একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_১৩
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
ইসমাইলের ডাকে সাবিনা চলে যায় ।ইসমাইল বলে মেহমান আসছে খাবার রেডি না করে সময় নষ্ট করছো কেন ? সাবিনা নুপুরকে বলে আয়তো মা তারাতাড়ি আমাকে হেল্প করো । লাবিবা গাল ফুলিয়ে বসে । একেতো ওগি দেখতে পারছিনা তার উপর ডলফিনের সামনে একা রেখে আম্মুনি নুপুকে নিয়ে চলে গেলো । খুব রাগ হচ্ছে এখন আম্মুনির উপর । কেউ ভালুপাসে না ?।
তানভীর লাবিবার সামনে এসে দাড়ালো। কিছুক্ষন গাল ফুলানো দুষ্টু পুতুলকে দেখে নিলো । বিছানার উপর থেকে দুটো টেডি বিয়ার সরিয়ে বসলো । ফোনটা সামনে রেখে বললো – তোমার ফোন ফেলে চলে এসছিলে । নাও ।
লাবিবা খুশি হয়ে মাই বেবি বলে নিতে গিয়ে থেমে যায় । ফুলা মুখে তানভীরের দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তানভীর লাবিবার দিকে হেলে লাল লাল ফুলো গাল গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে । ছোট ছোট চুল গুলো গালের উপর ছেয়ে আছে যা আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে । ঠোটের নিচে তিলটা আরো সুন্দর । তানভীর গালে আঙুলে ঠুস দিতেই লাবিবার ফুলানো বেলুন গাল পামচার হয়ে মুখ হা হয়ে যায় । যা দেখে তানভীর মুচকি হেসে বলে – টমেটো কত করে কিলো: গো ?
– হুস হুস টমেটো মানুষ খায় নাকি ? yackk…?
– নাতো human খায় । লাল লাল টমেটো দেখে আমারতো খুব খেতে লোভ হচ্ছে । বেচবে নাকি?
– আমাদের বাগানে তো টমেটো নেই । কোথায় দেখলেন?
– তোমার বাগানেরটা চেয়েছি ।
লাবিবা অবাক হয়ে তাকিয়ে চোখ পিট পিট করে । তানভীরের বাকা ঠোটে দুষ্টুমি ভরা হাসি ফুটে উঠে । যার আদি অন্ত বোকা পুতুলের কিছুতেই গম্য হয়ে উঠে না । তানভীর প্যাকেট টা লাবিবার সামনে রেখে বলে এগুলো সব তোমার ।
– এতে কি আছে ?
– দেখো ।
– আমি ধরবো না যদি হাতে ব্যথা পাই ।
তানভীর প্যাকেট খুলে অনেকগুলো চকলেট আর দুটো হরলিক্সের বোয়াম আর কয়েকটা চিপস বের করলো । ফ্রুটস গুলো নুপুর নিয়ে গেছে । লাবিবা মিস্টি হাসি দিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে আবার গাল ফুলালো । তানভীর চকলেট গুলো লাবিবার কোলে দিয়ে বললো – সরি এক্সেপ্ট করুন রানী এলিজাবেথ । আপনার প্রজা আপনার দ্বারপ্রান্তে ক্ষমার হাত তুলে দাড়িয়েছে ।
লাবিবা মুখ স্বাভাবীক করে বলে – মেরেছে আবার আদর করতে এসেছে । চকলেট ঘোস দিতে এসেছে । তানভীর- সরি । আর মারবো না । তবে পড়া না পেলে ব্যথা দিবো ।
– আমিতো আর পড়তেই যাবো না ।
– ডেইলি চকলেট গুলো তাহলে নুপুর একাই খাবে ।
লাবিবা কেদে ফেললো । তানভীর তো অবাক । কোন কারন ছাড়াই একটা মানুষ কিভাবে কাদে ?
