রিস্টার্ট,২৬,২৭

0
530

#রিস্টার্ট,২৬,২৭
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_২৬

এই চার দেওয়ালে এখন শুধু ওরা দুজন। নাদিয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়া জাহিদ থেকে ওকে বাঁচানোর মতো কেউ নেই। আজকে হয়তো খুব খারাপ একটা বাস্তব দুঃস্বপ্ন লেখা হচ্ছে। নাদিয়ার পুরো জীবনটাই যেন একটা দুঃস্বপ্ন। যে মানুষটাকে ও ভালোবাসে, সে মানুষ টা থেকে ও এ ধরণের আচরণ আশা করে না। তাই হয়তো সেই মানুষ টাকেই বলছে তাকে তার থেকে বাঁচাতে।

“বাঁচাও! বাঁচাও! বাঁচাও!” এই শব্দ গুলো জাহিদ এর আগেও শুনেছে। প্রিয়মের মুখে।

“শুদ্ধ!!! শুদ্ধ !!!! আমাকে বাঁচা!!!! বাঁচা আমাকে!!!”

এই আওয়াজ শুনতেই জাহিদ নিজেকে আবিষ্কার করলো সেই অবস্থায়, যেই অবস্থায় ও কখনো নিজেকে দেখতে চায় নি। ওর হাত নাদিয়ার স্পর্শকাতর স্থানে। সেই মুহূর্তে ওর নাদিয়ার উপর কোনো জোর ছিল না। নাদিয়া ওকে ধাক্কা দিতেই সরে গেল। ও বুঝতে পারছে না এমন টা কেন হলো। নাদিয়ার ছেড়া ব্লাউজ, অশ্রু সিক্ত চোখ, বিধ্বস্ত চেহারা নির্দেশ করছে জাহিদ সেই জিনিস টাই করছিল ও যা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। ও সেই কাপুরুষদের মতো কাজই করছিল , যা ওরা প্রিয়মের সাথে করেছিল। এত নীচে কী করে নেমে গেল?

মুহূর্তেই নিজের প্রতি ঘৃণা জন্ম নিতে শুরু করে ওর। নিজের অজান্তেই চিৎকার করতে থাকে। ওর ক্ষিপ্ত চিৎকারের সময় ওর চশমা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। জাহিদ পাগলের মতো কাঁদতে থাকে। নিজেকে সামলাতে পারে না। ও নাদিয়ার সাথে কী করতে যাচ্ছিল! ওর ম*রে যাওয়া উচিত।

স্তব্ধ হয়ে নাদিয়া জাহিদের এই উন্মাদ কান্না দেখছে। ওর এমন করার পেছনে কারণ কী? তখনই ওর পিপি স্যারের কথা মনে হলো। জাহিদের সেই ট্রমা! সেই ট্রমার কারণে ও হয়তো সেই অ্যাবিউসারের মতোই আচরণ করছে। বুঝতে পারার পর হয়তো এখন এমন চিৎকার করছে। অনেক চিন্তা ভাবনা করে নাদিয়া ভয়ে ভয়ে জাহিদ কে ছুঁয়ে দেখে। জাহিদ এখনো কাঁদছে। কোনো কথা বলছে না, বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। নাদিয়া জাহিদের কাছে গেল। জাহিদ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। নাদিয়া ওর চোখ মুছে দিতেই জাহিদ ওকে জড়িয়ে ধরল। জাহিদ ওকে জড়িয়ে ধরেই কান্না করছে। নাদিয়া অজান্তেই ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ও কিছুই বুঝতে পারছে না। একটু আগের জাহিদ আর এখনকার জাহিদে আকাশ পাতাল পার্থক্য। সারারাত ও নাদিয়ার বুকে মাথা রেখে কান্না করল। কোনো কথা বলল না, শুধুই কান্না করল, যেন ও অনেক ভয় পেয়েছে। নাদিয়া ওকে সান্ত্বনা দিয়ে গেল। জাহিদ যেন একটা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে নাদিয়ার কাছে। নাদিয়ার ও আর ভয় লাগছে না। ও অনবরত হাত বুলিয়ে গেল। অপেক্ষা করে গেল, কখন ও কিছু বলবে। ভোররাতে ওরা দুজন ঘুমিয়ে পড়ল।

সকালে নাদিয়ার দেরিতে ঘুম ভাঙল। কিন্তু, ওঠার পর ও আর জাহিদ কে দেখল না। কাল রাত যা হয়েছিল তা কী স্বপ্ন ছিল? একদম না। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকার পর নাদিয়া সিদ্ধান্ত নিল পিপির সাথে দেখা করবে।

– তুমি এতদিন পর! কী জন্য এসেছ?
– আমি জানি আপনি রাগ করবেন। আমি আমার থেরাপি কন্টিনিউ করছি। কিন্তু এটাও জরুরী।
– বলো।
– কাল রাতে, শুরু থেকে বলি। আমি ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম…

সব শুনে পিপি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। জাহিদ আরো বড় কেস, যা উনি ভাবছিল। ওর এখনই চিকিৎসা দরকার।

– নাদিয়া, ও কালকে তোমাকে রে*প করতে চাইছিল!
– হুম। অবিশ্বাস্য, তবে সত্যি।
– আকাশ পাতাল ইমোশন চেঞ্জ! ওর নিজের প্রতি কোনো কন্ট্রোল নেই। তোমাকে আঘাত করছে বুঝতে পেরে আবার রিগ্রেট হচ্ছে।
– হ্যাঁ।
– ও ঠিক নেই।
– আমিও জানি। এখন কী করবো?
– আমি যা বলব তা করবে?
– হ্যাঁ। সব করবো। ওর জন্য আমি সব করতে পারি।
– ওর থেকে দূরে থাকো।

