একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৩০
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
রাতে সাদে একটু হাটার জন্য এসে দেখে তানিয়া রেলিং এর উপর বসে ভিডিও কলে কথা বলছে নাঈমের সাথে । তানভীর পেছন থেকে এসে মাথায় হালকা চড় দিতেই তানিয়া ওমাগো ভুত বলে লাফিয়ে উঠে । তানভীর এমন রিয়েকশন দেখে চোখ কুচকে তাকায় ।তানিয়া বুকে হাত রেখে জোরে নিশ্বাস নিয়ে পড়ে যাওয়া ফোন তুলে নেয় ।
—উফফ ভাইয়া। ভয় পেয়ে গেছিলাম একদম।
—তোর পড়াশুনা নেই ? সাদে এসে প্রেমালাপ করছিস
হ্যালো ইয়াং ম্যান..এভাবে টাইম লস করলে চলবে ? ভালো ডক্টর না হলে আমি কিন্তু আমার বোনকে তোমার হাতে দিবো না ।
—সরি ভাইয়া কাল চলে যাচ্ছি । তারপর তো কথা হবে না বললেই চলে । তো ভাইয়া আমার ফ্রেন্ডের সাথে সব মিট মাট ??
—জানিনা । কথাই বলতে পারলাম আর কই? বাসায় এরকমি হয় ।
—আমার মনে হয় সহজে অভিমান ভাঙবে না । পুতুল বউয়ের ব্যপারটাও ক্লিয়ার করে নিবেন । বড্ড অবুঝ তো পরে আবার ___
— কেনো বলোতো ? আমার পুতুল বউ তো দুষ্টু পুতুল ই।
— কিন্তু ভাইয়া ..
কিন্তু ভাইয়া ভাবি কিন্তু সত্যি পুতুল এর মতো সুন্দর । তোর সাথে অনেক মানাবে ।
তানিয়া নাঈমকে আটকে দিয়ে বলে । নাঈম তো পুরো অবাক হয়ে বলে —তানিয়া কথা ঘুরাচ্ছো কেন ? তুমিতো বললে ভাইয়ার কথায় তুমি বলেছো ভাইয়ার একটা বউ আছে বলতে । সেটা ভেবেই তো লাবিবা বোকার মতো বিশ্বাস করে রাগ দেখায়, কাদে ।
তানিয়া — ইস এতো বার না করলাম তবুও গাধাটা বাশ দিলো আমায় ।তানভীরের দিকে তাকিয়ে দেখে রেগে মেগে একসের হয়ে তাকিয়ে আছে । মনে মনে লা ইলাহা ইল্লাললা পড়ে বললো
— আআসলে ভাইয়া ঐটাতো আমি রেগে গিয়ে বলেছিলাম । লাস্ট ইয়ার যখন তুমি আমাকে টুরে না যেতে দিলে । সরি?
—পেত্নি শাকচুন্নি তোর ট্যুর আমি বের করছি দারা ।
পা থেকে স্যন্ডেল খুলে দেয় এক দৌড়ানি। তানিয়া ও মাগো ভাইগো বলে দৌড়।
ক্লাসে আসতেই আবার মেয়েদের চোখ দিয়ে হুমড়ি খাওয়া । আজ হুয়াইট শার্টের সাথে ব্লু কোর্ট ব্লু টাই ব্লু পেন্ট ব্রাউন বুট এ দারুন হ্যান্ডসাম লাগছে । ক্লাসে একবার চোখ বুলিয়ে দেখে লাবিবা মিসিং । তার মানে এখনো বাসায় আছে । তানভীর বলতে থাকে
— হ্যালো এভরিওয়ান । হাউ আর ইউ ? আজ আমি কিছু ব্যসিক আলোচনা করবো স্ট্যাটিসটিক সম্পর্কে __________________
আজো একি ব্যপার হলো সব মেয়েরা হা করে স্যারকে চোখ দিয়ে গিলছে আর ছেলেরা মেয়েদের দিকে অসহায় চেহারার লুক দিচ্ছে । পড়ানো শেষে মার্কার পকেটে ঢুকানোর সময় জবা সাহস করে দাড়িয়ে বলে
— স্যার একটা প্রশ্ন ছিলো ।
— ক্লাস টাইম ইজ ওভার । নেক্সট ক্লাসে কোয়াশ্চনটা করবে ।
তানভীর বেরিয়ে যেতেই মিলি শারমিন জবা তিনজন তিনজনের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন । তারপর ক্লাস থেকে বেরিয়ে ক্যম্পাসের উদ্দ্যেশে বের হয় । ঘাসের উপর বসে মন খারাপ করে । একসাথেই বলে উঠে —আজো জানা হলো না ।
কোথা থেকে ছাত্রদলের নেতা বাবু ভাই হাজির ।
— এইযে রানী এলিজাবেথের সখীগন এলিজা কোথায় ?
