একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৩
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
হলে বসে সবার রিয়ার্সেল দেখতে দেখতে বোর হয়ে যাচ্ছে লাবিবা । এখানে আর বসেথাকা চলবে না । নয়তো আমাকে রিয়ার্সেল করতে বলবে । আমিতো এখানে করবোনা । অনুষ্টানের আগে আমার নাচ আমি কাউকে দেখাবোনা তাহলে আমার নাচ পুরাতন হয়ে যাবে । আমার থেকে বেশি ভালো নাচার চেষ্টাকরবে । তাতো হতে দেওয়া যায় না কিছুতেই । লাবিবা ইজ দ্যা টপ ডান্সার☺। নুপুরটাও আসেনি । ওর নাকি বোরিং লাগে রিয়ার্সেল দেখতে । আর ভালো করেই জানে আমি রিয়ার্সেল করবো না ।
পা টিপে টিপে গ্যালারি থেকে নেমে পড়লাম । দরজায় কেউ নেই দেখেই দু হাতে গাউন উচিয়ে দৌড় । এক দৌড়ে রাস্তায় এসে থামে । মামার থেকে দশ টাকার ঝালমুড়ি কিনে হাটতে থাকে খেতে খেতে । কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানে না । উল্টা রাস্তায় হাটছে যে এটাও খেয়াল নেই । স্কুল থেকে আধা কি.মি. দূরে তানভীর গাড়ি থেকে লাবিবাকে দেখতে পায় ।
এখানে কেন দুষ্টু পুতুল ? এদিকে কোথায় যাচ্ছে ? আর এভাবে আনমনে হাটলে তো এক্সিডেন্ট করতে সময় লাগবেনা এক মিনিট ও ।
গাড়ি থেকে নেমে পিছু পিছু হাটতে থাকে পিছনে সাথে যে কেউ আছে সেদিকে তাদের খেয়াল নেই । তানভীর ও নিশব্দে পাশে হেটে যাচ্ছে । হালকা বাতাসে ইউনিফর্মের কামিজ উডু উডু করছে । আজ দুষ্টু পুতুল দুই বেনী করেছে। বুকের উপর বেনী দুটিও দুলছে । ব্যাগটা পেছনে হাটার তালে তালে দুলছে । তানভীরের বেশ ভালোই লাগছে । ঝালমুড়ি শেষ হোওয়ার পর ঠোঙা ফেলে ব্যাগ সামনে নিয়ে আসে । চেইন খুলে চাটনি বের করে মুখে দিয়ে চাটতে থাকে ।
কিছুক্ষন অতিবাহিত হোওয়ার পরও যখন দেখে দুষ্টু পুতুলের কোন খবর নেই তখন পেছন থেকে একটা বেনী টেনে ধরে ।
এরকম আনমনা হয়ে কেউ হাটে ? আমাকে অনুভব ই করলেনা তুমি । ছেলে ধরা এসে নিয়ে গেলেও তো বলতে পারবে না ।
আমি জানতাম আপনি আমার সাথে আছেন। আর ছেলে ধরা আপনাকে ধরে নিবে । আপনি ছেলে । আমি মেয়ে । আমাকে ধরবেনা ।
আমি পাশে আছি জেনেও তুমি তাকালেনা কেনো একবার ? কিছুই জানোনা ভাব নিয়ে হাটছো।
যদি ঝালমুড়ি চান ___
কিহহ???
হুম।
ওকে চলো ।
কোথায় ?
হাত ধরে টেনে উল্টোদিকে যেদিক দিয়ে এসেছিলো সেদিকে যেতে থাকে। হাত থেকে ভালুপাসার প্রান আচার পড়ে গেলে আচার আচার বলে চেচাতে থাকে । হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে । দু তিন বার বসেও পড়েছে রাস্তায় । তানভীর গাড়িতে লাবিবাকে বসিয়ে নিজেও উঠে বসে । গাড়ি স্টার্ট দেয়। পুরো রাস্তা লাবিবা চুপ চাপ তানভীরের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
ও স্যার স্যার ….ও স্যার ।
বলো ।
আপনি কি আমায় নাই দেশে রেখে আসবেন ঝাল মুড়ি দেইনি বলে ?