নাদিয়া চুপ হয়ে গেল। এটা সম্ভব না। পিপি কী পাগল হয় গেছে?
– হ্যাঁ এটাই। ওর থেকে সরে এসো। এই যে রিস্টার্ট, এই সম্পর্ক টা হওয়াই উচিত হয়নি। এটা অনেক ভুল একটা সম্পর্ক। এটা এখানেই শাট ডাউন করে দাও।
– অসম্ভব! আমি পারব না।
– নাদিয়া, বলেছিলাম এখন ভালোবেস না। নিজের বিপদ নিজেই ডাকছো। ও নরমাল না। ও মেন্টালি সিক! তুমি ওর সাথে থেকো না।
– আমার অসুস্থতার সময় তো উনি ছিলেন। এখন আমি?
– তোমার টা আর ওর টা আলাদা। কাল হঠাৎ করে ওর এই রূপ। ও তোমাকে রে*প করতে যাচ্ছিল নাদিয়া! দ্যাটস আ ক্রাইম! সেন্সে আসো। পরশু খু*ন করে দিতে পারে। ও কেমন আক্র*মণাত্মক তা তুমি নিজে দেখেছ। আ’ম স্যরি, আমিই বলেছিলাম একটা চান্স দাও। ওর সত্যি জানবো। কিন্তু ও এরচেয়েও ভয়ংকর। ওর সাথে সারাদিন থাকা বিপদজনক! ওর ইমোশনের প্রতি ওর কোনো কন্ট্রোল থাকবে না। ওর এখন তোমাকে না, ডাক্তার দরকার। ট্রিটমেন্ট দরকার! তোমার নিজের ও ডাক্তার দরকার। দুজন অসুস্থ মানুষ কী করে থাকবে?
– আই কান্ট লিভ হিম!

নাদিয়ার চোখ দিয়ে টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। নিজেকে খুবই অসহায় লাগছে। ভুল মানুষকে ভালোবাসার ফল এমনই নির্মম। তাকে ছাড়া যায় না, তার সাথে থাকাও যায় না। পিপি তার কপালে হাত দিয়ে বসে আছেন। তিনি আফসোস করছেন, কেন ওদের একসাথে রাখতে চেয়েছিলেন। ওরা তো একসাথে থাকার মতো না। দুটো জীবন একবারে নষ্ট।

– আর কোনো উপায় নেই?
– তুমি ওকে ডাক্তার দেখাও। তবে তাও একসাথে থেকো না। ওর যত কাছে যাবে, তত বিপদে পড়বে।
– ওনার সাথে কী হয়েছে তা জানলে?
– ব্যাপারটা ওখান থেকে এখন অনেক দূর চলে গেছে। শোনো নাদিয়া, এখন যদি তুমি সুস্থ হতে আমি বলতাম তুমি ওকে ডাক্তার দেখাও। ওর পাশে থাকো। ওকে সাহস দাও। তোমাকে তোমার অবস্থান বুঝতে হবে।
– কোথায় যাবো?
– বাবার বাড়ি যাও। চিন্তা করো না, আমি কথা বলবো ওনাদের সাথে। তোমার সুস্থতা আগে।
– আর জাহিদ?
– আহ! ওর ব্যাপারেও দেখবো। ওর জন্য খুঁজছি। তুমি এত স্মার্ট একটা মেয়ে, তুমি কী করে এখন বোকার মতো এসব ভাবছো? আজকে গিয়ে জাহিদ কে বলো তুমি কিছুদিন বাবা মায়ের কাছে থাকবে। তোমার বাসায় ভালো লাগছে না।
– উনি কী বুঝবে?
– ওকে বলো, চাকরি করার জন্য তুমি এখন কিছুদিন ওখানে থাকবে। এরপর ওকে আস্তে আস্তে বোঝাবো, বুঝিয়ে ডাক্তারের কাছে পাঠাবো। আর ও বুঝলে না বুঝলে কী আসে যায়!
– একসাথে থেকে করলে কী হবে?
– হি ইজ অবসেসড উইথ ইউ!!
– কী?

পিপি এটা বলতে চাইছিল না। কিন্তু এখন ওকে সেখান থেকে বের করতে হলে বলতেই হবে,
– এটা এখনো একটা ধারণা। কিন্তু সত্যি ও হতে পারে।
– অবসেসড না। হালকা পাতলা আমিও জানি এসব ব্যাপারে। উনি আগে আমাকে পাত্তাই দিত না। কথা বলত না ঠিক করে।
– ইটস বিকজ হি নিউ দ্যাট হি কান্ট কন্ট্রোল হিস ইমোশন। ও তোমার থেকে দূরে থেকে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতো। ও ইদানিং অনেক পসেসিভ হয়ে গেছে। এটা নরমাল না। আচ্ছা, ওর সাথে তোমার কী আগে দেখা হয়েছিল?
– না। প্রশ্নেই উঠে না।
– ও হয়তো তোমাকে চিনতো? কানেকশন খোঁজো। কোনো বন্ধু, কোনো স্কুল।

পিপি চাইছে নাদিয়া প্রিয়মের কথা নিজে থেকে ভাবুক। নাদিয়া ভাবছে, কিন্তু কিছু পাচ্ছে না।
– কী করে? কোনো কানেকশন নেই। আমাদের দেখা একদম ব্লাইন্ড ডেটে। ওনার ফুফু তো কয়েক বছর আগেই আমার খালার এলাকায় আসে।
– কয় বছর?
– আমাদের বিয়ের প্রায় এক বছর আগে। আমি তো তখন খালার বাসায়ও যাইনি। দেখা হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
– স্কুল ?
– আমি বাংলা মিডিয়াম আর উনি ইংলিশ। উনি যে স্কুলে ছিলেন আমি তো নাম ই শুনিনি। কোথায় তাও জানি না। কোনো কানেকশন নেই।
– স্টিল, তুমি বাবার বাড়ি চলে যাও। আর আজকে এখানে এসেছ এটা ওকে ভুলেও বলবে না।
– আপনি এভাবে কেন বলছেন যে ও কোনো ক্রিমি*নাল বা সাইকো?
– কারণ হি ইজ নট নরমাল। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ এমন হতে পারে না।

নাদিয়া সেখান থেকে বাসায় চলে আসে। ওর ক্ষণে ক্ষণে কান্না পাচ্ছে। ও এভাবে জাহিদকে ছেড়ে যেতে পারবে না। এদিকে সারারাত কেঁদে চোখ ফুলিয়ে রাখা জাহিদ এভাবে অফিসেও কাজ করেছে। সন্ধ্যার পর ও বসে আছে অফিসে। বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। এই চেহারা ও কিছুতেই দেখাতে পারবে না। রাত দুইটায় বাসায় ফিরে অন্যরুমে ঘুমিয়ে পড়ে জাহিদ। এরপর সকাল হতেই আবার বেরিয়ে যায়। নাদিয়া আজ আর ওর দেখা পেল না। আজকেও আবার একই কাজ। দুদিন যাবৎ নাদিয়া ওর অপেক্ষা করছে। বাধ্য হয়ে ও জাহিদ কে মেসেজ করে, ” কথা বলা দরকার।”

নয়টা বাজে জাহিদ বাড়ি ফিরে। ওর চেহারা একদম বিধ্বস্ত। একদম ঘুমায়নি দেখেই বোঝা যায়। নাদিয়ার একটু মায়া লাগলো। তবুও আসল কথা বলা দরকার। দুজন বসার ঘরে বসে,

– আমি বাড়ি যাব।
– জ্বী!

