একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৩১
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
হাত ধরে একটানে লাবিবাকে কোলে বসিয়ে নেয় । লাবিবা ওমাগো বলে চেচায় । তানভীর লাবিবার মুখের দিকে ভ্রু উচিয়ে তাকায় ।
—চেচাও কেনো ? লাবিবা ঢুক গিলে বলে —এভাবে কেউ টান দেয় নাকি ? আমার যদি আত্মা উড়ে যেতো তখন তো আমি মরেই যেতাম। আমার এতো মরার শখ নেই তারাতারি। আমার এখনো বিয়ে হয় নাই ?।
তানভীরের ভ্রু টা আরেকটু কুচকে যায় ।
—মরে যাওয়ার সাথে বিয়ের সম্পর্ক কি ?
— আছে তো । এখনি মরবো নাকি ! বিয়ে হবে, বাচ্চা হবে, নাতির মুখ দেখবো , নাতির ঘরের পুতি-পুতির ঘরের হুতি – হুতির ঘরের মুতি দেখবো তবেই না মরবো ?।
—পুতি পর্যন্ত শুনেছি এই হুতি আর মুতির কথা তো কখনো শুনি নি । হুতি কোন শব্দ নেই বাট মুতি আছে আই মিন প্রসাব…??
—এএ মা ছিহ ! থু থু! আছে আছে । আপনি শুনবেনি না ।
—আপনি তো সব জান্তা । সব সময় মুডের তেরোটা বাজায় ।
একরাশ বিরক্তি প্রকাশ করে সামনের দিকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে । লাবিবা আবার আও করে উঠে । সেদিকে মন না দিয়ে গিটার টা লাবিবার কোলের উপর তুলে দু হাতে ধরে । এখন লাবিবা তানভীরের দু বাহুতে আবদ্ধ। কুচকে গিয়ে তানভীরের দিক ই চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে । তানভীর মুচকি হাসতেই সামনের দিকে ফিরে গিটারের দিকে তাকায় । লাবিবার কাধে থুতনি রেখে বলে
—দুষ্টু পুতুল ..কেমন লাগলো আমার গান ? তুমি তো গিটার বাজানো শিখতে চেয়েছিলে । হাত দাও গিটারে ..
তানভীর নিজেই হাত দুটো ধরে গিটারের উপর রাখে । নিজের আঙুলের মাঝে লাবিবার আঙুল ঢুকিয়ে আলতো করে ধরে রাখে ।
— তোমার হাত আঙুল ঠিক আগের মতোই সফট দুষ্টু পুতুল । একটুও হার্ড হয়নি ।
আঙুল বের করে গিটারের তারে হাত রাখে । একেকটা স্টেপ শেখাতে থাকে এক এক করে । লাবিবা একটু একটু করে তারে টান লাগাতে থাকে । মনে মনে খুব খুশি । এই গিটার টাই একদিন শিখতে চেয়েছিলো। দেয়ালে ঝুলানো ছিলো এটা । স্যারের প্রিয় গিটার । এতো বছর পর ও তিনি মনে রেখেছেন । আজ শেখানোর জন্যও এনেছেন । লাবিবার হাত ছেড়ে দিয়েছে তানভীর লাবিবা একাই বাজানোর ট্রাই করছে । পেটের দিকে হাত দুটে দিয়ে নিজের সাথে আষ্টে পৃষ্টে বেধে ফেলে তানভীর । লাবিবা সামান্য কেপে উঠে । ধীরে ধীরে ঘাড়ে মুখ গুজতে থাকে । হিযআপ ভেদ করে গরম নিশ্বাস গুলো ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে। শরীরের পশম গুলো কাটা দিয়ে উঠে । চোখ দুটো শক্ত করে বন্ধ করে নেয় । এ কেমন অনুভূতি?গিটারে হাত অনেক আগেই থেমে গেছে । মুখ দিয়ে কথা বের হতে চাচ্ছে না । তবুও অনেক কষ্টে চেচিয়ে বলেই ফেলে — স্যার আমি আপনার দু নাম্বার বউ হবো না।
বলেই এক লাফে কোল থেকে নেমে দাড়ায় । তানভীর অবাক হয়ে তাকায় । ওকে কখন বললাম দুই নাম্বার বউ হতে ? কখন কি বলতে হয় এখনো কি বুঝে না দুষ্টু পুতুল ..। মুডের তেরটা বাজাতে এক পা এগিয়ে ।
— তাহলে কতো নাম্বার বউ হতে চাও ? তিন নাম্বার নাকি চার ?
