#You_Are_My_Destiny
#Mr_Arrogant_3?,06,07
#Writer_Shanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_6
?ShayRish?
তাড়াহুড়ো করে গাড়ি পার্ক করে এক প্রকার দৌড়ে অফিসে প্রবেশ করছে শায়েরা। আজকে প্রথম দিন আর প্রথম দিনেই লেইট হয়ে গেছে ও।
কেবিনের বড় ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে আবার কেবিনের দরজার দিকে তাকায় রিশান। আধা ঘন্টা আগেই অফিস টাইম শুরু হয়ে গেছে অথচ শায়েরার আসার কোনো খবরই নেই। টাইমের বিষয়ে অনেক পাঞ্চুয়াল রিশান সব কিছু ওর সময় মতো পছন্দ। কিন্তু শায়েরার ক্ষেত্রে তার একদমই উল্টো।
রিশানঃ আজকে প্রথম দিন অথচ মিস শায়েরার আসার কোনো হদিস নেই বাহ্। যে মেয়ে সময় মেইনটেইন করে চলতে পারে না সে এতো বড় অফিসের কাজ মেইনটেইন করতে চায় হাস্যকর বিষয়।( তাচ্ছিল্য হেসে )
রিশান উঠে কেবিন থেকে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলতে নিলেই হঠাৎ শায়েরা বাইরে থেকে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পরে আর রিশানের সাথে ধাক্কা লেগে যায় তার। রিশান দেয়াল ধরে ব্যালেন্স করলেও শায়েরা ব্যালেন্স করতে না পেরে পরে যেতে নেয় কিন্তু তার আগেই রিশান ওর হাত ধরে ফেলে।
রিশানঃ আপনি মানুষ নাকি অন্যকিছু? ( বিরক্ত হয়ে )
শায়েরাঃ অবভিয়াসলি মানুষ!( কপাল কুঁচকে)
রিশানঃ আই ডোন্ট থিংক সো!( বিরবিরিয়ে )
রিশান এক টানে শায়েরাকে সোজা করে দাঁড় করায়। শায়েরা নিজের চুল ঠিক করে রিশানকে বলে,
শায়েরাঃ থ্যাংক ইউ অ্যান্ড স্যরি। থ্যাংক ইউ আমাকে পরা থেকে বাঁচানোর জন্য আর স্যরি লেইট হওয়ার জন্য। আসলে….. রিশান শায়েরাকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে বলে,
রিশানঃ আপনার এক্সকিউজ শুনতে আমি মোটেও ইন্টারেস্টেট না। আমি আমার পি.এ কে বলে দিচ্ছি ও আপনাকে আপনার কেবিন দেখিয়ে দিবে।
রিশান কথা গুলো শেষ করেই শায়েরার পাশ কাটিয়ে চলে যায়। শায়েরা চোখ ছোট ছোট করে নাক ফুলিয়ে রিশানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
শায়েরাঃ এনার নাম রিশান রায়জাদা না হয়ে Arrogant cold blooded crocodile হওয়া উচিত ছিল। মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা হয়তো কফির সাথে গুলিয়ে খেয়ে ফেলেছেন। ( মুখ বাঁকিয়ে) কিন্তু আমি একটা কথা বুঝতে পারলাম না যে এক দিনে মানুষের এতো পরিবর্তন কিভাবে হয়?( অবাক হয়ে ) গতকাল সকালে যখন দেখা হয়েছিল তখন অন্য রকম রিশান ছিলেন আর রাতে পরিচয় হওয়ার পর থেকে আরেক রকম রিশান হয়ে গেল? মানে গিরগিটিও ফেইল এনার সামনে।
শায়েরার ভাবনায় ছেদ পড়ে কাঁধে কারো হাতের স্পর্শে। শায়েরা পেছনে ফিরে তাকাতেই দেখে একটা মেয়ে।
কাজলঃ গুড মর্নিং ম্যাম।
শায়েরাঃ মর্নিং কিন্তু আপনি কে?