তিনজন ই আমতা আমতা করতে থাকে ভয় পেয়ে ।
মনে মনে বাবুর বাচ্চার পনের গোষ্টী উদ্দার করতে থাকে ।
শারমিন —ইয়ে মানে ভাইয়া ও তো বাসায় গিয়েছে ।
— ও আচ্ছা । তিন সখী মিলে কার কথা ভাবো ? ইয়াং প্রিন্সিপালের কথা ? মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে দেখি।
মিলি চটপট করে বললো
– আপনার ক্রাস গুলোও স্যারকে নিয়ে ভাবছে । আর আপনি কিছুই করছেন না অবাক আমি ভাইয়া ।
পেছন থেকে মামুন এসে বলে
—অবাক হলেও সত্যি আমার ক্রাস এখন প্রিন্সিপাল কে দেখে ফিদা ।এবার সত্যিই কিছু একটা করতে হয়।
মিলি ঢুক গিলে । এই মামুন আর বাবু ছাত্রদলের লিডার। অনেক মেয়েদের ক্রাস। তাদের দারা সব সম্ভব । সুমনের সাথে রিলেশন থাকা কালীন হটাৎ করেই একদিন বাইক থেকে নেমে সামনে দাড়িয়ে বলে —মিলি তোমাকে ভাল্লাগছে । আজ থেকে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড।
বললেই হয় নাকি ? মাথা মস্তক ঘুরে যায় । একটা রিলেশন থাকা কালীন এর সাথে কিভাবে রিলেশন সম্ভব ? সুমন পাগলা টা তো শহীদ খাবো । আগে পিছে না তাকিয়ে দৌড় দিয়ে পালাইছে । সেই থেকে সামনে পড়ে না আর । এখন সুমনের সাথে ব্রেকাপ হয়ে গেছে। মামুনের সাথে মন্দ হয়না ।
শারমিন চট করে বলে – ভাইয়া আমরা এখন একটু গ্রুপ স্টার্ডি করবো । করি ??
