Mr_Arrogant_2? #The_Gangster_Lover,21,22

0
1883

#Mr_Arrogant_2?
#The_Gangster_Lover,21,22
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_21
.
.
.
.
ছয় দিন পর,,,??

এখন রওশনের হাত অনেকটা সুস্থ। আদনানের মার্ডার কেসটা ইনকাউন্টার হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে ওরা। এখন আভি নিজের হেডকোয়ার্টার আর রওশন নিজের অফিস সামলায়।

আভি আর রওশন বাইরে গিয়েছে তাই সুবহা চাইল্ড কেয়ার হোমে চলে আসে। বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে কথা বলছে সুবহা মাদারের সাথে।

দূর থেকে কালো কোট পরা কয়েকজন লোক দেখছে ওকে। একজন ওর ছবি তুলছে। হঠাৎ সুবহার মনে হয় কে যেন ওকে দেখছে। সুবহা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। লোক গুলো নিজেদের গাড়িতে উঠে চলে যায়।

সুবহাঃ সকাল থেকে মনে হচ্ছে কেউ যেন ফলো করছে কিন্তু কে?

সুবহা মাদারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।

বাড়িতে,,,??

সুবহা ড্রইং রুমে আসতেই অবাক হয়ে যায়। পুরো হলে শপিং ভরা। অনেক গুলো মেয়ে বসে আছে আর তাদের সাথে ওহিও আছে।

সুবহাঃ এসব কি ওহি?( অবাক হয়ে সব দেখতে দেখতে)

ওহিঃ এগুলো সব তোমার। এখন রাতের ফাংশনে কি পরবে তা তুমি নিজে ডিসাইড করো।

সুবহাঃ ফাংশন! কিসের ফাংশন?

আভিঃ তোমার আর ভাইয়ের এঙ্গেজমেন্ট এর ফাংশন,, ( ধপ করে সোফায় বসে পরে)

সুবহাঃ এঙ্গেজমেন্ট! কিন্তু আমাকে তো কেউ এ বিষয়ে কিছু জানায় নি?( অবাক হয়ে)

হঠাৎ রওশন সুবহার পেছন থেকে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,,,

রওশনঃ বলে দিলে তো সারপ্রাইজ থাকতো না।

সুবহা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে সরে দাঁড়ায় তারপর চোখ ছোট ছোট করে রওশনের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

সুবহাঃ তাই বলে আমাকে জানাবে না? স্ট্রেঞ্জ! আমার এঙ্গেজমেন্ট অথচ আমি জানি,,,

ওহিঃ ওফফো সুবহা এখন তো জানলে। এখন ওসব বাদ দিয়ে নিজের ড্রেস চুজ করো,,,

সুবহা রওশনের দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে ড্রেস দেখতে শুরু করলো। রওশন মুচকি হেসে দেখছে সুবহাকে।

সুবহার কোন ড্রেসই পছন্দ হচ্ছে না তা ভালো করেই খেয়াল করছে রওশন।

সুবহাঃ আমার একটাও পছন্দ হচ্ছে না। ( মন খারাপ করে সোফায় বসে)

রওশন একটা ক্রিম কালার ক্রিস্টাল এর কাজ করা লেহেঙ্গা তুলে সুবহার সামনে ধরে।

সুবহাঃ ওয়াওও! এটা পার্ফেক্ট থ্যাংক ইউ রওশন। ( আচমকা ওকে জড়িয়ে ধরে)

আচমকা সুবহার জড়িয়ে ধরায় রওশন অপ্রস্তুত হয়ে পরে। ওহি আর আভি মুখ টিপে হাসছে। সুবহার বিষয়টা খেয়ালে আসতেই ও সরে দাঁড়ায়।

সুবহাঃ স্যরি,,,( ব্লাশিং হয়ে )

আভিঃ আরেহ স্যরি কেন ভাবি? হি ইজ অল ইউর’স যখন তখন জড়িয়ে ধরো কেউ কিছু বলবে না। ( মজা করে)