কাজলঃ আমি রিশান স্যারের পি.এ কাজল। স্যার বলেছেন আপনাকে কেবিন দেখিয়ে দিতে।
শায়েরাঃ ওহ ওকে।
কাজল সামনে হাঁটছে আর শায়েরা ওর পিছনে। শায়েরা মেয়েটাকে উপর থেকে নিচ অব্দি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে। লেডিস শার্ট আর স্কিনি জিন্স পরেছে একদম অফিস লুক। মেয়েটি অতিরিক্ত ফ্যাশনেট দেখতেই বুঝা যায়।
কাগজঃ ম্যাম পৌঁছে গেছি। এটা আপনার কেবিন কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন।
শায়েরাঃ হুম।
কাজল চলে যেতে নিলেই শায়েরা ওকে থামিয়ে দেয়।
শায়েরাঃ আভভ শুনো।
কাজলঃ জি।
শায়েরাঃ তুমি কত দিন ধরে এই অফিসে কাজ করো?
কাজলঃ এক মাস হলো।
শায়েরাঃ মাত্র এক মাস?( অবাক হয়ে ) কিন্তু রিশান তো দেড় বছর ধরে অফিস জয়েন করেছে এতো বছর কী ওনার এসিস্ট্যান্ট এর প্রয়োজন পরে নি?
কাজলঃ নো ম্যাম আমার আগে আরো অনেক গুলো এসিস্ট্যান্ট ছিল স্যারের কিন্তু একটাও টিকে নি। এক হলে স্যার তাদের ফায়ার করে দিয়েছেন নাহলে তারা নিজেই রিজাইন করে দিয়েছে।
শায়েরাঃ আমি জানতাম এমনি কিছু একটা হবে। এই বদদেমাগ খারুস ক্রোকোডাইলকে সহ্য করা এতো সহজ কাজ না। এর অত্যাচারে একটা এসিস্ট্যান্ট ও টিকে না । ( মনে মনে হেসে ) আচ্ছা তুমি কবে রিজাইন করবে?
কাজলঃ আমি কেন রিজাইন করতে যাব আমি আমার কাজ নিয়ে খুশি আছি।
শায়েরাঃ মানে কী? তুমি এই ক্রোকোডাইলের অত্যাচার সহ্য করতে পারছো?( অবাক হয়ে )
কাজলঃ অত্যাচার কেন হবে আমার তো ভালো লাগে স্যারের আশেপাশে থাকতে। ( ব্লাশিং হয়ে )
ওনার ধমকও আমার কাছে চিনির মতো মিষ্টি লাগে। আই ডোন্ট মাইন্ড হিম। আসলে সবাই স্যারকে যতটা কড়া আর স্ট্রিক্ট ভাবে স্যার অতটাও স্ট্রিক্ট না জাস্ট উনি একটু বেশিই ডিসিপ্লিন্ড। সব কিছু পারফেক্ট পছন্দ উনার এজন্য আমি সব কাজ পারফেক্টলি করি তাই স্যার আমাকে বকার সুযোগই পান না ফায়ার করবেন তো দূরের কথা।
কাজলের ব্লাশিং ফেস দেখে শায়েরার ফেস রাগে লাল হচ্ছে।
শায়েরাঃ ওহ! অনেক ভালো করেই চিনো তাহলে তোমার রিশান স্যারকে।( দাঁতে দাঁত চেপে)
কাজলঃ হুম। আমার থেকে ভালো তো উনাকে উনি নিজেই চিনেন না। ওহ স্যারের কফির সময় হয়ে গেছে আমি আসি ম্যাম নাহলে স্যার রাগ করবেন।( তাড়াহুড়ো করে চলে গেল )
শায়েরাঃ রাগ করবেন মাই ফুটট।( রেগে )
শায়েরা ধরাম করে কেবিনের দরজা খুলে প্রবেশ করে আবার ধরাম করে লাগিয়ে দেয়। বাইরের সবাই হচকিয়ে যায় হঠাৎ এতো শব্দে।
রিশান কাজ করছে এমন সময় কাজল ডোর নক করে কেবিনে প্রবেশ করে।
কাজলঃ স্যার কফি।
কাজল কফির গ্লাস এনে রিশানের সামনে রাখে রিশান এখনো ওর ফাইলে মনোযোগ দিয়ে আছে। কাজল এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে দেখে রিশান ওর মাথা উঁচু করে কাজলের দিকে তাকিয়ে বলে,
রিশানঃ কিছু বলবেন?
কাজলঃ না স্যার।
রিশানঃ তাহলে এখনো দাঁড়িয়ে আছেন কেন নিজের ডেস্কে গিয়ে কাজ করেন।
কাজলঃ জ জি স্যার।
এক প্রকার দৌড়ে কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসে কাজল।
?HayArth?
