You_Are_My_Destiny #Mr_Arrogant_3?,20,21

0
1436

#You_Are_My_Destiny
#Mr_Arrogant_3?,20,21
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_20

?
কেবিনে বসে রিশানের দেওয়া ফুল গুলো দেখছে আর ব্লাশিং হচ্ছে শায়েরা। ফুল গুলোকে সুন্দর করে ফুলদানিতে সাজিয়ে ডেস্কে রেখেছে শায়েরা যেন সারাক্ষণ দেখতে পারে।

শায়েরাঃ আমি জানি রিশানের মনেও আমার জন্য অনুভূতি আছে কিন্তু ও এটা কখন মুখে স্বীকার‌ করবে?( মন খারাপ করে ) কিন্তু ও মুখে না বললেও আমি ঠিকই বুঝতে পারি ওর মনের কথা। ও যদি কখনো না ও বলে যে ও আমাকে ভালোবাসে তবুও আমার আফসোস নেই কারন আমি জানি ওর মনে আমি জায়গা ঠিকই করে নিয়েছি।

শায়েরার ভাবনার মাঝেই‌ ওর কেবিন নক করে কাজল।

কাজলঃ মে আই কাম ইন?

শায়েরাঃ হ্যাঁ আসো।( সোজা হয়ে বসে )

কাজলঃ ম্যাম রিশান স্যার আপনাকে ডেকেছেন। বলেছেন উনি অফিসের নিচে আপনার অপেক্ষা করছেন।

শায়েরাঃ‌‌ অফিসের নিচে কেন?( দাঁড়িয়ে গিয়ে ) তুমি যাও আমি আসছি।

কাজল চলে যেতেই শায়েরা ওর ব্যাগ থেকে একটা আয়না বের করে চুল ঠিকঠাক করে নেয়।

শায়েরাঃ পারফেক্ট।( দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে )

শায়েরা আয়নাটা টেবিলে রেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।

লিফট দিয়ে নিচে নামার জন্য লিফটে উঠে পরলো শায়েরা। শায়েরা লিফটে উঠতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে কাজল মুখে অদ্ভুত হাসি ওর।

নিজ গতিতেই লিফট নিচে নামছে হঠাৎ কিছু একটা সমস্যা হয় লিফটে। আর স্পিডে নিচের দিকে আছড়ে পড়ে এটা। হঠাৎ এমন হওয়ায় শায়েরা সামলাতে পারে না লিফটের সাইডে বারি খেয়ে পরে যায় ও।

শায়েরাঃ আআ,,,( চিৎকার দিয়ে )

হঠাৎ আবার থেমে যায় লিফট। লিফটের লাইট আর সিসিটিভি দুটোই বন্ধ হয়ে গেছে।

শায়েরা পায়ে আর মাথায় ব্যথা পেয়েছে। উঠার চেষ্টা করেও পারছে না উঠতে শায়েরা।

ব্যাগ আর ফোন ভুলে কেবিনেই রেখে এসে পরেছে ও তাই কাউকে ফোন করার ও স্কুপ নেই।

শায়েরাঃ হ্যালো! বাইরে কে আছে শুনতে পারছে? আমি আঁটকে পরেছি – লিফটের দরজায় বারি মারছে আর হেল্প চাইছে শায়েরা।

লিফট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নিউজ পুরো অফিসে ছড়িয়ে গেছে। সবাই লিফটের সামনে চলে এসেছে দেখার জন্য কারন শেষে শায়েরাকেই লিফটে উঠতে দেখেছিল সবাই।

কেবিনের বাইরে হৈচৈ দেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে রিশান।

রিশানঃ এই হৈচৈ কিসের? – স্টাফকে জিজ্ঞেস করলো।

>> স্যার লিফট নষ্ট হয়ে গেছে হঠাৎ আর শায়েরা ম্যামও ভিতরে আঁটকে আছে – স্টাফ বলল।

স্টাফের কথা শুনে রিশান যেন বড়সর ধাক্কা খেলো। হাতের ফাইল ফেলেই দৌড়ে লিফটের কাছে গেল ও।