—কিহহ স্যার আপনি এতো গুলা বিয়ে করবেন ? আপনার তো চরিত্রে সমস্যা নষ্ট দেখি ।
—এতো গুলা কোথায় ? মাত্র চারটা বিয়ে করতে চাচ্ছি । ইসলাম অনুমোদিতো । আর থাকলো চরিত্র ..সেটা তো অবশ্যই সমস্যা । নয়তো কি ছাত্রীর প্রেমে পড়ে বিয়ে করতে চাই !!
— স্যার আপনার ঐ বিলাতি বধুও আপনার ছাত্রী ছিলো?
—- হা । ও ছাত্রী । তুমিও ছাত্রী । আরো যে দুটো হবে ওরাও ছাত্রী ।তোমার কোন সমস্যা নষ্ট হবে ? তবে তুমি যদি আমাকে আর বিয়ে করতে না করো আমি কিন্তু আর করবোনা । যতোই হোক তুমি আমার ছাত্রী তোমার কথা তো ফেলতে পারি না ।
এবার লাবিবা নিশ্চিত কাদবে । চোখে নদীর ঢেউ এর মতো টলমল করছে জল । পরবে পরবে করে দু ফোটা পরেই গেলো । তানভীর যেনো এটাই চাইছিলো । দুষ্টু পুতুলের কান্নাটা শুধু এতো দিন ফিল করেছে কিন্তু কান্নারতো কিউট মুখটা দেখতে পারেনি । আজ তার চোখের এই তৃষ্ণা মিটবে । কিন্তু তানভীরকে হতাশ করে কিছু না বলেই ব্যাগ নিয়ে হনহনিয়ে বেড়িয়ে পড়ে লাবিবা । তানভীর পেছন থেকে দুষ্টু পুতুল দুষ্টু পুতুল বলে অনেকক্ষন ডাকলেও শুনে না ।
__________________
ফুচকার দোকানের ইয়া বড়ো ছাতার নিচে বসে আছে লাবিবা নাঈম তানিয়া । লাবিবা শুধু নাঈমকেই আসতে বলেছিলো কিন্তু তানিয়াটাও চলে আসছে । নিজে তো কিছু বলবেই না । ভাইয়ের আদেশ লাবিবাকে কিছু বলা যাবেনা । টক ভর্তি ফুচকা মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে বললো
—কিরে লাবু ? তোদের জালায় কি আমি ঠিকমতো পড়াশুনা করতে পারবো না ? কলেজ খুলেছে অথচো যেতে পারছি না । একজন বলছে যাও যাও আবার যেতে নিলে যেতে দিচ্ছে না । আমি রাতে বাস ধরবো রেড়ি হয়ে উঠতে গেছি তখন আরেকজন ফোন করে বলে যাবি না । কাল দেখা কর । আমার কলেজে আয় । আরেকদিকে আরেকজন সাফ সাফ বলে দিয়েছে বড় ডাক্তার না হলে নাকি তার বোন বিয়ে দিবে না । এতো জ্বালা কেন আমার ? আর ভাল্লাগেনা ।
তানিয়া ভেংচি কেটে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় ।
লাবিবা চিন্তিত মুখে টকের বাটিতে চামচ ঘুরাতে ঘুরাতে বলে
— স্যারের বিলাতি বধু দেখতে কেমন রে নাঈম ? কিসে পড়ে ? কেমন ঘরের মেয়ে ? লেখাপড়ায় কেমন ?
