অবন্তর_আসক্তি #২য়_পর্ব,০৩,০৪

0
1710

#অবন্তর_আসক্তি
#২য়_পর্ব,০৩,০৪
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
০২

বাড়ির উঠানে আম গাছ তলায় চারটা চেয়ারে চারজন বসে রয়েছে বর্ষা, রিয়া, মাহিরা, আনিতা।
আনিতা ও মাহিরা এসেছে পর থেকেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বর্ষা ও রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা এসেছে প্রায় বিশ মিনিট হতে চলল, এসেছে পর থেকে ওদের দুজনকে চুপ থাকতে দেখে তাদের মনেও কৌতূহল জাগ্রত হচ্ছে।

আহিতা: এইভাবে চুপ করে না থেকে বল কি হয়েছে?
মাহিরা: কালকের ছেলেটা তোকে খুঁজতে তোর বাড়ি পর্যন্ত চলে আসেনি তো?

‘ কি সব যা-তা বলছিস আমাদের বাড়ির এড্রেস তারা কোথায় পাবে? ‘ রিয়া বলল।

বর্ষা তিনজনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে কর্কশকন্ঠে বলল,

‘ কি হয়নি বল, বাড়ির সবার ফেবারিট সন বাড়িতে আসছে আর তাতেই সবার যত বারাবাড়ি আমাদের কে বলে ওই বুটকু মটকু ছেলের খাওয়া শেষে যদি কিছু বেঁচে যায় তাহলে ওইগুলো আমরা জেনো খাই। ভাবতে পারছিস ব্যাপার টা কতটা জগণ্য ‘

আহিতা উত্তেজিত হয়ে লাফিয়ে বলে উঠল, ‘ মানে কি অভ্র ভাইয়া আসছে? ‘

বর্ষা ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ তাতে তোর এত লাফালাফি কিসের হুহহ? ‘

আহিতা: আমি কোই লাফালাফি করলাম।

বলে আসতে আসতে চেয়ারে বসে পরল। বর্ষা জীদ্দে টেবিলের উপর নিজের হাত দিয়ে বারি মারল পরক্ষনেই ‘ আউচ ‘ বলে চিৎকার দিয়ে উঠল।

মাহিরা নিচু কন্ঠে বলল, ‘ তুই তোর অভ্র ভাইয়াকে দেখেছিস সেই ছোট্ট বেলায়, তখন সে মোটা ছিল এখন এতবছরে নিশ্চয়ই পরিবর্তন হয়েছে, এখন হয়তো আর সেই মোটা টি নেই। ‘

বর্ষা মুখ বাঁকা করে বলল, ‘ ওই মটু জীবনেও পরিবর্তন হবে না, যেই খাওয়া খায় যাইয়া দেখ বাড়িতে কতশত রান্না হচ্ছে সব তো সেই খাবে। তার খাওয়া শেষে কিছু বেঁচে গেলে ওগুলো আমরা খাবো। আর একদিন না খেলে কেউ মরে যাবে না। আজকে না হয় নাই বা খেলাম। ‘

কথাগুলো বলার পরপরই একটা পুরুষ মানুষের শক্তপোক্ত হাত বর্ষার চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে টেবিলের উপর বারি মারল। এতটাই জোরে শব্দ হয়েছে যে চারজনেই ঘাবড়ে যায়। একটুর জন্য নরম তুলতুলে টেবিল টা ভেঙে যায়নি৷ প্রচন্ড মেজাজ গরম করে উঠে দাঁড়ায় বর্ষা থাপ্পড় টা কে মেরেছে তা দেখার জন্য গা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই স্বস্ত হয়ে গেলো। আঁড়চোখে বাকি তিনজনের দিকে তাকাচ্ছে তাদেরও ভয়ে বরফের মতো জমে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। নিজেকে যথাযথ শান্ত রাখার চেষ্টায় আছে বর্ষা, সামনে থাকা লোকটার রক্তচক্ষু দেখে অটোমেটিক শুকনো ঢোক গিলছে বর্ষা রাণী।

টেবিলের উপর আবারও হাতের বারি মেরে কর্কশস্বরে বলল, ‘ তোমার সাহস হয় কি করে এখানে আসার? ‘

বর্ষা ভয়কে নিজের মধ্যে দাফন করে নিয়ে মুখে সাহস রেখে বলল, ‘ মাথা মন্ডু কি ঘাস চড়তে গিয়েছে আপনার? আপনি আমাকে বলছেন আমি এখানে আসার সাহস কোথায় পেয়েছি? আমি আপনাকে প্রশ্ন করছি আপনি এখানে আসার সাহস কোথা থেকে পেয়েছেন? ‘

‘ একদম জংলীদের মতো ব্যবহার করবে না। ‘ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুক বলল।

