#আসক্তি?
#Mr_Arrogant_4,পর্ব_৪,৫
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
০৪
?
কেবিনের দরজা খুলে ধীর পায়ে চোরের মতো ভিতরে প্রবেশ করে সুবহা। বিশাল কেবিন রওশনের। পুরো কেবিনটাই সাদা রঙ দিয়ে সাজানো। বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিক শো পিজ দিয়ে সাজিয়েছে রওশন নিজের কেবিন। কিন্তু সুবহার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লাগে রওশনের বিশাল বুক শেলফ আর শেলফের বই গুলো। শেলফটা দেশি বিদেশি বিভিন্ন ভাষা আর রাইটারের বুক দিয়ে পরিপূর্ণ।
সুবহার বই খুব প্রিয় তাই রওশন নিজেই সুবহাকে অনুমতি দিয়েছিল যখন খুশি নিজের পছন্দের বই নিয়ে পড়তে। সুবহা শুধু কয়েকটা বই পরেছে এখন অব্দি কিন্তু রওশন! ওর কাছে সব বই পড়া। লোকটার ব্রেইন রোবটের থেকে কম না। মানুষটা যেমন রোবটিক তেমনি তার ব্রেইনও।
সুবহা শেলফ থেকে চোখ সরিয়ে রওশনের ডেস্কের দিকে পা বাড়ায়। এই মুহূর্তে যত দ্রুত সম্ভব নিজের কাজ শেষ করে কেটে পরতে চায় সুবহা।
রওশনের ডেস্কের আশেপাশে খুঁজেও নিজের ক্লিপটা পেলো না ও। তাই ডেস্কের ড্রয়ার খুলে খুঁজতে শুরু করে সুবহা।
ডান পাশে খোঁজা শেষ করে বাম পাশের ড্রয়ার খোলে সুবহা। খুলতেই চোখের নিজের ক্লিপটা দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠে ও।
সুবহাঃ ইয়েস পেয়ে গেছি।
সুবহা দ্রুত ক্লিপটা নিয়ে নেয়। ক্লিপটা নিতেই ড্রয়ারে একটা ডায়রি দেখতে পায় সুবহা। ক্লিপটা ডেস্কে রেখে ডায়রিটা তুলে হাতে নেয় ও।
সুবহাঃ ডায়রি? নিশ্চয়ই এটা রওশনের। খুলে কি পড়বো?( ভেবে ) না না দরকার নেই কারো পার্সোনাল জিনিসে হাত দেওয়া ব্যাড ম্যানার্স।
সুবহা ডায়রিটা রেখে দেয় তারপর নিজের ক্লিপ নিয়ে চলে যেতে নেয়। কিন্তু যেতে গিয়েও থেমে যায় সুবহা। অনেক কৌতুহল লাগছে ওর কাছে ডায়রিটা নিয়ে। রওশনের মতো মানুষ যেহেতু ডায়রিতে লিখেছে তাহলে নিশ্চয়ই স্পেশাল কোনো সিক্রেট আছে তার জীবনে।
সুবহাঃ রওশন তো এখনো আসে নি। এক কাজ করি দুই এক পেইজ পড়ি তারপর রেখে দিব। ( কৌতূহল নিয়ে )
যে ভাবা সেই কাজ। সুবহা আবারো ড্রয়ারটা খুলে ডায়রিটা বের করলো। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে ডায়রিটা খুলল ও।
প্রথম পেইজ….
