You_Are_My_Destiny #Mr_Arrogant_3?,22,23

0
1982

#You_Are_My_Destiny
#Mr_Arrogant_3?,22,23
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_22

জ্ঞান ফিরেছে শায়েরার। ওর পাশেই বসে আছে হায়াতি। আর্থের বুঝানো অসফল হলেও শায়েরা ওর কান্না বন্ধ করাতে ঠিকই সফল হয়েছে।

হায়াতিঃ আপি জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বাপিও বাসায় নেই তাই আরও বেশি ভয় করছিল। যদি তোমার কিছু হয়ে যেত কি করতাম আমি?

শায়েরাঃ তুই আঙ্কেলকে বলে দিয়েছিস আমি হসপিটালে?

হায়াতিঃ না বাপি কল রিসিভ করছে না হয়তো ব্যস্ত আছেন।( মন খারাপ করে )

শায়েরাঃ ভালো হয়েছে জানাস নি শুধু শুধু চিন্তা করতেন তাহলে। আর তুই এমন মন মরা হয়ে আছিস কেন? আমি একদম ঠিক আছি তাই চোখ দিয়ে এই মোটা মোটা বৃষ্টির পানি ঝরানো বন্ধ কর।( হায়াতির চোখ মুছে দিয়ে )

আর্থঃ আর কিছুক্ষণ তুমি অজ্ঞান থাকলে হসপিটালে বন্যা হয়ে যেত ওর চোখের পানি দিয়ে – রুমে ঢুকতে ঢুকতে শায়েরাকে বলল।

আর্থের কথা শুনে হায়াতি রেগে মুখ বাঁকিয়ে ঘুরে গেল। আর্থ এতক্ষন ডক্টরের সাথে কথা বলছিল বাইরে।

শায়েরা আর্থের পেছনে দেখার চেষ্টা করে ও ভেবেছিলো হয়তো রিশান আর্থের সাথেই আসবে। কিন্তু রিশান না আসায় মন খারাপ হয়ে যায় ওর।

যখন থেকে জ্ঞান ফিরেছে রিশানকেই খুঁজছে শায়েরার চোখ। অবশ্যই আর্থ আর হায়াতি ওকে বলেছে যে সারারাত রিশানই ওর পাশে ছিল। রিশান শায়েরার কতটা খেয়াল রেখেছে কতটা চিন্তা করেছে ওর জন্য, সব জানে এখন শায়েরা।

আর্থঃ কাকে খুজঁছো ভাবি?

আর্থের মুখে হঠাৎ ভাবি শব্দ শুনে হচকিয়ে যায় শায়েরা। আর্থ বিষয়টা নর্মাল করার জন্য বলে।

আর্থঃ চমকিয়ে লাভ নেই আজ নয়তো কাল তুমিই তো আমার ভাবি হবে তাই না? এজন্য আগে থেকেই প্র্যাকটিস করছি।

শায়েরা মুচকি হাসলো আর্থের কথায়। হায়াতি কপাল কুঁচকে চোখ দু’টো ছোট ছোট করে আর্থের উদ্দেশ্য বলে,,,

হায়াতিঃ আপনি কি ছোট থেকেই এমন নাকি বড় হওয়ার পর এমন হয়েছেন?

আর্থঃ কেমন? ওহ হ্যান্ডসাম! হ্যাঁ ওটা তো আমি জন্মগত ভাবেই। কারন হ্যান্ডসামনেস তো আমার বংশের রক্তে মিশে আছে। আমার রিশ ভাই, আমি, আমার বড় আব্বু, আমার ড্যাড,আমার ড্যাডের ড্যাড,তার ড্যাডের ও ড্যাড…..

