রিস্টার্ট,পার্ট-০১,০২

0
2005

#রিস্টার্ট,পার্ট-০১,০২
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_১

রাত তিনটা। কাল সকালে নাদিয়ার স্কুলের ক্লাস ও আছে। কিন্তু ও এখনো জেগে আছে, বিছানার এক পাশে মুখ করে , আর ওর চোখের জলে বালিশ ভিজছে। ওর জীবনটা এমন কেন হলো? ওর স্বামী কেন ওর দিকে তাকিয়ে ও দেখে না?

ওদের বিয়ের এখন সাত মাস চলছে। কিন্তু এই সাত মাসে জাহিদ ওর সাথে ঠিক করে একটু কথাও বলেনি। জাহিদ কখনো ওর হাতটাও ধরে নি। এই তো এখন শুয়ে আছে, কিন্তু বিছানার অন্য পাশে। নাদিয়া কাঁদছে, জাহিদ ঘুমাচ্ছে। কাল আবার সকাল হবে। আবার ওদের দেখা হবে। একই ছাঁদের নীচে দুই আগন্তুক। একটা বাস স্টেশনেও যদি দুই অচেনা মানুষের দেখা হতে থাকে, ওরা কোনো না কোনো ভাবে পরিচিত হয়ে যায়। কিন্তু এই দুজন স্বামী স্ত্রী নামধারী প্রাণীর ক্ষেত্রে তা নয়।

প্রতিদিন সকালে উঠে নাদিয়া নাস্তা বানায়। ওরা নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ে। নাদিয়া রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক। ও এখানে কিছুদিনের জন্যই আছে। ওর ইচ্ছা অন্য একটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে শিক্ষকতা করার, তার জন্য ওর এইখানে অভিজ্ঞতা অর্জন। ও চাইলেই নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাই করতে পারত তবে ওর স্কুলেই শিক্ষকতা করার ইচ্ছা ছিল। আর এদিকে জাহিদ, নাদিয়া শুধু এটুকুই জানে ওর ব্যাপারে যে ও খুব মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিল। ওর মা বাবা এখন আর কেউই বেঁচে নেই। ওর বড় দুই ভাই স্ত্রী নিয়ে আলাদা থাকে। জাহিদ একজন আইবিএ গ্র্যাজুয়েট, আর বিদেশ থেকে এমবিএ। এখন দেশে একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির বড় পদে আছে। এটুকু বোধহয় ওকে অল্প চেনা বাহিরের লোকেরাও জানে।

নাদিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে ওর স্বামী কে দেখছে আর চায়ে চুমুক দিচ্ছে। মানুষটা ও একই কাজ করছে। তবে সে পত্রিকা দেখছে। জাহিদের গালের দাঁড়ি গুলো এত ছোট না, আবার এত বড়ও না। প্রতিদিন ট্রিম করে। ওর চুল গুলোও একই। অত্যন্ত সুশীল ওর চেহারা। তবে এই চেহারায় কিছু একটার যেন অভাব। হাসি। কিন্তু জাহিদের চোখগুলো খুব সুন্দর। চশমা ভেদ করে যতদূর দেখা যায় আরকি। তবে এই সুন্দর চোখ জোড়া ওর চোখে চোখ কখনো মেলায়নি। আর তাই ওর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নাদিয়া এখন পর্যন্ত অনেক কিছুই করেছে। যেমন এই নাস্তা। ও একবার এই নাস্তা বানানো ও বন্ধ করে দিয়েছিল। নাস্তা না বানিয়ে কাজে চলে যেত। কিন্তু তা নিয়ে লোকটা ওকে কিছুই বলেনি। আরেকবার নাস্তা না বানিয়ে বসে ছিল। জাহিদ নিজে ওকে নাস্তা বানিয়ে খাইয়েছে। কিন্তু কিছুই বলেনি। ওর উচিত ছিল ওকে জিজ্ঞেস করা, আপনি কী রাগ করেছেন? কিন্তু ওর কিছুই যায় আসে না। এই তো, নাদিয়া যে ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে ওর তো উচিত ওকে কিছু জিজ্ঞেস করা। অন্তত পক্ষে ওর দিকে একবার তাকানো। নাদিয়া রাগ করে চায়ের কাপ টা জোরে রেখেই বেরিয়ে গেল। জাহিদ হালকা চোখ ফিরিয়ে তাকালো। নাদিয়া দরজা জোরে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেল। জাহিদ বুঝতে পারল কিছু একটা হয়েছে। এরপর ওর চা শেষ করে চায়ের কাপ আর বাকি বাসন গুলো ধুয়ে বেরিয়ে পড়ল।

