#The_Love_Of_A_Devil_And_Angel,14,15,16
#An_Impossible_Love_Story
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_14
সকালে,,,,
মায়া শুভর রুমের দরজা খুলে ধীর পায়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।
পুরো রুম তছনছ হয়ে আছে। এমন লাগছে যেন রাতে রুমের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে । মায়া আসেপাশে শুভকে খুঁজছে।
বারান্দায় এগিয়ে যেতেই মায়ার বুকটা ধক করে উঠে। শুভ ফ্লোরে উবু হয়ে পরে আছে। শরীরের বিভিন্ন যায়গায় লালচে দাগ হয়ে আছে। চুল গুলো উস্ক খুস্ক এলোমেলো হয়ে আছে।
মায়া শুভর পাশে বসে। কাপাঁকাপা হাতে শুভর চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। চোখ দিয়ে যেন বন্যা বইছে মায়ার।
ছেলেটা রাতে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মায়ার চোখের কয়েক ফোঁটা পানি শুভর হাতে পরতেই ও নরে উঠে।
শুভ আস্তে আস্তে চোখ খোলার চেষ্টা করছে। মাথাটা যেন ভারী হয়ে আছে। মাথায় এক হাত চেপে উঠে বসে শুভ। সামনে তাকিয়ে মায়াকে দেখে চমকে যায় শুভ।
রাতের কথা মনে পরতেই মায়ার কাছ থেকে কিছুটা দূরে সরে বসে শুভ।
মায়া ওর দিকে এগিয়ে আসতেই শুভ ওকে বাধা দেয়,,,
শুভঃ দূরে থাকেন আমার কাছ থেকে,,, আমার কাছে আসলে আমি হয়তো আপনার ক্ষতি করে বসবো। চলে যান এখান থেকে আমার কাউকে প্রয়োজন নেই একা থাকতে দেন আমাকে জাস্ট গোও ( চিল্লিয়ে)
শুভর কথায় মায়া কান্না করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে যায়। মায়া চলে যেতেই শুভ পাশে থাকা ভাঙ্গা কাচের টুকরো নিজের হাতে জোরে চেপে ধরে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে শুভর হাত থেকে।
কিছুক্ষণ পর,,,
মায়া ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিলো এমন সময় রশনি তিনা আর নিশি চলে আসে।
রশনিঃ গুড মর্নিং আন্টি ( হাসি মুখে)
রশনিকে দেখে মায়া কিছুটা অবাক হয়ে যায়। মায়া গিয়ে রশনির সামনে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করল,,,
মায়াঃ আজকে মহারানী এতো সকাল সকাল এখানে ব্যাপার কি??
তিনাঃ আসলে আন্টি সিয়াকে কলেজের জন্য পিক করতে এসেছি।
রশনিঃ ইয়েস মায়া বেবী( মজা করে)
মায়াঃ ওহ ও হয়তো রেডি হচ্ছে। তোমরা আসো ডাইনিং টেবিলে খাবার সার্ভ করছি খেয়ে নিবে।
রশনির চোখ শুধু আসে পাশে শুভকে খুঁজছে। কিন্তু শুভ তো কোথাও নি।
রশনিঃ আন্টি বাকি সবাই কোথায়??