হায়াতিঃ আপনি এখানে এতো সকাল সকাল কেন?
আর্থঃ একচুয়ালি হেডকোয়ার্টার যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম তোমাকেও ড্রপ করে দেই কলেজে।
হায়াতিঃ নো নো নো আপনার এতো কষ্ট করার প্রয়োজন নেই আমার জন্য আমি যেতে পারবো নিজে নিজে। আপনি চলে যান বায় বায়।
আর্থঃ আরেহ কষ্ট কিসের? দেখো তুমি সেদিন আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে আমার বাইকে চড়েছিলে তাই না? এর আগে কোনো মেয়ের সাহস হয়নি আমার বাইকে উঠার তুমিই প্রথম মেয়ে যে আমার বাইকে উঠতে পেরেছো। সে হিসেবে আমি নিজেকে প্রমিস করেছি যে তোমাকে পুরষ্কৃত করবো। আজকে থেকে প্রতিদিন আমি তোমাকে আমার বাইকে করে কলেজে ড্রপ করবো।
হায়াতিঃ অ্যা! এটা আবার কেমন কথা? আমার আগে কোনো মেয়েকে আপনি বাইকে উঠান নি? ( টাস্কি খেয়ে) ইম্পসিবল!
আর্থঃ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। এখন কথা না বাড়িয়ে উঠে পরো নাহলে তোমার আর আমার দুজনেরই দেরি হয়ে যাবে।
হায়াতিঃ উঠবো নাকি উঠবোনা?( মনে মনে )
আর্থ নিজের হেলমেট পরে বাইকে উঠে পরে তারপর হায়াতিকে ইশারা করে বলে বসতে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও হায়াতি উঠে বসে।
আর্থঃ স্ট্রং হয়ে বসো নাহলে পরে টরে গেলে আমার বাইকের নাম খারাপ হবে।
হায়াতিঃ স্বার্থপর! পরে গেলে আমি ব্যথা পাবো সে চিন্তা নেই উনার বাইকের নাম খারাপ হবে সে চিন্তা করে হাও মীন!( মনে মনে )
আর্থঃ গেট সেট রেডি!( বাইক স্টার্ট দিয়ে )
?RikShika?
ফুল স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছে রিক্ত আর ওর পাশেই রিশিকা বসা। পেছনের গাড়ি দিয়ে গার্ড গুলো তাড়া করছে ওদের। রিক্তর ফেস দেখে বুঝা যাচ্ছে বিষয়টা অনেক ইন্জয় করছে ও।
রিশিকাঃ রিক্ত একটু ধীরে চালান আমার ভয় করছে।( ভয়ে ভয়ে )
রিক্তঃ রিশু বেইবি তুমি কী চাও তোমার ভাইয়ের সো কল্ড চামচা রা আমাদের ধরে ফেলুক আর তুমি আবারও ওদের নজর বন্দি হয়ে যাও?
রিশিকাঃ না না না একদম নাহ!
রিক্তঃ তাহলে নিজের পাশের সীটে বসে থাকা মোস্ট হ্যান্ডসাম ছেলেটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আর দেখো আমি কিভাবে এই চেলা পেলাদের শিক্ষা দেই।
রিশিকা রিক্তর কথা শুনে হালকা হাসলো তারপর ওর কথা মতো এগিয়ে এসে রিক্তকে সাইড দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো। রিক্ত ঠোঁটে হাসি টেনে এক হাত বের করে পেছনের গাড়িকে বায় বায় বলল তারপর গাড়ির স্পীড আরো বাড়িয়ে দিল। কিছু সময়ের মধ্যেই রিক্তর গাড়ি গার্ডদের নাগালের বাইরে চলে যায়।
?HayArth?
কলেজের সামনে বাইক থামায় আর্থ। হায়াতির যেন জান বেরিয়ে যাচ্ছিল এতক্ষন। মনে হচ্ছিল আরেকটুর জন্য হার্ট অ্যাটাক করে নি ও। বাইক স্টার্ট দেওয়ার পর আর্থ ফুড স্পীডে বাইক চালিয়েছে হায়াতি অনেক বার বলেছে ওর ভয় করে বেশি স্পীডে কিন্তু আর্থ এক সেকেন্ডের জন্যেও স্পীড কমায় নি। ওর কাছে যেন ভালোই লাগছে হায়াতির অবস্থা দেখে। হায়াতির খোলা চুল গুলো যেন কাকের বাসায় পরিনত হয়েছে।
আর্থঃ চলে এসেছি মিস হাতি!