“ ভালোবাসা! আগে এটা আমার জন্য শুধু একটা শব্দ ছিল কিন্তু এখন! এখন উপলব্ধি করতে পারছি ভালোবাসা শুধু একটা শব্দ না হাজারো আবেগ হাজারো অনুভূতির সংমিশ্রণ এটা।
হুম ভালোবাসি। ভালোবেসে ফেলেছি। কখন? কিভাবে? কোথায়? কেন? কিছু বুঝতে পারি নি শুধু এতো টুকু বুঝতে পেরেছি যে ভালোবাসি তাকে। কিন্তু এই ভালোবাসার সম্পূর্ণতা সম্ভব না। এই ভালোবাসা আমার জীবনে ভয়ঙ্কর তুফান নিয়ে আসবে যার থেকে রেহাই পাওয়ার সামর্থ্য নেই আমার। এই ভালোবাসা গভীর সমুদ্রে ডুবিয়ে দিবে আমায়। শেষ করে দিবে আমার অস্তিত্ব। সব জেনেও যে মনকে বুঝাতে পারি না। জানি সম্ভব না তবুও যে ভালোবাসি তাকে। ”
প্রথম পেইজ পড়া শেষ করে অবাক হয় সুবহা। রওশন কাউকে ভালোবাসে? ভাবতেই অবাক লাগছে ওর। তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় পেইজে যায় ও।
দ্বিতীয় পেইজ,,,
আমার ভালোবাসা ধীরে ধীরে আসক্তিতে পরিনত হচ্ছে। আই’ম গেটিং এডিক্টেট টু হার। তাকে না নিজের কাছে টানতে পারছি আর না দূরে সরাতে পারছি। এক অদ্ভুত দোটানায় পরে গেছি আমি।
তার হাসি, তার চাহনি, তার কান্না, তার দৃষ্টি সব কিছু অগোছালো করে দেয় আমায়। সামলে রাখতে পারি না নিজেকে। আমি চাই সে আমাকে ভালোবাসুক কিন্তু আমি এটাও চাই সে আমার কাছ থেকে দূরে থাকুক। তার জন্য যদি সে আমাকে ঘৃণাও করে আফসোস নেই।
যখন সে হাসে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয় কিন্তু পারি না তাই খারাপ ব্যাবহার করে বসি। যখন সে কান্না করে ইচ্ছে করে তার কপালে চুমু দিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে তার কান্না থামাই কিন্তু পারি না তাই ধমক দিয়ে বসি। এতে অবশ্য সে চুপ হয়ে যায়। ( লাইনটা পড়ে হেঁসে দেয় সুবহা )
সে নিজেও জানে না যে তার প্রতি কতটা আসক্ত আমি। সে ভাবে আমার মতো হার্টলেস মানুষ হয়তো পৃথিবীতে দ্বিতীয় নেই কিন্তু সে এটা জানে না,,, এই হার্টলেস মানুষটা অনেক আগেই নিজের হার্টে তাকে বন্দী করে নিয়েছে। ”
তৃতীয় পেইজ,,,
যদি সে কখনো জানতে পারে আমি তাকে কতটা ভালোবাসি তাহলে কি সে আমার ভুল ক্ষমা করতে পারবে? ভুলতে পারবে আমার দেওয়া আঘাত?
মাঝে মধ্যে ভাবি,,, কেন ভালোবাসলাম তাকে? পৃথিবীতে এতো মেয়ে থাকতে তার প্রতিই কেন আমার সব আসক্তি। যার দৃষ্টিতে ভালোবাসা দেখতে চাই তার দৃষ্টিতে একদিন নিজের জন্য তীব্র ঘৃণা দেখতে হবে জেনেও কেন ভালোবাসি?
