#আসক্তি?
#Mr_Arrogant_4,পর্ব_২,৩
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
০২
?
প্রায় বারো ঘন্টার জার্নির পর প্লেন থামে বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে। সব যাত্রী একে একে নেমে পরে আর তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে আভি। প্লেন থেকে নেমে গিয়ে নিজের লাগেজ কালেক্ট করে নেয় ও।
বাম হাতে লাগেজ ডান হাতে টিকিট আর পাসপোর্ট। রিসেপশনে গিয়েই কাগজ গুলো জমা দিয়ে কনফার্ম করে নেয় আভি।
রিসেপশনিস্টঃ ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ স্যার।
আভিঃ থ্যাংক ইউ।
আভি নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আশেপাশে তাকায়। ওকে নেওয়ার জন্য যার আসার কথা ছিল সে হয়তো এখনো আসে নি। তাই আভি ওয়েইটিং সাইডে গিয়ে বসে পরলো। আশেপাশের প্রায় সবার নজরই আভির দিকে কিন্তু আভি এক ধ্যানে নিজের ফোন দেখছে। আশেপাশের কোনো কিছুর প্রতিই ওর কোনো খেয়াল নেই।
নাম আভি। পুরো নাম আভি রায়জাদা। আদনান রায়জাদার একমাত্র ছেলে। ছোট বেলায় মাকে হারিয়ে বাবার কাছ থেকেও দূরে সরে গিয়েছে ও। ছোট থেকেই হাস্যজ্জল আর প্রানবন্ত স্বভাবের ছিল আভি। কিন্তু পাঁচ বছর আগের কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনার পর সম্পূর্ণ বদলে ফেলেছে ও নিজেকে। পাঁচ বছর ধরে সিডনিতে থেকে আজ নিজ দেশে ফিরেছে ও।
হঠাৎ একটা ছোট পিচ্চি আভির সামনে এসে দাঁড়ায়। আভি চোখ তুলে পিচ্চিটির দিকে তাকিয়ে পশ্ন করে।
আভিঃ এনি প্রবলেম?
পিচ্চিটি আভির হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে ইশারা করে দেখায়। আভি পিচ্চিটির ইশারা বরাবর তাকাতেই দেখে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে। পিচ্চিটি দৌড়ে চলে যায়। আভি কপাল কুঁচকে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হাতের কার্ডটার দিকে তাকায়। নাম্বারের কার্ড।
মেয়েটি আভির সাথে এক প্লেনেই এসেছে। আভি খেয়াল করেছে যে মেয়েটি প্লেনে থাকা কালীন পুরোটা সময় ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। কিন্তু তখন ও বিষয়টা গ্ৰাহ্য করে নি। কিন্তু এখন দেখছে মেয়েটি ডিরেক্টলি ওকে নিজের নাম্বার দিচ্ছে। হেঁসে দেয় আভি।
মেয়েটি এখনো দাঁড়িয়ে। আভি চোখ তুলে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি উপহার দেয়। পরক্ষনে মেয়েটিকে দেখিয়ে কার্ডটা ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে তারপর পায়ের উপর পা তুলে আগের মতো ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে।
মেয়েটি হয়তো লজ্জিত হয়েছে আভির ডিরেক্ট উত্তর পেয়ে। মুখটা বাংলার পাঁচ করে চলে যায় সে।
একজন লোক এসে দাঁড়ায় আভির সামনে তারপর বলে,,,,
>> আপনি আভি স্যার তাই না।
আভিঃ ইয়েস।
>> আমি সুমন আমায় আপনাকে ড্রপ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে।
আভিঃ ওহ্।( দাঁড়িয়ে ) তাহলে চলুন।
>> জ্বি। আপনার লাগেজ আমি নিচ্ছি।
আভিঃ না সমস্যা নেই আমিই নিচ্ছি।
আভি লোকটার সাথে চলে যায়। গাড়ির সামনে আসতেই দাঁড়িয়ে যায় আভি।
>> স্যার কোনো সমস্যা?