হায়াতির হাত পা এখনো কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা শরীরেই নেমে যায় ও।
হায়াতি এখনো ট্রমায় আছে। বাইকে উঠার স্বাদ হয়তো ওর মিটে গেছে।
আর্থঃ Are u all right miss hati?( হাসি আটকিয়ে )
হায়াতিঃ আপনি ইচ্ছা করে এমন করেছেন তাই না?( রেগে )
আর্থঃ আমি আবার কী করলাম?( না জানার ভান করে)
হায়াতিঃ আপনিইইই…. বলতে গিয়েও থেমে যায় ও।
আর্থঃ আমি কী ?
হায়াতিঃ কিছু না।( রাগ দমিয়ে)
আর্থঃ ওকে তাহলে তুমি তোমার ক্লাসে যাও আমি কলেজ শেষ হলে তোমাকে নিতে আসবো।
হায়াতিঃ নাআআ আপনার আর আসার প্রয়োজন নেই। আমি নিজে থেকে যেতে পারবো। আল্লাহ হাফেজ।
হায়াতি দৌড়ে ভিতরে যেতে নিলেই হোঁচট খায় কিন্তু তাও দৌড় থামায় নি। আর্থ হাসছে ওর কাজে।
আর্থঃ এটাতো জাস্ট শুরু মিস হাতি আরো কত কিছু এক্সপিরিমেন্ট করা বাকি আছে তোমার। ( বাইক স্টার্ট দিয়ে )
?RikShika?
রিক্তঃ তোমার কফি রিশু বেইবি।( রিশিকার সামনে কাপ রেখে ) কম মিষ্টি একদম তোমার টেস্ট অনুযায়ী।
রিশিকাঃ থ্যাংক ইউ। কিন্তু রিক্ত আপনি সিউর গার্ডরা আমাদের এখানে খুঁজে পাবে না?
রিক্তঃ তোমার আমার উপর বিশ্বাস নেই রিশু?
রিশিকাঃ নাহ…
রিক্তঃ নো ডাউট তুমি আসলেই রিশান রায়জাদার বোন।( হাতে তালি দিয়ে )
রিশিকাঃ ডাউট না থাকাই ভালো।( হেসে )
To be continued……..?
#You_Are_My_Destiny
#Mr_Arrogant_3?
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_7
RikShika?
রিক্ত টেবিলে কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে মুখ গোমড়া করে রিশিকার দিকে তাকিয়ে আছে আর রিশিকা নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত রিক্তের দিকে তাকাচ্ছেও না।
এমনই হয় প্রতিবার, রিক্ত রিশানকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু বলে দেয় আর ওদের ঝগড়া হয়ে যায়, যার পরিণাম স্বরূপ রিশিকা রাগ করে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে ওর সাথে কথা বলে না।
রিক্তঃ রিশু বেইবি!
রিক্ত রিশিকার হাতের উপর হাত রাখতেই রিশিকা ঝটকা মেরে নিজের হাত তুলে নেয়। রিক্ত আহত দৃষ্টিতে দেখছে রিশিকাকে। ও বুঝতে পারছে এবারো ওকেই রাগ ভাঙাতে হবে রিশিকার। রিক্ত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চেয়ার টেনে রিশিকার আরেকটু কাছ ঘেঁষে বসলো।
রিক্তঃ আচ্ছা ফাইন আই’ম স্যরি।( নাক ফুলিয়ে)
রিশিকা তাও রিক্তর দিকে তাকাচ্ছে না। রিক্ত এবার ছো মেরে রিশিকার ফোন নিয়ে নিল। রিশিকা রেগে ফোন নেওয়ার চেষ্টা করতেই রিক্ত ফোন সরিয়ে নেয়।
রিশিকাঃ রিক্ত আমার ফোন দিন।( নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে)
রিক্তঃ আমিও তো একটু দেখি তুমি ফোনে কী এমন দেখছো যে নিজের সামনে বসে থাকা এতো হ্যান্ডসাম আর কুল ছেলের দিকে তাকানোর ফুরসৎ পাচ্ছ না।
রিক্তর কথা শুনে রিশিকা না জানার ভান করে নিজের আশেপাশে তাকায় তারপর বলে,
রিশিকাঃ কার কথা বলছেন আপনি? আমি তো এমন কাউকেই দেখতে পারছি না এখানে।
রিক্তঃ সিরিয়াসলি রিশু! ( হা হয়ে ) তোমার কথার অর্থ হচ্ছে আমি দেখতে ভালো না তাই না?