হূম । এবার বলো কোন দেশে রেখে আসবো তোমায় ?
নায়ায়া….আমি যাবো না । আমি নামবো । আমাকে নামান । ও আব্বু..ও আম্মুনি..আমাক বাচাও । বাচাও বাচাও বাচাও???
কান ফেটে যাচ্ছে চেচানোতে । গাড়ি সাইড করে স্টপ করতেই লাবিবা গেটে হাত দেয় ।
চুপ করে বসো বলছি ??
ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যায় । মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকে । তাহলে কি এখানেই ফেলে রেখে যাবে ?আমিতো কিছুই চিনি না । আমার কি হপ্পে?
উফফ.. এতো চেচাও কেনো তুমি ? কানের পোকা সব মরে গেলো আমার ।
ছি ছি কানে পোকা ধরেছে । বিষ দেন না কেন কিপ্টা মানুষ ? ফুরাটন বিষ দিবেন । 220 টাকা দাম । আচ্ছা আমিই কিনে এনে দিবোনি আব্বুকে বলে ।
চুপ থাক । আজাইরা কথা মুখ থেকে শুধু বের হয় তাইনা ?
লাবিবা চুপ। তানভীরের দিকে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে চোখ পিট পিট করে । তানভীর এক টানে লাবিবাকে তুলে নিজের কোলে বসিয়ে দেয় । ভেজা গালের পানি হাত দিয়ে মুছে দেয় । চোখ দুটো টিস্যু দিয়ে মুছে দেয় । ফুলানো গাল দেখে মিটমিটি হাসে ।
টমেটো দেখি পেকে রসে টইটুম্বুর । কামড়ে খেতে ইচ্ছে করছে । বেচবে নাকি ?
গালে আঙুল দিয়ে ছুয়ে দিতেই নরমাল হয়ে যায়।
আপনি ভালো না । আমাকে বকেন ।
আমি কি শুধু বকি ? আদর করি না ? ভালুপাসি না ?
নাহ।
নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রক্তিম গালে আবেশে ঠোট ছোয়ায়। সে ভাবেই কিছুক্ষন ছুইয়ে রাখে । লাবিবা হালকা কেপে উঠে । তানভীরের হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে । হাত দিয়ে ধরে চিমটি দিতে থাকে ঘড়িতে । গাল থেকে মুখ সরিয়ে কানে নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলে
– যে বকা দেয় সেই ভালুপাসে। যে কষ্ট দেয় সেই আদর করে । বুঝলে ?
আমি নামবো ।
লাবিবা কোল থেকে সরার চেষ্টা করতেই আটকে দেয়
-উঠবেনা । বসে থাকো ।
হাত দুটো নিয়ে নিজের গলায় জড়িয়ে নেয় ।
গাড়ি স্টাট দেয় ।
স্যার ..আমি ওখানে বসি। আমার কেমন যেনো লাগছে ।
হেসে দেয় তানভীর ।
– আচ্ছা যাও বসো ।
গাড়ি থামিয়ে লাবিবাকে নিয়ে হাটা দেয় । লাবিবা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে থাকে ।
– স্যার… আমরা তো সদরে চলে এলাম । এখানে কেনো এসেছি ? কি করবো এখানে ?
তানভীর উত্তর না দিয়ে লাবিবার হাত ধরে হাটা দেয় । নদীর পাড়ে এসে বসায় একটা চেয়ার টেনে বসায় ।পাশেই ফুচকা, চটপটি, ঝালমুরি মামা দোকান বসিয়েছে ।
মামা ঝালমুরি বানান দুশ টাকার ।
লাবিবার চোখ উপরে ।উঠে এসে বলে – এতো টাকার ঝালমুড়ি কে খাবে ?
– তুমি আর আমি খাবো ।
– খেতে পারবো তো ?