উত্তরের আশায় নাঈমের দিকে তাকিয়ে । নাঈম ও লাবিবার দিকে তাকিয়ে । তানিয়া চুপ । এই প্রশ্ন গুলো আজ তার জন্য উঠে আসছে । লাবিবা এগুলো প্রশ্ন করছে তানভীর জানতে পারলে আর তানিয়ার রক্ষে নেই। তাই মুখে কুলুপ লাগিয়ে দিয়েছে । নাঈমকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে লাবিবা আবারো বলে —তানিয়া কিছু বলবে না । তাই তোকে জিজ্জাসা করছি । তুই তো দেখেছিস তাকে । আমার থেকেও কি সুন্দরী ? নাকি আমি তার কোন দিক দিয়েই লেভেলে যেতে পারি না ? বলনা দোস্ত। বল ।
নাঈম বুঝতে পারে লাবিবার মন খারাপ । শুধু মন খারাপ হলেই তো চলে না ..খুব মন খারাপ হতে হবে । শালার বউ তোর জন্যই তো এই তানপুরাটার সাথে প্রেম হয়ছে । এখন সারাক্ষন মিউজিক বাজিয়ে বাজিয়ে জীবনটা ত্যানা ত্যানা বানিয়ে দিতেছে। প্যারাময় লাইফ । মনে মনে এক পৈশাচিক আনন্দ পায় নাঈম ।
—দোস্ত..স্যারের বিলাতি বধু ..বিলাতি দুধের মতোই ফ্রেশ বুঝলি !! কোয়েল পাখির ডিমের মতো গোল্লা গোল্লা চোখ । বাশের কোরল চিনিস ? যেটা চিংড়ি মাছ দিয়ে ভাজি খাইতে হেব্বি টেস্টি । তুই কোন দিন খাস নাই । আমি খাইছি । এগুলা উপজাতিরা খায় ।আমার এক উপজাতি বন্ধু আছে ও খাওয়াইছিলো বাড়ি থেকে এনে আমারে । ঐরকম নাক বুঝলি!! আধপাকা টমেটো আছে না ? মানে পাকবো পাকবো ভাব কিন্তু পুরোপুরি পাকা না ঐরকম দুইটা গাল। কমলার থেকে কোয়া আলাদা করলে যেরকম কোয়া দেখতে হয়না …ঐটার উপর যদি চকলেট ঢেলে দিস যেরকম দেখতে সেই রকম ঠোট । গোল ও না আবার লম্বাও না এরোকম লাউ দেখতে যেমন তেমনি গাল । গায়ের রং মুলার মতো সাদাও না আবার শিমলা আলুর মতো ___
তানিয়া দেয় এক ধাক্কা । বিশাল তেজ নিয়ে বলে
—ঐ তুমি আমার ভাবীর বর্ননা দিচ্ছো নাকি খাবারের স্টেটমেন্ট দিচ্ছো ? তুমি ডাক্তারি পড়ছো নাকি খাবার নিয়ে রিসার্স করছো বলোতো ? সত্যি করে বলবা ।
নাঈম উঠে দাড়ায় । এই হয়েছে এক জালা । প্রত্যেক কথায় ভুল ধরা আর প্রেসার দেওয়া ।
—জান ডাক্তারি পড়তে গিলে এইসব খাবার নিয়ে রিসার্স করতে হয় । তুমি ওসব বুঝবেনা । পড়ছ তো আর্টস নিয়ে ।
—কি বললে তুমি ??