জবাব নেই আমার কাছে। তার কাছেও হয়তো নেই এর জবাব। থাকবেই বা কি করে সে তো জানেই না তার আড়ালে কেউ তাকে এতোটা ভালোবাসে। সে জানবে একদিন। কিন্তু হয়তো তখন পরিস্থিতি ভীন্ন থাকবে। আমার ভালোবাসার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ তখন তার ঘৃণা হবে আমার প্রতি। কিন্তু তবুও ভালোবেসে যাব তাকে আমি। জীবনের শেষ অব্দি ভালোবাসবো……
সুবহা পরের পেইজ উল্টে পড়বে তখনই হঠাৎ কেউ ছো মেরে ওর হাত থেকে ডায়রিটা নিয়ে নেয়। সুবহার আর বুঝতে বাকি নেই মানুষটি কে হতে পারে। সেন্সলেস হয়ে যাওয়ার অবস্থা সুবহার। মাথাটা এখনো নিচের দিকে হাত দু’টো একই অবস্থায় আছে যেন ডায়রিটা ধরে রেখেছে।
সব কিছু থমথমে লাগছে সুবহার কাছে। নড়ার সাহস টুকু পাচ্ছে না ও মাথা তোলা তো দূরের কথা।
সুবহার নিঃশ্বাস যেন মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। মাথা তুলে সামনের মানুষটির দিকে তাকানোর সাহস টুকু নেই ওর মধ্যে। তবে তার দিকে না তাকিয়েও সুবহা বলে দিতে পারবে যে, মানুষটির রক্তিম বর্ণ চোখ এই মুহূর্তে ভয়ঙ্কর রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।
হঠাৎ সুবহা কিছু ভাঙ্গার ভয়ঙ্কর শব্দে কেঁপে উঠে। মাথা তুলে তাকাতেই দেখে বড় একটা অ্যান্টিক চার পাঁচ টুকরো হয়ে ফ্লোরে পরে আছে।
সুবহা রওশনের দিকে তাকাতেই হুট করে রওশন ওর দিকে তেড়ে আসে সুবহা ভয়ে এক ঝটকায় চেয়ারের পেছনে চলে যায় আর রওশন থেমে যায়।
সুবহাঃ রওশন আমি এক্সপ্লেইন করছি।( ভয়ে ভয়ে )
রওশনঃ এখানে এক্সপ্লেইন করার কিছুই দেখছি না আমি সুবহা। তোমার সাহস কি করে হয় আমার পার্সোনাল জিনিসে হাত দেওয়ার? হাও ডেয়ার ইউ সুবহা? – রেগে টেবিলের জিনিস সব হাত দিয়ে ফেলে দিল রওশন। সুবহা ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে। কাঁদতেও পারছে না পালাতেও পারছে না। ওর অবস্থা এমন যেন, সিংহের খাঁচায় খরগোশের বাচ্চাকে আঁটকে দেওয়া হয়েছে।
সুবহাঃ স্যরি…. কাঁদো কাঁদো গলায়।
রওশনঃ টু হ্যাল উইথ ইউর স্যরি। আমার অনুপস্থিতিতে আমার কেবিনে ঢোকার সাহস কোথায় পেলে তুমি? আন্সার মি ড্যাম ইট…টেবিলে দু হাত দিয়ে জোরে বারি মেরে। টেবিলের সাথে সাথে সুবহাও কেঁপে উঠে। হাত দু’টো জড়সড় করে বুকে চেপে রেখেছে ও। গলা ভেঙ্গে কান্না আসছে সুবহার কিন্তু ও জানে যদি ও কাঁদে তাহলে রওশন আরো বেশি ভরকে যাবে তাই মন খুলে কাঁদতেও পারছে না ও।
রওশনের মুখ লাল হয়ে গেছে অতিরিক্ত রাগের কারনে। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে ও। সুবহাকে চুপ থাকতে দেখে রাগ যেন মাথায় চড়ে বসছে ওর। চোখ দু’টো বন্ধ করে ফেলে রওশন। রাগ সংবরণ করার চেষ্টা করেছে ও। ডায়রিটা এতো শক্ত করে ধরেছে ও যে বাঁকিয়ে যাচ্ছে। সুবহার দৃষ্টি ডায়রিটার দিকে। ডায়রিটার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতেই শরীর কেঁপে উঠে ওর।
রওশনঃ কিছু জিজ্ঞেস করেছি সুবহা! ( শান্ত তবে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে )
সুবহাঃ আ আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আসি নি র রওশন সত্যি।( ভয়ে ভয়ে ) আমি তো শুধু নিজের ক্লিপটা নিতে এসেছিলাম।
রওশন সুবহার কথা শুনে সুবহার হাতের ক্লিপটার দিকে তাকায়। হুট করে সুবহার হাত থেকে ক্লিপটা ছো মেরে নিয়ে দেয়ালে ছুড়ে মারে ও। ক্লিপটা বারি খেয়ে টুকরো টুকরো হয়ে ছিটকে পড়ে চার দিকে। একটা টুকরো ছিটকে রওশনের ঘাড়ে লেগে যায় যার ফলে রওশনের ঘারের দিকটা কেটে যায়।
রওশন টু শব্দ টুকুও করেনি। ব্যাথা পেয়েও রোবটের মতো স্টিল হয়ে দাঁড়িয়ে ও। সুবহা রওশনের ঘাড়ের দিকে তাকিয়ে আরো ভয় পেয়ে যায়। সড়ু হয়ে রক্ত বেয়ে ঘাড় থেকে নামছে ওর।
সুবহাঃ রওশন আপনার ঘ ঘাড়ে……
রওশনঃ লীভ!