লাবিবা- আমি আর পড়তে যাবো না । চকলেটের লোভ দেখিয়ে লাভ নেই । আমার তো হাত নষ্ট হয়ে গেছে আমি খাব কিভাবে ? হরলিক্স গুলো চাটবো কিভাবে ???
তানভীর আরো অবাক ।চকলেট বের করে লাবিবার মুখের সামনে ধরে । লাবিবা কামড় বসায় । একটু খেয়ে বলে – yamyyy??। তানভীর চোখ কুচকে বলে – by any chance ,তুমি কি হরলিক্স চেটে চেটে খাও ?
– হ্যা তো । চেটে চেটেই তো খায় । আম্মুনি বোঝে না । এক গাদা দুধের ভিতর এক চিমটি হরলিক্স দিয়ে বলে খাইতে । ঐভাবে কি মানুষ খায় ?
– এর জন্যই বলি আম্মুনিকা হরলিক্স খাওয়াকা বাচ্চিকা এমন খোলা মাথা কিভাবে ? বেকুব একটা গর্দভ ?।
– আম্মুনি…?
– চুপ থাক । হাত তেমন কিছুই হয় নি । ঠিক হয়ে যাবে । দেখি ।
– না….
তানভীর ধরতে নিলেই লাবিবা দাড়িয়ে খাটের উপর লাফ দিয়ে এই মাথা থেকে ঐ মাথা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে । তানভীর কৌশলে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে । এক হাতে ব্যন্ডেজ খুলতে থাকে । প্যাচ কম দেওয়ার জন্য সহজেই খুলতে পারে । লাবিবা অন্যদিকে ফিরে না না বলে চিল্লাতে থাকে । দুটো হাতের ব্যন্ডেজ খুলে হাত দুটো ভালো করে দেখে । এখনো লাল হয়ে আছে দেখে তানভীরের খুব খারাপ লাগছে । এমনটা সে কখনোই করতে চায়নি । দেখতে দেখতে হাতে ঠোট লাগায় । ভেজা স্পর্শে হাতের দিক তাকায় লাবিবা । কোমল নরম হাত দুটোর লাগ দাগ গুলোর উপরে তানভীর মদু ছোয়ায় অসংখ্য চুমু একে দেয় । তারপর পকেট থেকে ছোট্ট একটা মলম বের করে পুরো হাতে লাগিয়ে দেয় । আবার মলম পকেটে ডুকিয়ে রেখে দিয়ে লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে । পলকের উপর পলক ফেলছে । তানভীর গাল দুটো টেনে দিয়ে বলে
– you know what ?? আদরের মানুষদের থেকে আদর দিয়েই কিছু আদায় করতে হয় । আর soft মানুষদের সাথে always softly behaviour করতে হয় । আর যারা ভালুপাসার মতো তাদের অনেকগুলা ভালুপাসতে হয় । বুঝলে ??
লাবিবা হা করে মাথা ঝাকায় । বোঝায় সব বুঝেছে । কিন্তু আসলে কিছুই বুঝেনি সে । না বুঝেই মাথা ঝাকানো তার একটা স্বভাবের মধ্যে পড়ে যা তানভীরের অজানা ।
তানভীর – তারাতাড়ি সুস্থ হও । আঙুলে ধরিয়ে ধরিয়ে সব পড়া শিখিয়ে দিবো । জে এস সি তে গোল্ডেন চাই চাই ।
নুপুর এসে বলে স্যার চলুন জানু চল লাঞ্চ করবি । ইসমাইল ও আসে । ইসমাইল তানভীর কে নিয়ে চলে যায় । ডাইনিং এ বসতেই লাবিবা চেচিয়ে উঠে ।
– স্যার স্যার জীবানু দিয়ে হাত ধুয়ে আসুন আগে । ব্যকটেরিয়া গুলো গোল্লাছুট খেলতেছে ।আসুন আসুন ।
তানভীর লাবিবার সাথে বেসিনে যায় । লাবিবা হ্যান্ড ওয়াস দেখিয়ে বলে – স্যার হাত ধুন জীবানু দিয়ে ।
তানভীর – এইটা হ্যান্ডওয়াস দুষ্টু পুতুল জীবানু নয় ।
– ঐতো পাশাপাশি বাড়ি ওদের । একি হলো।?