‘ খবরদার আমাকে জংলী বলবেন না। ‘ বর্ষা বলল।

‘ একশো বার বলবো হাজার বার বলবো কি করবে তুমি? আস্তো একটা জংলী মেয়ে। ‘

মেজাজ গেলে চটে, বর্ষার মাত্রারিতিক্ত রাগ উঠলে সে কি করে নিজেও বুঝতে পারে না। টেবিলে রিয়ার সাইডে ছিল পানির জগ, বর্ষা পানির জগটা হাতে নিয়ে সোজা লোকটার গায়ের উপর ঢেলে দেয়৷

বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল, ‘ What the! কি করলে তুমি এটা? কাল রাতে গন্ধ মাখা কাঁদা আর এখন পানি। তোমার মতো বজ্জাত মেয়েকে কিভাবে শিক্ষা দিতে হয় আমি তা খুব ভালো করেই জানি। ‘

বলে ছেলেটা বর্ষার দিকে এক পা বাড়াতে নিলে পেছন থেকে কারো আওয়াজ ভেসে আসে সে বলছে, ‘ কি হচ্ছে কি এখানে? ‘

বর্ষা কিছু বলার আগেই ছেলেটা বলল, ‘ তিন্নি তুই আসছিস, এই বজ্জাত মেয়েগুলো কারা বলতো আমায় এদের শায়েস্তা করতে হবে। ‘

তিন্নি আপু ছেলেটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলালো পরক্ষণেই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ তার আগে এটা বল, তুই ভেজা কেন তোর শার্ট ভিজলো কেমন করে? ‘

ছেলেটা রাগী গলায় এক আঙুল বর্ষার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ এই বজ্জাত অসভ্য মেয়েটা করেছে ‘

তিন্নি আপু হা হয়ে গেলো। মুখ রসগোল্লার মতো হা করে বলল, ‘ কিহ বর্ষা করেছে? ‘

ছেলেটা আনমনে বলে ফেলল, ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ বর্ষাই করেছে ‘

বলে থমকে গেলো একবার তিন্নি আপুর দিকে তাকালো দ্বিতীয় বার আমার দিকে তাকালো ভ্রু খানিক কুঞ্চন করে বলল, ‘ এই সেই আমাদের বর্ষা? ‘

বর্ষা ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বলল, ‘ কিসের আমাদের বর্ষা আমি আপনাদের হলাম কবে হুহ? ‘

তিন্নি বলল, ‘ বর্ষা তুই জানিস ও কে? নাকি না জেনেই এমনটা করেছিস? ‘

‘উনি কে সেটা জানার আমার বিন্দু পরিমান ইন্টারেস্ট নেই। ‘ বলে অন্য দিকে ঘুরে গেলো।

রিয়া: তাপ্পি কে উনি?

তিন্নি: তোদের অভ্র ভাইয়াই এনি।

বর্ষা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল তবে তিন্নির কথা কান অব্দি যেতে থমথমে রয়ে গেলো। অপলকভাবে তাকিয়ে রইল অভ্রর দিকে। আবারও শুকনো ঢোক গিলল। দুই হাত মুঠি বন্ধ করে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে অভ্র। তিন্নি এবার বর্ষাকে ভয় দেখিয়ে বলল, ‘ অভ্র আসবে শুনে তোর যা অবস্থা হয়েছিল তা বাড়ির সবাই দেখেছে, এখন যদি তারা শুনে অভ্রর শার্টে পানি তুই ফেলেছিস ভাবতে পারছিস বোন্টি তোর কি অবস্থা তারা করবে? ‘

বর্ষা করুণ দৃষ্টিতে তিন্নির দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে পরক্ষণেই বলল, ‘ কে বর্ষা? কোথায় বর্ষা? আর এনি কে তুমি কে? ‘

বলেই বর্ষা রিয়ার হাত ধরে বাড়ির গেইটের দিকে দিলো দৌঁড় পেছন পেছন আহিতা ও মাহিরাও দৌঁড় দেয়।
____________
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই গাড়ির টায়ার পাম্চার হয়ে যায়। এক রাশ বিরক্ত নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির চাকায় একটা লাথি মারে। ফের বাকিদের উদ্দেশ্য বলে, ‘ বাড়ি সামনেই চল হেঁটেই যাওয়া যাবে। ‘

বাকিরাও অভ্রর সাথে হেঁটে হেঁটে রাস্তা পার হয়ে বাড়িতে আসে৷ বাড়িতে গেইটের ভেতরে ঢুকতেই অভ্রর চোখ গেলো আমগাছ তলায় যেখানে রয়েছে চারজন মেয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখল সেখানে কাল রাতের মেয়েগুলো বসে আছে। আর কি রাগ হলো নিজেকে ধমন করতে না পেরে তেড়ে এসে টেবিলের উপর হাত ছুড়ল।