আভিঃ আসলে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। আপনি এক কাজ করেন লাগেজ আর জিনিসপত্র গুলো নিয়ে জান আমি কাজটা শেষ করে হেডকোয়ার্টার আসছি।
>> জ্বি আচ্ছা। কিন্তু সময় মতো চলে আসবেন। অর্নব স্যার লেইট করা পছন্দ করেন না।
আভিঃ ইয়াহ।
লোকটি চলে যেতেই আভি একটা ক্যাবে উঠে পরে। হাতে রজনীগন্ধা ফুলের তোড়া নিয়ে কবরস্থানে এসেছে আভি।
একটা কবরের সামনে এসে দাঁড়ায় ও। চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে নেয় ও। রক্তিমবর্ণ চোখ দুটি পানিতে ছলছল করছে।
আভিঃ মম! কেমন আছো? ( ঠোঁটে হাসি অথচ চোখে পানি আভির। ) পাঁচ বছর দূরে ছিলাম তোমার কাছ থেকে অবশ্যই অনেক মিস করেছো আমায় তাই না? আমাকে দেখতে না পেয়ে কষ্টও পেয়েছো অবশ্য।
কিন্তু এখন আর তোমাকে কষ্ট পেতে হবে না কারন আমি ফিরে এসেছি। হুম মম ফিরে এসেছি আমি। আর কোথাও যাব না তোমাকে ছেড়ে,, কোথাও না।
আভি ফুলের তোড়া টা কবরের উপর রেখে দিয়ে পাশেই বসে পরে,,,
আভিঃ তুমি অবশ্যই জিজ্ঞেস করছো আমি কেমন আছি তাই না? ভালো নেই মম। আমি ভালো নেই। আমার খুব কষ্ট হয় জানো! যার কারণে তুমি আজ এখানে সে এখনো কি সুন্দর নিজের জীবনে সুখী আছে। আর আমি এসব দেখেও কিছু করতে পারছি না।
বাট ডোন্ট ওয়ারি। আমি এবার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফিরেছি। তোমার প্রতিটা চোখের পানির মূল্য চুকাতে হবে তাকে। কথা দিচ্ছি তোমায়।
কথা গুলো বলেই আভি দাঁড়িয়ে যায়। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে গাল আর চোখ মুছে নেয় ও।
আভিঃ এবার আর কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না। নো ওয়ান,,,,চোখে আবারো সানগ্লাস পরে বেরিয়ে পরে ওখান থেকে ও।
?
হেডকোয়ার্টারে নিজের কেবিনে বসে গ্লোব ঘুরাচ্ছে অর্নব খাঁন। ( অর্নব খাঁন হচ্ছেন সিবিআই হেড অফিসার। ) দরজায় টোকা পরতেই মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে বলেন উনি,,,
অর্নবঃ কাম,,,
আভি কেবিনে প্রবেশ করলো। আভিকে দেখে অর্নব দাঁড়িয়ে ওর সামনে গিয়ে হাত বাড়ায়,,,
অর্নবঃ ওয়েলকাম আভি,,, তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম।
আভিঃ নাইস টু মিট ইউ স্যার।
অর্নবঃ তাহলে বলো কবে থেকে জয়েন করছো।
আভিঃ আমার তো ইচ্ছে ছিল আজ থেকেই জয়েন করার কিন্তু কিছু পার্সোনাল কাজ শেষ করতে হবে আজকের মধ্যে তাই কাল থেকে জয়েন করবো ভাবছি।
অর্নবঃ সমস্যা নেই। আজকেই তো ফিরলে কিছু দিন রেস্ট নাও তারপর ধীরে সুস্থে জয়েন করো।
আভিঃ সিউর স্যার।
অর্নবঃ চলো আমি তোমাকে বাকি অফিসারদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
আভিঃ সিউর।
অর্নব আভিকে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসেন অর্নব। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করে।
অর্নবঃ অ্যাটেনশন এভরি’ওয়ান। মিট আভি রায়জাদা আমাদের নতুন সিবিআই অফিসার।
সবাই আভির সাথে পরিচিত হচ্ছে। আভিও হাঁসি মুখে সবার সাথে কথা বলছে।
অর্নবঃ তাহলে আভি তুমি গিয়ে আজকে রেস্ট নাও কাল থেকে ডিউটি জয়েন করো।( হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
আভিঃ সিউর স্যার।( হাত মিলিয়ে )