শায়েরার মাথা অনেকাংশ ফেটে গেছে রক্তও বের হচ্ছে কিন্তু অন্ধকার থাকায় বুঝা যাচ্ছে না।

বাইরের শোরগোল শুনতে পারছে ও এটাও বুঝতে পারছে যে সবাই চেষ্টা করছে ওকে বের করার।

কিন্তু বেশিক্ষণ চোখ খুলে রাখতে পারছে না শায়েরা চোখ যেন বুঁজে বুঁজে আসছে ওর।

রিশানঃ শায়েরা! ( চেঁচিয়ে ) ঠিক আছো তুমি? ভয় পেয়ো না আমি আছি এখানেই। এখনি তোমাকে বের করে ফেলব চিন্তা করো না।

রিশানের কন্ঠ শুনে যেন কিছুটা ভয় দূর হয়েছে শায়েরার। শায়েরা কিছুটা এগিয়ে হাত রাখে লিফটে, তারপর ভাঙা গলায় বলে ও।

শায়েরাঃ এখানে অনেক অন্ধকার রিশান ভয় করছে আমার।

শায়েরারর কাঁপা কন্ঠে কথা গুলো শুনে যেন বুকে‌ ব্যথা অনুভব হচ্ছে রিশানের। মনে হচ্ছে শায়েরা কষ্টে থাকলেও কষ্টটা ও পাচ্ছে।

লিফট ঘেঁষে বসে পরে রিশান অজান্তেই শায়েরা যেখানে হাত রেখেছে সেখানেই নিজের হাত রাখে ও।

রিশানঃ ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি আছি এখানে তুমি শুনতে পারছো না আমায়?( অস্ফুট কন্ঠে )

শায়েরাঃ শুনতে পারছি কিন্তু দেখতে পারছি না। মনে হচ্ছে আর কখনো দেখতেও পাবো না।

রিশানঃ কে বলেছে আমাকে দেখতে পারছো না তুমি হ্যাঁ? চোখ বন্ধ করো দেখো আমাকেই দেখতে পারবে।

শায়েরা রিশানের কথা মতো চোখ বন্ধ করে ফেলে আসলেই রিশানকে দেখতে পারছে ও। নিজের পাশে অনুভব করছে ওকে।

রিশানঃ শায়েরা!

শায়েরার কোনো সাড়াশব্দ আসছে না ভেতর থেকে। রিশানের মনে ভয় ঢুকে যায়।

রিশান বারবার শায়েরাকে ডাকলেও লাভ হচ্ছে না।‌

অনেক কষ্টে লিফটের দরজা খুলতে সক্ষম হয়েছে ওরা। দরজা খুলতেই শায়েরাকে পরে থাকতে দেখে রিশান। দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে ওকে তুলে ও।

রিশানঃ শ শায়েরা! – শায়েরার গালে হাত রেখে ওকে ডাকছে।

সময় নষ্ট না করে শায়েরাকে কোলে তুলে অফিস থেকে বেরিয়ে যায় রিশান।

?
হেডকোয়ার্টারের সিকিউরিটি রুমে লুকিয়ে প্রবেশ করে কেউ। কালো পোশাক আর মাথায় হুডি তাই বুঝা যাচ্ছে না কে।

আর্থ আর সাব্বির মিলে এরেন নামক টেররিস্ট এর বিরুদ্ধে কিছু ক্লু জোগাড় করেছে সেগুলোই চুরি করার জন্য এসেছে লোকটি।

এতো গুলো ফাইলের মাঝে আর্থের রাখা ফাইলটি খুঁজছে ও। শেষমেষ খুঁজে পেয়েও যায় লোকটি ফাইল।

কিন্তু ফাইলটা খুলতেই লোকটি অবাক হয়ে যায় কারন ফাইলে শুধু একটা ড্রইং। একটা চোরের পেছনে একটা পুলিশ রিভলবার ধরে আছে আর চোরের দু হাত উপরে উঠানো নিচে সুন্দর করে লেখা “ গেইম ওভার ”