হায়াতিঃ চুপপপপ….দুই কান চেপে ধরে। আপনার পুলিশ না উকিল হওয়া উচিত ছিল। কথার প্যাচে মানুষকে ফাঁসিয়ে দেন।

আর্থঃ আমি কখন কাকে প্যাচালাম? আর তাছাড়া কথায় কথায় আমার প্রফেশনকে মাঝে টানবে না আমি আমার জবকে অনেক ভালবাসি।

হায়াতিঃ তাহলে জবকেই নিজের গার্লফ্রেন্ড,হবু বউ আর পার্মানেন্ট বউ বানিয়ে নিন।

ওদের দুজনের তর্ক বেড়েই চলেছে থামার নামই নিচ্ছে না। ডক্টর কেবিনে এসে এমন পরিস্থিতি দেখে দুজনকে চুপ করিয়ে দেয়।

ডক্টরঃ এটা হসপিটাল প্লিজ এভাবে চেঁচামেচি করবেন না অন্য পেশেন্টদের সমস্যা হচ্ছে।

ডক্টরের কথা শুনে আর্থ আর হায়াতি চুপ করে যায়। ডক্টর আর নার্স ওদের পাশ কাটিয়ে শায়েরার চেকআপ করতে শুরু করে।

একপ্রকার ঝড়ের গতিতে রিশান কেবিনে প্রবেশ করলো। হঠাৎ দরজা এভাবে শব্দ করে খোলায় কেবিনের সবাই চমকে সেদিকে তাকায় আর রিশান; ওতো এতো মানুষ একসাথে কেবিনে দেখায় হচকিয়ে যায়।

ও ভেবেছিলো হয়তো শায়েরা একা হবে কেবিনে। কিন্তু এখন দেখছে ডক্টর নার্স সহ আর্থ আর হায়াতিও এখানেই। বাকি সবাইকে তো মানা যায় কিন্তু আর্থের সামনে যদি ও শায়েরাকে প্রপোজ করে আর শায়েরা ওকে রিজেক্ট করে দেয় তাহলে অবশ্যই সারাজীবন ওকে পঁচাবে আর্থ এ নিয়ে। বেচারা রিশান ভেবেছিল কি আর এখানে এসে দেখছে কি। এখনতো পা পিছাতেও পারবে না কারন অবশ্যই রিক্ত হয়তো বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। যদি ও ফিরে যায় তাহলে রিক্তর সামনে নাক কাটা যাবে‌ ওর। এই মুহূর্তে নিজেকে বার্গারের মাঝের চিকেন টিক্কা মনে হচ্ছে। দুই দিক দিয়ে যেন ফেসে গেছে। সামনে আর্থ পেছনে রিক্ত আর মাঝখানে ও।

সবাই রিশানের দিকে কনফিউজড চোখে তাকিয়ে আছে। ও এমন ভাবে কেবিনে ঢুকলো যেন পেছনে ষাঁড় পরেছে কিন্তু এখন এমন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বিষয়টা কি?

রিশানঃ কি করি এখন? প্রথমবার নিজেকে এতটা কনফিউজড লাগছে। নাহ কনফিউশন না কনফিডেন্স লাগবে। আমি রিশান রায়জাদা এমন কোনো মেয়ে এই পৃথিবীতে নেই যে আমাকে রিজেক্ট করবে। হ্যাঁহ শুধু শুধু ভয় পাচ্ছি। ( মনে মনে )

আর্থঃ রিশ ভাই তুই ওখানে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

রিশানঃ কিছু না – সামনে এসে। আমার কিছু বলার আছে তোমাক – শায়েরাকে উদ্দেশ্য করে।

শায়েরাঃ বলো…

রিশান আশেপাশে সবার দিকে চোখ বুলালো ওর গলা দিয়ে কথা বের হতে চাইছে না। মাথা পুরো ব্লাঙ্ক হয়ে গেছে ওর। মনে হচ্ছে যেন সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

আর্থ রিশানকে চুপ করে থাকতে দেখে বলে ফেলে,,,

আর্থঃ কি বলবি বল…

রিশানঃ উঁহুম – গলা পরিষ্কার করে। রিশান শায়েরার পাশে এসে দাঁড়ায়।

রিশানঃ আমি বলতে চাইছি যে আমরা তো বিজনেস পার্টনার তাই না?

শায়েরাঃ হ্যাঁ তো?

রিশানঃ আমি আসলে আমাদের এই পার্টনারশীপটাকে আরো মজবুত করতে চাইছি।

শায়েরাঃ কিভাবে?