স্কুলের লাঞ্চ টাইমে নাদিয়া বসে আছে। স্কুল থেকে খাবার দেওয়া হলেও সব টিচাররা বাসা থেকে কিছু না কিছু আনেন। কারো স্ত্রী বানিয়ে দেন, কারো স্বামী কিছু উপহার দেন। তবে শুধু নাদিয়া ই খালি হাতে থাকে। ওর সকালে উঠে তৈরী হওয়ার পর এতো এনার্জি থাকে না কিছু এক্সট্রা আনার। ও শুধুই ওর সিনিয়রদের দেখছে। কেউ এনেছে কাঠবাদাম, কেউ এনেছে চকলেট, খাবারের পর ডেজার্টের জন্য। পাশে ওর বন্ধু আফরা। সে এনেছে আম।

– এই, নে না।
– কী?
– আম। সাব্বির এনেছে। আমার স্পেশালি এই আম ই পছন্দ তো, তাই।
– কিন্তু একটু আগেই তো লাঞ্চ করলাম।
– তো কি হয়েছে?
– খাবার খাওয়ার পরপর ই ফল খাওয়া উচিত না। হজমে সমস্যা হয়। আরেকটু পর খা।

আফরা মুখ বাঁকা করে বাটি টা বন্ধ করে দিল। পাশ থেকে সুলোচনা ম্যাডাম বললেন, “ও না খেলে আমরা খাচ্ছি। ওর চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে কাল রাতে ঘুম হয় নি। কী? ইজেন্ট ইট? বিয়ের পর এমন হয়। কিন্তু তোমার বিয়ের সাত মাস ডার্লিং! একটু তো পুরনো হয়েই গেছে। ” কথাটি শুনে নাদিয়া হালকা করে হাসল। তবে হাসিটা ওর কপালের উপর পাচ্ছে। বাবার কথামতো অ্যারেঞ্জ মারেজ টা না করলেই পারতো। এত তাড়া কোথায় ছিল? আরেকটু সময় নিয়ে বুঝে শুনে কাউকে করতো। কী দরকার ছিল বিয়ের? ওর চেহারা দেখে ফাহিমা ম্যাডাম বলল,

– মনে হচ্ছে কাল অন্য কারণে জেগেছিলে।
– জ্বী!
– রেগেছিলে? ঝামেলা হয়েছিল! তাই তো ঘুমাও নি। আর কান্না ও করেছ বোধহয়। আইস আর সোলেন!
– না কান্না করিনি। এমনি রাগ করেছিলাম।

নাদিয়া নীচের দিকে তাকিয়ে আছে। বাকি সবাই ফাহিমা ম্যাডাম কে বকছে। তিনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আফরা দেখছে, সত্যি তো চোখগুলো ফোলা !

– সে রাগ ও ভাঙায়নি। এখন পর্যন্ত কল ও করেনি। অ্যাম আই রাইট?

আফরা তাড়াতাড়ি করে নাদিয়ার পিঠে হাত বুলোতে লাগল। আফরা ভয়ে আছে, নাদিয়া যদি ওনাকে কিছু শুনিয়ে দেয়। নাদিয়া কিছুই বলছে না। সে তো বুঝবেই না ও যে রাগ করেছে। আর নাদিয়ার নাম্বারটা ও বোধহয় নেই ওর কাছে। ডিলিট ই করে দিয়েছে হয়তো।

– জানো, আমার উনিও এমন করেছিলেন বিয়ের পর। রাগ ও ভাঙায়নি আর খোঁজ ও নেয়নি। এমন শিক্ষা দিয়েছি না।
– কী করেছিলেন?

নাদিয়া খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল। সবাই খানিকটা অবাক। কারণ নাদিয়া এখানে চাকরি করছে ঠিকই, কিন্তু কখনো এ ধরণের আলোচনায় আগ্রহ নেয়নি।

– খাবার দেইনি।
– মানে?
– পুরুষ মানুষের মনের রাস্তা যায় তাদের পেট দিয়ে। আর রাতের বেলা তারা না খেয়ে থাকতেই পারে না। তাই রাতের বেলা ও আসার আগেই খেয়ে শুয়ে পড়তাম, আর কিছুই রাখতাম না ওর জন্য। সকাল বেলা বা দিনের বেলা যেকোনো জায়গায় যেতে পারবে, কিন্তু রাতের বেলা একটু আনএভেইলেবল। এক রাত উপোস করেই স্যরি বলেছে।
– কেন?
– ছেলেরা ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না। আসলে ছেলেরা কিছুই সহ্য করতে পারে না। আবার অনেক কিছুই পারে। যা তারা বাইরে পারে, তা তো অবশ্যই বাড়িতে এসে পারে না। ঢং আরকি!
– এমনটা করা কী উচিত?

