একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৯

0
5980

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৯
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
ইয়াং প্রিন্সিপাল দেখে সব মেয়েই ক্রাসিত। বয় ফ্রেন্ডকে নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিয়ে এখন প্রিন্সিপালকে নিয়ে লেগেছে। ড. তানভীর খান নাম শুনেই সবাই ফিদা । স্টাইশিস ইয়াং ড.তানভীর খান হার্ডথ্রোক লেডি কিলার লুক উইথ কিউট ফেইস এন্ড সিক্স প্যাক বডি। সেভেন ইয়ার লন্ডনে থেকে পুরো ইনভাইরনমেন্ট চেঞ্জ। কথায় কথায় ইংলিশের ফুলঝুরি ফুটে । ভার্সিটি কমিটি , চ্যায়ারম্যান, প্রফেসরস অল গাই ড. তানভীর খানের বিহেভিয়ার এ সেটিসফাইড। কলেজের ভিপি বাবুর উপর যে মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়তো তারা এখন প্রন্সিপালের উপর মনে মনে ঝাপিয়ে পড়েছে । ইকোনোমিক্স ডিপার্টমেন্টে স্ট্যাটিসটিক ক্লাস নিবেন ড. তানভীর খান। দুদিন ভার্সিটি আসার পর ও একি অবস্থা। ক্লাসে ঢুকতেই সব স্টুডেন্ট দাড়িয়ে ” আসসালু আলাইকুম স্যার । ” বলে হা করে তাকিয়ে থাকে । পার্পেল কালার ফুল স্লিভ শার্ট ইন করা স্পাইক করা চুল চোখে পাওয়ারি চিকন ফ্রেমের চশমা উপরে ব্লাক লেদার জ্যাকেট সব মিলিয়ে চোখ ফেরানো দায় । ডেস্কের কাছে গিয়ে সকলকে একবার দেখে নিয়ে সকলের উদ্দ্যেশে বলে
—– হ্যালো মাই অল বিউটিফুল এন্ড লাভিং স্টুডেন্টস । হাউ আর ইউ ?
সবাই একত্রে
—– আলমাদুলিল্লাহ স্যার । এন্ড ইউ ?
—– আই এম সো গুড । ইউ আর অলরেডি নো মি । এগেইন, আই গিভিং মাই আইডেন্টিটি । আই এম দ্যা নিউ প্রিন্সিপাল অফ ইউর ভার্সিটি । মাই নেইম ইজ তানভীর খান । সন অফ এমপি ফিরোজ খান । আই হেভ এ ডক্টরেট ফ্রম ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজ, ইউকে। আই এম ইন চার্জ অফ টেকিং ইউর স্ট্যাটিসটিকস ক্লাস । দিস ইজ দ্যা ফাস্ট ইনাগুরেশন অফ দ্যা ডিপার্টমেন্ট অফ ইকোনোমিক্স এট দিজ ইউনিভার্সিটি । নাউ আই ওয়ান্ট টু স্টার্ট ইউর ক্লাস । অল মাই স্টুডেন্টস লেটস স্টার্ট।গিভ মি এ বুক প্লিজ।