লোকটি ফাইলটা বন্ধ করে নেয় ও ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে আর্থের জালে পা ফেলে দিয়েছে ও কারন এমন অদ্ভুত কাজ আর্থ ছাড়া কেউই করতে পারে না।

লাইট জ্বলে উঠে পুরো রুমে। একে একে সবাই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। আর্থ লোকটির পেছনেই ছবিটির মতো রিভলবার ধরে আছে।

আর্থঃ গেইম ওভার ইমরান উরফে এরেন – লোকটির মাথা থেকে হুডি সরিয়ে।

ইমরানঃ তুই সব জানতি তাই না?

আর্থঃ হ্যাঁ আবার না। এতো দিন সন্দেহ ছিল যে কেউ একজন আছে যে এরেনের হয়ে কাজ করছে কিন্তু পরে খেয়াল করে ভাবলাম যে এতো নিখুঁত ভাবে কোনো স্পাই তো কাজ করতেই পারবে না তখন সিউর হলাম যে এরেন নিজেই এখানে আমাদের হয়ে কাজ করছে।

ওই গুন্ডা গুলোকে তুই-ই পয়জন দিয়েছিলি তা শুধু সন্দেহ ছিল আমার কিন্তু গতকাল যখন কোরিডোরে তোর এই লাইটার পেলাম তখন আমার সন্দেহ সত্যে পরিনত হলো।

তারপর ছোট্ট একটা ট্র্যাপ আর শিকার পারলো ফাঁদে।‌

ইমরানঃ আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমান নেই তোর কাছে।

আর্থঃ যত টুকু আছে তোকে জেলে ঢুকানোর জন্য যথেষ্ট।

সাব্বির আর বাকিরা মিলে ইমরানকে নিয়ে গেল।

আর্থঃ নানুকে গুড নিউজ দিয়ে দেই যে মিশন ডান।( ফোন করে )

?
শায়েরাকে হসপিটাল এডমিট করেছে রিশান। শায়েরাকে যখন রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেছিল ও মনে হচ্ছিল যেন ওর জান দেহ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এতো ভয় এর আগে হয়তো কখনো পেয়েছে বলে মনে আসছে না রিশানের।

কেবিনের বাইরে বসে আছে রিশান। ডক্টর বলেছেন যে সিরিয়াস কিছু হয়নি শায়েরার। হালকা ব্যথা পেয়েছে দুই তিন দিনে ঠিক হয়ে যাবে।

শায়েরার সামনে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না রিশান। কেন যেন ওর আঘাত গুলো দেখতে পারছে না ও। শায়েরার ব্যথা দেখে ও সহ্য করতে পারছে না।

?
রিক্ত রিশিকাকে নিয়ে ক্যাফেতে এসেছে। এই এক মাসের যে গল্প গুলো জমেছে সব গুলো এক সাথে বলছে রিশিকা রিক্তকে।

রিক্ত কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর রিশিকার বকবক শুনছে। এই এক মাস কতটা মিস করেছে ও এই কথা গুলো।

ওদের কথার মাঝেই ওখানে অরুন আসে‌‌। অরুনকে দেখে অবাক হয় রিশিকা। অরুন আসতেই রিক্ত উঠে ওর কাছে চলে যায়। অরুনকে কিছু বলে রিক্ত তারপর কথা শেষ হতেই অরুন চলে যায় আর যাওয়ার আগে রিশিকার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে গেল ও।

রিশিকা এই হাসিটার মানে বূঝতে পারে না যতবারই অরুনকে দেখে অরুন এই হাসিটাই দেয়। অদ্ভুত লাগে বিষয়টা রিশিকার কাছে।

রিক্ত এসে বসতেই রিশিকা ওকে প্রশ্ন করে।

রিশিকাঃ আপনি ওকে চিনেন?

রিক্তঃ হ্যাঁ।

রিশিকাঃ লোকটা কতটা অদ্ভুত আপনি জানেন রিক্ত?

