একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৩২

0
5995

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৩২
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
অনার্স 2য় বর্ষের প্রথম দিকে তোরা সবাই কতো ফ্যাশনাবল ছিলি । একেকদিন একেক ডিজাইনের ড্রেস , কালারফুল হেয়ার, মেকাপ, অরনামেন্টস কতো কি । তোদের দেখে খুব ভালো লাগতো আমার । তোদের কতো সুন্দর দেখাতো । তোদের মতো আমি চলতে পারতাম না । আব্বু আমাকে নিয়ে ভয় পেতো তাই বোরখা পড়াতো । কিন্তু ওসব পড়ে আমি খুবি আন কমফরটেবল ফিল করতাম । নেক আপ বাধতে হতো। আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতো । সারাদিনে মাথা ঘেমে চুলের বারোটা বাজলো । গরম এমনিতেই সহ্য করতে পারি না তার উপর বোরখা। কয়েকদিন ফিট ও খাইছি । একদিন ঠিক করলাম তোদের মতো বের হবো । একটা জেগিন্স পড়ে লং টপস পড়ে নিলাম । গলায় উড়না পেচিয়ে চুল উচু করে খোপা করে নিলাম । একটু পাউডার মেখে লিপিস্টিক আর নীল কাজল দিলাম । তারপর বেরিয়ে এলাম ব্যাগ নিয়ে হিল পড়ে । ক্লাস করলাম । সবার সাথে যেনো আমি‌‌ মিশে গেছি । তারপর ছুটির পর একা পড়ে গেলাম । হাটতে লাগলাম। অডিটরিয়মের সামনে বাবুরা আড্ডা দিচ্ছিলো। আমাকে দেখে কয়েকজন পিছু থেকে ডাক দিলো —এক্সকিউজ মি আপু। আপু একটু দাড়ান । একটু কথা আছে ।
আমি দাড়িয়ে পড়লাম । পেছনে তাকিয়ে দেখি কয়েকজন । দুটো ছেলে এসে বললো —আপু আপনার নাম্বারটাকি পাওয়া যাবে ? আমাদের বাবু ভাই আপনাকে কল দিবে ।
—বাবু ভাই কে ? সে কেনো কল দিবে ? আপনারা কেনো এলেন ? মাসে কত টাকা মাইনে পান কাজ করে ?
পেছন থেকে বাবু এসে বলে —হ্যালো স্মার্ট গার্ল , আমি বাবু ।এই কলেজের মাথা। আমি নাম্বার চেয়েছি ভাল্লাগছে তোমায় । আর ওরা আমার ছেলে পুলে ।
—ও আমার আল্লাহ , আপনি মাথা?তাহলে এইযে চল্লিশ পঞ্চাশ একর কলেজের এরিয়া এইটা আপনার পেট? আপনি এতো মোটা ? । একটা গান আসতেছে গেয়েই ফেলি ।
? আপনার ভুরি এতো মোটা এতো মোটা ..
আপনি নাকি চল্লিশ পঞ্চাশ একর জমির মাথা ?
সুন্দর গাইলাম না ? আর আপনার কয়টা ছেলে ? কত বছর বয়সে বিয়ে করেছেন ? আমি সিউর আপনি দশ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন তাই এখন আপনা বিশ বছরের ছেলে আছে । ওমা আপনার তো তাহলে অনেকগুলো বউ ?নয়তো এতোগুলা বাচ্চা একসমান কেমনে হয় ? সাথের একজন কে জিজ্জাসা করে —এইযে ভাতিজা তোমার আম্মু কয়টা বলোতো?
বাবু একদম সামনে এসে বলে — ফাজলামি করো ?এতোগুলা কথা বাবুর সামনে বাবুর জিএফ ই একমাত্র বলতে পারে । হয়ে গেলে আমার জিএফ । নাম্বার বলো ।
—017 ফুসকা খাওয়াবেন নাকি খাবেন ?
—ঐ তগো ভাবী ফুসকা খাবো । আনসনাকে ?
