#You_Are_My_Destiny
#Mr_Arrogant_3?,10,11
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_10
?
রিশিকাঃ তাড়াতাড়ি খেয়ে বাসায় যান, ভাইয়া যে কোনো সময় চলে আসবে।( চিন্তিত হয়ে )
রিক্তঃ উফ্ রিশু একটু শান্তিতে খেতেও কি দিবে না? তোমার ভাই আজকে এতো তাড়াতাড়ি ফিরবে না ডোন্ট ওয়ারি।
রিশিকাঃ আপনি এতো সিউর কিভাবে?
রিক্তঃ সিউর না তবে আন্দাজ করে বললাম।
রিশিকাঃ আমার ভাইয়েরা আপনার মতো না যে রাতবিরেতে বাড়ির বাইরে ঘুরাফেরা করবে।
হঠাৎ গাড়ির আওয়াজ শুনতে পায় ওরা। রিশিকা ঘাবড়ে জানালার বাইরে তাকাতেই দেখে রিশানের গাড়ি ঢুকছে গেইট দিয়ে। রিশিকার ভয়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
রিশিকাঃ এখন কি হবে?
রিক্ত উঠে রিশিকার পাশে এসে দাঁড়ায় তারপর ভাবলেশহীন ভাবে বলে।
রিক্তঃ কি আর হবে? তোমার ভাই তোমাকে আর আমাকে রুমে একা দেখে প্রথম রেগে যাবে তারপর আমাদের মেনে নিয়ে বিয়ে করিয়ে দিবে অ্যান্ড দ্যান হ্যাপি এন্ডিং।( খুশি হয়ে )
রিশিকাঃ হাহ! আপনি আমার ভাইকে এখনও ভালো করে চিনতেই পারেননি। রিশ ভাই আপনাকে আমার রুমে দেখলে কোনো কৈফিয়ত ছাড়াই ডাইরেক্ট গুলি করে দিবে অ্যান্ড দ্যান এন্ডিং, কিন্তু ওটা হয়তো আপনার জন্য হ্যাপি হবে না।
রিক্তঃ মাফিয়া ফ্যামিলি বলে কথা…( বিরবির করে )
রিশিকাঃ বিরবির করে কি বলছেন?
রিক্তঃ ক কই কিছু না তো।
রিশিকাঃ হয়েছে এখন কথা বলে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি যান। ( রিক্তকে এক প্রকার ঠেলে)
রিক্তঃ চলে যাব মানে? আমি কোথাও যাচ্ছি না।( বিছানায় বসে )
রিক্তর কথায় রিশিকা শকড্ হয়ে তাকায় ওর দিকে।
রিশিকাঃ যাবেন না মানে?( অবাক হয়ে )
রিক্তঃ এতো কষ্ট করে এতো গুলো গার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাইপ বেয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে মেহনত করে শুধু তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি তার তুমি আমাকে এভাবেই তাড়িয়ে দিচ্ছ এটা কেমন বিচার রিশু?
রিশিকাঃ আমি কি বলেছিলাম আসতে?( রাগ দেখিয়ে)
রিক্তঃ ওসব আমি জানি না। নিজের মেহনতের রিওয়ার্ড না নিয়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না।
রিশিকাঃ আপনি কিন্তু এবার আমাকে রাগিয়ে দিচ্ছেন রিক্ত।
রিক্ত রিশিকার কথা কানেই নিচ্ছে না। রিশিকা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে তারপর বলে,
রিশিকাঃ কি চাই আপনার তাড়াতাড়ি বলেন।
রিক্ত রিশিকার কথায় মুচকি হাসে তারপর রিশিকার ঠিক বরাবর দাঁড়িয়ে ওর দিকে ঝুঁকে আঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁট দেখিয়ে দেয়। রিশিকা রিক্তর ইশারা বুঝতে পেরে চোখ বড় বড় করে ফেলে।
রিশিকাঃ ইম্পসিবল!( রিক্তকে হালকা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে)
রিক্তঃ তাহলে আমার যাওয়াও ইম্পসিবল। আসতে দাও তোমার ভাইদের।( ডোন্ট কেয়ার ভাবে বেডে শুয়ে পরলো )
রিশিকাঃ রিক্ত উঠেন বলছি।( রিশিকা রিক্তকে টেনে উঠিয়ে )
রিক্তঃ আচ্ছা তুমি চাও আমি চলে যাই তাই না?