আভির কথায় সুবহার গাল আরো লাল হয়ে যায়। রওশন সুবহার ফেস দেখে অনেক ইন্জয় করছে।

সুবহাঃ আমি এটা ট্রাই করে দেখে আসি,,,( বলেছি নিজের রুমে দ্রুত চলে গেল)

সুবহা চলে যেতেই রওশনও চলে যায়। ওহি ড্রেস গুলো দেখছে আর কনফিউজড হচ্ছে। আভি একটা পিঙ্ক কালারের গাউন এনে ওহির হাতে দিয়ে দেয়।

আভিঃ এটা তোমার উপর স্যুট করবে ট্রাই করে দেখতে পারো।

ওহি অবাক হয়ে আভির হাত থেকে গাউনটা নিল। আভি ওহিকে একটা কিউট স্মাইল গিফ্ট করে চলে গেল।

ওহিঃ আমার তোমাকে চাই আভি আর সেটা যে কোন মূল্যে। ভুল আমি করেছি আর সেটা সংসোধন ও আমিই করবো আই প্রমিস টু ইউ,,,

রাতে,,,??

রায়জাদা মেনশনে এঙ্গেজমেন্ট এর ফুল ডেকোরেশন করা হয়েছে। অর্কিড আর স্টারগেজার দিয়ে সাজানো পুরো বাড়ি। মিউজিক স্যাকশনে ভায়োলিন এর অদ্ভুত সুন্দর ধুন বাজাচ্ছে কয়েকজন।

অর্নব খাঁন তার পরিচিত লোকদের সাথে কথা বলছে ওনার সাথেই আভি আর রওশন।

রওশন ক্রিম কালার শার্ট আর ফুল হোয়াইট কালার স্যুট পরেছে। স্যুটের বাম সাইডে একটা ক্রিস্টাল এর ব্যাজ।

আভি হোয়াইট কালারের শার্ট আর ব্লু কালার স্যুট পরেছে। ওর স্যুটেও রওশনের মতো ব্যাজ লাগানো।

রওশনের চোখ বারবার সিঁড়ির দিকে যাচ্ছে কখন ও সুবহাকে দেখবে! হঠাৎ উপরের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায় রওশনের। কয়েকজন মেয়ে সুবহাকে নিয়ে আসছে। ক্রিম কালার লেহেঙ্গা সাথে ক্রিস্টাল এর জুয়েলারি আর অসম্ভব সুন্দর সাজে সুবহাকে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। রওশনের চোখ সরছে না ওর উপর থেকে।

সুবহা এক দৃষ্টিতে রওশনের দিকে তাকিয়ে নিচে নামছে। ওর কাছে রওশন ব্যতিত সব কিছু যেন ইনভিজিবল লাগছে। যার জন্য হাজারো মেয়ে পাগল সে আজ ওর হতে যাচ্ছে ভাবতেই অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে ওর মাঝে। সুবহাকে রওশনের পাশে এনে দাঁড় করায় ওরা।‌ সুবহা এখনো নিজের শূন্য দৃষ্টিতে রওশনের দিকে তাকিয়ে আছে। রওশন সুবহার কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিস করে নেশাক্ত ভয়েজে বলতে শুরু করে।

রওশনঃ এভাবে তাকিয়ে থাকলে নিজেকে সামলানো মুশকিল হয়ে পরবে লাভ,,,

রওশনের কথায় সুবহার হুঁশ ফিরে সুবহা সাথে সাথে নিজের মাথা নিচু করে নেয় তারপর বিরবির করে বলে,,,

সুবহাঃ পাগল,,

রওশনঃ তোমার জন্য!

সুবহা অবাক চোখে তাকায় রওশনের দিকে রওশন মিটমিট হাসছে।

???