আভি হেডকোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে আসে। বাইরে বের হতে নিলেই আচমকা বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। সাথে সাথে ভিতরে ঢুকে যায় আভি। বৃষ্টি অতটাও বেশি না ছিটেছিটে টাইপ। এমন শীতের সিজনে মাঝে মধ্যে যেমনটা হয়। মুখে বিরক্তির ভাব স্পষ্ট ফুটে উঠে ওর। বৃষ্টি জিনিসটা আভির কাছে সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিস। তার উপর অবেলা বৃষ্টি তো মহা বিরক্তির কারণ। এমন মৌসুমে বৃষ্টি অপ্রত্যাশিত তার উপর যদি সেটা অপছন্দের হয় তাহলে তো মুড অটোমেটিক্যালি নষ্ট হয়ে যায়।
আভিঃ এই সিজনে বৃষ্টি? সিরিয়াসলি! অন্য দেশে শীতের সিজনে বরফ পরে আর বাংলাদেশে বৃষ্টি! আমার দেশ আসলেই সবচেয়ে ইউনিক – হেঁসে দেয় আভি। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আশেপাশে তাকায় ও।
তেমন কোনো মানুষ নেই। এখন বিকেল হলেও আকাশ কালো হয়ে যাওয়ায় মনে হচ্ছে রাত হয়ে আসছে। বাতাস তো ঠান্ডাই তার সাথে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো যেন একেকটা বরফের টুকরো। নিমিষেই কান দুটো আর নাকটা লাল হয়ে গেছে আভির। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে ওর। আভির ঠান্ডার সমস্যা ছোট থেকেই। হালকা বৃষ্টি বা শীত গাঁয়ে লাগতেই ঠান্ডা জ্বর বেঁধে যায় ওর। আজও এর ব্যাতিক্রম হলো না। এজন্যই আরো বেশি অপছন্দ করে আভি বৃষ্টিকে।
বৃষ্টির গতি বাড়ছে। আভির কাছে ছাতা নেই। আর গাড়িতে উঠতে অবশ্যই পাঁচ মিনিটের মতো সময় লাগবে। ভিজে যাওয়া সিউর। আর এই বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করা নেহাত বোকামি ছাড়া কিছুই না। কারন আবহাওয়া দেখে বুঝাই যাচ্ছে এতো দ্রুত এই বৃষ্টি থামার নয়। তাই আর কোনো চিন্তা ভাবনা না করেই বৃষ্টির মধ্যে সামনে এগোয় আভি। ছিটে ছিটে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে আভি। কিছুটা দূরে আসতেই সামনে দিয়ে কাউকে আসতে দেখে ও।
হলুদ রঙের কুর্তি পরা,,,ওয়াটার কালার ছাতা হাতে নিয়ে আসছে একটা মেয়ে। মেয়েটির দৃষ্টি একদম আভির চোখের দৃষ্টির বরাবর।
আভি এখনো হাঁটছে তার দৃষ্টিও মেয়েটির চোখের দিকে। কেন যেন মেয়েটির চোখ থেকে চোখ সরাতে পারছে না ও।
মেয়েটি একদম আভির সামনে চলে এসেছে। তবুও তার দৃষ্টি নড়ছে না আভির থেকে।
আভি মেয়েটিকে ক্রস করে চলে যায় কিন্তু মেয়েটি ঠাই দাঁড়িয়ে পরে।
অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মেয়েটি আভির যাওয়ার পথে।
আভি হয়তো পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পারতো যে তার দিকে খুব গভীর দৃষ্টিতে কেউ তাকিয়ে।
গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয় আভি। মেয়েটি ঠাঁই দাঁড়িয়ে।
হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শে বাস্তবে ফিরে পেছনে ঘুরে মেয়েটি।
অর্নবঃ ওহি মামনি তুমি এখানে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে কেন? ভিতরে চলো।( হাত ধরে )
ওহিঃ বাবাই ওটা কে ছিল?( আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে )
অর্নবঃ কার কথা বলছো মামনি?( আশেপাশে তাকিয়ে )
ওহিঃ এই মাত্র বের হলো যে,,, রেড কালার জ্যাকেট,,,
অর্নব বুঝতে পারে যে ওহি আভির কথা জিজ্ঞেস করছে,,,
অর্নবঃ ওহ্! ওটা আভি ছিল। নিউ অফিসার।
ওহিঃ আভি!( মুচকি হেসে ) নাইস নেইম। ( ধীর কন্ঠে )
অর্নবঃ কি ভাবছো ওহি?