রিশিকাঃ আমি এটা কখন বললাম?( না জানার ভান করে ) কিন্তু আপনি যদি কথা ঘুরিয়ে নিজের উপর নিয়ে নিন তাহলে দ্যাট্স নট মাই ফল্ট।
রিক্তঃ তুমি জানো আমার জন্য কত মেয়ে পাগল? কিন্তু আমি তোমার কথা ভেবে কাউকে পাত্তা দেই না, সবার থেকে ডিস্টেন্স বজিয়ে চলি। তোমায় আমার প্রতি থ্যাংকফুল হওয়া উচিত কিন্তু তুমি উল্টো আমাকে ইনসাল্ট করছো।( আড়ি চোখে)
রিশিকাঃ আমি কী বলেছি আপনাকে সবার থেকে ডিস্টেন্স বজিয়ে চলতে?
রিক্তঃ তাহলে কি তুমি চাও যে আমি ডিস্টেন্স বজিয়ে না চলি?( ভ্রু নাচিয়ে )
রিশিকাঃ আমি কি সেটা বলেছি? আপনি কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলবেন না বলে দিলাম।( রেগে )
রিক্তঃ শুরুটা তো তুমিই করেছো।( আমতা আমতা করে)
রিশিকাঃ ধুর আমি কথাই বলবো না আপনার সাথে।( মুখ ঘুরিয়ে)
রিশিকা মুখ ফুলিয়ে অন্য পাশ ফিরে যায়। রিক্ত হালকা হেসে উঠে বাইরে চলে যায়। রিশিকা আর চোখে দেখে বুঝার চেষ্টা করছে রিক্ত কোথায় গেল।
রিশিকাঃ আমাকে রেখে চলে গেল?( অসহায় ফেস করে)
HayArth?
আর্থ বাইকের চাবি আঙ্গুলে ঘুরাতে ঘুরাতে নিজের কেবিনে যাচ্ছে তখনই মেহেদী ( ওর কলিগ) ওর কাছে আসে হাতে কিছু নিয়ে।
মেহেদীঃ আর্থ শোন…
আর্থঃ হুম বল?( থেমে গিয়ে )
মেহেদীঃ এই নে…( খাম এগিয়ে দিয়ে)
আর্থঃ হিলস্ ক্লাবের পাস!( খাম খুলে পাস দেখছে )
মেহেদীঃ ভ্যালেনটাইন ডে স্পেশাল পার্টি আর এটা কাপল পাস।
আর্থঃ কাপল পাস?( ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে)
মেহেদীঃ অবভিয়াসলি! ভ্যালেনটাইন ডে কি সিঙ্গেলদের জন্য যে সিঙ্গেল পাস হবে।( হেসে )
কিন্তু তোর জন্য স্পেশালি একটা সিঙ্গেল পাস বানানো উচিত ছিল সিঙ্গেল মানুষ বলে কথা।( মজা করে )
আর্থঃ তোর মজা নেওয়া শেষ হলে এখন গিয়ে কাজে ফোকাস কর।
মেহেদীঃ যাচ্ছি যাচ্ছি।
আর্থঃ স্টুপিড।
ShayRish?
কাজ শেষ হতেই রিশান অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনে এগোতেই হঠাৎ শায়েরা দৌড়ে গাড়ির সামনে চলে আসে। রিশান সাথে সাথে ব্রেক দেয়। আচমকা এমন হওয়ায় রিশান সামনের দিকে ঝুঁকে যায় যদিও মাথায় ব্যাথা লাগে নি ওর। গাড়ি শায়েরার পুরো ছুঁই ছুঁই অবস্থায়।
রিশান রেগে গাড়ি থেকে নেমে শায়েরার দিকে তেড়ে যায়। রিশানের রাগি ফেস দেখে ভয়ে চার পাঁচ কদম পিছিয়ে যায় শায়েরা তাও রেহাই হলো না কারন রিশান মুহূর্তেই ওর বাহু ধরে টেনে গাড়ির সাথে মিশিয়ে দাঁড় করায় ওকে তারপর ওর দুই বাহু শক্ত করে ধরে ধমকের স্বরে বলতে শুরু করে,
রিশানঃ মাথায় ব্রেইন বলতে কিছু আছে? আর যদি থেকে থাকে তাহলে সেটার ব্যবহার করতে কবে শিখবে? এখন যদি আমি ব্রেক না করতাম তাহলে কি অবস্থা হতো কোনো আইডিয়া আছে স্টুপিড?