সুবহাঃ হু!( চমকে )
রওশনঃ আই সেইড লিভ ফ্রম হেয়ার।
সুবহাঃ রওশন আমি….
রওশনঃ যেতে বলেছি তোমায়।( ধমক দিয়ে )
রওশনের ধমকে কেঁপে উঠে সুবহা। এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে দৌড়ে বেরিয়ে যায় ও। এই মুহূর্তে এখান থেকে পালাতে পারলেই বাঁচে ও। সুবহা চলে যেতেই রওশন চেয়ারে স্বজোরে লাথি দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।
রওশনঃ আরেকটু সময় দেরি করলে সব কিছু শেষ হয়ে যেত। ( জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে রওশন ) তুমি এমন কেন সুবহা? যেটা তোমার জন্য নিষিদ্ধ তুমি সেটাই কেন করো বারবার?
রওশন সোফায় বসে পরলো। মাথায় অনেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে ওর। ডায়রি ধরে রাখা হাতটা লাগাতার কাঁপছে ওর। যে চোখে এতক্ষন রাগ ছিল সে চোখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে। হৃদস্পন্দনের গতিবেগ এতোটাই তীব্র ভাবে বেড়ে গেছে এখন নিঃশ্বাসটাও নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর।
রওশনের কেবিনের থেকে বেরিয়ে দৌড়ে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে পরে সুবহা। বুক এখনো কাঁপছে ওর। গলা শুকিয়ে যেন কাঠ হয়ে গেছে। আশেপাশে তাকিয়ে পানি খোঁজে সুবহা। ডেস্কের পাশে রাখা বোতলটা চোখে পরতেই দ্রুত হাতে সেটা নিয়ে এক নিঃশ্বাসে সবটা শেষ করে দেয় ও।
বোতলটা রেখে রওশনের কেবিনের দরজার দিকে তাকায় সুবহা। ভয়ার্ত কন্ঠে একটা কথাই বের হয় গলা দিয়ে ওর,,,,
সুবহাঃ এখন কি হবে আমার?( কাঁদো কাঁদো গলায় )
To be continued…..
#আসক্তি?
#পর্ব_৫
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Mr_Arrogant_4
?
সকাল গড়িয়ে বিকেল এখন। সেই সকালে রওশনের কেবিন থেকে পালিয়েছে সুবহা এখন অব্দি ভুলেও কেবিনের দরজার সামনেও যায়নি ও।
দুপুরের খাবার তো দূরের কথা আজ সকালের কফিটা পর্যন্ত খায়নি রওশন। এমন নয় যে সুবহা চেষ্টা করেনি। কিন্তু ও যতবারই রওশনের কেবিনে খাবার নিয়ে যাওয়ার জন্য উঠেছে ততবারই রওশনের ভয়ঙ্কর রুপের কথা ভেবে ভয়ে বসে পরেছে।
হেডকোয়ার্টার ?