রিক্তঃ‌ হ্যাঁ এটাও জানি আফটার অল আমিই ওকে হায়ার করেছি।

রিশিকাঃ হায়ার করেছেন মানে?

রিক্তঃ‌ তুমিই তো আমাকে কলেজে আসতে বারন করতে তাই ওকে হায়ার করেছিলাম যেন কলেজে কোনো প্রবলেম হলে আমাকে জানায়।

তাছাড়া এই এক মাস আমি তোমার কাছে থাকতে পারিনি সময় দিতে পারিনি তোমায় থ্যাংকস টু অরুন ও আমাকে তোমার সব খবর দিত। এজন্যই তো দূরে থেকেও স্বস্তিতে থাকতে পেরেছি।

রিশিকা অবাক হয়ে শুনছে রিক্তর কথা। এতো দিন কতটা ভুল ভেবেছিল ও লোকটা ভেবেই নিজের উপর রাগ লাগছে ওর।

রিক্তঃ আপনি আমাকে আগে বলেন নি কেন? আমি কতটা ভুল ভেবেছি এ কয়দিন। ( রেগে ) আমার এমন বোকামি বিহেভিয়ার এর জন্যেই অরুন আমাকে দেখে হাসতো।( মুখ ফুলিয়ে ) এখনো হাসছিল।

To be continued…..

#You_Are_My_Destiny
#Mr_Arrogant_3?
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_21

চেয়ার থেকে উঠে টেবিলে রেজিগনেশন লেটার সাথে একটা চেক এক প্রকার ছুরে রাখলো রিশান। সামনেই কাজল দাঁড়ানো ছিল টেবিলের শব্দ শুনে কেঁপে উঠে ও।

রিশানঃ তোমার আর এখানে কাজ‌ করার প্রয়োজন নেই এগুলো তুলে এখনি আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যাও।( রেগে )

কাজলঃ কিন্তু আমার ভুলটা কি রিশান স্যার? হঠাৎ কেন….

কাজলকে ওর কথা শেষ করতে না দিয়েই রিশান বলতে শুরু করে,,,

রিশানঃ তোমার ভুল কি সেটা জানতে চাইছো?( তাচ্ছিল্য হেসে ) তুমি ভুল করোনি অপরাধ করেছো। তুমি কি ভাবো আমি কিছু জানি না? শায়েরার‌ এই অবস্থার জন্য তুমি দায়ী। তুমি এলিভেটর নষ্ট করেছিলে। শুধু তা নয় মিথ্যা বলে শায়েরাকে নিচে আসতেও বলেছিলে যেন ও লিফট ইউজ করে আর এসব হোক। শুধুমাত্র তোমার পরিবারের কথা চিন্তা করে তোমাকে আইনের আওতায় আনি নি। কারন আমি চাই না একটা মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট হোক‌। তোমার ভাগ্য ভালো যে শায়েরার কিছু হয়নি কারন যদি ওর কোনো ক্ষতি হতো তাহলে আমি কি করতাম তা তোমার কল্পনার বাইরে।

রিশানের কথা গুলো শুনে শব্দ করে কেঁদে দেয় কাজল তারপর বলতে শুরু করে।

কাজলঃ আমি অপরাধ করেছি সেটা আপনি দেখেছেন কিন্তু কেন করেছি সেটা ভেবে দেখেছেন কখনো? আপনার জন্য, হ্যাঁ‌ রিশান আপনার জন্য এমনটা করেছি আমি। শুধু মাত্র আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এতটা নিচে নেমেছি।( মাথা নিচু করে )

আপনি জানেন আমি এখানে কেন কাজ করছি? আপনার জন্য। শুধুমাত্র আপনার মন জয় করার জন্য আপনার পাশে, আপনার কাছে থাকার জন্য এখানে এসেছিলাম আমি। কত চেষ্টা করেছি আপনার মনে সে অনুভূতিটা জাগাতে যেটা আমার মনে আপনার জন্য আছে। কিন্তু আমি যাই করি না কেন আপনি কখনো আমার অনুভূতি বুঝার চেষ্টা করেন নি। কিন্তু তাও আমি হাল ছাড়িনি চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি।