শায়েরা রিশানের এ রুপে অভ্যস্ত না তাই ভয়ে যেন গলায় শব্দ আঁটকে গেছে কোনো কথা বের হচ্ছে না। রিশান একটু বেশিই শক্ত করে ধরেছে শায়েরাকে তার ফলে ও ব্যথাও পাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করে কথা বলতে সক্ষম হয় শায়েরা,
শায়েরাঃ আ আমার হাতে ব্যথা লাগছে রিশান…( ঢোক গিলে )
শায়েরার কথায় হুঁশ ফিরে আসলো রিশানের। শায়েরার ভয়ার্ত ফেসের দিকে খেয়াল দিতেই নিমিষেই যেন ওর রাগ উধাও হয়ে গেল।
রিশান শায়েরাকে ছেড়ে দুই কদম পিছিয়ে দাঁড়ালো।
শায়েরা ব্যথা জায়গায় হাত বুলাতে বুলাতে হালকা ভয়েজে বলতে শুরু করে।
শায়েরাঃ স্যরি! কিন্তু আমি ইচ্ছে করে করিনি। আমার গাড়িতে সমস্যা হচ্ছিল তাই ড্রাইভার চাচা ওটাকে গ্যারেজে নিয়ে গেছে। আর আমি ভালো করে এখানকার রাস্তাও চিনি না তাই একা যেতে ভয় করছিল এজন্যই…. আপনি কি আমাকে একটু বাড়িতে পৌঁছে দিবেন প্লীজ?
রিশান শায়েরার কথা শুনে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে শায়েরাকে ক্রস করে গাড়িতে উঠে বসে। শায়েরার মুখটা নিমিষেই ফ্যাকাসে হয়ে যায়।
শায়েরাঃ হার্টলেস ক্রোকোডাইল।( বিরবির করে )
রিশানঃ ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসুন আমার লেইট হচ্ছে।( শায়েরাকে উদ্দেশ্য করে )
রিশানের কথা শুনে শায়েরা হা হয়ে যায় পরক্ষনেই নিজেকে সামলে লাফাতে লাফাতে গাড়িতে উঠে বসে।
শায়েরা সিটে বসে নিজের ফোন বের করে ড্রাইভারকে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয় যে গাড়ি অফিসের পার্কিং থেকে বাসায় নিয়ে যেতে ও গাড়ি দিয়ে আসবে না। ম্যাসেজটা সেন্ট করেই মুচকি হাসে ও। রিশান গাড়ি স্টার্ট দিতে গিয়েও থেমে যায়।
শায়েরাঃ কি হলো গাড়ি স্টার্ট দিন।
রিশানঃ সিটবেল্ট লাগান।
শায়েরাঃ আপনার সিটবেল্ট তো লাগানোই।( রিশানের দিকে তাকিয়ে বোকার মতো)
রিশানঃ আমার না আপনার।( দাঁত খিঁচে)
শায়েরাঃ উপ্স! স্যরি।
শায়েরা সিটবেল্ট লাগানোর জন্য বেল্ট টানলেও বেল্টটা জ্যাম হয়ে আছে। শায়েরা চেষ্টা করছে তাও পারছে না। রিশান বিষয়টা খেয়াল করে নিজের সিটবেল্ট খুলে শায়েরার দিকে ঝুঁকে যায় সাথে সাথে শায়েরা অপ্রস্তুত হয়ে পরে পেছনের দিকে ঝুঁকে যায়। রিশান ওর উপরে থেকে সিটবেল্টটা বের করার চেষ্টা করছে।
শায়েরার হাত পা পুরো জমে গেছে নিঃশ্বাস ও যেন আসছে না কারন রিশান ওর একদম কাছ ঘেঁষে আছে। রিশানের কপালের সামনের বাড়তি চুল গুলো শায়েরার ঘাড়ে লাগছে শায়েরার এতক্ষন অকওয়ার্ড লাগলেও এখন যেন রিশানের থেকে ওর চোখ-ই সরছে না। কপালের সামনের বাড়তি চুল গুলো একদম ভ্রু অব্দি পরছে আর রিশানের নড়ার ফলে সেগুলো দোল খাচ্ছে।
শায়েরার এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে রিশানের চুল গুলো স্পর্শ করতে। অটোমেটিক্যালি শায়েরার হাত রিশানের দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু স্পর্শ করার আগেই রিশান বেল্ট লাগিয়ে সরে যায় আর শায়েরা সোজা হয়ে বসে পরে। রিশান গাড়ি স্টার্ট দেয়।
রিশান শায়েরার দিকে না তাকিয়েই ড্রাইভ করছে আর শায়েরা জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে অবশ্যই একটু পর পর আড়চোখে দেখছে ও রিশানকে।
বাড়ির সামনে আসতেই গাড়ি থামায় রিশান। শায়েরা গাড়ি থেকে নেমে যায় নিশ্চুপ ভাবে। শায়েরা থ্যাংক ইউ বলতে নিলেই রিশান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয়। শায়েরাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিশান চলে যায়।
শায়েরাঃ ফিলিংলেস!