ওহিঃ কিছু না বাবাই। ( হেঁসে )
অর্নবঃ আচ্ছা এখন তাড়াতাড়ি ভিতরে চলো ভিজে যাচ্ছো একদম।
ওহিঃ হুম।
ড্রাইভ করছে আভি তখনই ফোন বেজে উঠে ওর। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই রওশন নামটা দেখতে পায় ও।
ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আবারো ড্রাইভিং’য়ে মনোযোগ দেয় আভি। কিন্তু ফোন লাগাতার বেজেই চলেছে। এক পর্যায়ে অসহ্য হয়ে গাড়ি ব্রেক করে ফোন রিসিভ করে আভি। রিসিভ করেই বলতে শুরু করে ও।
আভিঃ কেন ফোন করেছেন আমাকে? লিসেন আপনার লেকচার শোনার মতো মন মানসিকতা নেই এখন আমার। সো প্লিজ নিজের ভাই গিড়ি দেখাতে আসবেন না। আপনার সাথে দেখা তো দূরের কথা কথা বলতেও রুচিতে বাঁধে আমার। অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি তাই এমন কিছু করবেন না যে আভি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাক। আপনি ভালো করেই জানেন আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারালে অনেকে নিজের জীবন হারাবে। তাই বলছি আমাকে আমার অবস্থায় ছেড়ে দিন।
কথা গুলো এক নাগাড়ে বলে কল কেটে ফোনটা রেগে ব্যাক সাইডে ছুঁড়ে ফালায় আভি।
দু হাত দিয়ে শক্ত করে স্টিয়ারিং চেপে ধরে আছে ও। হয়তো নিজের রাগ সংবরণ করার চেষ্টা করছে।
আভিঃ বি স্ট্রং আভি….জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে। জাস্ট কাম ডাউন….
মিনিট কয়েক চোখ বন্ধ করে রেখে আবারো গাড়ি স্টার্ট দেয় ও।
To be continued……
#আসক্তি?
#পর্ব_৩
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Mr_Arrogant_4
?
ফাইল হাতে নিয়ে রওশনের কেবিনের বাইরে পায়চারি করছে সুবহা। ভিতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না দ্বিধায় পরে গেছে ও।
সকাল থেকে রওশন কেবিনে বসে আছে বের হয়নি। আর স্ট্রিক্টলি অয়নকে দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে কেউ যেন কোনো কারণে রওশনকে আজ ডিসটার্ব না করে।
রওশন যেহেতু বারণ করেছে কারও সাধ্য নেই ভুলেও রওশনকে ডিসটার্ব করার। কিন্তু সুবহাও বিপাকে পরে গেছে। ইম্পরট্যান্ট ফাইলে আর্জেন্টলি রওশনের সাইন লাগবে।
সুবহাঃ যাব? কি যাব না? ( কনফিউজড হয়ে ) কি করবো এখন আমি? উফ্ সব ঝড় আমার উপর দিয়েই কেন যায়?( অসহায় ভাবে )
কিন্তু সাইন তো নেওয়াই লাগবে। আর সাইন নেওয়ার জন্য ভিতরে যেতে হবে, ভিতরে গেলে রওশন ডিসটার্ব’ড হবে, ডিসটার্ব’ড হলে অবশ্যই নিজের রুদ্র রুপে আসবে, আর রওশন নিজের রুদ্র রুপে আসলে আমার ব্যান্ড বাজবে। – পায়চারি করছে আর বিরবির করছে সুবহা।
অনেকক্ষণ ভেবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যায় সুবহা। একটা লম্বা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে সাহস জুগিয়ে বলে ও।
সুবহাঃ কাম অন সুবহা! এটা তোর কাজ ওকে? ভয়কে সাইডে রেখে কাজের কথা ভাব।
সুবহা রওশনের কেবিনের দরজায় নক করে কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই। দুই বার নক করেও কোনো রেসপন্স না পেয়ে দরজা খুলে ভিতরে চুপি দেয় সুবহা। ভালো ভাবে দেখতে না পেয়ে ধীরে ধীরে ভিতরে প্রবেশ করে ও।
রওশন নিজের ডেস্কে বসে। দু হাতের কনুই টেবিলে ঠেকিয়ে কপালে হাত রেখে আছে ও।
সুবহাঃ মে আই কাম ইন?