আর্থ নিজের সম্পুর্ন মনোযোগ রিশানের উপর দিয়ে আছে। ও হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছে যে রিশান কি বলতে চাইছে তাই কিছুটা দূরে গিয়ে নিজের ফোনের ক্যামেরা অন করে ভিডিও করতে শুরু করে ও।

রিশানঃ আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। এখানে আমাদের দুজনেরই লাভ। শুধু আমাদের দুজনের না আমাদের ফ্যামিলিরও লাভ আর শুধু ফ্যামিলি না আমাদের বিজনেসেরও অনেক লাভ। ( এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল )

আর্থ ক্যামেরা থেকে চোখ সরিয়ে রিশানের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায় আর হায়াতির এক্সপ্রেশন এমন যেন প্রথমবার এমন প্রপোজাল দেখছে। শায়েরার তো কথাই বন্ধ হয়ে গেছে রিশানের কথা শুনে।

রিশান আবারো বলতে শুরু করে,

রিশানঃ আমি জানি বিয়ে জিনিসটা জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর এভাবেই এতো সহজে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কিন্তু তুমি ভেবে দেখলে বুঝতে পারবে যে আমরা দুজন একে অপরের জন্য পারফেক্ট। আমাদের সম্পর্ক শুধু বাড়িতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বাড়ির বাইরেও আমরা একে অপরের ভালো পার্টনার হতে পারবো। আর আমি কথা দিচ্ছি তুমি আমার লাইফে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাইন্ট হবে। অ্যান্ড আই প্রমিস আমি আমাদের মাঝে কখনো কোনো থার্ড পার্টিকে আসতে দিব না। তুমি চাইলে আমি লাইফটাইম কন্ট্রাক্ট পেপার বানিয়ে ওটাতেও সাইন করতে রাজী।

আর্থঃ প্রপোজ করতে এসেছে নাকি বিজনেস পার্টনারশীপ? এটাকেই বলে টুরু বিজনেস ম্যান।আহা রিশ ভাই তোমাকে নিয়ে আমি কি যে করি?( মনে মনে )

রিশানঃ এখন বলো তুমি কি রাজী? – রিশান ওর কথা শেষ করে উত্তরের আশায় শায়েরার দিকে তাকায়। শায়েরা কি বলবে ওতো এমন প্রপোজাল শুনে নিজেই শকে আছে।

ডক্টর গলা পরিষ্কার করে শায়েরার উদ্দেশ্যে বলে,,,

ডক্টরঃ এটা লাইফের অনেক বড় ডিল তাই বুঝে সুঝে সাইন করবেন মিস শায়েরা। তাড়াহুড়োর কিছু নেই আগে সিউর হবেন তারপর নাহয় হ্যাঁ বলবেন। অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে লসও হয়। চলো নার্স। – ডক্টর চলে গেল।

রিশানঃ তুমি কিছু বলছো না যে?

রিশানের কথায় শায়েরার হুঁশ আসে ও কিছুটা নড়েচড়ে বসে তারপর বলে,

শায়েরাঃ আমার ভাবার জন্য কিছু সময় প্রয়োজন।

রিশানঃ কত সময়? দশ মিনিট, পনের মিনিট, আধা ঘন্টা? তুমি ভাবো আমি অপেক্ষা করছি।

রিশানের এই কথা শুনে আর্থ আর হায়াতি ফিক করে হেসে দেয়। শায়েরা ওদের দিকে রাগি চোখে তাকাতেই ওদের হাসি বন্ধ হয়ে যায়।

শায়েরাঃ আপনি শুনেন নি ডক্টর কি বলল? এটা লাইফের অনেক বড় ডিল তাই বুঝে সুঝে সময় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে তারপর হ্যাঁ বলতে। তাড়াহুড়ো করলে লসের সম্ভাবনা আছে।

রিশানঃ ওহ!( মুখ মলিন করে ) তাহলে কত সময় প্রয়োজন তোমার?