HayArth?
আর্থ বাইক নিয়ে হায়াতির কলেজের বাইরে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কলেজের আশেপাশের সবার নজরই আর্থের দিকে কিন্তু আর্থের সে দিকে খেয়াল নেই ও ফোনে গেইম খেলতে ব্যস্ত। আর্মি স্টাইল শার্ট, স্কিনি জিন্স চোখে ইয়ালো সানগ্লাস পুরো সিবিআই লুক।
হায়াতি ওর ফ্রেন্ড আনিতা আর বাকিদের সাথে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে। হঠাৎ সামনের দিকে চোখ পড়তেই হায়াতি থমকে যায় আর্থকে দেখে। সাথে সাথে আনিতার পেছনে লুকিয়ে পড়ে ও।
আনিতাঃ কিরে কি হলো?
হায়াতিঃ অ্যানাকন্ডা সামনে দাঁড়িয়ে, যদি ধরে ফেলে কাঁচা গিলে খাবে ঢোক ও গিলবে না।( ধীরে ধীরে )
আনিতাঃ কিসব হাবিজাবি বলছিস আর…. সামনের দিকে তাকিয়ে কথা বন্ধ হয়ে যায় আনিতার আর্থকে দেখে।
>> আর্থ রায়জাদা!( অবাক প্লাস হা হয়ে ) আমার ক্রাশ বিশ্বাস হচ্ছে না ও এখানে। বেবি চিমটি দে না একটা।
হায়াতি আনিতার কথায় রেগে জোরে চিমকি কেটে দেয় ওর হাতে।
আনিতাঃ আহহ্ এতো জোরে দিতে বলেছি শয়তান মেয়ে।( রেগে )
হায়াতি আনিতার হাত ধরে ওকে আড়ালে নিয়ে যায় যেন আর্থ ওকে না দেখতে পারে।
আনিতাঃ কি করছিস লুকাচ্ছিস কেন?
হায়াতিঃ আগে বল তুই ওকে কিভাবে চিনিস?
আনিতাঃ কাকে?
হায়াতিঃ আর্থ রায়জাদাকে।
আনিতাঃ নিউজে দেখেছি। ( লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে)
হায়াতিঃ সিরিয়াসলি!
RikShika?
রিশিকাঃ স্টুপিড গাধা ইডিয়ট আমাকে রেখেই চলে গেছে। আমি আর কখনোই কথা বলবো না ওনার সাথে নেভার এভার এভারররর…. কফির মগ নাড়াচ্ছে আর রাগে বিরবির করছে রিশিকা।
হঠাৎ ওর সামনে বড় একটা গোলাপের বুকি রেখে দিল কেউ। রিশিকা মাথা তুলে তাকাতেই দেখে রিক্ত ঠোঁটে টেডি স্মাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রিক্তঃ স্টুপিড গাধা ইডিয়ট যাই-ই হই না কেন কিন্তু তোমাকে একা রেখে যাওয়ার মতো বোকা আমি না। ( রিশিকার পাশে বসে)
রিক্তর কথা শুনে হেসে দেয় রিশিকা। রিক্ত রিশিকার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।
To be continued…….