সুলোচনা ম্যাডাম বললেন,
– অফকোর্স! আমার হাবিকে করতে হয়নি যদিও, ওয়ার্নিং ইস এনাফ।

সাথে সাথেই বেল বাঁজতে শুরু করল। সবাই এখন ক্লাসে যাবে। নাদিয়া আর আফরার ক্লাস নেই। আফরা নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করল,

– কী হয়েছে রে? কেন রাগারাগি করলি? তুই না বললি সে খুব শান্ত লোক।
– সে তো শান্ত ই।
– দেখ, এসব করিস না। ওনাদের কথা মতো এসব করে পরে আরো বারোটা বাজাবি। আর রাগারাগি করতে হলে আমার কাছে আসিস। আমি শুনব , তবুও ওনার সাথে করিস না। আমরা তোর রাগটা নিতে জানি। সে তো জানে না।

নাদিয়া আফরার দিকে তাকায়। আফরা ওর দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে যায়। বারবার ওকে শান্ত করার চেষ্টা করে। নাদিয়া যে খুব রাগী সে ব্যাপারে সবাই জ্ঞাত। ও আবার শুধু একটা ক্ষান্ত দৃষ্টি দিয়ে রাগ দেখানো লোক নয়। ওর রাগ চিৎকার করা থেকে ভাঙচুর পর্যন্ত যায়। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আর দুই ভাইয়ের একমাত্র বোন। সবার চোখের মণি যখন কোনো একজনের চোখেই পড়ে না তখন তো আর মাথা ঠিক থাকার নয়। তাই আজ তাড়াতাড়ি খাবার খেয়েই শুয়ে পড়ল সে। শোয়ার আগে বেঁচে যাওয়া খাবার গুলো দাড়োয়ানকে দিয়ে দিল।

রাত সাড়ে নয়টায় বাড়ি ফিরে খাওয়ার জন্য জাহিদ কিছুই পায়নি। কিচেন কেবিনেটে যে সবসময় ম্যাগি থাকে তা নাদিয়ার খেয়াল ছিল না। রান্না ঘরে কিছু একটা শব্দ পেয়ে গিয়ে দেখল জাহিদ ম্যাগি বানাচ্ছে। রাগে নাদিয়ার খুন করতে ইচ্ছে হলো জাহিদকে। জাহিদ ওর দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করল,

– আপনি খেয়েছেন?
– হ্যাঁ। খেয়েছি। পেট ভরে খেয়েছি। ভাত, মাছ, ডাল আর আলু ভাজা।
– ওও।
– রাহেলা খালার হাতের রান্না আসলেই মজা।

জাহিদ সিংকে সব বাসন দেখল। ও জানে, রাহেলা খালা এত কম রান্না করেনি যে নাদিয়া সব ফেলল। আর নাদিয়া ও এত খাদক না। অন্য কিছু হয়েছে। ততক্ষণে নাদিয়া রেগে ঘরে চলে আসল। পরদিন সে ঘর থেকে সব বিস্কিট ম্যাগি খুঁজে দাড়োয়ানকে দিয়ে দিল। আজ ও এক কাহিনি। তবে জাহিদ কিছু না পেয়ে আজ পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সারা রাত ওর পেটের ইদুরগুলো খাবার না পেয়ে খুব দৌড়াদৌড়ি করল। বেচারা! তারপর ও একটা সাড়াশব্দ করেনি। সকালে নাদিয়া নাস্তা না বানিয়ে স্কুলে চলে আসলো। কী জানি, এক পৈশাচিক আনন্দ বোধ করছে সে। আজ ও শুধু নিজের ওজনে খাবার অর্ডার করে খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। রাহেলা খালাকে ফোন দিয়ে রাঁধতে বারণ করে দিয়েছে। জাহিদ বুঝতে পেরেছে ব্যাপার টা। তাই এখন আগেই খাবার টা অর্ডার করে রাখে। যখনই আসে রিসিভ করে খেয়ে সে ও ঘুম। দুদিন পর ব্যাপার টা টের পেল নাদিয়া। তাই আবার আগের রুটিনেই ফেরত গেছে তারা। এই বিয়ে টা এখন ওর অসহ্য লাগছে। ওর ইচ্ছে করছে খুন করে ফেলতে এই জাহিদ নামের রোবটটা কে। ও কথা বলে না কেন? ও কেন শুধু সব কথার হ্যাঁ বা নাতে জবাব দেয়? রাগ হয়ে নাদিয়া বসে আছে খাটের উপর। পাশে রেডিও চলছে।