সুবহার কথায় মাথা তুলে তাকায় রওশন। রওশনের চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে সাথে নাকটাও।
সুবহা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। রওশন সুবহার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। সুবহা ফাইলটা এক ঝটকায় রওশনের সামনে রেখে কিছুটা দূরে দাঁড়ায়।
সুবহাঃ আমি জানি আপনি বারণ করেছিলেন ডিসটার্ব করতে কিন্তু ফাইলটায় আপনার সিগনেচার লাগবে আর্জেন্টলি। স্যরি! না বলে ঢুকে পরেছি কিন্তু আমি নক করেছিলাম কিন্তু আপনি কোনো উত্তর দেন নি তাই….কথা গুলো বলে মাথা নিচু করে নেয় সুবহা।
নিশ্চয়ই রওশন এখন এক গাদা ঝাড়ি দিবে ওকে এখন। সুবহা মাথা নিচু করে প্রস্তুত হয়ে আছে রওশনের ঝাড়ি খাওয়ার জন্য। কিন্তু অবাক করার বিষয় অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়া সত্তেও রওশনের কোনো সাড়াশব্দ নেই।
সুবহা মাথা তুলে রওশনের দিকে তাকাতেই দেখে রওশন ফাইল গুলো সাইন করছে।
সুবহাঃ বাহ্ আজ মিস্টার অ্যারোগেন্ট বসের এতো শান্ত প্রতিক্রিয়া কিভাবে? হাও! ( মনে মনে )
রওশন ফাইলে সাইন করে ফাইলটা এগিয়ে রাখে। সুবহা সাথে সাথে ফাইলটা নিয়ে মুচকি হেসে রওশনের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
সুবহাঃ থ্যাংক ইউ রওশন।
রওশন সুবহার ঠোঁটের মুচকি হাসির দিকে কয়েক মিনিট তাকিয়ে নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। আশেপাশে তাকিয়ে আবারো সুবহার দিকে তাকায় রওশন। তবে এবার ওর মুখে রাগ স্পষ্ট,, কড়া গলায় সুবহাকে বলে ও,,,
রওশনঃ তোমাকে এর আগেও কতবার বলেছি আমার সামনে হাসবে না? আই জাস্ট কান্ট টলারেট ইউর স্মাইল।( হালকা রাগি ভয়েজে )
রওশনের কথা শোনার সাথে সাথেই সুবহার ঠোঁটের হাঁসি মিলিয়ে যায়। এটা কোন ধরনের কথা? কারো হাসি কি করে অসহ্যকর লাগতে পারে অন্য কারো কাছে? চোখ দু’টো ছলছল করছে ওর তবে রাগে না অভিমানে। যদিও রওশনের এমন কথায় অভ্যস্ত ও তবুও নিজের মনকে মানাতে পারে না সুবহা। হঠাৎ করেই রওশনের এমন পরিবর্তন নতুন কিছু না। সুন্দর মুহূর্তের মাঝেও হঠাৎ করে রওশন এমন কিছু বলে ফেলে যা সামনের মানুষকে কাঁদিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আজও এমনটাই হয়েছে।
রওশনঃ নাও ইউ ক্যান লিভ…
সুবহাঃ স্যরি।
আর কিছু না বলেই বেরিয়ে যায় সুবহা। সুবহা চলে যেতেই রওশন টেবিলে রাখা মগটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়। রাগটা যেন মগটার উপর ঝারলো ও।
কেবিন থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে ভিতর থেকে কিছু ভাঙার শব্দ পায় সুবহা। কিন্তু এবার আর ভিতরে যাওয়ার সাহস নেই ওর। এই মাত্র অপমানিত হয়েছে যদি আবারো ভিতরে যায় তাহলে নিশ্চয়ই ডাবল হবে অপমানের ডোজ।
নিজের ডেস্কে এসে বসে পরে সুবহা। টিস্যু দিয়ে চোখের কোণা মুখে মুখ ফুলিয়ে নিজে নিজে বলতে শুরু করে সুবহা।
সুবহাঃ একটা মানুষ এতোটা খারুস কিভাবে হতে পারে? লাইক সিরিয়াসলি! নিজে হাসে না তাই বলে কি অন্যরাও হাসতে পারবে না? আর আমি তো হাসিও নি জাস্ট একটু স্মাইল করেছি। এটাতেও দোষ! খারুস লোক,,, ওনার আম্মুর সাথে যদি কখনো আমার দেখা হয় সবার আগে আমি একটাই প্রশ্ন করবো যে, জন্মের পর কি উনি উনার ছেলের মুখে মধুর বদলে করলার রস দিয়েছিলেন? এতোটা তেতো কথা কিভাবে বলতে পারে একটা মানুষ?