দুজনেই চলে যায় ।
তানভীর লাবিবার ফোনে বার বার ফোন দিচ্ছে । লাবিবা আননোন নাম্বার দেখে তুলছেনা । গালে হাত দিয়ে নাম্বারের দিক তাকিয়ে আছে । আব্বু না করে দিয়েছে খবরদার রং নাম্বারে কল এলে ধরবে না । তুলবে কি তুলবেনা কনফিউশনে ভুগছে । ছেসরা না হলে এতো বার কেউ ফোন দেয় নাকি । এই ব্যটাকে আচ্ছামতো বকে দিতে হবে । কোন মাফ নেই । ধরলাম । রেডি 3 2 1
— এই কে রে বারবার ফোন দিস ? ধরছিনা দেখেও কি বুঝছিস না তোর ফোন ধরবোনা আমি ? মুলার জুস খাইয়ে আমার ডিস্টাব নষ্ট করস। তোর ঘরে কি মা বোন নাই ? শালা ছেসরা ঘরের ছেসরা মেয়ে মানুষের কন্ঠ শুনলেই বার বার ফোন দিয়ে ডিস্টাব নষ্ট করতে মন চায় তাই না ? তোর বাপ মা এই শিক্ষা __
— দুষ্টু পুতুল?(চিল্লিয়ে)
লাবিবার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলেও কেচ করে ফেলে কানে ধরে বলে
—স্যা স্যা স্যার স্যারর..।
—ফাস্ট অফ অল বার বার কেন ফোন দিতে হচ্ছে আমাকে ? ধরছোনা কেনো ? আমি মুলার জুস খাই তাইনা ??আমার ঘরে মা ও আছে বোন ও আছে বউ ও আছে । আজাইরা কথা বলতে এক্সপার্ট তাইনা ? মেয়ে কন্ঠ শুনে ফোন দিয়েছি আমি ? তুমি কি কথা বলেছিলে এর আগে ফোন ধরে ?বাপ মা তুলো । বেয়াদপ মেয়ে কথাকার ।
–সরি স্যার । আর হবে না ।
—এখনো বাসায় কি করছো ? থার্ড ইয়ারেও কি ইমপ্রুভ দিতে চাও ? আজি আসবে । কাকাকে সাথে নিয়ে আসবে । কাকা না আসলে বলো আমি গিয়ে নিয়ে আসছি ।
—আব্বুই নিয়ে যাবে । আপনি কেনো আসবেন? লাগবেনা আপনার আসা ।
ফোনটা কেটে দেয় লাবিবা । ভীষন মন খারাপ হয়ে গেছে ।মা বলেছে বোন বলেছে বউয়ের কথা কেনো বলতে গেলো ? বলবেই তো । বিলাতি বধু বলে কথা । পুতুলের মতো বউ । আলু ভর্তা হুহহহ?।
বিকালেই ইসমাইলকে নিয়ে হোস্টেলে চলে আসে লাবিবা । হোস্টেলে এলে আর মন খারাপ থাকে না । শারমিনের সাথে গল্প করলেই মন ভালো হয়ে যায় ।
পরদিন সকালে ইয়েলো কালার একটা গাউন পড়ে পিংক কালার হিযআপ বেধে নেয় । উড়না বরাবরের জন্য একটা উটকো ঝামেলা মনে হয় । আগেও নেয় নি এখনো নিতে চায় না । বড় মাঝারি করে হিযআপ পড়ে যেন উড়না না নিতে হয় । ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে ।
ক্লাসে তানভীর ঢুকতেই চোখ পড়ে হলুদ পুতুলটার উপর । মনে পড়ে যায় যেদিন প্রথম এই পুতুলটাকে দেখেছিলো সেদিন হলুদ একটা জামাই পড়া ছিলো । কিন্তু সেটা ছিলো হাটু অব্দি আর এটা গোড়ালি অব্দি । সেদিন দু পাশে দুটো ঝুটি ছিলো । আর আজ হিযআপ পড়া । সেদিন ছিলো কিশোরী কন্যা আর আজ যুবতী কন্যা । আজকের সৌন্দর্যের তুলনায় সেদিনের সৌন্দর্য কিছুই নয় ।
স্যার এইভাবে দাড়িয়ে পড়ায় সবাই অবাক । যে স্যার হন হন করে ঢুকে ইংলিশে লেকচার দিতে থাকে একের পর এক । সেই স্যার কিনা দরজাতেই দাড়িয়ে তাও আবার চোখ আটকে গিয়েছে লাবিবার উপরে । সবাই মনে মনে জলে যায় । তাদের প্রতি স্যারের চোখ পড়লো না আর লাবিবা একটু সুন্দরী জন্য ই দেখেই দাড়িয়ে গেলো । ছাত্ররা হালকা কাশতেই ধ্যান ভাঙে তানভীরের । এগিয়ে এসে ডেস্কের কাছে দাড়ায় । স্টুডেন্টরা এখনো বসেনি । তানভীরের চোখ এখনো লাবিবার দিকে । লাবিবা আশেপাশে তাকি তুকি করছে। জবার গুতো খেয়ে শারমিন বলে উঠে
— স্যার ও আমাদের ফ্রেন্ড। আপনার ক্লাসে আজি প্রথম । এতোদিন বাসায় ছিলো তাই দেখেন নি ।
তানভীর হালকা কেশে উঠে । এটা রিতীমতো লজ্জা দেওয়া ছাড়া কিছুই নয় । নিজের বোকামি করা টা সবাই লক্ষ্য করেছে তাহলে । পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার জন্য ঠিক হয়ে বলে
— ওহ আই সি । হুয়াট ইজ ইউর নেইম ? (লাবিবাকে উদ্দ্যেশ্য করে )
— স্যার , মাই নেইম ইজ লাবিবা তানহা এ..লিজা
ডটার অফ ইসমাইল সাবিনা..