আভি দাঁড়িয়ে আছে হাতে ড্রিঙ্কস এর গ্লাস। রওশনের ভয়ে আড়ালে গিয়ে খাচ্ছে ও। আভি ফিরতে নিলেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে গ্লাসের ওয়াইন তার জামায় পরে যায়।

আভিঃ ওহ্ শীট্ স্যরি,,,

মেয়েটিঃ ইট্স ওকে,,,

আভি নিজের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে মেয়েটির সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে,,,

আভিঃ এটা দিয়ে সাফ করে নিন।

মেয়েটিঃ থ্যাংক ইউ। ( রুমাল নিয়ে) বাই দ্যা ওয়ে আমি রিশা,,,( হাত বাড়িয়ে দিয়ে)

আভিঃ আই’ম আভি,,,

রিশার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আভি। দূর থেকে ওদের একসাথে দেখে ওহি রাগে ফুঁসছে। ওর সহ্য হচ্ছে না আভির সাথে রিশাকে।

আভিঃ তুমি পার্টি ইন্জয় করো আমি আসছি,,,( চলে যায়)

আভি চলে যেতেই রিশা কাউকে কল করে।

রিশাঃ সব ঠিক আছে আর প্লান অনুযায়ী হচ্ছে
আপনি চিন্তা করবেন না।( বলেই কেটে দিল‌)

আভি হলের সেন্টারে একটা মাইক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় তারপর বলতে শুরু করে।

আভিঃ গুড ইভনিং লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান। এখানে সবাই আমার বিগবি অর্থাৎ রওশন সাদিক রায়জাদার এঙ্গেজমেন্ট অ্যাটেন্ট করতে এসেছেন। কিন্তু এঙ্গেজমেন্টে এখনো অনেক সময় বাকি। তাই আমি রওশন ভাইয়ের কাছে একটা ডিমান্ড করতে চাই। আমার সুইট কিউট ভাবি সুবহার জন্য একটা রোমান্টিক সং গাইতে।‌অনেকেই হয়তো জানেন না রওশন রায়জাদা একজন ভালো বিজনেসম্যান এর পাশাপাশি অনেক ভালো সিংগারও।

সবাই চিয়ার আপ করছে রওশনকে। সুবহা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রওশনের দিকে। আসলেই কি‌ রওশন এতো ভালো গান পারে তাহলে ওকে কখনো শোনায় নি কেন?

একজন এসে রওশনকে মাউথ স্পিকার আর গিটার দিয়ে যায়। রওশন সেটা সেট করে পরে নেয় তার পর গিটার নিয়ে হলের সেন্টারে গিয়ে দাঁড়ায় সুবহার বরাবর। লাইট অফ হয়ে শেড লাইটের আলো জ্বলে উঠে। আভি গিয়ে সুবহার পাশে দাঁড়ায়।

আভিঃ ওর আর কত রুপ দেখা বাকি আছে তোমার ভাবি। ইউ নো রওশন ভাই ইজ আ অলরাউন্ডার। ধীরে ধীরে জেনে যাবে।

সুবহা আভির দিকে তাকিয়ে আবার রওশনের দিকে তাকায়।

রওশনঃ দিস ইজ অনলি ফর মাই হার্ট,,,( সুবহাকে ফ্লাইং কিস ছুরে মেরে)

“ দিল ইয়ে তেরে বিনা মানতা হি নেহি
কুছভি তেরে সিভা মাংতা হি নেহি
তু জারুরি সা হ্যায় আভ তো হার হাল মে
ইস’কে আগে কোয়ি রাসতা হি নেহি”

রওশন গিটার হাতে সুবহার চারপাশে ঘুরছে আর গাইছে,,,

“আ তুঝপে ফানাহ কারদু মেরি জিন্দেগি
ইস ইস্ক মে মার জাভা
কুছ ভি কাসাম সে কার জাভা
হাধ্ সে ভি গুজার জাভা
কুছ ভি কাসাম সে কার জাভা”

রওশন এসে সুবহার বরবার থামে। রওশন থামতেই ওদের দু’জনের উপর গোলাপের পাপড়ি পরতে শুরু করে। সুবহা অবাক হয়ে উপরে তাকাতেই দেখে কয়েকজন মিলে উপর থেকে ফেলছে সে গুলো। লাইট জ্বলে উঠে আর সবাই ক্লাপিং করতে শুরু করে।

সুবহার চুলে কয়েকটা পাঁপড়ি আঁটকে আছে। রওশন সুবহার কাছে গিয়ে ওর চুল থেকে পাপড়ি গুলো তুলতে তুলতে বলে,,,