মায়াঃ সবাই এখনো রুম থেকে বের হয়নি। ধীরকে একটু আগে দেখেছিলাম কোথা থেকে আসতে। হয়তো বাগানে গিয়েছিলো। আর সাদ ফ্রেশ হয়ে আসছে। রোহিত হয়তো এখনো ঘুম আর সিয়া রেডি হচ্ছে। ( কাজ করতে করতে)
রশনিঃ আর শুভ উনি উঠে নি ( ইতস্তত বোধ করে)
শুভর নাম শুনে মায়া হচকিয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে মায়া আবার কাজ করতে করতে বলল,,,
মায়াঃ ও আজকে রুমে নাস্তা করবে। ওর নাকি ভালো লাগছে না।
মায়ার কথা শুনে রশনি চুপসে যায়।
মায়া রশনির মলিন চেহারা দেখে মনে মনে হাসছে।
মায়াঃ আমি জানি রশনি তোমার মনে শুভর জন্য ভালোবাসা আছে। আমি চাই এ ভালোবাসা যেন আমার শুভর সব কষ্ট দূর করে দিক। আমার শুভকে শুধু তুমি বাঁচাতে পারো। ( মনে মনে)
রশনি একটা কাজ করবে মামনি।
রশনিঃ অফকর্স আন্টি কি করতে হবে।
মায়াঃ রশনি তুমি একটু শুভকে নিচে ডেকে আনবে প্লীজ।
মায়ার কথায় রশনি একটা শুকনো ঢোক গিলল।
রশনিঃ আ আমি…
মায়াঃ হ্যাঁ মামনি একটু যাও না।
তিনা দুষ্টু হেসে রশনিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,,
তিনাঃ আরে রশনি যানা একটু ডেকে নিয়ে আয় মি. ক্রাশ জিজু কে? ( কানে ফিসফিসিয়ে)
রশনি তিনার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে নাক ফুলিয়ে চলে যায়।
মায়াঃ নিশি তিনা তোমরা বসো ওরা এক্ষুণি চলে আসবে।
নিশি আর তিনা চেয়ার টেনে বসে পরলো।
❤❤❤
রশনি শুভর রুমে উকি মারতেই দেখে একটা সার্ভেন্ট রুম পরিস্কার করে বের হচ্ছে।
সার্ভেন্টটি বের হতেই রশনি আলতো পায়ে রুমে প্রবেশ করলো। আশেপাশে কোথাও শুভ নেই। রশনি বারান্দায় উকি মেরে দেখে কিন্তু শুভ ওখানেও নেই।
রশনিঃ শুভতো রুমে নেই কোথায় গেল।
রশনি বারান্দা থেকে বের হতে নিলেই ওর চোখ যায় কিনারে কালো হয়ে যাওয়া গোলাপ গাছটার দিকে।
রশনি একটু এগিয়ে গিয়ে গাছটি ধরার আগেই কেউ ওর হাত ধরে ফেলে। রশনি তাকিয়ে দেখে শুভ ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
শুভ রশনিকে হেচকা টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আনে।
শুভঃ কারো রুমে প্রবেশ করতে হলে তার পারমিশন নিতে হয় রশনি এতোটুকুও জানো না। ( রেগে)
শুভ রশনির হাত অনেক টাইট করে ধরেছে যার কারনে রশনি ব্যথা পাচ্ছে। রশনির চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
রশনির চোখের পানি দেখে শুভ সাথে সাথে ওর হাত ঢিল করে দেয়।
রশনির হাত তুলে দেখে হাতে লাল দাগ বসে গেছে।
শুভ এটা দেখে অনেক ঘাবড়ে যায় আর রশনির হাতে ফু দিতে দিতে বলে,,,
শুভঃ আ’ম স্যরি রশনি আ আমি তোমাকে হার্ট করতে চাই নি। ( অপরাধী ভাবে)
শুভর কাজে রশনি অনেক অবাক হয়ে যায়। এইতো তখন রাগ দেখাচ্ছিলো আর এখন কেয়ার করছে।
রশনিঃ না না শুভ আমি ঠিক আছি কিচ্ছু হয়নি। আর আমি নক করেছিলাম আপনি রুমে ছিলেন না তাই চলে এসেছিলাম স্যরি।
রশনি চলে নিলেই শুভ ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
শুভঃ আ’ম স্যরি রশনি আমি জানি অনেক খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি নিজেও বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে আমার সাথে। দূর্বিপাকে পরে যাচ্ছি আমি। প্লিজ আমাকে ভূল বুঝো না। ( কাঁদোকাঁদো ভাবে)
রশনির কাধে দুই ফোঁটা গরম পানি পরতেই ও বুঝে যায় এটা শুভর চোখের পানি। রশনি পিছনে ফিরতে চাইলে শুভ ওকে আরো জোরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।
শুভঃ প্লিজ রশনি কিছুক্ষণ এভাবেই থাকো।
শুভর কথায় রশনি স্থির হয়ে শুভর বুকের সাথে মিশে রইলো। শুভ রশনির কাধে নিজের নাক ঘষে দিচ্ছে। রশনি কেঁপে উঠে শুভর হাত খামচে ধরে।
হঠাৎ রশনির হাতে কিছু ভেজা ভেজা অনুভব হতেই ও শুভর হাতের দিকে তাকায়।
শুভর হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে। রশনি আতকে উঠে শুভ থেকে সরে ওর হাত ধরে।
রশনিঃ এটা কি করে হলো শুভ। কতখানি কেটে গেছে আর রক্তও বের হচ্ছে। আপনি আমাকে আগে বলেন নি কেন ( অস্থির হয়ে)
রশনির অস্থিরতা দেখে শুভ মনে মনে হাসছে,,,
রশনি শুভর হাত টেনে বেডে বসিয়ে দেয় তারপর উঠে ফাস্ট এইড বক্স খুঁজতে থাকে।
ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে শুভর পাশে বসে পরলো রশনি। শুভর হাত নিজের কোলে রেখে স্বযত্নে হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে ও।
শুভর ব্যথায় যেমন রশনি বেশি কষ্ট পাচ্ছে।
To be continued….