ওরা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছে। তো শেষ পর্যন্ত চলেই যাচ্ছে। জাহিদের অজান্তেই ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। নাদিয়া বিচলিত হয়ে বলল,

– বেড়াতে। এমনি! আবার আসব তো। মা বলছিল, সেজন্য।
– আ’ম স্যরি। আমি করতে চাইনি। আমি জানি না কেন,
– সেজন্য না। আমি এমনি যাব। বিয়ের পর মেয়েরা যায় যে তেমন।
– দূরে থাকাই ভালো। চলে যান। আমি কেন সেদিন হাতটা ধরেছিলাম? উচিত হয়নি।
– আপনি এমন করছেন কেন?
– আমি সব শেষ করে দিয়েছি। আমার মতো মানুষের একা থাকাই ভালো। আমি অনেক জঘন্য মানুষ।
– আপনি ভালো মানুষ। আপনি অনেক ভালো মানুষ। আমি দেখেছি। শুধু একটা ঘটনা দিয়ে আপনি খারাপ হয়ে যাবেন না।
– তো চলে যাচ্ছেন কেন?

নাদিয়া চুপ হয়ে গেল। জাহিদ ওর চোখ মুছে উঠে যাচ্ছিল। এবার নাদিয়া ওর হাত ধরে ফেলল।

– আমি যাচ্ছি না। আমি যাবো না।
– কেন?
– আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো না। এমনি বেড়াতে যাচ্ছি।
– আপনার কী আমার জন্য খুব সিমপ্যাথি? সেজন্যই বলছেন, তাই না?
– সিমপ্যাথি সবার জন্য হয়। রাস্তার কুকুর বিড়ালের জন্য ও সিমপ্যাথি হয়। আপন মানুষের জন্য সিমপ্যাথি হয় না।
– আমি কী আপন মানুষ?
– হ্যাঁ।
– আমার জন্য কী হয়?

নাদিয়া উঠে দাঁড়ালো। জাহিদ অপেক্ষা করছে। কী হয়? ভালোবাসা? ভালোবাসা বলবে? অনেক বড় ফাঁসা ফেঁসে গেছে। কেউ একজন বলেছিল না তপস্যা। তপস্যা করতে হচ্ছে। ও জানে, ও ভুল করছে। কিন্তু ভুল করতেই ইচ্ছে করছে। ওকে ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না।
– কেয়ার। আপন মানুষের জন্য কেয়ার হয়।
– কেয়ার!
– আপনি ও তো করেন, আমার জন্য।
– হুম।
– ওটাই। আপনার টা কী সিমপ্যাথি?
– না।
– ওটা কী?
– কেয়ার!

ওটা ভালোবাসা। অনেকদিনের পুরনো ভালোবাসা। সেটা বলা যাবে না। জাহিদ আর নাদিয়া পাশাপাশি শুয়ে আছে। ওরা কেউই ঘুমাচ্ছে না। কাল নাদিয়া বাবার বাড়ি চলে যাবে। আর ওরা দুজনেই জানে নাদিয়া আর আসবে না। এটাই শেষ চলে যাওয়া। দুজনেই সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর নাদিয়া বলে,

– আমরা কী কাডেল করতে পারি?
– জ্বী?
– ঐদিনের মতো আমাকে আরেকবার জড়িয়ে ধরবেন?

জাহিদ নাদিয়াকে জড়িয়ে ধরে আছে। ওর মুখটা নাদিয়ার কাঁধে। ও সর্বস্ব দিয়ে নাদিয়াকে অনুভব করছে। ওর নিঃশ্বাসের সাথে নাদিয়া ওর রক্তবিন্দুতে প্রবেশ করছে। সেই রক্ত ওর শিরা উপশিরা হয়ে পুরো শরীরে বাহিত হচ্ছে। ওর হৃৎপিন্ড ফুসফুস আর মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু নাদিয়া নাদিয়া নাদিয়া! কিন্তু নাদিয়া সোজা হয়েই শুয়ে আছে। ওর মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরছে।

– আমাদের কী আগে কখনো দেখা হয়েছিল?

প্রশ্নটা শুনে জাহিদ ঘাবড়ে যায়। নাদিয়া উত্তরের অপেক্ষা করছে। জাহিদ আবার কান্না করছে। সেই জলে নাদিয়ার ঘাড় ভিজে যাচ্ছে।

– দেখা হয়েছিল?
– নাহ!
– কাঁদছেন কেন?
– দেখা হয়নি কেন, তাই। (কাঁদো কাঁদো গলায়)
– দেখা হলে অনেক ভালো হত, তাই না?
– হুম।
– আমি জানতে পারতাম কী হয়েছিল আপনার সাথে।
– হুম।
– আপনি জানতে পারতেন, আমার কথা।
– হুম।
– আপনি কী তখনো আমাকে বুঝতেন?
– আপনি কী আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন?
– কখনো না।
– যাবেন না প্লিজ! নইলে আমার কী হবে? আমি কী করে থাকব? আমার খুব ভয় করে। (কাঁদতে কাঁদতে)
– আমি যাব না।

নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ টা সৃষ্টির আদি থেকে। যে জিনিসে যত নিষেধাজ্ঞা, সেই জিনিসটা তত প্রিয়। সমস্ত কৌতুহল যেন সেই দিকেই। বিবি হাওয়ার সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল গ্রহণের মাধ্যমেই এত কিছু। যুগে যুগে এই কৌতুহল অনেক কিছুই সৃষ্টি করেছে। যাকে যেটা মানা করা হয়, সে সেটাই করে। কী ক্ষতি হবে, আমি সেটা দেখতে চাই।