নিজের কেবিনে বসে আছেন অর্নব খাঁন। এমন সময় কারো ফোন আসে। ফোন রিসিফ করে কথা বলতে শুরু করেন উনি। একটা কেসের বিষয়ে ফোন করেছে কেউ আর উনাকে দেখা করতে যেতে বলছে।
ফোনটা রেখে উঠে নিজের কেবিন থেকে বের হয়ে যান অর্নব খাঁন লোকটির সাথে দেখা করতে। অর্নব কেবিন থেকে বের হতেই আভি আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে।
অর্নব খাঁন গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছেন দেখেই উনার কেবিনে ঢুকে পরে ও।
ডেস্কে পরে থাকা ফাইল গুলো থেকে কিছু খুঁজতে শুরু করেছে আভি। একে একে ডেস্ক, ড্রয়ার, শেল্ফ সব জায়গা খুঁজেও জিনিসটা পেলো না ও।
আভিঃ কোথায় রেখেছে ফাইলটা? – আশেপাশে খুঁজে।
হঠাৎ আভির চোখ যায় শেল্ফে রাখা একটা বইয়ের পেছনে। সাদা কভারের বইয়ের সাথে নীল কভারের কিছু দেখা যাচ্ছে।
আভি দ্রুত বই সরিয়ে দেখে। এতক্ষন যেটা খুঁজছিল সেটাই। হেঁসে দেয় আভি,,,
আভিঃ আভির চোখকে ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ না অর্নব স্যার।
ফাইলটা দ্রুত নিয়ে চেক করতে শুরু করে ও। পাশেই জ্যারোক্স মেশিন। ফাইলের প্রতিটা পেইজের কপি বের করে ফাইলটা জায়গা মতো রেখে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় ও।
কেবিন থেকে বেরিয়েই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে ও,,,,
আভিঃ স্যরি স্যার কিন্তু আমার কাছে অন্য কোনো চয়েজ ছিল না।
আভি নিজের কেবিনে চলে আসে। ডেস্কে বসে কাগজ গুলো ভালো করে পড়তে শুরু করে ও। এমন সময় ফোনের ম্যাসেজ টোন বাজে।
কেউ ভিডিও পাঠিয়েছে। ফোনটা তুলে ভিডিওটা দেখতেই চোখ কপালে উঠে যায় আভির। ভিডিও টা শেষ হতেই একটা ম্যাসেজ আসে,,,
“ ত্রিশ মিনিটের মধ্যে তোকে নিজের সামনে দেখতে চাই। যদি এর থেকে এক মিনিটও লেইট হয় তাহলে ভিডিওটা ভাইরাল হতে সময় লাগবে না। তোর সময় শুরু হচ্ছে এখন….”
ম্যাসেজটা পড়ে প্রায় তিন মিনিট স্তব্ধ হয়ে থম মেরে বসে থাকে আভি তারপর হুট করেই ফোনটা হাতে তুলে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায় ও।
কিছুক্ষণ পর,,,
রায়জাদা ইন্ডাসট্রিজ এর সামনে গাড়ি থামায় আভি। গাড়ি থেকে নেমে চাবিটা সিকিউরিটির হাতে ধরিয়ে দিয়ে দৌড় দেয় ভিতরে। হাতের ঘড়ির দিকে তাকায় ও। বিশ মিনিট শেষ আর মাত্র দশ মিনিট।
গালে হাত দিয়ে রওশনের কেবিনের দিকে তাকিয়ে আছে সুবহা। হঠাৎ করেই ও আভিকে দৌড়ে রওশনের কেবিনের দিকে যেতে দেখে। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায় সুবহা।
সুবহাঃ এটা কে? আর ইনি রওশনের কেবিনের দিকে যাচ্ছেন কেন? আই হ্যাভ টু স্টপ হিম।
সুবহা দ্রুত গিয়ে আভির পথ আটকায়। হঠাৎ এভাবে কেউ পথ আটকানোতে থেমে যায় আভি।
সুবহাঃ আপনি কে? আর এভাবে ভিতরে কোথায় যাচ্ছেন? আপনার অ্যাপয়েন’মেন্ট লেটার দেখান আগে তারপর ভিতরে যেতে পারবেন।
সুবহার কথায় অবাক আভি। অ্যাপয়েন’মেন্ট লেটার চাওয়া হচ্ছে তাও ওর কাছ থেকে ভাবা যায়। আভি চোখ দুটো ছোট ছোট করে সুবহাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে তারপর বলে,,,
আভিঃ হু আর ইউ মিস্?