আসলেই ক্ষুদা পায়ছিলো । আমিই আগে আগে হেটে ফুসকা খাইতে গেলাম । চেয়ারে বসতেই ফুসকার প্লেট হাতে পাইলাম । খাওয়া শুরু করলাম । দুই প্লেট ফুসকা খাওয়ার পর দেখি যে আমার দিকে তাকাইয়া আছে । আমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে ফুসকা মামাকে দিয়ে জোরে জোরে হেটে চলে আসছি । পেছন থেকে ডাকছে শুনি নাই । তারপর আমার খোজ লাগায়ছে কিন্তু কেউ বলতে পারে নাই । কেউ তো দেখেই নাই আমায় । তারপর পহেলা বৈশাখে নাচ করার সময় দেখেছে । সাথে সাথে আমার সব খুজ খবর নিয়ে নিয়েছে । পুরো নাচের সময় তাকাইয়াই ছিলো আমি দেখেছি আড় চোখে । কমন রুমের দিক যাওয়ার সময় পথ আটকে ধরে । আমি চলে যেতে নিতে শাড়ির আচল টেনে ধরে । আমি রাগ পেয়ে পেছন দিক ফিরেই গালে চড় বসিয়ে দেই । তখন রেগে আমাকেও চড় দেয় ।
—শালী তোর এতো বড় সাহস আমার গালে চড় দেস ।বাবুর গালে চড়!! আজ তোরে আমি দেখে ছাড়বো । মিলন মামা দেখে স্যার দের খবর দেয় । স্যার মেডাম সবাই চলে আসে । বাবুকে ধরে বোঝায় । তখন থেকে আমার পিছু নিয়েছে । বাবু নোংরা মনমানসিকতার লোক। আমার সব সময় ভয় করে কখন না জানি কি করে ফেলে । একদিন একা রুমে পেয়ে ওর খারাপ মানসিকতার পরিচয় দিতে চেয়েছিলো । আমি আল্লার রহমতে বেচে ফিরছি । সেই ভয়ানক কথা আমি মনে করতে চাই না । আমার মাথা ধরে ।
শারমিন লাবিবার মাথা বুকে জড়িয়ে নেয় ।
—দোস্ত তোর কি সত্যি সত্যি মাথা ধরতেছে ?
—হু ।
— এর জন্য তুই সব সময় কলেজে চুপচাপ থাকস । তোর মেজাজ খারাপ থাকে । হার্ড পারসনের মতো কথা বলিস ।
—হু।
—আজ বুঝলাম হোস্টেল তো পুরা তুলে রাখস তোর জালায় বরই জলপাই গাছের একটা ফল ও কেউ খাইতে পারে না ,আমগুলা পাকার আগেই ভেনিস হয়ে যায়,পাশের বিল্ডিং গুলার কাচ ভাঙে তোর বলের জন্য, বড় আপুরা কিছু বলতে এলে হেলে পড়স তাদের উপরেই আর কলেজে কেন এতো ভদ্র। এতো দিনতো আর এই কথা জানতাম না । আমি ছিলাম না ঐ সময়ে ।
লাবিবা মাথা তুলে বলে —তারমানে তুই কি বলতে চাস আমি অভদ্র ???
—একদমি না মা । তুই কিউটমিউট মিস্টি লিচু?।উম্মাহহ??।
—ঐঐ একদম না । মাইনষের প্রোপার্টিতে হাত দেস কিলা ?
—ওকে ওকে । তোর ঐ লিচুর মতো গালে ভাইয়াই চুমো দিবে । আমরা ছোবোও না । এবার চল সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।
_______________
ক্লাসে ঢুকে তানভীর তৃপ্তির হাসি হাসে । আজ গোলাপি গাউন হিযআপ পড়েছে লাবিবা । তানভীর ও গোলাটি কোর্ট। হুয়াট এ কম্বিনেশন~দুজনের ড্রেস ই বেনারসি সিল্কের । ডেইলি মিলিয়ে ড্রেস পড়াই যায় । কিউট কাপল লাগবে । লাবিবা নিচ দিক হয়ে নোট গুলো তুলে নিচ্ছে । মাঝে মাঝে তানভীরের দিকে তাকাচ্ছে । কতোইনা নিষ্পাপ একটা মুখ । ক্লাস শেষে বেরিয়ে আসে তানভীর । শারমিন জবা মিলি পিছে পিছে দৌড়..লাবিবা বসে ছিলো জবা লাবিবাকে তুলে বলে –চল চল আজ জেনেই ছাড়বো ।
—আরে কি জেনে ছাড়বি ?