নাদিয়া পাশ ফিরে জাহিদের দিকে তাকালো। ওর অশ্রু সিক্ত চোখ মুছে দিল। এরপর জাহিদের দুই চোখে চুমু খেল। নাদিয়া এখন সেই নিষিদ্ধ জিনিসটাকে গ্রহণ করবে, যেই জিনিসটা ওর জন্য ক্ষতিকারক। সব বাঁধা ভুলে নাদিয়া জাহিদের ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ মিলিয়ে নিজেকে বিলীন করে দিল।

“আমার প্রতিটি রক্ত বিন্দু,
আমার পুরো শরীর
ছিন্নভিন্ন হলেও
এই আত্মা রবে তোমার ই।
পুরো পৃথিবী আমায় করলেও বারণ,
আমি তোমার প্রেমেই হবো বিলীন।

তোমার প্রেম যেন অন্ধকার সমুদ্র,
রহস্যময়, যাওয়া বারণ
তুমি শুধু তুমি,
সেটাই যথেষ্ট কারণ।

তোমার জন্যই জন্ম আমার
তোমার জন্যই ধ্বংস,
আমি পরোয়া করি না কারো
কারণ প্রেম অবিনশ্বর।

তোমার আগুন ছুঁয়ে আমি ছাই হয়ে যাবো,
তোমার অন্ধকারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো,
তোমার গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাবো,
আমি তোমার প্রেমে বিলীন হয়ে যাবো।”

ধ্বংসের পথে পা বাড়াতে ভালোই লাগে। এটা মানুষের একটা বৈশিষ্ট্য। ধ্বংস অনিবার্য জেনেও অনেক কাজ করে বসে। শেষ টা জানা থাকে, তবুও ভালোই লাগে। নাদিয়া জানে ও একটি টক্সিক রিলেশনশিপে আছে, তবুও ওর জাহিদের সাথে থাকতে ভালো লাগে। এই কষ্টে একটা ভালো লাগা আছে। কষ্টের মধ্যে একটা মধুরতা আছে। সেই অনুভূতি কে বিটারসুইট বলা যায়। দিন শেষে আমাদের সবার জীবনই বিটারসুইট।

শুদ্ধ আর প্রিয়ম একটি জায়গায় বসে আছে। প্রিয়ম ওর স্কুল ইউনিফর্ম , আর শুদ্ধ ওর অফিসের পোষাকেই।

– অনেকদিন পর।
– হুম। কেমন আছিস?
– আমি কেমন থাকবো? ম*রা মানুষ কেমন থাকে রে?
– আ’ম স্যরি। আমি কিছুই করতে পারিনি।
– তুই তো অনেক ভালোই আছিস আমার বান্ধবী কে নিয়ে। শুধু আমিই নেই। সবাই ভালো আছে। ঐ ব্লাডি বাস্টা*র্ড গুলোও!
– আমার কী দোষ! আমি এত বছর ভুগেছি। আজকে গিয়ে একটু শান্তি পেলাম। আমাকে একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে দে। অরনীর কী দোষ? আমরা অনেক কষ্ট করেছি। আমাদের ও তো শান্তিতে বাঁচতে ইচ্ছে হয়।
– এই দুনিয়ায় সবার শান্তিতে বাঁচতে ইচ্ছে হয়। শুধু একজন ধর্ষি*তা ছাড়া। আমার ধর্ষ*ক গুলো নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমি ম*রে গেলাম। বেঁচে থাকলেও এর ব্যতিক্রম হতো না। শুদ্ধ, তুই আর অরনী সুখে শান্তিতে সংসার কর। তোরা অনেক কষ্ট করেছিস। বিনা দোষে এত গুলো বছর।
– তুই ম*রে গেলি কেন? তোর বাচ্চার কী দোষ ছিল? আমি বলেছিলাম আমি ভিডিওটা ডিলিট করে দেব। সেদিন তুই মানা করে দিলি। বললি তুই ওদের শাস্তি দিতে চাস। তোর বাচ্চাকে জন্ম দিতে চাস। তবে কেন মরে গেলি? তোর যদি এই বাচ্চা জন্ম না দিয়ে সাধারণ ভাবে বাঁচার ইচ্ছা থাকতো আমি সব ডিলিট করে দিতাম। কেন করলি এমন!
– ভিডিও ডিলিট হলে কী আমি জাস্টিস পেতাম? ওরা কী শাস্তি পেত? উল্টো ওদের পাপ মুছে যেত। আমি বেঁচে থাকলে জীবন্ত লা*শ হতাম। কারণ এই সমাজে ধর্ষ*করা দোষী নয়, ধর্ষি*তারাই দোষী!
– তারপরও আত্ম*হ*ত্যা কোনো কিছুর সমাধান না।
– কে বলছে এই কথা? যে কি না নিজেই স্কুলের ছাঁদ থেকে লাফ দিতে যাচ্ছিল।
– তাই জন্যই বলছি। আমি বেঁচে আছি। লড়াই করে বেঁচে আছি।
– আর প্রতি মুহূর্তে ম*রছিস। প্রতিবার অরনীর মুখোমুখি হওয়া যেন একেকটা মৃ*ত্যু। তারচেয়ে ভালো আমি একেবারেই মরে গেছি।
– তো আমি কী করবো? ওনাকে সত্যি টা বলে দেব?
– হুম। কয়দিন কাপুরুষের মতো বাঁচবি? একদিন না একদিন তো সত্যিটা সামনে আসবেই। অরনী কে সত্যি টা বলে দে।
– না! সত্যি জানার পর উনি আর বাঁচবে না। তুই জানিস না উনি অনেকবার আত্ম*হ*ত্যার চেষ্টা করেছে।
– যতদিন ও সত্যি জানবে না, ততদিন চেষ্টা করবে।
– আমি বলতে পারব না। উনি আমাকে ঘৃণা করবেন।
– তোর কোনো দোষ নেই। তুই আর আমি দুজনেই ভুক্তভোগী। ও তোকে ঘৃণা করবে না। উল্টো তুই নিজেকে ঘৃণা করবি। ওর থেকে আর কিছু লুকাবি না। বলে দে, তুই কে? আমার সাথে কী হয়েছিল, সব।
– উনি তখন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
– এভাবে আর কতদিন থাকবি?
– যতদিন থাকা যায়।
– তবে তোরা এভাবেই থাক। আমি অপেক্ষা করবো।
– কীসের?
– যেভাবে তোদের বিয়ে হয়েছে, সেভাবেই সত্যি টা সামনে আসার।