সুবহাঃ আমি এই কোম্পানির ডিজাইনিং ডিপার্টমেন্টের হেড।
আভিঃ হোয়াট এভার!( বিরক্তিকর ভাব নিয়ে ) তুমি যেই হওনা কেন এভাবে আমার পথ আটকানোর রাইট নেই তোমার। আমার দেরি হচ্ছে যেতে দাও আমায়।
সুবহাঃ একদম না। অ্যাপয়েন’মেন্ট লেটার ছাড়া কেউ বসের সাথে দেখা করতে পারে না।
সুবহার কথায় আভি বাকরুদ্ধ। এতক্ষন বাকি স্টাফরা নিজেদের কাজ করছিল কিন্তু এখন তারা কাজ ফেলে আভি আর সুবহার দিকে তাকিয়ে। আভির কাছে বিষয়টা বিভ্রান্তিকর। একতো ওর সময় নষ্ট হচ্ছে তার উপর আবার সুবহা ওকে এভাবে ইনসাল্ট করছে।
ল্যাপটপে সিসিটিভির ফুটেজ দেখছে রওশন। ফুটেজে আভি আর সুবহার তর্ক চলছে। এক হাতে নিজের ফোনটা ঘুরাচ্ছে ও। রওশনকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও ওদের দুজনের তর্ক অনেক ইন্জয় করছে।
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। আভি উপায় না পেয়ে সুবহার সাইড দিয়ে যেতে নিলেই সুবহা আভির শার্ট টেনে ধরে। হঠাৎ শার্টে জোরে টান পরায় আভির শার্টের সামনের তিনটা বোতাম ছিঁড়ে পরে যায় আর শার্টটা সামনে দিয়ে অর্ধেক খুলে যায়।
সব স্টাফরা হা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সুবহা নিজেও হতবাক নিজের কাজে। আভি যেন জমে গেছে। চোখ দু’টো খুলে পরে যাওয়ার উপক্রম ওর। হুঁশ ফিরতেই এক হাত দিয়ে শার্টটা কুঁচকে ধরে ফেলে ও।
আভিঃ ইউ….. সুবহার দিকে আঙ্গুল তুলে দাঁত খিঁচে।
সুবহাঃ সো স্যরি…. অসহায় ভাবে।
আভিঃ তোমাকে আমি পরে দেখে নিব।
কথাটা বলেই কেবিনের ভিতর চলে গেলো আভি। সুবহা অসহায়ের মতো নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে পরে। আজকের দিনটাই খারাপ ওর জন্য। একটার পর একটা কান্ড করেই চলেছে ও।
আভি ভিতরে ঢুকেই দেখে রওশন নিজের সুইভেল চেয়ারে বসে ওর দিকেই তাকিয়ে।
রওশনঃ ওয়েলকাম টু মাই অফিস! – মৃদু হেসে।
আভিঃ ওয়েলকাম! ( কপাল কুঁচকে ) লুক! কিভাবে ওয়েলকাম করা হয়েছে আমাকে।( শার্টের দিকে আঙুল তাক করে )
রওশনঃ বিনা অ্যাপয়েন’মেন্টে আসলে এমনই হবে।
আভিঃ সিরিয়াসলি! যদি আপনি ভুলে গিয়ে থাকেন তাহলে মনে করিয়ে দেই। আমার এখানে আসার কোনো ইচ্ছে ছিল না আপনিই ব্ল্যাক মেইল করে বাধ্য করেছেন আমাকে এখানে আসতে।
রওশনঃ আর তোকে ব্ল্যাক মেইল করে এখানে আনানোর জন্য তুই নিজেই আমাকে বাধ্য করেছিস।
আভিঃ ওকে ফাইন। কেন আসতে বলেছেন আমায় সেটা বলেন। – রওশনের বরবার চেয়ারে বসে।
রওশনঃ তুই এখন কেন ফিরেছিস?