শায়েরাঃ দুই দিন, আমার দুইদিন সময় প্রয়োজন ভাবার জন্য।

রিশানঃ ওকে। ( দীর্ঘশ্বাস ফেলে ) আমি তোমার জবাবের অপেক্ষায় থাকবো। নিজের খেয়াল রেখো।

রিশান আর এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে বেড়িয়ে আসে কেবিন থেকে। কেবিন থেকে বেরিয়েই বড় বড় নিঃশ্বাস ছাড়ে ও। তারপর নিজে নিজে বলতে শুরু করে।

রিশানঃ যতটা কঠিন ভেবেছিলাম ততটাও কঠিন না কাউকে প্রপোজ করা। অনেক ইজি ভাবেই বিষয়টা হ্যান্ডেল করেছি।

আর্থ‌ ভিডিওটা দেখে ডেভিল লুক নিয়ে হাসলো তারপর ফ্যামিলি গ্ৰুপে ভিডিওটা দিয়ে দিলো।

আর্থঃ রিশান রায়জাদা স্পেশাল প্রপোজ স্টাইল। ( হেসে ) আমি তো এই ভিডিওর স্পেশাল সিডি বানিয়ে সারা জীবনের জন্য রেখে দিব।

হায়াতি আর্থের সামনে এসে দাঁড়ায় চোখ ছোট ছোট করে।

আর্থঃ তোমার আবার কি হলো মিস হাতি?

হায়াতিঃ আমারও প্রপোজ চাই।

আর্থঃ রিশ‌ ভাইয়ে মতো?( হেসে )

হায়াতিঃ না কিন্তু আনকমন।

আর্থঃ মিস হাতি ব্রেইনে একটু জোর খাটাও আমিতো তোমাকে আরো আগেই প্রপোজ করে ফেলেছি।

হায়াতিঃ কবে কখন কোথায়? – অবাক হয়ে।

আর্থঃ ওইযে,‌ যেদিন আমি তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড বলেছিলাম সেটাই তো প্রপোজ ছিল।

হায়াতিঃ ওটা প্রপোজ ছিল?( অবাক হয়ে )

আর্থঃ অবভিয়াসলি! আর তাছাড়া যেদিন থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসি সেটা বুঝতে পেরেছি সেদিন থেকেই তুমি আমার বউ হয়ে গেছ তাহলে এখানে প্রপোজের কি হলো। শুধু শুধু এসবের পেছনে সময় আর এনার্জি নষ্ট না করে ডিরেক্ট বিয়ে করে ফেলাই বেস্ট। তাই চিন্তা করো না দুই দিন পর আমার মম ড্যাড আসছে তখনই আমি সবাইকে আমাদের রিলেশনের কথা জানিয়ে দিব। ঠিক আছে? আমি আসি এখন রিশ ভাই নিচে অপেক্ষা করছে। বাই।

আর্থ চলে গেল আর হায়াতি রেগে নাক ফুলিয়ে শায়েরার পাশে এসে বসে পরলো।

হায়াতিঃ আনরোম্যান্টিক জুটেছে কপালে একটা। কে বলেছে আমি বিয়ে করবো? করবো না বিয়ে দেখি কি করে।( রেগে বিরবির করছে )

শায়েরা এতক্ষন নিজের হাসি কন্ট্রোল করে রেখেছিল কিন্তু এখন আর কন্ট্রোল করতে পারলো না হো হো করে হেসে উঠলো ও। শায়েরাকে হাসতে দেখে হায়াতির রাগ আরো বেড়ে গেল।

হায়াতিঃ তুমি এভাবে হাসছো কেন? তোমারটাও একই টাইপের। আনরোম্যান্টিক।

শায়েরাঃ তবুও তো আমারটা প্রপোজ করেছে কিন্তু আর্থতো…বলে আবারো হাসতে শুরু করে।

হায়াতিঃ ওটা প্রপোজ কম বিজনেস ডিল বেশি‌ মনে হয়েছে তাই এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই।( মুখ বাঁকিয়ে)

শায়েরাঃ তাও ঠিক… শায়েরার হাসি উধাও হয়ে গেল।

শায়েরা আর হায়াতি দু’জনেই গালে হাত দিয়ে এক সাথে বলে উঠে – “এদের দ্বারা কিছু হবে না।” অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস….

To be continued…….