বাড়ির বর্ণনা, বাড়িটা হচ্ছে তিনতলা একটা ফ্লাট বাসা। সামনে দিয়ে সরু রাস্তা দুই পাশে দিয়ে ফুলের আঙ্গিনা। বাড়ি চারদিক ঘিরে বড়বড় দেয়াল। বাড়ির বা পাশটা হচ্ছে গাড়ি ও বাইক রাখার গ্যারেজ, আর ডান পাশটায় হচ্ছে বড় ও ছোট গাছের ছড়াছড়ি বড়গাছ কমই আছে তিন থেকে চারটা। তবে ছোটো ও ফুলের গাছই অধিক। চারপাশে ফুলগাছ তার মাঝে কিছুটা বড় করে বসার জন্য চেয়ার টেবিল এর ব্যবস্থা। বিকালের দিকে বাড়ির মহিলারা কাজ কর্ম শেষ হলে বসে আড্ডা ও গল্পগুজব করে এখানে বসে। মুড ভালো বা খারাপ থাক, বর্ষা রিয়াকে এখানেই বেশি সময় পাওয়া যায়। রাতে বা দিনে বেশির ভাগ সময় এখানে বসেই আড্ডা দেয়। মাঝেমধ্যে পড়াশোনা খাওয়া দাওয়া ও এখানেই করে তারা দু’জন। যদি সম্ভব হতো মনে হয় দু’জনে এখানেই ঘুমিয়ে থাকতো। বেশি পছন্দের জায়গা এটা বর্ষার। তবে এইসব ফুল গাছ গুলো বেশির ভাগ বর্ষার হাতে লাগালো সে ফুলগাছ খুবই পছন্দ করে। আর সব গাছের দেখাশোনা সে নিজেই করে। চলুন চলে যাই গল্পে,

‘ও এমনই অনেক ফাজিল। কারো শাসনে ওর কাজে লাগে না। এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে চল ভেতরে সবাই অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে তোর। ‘ তিন্নি বলল।

‘এতদিন তো আমি ছিলাম না। এইবার আমি এসে গেছি এখন থেকে ওর বাঁদরামি করা ছুটাবো। ‘ অভ্র বলল। ঠোঁটের কোণে তার রাষ্ট্র জয়ের হাসি।

চলবে?

#অবন্তর_আসক্তি
#৩য়_পর্ব
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
________
যা ভয় দেখিয়ে ছিল তিন্নি তখন বর্ষাকে তার পরে বেচারি বাড়ি ফিরতেই ভয় পাচ্ছে। বাহিরে আর কতই বা থাকা যায়। নিজের বাড়ি নিজের রুমে তো ফিরতেই হবে। সে ভেবেই মন খারাপ হয়ে যায় বর্ষার। বর্ষা রিয়া বাকি আহিতা মাহিরা চারজনেই দিঘীর পাড় বসে আছে, মাটি থেকে ইটের বিন্দু বিন্দু কোণা গুলো কুড়িয়ে নিয়ে দিঘীর জলে ঢিল মারছে। এক ঠোঁটের উপর আরেক ঠোঁট ভাজ করে রেখে হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়ালো বর্ষা। বাকি রাও বিমর্ষ হয়ে উঠে দাঁড়ালো।
বর্ষা কাঠকন্ঠে বলল, ‘ কোন না কোন খ্যাতের মুলার জন্য আমি কেন রাস্তায় থাকবো আমি বাসায় যাবো৷ ‘

আহিতা: কিভাবে যাবি?

‘খ্যাতের মুলা অন্তত বলিস না। তোর ভাই টা যে এত কিউট জানতাম না রে। আমার ভাবনার চেয়েও অনেক কিউট আল্লাহ প্রথম দেখেই ক্রাশ খাইছি কাল রাতে তো দেখতেই পারিনি। শোন না তোদের ভাই টার সাথে আমার সেটিং করিয়ে দে না। ‘ মাহিরা ন্যাকামি কন্ঠে বলল।

বর্ষা চোখ জোড়া ছোটছোট করে নিয়ে কর্কশকন্ঠে বলল, ‘ কি বললি তুই? ওই আমার জাত শত্রু আর তুই ওর সাথে সেটিং করিয়ে দিতে বলতাছিস? ‘

রিয়া গালে হাত দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ অভ্র ভাইয়া তোর শত্রু বুঝলাম কিন্তু জাত শত্রু কিভাবে হলো? ‘

‘ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে ‘ বর্ষা মাথা ঘুরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল।

আহিতা: বাড়ি যাবি কিভাবে ভাবছিস?

বর্ষা: হু!

মাহিরা: কিভাবে যাবি?

