একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২১

0
6050

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২১
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
তানভীর একটানে লাবিবাকে কোলে বসিয়ে দেয় । দুহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।
আহহ..
চুপ। আমিইতো ভয় পাও কেন ?
ও স্যার আপনিতো ভালো না ।
কিহ ??
হুম।আপনি মারামারি করেন । আমাকে মারেন বকেন।
এখনকি আমি তোমাকে মারতেছি নাকি বকতেছি?।
এইতো রেগেও যান । রাগ করা ভালো না ।
আচ্ছা আমি ভালো না তুমি ভালো হও তাতেই চলবে ।
আমার বই? আমিতো বই ফেলে যায়নি ।
ওটা মিথ্যা বলে তোমাকে এনেছি নয়তো কি আর আসতে দিতো নাকি ?
?স্যার আপনি মিথ্যাও বলেন ? এটাতো আরো খারাপ কাজ । মিথ্যা বলা মহাপাপ। মিথ্যাবাদীকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না ।
আচ্ছা ওকে যাও মিথ্যাবাদীর সাথে থাকতে হবে না । নাম গাড়ি থেকে ।
স্যার ও স্যার রাগ করেন কেন?।
কিছু কিছু ব্যপারে মিথ্যা বলতে হয় । বুঝলে ?
হুম । স্যার লাইট অন করুননা …আমি আপনাকে ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছি না ।
আপাদত অন্যকিছু দেখো। বলেই তানভীর ফোন বের করে পিক বের করে লাবিবাকে দিলো । লাবিবা দেখে হাসতে হাসতে মরে যাই যায় অবস্থা । তা দেখে তানভীর ও হেসে ফেলে । নিজের ওড়না দেখে তো আরো হাসি ।
স্যার ..একটা গান আসতেছে । গাই ??
তোমার গান? আচ্ছা গাও।

? দেখিলাম প্রথম বার …
বান্দরের গায়ে
থাক গামুনা ।
কেন ? গাও ।
না থাক । আমার শরম করে ।
সিরিয়াসলি ?? তুমি শরম কি বুঝ ??ওরা যা করেছে এটাকে কি বলে জানো ? ইভটিজিং করা । খুব বাজে কাজ ।
ওও এটাই ইভটিজিং ? paragraph পড়েছিতো ।
হুম । নাও তোমার চকলেট ।
তানভীর চকলেট বের করে লাবিবার মুখের সামনে ধরে । লাবিবা চেচিয়ে উঠে ।
হায় হায় অনেকগুলা ব্যকটেরিয়া আছে হাতে । আগে জীবানু দিয়ে হাত ধুয়ে নেন । চলুন বাসায় চলুন ।
আমি স্যনিটাইজার ইউজ করি । বাসায় যাবো না জন্য ই তো এখানে ডাকলাম বুঝনা ?
লাবিবা চকলেট মুখে তুলে নেয় ।
স্যার বইতো নেই । এখন আম্মুনিকে কি বলবো ?
তোমার তো অনেক বুদ্ধি । বলে দিবে কিছু একটা ।
স্যার আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসুন না । সামনে জঙ্গল ভয় করে ।
তুমি না সাহসী ? ভুত ধরে বেড়াও ?
হুম । কিন্তু এখন তো রাত হয়ে গেছে । সাপ পোকা মাকড় বের হবে ।
ওকে চলো । নামো ।
লাবিবা নামতে গেলে তানভীর আটকে দেয় । আবার কাছে এনে বলে – শোন!! থ্রি পিচ পড়তে হবে না । তুমি যাতে কমফরটেবল সেটাই পড়বে । আর পারলে হিযআপ পড়া শিখে নিবে । বুঝলে ?
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে চকলেট বক্স নিয়ে নেমে যায় । তানভীর গাড়ি লক করে লাবিবার নরম হাত টা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে হাটতে থাকে । সত্যিই জঙ্গলটা রাত হওয়ার জন্য গভীর লাগছে । গেইটে থেমে বললো – দুষ্টু পুতুল ….আমি দুই দিনের জন্য ঢাকা যাচ্ছি । নুপুরকে বলে দিও । সাবধানে থেকো ।
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে যায় । তানভীর সেই রাস্তা ধরেই গাড়ির কাছে আসতে থাকে । জঙ্গল পেরুতেই কাধে লাঠি জাতীয় কিছুর আঘাত পায় । আঘাতটা মাথাতেই করা হয়েছিলো কিন্তু ফসকে গিয়ে লাগে কাধে । আহহ শব্দ করে পেছনে তাকাতেই মাথা সহ কপালে আরেকটা আঘাত পায় । পিছিয়ে মাটিতে বসে পড়ে তানভীর । মোরের সেই ছেলেগুলো সাথে হাসানের দলের অনেকজন । বুঝতে আর বাকি নেই যে ছেলে গুলো হাসানের দলের ছিলো । এরা অচমকা অন্ধকারে তানভীরকে বধ করতে এসেছে । তানভীর কোন রকম উঠে গাড়ির দিকে দৌড় দিয়ে ফোন বের করে আন্দাজে ইমাজেন্সি কল দেয় । ছেলে গুলো তানভীরকে ধরে ফেলতেই তানভীর ওদের সাথে লড়তে থাকে । মাথায় আগেই আঘাত পাওয়ার জন্য মাথা ঘুরতে থাকে । মাথা চেপে বসে পড়ে । আঘাত করতে গেলে ফিরোজের লোকেরা এসে ধরে ফেলে ।

