আসক্তি #Mr_Arrogant_4,পর্ব_১২

0
2427

#আসক্তি
#Mr_Arrogant_4,পর্ব_১২
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

?
রওশনের কেবিনে সোফায় পা ঝুলিয়ে বসে স্ট্র দিয়ে মিল্কশেক খাচ্ছে আর পা নাচাচ্ছে নীল। অন্য দিকে রওশন ঠিক ওর সামনে এপাশ থেকে ওপাশে পায়চারি করছে আর বলছে,,,

রওশনঃ এখন কি হবে? আমি সুবহাকে কিভাবে কি এক্সপ্লেইন করবো? গড! কত বড় বিপদে ফেললে তুমি আমায় নীল। সুবহা সেদিন আমার ডায়রি পড়েছিল, ভাগ্যিস পুরোটা পড়ার আগেই আমি ওকে ধমকে পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আজকের ঘটনা! আজকের টা কিভাবে হ্যান্ডেল করবো? সুবহা নিশ্চয়ই সেদিনের কথা জিজ্ঞেস করবে। আমি ওকে আগে থেকে চিনি, এটা নিশ্চয়ই ও বুঝে গেছে এতক্ষণে। ওহ্ নো নো নো মাথা ফেটে যাচ্ছে আমার। হোয়্যার ইজ মাই কফি? – আশেপাশে তাকিয়ে নিজের কফি মগ খুঁজছে রওশন যা কিছুক্ষণ আগে স্টাফ রেখে গিয়েছিল।

ডেস্কে রাখা মগটা। রওশন হুট করে মগটা হাতে নিয়ে মুখে লাগাতেই ওর ঠোঁট আর জিহ্বা পুড়ে যায়। সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠে ও,,

রওশনঃ আইশ্‌শীট,,, হাত দিয়ে মুখ চেপে নেয় ও।

নীল এতক্ষন নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে রওশনের দিকে তাকিয়ে ওর কথা শুনছিল। কিন্তু রওশনের হঠাৎ এমন হাইপার কাজ দেখে হাত থেকে গ্লাসটা নামিয়ে উঠে দাঁড়ায় নীল।

পাশ থেকে একটা ট্যিসু নিয়ে রওশনের দিকে বাড়িয়ে দেয় ও। রওশন সাথে সাথে ট্যিসুটা নিয়ে নিজের ঠোঁটে চেপে ধরে।

নীলঃ রওশন ভাইয়া! তুমি এতো হাইপার হচ্ছো কেন আমি বুঝতে পারছি না। তুমি জানো তোমাকে এমন নার্ভাস লুকে একদম বোকাদের মতো লাগে। মোটেও মানায় না তোমাকে এই লুক।

রওশনঃ নার্ভাস! আমি? আমি মোটেও নার্ভাস হচ্ছি না।( আমতা আমতা করে বসে পরলো রওশন )

নীলঃ সেটাতো দেখেই বুঝা যাচ্ছে।( বিরবির করে )

নীল রওশনের পাশে বসে পরলো। তারপর তার মিল্কশেকের গ্লাসটা হাতে নিয়ে রওশনকে বলতে শুরু করলো,,,

নীলঃ রওশন ভাইয়া ডোন্ট বি হাইপার, ওকে? আমি আসার আগে অনেক সুন্দর একটা স্টোরি বানিয়ে এনেছি সুবহাকে শোনানোর জন্য। তুমি শুধু সেভাবে ওকে বললেই ও আর ডাউট করবে না।

আর তাছাড়া সুবহা এমনিতেও বোকা তাই ওকে বোকা বানানো কঠিন হবে না। ( মজা করে )

নীলের শেষের কথাটা শুনে রওশন ওর দিকে চোখ ছোট করে তাকায়। নীল হেসে দেয় সাথে সাথে তারপর বলে,,,