–চলতো ..
তানভীরের সাথে এসে দাড়িয়ে বলে
–স্যার স্যার একটু দাড়ান প্লিজ। তানভীর দাড়ায় ।
–কিছু বলবে ?
—স্যার আজকে আমাদের প্রশ্নের উত্তর আপনাকে দিতেই হবে ।
তানভীর লাবিবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকায় । জবা বলে — স্যার আপনি কি ম্যারিড নাকি আনমেরিড ?সরি স্যার পার্সোনাল হলেও আমাদের জানা জরুরি।
প্রশ্ন শুনে তানভীর অবাক হয় । পরক্ষনেই লাবিবার দিকে তাকিয়ে বাকা স্মাইল দেয় । সেই স্মাইলে মিলি তো ফিদা । হেলে শারমিনের গায়ের উপর পড়ে যায় ।
লাবিবার অশান্ত চাহনির দিক তাকিয়ে বলে —দুটোই।বলে চলে যায় । এদিকে সবাই কনফিউজড । লাবিবা তো রাগে জলে ছারখার । হুংকার ছেড়ে বলে
–কুত্তি প্রিন্সিপালের দিক ও হাত বাড়াতে চাস । মাইনষের জামাইয়ের দিক নজর দেস । তোদের ঘরে কি বাপ ভাই নাই । যারে দেখস তার পিছেই লাগস ?
মিলি লাজুক ভাবে মুচকি হেসে বলে –স্যারের জিএফ আছে তাই এমন বললো । মোড় ঘুরানোর জন্য তো আমি আছি । কাল থেকে চিনতেই পারবিনা আমায়। সর সর আমার এক্ষুনি পার্লারে গিয়ে বসতে হবে । বাই দোস্ত।
লাবিবা মাথা পুরো হ্যাং । মানে কি ? তারমানে এই মুলা স্যারের তিন নাম্বার বউ হতে যাচ্ছে আর আমার ছোট সতিন? কাভি নেহি । এর ব্যবস্থা করতেই হবে আমার ।

—মামুন ভাই আপনারে ডাকে ঐখানে দাড়িয়ে এক আপা । এক্ষুনি যেতে বলছে ।
—-আমাকে ডাকে ? স্ট্রেঞ্জ!!
লাবিবাকে দেখে চমকে যায় । যেই মেয়ে ভয় পেয়ে সামনেই আসতে চায় না সেই মেয়ে ডাকছে । কাছে যেতেই আরো চমক । লাবিবা বেঞ্চিতে বসে বলে
—-মামুনভাই । বস বস । ওরে আমার সোনা ভাইটারে । আমার তো ভাই নাই তোমাকে আমার নিজের ভাইই মনে করি । বসোনা পাশে ।
মামুন খুশি হয়ে যায় । পাশে বসে পড়ে ।
—বলো বোন ।
— শোন ভাই অনেকদিন সিংগেল আছো । আর কতো থাকবা ? আমি কিন্তু এটা মেনে নিবো না । আমার ভাবী চাই মানে চাই । এবার সময় এসে গেছে মিলিকে নিজের করে নেওয়ার ।
কথা একটানে বলেই লাবিবা ছেড়ে দিলো । উত্তরের অপেক্ষায় মামুনের দিক তাকিয়ে । মানুন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে —ছোট ভাইয়ের জি এফ । ছোট বোনের মতো । সেটা আর হবার নয় ।
—আরে তুমিতো দেখি কোন খবর ই জানো না । সুমনের সাথে মিলির আর রিলেশন নেই । আর তাদের ব্রেকাপ টা কে করিয়েছে বলোতো ? তোমার এই ছোট বোন আমি । মিলিও তোমাকে পছন্দ করে । কিন্তু বলতে পারছে না । তুমি বললে সব ব্যবস্থা করে দিতে পারি । ভেবে বলো ।
মামুন কিছুক্ষন বসে ভাবলো । উঠে দাড়িয়ে বললো
—কাল স্টার হোটেলে ব্যবস্থা করে দিতে পারবে ?