লাবিবা চকলেট বক্স বুকের সাথে দু হাতে চেপে পা টিপে টিপে ভিতরে যেতে থাকে । তবুও ধরা পড়ে যায় । সোহানা বলে – বই কোথায় ? এটা তো চকলেট বক্স।
– উফফ আম্মুনি ..এটা বই । চকলেট বক্সের মতো দেখতে । এই জন্য ই তো বলি আগের আমলের মানুষ তোমরা কিচ্ছু চিনো না ।
এক দৌড়ে রুমে এসে দরজা লাগায় । খাটের উপর আয়েশ করে বসে ছবি গুলোর কথা মনে করে খিল খিল করে হাসছে আর চকলেট খাচ্ছে । শেষ হলে হাত মুখ ধুয়ে এসে পড়তে বসে ।

দূর থেকে আওয়াজ আসছে । লোকজন ও রাস্তা দিয়ে আওয়াজ তুলে জোরে জোরে হেটে যাচ্ছে । সাবিনা আর সখিনা গেইটে এসে দাড়ায় এতো রাতে কি হয়েছে বুঝার জানার জন্য । রাস্তায় পাশের বাড়ির শেফার মা আর রুপার মা কে দেখে ডাক দেয়
– কি হয়েছে গো ? এইভাবে ঐদিকে সবাই ছুটছে কেনো ?
– আমাগো এমপির পোলারে মারছে হাসান এমপির লোকেরা । এখন দুই দলে মারামারি করতাছে । ফিরোজের দল ই জিতবো দেইখো । চেয়্যারমেন ও আছে ঐখানে দেখলাম ।
– তানভীর কে মারছে । ভাবী চলেন তো।
সাবিনা সখিনা দুজনেই ভিতরে আসে । লাবিবাকে ডাক দিয়ে বলে – তোর স্যাররে নাকি মারছে । বিনার কাছে গিয়ে বস । আমরা আসতেছি ।
তানভীরকে মারছে শুনেই যেন লাবিবা কেদে ফেলবে । এক দৌড়ে বেড়িয়ে যায় । সাবিনা ডেকেও থামাতে পারে না । যে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ভয় পাচ্ছিলো সেই জঙ্গল দিয়েই একাই চলে আসে । পিছু পিছু সাবিনা আর সখিনাও আসে । ওরা দাড়িয়ে পরে ইসমাইল আর ফিরোজকে দেখে । মারামারি শেষ ভাব । হাসান দলের লোক বেশি আহত । রাতের অন্ধকারে আবছা টর্চের আলোয় ঘটনা টি ঘটে গেলো ।