বর্ষা বলল,’ বাড়ির পেছনে গিয়ে পাইপ বেয়ে আমার রুমের বেলকনিতে উঠে যাবো। ‘

রিয়া জেনো আসমান থেকে পরল বর্ষার কথা শুনে মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে, ‘ হোয়াট? ‘

আহিতা: পাগল হয়ে গেছিস তুই?
রিয়া: পাগল হয়ে গেছে, নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে।
মাহিরা: বায় চান্স একবার পরে গেলে হাত ও পা’য়ের সাথে মাজা ও ভাঙবে।

বর্ষা ডেভিল হাসি দিয়ে বলল, ‘ কিচ্ছু হবে না আমার, চল আমার অভ্যেস আছে। ‘

পাশ থেকে ফট করে রিয়া বলল, ‘ কিন্তু আমার নেই, আমি উঠতে পারবো না তোর সাথে ওই পাইপ বেয়ে ‘

বর্ষা রাগী কন্ঠে বলল, ‘ তোর তো সব কিছুতেই শুধু না না৷ আমার কথার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলায় একমাত্র রিয়া আর বৃষ্টি ‘

আহিতা প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ বৃষ্টি আর রিমা কলেজ হোস্টেল থেকে কবে আসবে রে? ওদের অনেক মিস করি ‘

মাহিরা আহিতার তালেতাল মিলিয়ে বলল, ‘ হয় আমিও মিস করি অনেক ‘

বর্ষা: হইছে আমি বুঝবার পারছি।

তারপর আর কি বর্ষা আর রিয়া ওদের দুজনকে বাড়িতে পৌঁছিয়ে দিয়ে নিজেরা নিজেদের বাড়িতে আসে। চুপিচুপি বর্ষার রুমের নিচে আসে। বর্ষার রুমের ডানপাশে রিয়ার রুম। বর্ষার রুম দুই তলায় আর অভ্রর রুম তিনতলায়। বেলকনিতে কোনো গ্রিল না থাকায় অনায়াশে উঠা নামা করা যায়। তার সাথে কিছুটা নিচু তে ঝুকলেই সবটা দেখা যায়।

বাড়ির ভেতরের বর্ণনা, বাড়িটা অনেকটা জায়গায় বড় করে করা হয়েছে। বাসা চারতলা তবে বাড়ির মধ্যে উঠানের মতো জায়গা অনেকটা। বৃষ্টির দিনে বৃষ্টি, আর রোদের দিনে কড়া রোদ এই উঠানেই পাওয়া যায়। কষ্ট করে বাহিরে যেতে হয় না। এই বাড়ি বাহির থেকে দেখতে যতটা আকর্ষণিয় ততটাই ভেতর থেকেও দেখতে আকর্ষণিয়। বাড়ির ভেতরের সব নামিদাবি আসবাবপত্র খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তাই বাড়িটা ভেতর থেকেও অনেক সুন্দর লাগে। এই বাড়ি তৈরি করার আগে বর্ষার দাদা নিজে ডিজাইন করেছিলেন। উনি যেভাবে বলেছিলেন ঠিক সেই ভাবেই বাড়িটা তৈরি করা হয়। তাই হয়তো বাড়িটা এত সুন্দর।

বর্ষা এক হাত দেয়ালে আরেকহাত দিয়ে পাইপ ধরে আছে। উপরে উঠার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে রিয়া ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার, উপরের তলার বেলকনিতে মাত্র এসে দাঁড়িয়েছে অভ্র আর সাহিল।
পাঁচ মিনিট হয় রুমে এসেছে, এতক্ষণ হল রুমে সবার সাথেই ছিল। দরজার সামনে যখন অভ্রকে সবাই দেখতে পেলো কাজ কারবার সব ফেলে ছুটে গিয়ে তার উপরে উপচে পরে। সবার আদরের ছেলে এতবছর পর এসেছে বলে কথা, ভালোবাসা তো উপচে পরবেই। বড় আম্মুর চোখে পানি ছেলের গালে হাত ছুঁয়ে কপালে চুমু একে দিয়ে বুক জড়িয়ে কেঁদে ফেলে। সাথে নানান কথা জুড়ে দেয়, এত বছরে কি তাদের কথা একটুও মনে পরেনি ইত্যাদি ইত্যাদি।

দূরে দেয়ালে একপা উঠিয়ে ফ্যামিলি ড্রামা দেখছে, কাব্য, নাহিদ, অপূর্ব আরও বাদ বাকি ছোট ভাইবোন যারা আছে। তাদের চোখে মুখে এক রাশ রাগ ও অভিমানের ছাপ।

অভ্র সবার সাথে টুকটাক কথা বলে ভাইদের কাছে যায় রাগ ভাঙানোর জন্য তারাও বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না। তাই অভিমান দূরে সরিয়ে চারজনে চারজনের গলা জড়িয়ে ধরে।

দুই ঘন্টা সবার সাথে আলাপ করে, রুমে এসেছিল একটু রেস্ট ও ফ্রেশ হওয়ার জন্য, বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বিছানার উপর বসে। বাহিরের কড়া রোদে রুমে থাকা মুশকিল। এসি তে কাজ হচ্ছিল না। তাই প্রকৃতির বাতাস গায়ে মাখতে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। তখনই নজরে পরে বর্ষা আর রিয়া। সাহিল গালে হাত রেখে অভ্রর উদ্দেশ্য টিটকারি মেরে বলে, ‘ ভাই তোর বোন এগুলা তো দেখি এক একটা বান্দর রে ‘