রিশিকাঃ হুম।( মাথা নাড়িয়ে)
রিক্ত দরজার দিকে যেতেই রিশিকা ওর হাত ধরে আটকায় ওকে।
রিশিকাঃ আরেহ পাগল নাকি? দরজা দিয়ে না যেখান দিয়ে এসেছিলেন সেখান দিয়ে যান।
রিক্তঃ জানালা দিয়ে?( অবাক হয়ে )
রিশিকাঃ জি হ্যাঁ।
রিক্তঃ স্যরি বেবি জানালা দিয়ে যাওয়ার জন্য ট্যাক্স লাগবে।
রিশিকা রাগে ফুঁসছে রিক্তর কথা শুনে।
?
আর্থঃ আরেকটু সময় থাকলে কি এমন হতো? কিছু খাওয়াও হয়নি আমার। ক্ষুধায় পেটের ইঁদুর গুলো ঢোল বাজাচ্ছে।
রিশানঃ বাসায় কি খাবারের অভাব পরেছে নাকি।( গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে )
আর্থঃ তাও ঠিক। ( ভেবে ) আরেহ মনে পরেছে! আমি বাইরে যাওয়ার আগে ফ্রিজে পিজ্জা রেখেছিলাম। এখনি নিয়ে আসছি।( খুশিতে চোখ চিকচিক করছে) পিজ্জা আই’ম কামিং।( কিচেনে যেতে যেতে )
রিশান পানি খেয়ে নিজের রুমে যেতে নিলেই ওর চোখ যায় উপরে রিশিকার রুমের দিকে। রুমে থেকে আলো বের হচ্ছে।
রিশানঃ রিশিকা কি এখনো ঘুমায় নি?
আর্থ ফ্রিজ খুলতেই ওর খুশি সব মাটিতে মিশে যায়।
আর্থঃ আমার পিজ্জা কোথায় গেল?( কাঁদো কাঁদো ভাবে )
আর্থ পুরো ফ্রিজ খুঁজেও ওর পিজ্জার বক্স পেল না। নিরাশ হয়ে ড্রইং রুমে ফিরে আসে ও।
রিশানঃ তোর পূর্নিমার মতো ফেসে হঠাৎ অমাবশ্যা ছেয়ে গেল কেন?
আর্থঃ আমার পিজ্জা কে যেন খেয়ে ফেলেছে ভাই। ( মুখ গোমড়া করে )
রিশান হাসছে। আর্থ টেবিল থেকে একটা আপেল তুলে ওটাতে বাইট বসিয়ে বলে।
আর্থঃ আজকে এটা দিয়েই কাজ চালাতে হবে। গুড নাইট ভাই – খেতে খেতে ওর রুমে চলে গেল।
আর্থ চলে যেতেই রিশান রিশিকার রুমের দিকে পা বাড়ায়। রিশিকার রুমের সামনে আসতেই থেমে যায় ও। ভিতর থেকে শব্দ আসছে কথা বলার কিন্তু স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না। রিশানের মনে খচখচ করছে।
রিশান আর দেরি না করে সোজা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেল। দরজা লক করা না থাকায় আরও সুবিধা হয়েছে ওর। ভিতরে ঢুকেই টাস্কি খায় ও। ভাবলো কি আর হলো কি। রিশিকা বসে ল্যাপটপে মুভি দেখছে।
রিশিকাঃ ভাইয়া তুমি?( মাথা তুলে তাকিয়ে )
রিশান অপ্রস্তুত হয়ে পরে। যদি এখন রিশিকাকে বলে ও অন্য কিছু ভেবে ওর রুমে এসেছে তাহলে নিশ্চয়ই রিশিকা চিল্লিয়ে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিবে। মিথ্যা বলা ছাড়া উপায় নেই এখন ওর।
রিশানঃ তোর রুমের লাইট জ্বালানো ছিল ভাবলাম হয়তো না নিভিয়ে ঘুমিয়ে পরেছিস তাই চেক করতে আসলাম।
রিশিকাঃ আমিতো মুভি দেখছিলাম।
রিশানঃ ওহ। অনেক রাত হয়ে গেছে ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘুমা।
রিশিকাঃ আচ্ছা। তুমি যাও আমি এখনি ঘুমিয়ে পরব।
রিশান বেরিয়ে যেতে নিলেই ওর চোখ যায় পিজ্জার বক্সের দিকে।
রিশানঃ বেচারা আর্থ। ( মনে মনে হেসে )
রিশান খালি প্যাকেটটা নেওয়ার জন্য রুমে ঢুকতেই রিশিকা ঘাবড়ে রিশানের পথ আটকায়।
রিশিকাঃ ভাইয়া ওখানে কিছু নেই।( ঘাবড়ে )
রিশানঃ আমিতো পিজ্জার খালি প্যাকেটটা নিতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তুই এমন বিহেভ করছিস কেন?