#The_Love_Of_A_Devil_And_Angel
#An_Impossible_Love_Story
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_15
রশনি শুভর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে আর শুভ শুধু রশনির কান্না মাখা ফেসের দিকে তাকিয়ে আছে। এই চেহারার দিকে তাকালেই কেমন যেন একটা ঘোর লাগা কাজ করে শুভর মাঝে।
রশনি ব্যান্ডেজ করা শেষ করে শুভর দিকে তাকিয়ে দেখে শুভ এক ধ্যানে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
রশনিঃ ব্যথা কমেছে শুভ??
রশনির কথায় ঘোর কেটে যায় শুভর ।
শুভঃ কিছু বললে??
রশনিঃ বললাম এখনো ব্যথা করছে নাকি একটু কমেছে??
রশনির কথা শুনে শুভ দুষ্টুমি করে ওকে বলল,,,
শুভঃ কমেছে মানে ব্যথা তো আরো বেশী বেড়ে গেছে আহ্ জ্বলছে ( নেকা কান্না করতে করতে)
শুভর কথা শুনে রশনি ঘাবড়ে যায়। শুভর হাত টেনে হাতে ফু দিতে দিতে বলে,,,
রশনিঃ অনেক গভীর ভাবে কেটেছে তাই হয়তো অয়েলমেন্ট লাগায় জ্বলছে। ( ঘাবড়ে গিয়ে)
শুভঃ হুম কিন্তু একটা মেডিসিন আছে যেটা দিলে ব্যথা ফুঁস হয়ে যাবে। ?
রশনি জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকালো। শুভ রশনির দিকে ঝুঁকে ওর গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে সাথে সাথে সরে যায়। রশনি গালে হাত রেখে শক্ড হয়ে শুভর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
শুভ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,,
শুভঃ এই মেডিসিন টা বেস্ট এটা দিলে ব্যথা গায়েব হয়ে যাবে ?
শুভর কথায় রশনির ফেস লজ্জায় লাল হয়ে যায়। রশনি সাথে সাথে নিজের চোখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে চলে যায়।
রশনি চলে যেতেই শুভর হাসি মাখা মুখ মলিন হয়ে যায়। রশনি হুট করে ভিতরে এসে শুভর গালে কিস করে চলে যেতে যেতে বলে,,,
রশনিঃ আন্টি ব্রেকফাস্ট করতে নিচে যেতে বলেছে তারাতারি আসবে,,, ( বলেই দৌড়)
রশনির হুট করে এমন করাতে শুভ বোকা বনে গেল। ও ভাবে নি রশনি সত্যিই ওকে নিজ থেকে কিস করবে। শুভ দরজার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো।
শুভঃ Crazy girl,,,, কিন্তু যেমনই হোক আমারই তো।
❤❤❤
নিশি আর তিনা অনেকক্ষণ ধরে রশনির জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু ওর আসার নাম গন্ধ ও নেই।
তিনা ফোন নিয়ে ব্যস্ত আর কিন্তু নিশি বারবার আসেপাশে চোখ বুলাচ্ছে হয়তো রোহিতকে খুঁজছে।
নিশিঃ এমনে তো সারাদিন আমার আশেপাশে মাছির মতো ভিনভিন করে বাট আজকে রুম থেকেই বের হচ্ছে না।
কি ঘুম মানুষের অসহ্য। কখন থেকে বসে অপেক্ষা করছি কিন্তু নবাবের আসার কোন হদিস নেই। এখানে আমি অপেক্ষা করছি আর উনি হয়তো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে বেটা কুম্বকরন এর বংশধর। ?