রওশনঃ কারো অধিকার নেই রওশনের পারমিশন ছাড়া ওর জানের কাছে আসার হোক সেটা সামান্য ফুলের পাপড়ি।

সার্ভেন্ট এসে রওশন সুবহার সামনে রিং এর প্লেট আনে। ওহি রিং তুলে সুবহার হাতে দেয় কিন্তু আরেকটা বক্সে রিং নেই।

ওহিঃ আরেকটা রিং কোথায়?( আশেপাশে খুঁজে)

টাইসেল দৌড়ে ওদের সামনে আসে। ওর মুখে একটা বক্স। রওশন হাঁটু ভাঁজ করে বসে টাইসেলের গায়ে হাত বুলিয়ে ওর মুখ থেকে বক্সটা নিয়ে নেয়। ওটা খুলতেই সবাই অবাক কারন ওটার মধ্যে রিং।

আভিঃ টাইসু তুই শেষ মেষ রিং নিয়ে পালালি?

রওশনঃ জি না,, আমি টাইসুকে রিং এর দায়িত্ব দিয়েছিলাম তাই না টাইসু?

টাইসু জিভ বের করে হাসছে আর লেজ নাড়াচ্ছে।

রওশন নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় আর সুবহা ওর আঙ্গুলে রিং পরিয়ে দেয়। রওশন সুবহার হাত নিজের হাতে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

আভিঃ ভাই রিং পরাবি নাকি সারারাত অপেক্ষা করতে হবে,,( মজা করে)

রওশনঃ তুই সব সময় আমার রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজাস,,

আভিঃ পাবলিকের সামনে রোম্যান্স করবে আর আমি বললেই দোষ,,,

রওশন আভির কথায় কান না দিয়ে সুবহার হাতে রিং পরিয়ে দেয়।

ওদের এঙ্গেজমেন্ট কমপ্লিট হতেই সবাই কংরেট্স জানায় ওদের।

To be continued……?
#Mr_Arrogant_2?
#The_Gangster_Lover
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_22
.
.
.
.
রাতে,,,??

আজকে পূর্ণ চাঁদ উঠেছে। ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আকাশের সেই চাঁদ টার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুবহা। খোলা চুল গুলো অবাধ্য হয়ে এলোমেলো ভাবে উড়ছে হাওয়ায়।

হঠাৎ পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় চমকে উঠলো ও। কিন্তু পরক্ষনেই তার সেই পরিচিত স্পর্শ বুঝে উঠে ও। রওশন সুবহার কাঁধে থুতনি রেখে লো ভয়েজে বলতে শুরু করে ওকে,

রওশনঃ এতো রাতে এখানে কি করছো সুবহা?

সুবহাঃ চাঁদ দেখছি,,( আকাশের দিকে তাকিয়ে)

রওশনঃ একা একা! আমাকে ডাকলেও পারতে,,,

জবাবে হালকা হাসলো সুবহা,,, রওশন সুবহার থেকে সরে ওর বরাবর রেলিং ধরে ওর গা ঘেঁষে দাঁড়ায় তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে।