(চলবে)

#রিস্টার্ট
#পিকলি_পিকু
#পার্ট_২৭

নাদিয়ার পাশে জাহিদ ঘুমাচ্ছে। দুজনেই একই চাদরের নিচে। হালকা হালকা জ্যোৎস্নায় জাহিদের ঘুমন্ত চেহারা দেখা যাচ্ছে। এই মানুষটাই সেদিন কেমন ভয়ানক ছিল, আর আজ একদম নিষ্পাপ। এই মানুষটার সাথে কী হয়েছিল? কারা করেছিল? যদি তাদের খোঁজ পাওয়া যায় তবে ও তাদের ছাড়বে না। এত গভীর ঘুমে জাহিদ, নিশ্চয়ই কোনো ভালো স্বপ্ন দেখছে। কী স্বপ্ন দেখছে? আচ্ছা, ওরা দুজন কী একই স্বপ্ন দেখে? ভাবতে ভাবতে নাদিয়া ও ঘুমিয়ে গেল।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নাদিয়া আশেপাশে জাহিদ কে খুঁজছিল। কিন্তু ও ঘরে ছিল না। জাহিদ কে খুঁজতে খুঁজতে নাদিয়া রান্নাঘরে আসলো। সেখানে জাহিদ ওর জন্য নাস্তা বানাচ্ছে।

– উঠে গেছেন?
– হুম। নাস্তা বানাচ্ছেন কেন?
– খাবেন না?
– খাবো। আজকে শুক্রবার। আপনি বিশ্রাম নিন।
– না। আসলে আপনার চাকরি হয়েছে, আমি এখনো কোনো শুভেচ্ছা জানাইনি। উপহার ও দেই নি। তাই সকালে ভালো একটা নাস্তা বানাতে ইচ্ছে হলো।
– ব্যস! শুধু নাস্তা?
– না। কী চাই বলুন?
– যা চাই তা পাব?
– সাধ্যের মধ্যে থাকলে পাবেন।
– এখানে বসুন।

খাবার টেবিলে দুজন বসলো। নাদিয়া ওর হাত বাড়িয়ে জাহিদের হাত ধরল। এরপর ওর হাত দিয়ে জাহিদের চেহারা ছুঁয়ে দেখে। জাহিদ বুঝতে পারলো নাদিয়া কী চায়। ওর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে আর ও মাথা নেড়ে বলছে এটা সম্ভব না।

– কী?
– ওটা পারব না।
– আমি তো বলিই নি এখনো।
– আপনি চলে যেতে চান, তাই না? আমি কী করে থাকবো?
– আমি যাব না। তবে ভবিষ্যতের কথা ভাবুন। সেদিন আপনি নিজেও জানতেন না এসব কী হচ্ছিল। এরপর যদি আবার এমন হয়?
– তাই চলে যাচ্ছেন?
– না। আমি কোথাও যাচ্ছি না। সত্যি! আমি চাই আপনি একজন ভালো ডাক্তার দেখান। আপনার সাথে কী হয়েছিল আমি জিজ্ঞেস করবো না। আপনি যখন কমফরটেবল হবেন, সব বলবেন। আমি সবসময় আপনার সাথেই থাকতে চাই। আর কেউ না। কিন্তু এভাবে চললে সম্ভব হবে না। সেদিন এভাবে মারামারি করলেন, একদিন যদি আমাকে,
– আমি আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারি না।
– করছিলেন।

জাহিদ মাথা নিচু করে আছে। নাদিয়া বারবার ওর হাত স্পর্শ করছে। জাহিদ এবার নাদিয়ার দিকে তাকালো। নাদিয়া করুণ দৃষ্টিতে বলল,
– আমি একটা টক্সিক রিলেশনশিপ চাই না। আমি আর পাঁচটা সাধারণ সম্পর্কের মতো একটা সম্পর্ক চাই। যেখানে কোনো ইনসিকিউরিটি থাকবে না। যেখানে বিশ্বাস থাকবে, ভালোবাসা থাকবে। আপনি মানুষ হিসেবে খুবই ভালো। সেখানে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে এ ধরণের আচরণ করলে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না।
– আমি চেষ্টা করবো।
– আপনি পিপি স্যারের সাথে কথা বলুন।
– কেন!
– উনি আপনাকে ভালো গাইড করতে পারবে। এসব বিষয়ে জানেন। আপনি ওনার সাথে গিয়ে একবার কথা বলুন। প্লিজ!
– চেষ্টা করব ।
– না, করতেই হবে।
– ওকে।

নাদিয়া আর ওর বাবার বাড়ি গেল না। কিন্তু জাহিদ, এখনো ভাবছে পিপির সাথে দেখা করবে কি না। দেখতে দেখতে নাদিয়ার ম্যাগনেফিসেন্ট এ জয়েন করার দিন চলে আসে। নাদিয়া ওর পুরো ক্লোসেট বদলে ফেলল। অনেক শপিং করেছে। জাহিদ ভাবছে ও ঠিক কোন স্কুলে জয়েন হয়েছে যার জন্য নিজের পোশাকের ধরণ বদলে ফেলল। চুল ও ছোট করে ফেলেছে। এভাবে ভিন্ন মানুষ হওয়ার পেছনে কারণ কী? এমন না যে এখন ওকে খারাপ লাগছে। এখন অন্যরকম সুন্দর লাগছে। তবুও,

– স্কুল টা কোথায়?
– গুলশানে।
– ডিপ্লোমেট এরিয়া।
– হুম। বড় স্কুল।
– নাম কী?
– আপনাকে বলিনি? ওকে, কাল চলুন আমার সাথে। একেবারে দেখবেন।
– আমি!
– হ্যাঁ। আপনি আমাকে পৌঁছে দেবেন। প্রথম দিন, আমি কী উবারে যাব?
– দিয়ে আসবো। আর দেখেও আসবো কী এমন স্কুল!
– পিপি স্যারের সাথে কথা বলেছেন?
– বলবো।
– এখনো বলেননি। কেন? নইলে আমি চলে যাবো।
– আমি কথা বলছি তো।
– কাল যাবেন।
– ওকে।

নাদিয়া পিপিকে মেসেজ করে জানিয়ে দেয় সকালে যেন ওকে ফোন করে। পিপি এখনো জানে না নাদিয়া এখনো বাসায়। পরদিন সকালে ওরা দুজন তৈরী হয়ে একসাথে স্কুলে যাচ্ছে। চেনা পরিচিত রাস্তা। এখানে আবার নতুন বড় স্কুল হলো কোথায়?