জাস্ট ওয়েইট তোমার আরামের ঘুম আমি হারাম করছি ?
নিশি পাশে তাকিয়ে দেখে তিনা এক ধ্যানে ফোন চালাচ্ছে।
নিশিঃ তিনা আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।
তিনাঃ ওকে ( ফোনের দিকে তাকিয়ে)
নিশি কথা না বারিয়ে উঠে যায়। নিশি প্রত্যেক টা রুমে উকি মেরে দেখছে রোহিত আছে কিনা কারন ও জানে না রোহিতের রুম কোনটা। নিশি খুজতে খুজতে একদম কর্নারের রুমে চলে যায়।
রুমে ঢুকতেই নিশির মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। পুরো রুম ছড়ানো ছিটানো। বেড শিট নিচে পরে আছে। বিছানাটা এমন লাগছে যেন কুস্তি খেলেছে।
নিশিঃ আ’ম হান্ড্রেট পার্সেন্ট সিউর এটা রোহিতের রুম। কারন রুমের এমন অবস্থা ও ছাড়া কেউ করতে পারে না ডিসগাস্টিং।
নিশি একটু সামনে এগোতেই ওর পায়ের কাছে একটা ছোট বক্স বারি খায়। নিশি ঝুঁকে বক্সটা হাতে নিলো। বক্সটার উপরে লাভ শেপ করা। অনেক টা কৌতূহল নিয়ে নিশি বক্সটা খুলতে নিলো সাথে সাথে কেউ ছো মেরে বক্স টা ওর হাত থেকে কেরে নেয়।
নিশি পাশে তাকিয়ে দেখে রোহিত চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
রোহিতঃ আপনি আমার রুমে কি করছেন মিস নিশানি। আর মোস্ট অফ অল আমার জিনিস বিনা অনুমতিতে ধরা আপনার উচিত হয় নি ( কড়া গলায়)
রোহিত আজ প্রথম নিশিকে ওর নামে ডাকলো। তার উপরে এমন রুড বিহেভ। নিশির অনেক খারাপ লাগছে রোহিতের এমন ব্যবহার। চোখের কোনে পানি চলে এসেছে ওর।
নিশিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রোহিত আবার বলতে শুরু করলো,,,
রোহিতঃ আপনি জানেন এটা কি ( বক্সটা সামনে তুলে) এটা আমার জানের জন্য কেনা প্রথম গিফট আর আপনি এটা খোলার চেষ্টা করেছেন। আপনি জানেন এটা আমার জন্য কতো ইম্পর্টেন্ট।
রোহিত নিশির চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,,,
আজকে আমি আমার জানুকে এটা দিয়ে প্রপোজ করবো ??উফফ কান্ট ওয়েট।
রোহিত নিজের ফোন বের স্কৃনে কিস করে ফোনটা বুকে জড়িয়ে নেয়।
নিশি রোহিতের কথা শুনে এমনেই রেগে বোমা হয়েছিলো। ফোনের স্ক্রিনে কিস করাতে ও আরো বেশি রেগে যায়। রাগে ওর পুরো শরীর কাঁপছে।
নিশি ঝট করে রোহিতের শার্টের কলার টেনে ধরে। রোহিততো নিশির কাজে ভয় পেয়ে যায়।
নিশিঃ তোমার সাহস তো কম না। আমার সামনে অন্য মেয়েকে জানু জান বলছো তার উপরে আবার প্রপোজ করারো কথা বলছো।
আবার আমাকে ইনসাল্ট ও করছো। তুমি জানো আমি চাইলে এক্ষুণি তোমাকে যমের ঘর থেকে ঘুরিয়ে আনতে পারি? ( কলার ধরে চেঁচিয়ে)
নিশি ছো মেরে বক্সটা নিয়ে নিলো তারপর বলল,
এটাতে শুধু আমার অধিকার ডু ইউ গেট দ্যাট।
রোহিতের কলার ছেড়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিশি হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
রোহিত নিশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলল,,
রোহিতঃ কি সাঙ্ঘাতিক মেয়ের প্রেমে পরলাম রে বাবা। কিন্তু যাই হোক আমার কাজ হয়ে গেছে।
ভালোবাসা প্রকাশ করানোর সহজ ফর্মুলা হচ্ছে অবহেলা তাই এখন থেকে আমি তোমার উপর এই ফর্মুলাই এপ্লাই করবো নিশিরানি। ?