” আজ দিনটা খুবই সুন্দর। এক বিষণ্ণ সুন্দর। মেঘাচ্ছন্ন, বিষণ্ণ, তবুও সুন্দর। বিষণ্ণতাতেও সৌন্দর্য আছে। একটি রিসার্চে পাওয়া গেছে আমাদের পছন্দের গান গুলো বেশির ভাগ বিষণ্ণ ই হয়ে থাকে। কারণ আমরা রিলেট করতে পারি। আজকে আমরা শুনছি সব বিষণ্ণ গান। পরের গানটি আমার খুবই প্রিয়। অনেক বিষণ্ণ, বিষণ্ণ সুন্দর। গানটি শুনতে থাকুন, গান শেষেই আমি আরজে ঐশী ফিরে আসছি বিষণ্ণ কবিতা নিয়ে। সঙ্গেই থাকুন।”

গানটি শুরু হলো এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে। বিষণ্ণ চোখে নাদিয়া জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।
“I steal a few breaths
From the world for a minute
And then I’ll be nothing forever
And all of my memories
And all of the things I have seen
Will be gone
With my eyes with my body with me

But me and my husband
We’re doing better
It’s always been just him and me
Together.”

গানটি শুনতে শুনতে নাদিয়া ওদের ঘরের দেয়ালে ওদের বিয়ের ছবিটার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ সেটা দেখল, “me and my husband, we are doing better. It’s always been just him and me together…” দেখার পর ওর আরো রাগ হলো। ক্ষিপ্ত হয়ে নাদিয়া সেই ছবিটা নিয়ে এক আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলল। জিনিসটা ভাঙার পর ওর ভেতরের রাগ একটু একটু কমতে থাকে। এরপর ওর মনে হলো, এমন একটা সম্পর্কে থাকার চেয়ে সম্পর্ক টা ভেঙে দেওয়াই উচিত। আজ হোক, কাল হোক এটা ভাঙবেই। এই সম্পর্কে থাকলে কোনো লাভ হবে না। তাছাড়া ও স্ট্রং আর ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ও নিজেকে সাপোর্ট করতে পারবে। এখানে থেকে এই মানসিক চাপ নিয়ে কোনো লাভ হবে না। পেছনে সেই গানটা বাঁজছে।

কিছুক্ষণ পর রেডিও টা বন্ধ করে দিয়ে নাদিয়া ওর লাগেজ গুছিয়ে সাথে সাথে ওর বাবার বাসায় চলে আসে। সেখানে এসে ও স্বাভাবিকভাবে হাসিমুখে ওদের সাথে থাকতে শুরু করে। কেউ কিছু সন্দেহ করেনি, ওর ভাবি ছাড়া। বাড়ি ফিরে ছবির ফ্রেম টি ভাঙা দেখে জাহিদ তা পরিষ্কার করল। এরপর সোফায় বসল। তারপর মুখে হাত দিয়ে চিন্তা করতে লাগল, নাদিয়া সত্যিই চলে গেছে। ওর আলমারিটাও পুরো খালি। ওর লাগেজ টাও নেই। ওর কী নাদিয়াকে কল করা উচিত? কিন্তু ওর নাম্বার টা কোথায়?

(চলবে)

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_২

যুগে যুগে বাঙালি মেয়েদের বৈবাহিক অবস্থানের ওপর তাদের পোষাকের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা গেছে। একসময় মেয়েরা শুধুই শাড়িই পরত। অবিবাহিত মেয়েদের শাড়ি পরা আর বিবাহিত মেয়েদের শাড়ি পরাতে পার্থক্য দেখা যেত। পরবর্তীতে বিবাহিত মেয়েরা শাড়ি আর অবিবাহিত মেয়েরা সালোয়ার কামিজ পরিধান করেছে। বর্তমানে বিবাহিত অবিবাহিত সবাই সব ধরনের পোষাক পরে। জিন্স টপ শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ। তবে এসবে একটা জিনিস স্পষ্ট। বিয়ের পরে মেয়েদের পোষাকের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ হয়। তবে তা শুধু স্বামী বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে না, পুরো সমাজ থেকে। নতুন বউ পরবে বারো হাত লম্বা রঙিন শাড়ি, সোনার গয়না। তা না পরলে সে তো নতুন বউ নয়। ব্যাপারটা বাপের বাড়িতেও একই। নাদিয়া ওর বাবার বাসায় আসার পর আবার ওর কমফর্ট পোষাকে শিফ্ট হয়েছে। জিনিসটা ওর ভাবি আর প্রতিবেশীরা ভালো চোখে দেখছে না। ওর মধ্যে বিবাহিত নারীর কোনো ছাপই নেই। কিছু উল্টা পাল্টা করে এসেছে নাকি?