—প্রথমেই হোটেল?। আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে । আসি কেমন ভাইয়া ? রেডি থাকবেন ।

পরদিন লাবিবা দলের সাথে না মিশেই গেইটে এগিয়ে এসে দাড়িয়ে আছে । মিলিকে রিকশাতে দেখেই রিকশা থামিয়ে উঠে পড়ে। রিকশা মামাকে রিকশা ঘোরাতে বলে ।
মিলি—এইটা কি হলো ? কোথায় যাচ্ছি আমরা ?
লাবি—একটা কাজ পড়ে গেছে দোস্ত। হেল্প মি । আমার সাথে থাক ।
হোটেলের সামনে নেমে উপরে নির্দিষ্ট রুমের দিকে যেতে থাকে । মিলি অবাক । —ঐ আমরা হোটেলে কেনো এলাম বলতো ? —চুপচাপ সাথে আয় ।
রুমের সামনে এসে মিলির সামনে দাড়ায় । এতোক্ষন তো খেয়াল ই করেনি । মিলিকে যে চেনাই যাচ্ছেনা । মনে হচ্ছে কোন পার্টিতে যাচ্ছে । ব্লাক থ্রিপিচ এর সাথে মেকাপ স্টোনের জুয়েলারি ওয়াওও। যাই হোক আল্লাহ বাচাইছে । অল দ্যা বেস্ট বলে দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় । বেচারা মিলি তো ভয়ে শেষ কি হলো এটা তার সাথে? রুমের অবস্থা দেখে তো আরো ভয় পেয়ে গেছে । পুরো রুম বেলুনে সাজানো মনে হচ্ছে প্রপোজ রুম ।
–আই লাভ ইউ মিলি জানপাখি ।
পেছনে চমকে তাকিয়ে অবাক । মামুন হাটু গেড়ে বসে গোলাপ সামনে ধরে আই লাভ ইউ বলছে । নিমেষেই ভয় কেটে যেন নেশা লেগে যায় মিলির চোখে । মামুন এমনিতেই ড্যাসিং বয় তার উপর আজ মেরুন কালার শার্ট , সামনের দুটো বোতাম খুলা ,স্পাইক হেয়ার , ডেনিম ব্লাক পেন্ট, চুল গুলো এসির হাওয়াতে হালকা উড়ু উড়ু করছে এত্তো সুন্দর কোন ছেলে হয় নাকি !! মিলি ঢুলে পড়ে যেতে নিলেই মামুন ধরে ফেলে । চোখে চোখ আটকে যায় ।
দরজা একটু ফাক করে লাবিবা দেখছিলো এক চোখে । মামুন মিলি কাছাকাছি যেতেই লাবিবা চোখদুটো বন্ধ করে নেয় । আল্লাগো কি শরম?।
রুমে থেকে বেরিয়ে সামনের রুমের দরজায় তাকাতেই দেখে একজন ভিতর দিকে উকি দিচ্ছে । এখানে নিরিবিলিতে মিটিং করার জন্য রুম বুক করেছিলো তানভীর । চিনতে অসুবিধা হয় না পেছন থেকে দেখেও যে এটা তার দুষ্টু পুতুল । কিন্তু এখানে কেনো ? কৌতুহলবশত এগিয়ে গিয়ে লাবিবার উপর দিয়ে উকি দিতেই চোখ ছানাবড়া । এ যে তার কলেজের ছাত্রদলের লিডার মামুন আর সেই মেয়েটা যে প্রতিদিন প্রশ্ন করে । দুজনের ঠোট ছুই ছুই । এইটা আমার দুষ্টু পুতুল লুকিয়ে দেখছে । চোখ বন্ধ করে রেখেছে ফিলিংস হচ্ছে তার । কোমড় ধরে তুলে মুখে হাত রেখে চেপে সেখান থেকে বুক করা রুমে পাখির মতো তুলে নিয়ে আসে । কোমড় ছেড়ে দরজা লক করে দেয় ।

To be continue ____

®লাবিবা ___?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here