#You_Are_My_Destiny
#Mr_Arrogant_3?
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_23

রিশান বাসায় ঢুকতেই দেখতে পায় রওশন সুবহা সহ আভি আর ওহিও ড্রইং রুমে বসে আছে। আভি আর ওহিকে দেখে অনেক সারপ্রাইজড্ হয়। কিন্তু কিছু একটা নিয়ে হাসাহাসি করছে সবাই মিলে। রিশান বিষয়টা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ওদের কাছে চলে যায়।

রিশানঃ চাচু চাচি হোয়াট আ সারপ্রাইজ! ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তোমরা তো দুইদিন পর আসবে বলেছিলে।

আভিঃ ভাবলাম সবাইকে সারপ্রাইজ দেওয়া যাক তাই আজকেই চলে আসলাম।

রিশানঃ কেমন আছো?( আভিকে জড়িয়ে ধরে)

আভিঃ অনেক ভালো। কিন্তু এখানে এসে তো আমরাই সারপ্রাইজড্ হয়ে গেলাম। আমাদের রিশান দেখি কত বড় হয়ে গেছে।

ওহিঃ হুম এতো বড় হয়ে গেছে যে বিয়ের জন্য প্রপোজ ও করে ফেলেছে।( মজা করে ) আমি ভাবিনি যে রিশান আমাদের না জানিয়ে এতো দূর এগিয়ে যাবে।

সুবহাঃ ওটা প্রপোজ ছিল? আমার তো মনে হচ্ছিল যেন বিজনেস ডিল করছে গাধা কোথাকার।

রওশনঃ আমার ছেলে তো আমার নামই ডুবিয়ে দিলো। সবাই কি বলবে? রওশন রায়জাদার ছেলে এতো আনরোমান্টিক যে একটা সুন্দর প্রপোজ ও করতে পারে না।

আভিঃ তা ঠিক বলেছো ভাইয়া। তুমি যেই লেভেলের রোমান্টিক ছিলে তোমার ছেলে তার পুরো উল্টো। আল্লাহ জানে আমার আর্থ কি করে।

রিশান শুধু অবাক হয়ে সবার কথা শুনছে। ও বুঝতে পারছে না যে সবাই কিভাবে জানলো যে ও শায়েরাকে প্রপোজ করে এসেছে আর কিভাবে করেছে সেটাই বা কি করে জানলো। সবার কথা শুনে লজ্জায় ওর মাথা কাটা যাচ্ছে।

মাম্মিইইইইই – দরজা থেকেই চেঁচাতে চেঁচাতে এসে ওহিকে জড়িয়ে ধরলো আর্থ।

আর্থঃ ড্যাড – আভিকে জড়িয়ে ধরে। আমি তোমাদের কত মিস করেছি তোমরা জানো?

আভিঃ সব জানি আপনি আমাদের কতটা মিস করেছেন। ড্রামা করতে হবে না। আমরা দূরে থাকায় ভালোই স্বাধীনতা পেয়েছিলেন কিন্তু এখন আর সুযোগ নেই চলে এসেছি আমরা।

ওহিঃ আসতে না আসতেই আমার ছেলেটাকে বকা শুরু করে দিয়েছে। আর্থ বাবা তুই ওর কথা কানে দিস না আমার কথা শোন।

আর্থঃ বলো কিউটি মাম্মি – ওহির শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুচছে।

ওহিঃ রিশান তো সুবহা ভাবির জন্য বউ খুঁজে নিয়েছে কিন্তু তুই কি আমার জন্য একটা বউ খুঁজিস নি?

আর্থঃ খুঁজেছি তো। একটা সুন্দরি‌ পরীর মতো ছেলেরবউ খুঁজেছি তোমায় জন্য।

আর্থের কথা শুনে রিশান সহ সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়।

আভিঃ নাম কি মেয়েটার?

আর্থঃ হায়াতি।

রিশানঃ এটা কবে হলো? আমি তো কিছুই জানি না এ বিষয়ে।( অবাক হয়ে )

রওশনঃ আদিলের মেয়ে?

আর্থঃ হুম।

রিশানঃ তুই আমাকে কেন জানাস‌ নি যে তোদের মাঝে এমন কিছু আছে?