কিন্তু শায়েরা আসার পর থেকে সব বদলে গেছে, আপনিও বদলে গেছেন। আপনার কেয়ার ভালোবাসা সব কিছু ওর জন্য। আমার দেওয়া ফুল আপনার পছন্দ হতো না কিন্তু ওর দেওয়া ক্যাকটাস কতটা যত্ন করে রেখেছেন‌ আপনি। ও আপনাকে আমার কাছ থেকে দূর করে দিয়েছে। যদি ও আমাদের মাঝে না আসতো তাহলে আজ নয়তো কাল আপনি আমার হয়ে যেতেন কিন্তু ও সব কিছু বরবাদ করে দিয়েছে।( কান্না প্লাস রাগ মিশ্রিত কন্ঠে )

আমি শুধু ওকে লিফটে আঁটকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম আমি বুঝতে পারি নি যে লিফট ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলবে আর শায়েরা… কেঁদে দিয়ে।

রিশান অবাক হয়ে কাজলের কথা শুনছে। ও কখনো কল্পনাও করে নি যে কাজলের মনে এতো কিছু আছে। আর যেখানে ভালোবাসার কথা;রিশান ওসব বিষয়ে কখনো ভাবেনি। সেটা কাজল হোক বা অন্য কেউ রিশান সব সময় সব মেয়ের থেকেই দূরত্ব বজিয়ে চলেছে আর শায়েরার থেকেও প্রথম প্রথম দূরে দূরে থাকতো কিন্তু ভাগ্যই বারবার ওকে শায়েরার কাছে নিয়ে গেছে।

রিশানকে চুপ থাকতে দেখে কাজল আবারও বলতে শুরু করে।

কাজলঃ আমি জানি আপনার মনে কখনো আমার জন্য কিছু ছিল না আর হয়তো ভবিষ্যতেও হতো না। আর বিশ্বাস করেন রিশান আমি এই কথাটা মেনে নিয়েছি। মেনে নিয়েছি যে আপনি কখনো আমার হবেন না। আজকে সকালে যখন শায়েরা লিফটে আটকা পরেছিল তখন আমি আপনাকে অনেক গভীর ভাবে দেখেছি। আপনার চোখে ভয় ছিল ওকে হারানোর। আপনার কথা গুলোতে চেষ্টা ছিল ওকে রক্ষা করার। ওখানে ও ভয়ার্ত ছিল কিন্তু মনে হচ্ছিল জান আপনার বেরিয়ে যাচ্ছে।

প্রথমবার আপনাকে কারও জন্য এতটা নরম হতে দেখেছি এতটা ধৈর্য্য ধরতে দেখেছি
আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে আপনি ওই রিশান রায়জাদা যে কখনো কারও সামনে দূর্বল হয়নি।

ও বদলে দিয়েছে আপনাকে। আপনাকে বাইরে ভেতরে সব দিক দিয়ে বদলে দিয়েছে ও। নিজের রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে আপনাকে। এখন কেউ হাজার চেষ্টা করলেও আপনার মন থেকে ওকে মুছতে পারবে না আমিও না।

আসল কথা হচ্ছে আপনি কখনো আমার ভাগ্যে ছিলেনই না। ও নিজের ভাগ্যে আপনাকে লিখিয়ে এনেছে আর মানুষ ঠিকই বলে it’s all about Destiny ভাগ্যের উপর কারও জোর চলে না।

কিন্তু রিশান বিশ্বাস করেন আমি জানতাম না এতো কিছু হয়ে যাবে। আপনার আমাকে ফায়ার করা লাগবে না আমি নিজেই এই জব ছেড়ে দিচ্ছি।

কঠিন হবে কিন্তু চেষ্টা করবো আপনাকে ভুলার।
ভালো থাকবেন – কথা গুলো বলেই কাজল বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে।