রিশিকাঃ তুমি কষ্ট করবে কেন আমি সকালে ফেলে দিব। তুমি যাও।
রিশানঃ কিন্তু…
রিশিকাঃ ভাইয়া প্লিজ তুমি যাও আমি ঘুমাবো। গুড নাইট।
রিশিকা রিশানকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঠেলে ওকে রুম থেকে বের করে দেয় তারপর রুম লক করে দেয়।
রিশান বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে। ও বুঝতে পারছে না হঠাৎ রিশিকার এমন অদ্ভুত আচরণের কারন।
রিশানঃ ওর আবার কি হলো? আমি হয়তো বেশি ভাবছি।
রিশান মাথা থেকে বিষয়টা ঝেড়ে চলে যায়।
দরজায় হেলান দিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছে রিশিকা। অনেক কষ্টে মিথ্যা বলতে সক্ষম হয়েছে ও। শরীর এখনো কাঁপছে যদি রিশানের কাছে ধরা পড়ে যেত আল্লাহই জানেন কি হতো।
রিশিকাঃ থ্যাংক ইউ আল্লাহ বাঁচিয়ে দিলে।( স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে )
হঠাৎ রিক্তর কথা খেয়ালে আসতেই দ্রুত আলমারির সামনে চলে যায় রিশিকা। রিশানকে উপরে আসতে দেখে কোনো উপায় না পেয়ে রিক্তকে কাবার্ডের ভিতর জোর করে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় ও।
রিশিকাঃ রিক্ত এবার বেরিয়ে আসেন ভাইয়া চলে গেছে – কাবার্ডের সামনে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলছে ও কিন্তু রিক্তর কোনো রেসপন্স আসছে না।
রিশিকাঃ ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি?