❤❤❤
তিনা বসে ফোনে স্ক্রল করছিলো। হঠাৎ ও অনুভব করলো কেউ ওর পায়ে স্লাইড করছে। তিনা টেবিলের নিচে ঝুঁকে কারো পা দেখতে পেলো। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই ও হাজার ভোল্টের শক্ড খায়।
সাদ ওর বরাবর চেয়ারে বসে আছে আর পা দিয়ে ওর পা স্লাইড করছে।
সাদকে দেখে সাথে সাথে তিনা দাড়িয়ে যায়। দৌড় দেওয়ার আগেই রশনির সাথে ধাক্কা লেগে যায়।
রশনিঃ ওফফো তিনা এভাবে কেউ দৌড় দেয় স্টুপিড ?( মাথা ডলতে ডলতে)
তিনা আড়চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে দেখে সাদ মুচকি মুচকি হাসছে।
তিনা নাক ফুলিয়ে কয়েকটা চেয়ার বাদ দিয়ে একটু দুরে সরে বসে পরলো।
নিশির পিছনে রোহিতও চলে আসে। নিশি বক্সটা সবার আড়ালে নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়। রোহিত গিয়ে সাদের পাশে বসে পরে আর নিশি রশনির পাশে। ধীরও চলে আসে আর রোহিতের পাশের চেয়ারে বসে পরলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিয়াও চলে আসে।
সিয়াঃ গুড মর্নিং অল। স্যরি রশনি দি লেট হয়ে গেছে। ?
রশনিঃ সেটা তো আমাদের দুজনের পুরোনো অভ্যাস?
নিশি তিনাঃ হুহ ??
ধীর শান্ত চোখে সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ধীরের চোখে চোখ পড়তেই সিয়া নিজের চোখ নামিয়ে নিলো। কেন যেন ধীরের চোখে তাকাতে অনেক ভয় হয় সিয়ার।
মায়া এসে সবাইকে খাবার সার্ভ করছে। ড্রইংরুমে টিভি চলছে। হঠাৎ টিভির ব্রেকিং নিউজ শুনে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায় ওর। সবাই অবাক চোখে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে।
টিভিতে একজনের এক্সিডেন্টের কথা বলছে। তানভীর আহমেদ নাম শুনেই সবাই দাঁড়িয়ে যায়। লাশ রক্তে লাল হয়ে আছে। গাড়িতো পুরোই ঝলসে গেছে।
সাদঃ এটা কোন সাধারণ এক্সিডেন্ট বলে মনে হচ্ছে না। something is wrong.