তানভীরের নজর এবার লাবিবার মুখের দিকে না হয়ে কোমড়ের দিকে ছিলো । মেয়েটা আজো কোমড় বাকিয়ে বাকিয়ে নাম বলে । মনে মনে হাসে তানভীর ।
— গুড । সিট ডাউন ।
______________
ক্লাস শেষে একটা বাড়তি ক্লাস করে ক্যাম্পাসে এসেছে লাবিবা জবা মিলি । শারমিন বাড়তি ক্লাস না করেই চলে গেছে । এরিমধ্যে লাইব্রেরী মামা এসে সম্মানের সহিত বলে রানী এলিজাবেথ আপনাকে অডিটরিয়মে স্যার ডাকছে । বলেই ফুড়ুৎ করে চলে যায় । ভার্সিটির প্রায় সবাই এলিজাবেথ বলে ডাকে । রানী এলিজাবেথ ..ভালোই লাগে মন্দ না । কিন্তু কোন স্যার ডাকে ? অডিটরিয়মে কেনো ? সামনে অনুষ্টান আছে তার জন্য কি ? ডান্স নিয়ে কিছু বলবে ? যাওয়া যাক দেখি । জবা মিলি চলে যায় তাদের বাসায় । লাবিবা অডিটরিয়মের ভিতরে ঢুকে আস্তে আস্তে অন্ধকারে পা ফেলতে থাকে। সুইচ বোর্ডের দিকে আলো জালানোর জন্য এগুতে কানে আসে সফটলি মিউজিক । আস্তে আস্তে টোন বাড়তে থাকে । বাইরের আলো কিছুটা উপর থেকে ভিতরে পড়েছে । সেই আলোয় মিউজিক যেদিক থেকে এসেছে সে দিকে এগুতে থাকে । সামনেই হটাৎ করে আলো জেলে ওঠে । আলোর নিচে আর কেউ নয় তানভীর । হাতে একটা ইলেকট্রিক গিটার । লাবিবা ঠোটের কোনে অজান্তেই হাসি ফুটে ওঠে । একটু একটু করে এগুতে থাকে । তানভীর মিউজিক চেঞ্জ করে গিটারে গান ধরে
??তুমি আর তো কারো নও শুধু আমার
যত দূরে সরে যাও রবে আমার
স্তব্ধ সময় টাকে ধরে রেখে
স্মৃতির পাতায় শুধু তুমি আমার
কেনো আজ এতো একা আমি
আলো হয়ে দূরে তুমি
আলো আলো আমি কখনো খুজে পাবো না
চাদের আলো তুমি কখনো আমার হবে না ।।
হবেনা….হবেনা…হবেনা…।
রোমন্থন করি ফেলে আসা, দৃশ্যপট সপ্নে আকাঁ।
হয়তো ভবিষ্যতের আড়ালে
ঘাসের চাদরে শুয়ে একা
আকাশের পানে চেয়ে জেগে থাকা …….
…………………………………………???
To be continue ____
®লাবিবা___?