রিক্তর কোনো রেসপন্স না পেয়ে রিশিকা নিজেই কাবার্ডের দরজা খুলে দিল কিন্তু দরজা খুলতেই রিক্ত ওর উপরে ঢলে পড়ল। রিশিকা রিক্তর ভাড় না সামলাতে পেরে ওকে নিয়ে পরে যায়।
রিক্ত রিশিকার উপর আর রিশিকা ফ্লোরে। রিক্তর কোনো সেন্স নেই। রিশিকার ভয়ে করছে রিক্তকে সেন্সলেস দেখে। নিজের উপর থেকে রিক্তকে সরিয়ে উঠে বসে ও।
রিশিকাঃ রিক্ত! আপনার কি হলো হঠাৎ? চ চোখ খুলছেন না কেন?( ভয়ার্ত কন্ঠে )
রিশিকার কান্না আসছে রিক্তর এই অবস্থা দেখে।
রিশিকাঃ কি করব আমি এখন?( ভয়ে ভয়ে )
রিশিকা রিক্তর বুকে কান পেতে ওর হার্টবিট বুঝার চেষ্টা করছে। হঠাৎ রিক্ত নিজের দু হাত উঠিয়ে রিশিকাকে জড়িয়ে ধরে। আচমকা এমন হওয়ায় রিশিকা ঘাবড়ে। মাথা তুলে রিক্তর দিকে তাকায় ও। রিক্ত হাসছে।
রিশিকাঃ আপনি ড্রামা করছিলেন?( রেগে )
রিশিকা রিক্তর উপর থেকে রেগে উঠে যেতে নিলেই রিক্ত ওর হাত ধরে টেনে নিজের বুকের ফেলে ওকে। রিশিকা চোখ বড় বড় তাকায় রিক্তর দিকে।
রিক্ত রিশিকার চুলের ভাঁজে হাত দিয়ে ওকে নিজের দিকে ঝুঁকিয়ে নেয়। রিশিকার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল রিক্ত। আচমকা এমন হওয়ায় মনে হচ্ছে শরীরে হাজার ভোল্টের শক লেগেছে রিশিকার। মাথা পুরো ব্লাঙ্ক হয়ে গেছে পুরো শরীর কাঁপছে ওর। রিক্তর কাঁধ শক্ত করে খামচে ধরে রিশিকা।
রিক্ত রিশিকাকে ছেড়ে ওর চেহারার দিকে তাকায়। গাল পুরো লাল হয়ে গেছে ওর। চুপ হয়ে আছে রিশিকা মনে হচ্ছে এখনো শকডে আছে।
রিক্তঃ রিশু বেবি আমি তোমার ঠোঁটে কিস করেছি তাহলে তোমার গাল কেন লাল হলো?( মজা করে )
রিক্তর কথায় ঘোর কাটে রিশিকার সাথে সাথে তাড়াহুড়ো করে উঠে দাঁড়ায় ও। রিক্তও উঠে দাঁড়ায়।
রিশিকাঃ এটা কি ছিল?( রেগে )
রিক্তঃ আমার রিওয়ার্ড। তুমি নিজে থেকে দিবে না তাই আমি আমার স্টাইলে নিয়ে নিলাম।
রিশিকাঃ আপনি…
রিক্তঃ আমি কি?
রিশিকাঃ অনেক বিরক্তিকর মানুষ।
রিক্তঃ আমি ভাবলাম তুমি বলবে আমি অনেক রোমান্টিক একজন মানুষ।
রিশিকাঃ আপনি যাবেন নাকি আমি….
রিক্তঃ যাচ্ছি যাচ্ছি।( হেসে ) গুড নাইট মাই সুইটহার্ট – আবারও আচমকা রিশিকার গালে কিস করে।
রিক্ত আর সময় নষ্ট না করে জানালা দিয়ে যেভাবে এসেছিল সেভাবেই বেরিয়ে যায়।
রিশিকার মাথা ভনভন করছে। টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এক ঢোকে সব শেষ করে দিল ও। গালে হাত দিয়ে বিছানায় বসে পরে ও। ঘটনাটা মনে পরতেই কান আর গাল গরম হয়ে যাচ্ছে রিশিকার।
রিশিকাঃ এটা নিশ্চয়ই স্বপ্ন সত্য না। ( ঢোক গিলে )
রিশিকা নিজের হাতে জোরে একটা চিমটি কাটে।
রিশিকাঃ আহ! এটা স্বপ্ন নয় সত্যি।( বালিশ দিয়ে মুখ ঢেকে )
To be continued……
#You_Are_My_Destiny
#Mr_Arrogant_3?
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_11
সকাল,,,?