লাবিবা এদিক ওদিক ছুটে তানভীরকে দেখতে পেলো না । দূরে তানভীরের গাড়ি থামানো দেখতে পায় । দৌড়ে সেখানেযায় । গাড়ির গেইট খুলে সিটের কিনারায় চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে আছে তানভীর । গাড়ির লাইট জালানো । কপালে মুখে রক্ত দেখে কেদে ফেলে লাবিবা । কেনো কাদছে তা সে জানে না । পেছনের গেইট খুলে গাড়িতে উঠে । ভিতর দিয়ে সামনের সিটে এসে বসে । স্পষ্ট আঘাত দেখে কেদে ফেলে । তানভীর কান্নার আওয়াজে চোখ মেলে । ব্যথায় তাকাতেও সমস্যা হচ্ছে । গালে কোমল স্পর্শ পায় । বুঝতে আর বাকি নেই এটা তার দুষ্টু পুতুল । লাবিবা দু হাতে মুখটা নিজের দিকে ঘুরায় । একদম সোহানার মতো ফেস ফেস করে কাদছে । লাবিবার কান্নার স্টাইল ও পাল্টে যায় দেখছি । তানভীর অশ্রুশিক্ত সেই কিউট মায়াবী ফেসটা দেখে চোখ বন্ধ করে । গাল থেকে হাত দুটো মুখের সামনে এনে চুমু একে দেয় দুটো হাতে ।
লাবিবার দিকে তাকিয়ে বলে
– কাদছো কেনো ? কিছুই হয় নি আমার । সামান্য ব্যথা করছে ।
– আমারো খুব ব্যথা করছে কলিজায় আপনার ব্যথা দেখে ।
– ও হে দেখোতো ঐখানে একটা বক্স আছে । নিয়ে এসো ।
লাবিবা দেখলো এইটা ফাস্ট এইড বক্স । বক্স খুলে স্যাভলন আর তুলো দিয়ে নিজেই উচু হয়ে ক্ষত স্থান পরিস্কার করতে থাকে । সমস্যা হয় দেখে সামনে উঠে বসে পরিস্কার করতে থাকে ।
তানভীর মৃদু হেসে বলে – পারবে তুমি ?
– হামম। অনেক বার করেছি ।
তানভীর চোখ দুটো বন্ধ করে দেয় । ফিরোজ ইসমাইল সাবিনা এসে দেখে লাবিবা ওষূধ লাগাচ্ছে । ফিরোজ ছেলের মাথা ঘাড়ে হাত বুলিয়ে দেয় । একটা মাত্র ছেলে তার । লাবিবার মাথায় ও হাত বুলায় । সবাই মারামারি দেখতে ব্যস্ত আর লাবিবা তার ছেলেকে দেখতে ব্যস্ত। একটু শান্তি বয়ে যায় বুকে । ইসমাইল বলে তানভীর কে বাসায় নিয়ে যেতে । তানভীর চোখ খুলে লাবিবার দিকে তাকায় । অনেকটা সময় দেখা হবে না তার এই মায়ার বাগিচাটাকে । সাবিনার হাত ধরে লাবিবা নেমে আসে । মায়ের সাথে চলে আসে । তানভীর সেই অন্ধকারে লাবিবার অবয়ব দেখতে থাকে যতোক্ষন দেখা যায় ।