ওর ঘর এখন আর ওর ঘর নেই। ওর ঘরটা ওর ছোট ভাইকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওর বারান্দা ও। আজ এক সপ্তাহ নাদিয়া ওর বাবার বাসায়। জিনিসটা কেমন যেন, কিছুদিন আগেও এটা ওর বাসা ছিল। ওর বন্ধুদের ও এই ঠিকানা দিত। আজ নাকি এটা আর ওর ঘর না। আজকে ওর স্কুল ছুটি। নাদিয়া আরাম করে ওর এখনকার ঘরে শুয়ে আছে। এই ঘরটা আগে রাহুর ছিল। রাহু, ওর ছোট ভাই। রাহু ওর এক বছর দুই মাসের ছোট। পুরো নাম রাহিয়ান সামাদ। সে একজন ডাক্তার। তার একটা ডাক নাম ও ছিল, তবে সেটা সবাই ভুলে গেছে। নাদিয়া ই ওকে রাহু নামটা দিয়েছে। কারণ নাদিয়ার জীবনে ও যেন রাহু। কিন্তু কাছের লোক বাদে বাকি সবাই ওকে রাহি বলেই ডাকে। নাদিয়ার হঠাৎ এই ঘরটাতে ভালো লাগছে না। ও ওর আগের ঘরের বারান্দায় গেল। ওর বারান্দার সামনে খুব সুন্দর একটা বেল গাছ আছে। ওর ঘরটা দোতালায়। নাদিয়ার মন খারাপ হলেই ও গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আজও তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরেই রাহু এলো। এসে ওর পাশে দাঁড়ালো। নাদিয়া ওর দিকে তাকালো।

– কীরে, তোর সাহেব কোথায়?
– সাহেব কে?
– তোর স্বামী, মানে দুলাভাই।

নাদিয়ার মন খারাপ হয়ে গেল। রাহু ব্যাপার টা উড়িয়ে দিয়ে বলল,
– তুই এখানে এক সপ্তাহ ধরে আছিস, ওনার খেতে কষ্ট হচ্ছে না?
– ওখানে আরেক রাহু আছে। রাহেলা খালা। কষ্ট হবে না। আমি আসার আগেও উনি ছিলেন।
– অরনীপু, কিছু হয়েছে?

নাদিয়া বাঁকা চোখে তাকালো। রাহু বুঝতে পেরেছে, ও ওর শনি ডেকে এনেছে। কিন্তু আস্তে আস্তে মনে মনে দোয়া দরূদ পড়ে আবার বলল,

– কিছু হয়েছে?
– রাহু, তুই কবে থেকে আমাকে আপু বলা শুরু করেছিস?
– তুই তো আমার বড়।
– তো আপনি করে বল! পা ধরে সালাম কর!
– এই যা যা!
– তোর জন্য আমি এত তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করলাম, তুই আমার পা ও ধরতে পারবি না? তোর সপ্তর্ষি কোথায়?
– ওর ইন্টার্নশিপ শেষ এই বছরেই। ওটা শেষ হলেই ওর বাবা বলেছে।
– আগে বলবি না! ভালোয় ভালোয় বিদায় করে দিলি। আমার আগে বিয়ে করলে তো তোর জাত যাবে। আমি তো করে নিলাম, তুই করছিস না কেন? কালই করবি বিয়ে!
– তোর মাথা খারাপ হয়েছে অরনী! এমন করছিস কেন?
– আমি এমনই ছিলাম সবসময়।
– তা তো জানি। ভেবেছিলাম দুলাভাই তোকে ঠিক করে দিয়েছে।
– বের হ! তোর সহ্য হচ্ছে না যে আমি আমার বারান্দায় একটু আরামে আছি। মনে রাখিস, এইটা সবসময় আমার বারান্দা!

নাদিয়া রাহুকে বের করে দিল। রাহু ভাবছে অরনীর সত্যিই কোনো ঝামেলা হয়েছে। ও বের হয়ে ওদের মিষ্টি ভাবি কে বলল। দেবর ভাবি মিলে তদন্ত করছে অরনীর কী হয়েছে। ওহ, নাদিয়ার ডাক নাম অরনী। তবে জাহিদ বা বাইরের কেউ অরনী নামটা জানেনা, বা জানলেও ডাকে না। নাদিয়া হঠাৎ ওর ফোনে খেয়াল করলো জাহিদের কল এসেছে। ওর হাত পা কাঁপতে শুরু করল। আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নিয়ে নাদিয়া ফোনটা ধরল,

– হ্যালো।
– হ্যালো।
– জ্বী?
– জ্বী,
– কী?
– আপনি কী বাসায় আসবেন না?