রিশিকা রিশান আর রওশন ডাইনিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে আর সুবহা ওদের খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। আর অন্য দিকে আর্থ নিজের টিশার্ট খুজে পুরো রুম তছনছ করছে। কাবার্ডের যত ড্রেস আছে সব রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ওর।
আর্থঃ আমার ফেভারিট টিশার্টটা কোথায় গেল? কালকেই তো কাবার্ডে দেখেছিলাম।( খুঁজতে খুঁজতে ) বড় আম্মুকে জিজ্ঞেস করি।
আর্থ খালি গায়েই বেরিয়ে আসে। সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে সুবহাকে ডাকে ও।
আর্থঃ বড় আম্মুউউউউ…( চেঁচিয়ে )
আর্থের চেঁচানো শুনে সবাই উপরে তাকায়।
সুবহাঃ আর্থ সবার খাওয়া শেষ হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি আয়।
আর্থঃ খাওয়া পরে হবে আগে বলো আমার পান্ডার টিশার্ট টা কোথায়? আমি পুরো রুম খুঁজেও পাইনি।
রিশানঃ কোনটা? যেটাতে পুতুল আঁকানো?( হেসে )
আর্থঃ ব্রো, ওটা পুতুল না পান্ডা ওকে।
আর্থের কথা শুনে গলায় খাবার আঁটকে যায় রিশিকার। সাথে সাথে পানি খেয়ে নেয় ও। রিশিকা এই টিশার্ট টাই রিক্তকে দিয়েছিল। ওর খেয়ালেই ছিল না যে টিশার্ট টা আর্থের প্রিয়, এটা না পেলে আর্থ পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিবে।
সুবহাঃ তোর কাবার্ডেই আছে ভালো করে দেখ।
আর্থঃ বড় আম্মু পুরো রুম খুঁজেও পাইনি সত্যি।( নিচে নামতে নামতে ) তুমিতো জানো আমি বাসায় থাকলে ওই টিশার্ট টা পরি।
রিশানঃ এখন ওই টিশার্ট নেই বলে তুই খালি গায়ে ঘুরবি? লজ্জা বলতে কিছু আছে তোর?
আর্থঃ ছেলেদের লজ্জা থাকতে নেই। লজ্জা তো মেয়েদের জন্য তাইনা বড় আব্বু?( রওশনকে )
রওশনঃ একদম।( খেতে খেতে )
সুবহা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই রওশন খাওয়া শেষ করে দাঁড়িয়ে যায়।
রওশনঃ আমার খাওয়া হয়ে গেছে আমি রুমে যাচ্ছি – রওশন ওর রুমে চলে গেল।
আর্থঃ তাছাড়া ভাইয়া, আমার বাসায় আমি খালি গাঁয়ে কি নেকেড হয়েও ঘুরতে পারি এতে প্রবলেম কোথায়?
রিশানঃ তুই পারবি।
আর্থঃ কি?
রিশানঃ নেকেড হয়ে ঘুরতে।
রিশানের কথায় রিশিকা হেসে দেয়। আর্থ রেগে লাল হয়ে যাচ্ছে।
আর্থঃ ওটা কথার কথা ছিল। তাছাড়া রিশ ভাই তোমার সমস্যা টা কি আমার খালি গায়ে থাকায়? দেখ আমি সিক্স প্যাক কেন করেছি? অবশ্যই সবাইকে দেখানোর জন্য। এখন খালি গায়ে না থাকলে সিক্স প্যাক দেখাবো কি করে।
রিশানঃ দেখা আমার কি? কিন্তু আমার সামনে থেকে দূরে গিয়ে।
আর্থঃ যাব না কি করবে?
রিশানঃ দেখবি কি করবো?