আভিঃ আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।
রওশনঃ এটা তোর ফেরার সঠিক সময় ছিল না আভি।
আভিঃ সঠিক সময় বলে বলে পাঁচ বছর কেটে গেলো। যদি আপনার কথা অনুযায়ী আরো অপেক্ষা করতাম সঠিক সময়ের তাহলে দেখা যেতো আরও পাঁচ বছর কেটে গেছে। ( তাচ্ছিল্য হেসে )
রওশনঃ তুই কি বলতে চাচ্ছিস? আমি হাতে হাত রেখে বসে আছি?
আভিঃ ইগজেক্টলি! আপনি হাতে হাত রেখেই বসে আছেন। এজন্যই তো পাঁচ বছরেও কিছু করতে পারেন নি।
আভির কথায় রেগে যায় রওশন কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না। কারন এই মুহূর্তে রাগ দেখিয়ে কোনো কাজ হবে না বরং পরিস্থিতি আরো জটিল হবে।
রওশনঃ লিসেন আভি। তোর জন্য এখানে থাকা সেইফ না বুঝার চেষ্টা কর।
আভিঃ আমার জন্য সেইফ না তবে কি আপনার জন্য সেইফ? আপনি থাকতে পারলে আমি কেন পারবো না?
রওশনঃ বাচ্চাদের মতো কেন করছিস আভি? গ্ৰোও আপ।
আভিঃ হয়তো বাচ্চাই ছিলাম এজন্যই তো পাঁচ বছর আগে চলে গিয়েছিলাম কিন্তু এখন আর আভি বাচ্চা নয়। না মেন্টেলি আর না ফিজিক্যালি। আমি আর কোথাও যাব না এখানেই থাকবো।
রওশনঃ তার মানে তুই আমার অবাধ্য হচ্ছিস?
আভিঃ তুমিই বাধ্য করেছো। তাছাড়া আমি এখন আবুঝ নই। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার মতো মন মানসিকতা আছে আমার।
রওশনঃ আভি তুই….
আভিঃ আমার যা বলার ছিল বলে ফেলেছি।( দাঁড়িয়ে গিয়ে ) আমার অনেক কাজ আছে এভাবে বসে গল্প করার মতো ফালতু সময় নেই আমার কাছে।
রওশনঃ হুম। কি কাজ সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।
আভিঃ যাচ্ছি আমি। আর হ্যাঁ এভাবে আর কখনো কাজের মাঝে ফোন দিয়ে আসতে বলবেন না। শুধু কাজের মাঝে কেন কখনো কোনো কারনে আমাকে ফোন করে আসতে বলবেন না আপনি।
আভি কথা গুলো বলে চলে যেতে নিলেই রওশনের কথায় থেমে যায়।
রওশনঃ ওয়েইট!
আভিঃ হোয়াট? আবার কি?