লাবিবা একাই চলে আসছে খান বাড়িতে । আজ যে করেই হোক তাকে গোলাপ নিতেই হবে । সাবিনাকে বলেনি তানভীর নেই । ইসমাইল ও নিজের কাজে বিজি । নুপুর আখির বাসায় বেড়াতে গিয়েছে । রাস্তা থেকে লাবিবা একটা বাশের পাকা কিছুটা লম্বা কোটা নিয়ে এসেছে । বাড়ির ভিতরে ঢুকেই চোখে পড়ে আকবর মিয়াকে । লাবিবাকে দেখে এগিয়ে এসে বলে – ছোট সাব ঢাকা গেছে ।
– আমি জানি । শাশুমার কাছে আসছি ।
বলেই লাবিবা চলে আসে । আকবর বুঝতে পারে না শাশুমা টা কে ?
গাছের নিচে এসেই ব্যাগটা ঘাসের উপর ফেলে দিলো । দু হাত তুলে মোনজাত ধরে বলে – ও আমার আল্লাহ আজকে আমাকে ফুল পাইয়ে দিও । চুরি করতেছি মাফ সাফ করে দিও । কাধের ফেরেসতা দুইটাকে লিখতে না করে দিও । আমিন ।
কোটা দিয়ে অনেক চেষ্টা করছে । কিন্তু পারছেই না । জানালা দিয়ে তানিয়া দেখে ডাক দেয় -লাবিপু..।
তানিয়ার ডাকে কোটা দিয়ে নিজের কপালে নিজেই বারি খায় । হাতের তালু দিয়ে ঘসে তানিয়াকে ঠোটে আঙুল চেপে চুপ করতে বলে আবার কাজে নেমে পড়ে । তানিয়া লাবিবার পাশে এসে দাড়ায়। – লাবিপু ..তুমি চুরি করছো ? ভাইয়াকে বলবো ? তুমি চোর ।
– চুপ কর তো । ব্যাগ খুলে দেখ চকলেট আছে । ডেইরি মিল্ক?। খা বসে বসে ।
তানিয়া চকলেট নিয়ে খেতে থাকে আর লাবিবার লাফানো দেখতে থাকে। একসময় একটা শুকনা কাটা ওয়ালা গোলাপের ডাল লাবিবার গাউনের উপর পরে । লাবিবা ভয় পেয়ে দু তিনটে লাফ দিয়ে ই ডাল ছাড়ানোর চেষ্টা করে । টিস্যু নেটের গাউন হওয়ায় কাটাও নাছোড় বান্দা হয়ে লেগেছে। তানিয়াও হাত লাগায়। একসময় দুজনের ঘাম ছুটে যায় তাও ছাড়াতে পারে না । লাবিবা কেদে ফেলে । তানিয়া দৌড়ে বাড়ির ভিতরে গিয়ে সোহানাকে ডেকে আনে ।
সোহানে এসে হাসতে হাসতে কাটা ছাড়িয়ে দেয় । মাথায় গাট্টা মেরে বলে – কি যে কি কখন করিস না তুই ..। এই ফুল গুলো তোর না । তাই তোর কাছে আসবেনা বুঝলি ? মন খারাপ করে না মা । ডুডুলস খাবিতো ? চল ।
লাবিবা হাটতে হাটতে পেছনের সুইমিং পুলে এসে পা ডুবায় গাল ফুলিয়ে । তানভীরের কথা ভাবতে থাকে । সেদিন উদাম গায়ে এখানে সুইমিং করছিলো । কি বডিরে বাবা । ভয় করে দেখলেই । ডলফিন একটা ।সোহানা এসে লাবিবার পাশে বসে চামচ দিয়ে লাবিবাকে খাওয়াতে থাকে । খেতে খেতে লাবিবা বলে
– ও স্যার …মিস ইউ ভুরিভুরি ।
সোহানা শুনতে পেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ।
– শাশুমা তুমি পচা । অসুস্থ ডলফিন টাকে থুক্কু মানে মানুষের না মানে আবার থুক্কু তোমার ছেলেটাকে কেনো যেতে দিলে ?
– বাব্বাহ আমার থেকে তো তোর বেশি চিন্তা।
– মোটেও না তুমি আম্মুনি আর আমি ছাত্রী । রাত দিন তফাত । তবুও কষ্ট লাগে তো । তুমিতো দেখোনি রক্তে কেমন হয়ে ছিলো । আমি দেখেছি । তুমিতো ব্যন্ডেজ করা দেখেছো ।
– হুম । এখন বক বক না করে খেয়ে বাসায় যা । তোর স্যার আরো একদিন থাকবে । পরশু আসবে ।
লাবিবা খেয়ে বাসায় ফিরে আসে ।

To be continue ______

®লাবিবা________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here