রিশিকা ওদের দুজনের ঝগড়া ইন্জয় করছে আর খাচ্ছে আর সুবহা ওদের কিভাবে চুপ করাবে সেটা ভাবছে।
সুবহাঃ তোরা দুটা চুপ করবি?( রেগে )
রিশান আর আর্থ দুজনেই চুপ হয়ে যায় সুবহার কথায়।
সুবহাঃ রিশান চুপচাপ খাবার খা আর আর্থ দশ মিনিটে রেডি হয়ে আয় খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
আর্থঃ ওকে। ( মুখ গোমড়া করে )
আর্থ ঘুরে ওর রুমের দিকে যেতেই হঠাৎ ধাক্কা লেগে যায় কারো সাথে। সামনে তাকাতেই দেখে হায়াতি দাঁড়িয়ে। হায়াতি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আর্থের দিকে। আর্থ পুরো শকড হয়ে গেছে।
আর্থঃ আআআআআ – চিৎকার করে সুবহার পেছনে চলে গেল আর্থ তারপর ওর আঁচল দিয়ে নিজের শরীর ঢেকে ফেলল।
আর্থঃ ত তুমি আমার বাসায় কি করো?( নার্ভাস হয়ে )
হায়াতিঃ আমিতো রিশিকার কাছ থেকে নোটস নিতে এসেছিলাম আমি কি জানি তুমি নেকেড হয়ে বাসায় ঘুরছো।( মুখ চেপে হেসে )
আর্থঃ এক্সকিউজ মি! আমি নেকেড হয়ে ঘুরছি না ওকে, জাস্ট শার্ট পরিনি।
হায়াতিঃ ওই একই কথা।
আর্থঃ ত তুমি….
রিশানঃ এখনো নির্লজ্জের মতো একটা মেয়ের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তুই নিজের রুমে যাবি?
আর্থঃ যাচ্ছি তো। তুমি ওই দিকে ফিরে তাকাও।( হায়াতিকে বলল )
রিশিকাঃ কেন ভাইয়া তোমার সিক্স প্যাক দেখাবে না?( টিজ করে)
আর্থঃ বড় আম্মুউউ ( নাক ফুলিয়ে আছে।)
হায়াতি আর রিশিকা মুখ চেপে হাসছে।
সুবহাঃ হায়াতি মামনি একটু ওইদিকে ফিরে তাকাও তো পাগলটা নাহলে এভাবেই আমার আঁচল ধরে রাখবে।
হায়াতিঃ ওকে আন্টি – পেছনে ফিরে।
আর্থঃ মিস হাতি দেখে নিব তোমাকে।( মনে মনে )
আর্থ এক প্রকার দৌড়ে উপরে চলে গেল। সবাই ওর কান্ড দেখে হাসছে।
রিশিকাঃ তুমি বসো আমি নোটস নিয়ে আসছি তারপর এক সাথে কলেজে যাব।
হায়াতিঃ হুম।
রিশানঃ আম্মু আমি অফিসে গেলাম বাই – রিশানও অফিসের জন্য বেরিয়ে গেল।
সুবহাঃ হায়াতি মামনি আর্থের কথায় কিছু মনে করো না ও এমনি।
হায়াতিঃ না আন্টি আমি কিছু মনে করি নি।
আর্থ একটা অফ হোয়াইট শার্ট আর নেভি ব্লু ব্লেজার পরে নিচে আসে।
আর্থ চোখ নামিয়ে হাঁটছে। মনে হচ্ছে লজ্জায় যেন মাথা কাঁটা যাচ্ছে ওর। হায়াতি জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া দিচ্ছে। আর্থ কোনো রকমে হায়াতিকে ইগনোর করে টেবিল থেকে স্যান্ডউইচ নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
আর্থ চলে যেতেই হায়াতি ওর ফোন বের করে তোলা ছবি গুলো দেখতে শুরু করে। ও লুকিয়ে আগেই আর্থের কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েছিল ওই অবস্থায়।
হায়াতিঃ মিস্টার আর্থ উপ্স স্যরি দ্যা গ্ৰেইট সিবিআই অফিসার আর্থ রায়জাদা তোমার দূর্বলতা আমার ফোনে ক্যাপচার হয়ে গিয়েছে। এখন তুমি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করবে না বরং আমি তোমাকে বুঝাবো ব্ল্যাকমেইল কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি – ছবি গুলো দেখছে আর মনে মনে বলছে।
?
রিশান অফিসে এসেই ওর পিএ কাজলের কাছ থেকে মিটিংয়ের সব ডিটেইল্স নিয়ে চেক করে নেয়।
রিশানঃ শায়েরা এসেছে?( ফাইল চেক করতে করতে )
কাজলঃ না স্যার এখনো আসেন নি।
কাজলের কথা শুনে রিশান হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখায়।
রিশানঃ মিটিংয়ে আর মাত্র পনের মিনিট বাকি আর উনি এখনো অফিসেই আসেননি?
