তারা ভালোমানুষ তারা আসলে ভালো না । তাদের মনে অনেক কালা কুত্তার গু স্টোকে থাকে । I love good devils. আর devil familyr সাথে devil রাই add হয় ।
তানভীর মন্ত্রমুগ্ধের মতো লাবিবার বর্ণনা শুনে । তার ও মনে হয় লাবিবা ঠিক কথা বলেছে । যারা একটু অপরাধ করে তাদের ই আমরা শয়তান বলি । সেই হিসেবে লাবিবা ঠিক । লাবিবার অল্প পরিসরে নিজের পরিবারকে দেখে এটা মনে হওয়ারই কথা । লাবিবার জ্ঞান বুদ্ধি পরিবেশের দিক থেকে লাবিবার কথাই ঠিক ।
তানভীর – I wish তোমার ড্রীম ফুলফিল হোক । তোমার ডেবিল এসে তোমাকে কালো গোলাপের সুভাসে ভরিয়ে দিক । আর শোন ..ডেবিলরা আসার নির্দিষ্ট একটা সময় লাগে । তুমি আর বাগানে গিয়ে ওয়েট করোনা । ডেবিল যখন আসবে দেখবে তুমি যেখানেই থাকোনা কেন তোমার সামনে নিজেকে হাজির করবে । এখন বাসায় যাও । কাল পড়া শিখে এসো ।
লাবিবা বাইরে বেড়িয়ে আসে । একবার গোলাপ গুলোর দিকে তাকায় । সে ভেবে পায়না কেন এতো টানে তাকে গোলাপ গুলো ।