– কোনদিকে যাব?
– বামে।
– এরপর?
– যেতে থাকুন।

নাদিয়া এদিক ওদিক বলে ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। জাহিদের আবার একটা প্যানিক অ্যাটাক আসছে। ও কী ম্যাগনেফিসেন্টে চাকরি নিয়েছে? অসম্ভব!!!

– এই যে চলে এসেছি। ম্যাগনেফিসেন্ট! আমার লক্ষ্য!
– জ্বী!
– হ্যাঁ এটাই। সারপ্রাইজ! আচ্ছা, এখন অফিসে যান। পেছনেও গাড়ি আছে।

জাহিদ কোনো ভাবে গাড়ি ঘুরিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। কী করে সম্ভব! নাদিয়া ম্যাগনেফিসেন্টে চাকরি করতে পারে না। ঘুরে ফিরে প্রিয়মের কথাই সত্যি হচ্ছে। এভাবে তো ও সব জেনে যাবে। জাহিদ গাড়ি টা একটা রাস্তার মাঝখানে থামিয়ে জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। ওর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। এখনই মনে হয় এই পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে। ও অনেক জোরে ঘামাতে থাকে। সাথে ওর হাত পা কাঁপতে থাকে। ওর হৃৎপিন্ড যেন ফেঁটে যাবে। বুকের ভেতর কেমন ব্যাথা শুরু হয়। আশে পাশে কোথাও পানি থাকলে মাথায় পানি ঢাললে ভালো হতো। ওর কখনো মাঝরাস্তায় এমন হয়নি। এভাবে একটা গাড়ি দাঁড়ানো দেখে আশপাশ থেকে অনেক মানুষ এগিয়ে আসে। ভেতরে একটা লোক বোধহয় মারা যাচ্ছে। গাড়ি থেকে ওকে বের করতে হবে।

এদিকে নাদিয়া ওর বহুল প্রতিক্ষিত ম্যাগনেফিসেন্টে ঢুকতে পেরেছে একজন শিক্ষক হিসেবে। ও এখন ভেতর টা ঘুরে দেখতে পারবে কোনো বাঁধা ছাড়াই, যেভাবে প্রিয়ম ঘুরে বেড়াত। ও খুঁজে বের করবে কেন প্রিয়ম মারা গিয়েছিল। ওর কাছে মনে হচ্ছে প্রিয়ম যেন এখুনি, এখানেই হেঁটে গেল। ও এই ইউনিফর্মটাই পরত। এই দোলনায় হয়তো বসতো। এখানের কোনো একটা ক্লাসরুমে ক্লাস করত। এই ক্যাফেটেরিয়াতেই খেত। ওর বর্ণনার মতো অনেক কিছুই আছে, আবার অনেক কিছুই নেই। নাদিয়ার লক্ষ্য হচ্ছে এই পুরনো ডেটাবেজ গুলো থেকে প্রিয়মের ক্লাসমেটদের সব তথ্য বের করে ওদের সাথে কথা বলা। ঠিক কী হয়েছিল ওর সাথে?

জাহিদ কে বাঁচাতে ওর গাড়ির দরজা খুলতে চাইছে অনেকে। ও বুঝতে পারছে। তাই অনেক চেষ্টা করার পর নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য গাড়ির দরজা খুলল। ফোনে পিপি কল করতেই একজন পথচারী ফোন তুলল,
– হ্যালো জাহিদ,
– এই ফোনের মালিক খুব অসুস্থ। হার্ট অ্যাটাক করেছে বোধহয়।
– কী বলেন! কোথায় আছে?

পিপি ওর পিএ কে নিয়ে জাহিদের কাছে এলো। ওকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। তবে ততক্ষণে ও শান্ত হয়েছে।

– কেমন আছ! কী হয়েছিল?
– পপপপ্যানিক,
– আস্তে আস্তে। প্যানিক অ্যাটাক?
– আমাকে বাঁচান!!

জাহিদ কাঁদতে লাগলো। পিপি ওকে আবার শান্ত করে নিজের বাসায় নিয়ে গেল।

– তুমি যদি চাও আমি তোমাকে বাঁচাই, তবে সব খুলে বলো। বলো রাজি?
– আপনি ওনাকে কিচ্ছু বলবেন না, প্লিজ !
– একজন ডাক্তার আর পেশেন্টের মধ্যের কথা বাইরে যাবে না। এখন বলো, প্রিয়ম আর তোমার কী সম্পর্ক?
– আমি প্রিয়মকে চিনি। ও আমার বন্ধু ছিল। আমরা বেস্টফ্রেন্ড ছিলাম।
– তারপর?
– ও আমার জন্য মা*রা গেছে।
– এক মিনিট, ও আত্ম*হ*ত্যা করেছিল তাই না?
– হ্যাঁ। কিন্তু ওর খু*ন আমি করেছি!
– খু*ন! তুমি নিজেকে ব্লেইম করছো। এভাবে বললে হবে না। আমার সাথে আসো।

পিপি একজন কে ফোন করলেন। পিপির বাসার ভেতরে একটা স্টাডি আছে। সেখানে সব বই আর চেয়ার। এটা অনেকটা ওনার ল্যাব। কিছুক্ষণ পর সেখানে বেনজির বৃষ্টি এলেন। জাহিদ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আরেকটা ধাক্কা।

– তুমি আমার রেকমেন্ড করা ডাক্তারের কাছে যাও নি। আমার স্ত্রীর কাছেই গিয়েছ।
– উনি আপনার স্ত্রী!!!
– ইয়েস। এতে আমার কোনো হাত নেই। তুমি নিজেই করেছ। উনি এখন তোমার কথা শুনবেন।
– উনি?
– হিপনোসিস। উনি এতে স্পেশালিস্ট। তোমার এখন রিল্যাক্স করা দরকার। তুমি এভাবে বললে একটা গোঁজামিল সিচুয়েশন হবে। আমার মনে হয় তুমি অনেক ম্যানিপুলেটেড। কেউ তোমাকে বাধ্য করেছে ভাবতে তুমি দায়ী। ওখানে গিয়ে রিল্যাক্স হও।