কাজলঃ স্যার আমরা কি অপেক্ষা করবো ম্যামের জন্য?
রিশানঃ প্রয়োজন নেই। চলো – ফাইল গুলো হাতে নিয়ে।
রিশান আর কাজল মিটিং রুমে চলে যায়। সবাই মিটিং রুমে উপস্থিত শায়েরা বাদে।
ক্লাইন্টঃ মিটিং শুরু করা যাক।
রিশান দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে শায়েরা এসেছে কিনা কিন্তু ও এখনো আসেনি।
রিশানঃ মিটিংয়ে আরও দশ মিনিট বাকি আছে একটু অপেক্ষা করুন আমার পার্টনার চলে আসবে।
সবাই রিশানের কথামত অপেক্ষা করতে শুরু করে শায়েরার। দশ মিনিট ওভার হয়ে গেছে কিন্তু শায়েরার আসার খবর নেই।
রিশানঃ মিটিং শুরু করা যাক – প্রেজেন্টেশনের জন্য দাঁড়িয়ে।
রিশান প্রেজেন্টেশন দেওয়ার জন্য মনিটরের দিকে যেতেই তাড়াহুড়ো করে শায়েরা প্রবেশ করে।
সবাই দরজার দিকে তাকায়। রিশান সহ সবাই শায়েরাকে দেখে হা হয়ে যায়। শায়েরা ওদের নতুন প্রজেক্টের জন্য যে কস্টিউম ডিজাইন করা হয়েছে সেটাই পরেছে। ওদের কস্টিউম ডিজাইন কোম্পানি নতুন প্রোডাক্ট হিসেবে এমন সব ড্রেস আর শাড়ি ডিজাইন করেছে যেগুলো সব বয়সের মেয়েরাই কমফোর্টেবল ভাবে পড়তে পারবে। একদম লাইট আর সিম্পল ডিজাইনের মধ্যে ফ্যাশনেট ড্রেস।
শায়েরাঃ স্যরি আই’ম লেইট।
শায়েরা এসে রিশানের পাশে দাঁড়ায়।
রিশানঃ তুমি এই ড্রেস পরে এসেছো কেন?( অবাক হয়ে )
শায়েরাঃ মিটিং শেষে বুঝতে পারবে।( ফিসফিসিয়ে) তুমি বসো আমি প্রেজেন্টেশন দেখাচ্ছি।
রিশান শায়েরার কথা মতো ওকে দায়িত্ব দিয়ে নিজে বসে পরলো।
শায়েরা সবাইকে প্রেজেন্টেশন দেখাচ্ছে। শায়েরার কথা বলার স্টাইল মুগ্ধকর তাছাড়া প্রেজেন্টেশন দেখানোর সময় ওর কনফিডেন্স একটুও কমে নি। রিশান ভাবে নি শায়েরা এতো ভালো করে কাজ সামলাতে পারবে। মুগ্ধ হয়ে দেখছে ও শায়েরাকে।
প্রেজেন্টেশন শেষে ক্লাইন্টরা শায়েরার অনেক প্রশংসা করে। আর প্রজেক্টও ওদের কোম্পানিকেই দেয়।
সবাই চলে যেতে রিশান নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় শায়েরার দিকে।
রিশানঃ কংরেচুলেশন।
শায়েরাঃ ইউ টু।( হাত মিলিয়ে )
রিশানঃ এখন বলো, তুমি এই কস্টিউম পরে এসেছো কেন?
শায়েরখঃ কারনটা একদম সিম্পল। দেখ ক্লাইন্টরা আমাদের প্রোডাক্ট শুধু স্যাম্পল হিসেবে দেখে যার জন্য উনারা প্রোডাক্টের বিষয়ে ভালো করে বুঝতে পারে না উনাদের মাইন্ডে কনফিউশন থেকে যায় সত্যিই কি প্রোডাক্ট টা ভালো হবে কিনা। কিন্তু আমরা যদি নিজেদের প্রোডাক্ট নিজে ব্যবহার করে এক্সেম্পল দেই তাহলে উনাদের মনে কোনো কনফিউশন বা ডাউট থাকবে না।( এক নাগাড়ে বলল )
রিশানঃ কিন্তু তুমি তো ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের স্টুডেন্ট তাহলে তুমি ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে এতো ভালো করে জানো কিভাবে?