নীলঃ তুমি রেগে যাচ্ছো কেন? আমি কি ভুল বলেছি? দেখো ও যদি বোকা না হতো তাহলে কবেই বুঝে যেত তে তুমি ওকে ভা….. আর কিছু বলার আগেই রওশন নীলের মুখ চেপে ধরে। তারপর ধীর কন্ঠে বলতে শুরু করে।

রওশনঃ হয়েছে হয়েছে বাকিটা বলতে বলতে হবে না। এখন আমাকে এটা বলো আমি সুবহাকে কিভাবে সেদিনের ঘটনার কথা বুঝাবো।

নীল চোখ দুটো ছোট ছোট করে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে রওশনের দিকে।

রওশনঃ কি হলো বলো!

নীল চোখ দিয়ে ইশারা করে যে ওর মুখ থেকে হাত সরাতে।

রওশনঃ উপস্। – তাড়াতাড়ি নিজের হাত সরিয়ে নেয় রওশন।

নীলঃ মুখে হাত দিয়ে রাখলে আমি বলবো কিভাবে?( রেগে )

রওশনঃ ওকে ফাইন, হাত সরিয়েছি তো! এখন বলো।

নীল কিছুক্ষণ চুপ থেকে রওশনকে সব গুছিয়ে বলতে শুরু করে।

কিছুক্ষণ পর,,,

যখন থেকে রওশন নীলকে কেবিনে নিয়ে গেছে তখন থেকেই সুবহা বাইরে পায়চারি করছে। একটু পর পর কেবিনের দরজায় আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করছে তো আবার জানালা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। কিন্তু তবুও ভিতরে কি হচ্ছে জানতে ব্যর্থ হচ্ছে ও।

এখন দুপুরের সময়। রওশন পিয়নকে ওর আর নীলের জন্য খাবার আনার জন্য কল করেছে। সুবহা পায়চারি করতে করতে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় পিয়ন খাবারের ট্রে নিয়ে আসছে।

সাথে সাথে সুবহা তার সামনে চলে যায় তারপর বলতে শুরু করে।

সুবহাঃ দিন খাবারটা আমি নিয়ে যাই।

ট্রে’টা পিয়নের হাত থেকে নিয়ে নেয় সুবহা তারপর কেবিনের সামনে গিয়ে ডোর নক করে,,,

ভিতর থেকে পারমিশন আসতেই সুবহা দ্রুত ভিতরে ঢুকে পড়ে।

নীল সোফায় শুয়ে শুয়ে ভিডিও গেইম খেলছে আর রওশন ওর ডেস্কে বসে কাজ করছে। রওশন চোখ তুলে তাকিয়ে পিয়নের জায়গায় সুবহাকে দেখে মোটেও অবাক হলো না। মনে হচ্ছে যেন ও আগে থেকেই জানতো যে সুবহাই আসবে।

সুবহাঃ আসলে আঙ্কেল অন্য কাজে ব্যস্ত তাই খাবারটা আমি নিয়ে আসলাম।

রওশনঃ সমস্যা নেই,

সুবহা মুচকি হেসে ধীর পায়ে গিয়ে টি টেবিলে ট্রে’টা রেখে দেয়। নীল ফোন টা সাইডে রেখে উঠে বসে, তারপর হঠাৎ সুবহার হাত ধরে বলতে শুরু করে ও।

নীলঃ তোমার আসতে দেরি হলো কেন? আমি অপেক্ষা করছিলাম। তুমি জানো রওশন ভাইয়ার সাথে থাকাটা কত বোরিং,,, – আড়ি চোখে রওশনের দিকে তাকিয়ে।‌

রওশন নীলের কথায় ওর দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়। সুবহা হেঁসে নীলের পাশে বসে পরে তারপর বলে,,

সুবহাঃ তুমি আমাকে মিস করেছো? কতটা?