নাদিয়ার হঠাৎ খুব কান্না পেল। কিন্তু ও মুখ চেপে কান্না থামিয়ে দিল। ও কারো সামনে কাঁদে না। কাউকে দেখাতে চায় না ও কাঁদতে পারে। এমনকি মা বাবার সামনেও না। বিয়ের সময় ও কাঁদেনি। ওর পুরনো আসবাব ও বই গুলো ফেলে দেওয়ার পর ও না।

– না।
– ও।
– কেন জিজ্ঞেস করবেন না?

জাহিদ অনেকক্ষণ থেমে জিজ্ঞেস করল,

– কেন?
– কারণ আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। এই সম্পর্কে আর কিছুই নেই। ইটস ওভার!

জাহিদ কিছুই বলে না। নাদিয়া ওর সামনে আসা চুল গুলো উপরে সরিয়ে বলে,

– ডিভোর্সের ব্যাপারে কথা বলতে চাই। ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই। আমি কোনো ক্ষতিপূরণ ব্লাহ ব্লাহ চাইব না। জাস্ট শেষ করতে চাই। আপনি আসতে পারবেন?
– জ্বী, কোথায়?
– সেই রেস্টুরেন্টে, যেখানে প্রথমবার যেতে বলেছিল। মনে আছে?
– জ্বী, ঠিক আছে।

জাহিদ ওর বাসার সোফাতে বসা। ওর হাতে এখনো ফোনটা। ওর বিয়ের সাত মাসের মধ্যে ডিভোর্স হচ্ছে! ওর খারাপ ও লাগছে না , ভালো ও লাগছে না। তবে নাদিয়ার লাগছে। খুব খারাপ লাগছে। তবে এই প্রাণহীন সম্পর্কে থাকলে আরো লাগবে। ও বারান্দা থেকে বের হচ্ছে তা টের পেয়ে মিষ্টি পা টিপে টিপে বের হতে গিয়ে আবার ঢোকার ভান করল। এইটা একটা ট্রিক। যাতে নাদিয়া না বুঝে ও এতক্ষণ এখানেই ছিল। ও যাতে মনে করে ও এখনই এলো।
– আরে ভাবি, তুমি এখানে?
– এসেছিলাম।
– কিছু বলার ছিল?
– না। আমি তো রাহুর কাছে এসেছিলাম। এটা তো রাহুর ঘর।
– আচ্ছা।

নাদিয়া একটা নকল হাসি দিল, সাথে মিষ্টি ও। মিষ্টি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি কীভাবে রাহুকে আর ওর বর কে বলবে তা ভাবছে। নাদিয়া বের হয়ে যেতেই মিষ্টি দুই ভাই কে ওর ঘরে ডাকল।
“অরনী ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছে! ”

রাহু ” কী!!!” বলে চিৎকার করলেও অংশু সোফায় বসে পড়ল। তারপর বলল,

– কে বলেছে তোমাকে? ওর সাথে তোমার তো এত ভালো সম্পর্ক ও তো নেই।
– তাই তো! আমি লুকিয়ে শুনেছি। ও জাহিদ ভাইকে কল করেছে। ওরা আগের সেই রেস্টুরেন্টে দেখা করবে। ও ওর সব জিনিস নিয়েই চলে এসেছে। ওর মন ও ভালো নেই আর,
– চুপ করো! বাবা মা কে কেউ বলবে না। ওনারা সহ্য করতে পারবেন না।
– একসময় না একসময়তো জানবেই।

রাহু ওর ভাইয়ের পিঠে হাত রেখে বলল,

– জাহিদ ভাইয়ের সাথে কথা বলব?
– কোনো দরকার নেই।
– তো কী করব! এভাবে ওর ঘর ভেঙে যেতে দেখব!

রাহু জোরাল শব্দ বাইরে নাদিয়ার বাবার কানে গেল। তিনি বললেন, ” নাহিয়ান, রাহিয়ান , কার ঘর? বাইরে এসে বলো!”

নাদিয়া সেই ক্যাফেতে গিয়ে অপেক্ষা করছে। এই রেস্টুরেন্টেই প্রথম দেখেছিল জাহিদ কে। এর আগে ডজন খানেক পাত্র দেখেছিল সে। কিন্তু তার একটিও পছন্দ হয়নি। ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী, অবিবাহিত-ডিভোর্সী, আধুনিক-সেকেলে, নাস্তিক-ধার্মিক সব। ও কোনো বিভেদ রাখেনি। সবাইকে সমান প্রায়োরিটি দিয়েছিল। কিন্তু ওর কাউকে পছন্দ হয়নি। ওর কান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে ওর মা ওর বড় খালাকে একটা পাত্র দেখতে বলে। পাত্র ওর বড় খালার বান্ধবীর বড় ভাইয়ের ছোট ছেলে। নাম জাহিদ আহমেদ, আইবিএ গ্র্যাজুয়েট। অনেক ভালো চাকরি করে। রিজেক্ট করার জন্য অন্তত দেখতে তো হবে। আগের পাত্র গুলোর মতো বিরক্তিকর কিনা তাও দেখতে হবে। কোনো কারণ না থাকলে কী বলবে? এমনি?