?
দরজায় বেল বাজাতেই সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দেয়। আভিকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে যায় সার্ভেন্টরা।
>> আভি বাবা আপনি!
আভি কোনো প্রকার উত্তর না দিয়ে নিজের লাগেজ নিয়ে ঢুকে পরে। সিঁড়ি বেয়ে সোজা নিজের রুমের দিকে চলে যায় ও।
আভি উপরে যেতেই একটা সার্ভেন্ট দ্রুত ল্যান্ডফোন দিয়ে আভির বাবাকে কল করে আভির আসার কথা জানায়।
নিজের রুমের দরজা খুলতেই পা দুটো থেমে যায় আভির। সব কিছু আগের মতোই আছে এখনো। রুমটায় চোখ বুলিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে আভি। আশেপাশে তাকাতেই চোখের সামনে হাজারো স্মৃতি ভেসে উঠে ওর।
বেডের পেছনের দেয়ালের ছবিটায় চোখ আটকে যায় আভির। ওর আর রওশনের একসাথে হাসিমাখা বড় একটা ছবি টানানো সেখানে।
ছবিটার দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে নিজের চোখ সরিয়ে নেয় আভি। লাগেজ খুলে ভেতর থেকে একটা ফাইল বের করে আভি। ফাইলটা বের করে ভালো করে চেক করে বেডের উপর উঠে ছবির ফ্রেমটার পেছনে সাবধানে লুকিয়ে রাখে ও।
?
অফিস টাইম শেষ হতেই সব কিছু গুছিয়ে নেয় সুবহা বাসায় যাওয়ার জন্য।
ডেস্ক থেকে উঠে বের হতে নিলেই রওশনের কেবিনের দিকে তাকিয়ে থেমে যায় ও। রওশন হয়তো এখনো ভিতরে। যত যাই হোক না কেন রওশনের জন্য সুবহার অনুভূতি ভিন্ন। রওশন যত যাই কিছু বলুক না কেন সুবহা কখনো ওর উপর রেগে থাকতে পারে না, আর না ওর চিন্তা ভাবনা নিজের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারে।
কেবিনের দিকে পা বাড়িয়েও থেমে যায় সুবহা। যদি আবারো রওশন ওর অপমান করে? কথাটা ভেবে আর সামনে এগোলো না সুবহা বরং চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
অফিস থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসে সুবহা। সুবহার গাড়ি নিয়ে চলে যেতেই ওর গাড়িকে একটা কালো রঙের গাড়ি ফলো করে।
সুবহা বাসায় পৌঁছানোর পরেও গাড়িটা অ্যাপার্টমেন্টের নিচেই দাঁড়িয়ে।
?
সুবহা বাসায় ঢুকতেই টাইসেল দৌড়ে ওর কাছে ছুটে আসে।
সুবহাঃ টাইসু! মাই কিউটি, ( টাইসেলকে কোলে তুলে আদর করে ) আই মিস’ড ইউ সো মাচ। তুই-ও আমাকে মিস করেছিস তাই না?
টাইসেল শব্দ করছে আর লেজ নাড়ছে হয়তো বলতে চাইছে ও-ও সুবহাকে মিস করেছে সারাদিন।
সুবহাঃ স্যরি বেবি সকালে তোর সাথে দেখা না করেই চলে যেতে হয়েছিল। তুই তো জানিস আমার বস কতটা অ্যারোগেন্ট, একটু লেইট হলে আমার নামের পাশে লেইট সুবহা এহমাদ যোগ হয়ে যেত।
তুই এখন বস এখানে ( সোফায় বসিয়ে দিয়ে ) আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর একসাথে ডিনার করবো ঠিক আছে।
টাইসেল বসে বসে লেজ নাড়ছে। সুবহা ওকে রেখে নিজের রুমে চলে যায়। সুবহা চলে যেতেই টাইসেল সোফা থেকে নেমে এক দৌড়ে বারান্দায় চলে যায়। বারান্দার রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে নিজের মাথা বের করে দেয় ও।
কালো গাড়িতে থাকা মানুষটি টাইসেলকে দেখে গাড়ির কাঁচ অল্প নামিয়ে দেয়। টাইসেলকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও কতটা খুশি। লোকটি টাইসেলকে একটা সুন্দর হাঁসি উপহার দিয়ে ইশারা করে ভিতরে চলে যেতে। তার কথা অনুযায়ী ভদ্র ভাবে ভিতরে গিয়ে আবারো সোফায় বসে পরে টাইসেল।
গাড়ির লোকটি গ্লাস বন্ধ করে গাড়ি ঘুরিয়ে নিজের গন্তব্যে চলে যায়।
?