আর্থঃ বাহ্ নিজে যেমন আমাকে জানিয়েছিলেন যে শায়েরার সাথে আপনার চক্কর চলছে। আমি নিজের‌ পুলিশের ব্রেইন ইউজ করে সব জেনেছি।

রিশানঃ ব্রেইন? সেটা আছে তোর কাছে?

আর্থঃ অবভিয়াসলি আছে। ব্রেইন আছে বলেই তো সকালের এতো স্পেশাল মোমেন্টটা ভিডিও করে রেখেছি ফিউচারের জন্য – কথাটা বলেই জিভ কাটে আর্থ। মুখ ফসকে বলে দিল এখন রিশান ওকে কি করবে কে জানে।

রিশানঃ তার মানে তুই সকালের ঘটনা ভিডিও করেছিস তারপর সবাইকে দেখিয়েছিস?( রেগে )

আর্থঃ আমি দেখাই নি সবাই নিজে নিজে দেখেছে ফ্যামিলি গ্ৰুপ থেকে।( অসহায় ভাবে )

রিশানঃ তোকে তো….

রিশান আর্থের দিকে পা বাড়াতেই আর্থ দৌড় ওকে আর পায় কে। রিশান ও ছুট দেয় আর্থের পেছনে।

দুই দিন পর….?

নিজের রুমের বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় ফোনে গেইম খেলছে রিক্ত তখনই ওর রুমে ওর বাবা প্রবেশ করে।

আকিবঃ তুমি এখনো শুয়ে আছো রিক্ত রেডি হও নি কেন?

রিক্তঃ রেডি হবো? কিন্তু কেন?

আকিবঃ আজকে আমাদের একটা এংগেইজমেন্ট এর ইনভিটেশন আছে।

রিক্তঃ কার এংগেইজমেন্ট?( ফোনের দিকেই খেয়াল দিয়ে )

আকিবঃ রিশিকা রায়জাদার এংগেইজমেন্ট।

নামটা শোনা মাত্রই ধরফরিয়ে উঠে বসে রিক্ত।

রিক্তঃ কিহ!( চেঁচিয়ে ) কিসব উল্টা পাল্টা বলছেন। রিশুর এংগেইজমেন্ট তাও অন্য কারো সাথে! ইমপসিবল! তাছাড়া এমন কিছু হলে রিশু অবশ্যই আমাকে জানাতো।

আকিবঃ আমি কেন মিথ্যা বলবো? সকালেই রওশন রায়জাদার ফোন এসেছিল উনি নিজেই আমাকে ইনভাইট করেছেন।

রিক্তর মাথা যেন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আকিবের কথা শুনে। সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

রিক্তঃ এটা কিভাবে সম্ভব। আমি এ এংগেইজমেন্ট হতে দিব না। দেখি কার এতো সাহস আমার রিশুকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলবো আজকে ওকে।

রিক্ত রেগে ফায়ার হয়ে সোফা থেকে ওর জ্যাকেটটা তুলে বেরিয়ে যায়। রিক্ত চলে যেতেই‌ আকিব রিশানকে কল করে।

আকিবঃ কাজ হয়ে গেছে। রিক্ত অনেক বেশি রেগে আছে একটু সাবধানে।( কথাটা শেষ করে কল কেটে দেয়।)

রায়জাদা মেনশন

পুরো রায়জাদা মেনশনকে রঙিন লাইটিং, গোলাপ আর অর্কিড দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাড়িতে ধীরে ধীরে মেহমানের আগমন বাড়ছেই। গেইটের সামনে সুবহা রওশন আভি আর ওহি মিলে সব মেহমানদের স্বাগত জানাচ্ছে।

বড় একটা ফুল ভর্তি ঝুড়ি নিয়ে হাঁটছে আর্থ। ফুল গুলো ডেকোরেটরের লোকদের দিবে ও। কিন্তু ঝুড়িটা এতোই বড় যে ওর মুখ পুরো ঢেকে গেছে সামনে কিছুই দেখতে পারছে না ও। আন্দাজে শুধু এগোচ্ছে।

আর্থকে খুঁজতে খুঁজতে ওকে ফুল নিয়ে এইদিকেই আসতে দেখে হায়াতি। আর্থের অবস্থা দেখে মনে শয়তানি বুদ্ধি চাপে ওর।

আর্থ সামনে আসতেই ওকে পা বাজিয়ে ফেলে দেয় হায়াতি। আর্থ ঝুড়ি সহ পরে যায় আর সব ফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।

আর্থঃ কে রে? – রেগে উপরে তাকাতেই হায়াতিকে দেখতে পায় ও। তুমি?