লাশের হাতের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠে মায়া আর সাদ। হাতে নীলচে হয়ে D আক্রিতি হয়ে আছে।
সাদঃ D for Devil. (মায়ার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে)
ধীর ঠোঁটে সূক্ষ্ম হাসি টেনে মনে মনে বলে,,,
ধীরঃ D for Dheer ?(মনে মনে সিয়ার দিকে তাকিয়ে)
মায়ার শরীর কাঁপছে। মায়া ভাবছে ওতো শুভকে রুমে লক করে রেখেছিলো তাহলে শুভ কিভাবে কাউকে ক্ষতি করতে পারে।
শুভ হাসি মুখে সিড়ি দিয়ে নামছে। মায়া শুভর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না শুভ কাউকে মেরে ফেলতে পারে।
মায়ার চাহনিতে শুভ কিছুটা ইতস্তত বোধ করছে। শুভ নিচে নেমে দেখে সবাই টিভির দিকে তাকিয়ে আছে।
শুভ টিভির দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। এতক্ষণে ও মায়ার চাহনির কারন বুঝতে পারলো।
শুভঃ এটা আ আমি করিনি তাহলে,, ( ভয় পেয়ে মনে মনে)
শুভ মায়ার দিকে অসহায় ভাবে তাকালো। ও বুঝাতে চাচ্ছে যে ও এটা করেনি।
To be continued….
#The_Love_Of_A_Devil_And_Angel
#An_Impossible_Love_Story
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
#Part_16
রশনিঃ এটাতো তানভীর সিয়ার ক্লাসমেট রাইট সিয়া?? ( সিয়াকে উদ্দেশ্য করে)
সিয়াঃ আব হ্যাঁ কিন্তু কালকে তো সব ঠিক ছিল কিন্তু হঠাৎ এই এক্সিডেন্ট বুঝতে পারছি না কিছু।( ঘাবরে গিয়ে)
তিনাঃ আমার তো এটা এক্সিডেন্ট বলে মনে হচ্ছে না আই থিঙ্ক ইট্স এ মার্ডার।
তিনার কথা শুনে ধীর বাকা হেসে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। নিশি নিউজটা দেখেই ধীরের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। নিশির চোখে চোখ পড়তেই ধীর নিজের চোখ নামিয়ে নিলো ,,,
নিশিঃ এটা তুমি ঠিক করো নি ধীর। তোমার সাথে আমি পরে কথা বলবো। ( মাইন্ড কানেকশন)
ধীরঃ ওকে প্রিন্সেস ( মাইন্ড কানেকশন) ।
শুভ কিছু না বলে উপরে চলে যায়। রশনি শুভর এভাবে চলে যাওয়ায় কিছুটা অবাক হয়।
রশনিঃ আন্টি আমাদের দেরী হয়ে যাচ্ছে আসি।
রশনি সিয়া নিশি আর তিনা কলেজের জন্য বেড়িয়ে যায়।
কিছুক্ষন পর,,,
নিজের রুমে পায়চারি করছে শুভ। অনেক অস্থির হয়ে পরেছে ও। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে।
শুভঃ এটা কিভাবে সম্ভব আ আমি এটা করি নি তাহলে,,,, মা ভাবছে আমি তানভীরকে খুন করেছি। ( অস্থির হয়ে)
মায়ার দৃষ্টি চোখে ভাসতেই রাগে চোখ লাল হয়ে যায় শুভর। পাশের টেবিলে জোরে লাথি দেয় সাথে সাথে টেবিলটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
শুভঃ ম মা আমার দিকে ঘৃনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। উনি ভাবছেন আমি খুনি। কিভাবে ভাবতে পারেন উনি এটা ( চিৎকার করে)
শুভ ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় জোরে ঘুষি মারতেই হাত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে
আ আমি কখনো কাওকে ক্ষতি করবো এটা উনি ভাবলেন কি করে,,,
হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে শুভ পিছনে ফিরে। মায়াকে দেখে শুভ ওর দিকে এগিয়ে যায়।
শুভঃ মিসেস রেজওয়ান ট্রাস্ট মি আ আমি এটা,,,
আর কিছু বলার আগেই মায়া ঠাস করে শুভর গালে চর বসিয়ে দেয়।
শুভ গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে মায়ার দিকে তাকালো,,,
মায়াঃ ছি শুভ ছি আমি ভাবতেও পারিনি তুমি কারো খুন করতে পারো। আরে কি দোষ ছিল ছেলেটার কেন মারলে ওকে। ওর মায়ের কতটা কষ্ট হচ্ছে ওর পরিবার কতটা কষ্ট পাচ্ছে do you have any idea.( শুভর কাধ ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে)
এজন্যই তোমাকে এতো বছর দূরে সরিয়ে রেখেছি যাতে তোমার ভিতরের দানবটা কারো ক্ষতি করতে না পারে।
মায়ার মুখে দানব শব্দটা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় শুভ।
মায়াঃ হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি দানব কারন কোন মানুষ কখনো এ কাজ করতে পারে না। সিয়াকে তোমার থেকে প্রটেক্ট করার জন্যই আমি তোমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছি।
তুমি অশুভ শক্তি শুভ। যার জীবনে তোমার ছায়া পরবে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। You are the curse of our life.