সেদিন ও জাহিদ কিছুই বলেনি। নাদিয়ার কিছু প্রশ্নের
খুব অল্প শব্দে উত্তর দিয়েছে। আর যে জিনিসটা সেদিন ওর মন ছুঁয়ে গিয়েছিল তা ছিল, জাহিদ ওকে একটা প্রশ্ন ও করেনি। আগে যতবার ব্লাইন্ড ডেট এ গিয়েছে ততবারই হাজার হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। প্রায় প্রশ্নই ছিল উদ্ভট ও বাজে। যেসব শোনার পর নাদিয়ার মেজাজ আকাশে উঠে যেত। কিন্তু জাহিদ কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। ওকে নাদিয়া জিজ্ঞেস করেছিল, কোনো প্রশ্ন নেই? ও শুধু বলেছিল, না। আর আজ এই জিনিসগুলোই ওর জান নিয়ে নিচ্ছে।

– জাহিদ, আপনার কোনো পরিচিত ডিভোর্স ল’ইয়ার আছে?
– না।
– আমার ও নেই।
– ……
– এখন কী করব?

জাহিদ ওর দিকে তাকায়। নাদিয়া ওর জুসের স্ট্র টা মুখ থেকে সরায়। যদি একটি বার বলে চলে এসো, ও এখনই চলে যাবে। ও কী মিস করছে নাদিয়াকে? ও কী বুঝতে পারছে?

– আমি একজন ভালো ডিভোর্স ল’ইয়ার খুঁজে দেখব। আপনার চিন্তা করা লাগবে না।
– জ্বী???
– আমি একজন ভালো ডিভোর্,
– বুঝেছি।

নাদিয়ার ক্ষান্ত দৃষ্টি দিয়ে বুঝা যাচ্ছে না ওর কতটা রাগ হচ্ছে। ওর ইচ্ছে করছে সামনে রাখা ফুলদানি টা দিয়ে জাহিদের মাথা ফাটিয়ে দিতে বা হাতের জুস গুলো ছুড়ে ওকে ভিজিয়ে দিতে। জঘন্য ইতর! না জানি কোন মেয়ের জন্য এমন করছে! সেই মেয়েকেই আগে বিয়ে করতে পারতো। ওকে কেন বিয়ে করল?

– আসছি।

এই বলে নাদিয়া শান্ত সিংহীর মতো চলে আসল। জাহিদ সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। এ কয়দিন ধরে নাদিয়ার নাম্বার খুঁজে আজ রাহেলা খালার কাছ থেকে ওর নাম্বার নিয়ে
কল করেছিল জাহিদ। এখন আবার একজন ভালো ডিভোর্স ল’ইয়ার খুঁজতে হবে। ফুপুকে কী করে বোঝাবে? ভাইয়া ভাবিরা খুব একটা কিছু করবে না। কিছুদিন বকবে, আবার ভুলে যাবে। ওদের জাহিদকে নিয়ে এত মাথা ব্যথা নেই। মাথা ব্যথা তো সবসময় ফুপুর ছিল।

নাদিয়া ঘরে ঢুকতেই একটা থমথমে পরিবেশ। নাদিয়া জানত এমনটাই হবে। ও মিষ্টি ভাবি কে ওভাবে পা টিপে টিপে আসার ভান করতে দেখেছে। উনি যে এখন এটা সবাইকে বলবেন তা ও জানে। মিষ্টি ভাবির নামটা মিষ্টি হলেও কিছু কাজ বড় তিক্ত। শুরু থেকেই একদম।

” নাদিয়া, দাঁড়াও। ”

নাদিয়ার বাবা ওকে এভাবে ডাকায় ও হার্টবিট একটু থেমে গেলেও ও নিজেকে সামলে নিল। সত্যের মুখোমুখি তো একদিন হতেই হবে। নাদিয়া মুখে একটা মিষ্টি হাসি নিয়ে বাবার দিকে তাকালো।

– জ্বী বাবা, বলো।
– কোথায় গিয়েছিলে?
– জাহিদের কাছে।
– জামাই মানুষ, বাইরে কেন আসবে? আর, ওকে মিস করলে বাসায় যাও। বা, দুজনেই এখানে বেড়াও না।
– জরুরি কথা ছিল একটা।
– জরুরি কথা এখানেও তো বলতে পারো।
– আসলে ও এখানে ডিভোর্সের কথা বলতে কমফরটেবল নাও হতে পারে।
– নাদিয়া!!!!