ক্লাসের পরিবেশ একদম থমথমে । সবাই এক মনে তানভীরের লেকচার শুনে যাচ্ছে হা করে । মেয়েরা হা করে প্রিন্সিপালের কথা গিলছে সাথে চোখ দিয়ে প্রিন্সিপালের রুপ ও গিলছে । আর ছেলেরা একবার প্রিন্সিপালের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার মেয়েদের দিকে । মনে মনে ভাবছে মেয়েগুলো এতো ছেসরা কেন ? আল্লাহ কেনো এই বান্দর মার্কা চেহেরা দিয়ে পাঠালে ? উপর থেকে যেন আওয়াজ আসে চুপ করে থাক ..তুই তো বান্দর থেকেই মানুষ হয়েছিস । মিলি জবা তো হার্ড ধরে আছে । তাদের রানী এলিজাবেথ এর আত্মা উড়ে যাওয়া কথাটার সত্যতা প্রমান পেয়েছে । এখন মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি আত্মা উড়ে যাবে । ক্লাস শেষে বের হবার সময় মিলি স্যার বলে ডাক দিয়ে দৌড়েই স্যারের পিছু আসে। পিছু পিছু সব গুলো মেয়েই হাজির না জানি মিলি কি বলবে ।
মিলি সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়ে ন্যাকামো করে বলে
— স্যাররর ক্যান আই আস্ক এ প্রশ্ন ?
— কে শিখিয়েছে ?
— জি স্যার ?
—ব্যাংরেজি ।
—ওহ সরি স্যার …ফ্রেন্ড এর সাথে বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে গেছে । মাথা নিচু করে ।
— আই এম নট ইউর ফ্রেন্ড। মাইন্ড ইট । ইউ ক্যান গো ।
তানভীর চলে আসে । জবা দৌড়ে এসে বলে
— কি বললো স্যার ? জিজ্জাসা করেছিলি তো ?
জবাব না দিয়ে জবার উপর হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে — দোস্ত আমিতো শেষষ। কি এটিটিউট মাইরি । মে তো দিওয়ানা হগায়া । হায়য়য়য়।
জবা রেগে মেগে এক ধাক্কায় নিজের উপর থেকে তুলে দেয় ।
— শালী তুই জিজ্জাসাই করতে পারলি না । তোরে দিয়া কিচ্ছু হয়বো না । এলিজা….দোস্ত মিস ইউ ভুরি ভুরি । কই তুই ?

পুকুরে পা ডুবিয়ে বসে আছে লাবিবা তানিয়া নাঈম। পাড়ে গুড়ো হওয়া মাটির নুড়ি একটা একটা করে পানিতে ঢিল দিচ্ছে । পানি থেকে পা তুলে পাড়ে রেখে তানিয়ার কোলে মাথা রাখে নাঈম। তানিয়া মুচকি হেসে মাথায় হাত রাখে নাঈমের । আস্তে আস্তে চুল গুলোতে হাত নাড়াতে থাকে । লাবিবা এদের দেখে কিছুক্ষন চুপ চাপ। ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলে
—আমি কি তোদের ভাবি লাগি ? আমার সামনে চুটিয়ে প্রেম করছিস লজ্জা করে না ?
নাঈম হেসে বলে
—এক কাজ কর আমার সমন্ধি ভাইকে বিয়ে করে নে তাহলেই ভাবি হবি আর লজ্জাও পেতে হবে না ।
—তোর বুড়ো সমন্ধিকে আমি বিয়ে করবো কেনো ? তার কি বউ নেই ? তার নাকি বিলাতি বধু আছে ? । আর স্যার সব সময় স্যার ই হয় ।
—তাহলে কাদিস কেনো স্যারের জন্য ?
লাবিবা উঠে গিয়ে দূরে গিয়ে পুকুরের অন্য পাড়ে বসে । এখন সে একটু কাদবে । তার ভীষন কান্না পাচ্ছে । স্যার এসেছে অনেক দিন তাহলে । আমি কিছুই জানলাম না । আমাকে বলে নি কেউ । আমাকে কেনো বলবে ? কেউ ভালুপাসে না?। একটা বার খোজ ও নেয় না । বিলাতি বধু আছে তো । আর কি চাই ?চোখ থেকে টুপটাপ বৃষ্টি পড়তে থাকে ।