রওশনঃ জানো সুবহা আমার ড্যাড একজন আর্মি অফিসার ছিলেন,,,,

সুবহা কিছুটা অবাক হল রওশনের কথায়। রওশন আবারো বলতে শুরু করে।

রওশনঃ উনি নিজের দেশের প্রতি এই দেশের মানুষের প্রতি অনেক লয়াল ছিলেন। কাকু অর্থাৎ আদনান রায়জাদা ওনার থেকে লুকিয়ে ইল্লিগ্যাল কাজ করতো। কিন্তু ড্যাড যখন এসব জানতে পারে তখন আদনান রায়জাদা কে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আদনান রায়জাদা আমার ড্যাডকে নিজের জালে আঁটকে নেন। ভাই হয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ক্ষমা চান আর বলেন উনি সুধরে যাবেন। কিন্তু এমন কিছু হয়নি। উনি ট্রেইনে নিজের লোকদের দিয়ে বম রাখেন। ড্যাডের কাছে উপায় ছিল না। উনি বমের ব্যাগটা নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে যান। কিছুটা দূর যেতেই ব্লাস্ট হয়ে যায়। সবাই এটাকে সাধারণ ভাবে নেয়। কাকু বলেন দোষ ট্যারোরিস্ট দের। উনার কথায় বিশ্বাস করি আমি। পরে আমাকে নিজের কালো ব্যবসায় যোগ করেন তিনি। আমি যখন জানতে পারি উনার আসল রুপ সরে আসি উনার থেকে নিজের আলাদা গ্ৰুপ তৈরি করি। উনার বিরুদ্ধে প্রুফ ছিল না আমার কাছে তাই আভির সাথে মিলে সেই প্লান বানাই। আভি উনার বিশ্বস্ত হয়ে উনার বিরুদ্ধে প্রুফ খুঁজে। তারপরের ঘটনা তো সব তোমার জানা।

কথা গুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রওশন। সুবহার চোখ ছলছল করছে এখনো।

রওশনঃ জানো সুবহা আমার ড্যাড চাইলে নিজেকে বাঁচাতে পারতেন ট্রেন থেকে নেমে গিয়ে কিন্তু উনি সেটা করেন নি। ট্রেনের হাজারো মানুষদের কথা ভেবে নিজের একার কথা ভুলে যান তিনি।

ড্যাড বলতেন দশ জনকে বাঁচাতে যদি একজনের মৃত্যু হয় তাহলে সেটা শুধু মৃত্যু না শহীদের মৃত্যু হয়। নিজের জীবনের আগে নিজের দেশের মানুষদের কথা ভাবা একজন যোদ্ধার কর্তব্য। উনি সেটাই করেছেন। I’m proud of you dad!( আকাশের দিকে তাকিয়ে)

সুবহা রওশনের কাঁধে হাত রাখতেই রওশন ওর দিকে ফিরে তাকায়।

সুবহাঃ We proud of him!

রওশন সুবহাকে জড়িয়ে ধরে। ওর ভিতরের অবস্থা হয়তো ও ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না। নিজের চোখের পানি আড়াল করে মুছে ফেলে ও।

রওশনঃ কখনো ছেড়ে যেও না সুবহা আমার দুনিয়াতে তুমি ছাড়া আমি সম্পুর্ন একা। অতিরিক্ত ভালোবাসি আমি তোমাকে।

সুবহাঃ আমিও,,,,

রওশনঃ এখন চলো গিয়ে ঘুমিয়ে পরো কালকে ফাংশন আছে,,,

রওশন সুবহাকে ওর রুমে দিয়ে এসে নিজের রুমে চলে আসে।

পরের দিন,,,,??

আজকে রওশন আর সুবহার গায়ে হলুদ আর মেহেদী। রওশন সব ফাংশন এক সাথে করে ফেলতে বলেছে কারন অযথা এ ধরনের ফাংশন করে সময় নষ্ট করতে চায় না ও। যত দ্রুত সম্ভব সুবহাকে নিজের করে নিতে চায় ও।

আভি পুরো ডেকোরেশন এর দায়িত্ব নিয়েছে। দম নেওয়ার ও সময় নেই বেচারার। সকাল থেকে এক নাগাড়ে কাজ করেই চলেছে। ওহি আছে ওর সাহায্যের জন্য। অনেক ভালো করে আভির সাথে মিশছে ও। ওর একটাই এইম এখন আভির বিশ্বাস আগের মতো অর্জন করা ওর ভালোবাসা আগের মতো অর্জন করা যা নিজের ভুলের জন্য হারিয়েছে ও।

মেহমান আসতে শুরু করেছে। সবার আগে হলুদ তারপর মেহেদী। সুবহাকে এনে স্টেজে বসানো হয়েছে। হলুদ রঙের লেহেঙ্গা সাথে কাঁচা ফুলের গয়না পরেছে ও। দেখতে একদম কোন ফুলের রাজ্যের রানী লাগছে তাকে‌।

ওহিঃ সুবহাকে আগে কে হলুদ লাগাবে?

রওশনঃ আমি!