তানভীর এসে বসলে ইসমাইল, বেলাল ,লাবিবা নুপুর ও বসে । সাবিনা সবার প্লেটে খাবার দেয় । তারপর লাবিবাকে তুলে খাওয়াতে থাকে । লাবিবা নুপুরের পায়ে পা দিয়ে ইশারা করে । নুপুর টমেটোর সালাদের প্লেট নিয়ে তানভীরের প্লেটে ঢেলে দেয় । তানভীর সহ সবাই অবাক এমন কাজে । শুধু লাবিবা মিটি মিটি হাসছে । নুপুর ও অবাক লাবিবা কেন বললো টমেটো দিতে? দেওয়ার পর তার চিন্তার ঝুলি খুলেছে ।
ইসমাইল – নুপুর এটা কি করলে ?
লাবিবা- আব্বু স্যার আসছে থেকেই বলছে আমি টমেটো খাব টমেটো খাব । তাই স্যারের ফেভারিট টমেটো দিলাম । স্যার আপনি খান ।
তানভীর মনে মনে -??
লাবিবা-??
সাবিনা লাবিবাকে ধমক দিয়ে প্লেট সরিয়ে আবার নতুন প্লেটে পোলাও দেয় ।
খাওয়া শেষে তানভীর চলে আসে । নুপুর সেখানেই থাকে লাবিবার সাথে ।
বাসায় আসতেই সোহানা বলে – কোথায় ছিলি এতোক্ষন তুই ? ফোন ধরছিস না । রাজীব সেই কখন এসে বসে আছে ।
তানভীর উপরে চলে আসে । রাজীব শুয়ে ছিলো । তানভীর পাশে এসে বসতেই রাজীব উঠে বসে ।
তানভীর – কখন এসেছিস ? ফ্রেশ হয়েছিস? লাঞ্চ করেছিস? আসছিস বললেই তো আমি আর বাইরে যেতাম না ।
রাজীব- সবি করেছি । ফোনে চার্জ ছিলো না । এখন চল ।
– কোথায় ?
– আখির বাসায় ।
– গিয়ে কি করবি ?
– তোর পরিচয়ে যাবো । আখির সাথে বোঝাপড়া আছে ।
– ওর আব্বু জানলে গন্ডগোল হয়ে যাবে ।
– গন্ডগোল করতেই তো এলাম ।
– মানে ?
রাজীব বাকা হাসি দেয় ।
– তুই কি বিয়ে করবি আখিকে ?
– হুম। অনেক ভেবে দেখলাম আখিকে ছাড়া আমার পক্ষে কিছু সম্ভব নয় । এই বয়সে উড়বেই । পাখা দুটো ছেটে দিলেই উড়া শেষ । নিজের কাছে রাখবো । ওর বাবা মা রাজী হবে আমি সিউর । প্রবলেম একটাই । মম ডেড মেনে নিবে তো ?