নাঈম হাসতে হাসতে শেষ । সেই হাসি মুগ্ধ নয়নে দেখতে দেখতে তানিয়া বলে
—তো ডাক্তার সাহেব আপনি যাবেন কবে ? আপনার কলেজ কি এখনো খুলেনি ?
— বউ রেখে যেতে ইচ্ছে করেনা । কি করবো বলো ?
— হা তাইতো । যাবেন কেনো বলুন ? আপনি বউকে দেখার জন্য কলেজ যাচ্ছেন না । আরেকজন হাজবেন্ড কে দেখবেনা বলে অভিমান করে কলেজ যাচ্ছেনা । ভালো খুব ভালো ।
—আরে রাগো কেন বলোতো ? পরশু খুলবে চলে যাবো।আচ্ছা একটা কথা বুঝলাম না । ভাইয়া ইউকে থাকতো তাকে বিলেতের প্রিন্স বলা সাঝে কিন্তু লাবুকে কেনো বিলাতি বধু বলো ?
—ওয়েট দেখাচ্ছি ।
লাবিবার বাগ টা নিয়ে চেইন খুলে একটা ক্যান বের করে নাঈমের হাতে দেয় ।
—এইটা তো বিলাতি গুড়ো দুধ । বাচ্চারা খায় । তার জন্য বিলাতি বধু?
—হুম তাই। আগে হরলিক্স খেতো চেটে চেটে । এখন হরলিক্স খাওয়া বাদ দিয়ে এইটা খায় চেটে চেটে?।
লাবিবা জোরে জোরে পা ফেলে এসে ক্যানটা কেড়ে নিয়ে বলে —হাসবিনা একদম । গেলাম আমি ।
—আরে লাবিবা শোন, স্যার বলেছে তোকে দুই নাম্বার বউ করবে তাও তুই কাদিস না ।
লাবিবা একবার পেছন দিক তাকিয়ে রাগ দেখিয়ে আবার চলে যায় ।
_____________________
লাবিবার বাসার সামনে এসে দাড়ি দাড় করিয়ে তানিয়াকে ফোন দেয় তানভীর । তানিয়া ফোন ধরেই বলে
— ভাইয়া পৌছে গেছো ? শোন তোমার পুতুল বউ এর সাথে সব মিটমাট করে নিবে । একদম সোজা । তুমি জাস্ট একটু জড়িয়ে ধরে বলবে তুমিই আমার পুতুল বউ । অভিমান সব হুড় হুড় করে দূরে চলে যাবে । আবার রুপ দেখে পাগল হয়ে সবার সামনেই এমন করো না । লাবিপু কিন্তু অনেক সুন্দর হয়ে গেছে ।
তানভীর সিটে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বুঝে নেয় । রুপে তো পাগল হবোই মাই ডিয়ার সিস্টার । তোর ভাবীকে যে এক্ষুনি চাই আমার । কিন্তু পাচ্ছিনা তো ।
এক্ষুনি যে সম্ভব ও না ।
— হ্যা। দেখেছিলাম কলেজে একটু খানি ।
—কিহ ?? আর আমিযে তোমায় এতো এতো পিক দিলাম সেগুলি ?
—পিক দেখা আর সরাসরি দেখা রাতদিন ভেদাভেদ । তোর ভাবি শেষ পর্যন্ত আমাকে তার বাসায় আসতে বাধ্য করলো ।
—তাইতো দেখছি । অল দ্যা বেস্ট।
ফোন রেখে তানভীর গাড়ি থেকে নামে । গেইটে আসতেই দেখে গেইট খুলা । ভিতরে ঢুকে একটা ছেলেকে দেখে বলে —এইযে ভাই , কে তুমি ?
— আমি রতন। চেয়্যারম্যান চাচার সাথে সাথে থাকি।
— ও আচ্ছা । ভাই বাইরে গাড়িতে কয়েকটা প্যাকেট আছে । একটু নিয়ে আসবে প্লিজ ?
রতন মাথা নাড়িয়ে গাড়ির উদ্দেশে যায়। বাসার ভিতরে ঢুকে দেখে ড্রয়িং রুমে কেউ নেই । সরাসরি লাবিবার রুমে চলে যায় । লাবিবা হাতে গুড়ো দুধ নিয়ে চেটে চেটে খাচ্ছিলো । সামনে কাউকে দেখে মাথা তুলে তাকায় লাবিবা। তানভীরকে দেখে চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে যায় । তানভীর পকেটে হাত রেখে চোখ কুচকে তাকিয়ে আছে ।দু ঝুটি করা চুল সাথে বড় বড় চোখ গাল ঠোটে লেগে থাকা গুড়ো দুধে মাখামাখি পুরো একটা বিড়ালের মতো লাগছে । লাবিবা এদিক ওদিক দুবার চোখ ঘুরিয়ে কপালে স্যালুট করার মতো হাত দিয়ে বলে