রওশনের কথা শুনতেই সবাই ওর দিকে তাকায়। হলুদ আর সাদা রঙের পাঞ্জাবি স্যুট পরেছে রওশন। একদম ভিন্ন লাগছে রওশনকে আজকে।

ওহিঃ এটা কেমন কথা ভাইয়া? বর কি কখনো বউকে হলুদ দেয়? আপনার হলুদ ই তো সুবহাকে লাগানো হবে।

রওশনঃ আমি তো সেটাই বলছি,,, ওয়েট,,

রওশন সুবহার বরাবর গিয়ে দাঁড়ায় তারপর সুবহাকে বলে,,,

রওশনঃ নাও সুবহা নিজের বরকে হলুদ লাগিয়ে দাও,,,( হলুদের থালা এগিয়ে দিয়ে)

সুবহা কি করবে বুঝতে পারছে না আশেপাশে সবাই মুখ টিপে হাসছে।

রওশনঃ কি হলো দাও,,,( কিছুটা জোরে বলল )

সুবহা কাঁপা কাঁপা হাতে হলুদ নিয়ে রওশনের গালে আর হাতে লাগিয়ে দিল। হলুদ লাগতেই রওশন চট করে উঠে সুবহার গালে নিজের গাল ঘষে দিল ওর গালের হলুদ এখন সুবহার গালে। সুবহা ড্যাব ড্যাব চোখে তাকায় রওশনের দিকে। আভি সিটি বাজিয়ে বলতে শুরু করে।

আভিঃ জিও বিগবি হাও রোমান্টিক,,,

রওশনঃ তোকে ট্রেইনিং দিচ্ছি ইন ফিউচার কাজে লাগবে।

আভি ওহির দিকে এক পলক তাকিয়ে মুখে মিথ্যা হাসি টেনে নেয়।

রওশনঃ নাও আমার হয়ে গিয়েছে এখন তোমরা আমার জানকে হলুদ লাগাতে পারো। ( সরে গিয়ে)

ওহি আর বাকিরা মিলে সুবহাকে হলুদ লাগিয়ে দিতে শুরু করে।

হলুদ লাগানো শেষ হতেই ওকে ফ্রেশ করিয়ে রেডি করে দেয় ওহি মেহেদীর জন্য। সবুজ রঙের লেহেঙ্গা আর হালকা সাজানো হয়েছে সুবহাকে।

সুবহার হাতে মেহেদির লাগানো হচ্ছে। রওশন আর আভি ওদের বন্ধুদের সাথে ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছে।

সুবহার হাতে সুন্দর করে রওশন নাম লিখা হয়েছে। সুবহা ব্লাশিং হয়ে নিজের হাতে রওশনের নাম দেখছে।

মেহেদী লাগানো শেষ হতেই সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরে। ওহি নিজের হাতে মেহেদি পরতে ব্যস্ত।

সুবহা রওশনকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদের দিকে যাচ্ছে হঠাৎ কে যেন সুবহার হাত টেনে ধরে।

সুবহাঃ কে?( ঘাবড়ে গিয়ে)

রিশাঃ সুবহা আমি ডোন্ট প্যানিক,,,

সুবহাঃ তুমি এভাবে আমাকে টেনে আনলে কেন?

রিশাঃ কিছু বলার ছিল তোমায়,,,

সুবহাঃ কি?

রিশাঃ তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে সুবহা নাহলে সত্যটা কখনো তুমি জানতে পারবে না।

সুবহাঃ কিসের সত্য আর কোথায় যেতে হবে আমায়?

রিশাঃ রওশনের সত্য!

সুবহাঃ মানে?

রিশাঃ ও তোমার কাছ থেকে অনেক বড় সত্য লুকিয়েছে সুবহা,,,,

সুবহাঃ তুমি কি বলছো আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমার পথ ছাড়ো আমি রওশনকেই জিজ্ঞেস করবো বিষয়টা কি,,,

রিনা হঠাৎ সুবহার মুখে স্প্রে করে আর সুবহা সেন্সলেস হয়ে পরে যায়। সুবহা সেন্সলেস হতেই একজন আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে তারপর সুবহার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,,,

>>> তোর ভালোবাসার হাতেই তোকে শেষ করবো আমি রওশন রায়জাদা,,,( শয়তানি হেসে)

কিছুক্ষণ পর,,,,??