নাদিয়ার বাবা ওর গালের উপর একটা চড় বসিয়ে দিলেন। নাদিয়া শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নাদিয়ার মা আর মিষ্টি নাদিয়ার দিকে গেলেন। রাহু আর অংশু একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। এটাই প্রথমবার ওর বাবা ওকে মারলো। এর আগে কখনো ধমক ও দেয়নি। হঠাৎ এতটাই বদলে গেল?

– তোমাকে এভাবে ছোটবেলা থেকে দু চারটে চড় মারলে আজ এই দিন দেখতে হতো না।
– হতো। কারণ আমি আর এই সম্পর্কে থাকতে চাই না।
– ও কী তোমাকে অত্যাচার করে! ও কী মারে! ও কী বাজে ব্যবহার করে!
– না, করে না! ও কিছুই করে না! আর যদি তুমি এর কেয়ার করতে তো আগেই জিজ্ঞেস করতে আমি কেন করছি এই কাজ। এভাবে হাত উঠাতে না।
– তুমি ওকে ছাড়বে কেন?
– যথেষ্ট একটা কারণ আছে। তবে জিনিস টা মারামারি ঝগড়া না।
– দুই দিন সময় দিচ্ছি, দুই দিনের ভেতর আমার বাড়ি ছেড়ে নিজের বাড়ি চলে যাবে। এসব ছোটখাটো কারণে ডিভোর্সের মতো বড় কাজ তুমি করবে না।

নাদিয়া সোজা ওর ঘরে চলে আসলো। এরপর দরজা টা আটকে দিল। খুব ভাঙচুর করতে ইচ্ছে হচ্ছে। ভাঙার মতো কিছুই নেই এই ঘরে। আসলে কিছুই নেই এখানে। ওর আর জাহিদের সম্পর্কের মতো।

কিছু না পেয়ে রাগ কমাতে নাদিয়া ওর ফোনে রেডিও চালিয়ে দিল। সেখানে আরজে কার যেন এস এম এস পড়ছে, ও পুরোটা শোনেনি, “মন খারাপ করবেন না। আপনার এস এম এস টা পড়ে আমি এতটুকুই বলতে চাই, অনেক সময় চলার পথে আপনজনেরাই পাশে থাকে না। আমরা একা হয়ে যাই। প্রয়োজনের সময় খুব কাছের মানুষদেরই পাওয়া যায় না। তাই বলে কী আমরা ভেঙে যাব? আমার পাশে ও আমি কাউকে পাইনি। আমি এত গুলো পথ একাই হেঁটেছি। থেমে যাইনি। মেনে নিয়েছি। নিজেকে শক্ত করেছি। আপনিও মেনে নিন শ্রোতা। আপনার এস এম এস পড়ে আমি এটুকুই বলব আমরা সবাই একা। সেটা ভেবেই চলুন। কেউ থাকুক বা না থাকুক, আমি আরজে ঐশী থাকব আপনার পাশে , আপনার পছন্দের গান নিয়ে। ততক্ষণ পর্যন্ত এই গানটি শুনুন। হয়তো আপনার অবস্থানের সাথে একটু হলেও যাবে।”

নাদিয়া শুয়ে পড়ল সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে। ফ্যানটা আস্তে আস্তে ঘুরছে। তাহলে শুধু ও নিজেই নয়, অনেক মানুষ আছে ওর মতো, একা। ওর কানে গানের শব্দ ভেসে আসছে।

“যেখানে শুরুর কথা
বলার আগেই শেষ
সেখানে মুখ ডুবিয়ে খুঁজতে চাওয়া
আমারই অভ্যেস
যেখানে রোদ পালানো
বিকেল বেলার ঘাম

সেখানেই ছুটবো ভাবী
গিলবো গল্প, ভুল হবে বানান

এই বুঝি ফসকালো হাত
আর কালো রাত করে সময় গেল আয়োজনে
প্রত্যেক দিন ভয় পাওয়া
সব ইচ্ছেগুলো অনেক ঝড়ের শব্দ শোনে

একবার বল নেই, তোর কেউ নেই
কেউ নেই, কেউ নেই
একবার বল নেই, তোর কেউ নেই
কেউ নেই, কেউ নেই
একবার বল নেই, তোর কেউ নেই
তোর কেউ নেই।”

(আশা করি ভালো লাগছে গল্পটা।)

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here