লাবিবা দাড়িয়ে পড়ে । বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে বলে
—তোদের থেকে যে সঠিক তথ্য টা পাবো না ঐটা আমার আগেই বুঝা উচিত ছিলো । থাক তোরা গেলাম আমি ।
—ঐ ফুচকার টাকাটা দিয়ে যা ।
ব্যাগ থেকে টাকা বের করে হাতে দিয়ে চলে আসে ।
_________________
বিকাল বেলা হোস্টেল থেকে বের হয়ে সামনের রাস্তাতেই হাটছে শারমিন লাবিবা । হালকা শীতে চাদর গায়ে দিয়ে মুখে চকলেট রেখে চুটকাতে চুটকাতে হাটছে । রাস্তার ওপাশেই কলেজ পুকুর। রাস্তা পার হওয়ার সময় সামনে দুটো বাইক এসে থামে । সাথে সাথে লাবিবা শারমিনের কলিজাও কেপে উঠে । একটাতে বাবু আর পেছনে তার এক চেলা আরেকটাতে মামুন পেছনে তার দুই চেলা । এদের দেখলেই ভয় লাগে লাবিবার বিশেষ করে বাবুকে দেখলে । বাবু রোদচশমা মথায় তুলে মানের দিকে ঝুকে বলে –কিগো কিউটি স্মার্ট গার্ল ..রানী এলিজাবেথ ..তোমার এই বাবু কিং কে ছেড়ে কই গিয়ে থাকো বলোতো তুমি ? তোমারেযে আমি নিশি দিন খুজি ।
—- কানা মানুষের সারাজীবন হাতিয়ে হাতিয়ে চলতেই যাবো । খুইজা আর পাবেন না ।
—উফফফ এই তেজ টাই তো আমাকে ঘায়েল করে । তোমারেই তো আমার চাই রানী । তোমার এই তেজ যেদিন এই রাজা ভাঙ্গাইতে পারবো সেইদিন রাজা শান্ত হবো।
—-পাগলা কুকুর শান্ত হয়লেই কি না হয়লেই কি? ঘেউ ঘেউ করলে লাঠি দিয়ে দৌড়ানি দিতে হয় ।
—উফফফ আবারো সেই তেজ । শোন ডারলিং হ্যান্ডসাম প্রিন্সিপাল রে দেইখা আবার টাস্কি খাইও না । রেজাল্ট ভালো হবে না । তোমার রাজা কিন্তু আমিই হমু । উম্মাহ..ফ্লাইং কিস ই দিলাম রাস্তার মধ্যে বুঝছো তো । রসগোল্লার রস সবার সামনে খাওয়া যায় না । চলি রানী ।
বাইক দুটো চলে যেতেই শারমিন বুকের মধ্যে থু থু দিয়ে বলে —ঐ বেটা বাবু তোর ক্ষতি করেই ছাড়বো দেখিস । একটা বয় ফ্রেন্ড বানাইতে কতো বললাম শুনলিনাতো । বয়ফ্রেন্ড থাকলে আর এই সমস্যা হতো না। লাবিবা চাদর জড়িয়ে পুকুরের দিকে হাটা ধরে।
—- এরা গোন্ডা । বিএফ থাকলে বিএফকেই মারতো । এদের চোখে পড়লেই হলো আর রক্ষে নেই । কোন মতে অনার্সটা শেষ করি । এই এলাকায় আর পা রাখবো না ।
—মিলির ব্যপারটা দেখ । সুমন ভাই যেই মামুন ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললো তখনি মামুন ভাই মেনে গেলো । ছোট ভাইয়ের জিএফ মেনে নিলো । তোর বেলায় কেনো অন্যথায় হবে ?
—কারন মিলি আর আমার মাঝে অনেক ভেদাভেদ । শারমিন দাড়িয়ে পড়লো । লাবিবার দিকে তাকিয়ে থাকলো এক মিনিটের মতো । তারপর হাটা দিলো । লাবিবাও এগুতে এগুতে বললো
—বাবু আর মামুনের মাঝে আকাশ পাতাল তফাত । মামুন ভাইয়ের একটা পরিবার আছে সুন্দর । সেই পরিবারের আদর্শে থাকে সে । আর বাবু একটা মেয়েবাজ । ডেইলি রাতে মেয়ে না হলে তার চলে না। তুই রিলেশন করতে চা তোর সাথেও করে রাত কাটিয়ে ছেড়ে দিবে । সবাই তাকে দেখেই পটে যায় । কিন্তু আমার তার দিকে ইন্টারেস্ট নেই দেখে আমার সাথে লেগেছে । বাজে দৃষ্টি দেয় সব সময় । জানস দুই তিন দিন আমাকে টাচ করার চেষ্টাও করেছে । তুই সাথে ছিলি তাই করতে পারেনি ।
—আমার সামনেই টাচ করতে চায় অথচ আমি কিছুই বুঝতে পারি না । অবাক খাইছি । এই বাবু তোর পিছু লাগলো কি করে রে ??
To be continue ____
®লাবিবা ____?