সুবহাকে কোথাও পাচ্ছে না ওহি। সুবহাকে না পেয়ে ও রওশনের কাছে চলে যায়।

ওহিঃ ভাইয়া সুবহাকে পাচ্ছি না কোথাও…( হাঁপিয়ে গিয়ে)

রওশনঃ পাচ্ছো না মানে?( চমকে)

ওহিঃ পুরো বাড়ি খুঁজেছি কিন্তু ও কোথাও নেই,,

রওশন দ্রুত নিচে নেমে আসে। নিজে পুরো বাসায় খুঁজতে থাকে ও সুবহাকে।

রওশনঃ সুবহা? কোথায় তুমি সুবহাআআআ,,,

রওশনের টেনশনে মাথা ধরে যাচ্ছে। গার্ডদের সবাইকে ওকে খুঁজতে পাঠিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ রওশনের ফোনে ম্যাসেজ আসে। রওশন ম্যাসেজ চেক করতেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। সুবহা ম্যাসেজ করেছে ওকে কোথাও ডেকেছে নিচে অ্যাড্রেস দেওয়া।

রওশনঃ সুবহা বাসা থেকে বের হলো কেন? আর ওখানে কেন আসতে বলল?( অবাক হয়ে)

?Mount Hill Climbing Park?

রওশনকে একটা ক্লাইম্বিং হিলে আসতে বলেছে সুবহা। রওশন দ্রুত ওখানে পোছায়। যেতেই দেখে সুবহা পাহাড়ের কোনায় দাঁড়িয়ে সেই দিকেই তাকিয়ে আছে। রওশন দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,,

রওশনঃ কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তোমার কোন আইডিয়া আছে সুবহা? হঠাৎ না বলে এখানে আসার মানে কি?

সুবহা রওশনের দিকে ফিরে তাকায়। সুবহার চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। চোখে পানি টলটল করছে। রওশন ঘাবড়ে যায় সুবহাকে এমন ভাবে দেখে।

রওশনঃ তুমি ঠিক আছো সুবহা? অসুস্থ লাগছে তোমার? কিছু তো বলো?( ঘাবড়ে গিয়ে সুবহার কপাল গলা চেক করছে যদি জ্বর হয়)

সুবহাঃ আপনি আমার জন্য সব করতে পারেন তাই না রওশন?

রওশনঃ হঠাৎ এই প্রশ্ন?

সুবহাঃ যা চাইবো তা দিবেন?( ভাঙ্গা গলায়)

রওশনঃ চেয়ে তো দেখো,,, জানও হাজির তোমার জন্য,,,,

সুবহাঃ সেটাই তো চাই,,,( অস্বাভাবিক ভাবে)

রওশনঃ মানে?( অবাক হয়ে)

সুবহা কিছু না বলেই দু হাত দিয়ে রওশনের বুকে ধাক্কা দেয় আর রওশন হিল থেকে নিচে পরে যায়,,,,

রওশনঃ সুবহাআআআ,,,

রওশন নিচে পরে যায়। সুবহার নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে দু হাতের মেহেদী লেপ্টে গিয়েছে। সুবহার নিঃশ্বাস আটকে আসছে ধপ করে ওখানেই বসে পরে ও। শরীর কাঁপছে ওর মনে হচ্ছে কেউ ওর শরীরে চাবুকের আঘাত করছে।

সুবহাঃ আই’ম স্যরি রওশন!( কাঁপা কাঁপা গলায়)।

সুবহার চিৎকার আসছে কিন্তু সেটারও শক্তি হারিয়ে গিয়েছে। মাথা ঝিমঝিম করছে ওর। আশেপাশে সব ব্লাংক হয়ে গেছে যেন। সুবহা নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে চিৎকার করে জোরে জোরে রওশনের নাম নিতে শুরু করে।

ওর কান্নার আওয়াজ চারো দিকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে কিন্তু হয়তো সেটা রওশনের কানে পৌঁছাচ্ছে না।

To be continued………..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here