শায়েরাঃ তোমার কাছ থেকেই তো শিখেছি। তুমি নিজের ইন্টারভিউতে এগুলো বলেছিলে। তোমার প্রতিটা কথা প্রতিটা লাইন আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। ( মনে মনে ) আজকে মুড নেই বলার অন্য একদিন বলব। তার উপর এতো বড় প্রেজেন্টেশন দিয়ে আমার এখন ক্ষুধা লেগে গেছে – বাচ্চাদের মতো ফেস করে।
রিশান হেসে দেয়। শায়েরা অবাক হয়ে তাকায় রিশানের মুখের দিকে। সচরাচর অনেক কম হাসতে দেখা যায় রিশানকে।
রিশানঃ চলো তোমাকে একটা স্পেশাল জায়গা থেকে খাইয়ে আনি।
শায়েরাঃ রিয়েলি?( অবাক হয়ে )
রিশান সামনে হাঁটা ধরে আর ওর পেছনে শায়েরা।
কাজল ওদের বের হতে দেখে দ্রুত রিশানের সামনে আসে।
কাজলঃ স্যার আপনার লাঞ্চ কেবিনে আনব?
রিশানঃ না প্রয়োজন নেই আজকে আমরা বাইরে লাঞ্চ করবো।
কাজল ভাবছে হয়তো ওর সাথে লাঞ্চ করার কথা বলছে রিশান।
কাজলঃ আমি এখনি আমার ব্যাগ নিয়ে আসছি।
রিশানঃ তুমি কোথায় যাচ্ছ?
কাজলঃ আপনিই তো বললেন আমরা বাইরে লাঞ্চ করবো।
রিশানঃ আমি শায়েরার কথা বলেছি। যে পর্যন্ত আমরা না আসি তুমি বাকি কাজ গুলো সামলে নিও।
কাজলের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় রিশানের কথা শুনে। শায়েরা আর রিশান বেরিয়ে যায়। কাজল ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ রাগে লাল হয়ে গেছে। এক হাত দিয়ে আরেক হাতে জোরে খামচি দিয়ে নিজের রাগ সংবরণ করার চেষ্টা করছে ও।
কলেজে,,,?
রিশিকার ক্লাস চলছে। ওর পাশের সীট খালি ছিল তখনি কেউ একজন ওর পাশে এসে বসে পরলো।
রিশিকা পাশে তাকাতেই দেখে একটা ছেলে। হয়তো কলেজে নতুন এসেছে। ছেলেটা রিশিকার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
>>> হাই আই’ম অরুণ।
রিশিকা ছেলেটার দিকে এক পলক তাকিয়ে আবার নিজের পড়ায় মনোযোগ দেয়।
অরুনঃ আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?
রিশিকা নিজের বই গুছিয়ে উঠতে উঠতে অরুনের উদ্দেশ্যে বলে,
রিশিকাঃ স্যরি আমার যথেষ্ট বন্ধু আছে আর কোনো বন্ধুর প্রয়োজন নেই – কথাটা বলেই চলে গেল।
অরুনঃ এতো ইগো।( রিশিকার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে )
পেছন থেকে একটা ছেলে অরুনের পাশে এসে বসে ওকে বলে,
>>> তুমি হয়তো ওকে চিননা তাই ওর সাথে কথা বলার সাহস করেছো। রওশন রায়জাদার মেয়ে ও তার উপর রিক্ত মেহরাবের গার্লফ্রেন্ড। ওর কাছ থেকে যত দূরে থাকবে ততই সেফ থাকবে।
ছেলেটার কথায় অরুন কিছু বলল না শুধু অদ্ভুত হাসি দিল।
To be continued……