“ দাউ দাউ করে আগুন জ্বালছে গাড়িতে। ভিতরে দু’জন মানুষ আটকে আছে। দু’জনেরই জ্ঞান নেই। সেন্সলেস হয়ে আছে দু’জনই।
গাড়ির বাইরে মানুষের ভীর অথচ কেউ এগিয়ে আসছে না সাহায্যের জন্য। এক পর্যায়ে গাড়ির আগুন এতোটাই তীব্র হয়ে যায় যে বিকট শব্দ করে ব্লাস্ট হয়ে যায়।”
সাথে সাথে উঠে বসে রওশন। পুরো শরীর কাঁপছে ওর। শরীরের শার্টটা ঘামে ভিজে গেছে। বড় বড় নিশ্বাস ফেলছে ও।
সোয়া থেকে উঠে বসে রওশন। কাজ করতে করতে সোফাতেই চোখ লেগে গিয়েছিল ওর। সোফায় হেলান দিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয় ও। হাতের মুঠোটা আরো শক্ত করে করে নেয় রওশন।
রওশনঃ এই ভয়ঙ্কর স্মৃতি কবে আমাকে তাড়া করা বন্ধ করবে? আর পারছি না আমি। আই জাস্ট কান্ট স্যান্ড ইট এনিমোর।
প্লিজ আমাকে মুক্তি দিন এই ভয়ঙ্কর স্মৃতি থেকে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। – চোখ দু’টোর কোণে পানি জমে গেছে রওশনের।
উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দায় চলে যায় রওশন। মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে ওর।
রওশনঃ কিছু অপরাধের ক্ষমা হয়না শুধু শাস্তি হয়। কিন্তু সব কিছুরই একটা সমাপ্তি আছে তাহলে আমার এই শাস্তির সমাপ্তি কোথায়? কবে মুক্তি পাব আমি এই ভয়ঙ্কর গিল্ট থেকে?( রেলিংয়ে দুই হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে )
পরের দিন ?
আজকে সবার আগে অফিসে এসেছে সুবহা। গতকাল রওশনের মুড অফ ছিল তাই ভুলেও আজ কোনো ভুল করতে চায় না সুবহা।
নিজের ডেস্কে বসে আছে সুবহা। কেউ আসে নি এখনো তাই বোর হচ্ছে ও। হঠাৎ সুবহার মাথায় আসে ওর ক্লিপের কথা।
সুবহা সাথে সাথে সোজা হয়ে বসে তারপর নিজে নিজে হেঁসে বলতে শুরু করে।
সুবহাঃ কেউ এখনো আসে নি আর রওশনও আসে নি। তার মানে এখন যদি আমি রওশনের কেবিনে ঢুকি দেখার মতো কেউ থাকবে না। ইয়েস! নিজের ক্লিপটাকে উদ্ধার করার এটাই সুযোগ।( দাঁড়িয়ে গিয়ে ) কিন্তু রওশন যদি হঠাৎ করে চলে আসে?( ভয়ে আবার বসে পরলো ) নাহ এমন রিস্ক নেওয়া ঠিক হবে না।( ঢোক গিলে )
কিন্তু এখনো তো ন’টা বাজতে এক ঘন্টা বাকি! রওশন কখনো এতো তাড়াতাড়ি অফিসে আসে না। দ্যাট মিন’স রওশন আসার আগেই আমি আমার ক্লিপটাকে উদ্ধার করতে পারবো। ইয়েস,, কাম অন সুবহা ইউ ক্যান ডু ইট! জাস্ট কেবিনের দরজা খুলবি, ডেস্কের সামনে যাবি, নিজের ক্লিপটা খুঁজবি তারপর পেয়ে গেলেই নিয়ে এক দৌড়ে বেরিয়ে আসবি। গ্ৰেইট আইডিয়া।( আবারো দাঁড়িয়ে )
মিশন ক্লিপ উদ্ধার স্টার্ট’স নাও……
To be continued…..