বলে অভ্রর দিকে তাকিয়ে হাসতে যাবে তখনই মুখের হাসি মলিন হয়ে যায়। অভ্রর চোখের ভঙ্গি দেখে চুপ হয়ে যায়। তারপরেও বিড়বিড় করে বলল, ‘ একটু ভুল হয়ে গেছে ওগুলা বান্দর না বান্দরনী হবে। ‘

অভ্র সাহিলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাঠকন্ঠে বলল, ‘ আবার ‘

‘ সরি ‘ বলে মাথা নিচু করে নেয়।

ভ্রু খানিক কুঞ্চিত করে বর্ষা আর রিয়ার কীর্তি দেখছে। অভ্র অনেক স্মার্ট হওয়ার পাশাপাশি ও অনেক চালাক তাই ওর বুঝতে অসুবিধা হয়নি। বর্ষা আর রিয়া এদিক দিয়ে পাইপ বেয়ে কেনো তাদের রুমে উঠছে।

দুপুরে লাঞ্চ করার জন্য সবাই খাবার টেবিলে জড় হয়েছে৷ নূর ইসলাম বাড়ির কর্তা বর্ষার দাদার আদরের নাতনী হচ্ছে বর্ষা।

বর্ষার দাদা নাতনীদের পাশে বসিয়ে তিনবেলা খান এখন দুজনকে দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন করলে, তিন্নি প্রত্যত্তর করে, ‘ দাদু বর্ষা আর রিমা বাড়ির বাহিরে গেছে এখনও ফিরে আসেনি ‘

তখন অবশ্য অভ্র চুপ করে ছিল, তারপরে যখন ওর প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে যাবে ওর আম্মু তখনই হলো ঝামেলা। অভ্র শর্ত দিয়ে বসল। আর সে শর্ত শুনে সবাই হতবাক নিরাশ হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে, সবাইকে অবাক করে দিয়ে অভ্র আবারও বলল….

চলবে?

#অবন্তর_আসক্তি
#৪র্থ_পর্ব
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_________
অভ্রর আম্মু যখন অভ্র কে তার প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে যাবে। তখন অভ্র তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ তোমরা কেনো বেড়ে দিচ্ছো? প্রতিদিন তো সব সময় তোমরাই কাজকর্ম করো। আজ তোমরা রেস্ট করো। আর আমার সাথে বসে একসাথে খাও। ‘

বাড়ির মহিলারা বেশ অবাক হয় ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে ফেলে, ‘ সবাই একসাথে খেতে বসলে খাবার বেরে দিবে কে? ‘

অভ্র মৃদু হাসি দিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলে, ‘ কেনো? বর্ষা আর রিয়া করবে ‘

অভ্রর মুখে বর্ষা খাবার সার্ভ করবে শুনে হতবাক হয়ে গেলো সবাই তাদের মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে, ‘ বর্ষা করবে খাবার সার্ভ ও জীবনে প্লেট ধুয়ে খাবার খায় না। ‘

অভ্র ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট নিয়ে বলল, ‘ তাহলে থাক আজ আর আমার খাওয়া হবে না। ‘

বলে চেয়ার ঢেলে উঠে যেতে নিলে অভ্রর আম্মু তার হাত ধরে নেয় আর ইতস্তত হয়ে বলে, ‘ খাবার ছেড়ে উঠতে নেই বাবা। এই বেলা খেয়ে নে রাতে না হয়৷ বর্ষা ওরাই সার্ভ করবে তাছাড়া এখন সার্ভ করার জন্য ওদের তো বাড়িতে থাকতে হবে। ‘

উনি চেয়ারে আরাম করে বসে আবারও বললেন, ‘ ওরা সার্ভ না করলে খাবো না তাছাড়া ওরা দু’জনে ওদের রুমেই আছে। ‘

‘মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? বাড়িতে আসলে ওকে তো আমরা দেখতাম। ‘ তিন্নি হতভম্ব হয়ে বলল।

অভ্র সামনে টেবিলের উপর রাখা কাঁচের গ্লাসটার উপর আঙুল রেখে আঙুল ঘুরাতে ঘুরাতে বলল, ‘ ওরা বাড়িতে এসেছে আমি দেখেছি বাগানের পেছন দিক দিয়ে পাইপ বেয়ে উপরে উঠেছে। ‘