— আসসালামুয়ালাইকুম স্যার ? কেমন আছেন স্যার ? শরীর ভালোতো স্যার ? কি মনে করে আসলেন স্যার ? গাড়ি নাকি পায়ে হেটে আসলেন স্যার ? কি কি নিয়ে এসেছেন স্যার ? একা একাই এসেছেন স্যার ? বিলাতি বধুকে আনেননি স্যার ? কার কাছে এসেছেন স্যার ? আব্বুর কাছে এসেছেন স্যার ?
একটানা এতোগুলো প্রশ্ন করে উত্তরের অপেক্ষায় তানভীরের দিক তাকিয়ে আছে লাবিবা। তানভীরের ইচ্ছা করছে থাটিয়ে একটা চড় দিতে । পাজি মেয়ে.. বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসেই ছাড়লো । পকেট থেকে হাত বের করে হাত টেনে এনে জিহবা ছোয়ালো গুড়ো দুধে । টেস্ট ভালোই । হাত ছেড়ে দিয়ে বললো
—এখন কি বলবো আম্মুনিকা গুড়ো দুধ খাওয়াকা বাচ্চিকা??
লাবিবা উল্টাপাল্টা মাথা ঝাকিয়ে উড়না নিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় । তানভীর ড্রয়িং রুমে এসে দেখে ইসমাইল চলে এসেছে । সালাম দিয়ে কথা বলতে থাকে । লাবিবা রুম থেকে বেরিয়ে সাবিনার পিছু পিছু থাকে সারাটাক্ষন । অনেক বার তানভীর চেষ্টা করে কিন্তু লাবিবা ছাবিনার আচল ছাড়ে না । খাওয়ার সময় ও ছাড়ে না । লাবিবাকে পাশে ডাকলেও না বুঝার ভান ধরে অন্যদিকে চলে যায় । তানভীরের রাগ হতে থাকে । দুপুরে এসেছে এখন সন্ধ্যা । আর থাকতে পারছে না । এখানে থাকলে নিশ্চিত সব রাগ বেড়িয়ে যাবে । বিদায় নিয়ে উঠি বলে চলে যেতে নিয়ে দু পা এগিয়ে আবার ঘুরে এসে বলে
— কাকি দুষ্টু পুতুল কোথায় ? ওকে বলে যাই চলে যাচ্ছি ।
— রুমেই আছে । ডেকে দিচ্ছি ।
সাবিনা ডাকার আগেই তানভীর দুষ্টু পুতুল দুষ্টু পুতুল বলে ডাকতে ডাকতে রুমে চলে আসে । দরজা আটকিয়ে লাবিবার দিকে আসতে থাকে ।লাবিবা বসে ছিলো উঠে দাড়িয়ে পড়ে ভয়ে । তানভীর এসে জোরে কাধ ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রেগে বলে
—দূরে দূরে থাকা হচ্ছে তাইনা ? এতোবার ডাকছি তবুও । এতোদিন কান্নাকাটি করা হতো আমার কাছে যাওয়ার জন্য আর এখন দুরে দুরে থাকা হচ্ছে না ??
অভিমানি দুটো চোখ নির্ভিগ্নে তাকিয়ে আছে অপর দুটি চোখ পানে ভরা যমুনার পানির মতো টলমল করছে চোখ দুটো ।
—তো কি করবো ?
—একটু কাদবে ? কাদো ।
চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। গাল বেয়ে আর নিচে পড়তে পারে না হাতের তালুতে লুফে নেয় তানভীর ।
– আমি আপনার কাছে আর যেতে চাইবো না ।
– দূরেও তো সরে যাচ্ছো না ।
লাবিবা চোখ তুলে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে তানভীরের দিকে । পরক্ষনেই সরে যেতে নিলে তানভীর বুকের সাথে চেপে ধরে । লাবিবার নিশ্বব্দে কান্না এখন শশ্বব্দে বেরিয়ে আসে । বুকের মাঝে মুখ গুজে কান্নার সাথে সমস্ত কষ্ট অভিমানের জলাঞ্জলি দিতে থাকে । তানভীরের চোখেও আজ পানি । এভাবে সাজাজীবন বুকের মাঝে ধরে রাখতে চায় তার পুতুল বউ টাকে । দু হাতে তানভীরের শার্ট আকড়ে ধরে । তানভীর লাবিবার কপালে অনেকক্ষন ঠোট ছুইয়ে রাখে । ছাবিনার ডাক শুনে জোরে শব্দে একটা চুমু খেয়ে ছেড়ে দেয় ।

To be continue ____

®লাবিবা _____?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here