বেনজির সরঞ্জাম ঠিক করে জাহিদের সামনে এসে বলল, ” ভয় পেও না, আমি নাদিয়া কে কিছু বলব না।”

জাহিদের সেশন শুরু। ওকে রিল্যাক্স করা হলো। প্রথম থেকেই ও সব বলছে। বেনজির ওকে আস্তে আস্তে সব জিজ্ঞেস করছে। ও শান্ত মস্তিষ্কে জীবনের খুটিনাটি সব বলছে। ওর একটা ডাক নাম ছিল, শুদ্ধ। এরপর ওর ম্যাগনেফিসেন্টে ভর্তি হওয়া, কীভাবে প্রিয়ম এসেছিল এই স্কুলে। ওরা কীভাবে বন্ধু হলো। অরনীকে না দেখেই ওর প্রেমে পড়া। আস্তে আস্তে ওনারা আসল কাহিনী তে আসলেন।

প্রিয়ম আর সারা, স্কুলের সাপ আর বেজী। সারা প্রিয়মকে সহ্য করতে পারত না। কারণ শুদ্ধ এখন আর ওর হোমওয়ার্ক করে না। ওর সাথে কথা বলে না। সারা ঠিক করেছে প্রিয়মকে দেখে নেবে। তাই ওকে একদিন ওয়াশরুমে ঘিরে ধরল,

– তুমি শুদ্ধের মাথা খাওয়া বন্ধ করো।
– যাতে তুমি খেতে পারো তাই?
– ইউ!
– লিসেন, আমি অরনীকে কথা দিয়েছি। ওর বয়ফ্রেন্ডকে তোমার মতো মেয়ের থেকে রক্ষা করব।
– কী বলতে চাও তুমি।
– দূরে থাকো।
– হাও ক্যান ইউ টক টু মিট লাইক দিস!

প্রিয়ম চলে আসছিল। সারা ওর দিকে তেড়ে আসে।
” সে স্যরি টু মি!!”
প্রিয়ম সারাকে মধ্যাঙ্গুলী প্রদর্শন করে। এরপর সারা আরো রেগে গিয়ে প্রিয়মকে মারতে আসে। সারার তেড়ে আসা দেখে প্রিয়ম সরে যায়। আর সারা ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এই দৃশ্য দেখে সবাই হাসতে থাকে। অত্যন্ত অপমান আর লজ্জায় সারা ঠিক করে প্রিয়মকে একটা যথাযোগ্য শিক্ষা দেবে। ডার্ক রুমে বসে রাগে ফুঁসছে সারা। ওর আশে পাশে সানি, আজফার, অর্ঘ্যদীপ আর ভিরাজ।

– ওকে শিক্ষা দিতে হবে।
– কী শিক্ষা দেব? (সানি)
– ওর উইকনেস খুঁজ।
– ওর কোনো উইকনেস নেই।
– ওকে এমন অবস্থায় আনবো যে ওর ভেতরটা চুরমার হয়ে যাবে। আমার পায়ের উপর কাঁদবে। আমি দেখব আর হাসবো।
– কী করতে পারি? এখানে তুলে এনে টর্চার করবো। এরপর ন্যুড ভিডিও?
– ও যা করবে, নিজের ইচ্ছায় করবে। ওর লজ্জা, ঘৃণা হবে নিজের উপর।

ভিরাজ বলল,
– হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট আস টু ডু?
– সিডিউস হার। তোমাদের মধ্যে যে ওকে বেডে নিতে পারবে আমি তার সাথে বেডে যাব।
– হোয়াট দ্য!
– এখন পর্যন্ত জাস্ট কিস। তোরা কেউ যোগ্য না আমার সাথে শোয়ার।

অর্ঘ্যদীপ বলল,
– ডাবল মজা! প্রিয়ম ও আর সারাও। আ’ম উইনিং।
– শর্ত আছে। ভিডিও করতে হবে। শব্দ সহ। এমন না মনে হয় ওকে তোরা জোর করছিস। ও চাইছে এমন। পিওর স্লা*ট! এরপর যা হবে দেখা যাবে।

প্রিয়মকে পটানোর লক্ষ্যে চার বন্ধু নানা কারসাজি করতে থাকে। প্রিয়ম এতটাও বোকা না যে ঐ চার বন্ধুর সাথে প্রেম করবে। নানাভাবে ওদের হেনস্থা করতে থাকে। প্রিয়মকে শিক্ষা দেওয়ার জায়গায় নিজেরাই জব্দ হয়ে আসছে। এতে সবার রাগ ওর উপর বাড়ছে। তবে প্রিয়ম ইদানিং শুদ্ধের সাথে একটু কম সময় কাটায়। শুদ্ধ বিষয়টা বুঝতে পারে,

– তুই কোথায় থাকিস ইদানিং?
– স্কুলেই তো।
– না। তোর কী অন্য বন্ধু আছে?
– না। মানে হ্যাঁ।
– কে?
– আছে। সিকরেট।
– সিক্রেট!
– ও না আমাদের মতোই স্কলারশিপ। কেউ জানে না। জানতে পারলে ঐ চারজন ওকে মারবে।
– কার কথা বলছিস?
– আছে একজন।
– এই মুহূর্তে শুধু আমি আর তুই স্কলারশিপ।
– ও সিক্রেট তো। লুকিয়ে থাকে। আজ দেখা করবো, চল।

প্রিয়ম আর শুদ্ধ স্কুলের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়ম একটা শিষ বাঁজায়। সেটা শুনে একটা ছেলে আসে। চশমা পরা, ভালো ছেলের মতো দেখতে। ছেলেটা ওকে দেখে থতমত খেয়ে যায়।

– ও হচ্ছে ফাইয়াজ, আমার বন্ধু। ও স্কলারশিপ, কিন্তু ওকে এখানে কেউ চেনেনা। লো প্রোফাইল মেইনটেইন করে।
– ফাইয়াজ!