রিশান খপ করে চেয়ারে বসে পরলো। ওর মাথায় শুধু কাজলের বলা একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে সব কিছুর জন্য ও দায়ী। আসলেই কি ও অন্যায়

রিশানঃ জান্তে অজান্তে কারও মনে এতটা আঘাত কিভাবে পৌঁছালাম আমি। আমি কখনো ভাবিনি যে কাজলের মনে আমার জন্য এসব আছে আমি শুধুই ওকে একজন এমপ্লয় হিসেবে দেখেছি। যদি আমি বুঝতে পারতাম তাহলে তখনই ওকে শিফ্ট করে দিতাম অন্য অফিসে। ওর আশাকে এতো বড় হতে দিতাম না। নিজের অজান্তেই অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি আমি ওকে। আজ হয়তো শায়েরার এই অবস্থার জন্যেও আমিই দায়ী। কারন কাজল যা করেছে আমার জন্য করেছে। আমার জন্যেই আজ শায়েরা হসপিটালে এডমিট। কিভাবে ক্ষমা করবো নিজেকে? – রিশান সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী ভাবছে কিন্তু ও বুঝতে পারছে না যে এখানে ওর ভুলটা কোথায়।

?
শায়েরার কেবিনের বাইরে বসে কাঁদছে হায়াতি। রিশান কল করে ওকে আনিয়েছে। যেন ওর অনুপস্থিতিতে শায়েরার খেয়াল রাখতে পারে ও।

হায়াতির পাশেই বসে আছে আর্থ। হায়াতি একটা করে টিশ্যু ফেলছে চোখ আর নাক মুছে আর আর্থ আরেকটা এগিয়ে দিচ্ছে ওর হাতে। আর্থ পুরো একটা টিশ্যুর বক্স নিয়ে বসেছে কিন্তু হয়তো এগুলোও কম পরবে এখন।

আর্থঃ আর কতো কান্না করবে হায়াতি? দেখো শায়েরা একদম ঠিক আছে। শুধু শুধু কান্না করে চোখ দু’টো ফুলিয়ে ফেলছো।

আর্থের কথা শুনে হায়াতি রেগে ওর দিকে তাকায় তারপর আর্থের হাত থেকে একটা ট্যিশু টান দিয়ে নিয়ে বলে,,,

হায়াতিঃ শুধু শুধু কান্না করছি? আমার বোন হসপিটাল বেডে শুয়ে আছে আর আপনি বলছেন আমি শুধু শুধু কান্না করছি।

আর্থ যেন নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেল। ওতো শুধু হায়াতির কান্না থামানোর জন্য বলেছিল কিন্তু এখনতো হায়াতিই ওর উপর চড়ে বসছে।

আর্থঃ আমি এটা বলতে চাই নি তুমি ভুল ভাবছো- কনফিউজড হয়ে। আচ্ছা তুমি কান্না করো ‌এই নাও আরও টিশ্যু নাও – হাতে টিশ্যু ধরিয়ে দিয়ে।

নার্স আসে হাতে একটা ফাইল হাতে। আর্থ নার্সকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।

আর্থঃ এনি প্রবলেম?

নার্সঃ না কোনো সমস্যা নেই শুধু এখানে ফ্যামিলি মেম্বারের সাইন লাগবে। আপনি কি পেশেন্টের ফ্যামিলি।

আর্থঃ না এখনো ফ্যামিলি হই নি কিন্তু খুব শিঘ্রই হয়ে যাবো – সাইন করতে করতে।

নার্সঃ পেশেন্ট কি হন আপনার?