– হুম । আসো বসো ।
দুজনেই বসে ।
– স্যার ঝালমুড়ি তো আমরা স্কুলেই খেতে পারতাম । এখানে কেনো এলাম ?
– এখানের ঝালমুড়ি একটু আলাদা । অনেক টেস্টি । রেসিপিটা ও ভালো । আমি এখান থেকে খাই । তোমাকেও টেস্ট করাবো আজ ।
– স্পেশালিটি কি ?
– এখানে বুট ডাল ভর্তা করে দেয় । চানাচুর বাদাম বেশি দেয় । মশলায় পাঙ্গাস মাছের তেল আর ব্রয়লার মুরগীর মাংস এড করে । অনেক টেস্টি হয় ।
– ??
বড় প্লেটের উপর পেপার দিয়ে তার উপর ঝালমুড়ি দিয়েছে। টেবিলে এনে রাখতেই লাবিবা স্মেল নেয় । দারুন একটা স্মেল । তানভীর মুচকি হেসে খেতে বলে । লাবিবার হাতে স্যানিচাইজ করে দেয় । লাবিবা প্রথমে মুখে দিয়েই ইয়াম্মি? বলে উঠে । বেশি টুকূ খেয়ে ফেলে । তাভীরের দিকে তাকাতেই দেখে তানভীর দাত গুলো বের করে আছে । বোতলের মুখ খুলে পানি খেয়ে বলে – স্যার কি হয়েছে ? আমি কি আপনার টা সহ খেয়ে ফেলেছি ?
তানভীর ফোন বের করে ফ্রন্ট ক্যামেরা অন করে লাবিবার সামনে ধরে । লাবিবা নিজের অবস্থা দেখেই চিল্লিয়ে উঠে ।
আআআআআআ এমন কি করে হলো ? এখন আমাকে কেমন দেখতে লাগছে । আমি বাড়ি যাবো কি করে? আম্মুনি আমাকে বাচিয়ে রাখবেনা এই অবস্বা দেখে । জোর করেই শহীদ খাওয়াবে । তিন দিন আগে আমাকে নিউ ইউনিফ্রম বানিয়ে দিয়েছে । এখনি নষ্ট করে ফেললাম । এখন আমার ইউনিফ্রেম কি হপ্পে???।
কিছুই হপ্পে না চলো । গাড়িতে উঠে বসে । শপিংমলের সামনে এসে থামে । লাবিবাকে নিয়ে একটা পার্লারে ডুকিয়ে দেয় । লাবিবা হাত মুখ ধয়ে এসে দেখে তানভীর একটা প্যাকেট হাতে দাড়িয়ে আছে । প্যাকেট টা লাবিবাকে দিয়ে বলে চেঞ্জ করে এসো । লাবিবা চেঞ্জ করে আসে । সুন্দর একটা সবুজ ফ্রক । ভীষন মানিয়েছে লাবিবাকে । পার্লারের একটা মেয়েকে ডেকে বলে
– এক্সকিউজ মি । ওর চুলটা বেধে দিন ।
মেয়েটা লাবিবাকে বসিয়ে দেয় । বেনী দুটো খুলে দেয় । সুন্দর করে আচড়ে বড় করে একটা খোপা করে দেয় ।তানভীরের আনা নকল দুটো সবুজ গোলাপ খোপায় সেট করে দেয় । সুন্দর লাগছে দেখে লাবিবা আয়নার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে ।
মেয়েটি তানভীরের দিক ঘুরে বলে – স্যার ম্যামকে কি একটু সাজিয়ে দিবো ।
– না থাক । লাগবেনা । জাস্ট একটু লিপিস্টিক লাগিয়ে দিন । নুড টা দিবেন ।
লাবিবাকে লিপিস্টিক লাগিয়ে আরেকবার খোপাটা ঠিক ঠাক করে দেয় । এতেই যেন অনেক সেজেছে মনে হচ্ছে । গোলাপের ন্যায় চেহারা ফুটে উঠেছে ।
পার্লারের উপরের ফ্লোরেই একটা লেডিস টেইলার্স । সেখানে লাবিবাকে নিয়ে যায় । ট্রেইলার তানভীরকে দেখেই এগিয়ে আসে ।
– ওয়েলকাম ওয়েলকাম মি. তানভীর খান । কেমন আছেন ছোট ভাই ? আমার ওয়াল্ডে হটাৎ আপনার পায়ের ধুলা পেলাম ।
– ডোন্ট কিডিং আপু । এলাম ..প্রয়োজন পড়ে গেলো আর তোমাকেও মনে পড়ে গেলো ।
– মিথ্যা বলবিনা একদম । ওমা..??এ কে গো তোমার সাথে ?