– আরে ব্যপার না । পুত্র বধূর মুখ দেখলেই সব ওকে ।
রাজীব তানভীর দুজনেই হেসে ফেলে । হাসি থামিয়ে রাজিব বলে – সত্যি বলছি দোস্ত। মারাত্মক সুন্দরী । আমার ওকে লাগবেই ।
তানভীর – রেডি হ । বের হই।
নুপুরের বাসায় আসতেই আখি দরজা খুলে দেয় । নুপুরকে সাথে নিয়ে এসেছে তানভীর লাবিবার বাসা থেকে । তানভীরকে দেখে আখি অবাক ও হয় আবার লজ্জাও পায় । দৌড়ে ভিতরে গিয়ে আনিসকে বলে – আব্বু এমপির ছেলে তানভীর এসেছে । আনিস সাথে সাথে নুপুরের মা রেনু কে ডাক দেয় । এগিয়ে এসে রিসিভ করে এদের । বসতে বলে কিচেনে চলে যায় ।রেনু ও এসে ভালো মন্দ জিজ্জাসা করে । আখি তখনি রুমে চলে এসেছিলো । ওড়নাটা ঠিক করে এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো আচড়ে ঠোটে হালকা গোলাপী লিপলজ দিয়ে পারফেক্ট বলে ড্রয়িংরুমে আসে । তানভীরের পাশে রাজীব কে দেখে দু পা পিছিয়ে যায় । ভয়ে মুখ শুকিয়ে যায় । হাত পা কাপতে থাকে । বার বার মাথায় একটা কথাই আসতে থাকে তানভীর সব বলে দিয়েছে রাজিব কে তাই হয়তো রাজীব চলে এসেছে। এখন যদি আব্বুকে সব বলে দেয় তাহলে আমার কি হবে ? আব্বু কিছুতেই আমাকে আস্ত রাখবেনা?।
রাজিব এক পলকে আখিকে দেখে যাচ্ছে । ভিতু চেহারায় পা কাপায় যতটুকু doubt ছিলো সম্পূর্ণ clear হয়ে গেছে । আনিস আখিকে দেখে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে রাজীব বলে – আংকেল আমরা চিনি । নুপুরের বোন তো । আগেই পরিচিতো আমরা ।
নুপুর ট্রেতে করে নাস্তা আনে । আখির আত্মার মধ্যে যেন পানি নেই । আনিস ভেতরে যেতে বলার সাথে সাথে সেখান থেকে চলে আসে রুমে । কান্নাও যেন আসছেনা মুখ দিয়ে এমন অবস্থা আখির । দরজার আড়ালে দাড়িয়ে কথা শুনতে থাকে ।
তানভীর একটা বিস্কিট মুখে নিয়ে খেতে খেতে বলে আংকেল আন্টি আপনাদের সাথে আমাদের কিছু কথা আছে । নুপুর তুমি ভেতরে যাও ।
তারপর তানভীর রাজিব দুজনে সমস্তটা বলে ।
আনিস রেনু মাথা নিচু করে বসে আছে । বড় আদরের দুই মেয়ে । এরকম খারাপ হয়ে গেছে মেয়ে যা তার ধারনার বাইরে । সামনের দুজনের সামনে তাকাতে পারছেনা । মাথা নিচু হয়ে আছে ।
তানভীর – আংকেল এতো কিছু জেনেও রাজীব চায় আখিকে বিয়ে করতে । টিনেজার রা ভুল করলে সেটা শুদ্ধ্যে নেওয়ার জন্য বাবা মা দের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় । যদিও আখির বয়স হয়নি সেহেতু টাকার জোরেই কাজটা করতে চাচ্ছি ।
রেনু- রাজীব তোমার ফেমেলি রাজী হবে তো ?
রাজীব – সেটা আমার উপর ছাড়ুন আম্মু । আমি কাল ই আখিকে বিয়ে করতে চাই । ঘরোয়া ভাবেই করুন আমার কোন অসুবিধা নেই । মেয়ে না বালিকা জানাজানি হলে সমস্যা হবে । বিয়ে হোওয়ার পর কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।
আনিস আখিকে ডাকে । আখি গুটি পায়ে এসেই আনিসের দিকে তাকিয়ে কেদে ফেলে । আনিস অন্য দিক তাকায় । যে মেয়ে এতোকিছু করতে পারে বাবার কথা ভাবে না তার চোখের পানিতে গলা শোভা পায় না । গম্ভীর গলায় বলে – আশাকরি তুমি এখন সব অশ্বীকার করবে না । কাল তোমার বিয়ে । প্রস্তুতি নাও ।
আখি- আব্বু
আনিস – আমি কিছু শুনতে চাই না ।
To be continue _____
®লাবিবা______?