আর্থঃ আমার হবু ভাবি। ( হেসে )

আর্থের কথা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায় হায়াতি।

নার্সঃ ওহ! আর ইনি? – হায়াতিকে দেখিয়ে।

আর্থঃ আমার হবু বউ।

এবার যেন হাজার ভোল্টের শক খেল হায়াতি। সেদিন প্রপোজ না করেই গার্লফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছিল আর আজ কিছু না বলেই হবু বউ বানিয়ে ফেলল।

হবু বউ কথাটা শুনেই নার্সের মুখটা যেন বাংলার পাঁচ হয়ে গেল। হায়াতি বিষয়টা ঠিকই লক্ষ্য করলো।

‘‘ সব হ্যান্ডসাম ছেলেরাই আগে থেকে রিজার্ভ হয়ে যায়। ” বিরবির করতে করতে চলে গেল নার্স।

আর্থ আবারও হায়াতির পাশে বসে পরলো। হায়াতিকে চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আর্থ বলে।

আর্থঃ টিশ্যু লাগবে?( মজা করে )

হায়াতি আর্থের কথা শুনে রেগে নাক ফুলিয়ে অন্য পাশ ফিরে যায়।

আর্থ হেসে ফোন বের করে রিশানকে ফোন করে।

?
রিশান হসপিটালের বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কেন যেন ওর পা এগোচ্ছে না ভিতরের দিকে। বারবার শুধু কানে বাজছে কাজলের কথা গুলো।

আর্থের ফোন আসছে মোবাইলে সেটাও রিসিভ করছে না রিশান‌ উল্টো ফোন অফ করে গাড়িতে রেখে দিল।

হঠাৎ পাশে কারও উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকায় ও।

রিক্তঃ হাই – হাত উঠিয়ে।

রিক্তকে এখানে দেখে অবাক হয় রিশান।

রিশানঃ তুই এখানে এসেছো কেন?

রিক্তঃ দেখতে এলাম যে রিশান রায়জাদা কত বড় লুজার।

রিক্তর কথা শুনে রিশান রেগে ওকে কিছু‌ বলবে তার আগেই রিক্ত বলে,,,

রিক্তঃ কুল ডাউন ব্রো রাগছিস কেন। দেখ তুই স্কুল কলেজে সব সময় নাম্বার ওয়ান ছিলি এখনো কতটা সাকসেসফুল বিজনেসম্যান কিন্তু ভালোবাসার বিষয়ে তুই লুজারই রয়ে গেলি। আগে তুই আমার আর রিশিকার সম্পর্ক মেনে নিতে চাসনি আর এখন নিজেই নিজের মনের কথা মানতে রাজি হচ্ছিস না।

তোর এখন এই মুহূর্তে শায়েরার পাশে থাকা উচিত ছিল কিন্তু তুই একটা লুজারের মতো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস।

দেখ ভালোবাসলে একটু বেহায়া হতে হয়। আমাকেই দেখ এতো বছর ধরে তোর কম অপমান সহ্য করেছি? কম মার খেয়েছি তোর হাতে? তাও তো হাল ছাড়িনি নিজের ভালোবাসার জন্য লড়ে গিয়েছি। কিন্তু তুই নিজেকে দেখ; র‌্যান্ডম একটা মেয়ের অযৌক্তিক কথা শুনে তুই দেবদাস হয়ে গেছিস – হাসছে ও।
আমি তোর জায়গায় থাকলে কি করতাম জানিস?

রিশানঃ কি করতি?( কপাল কুঁচকে)

রিক্তঃ এখনি এই মুহূর্তে গিয়ে নিজের মনের কথা বলে দিতাম। এমন দেবদাস ওয়ালা লুক রিক্ত মেহরাবকে স্যুট করে না – ভাব নিয়ে। কিন্তু বাদ দে তোর দ্বারা এটা হবে না। তোর মতো ভিতু এতো মানুষের সামনে কখনো নিজের মনে কথা বলতে পারবেই না একদম না।

রিশানঃ তুই আমাকে চ্যালেঞ্জ করছিস?

রিক্তঃ করলাম চ্যালেঞ্জ।

রিশানঃ জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ – রিক্তকে রেখেই চলে গেল ভিতরে।

রিক্তঃ অল দ্যা বেস্ট।( চেঁচিয়ে ) ওয়াও আমার তো লাভ গুরু হওয়া উচিত। ( সানগ্লাস পড়ে )

To be continued……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here