পানি পান করছিলেন বর্ষার বাবা এমন সময় মেয়ের পাইপ বেয়ে উপরে উঠার কথা শুনে পানি স্লিপ করে ছোট চাচ্চুর উপরে গিয়ে পরে। ছোট চাচ্চু মুখে খাবারের এক লোকমা পুড়ে দিয়েছিল। তারও ওই কথা শুনে একই অবস্থা হয় তবে একটু উল্টো তার খাবার নাকে মুখে তাউলায় উঠে যায়। একাধারে কাশতে শুরু করেন। ছোট আম্মু সামনে টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে চাচ্চুর দিকে বাড়িয়ে দিলেন। সেও এক নিশ্বাসে পুরো পানি টুকু গিলে ফেলল।

বর্ষা রিয়া রুমে তাও আবার পাইপ বেয়ে উপরে উঠেছে কথাটা কেউই বিশ্বাস করছে না। সেটা অভ্র তাদের চোখ মুখ দেখেই বুঝতে পারছে। তাই গ্লাসটায় হাত দিয়ে টুংটাং শব্দ করতে করতে বলল, ‘ তোমাদের কারো বিশ্বাস না হলে ওদের রুমে গিয়ে দেখে আসো। ‘

কিছুক্ষণ চোখচোখি করে বর্ষার আম্মু আর রিয়ার আম্মু উপরে চলে যায়। এসে দেখে অভ্র যা বলেছিল সবটাই সত্যি, দু’জনে বিছানার উপর বসে লুডু খেলছিল। দুজন মা এসে দাঁড়িয়ে পরে তাদের সামনে সাথে শত প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, ‘ তোরা পাইপ বেয়ে রুমে আসছিস? ‘

বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নিচে নেমে আসে দু’জনে ইতস্তত হয়ে বর্ষাববলে, ‘ ইহা একটি মারাত্মক ফাউ কথা আম্মো আমরা কি পাইপ চড়তে পারি নাকি আজব কি সব বলো না৷ ‘

সামনে থাকা মানুষ দু’জন কথাগুলো মোটেও বিশ্বাস করলেন না। রুম থেকে সোজা বেলকনিতে চলে গেলো। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত তাকিয়ে দেখে আবারও রুমে এসে একই প্রশ্ন ছুঁড়ে, ‘ আমরা তোদের দু’জনকে বাড়ির ভেতরে তো আসতে দেখিনি তাহলে আসছিস কোন দিক দিয়ে? সত্যি সত্যি বল। ‘

কিছুটা চোখ রাঙিয়ে বলল, যথাযথ চেষ্টায় মিথ্যে বানিয়ে বানিয়ে বলছিল বর্ষা কিন্তু তারা বিশ্বাস করছিল না। তাই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে ভেবে উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে, ‘ তোমাদের এই ফাউ কথাটা কে বলছে শুনি? ‘

দু’জনেই একসাথে ‘অভ্র’ নামটা নিলো। এই নামটা শুনলে কেন যে আমার এত রাগ উঠে বুঝতেই পারি না। ইচ্ছে করে নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে। এখন আমার অন্তত বুঝতে বাকি রইল না। আমারই আম্মু আমার কথা কেন বিশ্বাস করছে না। তাই আর কথা না বাড়িয়ে প্রসংগ পাল্টে ফেললাম এই বলে, ‘ ওয় ভুল দেখছে চোখে বেশি নয়তো কম দেখে। এখন তোমরা এটা বলো দু’জনে একসাথে আমার রুমে কেন আসছো ‘

আম্মু বলল, ‘ সবাই ডাইনিং টেবিলে তোদের অপেক্ষা করছে চল। ‘

ডাইনিং টেবিলের কথা শুনতেই পেটের মধ্যে খিদে খিদে পেলো। তাই দু’জনে গায়ে ওড়না জড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। নিচে আসতেই সবার আগে শয়তান টার মুখ দর্শন হলো। আমার ভালো মুডটা নষ্ট হয়ে গেলো। কপালের চামড়া বিরক্তির কারণে ভাজ পরল। সে আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে আবারও মাথা নত করে নিলো কিন্তু এখনও হাসি গালে লেপ্টে আছে। চোখ পাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে চেয়ার টেনে বসতে যাবো তখনই দাদু (মনোয়ারা বেগম) বললেন, ‘ বোইন তুই পরে বস খেতে ‘

ভ্রু কুঞ্চিত করে দাদুর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লাম, ‘ কিন্তু কেনো? এখন না বসলে আমাকে ডেকে আনছে কেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবার খাওয়া দেখতে? ‘

সামনে থেকে পুতুল আপু বলল, ‘ আজ্ঞে নাহ। আপনাগো দাঁড়িয়ে থাকার জন্য আনা হয়নি।’