বাড়িতে আসতেই অনেক আত্মীয় স্বজন কে দেখে । কয়েকজন বিনার নানু বাড়ির লোক । বিনার শ্বশুর শাশুড়ীও আছে । বাড়িটাও চকচকে করা হচ্ছে লোক লাগিয়ে । ব্যপার টা বুঝতে পারে না ‌। ভিতরে গিয়েই একলাফ ..বিনার মামাতো ভাইবোন লাবিবর বয়সী । ওদের সাথে খুব ভাব । ওদের কাছ থেকে জানতে পারে কাল অনুষ্টান হবে ছোট করে । লাবিবা আবার খালামনি হতে যাচ্ছে। আনন্দ যেন ধরে না আর । পুচকু আসবে বাড়িতে । পুচকুর সাথে খেলবে ভাবতেই লাফালাফি শুরু করেছে । রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া করার পর লাবিবা বিনার রুমে আসে
– বিনাপু , সবাই জানলো আমি কেন জানলাম না ?
– কেন তোকে বলেনি ‌কেউ ?
– নাতো ।
– ওও সরি সরি ..আমি ভেবেছিলাম তুই জানিস তাই বলিনি । সরি বনু । ( বিনা ইচ্ছা করে বলেনি । কারন লাবিবাকে বললে সারাবাড়ি মাথায় করবে ও । সবাই জানাজানি হয়ে যাবে । চার মাস হওয়ার আগে বাইরের কাউকে জানানো উচিৎ না । এতে বাবু নষ্ট হতে পারে । গ্ৰআমের অশিক্ষিত মানুষদের মনে অনেক বুদ্ধি কুবুদ্ধি ঘুরে । হিংসার বর্শবতী হয়ে কু নজর দিতে পারে যা কেউ জানবেই না । সাবিনারও তিনটি বাচ্চা নষ্ট হয়েছে তিন মাস হওয়ার আগেই । তাই বিনার ব্যপারটা চার মাস হওয়ার আগে কাউকে জানাতে দেয় নি । বড় বাড়ির বউয়ের বাচ্চা হবে তাই ওনারা অনুষ্টান করবেন । জেমির সময় বিনার শশ্বুড় বাড়ি অনুষ্টান হলেও এবার বেলালের মিনতিতে এই বাড়িতে অনুষ্টান করা হয়েছে ‌। )
লাবিবা কিছু না বলে উঠে চলে আসে । রুমে এসে দেখে সাবিনা আলমারিতে কি যেন রাখছে । লাবিবা এসে দাড়াতেই বলে – দেখতো এটা পড়ে হয় কিনা ?
লাবিবার হাতে প্যাকেট দেয় । প্যাকেট থেকে জামা বের করে লাবিবা হা হয়ে যায় । মেজেন্টা কালার খুব গর্জিয়াস একটা বার্বি গাউন ??। তারাতারি করে চেঞ্জ করে । একদম ফিট । আয়নার সামনে দাড়িয়ে আরো হা । সাবিনা থুতনিতে চাপ দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয় ।
সাবিনা – খুল এবার । কাল পড়বি । বাইরে থেকে ঘুরে আয় একবার।
লাবিবা বাইরে এসে দেখে বড় লাইট ছোট লাইট ফেইড়ি লাইটে লাল নীল হলুদ সবুজ সাদা হয়ে আছে পুরো বাড়ি । অসম্ভব সুন্দর লাগছে । লাবিবা থ বসে পড়ে দু গালে হাত দিয়ে বলে
– আলো ফুল?? I love it onkmuch ????।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে বাড়ি ভর্তি লোকজন । বিনার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন চলে আসছে সবাই । এলাকার গন্য মান্য ব্যক্তিরা , টিচার সার্কেলের সবাই ।সকালে খাবারের জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়েছে লোকজন দের । সকাল সকাল অনুষ্টানের ভেজাল সাড়তে চান ইসমাইল বেলাল । তাড়াতাড়ি জামা পড়ে সাজতে চলে যায় বিনার কাছে । মুক্তা বিনার পাশে বসা
সেইযে সকালে এসে বসেছে আর উঠার নাম নেই । বিনাকে যেন পাশে না পেলে সে পাগল হয়ে যাবে । একটা হাত ও মুঠিতে ধরে আছে । লাবিবা সাজতে বসলে বিনা হাত ছাড়াতে নিলে হাত শক্ত করে ধরে মুক্তা । বিনা রাগী চোখ করে তাকিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয় । লাবিবা বলেই ফেলে
– ভাইয়া তুমার কি সকাল থেকে একবারো হিসু পটি পায়নি ?
মুক্তা কেশে উঠে ।
বিনা – চুপ কর তো। ওকে বলে লাভ নেই ।
লাবিবাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় । চুলগুলো পেছনে উপূড় করে খোপা করে দেয় । মুক্তা বিনা হা করে দেখে । মুক্তা বলে – শোন এদিক ওদিক কোথাও যাবিনা । তোর আপুর সাথে বসে থাক নয়তো আমার সাথে থাক । বলা তো যায়না কে কোথা থেকে এসে নজর দিয়ে তুলে নিয়ে চলে যায় ।
‌লাবিবা – আমাকে আবার কে তুলবে ?
মুক্তা – কথা না বলে যা বলছি তাই শোন ।
লাবিবা – আচ্ছা আমি সবাইকে দেখিয়ে আসি বলেই জামা তুলে দৌড় ।
ইসমাইলকে খুজতে খুজতে পায় রাস্তার ধারে । অনেক গুলো গাড়ি । এগিয়ে এসে ইসমাইলকে ফিরোজ খানের সাথে দেখে বুঝতে পারে এমপির দল এসেছে । উকি ঝুকি মেরে দেখার চেষ্টা করে তানভীর এসেছে কিনা । কিন্তু না পেলো না । দৌড়ে ইসমাইলের কাছে গিয়ে ঘুরে ঘুরে বলে – আব্বু ..এইযে দেখো ।
ইসমাইল মেয়েকে একহাতে ধরে দাড় করায় বলে
– হে হে আমার পুতুল কন্যা। যাও ঐদিকে আমি এখানে কথা বলছি ।
ফিরোজ লাবিবার হাত ধরে এগিয়ে এনে বলে – দেখি দেখি .. একদম বারবি ডল লাগছে লাবি মা টাকে । অনেক সুন্দর লাগছে ।
পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে এক হাজার টাকার নোট লাবিবার হাতে ধরিয়ে দেয় । ইসমাইল আপত্তি করতে গেলে ফিরোজ থামিয়ে দেয় । লাবিবা খুশিতে লাফাতে লাফাতে বাড়ির ভিতর চলে আসে ।

To be continue ____

®লাবিবা____?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here