নীলঃ উমম ( ভাবার এক্টিং করে ) তুমি যতটা সুন্দর ততটা।

সুবহা হেঁসে দেয় নীলের কথায়, তারপর ওর গাল টেনে বলে ও।

সুবহাঃ তাহলে তো অনেক বেশি মিস করেছো।

নীলঃ ওফফো আপি! আমি বেবি না,,, ( গাল ডলতে ডলতে )

এই দিকে রওশন নিজের কাজ রেখে ওদেরই দেখছে। সুবহা আর নীলকে এক সাথে দেখে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে ওর মধ্যে।

?
বাইকের চাবি আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে বাসায় প্রবেশ করে আভি। ড্রইং রুমে আসতেই হঠাৎ সোফায় বসে থাকা মানুষটিকে দেখে পা থেমে যায় ওর।‌

আদনান পায়ে পা তুলে সোফায় বসে আছেন। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন এতক্ষন আভির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন।

আভি চাবিটা শক্ত করে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছে। নিজের ভেতরের রাগ ক্ষোভ মনের মধ্যেই দমিয়ে নেয় ও। আদনানকে দেখেও না দেখার ভান করে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে আদনান ডাকে থেমে যায় আভি।

আদনানঃ আভি!

থেমে যায় আভি, কিন্তু পেছনে ফিরে আদনানের দিকে তাকালো না ও।

আদনানঃ কেমন আছো বাবা?

আভি পেছনে না ফিরেই বলে উঠে, “এতো দিন তো ভালোই ছিলাম। কিন্তু এখন কতক্ষণ ভালো থাকতে পারবো জানা নেই।”

আদনানঃ এসব কথা ওই রওশনের শেখানো তাই না? তোমার মনটা বিষিয়ে তুলেছে ও।

আভিঃ আমি কোনো কিন্ডারগার্ডেনের বাচ্চা না যে, আমাকে কারো কিছু শিখিয়ে দিতে হবে।

আদনানঃ শুনলাম ও নাকি তোমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে? এখন হয়তো ওর আসল রূপ উপলব্ধি করতে পারছো তুমি? তোমার প্রয়োজন, তোমার ইচ্ছের কোনো মূল্য নেই ওর কাছে আভি। বোঝার চেষ্টা করো। ও শুধু তোমাকে ইউজ করছে। তোমার ইমোশন, ওর প্রতি তোমার ভালোবাসা নিয়ে খেলছে ও।

আভিঃ মানুষের ইমোশন ও ভালোবাসা নিয়ে খেলা আপনার স্বভাব, ভাইয়ের না। আরেকটা কথা, আমি বাচ্চা না যে আপনার মোটিভ কি বুঝবো না। তাই আমাকে ম্যানিউপুলেট করার পেছনে সময় নষ্ট না করে নিজেকে কিভাবে প্রটেক্ট করবেন সেটা নিয়ে ভাবুন। কারন আপনার সময় ফুরিয়ে আসছে,,,

কথা গুলো বলেই আভি উপরে চলে যায়। আভির কথায় রেগে যায় আদনান। সত্যিই আভিকে রওশনের বিরুদ্ধে করা কঠিন। অন্য কিছু ভাবতে হবে। রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলেন আদনান।

এইদিকে আভি নিজের রুমে এসে ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে। যেন নিজের সমস্ত রাগ দরজাটার উপর তুলল ও। কিছুক্ষণ পুরো রুম পায়চারি করে থেমে তায় আভি। কিছু একটা ভেবে নিজের লাগেজটা বের করে ওটাতে সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে।

ওর সব জিনিস গুছানো শেষ হতেই ফটোফ্রেমের পেছনে লুকিয়ে রাখা ফাইলটা বের করে লাগেজে রেখে লাগেজ লক করে নেয় আভি।

আভিঃ আদনান রায়জাদার সাথে এক ছাদের নিচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ওকে যতবার দেখবো আমার রক্ত গরম হয়ে যাবে। গড নোওজ, হয়তো আমার হাতে ওর মার্ডারই না হয়ে যায়। এতো সহজ মৃত্যু ও ডিজার্ভ করে না।

নিজের লাগেজ বেড থেকে নামিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আভি।

To be continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here