রওশনঃ এভাবে ছেঁড়াফাড়া অবস্থায় বাইরে গেলে মানুষ ভাববে রওশন রায়জাদার ভাই এতো বড় বিজনেস ফেলে ফকিরি করতে নেমে গেছে। ওখান থেকে আমার একটা শার্ট পরে বের হ।
আভি একবার রওশনের দিকে তাকিয়ে আরেকবার নিজের অবস্থার দিকে তাকায়। এ ছাড়া অন্য কোনো উপায়ও দেখতে পারছে না আভি। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও রওশনের কথায় রাজি হয়ে ওর একটা শার্ট পরে নেয় আভি।
রওশনের কেবিনে সব সময় এক্সট্রা কোট স্যুজ শার্ট আর সব প্রয়োজনীয় জিনিস থাকে এমারজেন্সির জন্য। যেগুলো আজ আভির এমারজেন্সিতে কাজে লেগে গেলো।
মুখটা বাংলার পাঁচ করে আছে আভি। দেখে মনে হচ্ছে কেউ জোর করে করলার শরবত খাইয়ে দিয়েছে ওকে।
শার্ট চেঞ্জ করে বের হতে গিয়েও থেমে যায় আভি। পেছনে ফিরে রওশনের দিকে তাকিয়ে বলে ও।
আভিঃ ভিডিও টা ডিলিট করেন।
রওশনঃ কোন ভিডিও?( না জানার ভান করে )
আভিঃ যেটা দেখিয়ে আপনি আমাকে ব্ল্যাক মেইল করেন সেটা।
রওশনঃ ওও ওটা! ওটা তো ডিলিট হবে না। তোকে লাইনে রাখার মেডিসিন ওই ভিডিওটা। তুই কি ভাবিস? তুই বললেই ডিলিট করে দিব আমি? ( বাঁকা হেসে )
আভিঃ আপনি আমাকে বাচ্চা বলেন অথচ বাচ্চাদের মতো কাজ তো আপনি করছেন।
রওশনঃ মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের সামলানোর জন্য নিজেকেও বাচ্চা হতে হয়।
আভিঃ আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।( বিরক্ত হয়ে ) আমিও একদিন আপনার এমন ভিডিও করবো আমার ভিডিও ও তখন ইউজলেস মনে হবে সবার কাছে।
রওশনঃ দেখা যাবে।
আভিঃ দেখে নিয়েন।
কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো আভি। বের হতেই সুবহাকে দেখে ও। নিজের ডেস্কে বসে আছে। আভিকে বের হতে দেখে দাঁড়িয়ে যায় সুবহা। ভয় পাচ্ছে ও। যদি আভি ওকে কিছু বলে তার জন্য।
কিন্তু আভি সুবহাকে কিছুই বলল না শুধু কড়মড়ে দৃষ্টিতে তাকিয়ে বের হয়ে গেলো। আভি চলে যেতেই সুবহা হাঁফ ছেড়ে বসে পরলো। কিন্তু পরক্ষনেই ওর খেয়াল হয় আভির গায়ে রওশনের শার্ট ছিল।
সুবহাঃ রওশন নিজের শার্ট ইনাকে কেন দিলেন? বাই চান্স ইনি রওশনের রিলেটিভ নন তো?( ঘাবড়ে ) যদি এমনটা হয় রওশন তো আমাকে আজ মেরেই ফেলবে।( ভয়ে ভয়ে ) কার চেহারা দেখে আজ ঘর থেকে বের হয়েছিলাম আমি?
হঠাৎ ল্যান্ডলাইনে কল আসতেই নিজের ভাবনা সাইডে রেখে রিসিভ করে সুবহা। কিছু বলার আগেই অপর পাশ থেকে বলতে শুরু করে কেউ “ আজকে কি আমার ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ সোজা ডিনার টাইমে দেওয়ার ইরাদা তোমার? ”
সুবহাঃ না না রওশন আমি এখুনি আনছি।
রওশন। কল কেটে দেয়। সুবহা এক দৌড়ে ক্যাফেতে চলে যায় রওশনের জন্য খাবার আনতে। লেইট হলে দেখা যাবে ওকেই না খেয়ে ফেলে।
To be continued…..