তানভীরের পেছনে লাবিবাকে দেখে এগিয়ে যায় । লাবিবাকে নিয়ে সামনে এসে বলে মাশাআল্লাহ কি সুন্দর মেয়ে । তানভীর ..কি হয় তোমার ?
তানভীর মিটি মিটি হাসে। – গেইস করো ।
দুটানায় পরে যায় । লাবিবাকে তানভীরের বোন ও বলতে পারছে না । গার্লফ্রেন্ড ও বলতে পারছে না ।হবে হয়তো কোন আত্মীয় ভেবে বলে
– তোমার আত্মীয় ? ?
– তানভীর হো হো করে হেসে ফেলে । কারন সেও জানে কোনটাতেই মিলাতে পারেনি আপু ।
লাবিবা এক মনে তাকিয়ে আছে । তানভীর খেয়াল করে বলে
– কিছু বলবে ?
লাবিবা মাথা নাড়ায় ।
– বলো ।
– আপনি অনেক সুন্দর করে হাসেন ।
???ওমা….তানভীর…. সত্যিই?
তানভীর মাথা নাড়ায় । লাবিবা কিছুই বুঝে না । লাবিবকাকে হাত ধরে নিয়ে বসায় । তানভীরকেও বসতে দেয় । লাবিবার সামনে বসে গল্প জুড়ে দেয় ।
আমি কে জানো ? আমি হচ্ছি তানভীরের আপু । আমার বাবা ফিরোজ আংকেল এর ড্রাইভার ছিলো । সেই সুবাদে ওদের বাসায় যাওয়া আসা হতো । আমাকে তানভীর সব সময় আপু আপু বলে ডাকতো । আমিও ভাই ভাই বলতাম । পাচ বছর আগে যখন আমার বাবা মারা গেলেন তখন তো আর আমি ড্রাইভিং করতে পারবোনা । কি করে চলবো বুঝতেছিলাম না । তখন আমার এই ভাই আমাকে সাহায্য করে । আজ আমি এতোবড় শপিং মলে একটা জায়গা করে নিয়েছি । এই ভাই না থাকলে এই জায়গায় থাকতে পারতাম না ।
লাবিবা – আমি এসব জেনে কি করবো ?
তানভীর কেশে উঠে ।
আপু আসলে ওর স্কুলের ইউনিফর্ম আমি নষ্ট করে দিয়েছি । এখন একটা ইউনিফর্ম বানিয়ে দাও । আমি কাল এসে নিয়ে যাবো । মাপ নাও তারাতাড়ি ফিরতে হবে ।
ফেরার সময় গাড়িতে লাবিবা অনেক চিন্তিত হয়ে আছে দেখে তানভীর জিজ্জাসা করে
– কি হয়েছে আমার দুষ্টু পুতুলটার ?
– স্যার …আম্মুনিকে কি বলবো ? আম্মুনি তো জিজ্জাসা করবে নতুন ড্রেস কোথায় পেলে আর ইউনিফর্ম কোথায় ?
– বলবে ইউনিফর্ম আমাদের বাসায় রেখে আসছো আর এটা মম তোমাকে দিয়েছে । পরে ভালো লাগছে তাই আর খুলোনি ।
– আচ্ছা ।
To be continue _____
® লাবিবা______?