মায়া কথাটা বলে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
কিন্তু শুভ ঠাই একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ও বিশ্বাস করতে পারছে না যে মায়া ওকে এই কথা গুলো বলে গেলো।
অশুভ শক্তি, দানব, curse শব্দ গুলো শুভর কানে বারবার বারি খাচ্ছে। না চাইতেও আপনাআপনি চোখ থেকে পানি ঝরছে ওর।
পা টা ঝিম ধরে যাচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে শুভর। না পেরে ওখানেই বসে পরলো ও।
শুভঃ আমি ভাবতেও পারিনি আমার মা আমাকে অভিশাপ মনে করে। কালো ছায়া মনে করে আমার কারনে সবার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি সবার ক্ষতি করবো তাই আমাকে এতো বছর দূরে সরিয়ে রেখেছে। সিয়াকে প্রটেক্ট করতে আমাকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আ আমি কিভাবে নিজের বোনের ক্ষতি করতে পারি উনি এটা ভাবলেন কি করে। ?
আ আমি মানছি আমি সবার থেকে ভিন্ন। আমার মাঝে কিছু অশুভ শক্তি রয়েছে। কিন্তু এতে আমার দোষ কোথায়। আমি কেন শাস্তি পাচ্ছি হোয়াইইই,,,, ( চিৎকার করে)
কে আমি কি আমার পরিচয় কেন হচ্ছে আমার সাথে এমন কেনন ??? ??
এইদিকে,,,,
মায়া নিজের রুমে এসে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে যায়। হঠাৎ একটা অবয়ব মায়ার সামনে আসে।
অবয়বঃ বাহ মায়া আমি যেভাবে বলেছি তুমি ঠিক সেভাবেই করেছো ব্রিলিয়েন্ট। এখন থেকে শুভর মনে তোমাদের জন্য ঘৃণা তৈরি হবে। ও নিজের অস্তিত্ব জানতে চাইবে। আর নিজের অস্তিত্ব জানার পর তোমাদের থেকে দূরে সরে যাবে। একা হয়ে যাবে ও কেউ থাকবে না ওর পাশে। আর তখনই আমি সুযোগের সদ্ব্যবহার করবো। শুভকে নিজের দিকে করে তোমাদের বিরুদ্ধে করবো। ওর মাইন্ড নিজের কন্ট্রোলে করে ফেলবো। ওকে নিজের বসে এনে ফেলবো তখন আর আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না। না এঞ্জেল কিং আর না তোমাদের এঞ্জেল।
শুভর হাতেই আমি তোমাদের এঞ্জেলের মৃত্যু ঘটাবো দেখে নিয়ো। ( অট্টহাসিতে ভেঙে পরলো অবয়বটি)
মায়া এখনো রোবটের মতো স্ট্রীট দাঁড়িয়ে আছে। অবয়বটি মায়া মাথায় হাত বুলিয়ে গায়েব হয়ে যায়। মায়া সাথে সাথে বিছানায় পরে যায়।
একটু আগের ঘটনা,,,,
( মায়া শুভর সাথে কথা বলার জন্য উপরে আসছিলো হঠাৎ একটা অবয়ব ওর সামনে চলে আসে। মায়া ভয় পেয়ে চিৎকার দেওয়ার আগেই অবয়বটি মায়ার মাথায় হাত রেখে ওকে নিজের বসে করে ফেলে। আর শুভকে এসব বলতে বাধ্য করে। )
শুভ নিজের চোখের পানি মুছে রুম থেকে বের হয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে ফুল স্পীডে হাইওয়েতে যাচ্ছে শুভ। আশেপাশে কোন কিছুর হুশ নেই ওর। ওর কানে শুধু মায়ার বলা কথা গুলো বাজছে। সন্তান আর যাই পারুক না কেন নিজের মায়ের এর চোখে নিজের জন্য ঘৃণা সহ্য করতে পারে না।