বর্ষা ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ তাহলে? ‘

পুতুল আপু (পুতুল আপুর ভালো নাম হচ্ছে সূবর্ণা মোস্তফা ডাক নাম পুতুল) পুতুল আপু আবারও কিছু বলতে যাবে তার আগে মুন্নি আপু তড়িঘড়ি করে বলল, ‘ তোদের কে এখানে আনতে চাচী আম্মুরা গিয়েছিল অভ্র ভাইয়ার খাবার সার্ভ করে দেওয়ার জন্য ‘ বলেই মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগল।
চোখ জোড়া জেনো বেরিয়ে যাওয়ার অতিক্রম হয়েছে। ঠোঁট জোড়া ভাজ করে সকলের দিকে এক নজর চোখ বুলালাম। এবার ঢের বুঝতে পারছি তখন কোন সুখে সে আমাকে দেখে ডেভিল মার্কা হাসি হেঁসেছিল। ইচ্ছে না থাকা শর্তেও ওদেরকে খাবার দিতেই হলো সবার কথা তো ফেলা যায় না। খাওয়ার মাঝে তো এইটা দে ওইটা দে সেটা দে পানি দে আছেই মেজাজ প্রচুর বাজে রকমের খারাপ হলো। এক তো সুযোগে কাজের বেটির মতো খাটাচ্ছে অপরদিকে তুই তুই করে বলছে। আমার বান্ধবীরা ছাড়া আমাকে কেউ তুই তুকারি করলে আমার এমনিতেও রাগ উঠে তার উপরে কি খাটানি না খাটাচ্ছে। তারমধ্যে এখন তো অতিরিক্ত হয়ে গেছে বলে কি না, কিচেন থেকে গিয়ে ডাল নিয়ে আসতে।

নিজের মধ্যেই নিজের রাগ দফন করে নিলাম। চলে আসলাম কিচেনে আবার পেছন পেছন মরিয়ম ও আসল। (আমার আরেক চাচাতো বোন ছোট) সে আমাকে সবটা খুলে বলল, তার সব কথা শুনে বুঝলাম এইসব কিছু অভ্র ভাইয়া ইচ্ছে করে করছে শুধু আমাকে নাকানি চুবানি খাওয়ানোর জন্য আমিও কম কিসের। এক বাটি ডাল নিয়ে কিচেন থেকে বের হতে যাবো তখনই আমার মাথায় (আকাশ ছোঁয়ার ভালোবাসা) মুভিটার ওই ডালের সিন টা মনে পরে গেলো। সেই অনুযায়ী আমিও একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে পাঁচ ছয় চামচ লবণ ডেলে দিয়ে ইচ্ছা মতো নাড়াচাড়া দেই। তারপর সাধু সেজে এসে টেবিলের উপর ডালের বাটিটা রেখে দেই।

তবুও অভ্র ভাই থেমে থাকেনি। আমি ডালের বাটি রেখে চলে যাবো তখন সে মাথা ঘুরিয়ে আমাকে পিছু ডেকে বলল, ‘ ওই জংলী দাঁড়া। তোর এই ডাল পাতে ঢেলে দিবে কে শুনি? ‘

এই ভাবে তো আমাকে বাকি ভাইগুলাও বলে না, ওয় যেভাবে যেভাবে বলছে। ইচ্ছে করছিল ডালের বাটিটা তুলে সম্পূর্ণ তার মাথায় ঢেলে দিতে কিন্তু সেটা করা যাবে না। ন্যায় পাশে দাঁড়িয়ে কয়েক চামচ লবণের ডাল ঢেলে দিলাম প্লেটে৷ সেও আনন্দ সহিত একবার এক লোকমা মুখে দিয়ে আর নাড়াতে চাড়াতে পারছে না। আমার এখন প্রচুর হাসি পাচ্ছে উনার মুখের অঙ্গিভঙ্গি দেখে কোনো ভাবেই নিজের পেটে হাসি চেপে রাখতে পারছি না। শত কষ্ট করে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে বললাম, ‘ কি হলো ডাল ভালো হয়নি খাচ্ছেন না কেনো আর একটু দেবো? ‘

এক চামচ ডাল উনার প্লেটের উপর ধরে বললাম। উনার চোখ দুটো রাগে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। সেভাবেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পরিশেষে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ কি হলো খাচ্ছিস না কেনো? ‘

সামনে টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি গিলে ফেলল আর তেজি কন্ঠে বলল, ‘ খাওয়া শেষ আমার! ‘

বলে চেয়ার টেনে উঠে দাঁড়ালো এক নজর আমার দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। আমার মুখে যাদুর হাসি দেখতে সে পেয়ে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। টেবিলের অপর পাশ থেকে কাব্য বলল, ‘ বর্ষ্যু ডালের বাটিটা দে তো আমি একটু নেই। ‘

হুট করে এমন ডাক শুনে কলিজা কেঁপে উঠল এ ডাল খেলে তো বুঝে ফেলবে অভ্র ভাই এমন ভাবে চলে গেছে কেনো। কোনো কিছু না ভেবেই চেঁচিয়ে বলে উঠলাম, ‘ নাহহহ ‘