হায়াতিঃ আমি।

আর্থঃ হাত দাও – হাত এগিয়ে দিয়ে।

হায়াতি আর্থের হাত ধরতে গিয়েও সরিয়ে নিল। আর্থ নাক ফুলিয়ে নিজে থেকেই উঠে দাঁড়ায়।

আর্থঃ একজন পুলিশ অফিসারের উপর হাত তোলার অপরাধে আমি তোমাকে অ্যারেস্ট করতে পারি তুমি জানো?

হায়াতিঃ কিন্তু আমি তো হাত তুলিনি, পা তুলেছি।

আর্থঃ ওই একই কথা। তোমার ভাগ্য ভালো যে আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই তোমার প্রত্যেক ক্রাইম ক্ষমা করে দেই।

হায়াতিঃ যেভাবে বলছেন আমি যেন কারো মার্ডারের ক্রাইম করেছি।

আর্থঃ পুলিশকে ব্লাকমেইল করা, তাকে ল্যাং মেরে ফেলে দেওয়া মার্ডারের থেকে কম না ওকে।

হায়াতিঃ আর পুলিশ হয়ে একটা‌ অচেনা মেয়েকে ফলো করা কি ক্রাইম না?

আর্থঃ অচেনা মেয়ে ?( অবাক হয়ে ) তুমি আমার বউ অচেনা মেয়ে না ওকে?

হায়াতিঃ একদম বউ বউ করবেন না। একটা প্রপোজ করতে পারে না আসছে রেডিমেট বউ বানাতে।( রেগে চলে গেল হায়াতি )

আর্থঃ প্রপোজের জন্য এতো অপমান! ওকে ফাইন আমিও এমন প্রপোজ করবো সারাজীবন ভুলবে না মিস হাতি।( মুখ ফুলিয়ে )

শায়েরা আশেপাশে ঘুরে রিশানকে খুঁজছে কিন্তু সবাইকে দেখতে পেলেও রিশানকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও।

হঠাৎ শায়েরার চোখ যায় দেয়ালে লাগানো এংগেইজমেন্ট বোর্ডটার দিকে। বোর্ডটা একটু বাঁকা হয়ে আছে। হঠাৎ শায়েরার রিশিকার জন্মদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনা টা মনে পরে যায়। সেদিনও এমনি বোর্ড বাঁকা হয়ে ছিল আর ও যখন বোর্ড ঠিক করতে গিয়ে পরে যায় রিশান ওকে বাঁচিয়ে নেয় একদম হিরোর মতো।

কথা গুলো ভেবেই মুচকি হাসে শায়েরা। আশেপাশে তাকিয়ে টুল খুঁজে ও। সামনেই একটা টুল আছে সেটা নিয়ে ওটাকে দাঁড়িয়ে যায় শায়েরা তারপর বোর্ডটা ঠিক করে দেয়।

বোর্ডটা ঠিক করে নামতেই ও সামনে রিশানকে দাঁড়ানো দেখে। রিশান হেসে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় শায়েরার দিকে আর শায়েরাও মুচকি হেসে ওর হাত ধরে নিচে নেমে যায়।

রিশানঃ আবারও পরার ইচ্ছা আছে যে এখানে উঠেছো?

শায়েরাঃ পরবো কেন? আমাকে সেফ করার জন্য আপনি তো আছেনই।

রিশানঃ এতো বিশ্বাস আমার উপর?

শায়েরাঃ পার্টনারশিপ করেছি বিশ্বাস তো করতে হবেই।

শায়েরার কথা শুনে রিশান হাসলো। এই হাসি শুধু খুশির হাসি না প্রাপ্তির হাসি। দু’জনের চোখেই একে অপরের জন্য গভীর ভালোবাসা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। ওদের দু’জনকে দেখলে যে কেউ বলে ফেলবে যে ওরা “ মেইড ফর ইচ আদার”

To be continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here