শুভ গাড়ি চালাচ্ছে হঠাৎ একটা লোক ওর গাড়ির সামনে চলে আসে শুভ সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে। লোকটি হালকা বারি খেয়ে পরে গেছে।
ওহ শিটট ( শুভ)
শুভ তারাতারি গাড়ি থেকে নেমে লোকটির দিকে ছুটে যায়।
লোকটি উঠার চেষ্টা করছে। শুভ লোকটিকে তোলার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। লোকটি শুভর হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়।
লোকটির হাত ধরতেই কেমন জানি একটা পরিচিত অনুভব হলো ওর কাছে। লোকটি শুভর দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।
কালো কোট প্যান্ট পড়া ওর বাবার বয়সি লোকটি।
শুভর কেমন জানি একটা টান অনুভব হচ্ছে লোকটার প্রতি। নিজেকে সামলে শুভ বলতে শুরু করল,,,
শুভঃ আ’ম সো স্যরি আঙ্কেল আমি খেয়াল করি নি। এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে আপনি ঠিক আছেন নাকি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
লোকটিঃ নো নো আ’ম ফাইন ইয়াং ম্যাম। আসলে ভূল আমারই ছিলো দেখে রাস্তা পার হাওয়া উচিত ছিলো। আসলে আমার গাড়ি ওই দিকে পার্ক্ড তাই আরকি খেয়াল করি নি।
লোকটি নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,,,
আমি আবরার সিনহা আজই বাংলাদেশে এসেছি নিজের বন্ধুর সাথে দেখা করতে।
শুভ আবারের হাতে হাত মিলিয়ে বলল,,,
শুভঃ আমি শুভ রেজওয়ান মাহিব রেজওয়ান এর ছেলে।
শুভর মুখে মাহিব রেজওয়ান এর ছেলে শুনে আবরারের মুখ শক্ত হয়ে যায়। নিজেকে কন্ট্রোল করে আবরার আবার বলতে শুরু করে,,,,
আবরারঃ আজকে তাহলে আসি অনেক শীঘ্রই দেখা হবে আশা করি।
শুভঃ জি আল্লাহ হাফেজ,,,
শুভ নিজের গাড়িতে উঠে বেরিয়ে যায়।
আবরারঃ আমি এসে পরেছি প্রিন্স। এখন তুমি তোমার মিথ্যে পরিচয় থেকে মুক্তি পাবে। তুমি জানতে পারবে যে, তুমি শুভ মাহিব রেজওয়ান না You are the king of the Devil Kingdom শুভ আবরার। ( শয়তানী হাসি দিয়ে শুভর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে )
In College Canteen,,,
শুভর মলিন মুখটা বারবার রশনির চোখে ভাসছে,,, কোন ক্লাসে মনোযোগী হতে পারছে না ও। নিশিরও একই অবস্থা বারবার তানভীরের মৃত লাশ টা ওর চোখে ভাসছে। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে ওর।
রশনি আনমনে কফির মগটা হাতে ঘুরাচ্ছে হঠাৎ ফোনের আওয়াজে ঘোর কাটে ওর। ফোনটা রিসিভ করে কানে দেয়,,,
হ্যালো বাবাই
।
।
হ্যাঁ ক্লাস শেষ আর নিশি আমার সাথেই আছে
।
।
আচ্ছা আসছি। কল কেটে দিলো রশনি।
নিশিঃ কি বলল আঙ্কেল?? ( কফির কাপে চুমুক দিয়ে)
রশনিঃ বাবাই আমাদের আজকে একটু তারাতারি বাসায় যেতে বলল দরকার আছে।
তিনাঃ ওকে তাহলে চল এমনেই আজকে আর ক্লাস হবে না।
সবাই ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যায় বাড়ির উদ্দেশ্যে।
To be continued…..