অপূর্ব ভাইয়া জিজ্ঞেস করল, ‘ না কেনো? ‘ ভ্রু কুঞ্চিত করে।

আমি উপর নিচ চোখ ঘুরিয়ে কিছু একটা ভাবনা চিন্তা করে বললাম, ‘ এই বাটি ডাল আমি আনছি আমি খাবো তোদের খেতে ইচ্ছে হলে ওয়াশরুম থেকে এনে খা। ‘

কাব্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ কি বললি? ‘

আমি বিস্মিত স্বরে বললাম, ‘ না স্যরি, ওই বলতে গিয়েছিলাম কিচেন থেকে এনে খা মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে ওয়াশরুম। ‘

সবার দিকে তাকিয়ে বাটি সহ দিলাম কিচেনের দিকে দৌঁড়, কেউ দেখার আগে এক বাটি ডাল বেসিনে ফেলে দিলাম। পানি ছেড়ে বেসিন পরিস্কার করে দিলাম। পাতিল থেকে আরও কিছু ডাল বাটিতে তুলে রেখে ডাকনা দিয়ে ডেকে বাহিরে চলে আসলাম। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে রুমের দিকে যাচ্ছিলাম। কিছু একটা ভেবে থেমে গেলাম পেছনে ঘুরে তাকিয়ে সবার উদ্দেশ্যে আবারও বলে উঠি, ‘ ভুলেও কেউ আমার ডালের বাটি স্পর্শ করবে না। ‘

ডাল আমার তেমন একটা পছন্দ নয়। তবুও আজ ডাল নিয়ে মাতামাতি একটু বেশি করছি। আমার মন বলছিল তারা ডালের বাটির ডাল খেয়ে অবশ্যই দেখবে আর মন কখনো ভুল বলে না। আমারই তো পরিবার খুব ভালো করে চিনি তাদের সকলকে।

দৌঁড়ে এসে রুমে ঢুকে পরলাম কে দেখে আমার হাসি ওরে হাসি উল্টাপাল্টা হাসি, কি হাসি, হাসতে হাসতে বিছানার উপর পরে যাচ্ছি, আবারও উঠে দাঁড়াচ্ছি আবারও হাসতে হাসতে সোফার উপর বসে পরছি। আল্লাহ হাসতে হাসতে আমার গাল দু’টো ব্যাথা হয়ে গেছে তবুও আমি হাসছি। দুইহাত দিয়ে দুই গাল চেপে ধরে হাসছি। এ হাসি জেনো কোনো বাধা মানছে না। হাসতে হাসতে এখন গাল সহ পেটেও ব্যাথা করছে, এক হাত দিয়ে গাল চেপে ধরলাম আরেক হাত দিয়ে পেট চেপে ধরে কিছুটা ঝুঁকলাম এখনও আমি হেঁসে যাচ্ছি। মাথাটা একটু উঁচুতে তুলে দরজার দিকে তাকালাম। দেখলাম কালো প্যান্ট পরা কেউ দাঁড়িয়ে আছে। প্যান্ট যখন পরেছে নিশ্চয়ই কোনো ছেলে, তাই তার চেহারা দেখার জন্য মাথা তুলে তাকালাম। তারপর যাকে দেখলাম মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। উনাকে তো আমি এখানে এক্সপেক্ট-ই করি নাই কোণ্থেকা আইসা পরলো। ধপ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম। হঠাৎ করে দাঁড়ানোর ফলে পিঠে একটু টানটান অনুভব করলাম। এখনও তার চোখ রাগে রক্তবর্ণ ধারণ করেছে, দেখে মনে হচ্ছে এখনই আমাকে ওই চোখ দিয়ে গিলে খাবে। আমি ভয়ে শুকনো এক ঢোক গিললাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম সে কখন এসেছে আর আমাকে পাগলের মতো হাসতে দেখে ফেলেনি তো ‘ আল্লাহ মালুম। ‘

উনার সাথে যা করেছি তার জন্য যদি এখন দরজা বন্ধ করে বেল্ট খুলে আমাকে উত্তম মাধ্যম পিটানি দেয় তখন আল্লাহ বাঁচাও আমারে আজকের মতো বাঁচাই নেও। আমার মতো মাসুম বাচ্চা উনার ওই শক্তপোক্ত হাতের মাইর খাইলে আর বাঁচুম না। (মনে মনে)

সে দরজায় এক হাত রেখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ, জানি না কখন এসেছে বা কেনো এসেছে?

দরজা থেকে হাত নামিয়ে রুমে ঢুকে পরল। আমার সামনে এসে দাঁড়াতেই আমি খিঁচে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম। সাথে গলা ফাটিয়ে এক চিৎকার দিলাম, ‘ আম্মুওওওওওও ‘

সে তার এক হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে ঠেলে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। আমি চোখ জোড়া খুলে বিষ্ময়কর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে মাথা বামে ডানে নাড়াচাড়া করছি। জেনো তার হাত আমার মুখ থেকে সরাতে পারি। সে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চোখ মুখ কুঞ্চিত করে বলল,

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here