শুদ্ধের বুঝতে বাকি রইলো না ও নাটক করছে। ও বলতে যাবে তার আগেই ফাইয়াজ কথা ঘুরিয়ে নেয়।
– শুধু বন্ধু? উই আর ডেটিং!
– স্যরি শুদ্ধ। এত তাড়াতাড়ি হলো বলতেই পারিনি।

শুদ্ধের বিশ্বাস হচ্ছে না। এই ফাইয়াজ কী করে প্রিয়মের কাছে আসলো। শুদ্ধ রেগে বলল,

– কী করে দেখা হলো?
– ওকে কারা যেন বুলি করছিল। ও তো কারো সাথে মেশে না। আমি গিয়ে ওকে বাঁচালাম। আস্তে আস্তে কথা হলো, আর তারপর ফ্রেন্ডশিপ।

ফাইয়াজ বলল,
– নাও উই আর মোর দ্যান ফ্রেন্ডস।
– চুপ করো। শুদ্ধ, কাউকে বলিস না আমাদের কথা।
– ওর তো তুমি ছাড়া আর কোনো ফ্রেন্ড নেই। ও বলবে না।
– তাই তো।

প্রিয়ম দূরে যেতেই ফাইয়াজ শুদ্ধের গলা চেপে ধরে, ” ভুলেও বলবি না আমি কে। ও যদি অন্য কারো কাছ থেকেও জানতে পারে বুঝব তুই বলেছিস। আর একবার যদি জানে তুই আর প্রিয়ম দুজনকে ডার্ক রুমে একসাথে এমন ভাবে টর্চার করবো কাউকে বলতেও পারবি না।”
শুদ্ধ ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু প্রিয়ম কে জানানো দরকার। ও কী ভাবে বলবে খুঁজেই পাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত ওর ম্যাথ বইয়ের ভেতর একটা চিরকুট দিয়ে দেয়। তাতে লেখা “ছিল দশটার দিকে লাইব্রেরির পেছনে এসো। মেইন বস থাকবে সেখানে।”

প্রিয়ম দশটার সময় সেখানে যায়। সেখানে একটা দরজা আছে যেটা নীচের দিকে যায়। প্রিয়ম আস্তে আস্তে সেখানে যায়। শুদ্ধ লুকিয়ে দেখছে। ও চেয়েছে প্রিয়ম নিজের চোখে দেখুক ফাইয়াজ কে। প্রিয়ম অনেক বুদ্ধিমান, ও যদি দেখে ফাইয়াজ কে ও আবার লুকিয়ে চলেও আসতে পারবে। এরপর নিজে থেকেই নিজেকে আলাদা করতে পারবে। কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও প্রিয়ম আর আসলো না। শুদ্ধ ভয় পেয়ে গেল। শুদ্ধ ডার্ক রুমের দরজার কাছে যেতেই সানি আর বাকিরা দেখে নেয় ওকে। পালানোর আগেই ওরা বুঝে যায় ও অন্য কিছু করতে এসেছে। ধরা পড়ে যাওয়ার পর ওরা দুজনেই এখন ডার্ক রুমে। প্রিয়ম চিৎকার করছে। ওর সাথে ধোঁকা হয়েছে।
” আমি তোমাকে দেখে নেব ফাইয়াজ!!! ছাড়ব না!!! তুমি আমার ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলে?”

ওরা সবাই হাসতে থাকে। সানি বলল, ” তুই তো প্ল্যানে ছিলিই না। আমরা কেউ পারলাম না। আর তুই মাঝখানে এসে সব বাজিমাত!”
” সারা কে তোদের কাউকে টাচ করতে দিতে ইচ্ছা হচ্ছিল না। ও শুধু আমার! ” ফাইয়াজ।

শুদ্ধ কাঁদতে থাকে। প্রিয়ম শুদ্ধ কে কাঁদতে বারণ করে। একটু পর সারা ও আসে। প্রিয়ম আর শুদ্ধের হাত বাঁধা, হাঁটু গেড়ে ওরা সারার সামনে।

– স্যরি বলো প্রিয়ম।
– থু! জীবনেও না!
– ফাইয়াজ! ওকে ভিডিও টা দেখাও।

প্রিয়ম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কীসের ভিডিও? শুদ্ধ প্রিয়মের দিকে তাকায়। প্রজেক্টেরে ভিডিও চলছে, ফাইয়াজ ও প্রিয়মের। প্রিয়ম ভিডিও টা বন্ধ করার জন্য চিৎকার করলো। শুদ্ধ চোখ বন্ধ করে ফেলল। আজফার গিয়ে শুদ্ধের চোখ খুলে ধরল। প্রিয়ম এত বোকামি কীভাবে করল! শেষমেশ ফাইয়াজের সাথে! এই ফাইয়াজ এক নম্বরের শয়তান! ভিরাজ গিয়ে শুদ্ধ কে মারতে লাগলো। অর্ঘ্যদীপ বলল,

– এখন তো সারা ফাইয়াজ কে রিওয়ার্ড দেবে।
– এত তাড়াতাড়ি না। আগে এই স্লা*টটা আমার কাছে ক্ষমা চাইবে।
– মিস প্রিয়ম, তোমাকে তো বলেছিলাম আমার সাথে প্রেম করতে। আমি তো লম্পট! তুমি তো সতী সাবিত্রী। ব্লাডি স্লা*ট! এখন স্যরি বলো।

প্রিয়ম চিৎকার করে বললো, “বলব না!!!” শুদ্ধ বলল, ” আমি স্যরি বলছি! ওকে ক্ষমা করে দাও। ” ওরা শুনল না। সানি শুদ্ধকে মারতে লাগলো। প্রিয়ম তবুও স্যরি বলল না। সারা রেগে বলল, ” এই বি*চ টা কে নিজেদের মতো করে শিক্ষা দে। সাথে ওর বন্ধুকেও। যাতে ওদের আজীবন মনে থাকে একটা স্যরি বললে এত কিছু হতো না।”

প্রিয়ম কে টেনে হিঁচড়ে রুমের কর্ণারে নেওয়া হলো। শুদ্ধ চিৎকার করে ক্ষমা চাইলো। প্রিয়ম এখনো চাইলো না। একে একে পাঁচজন মিলে প্রিয়মকে শুদ্ধের সামনে ধ*র্ষণ করলো। ওর হাত পা বাঁধা থাকায় ও প্রিয়মকে রক্ষা করতে পারল না। এই দৃশ্য শুদ্ধ দেখতে চাইছিল না। কিন্তু ওকে দেখতেই হলো। এই বিভৎস স্মৃতি গুলো ওর মস্তিষ্ক থেকে কখনো সরবেনা। সেদিন ও বুঝছিল ও কতটা দুর্বল। নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছিল। ওদের কাজ শেষে যখন প্রিয়ম মেঝেতে পড়েছিল, ও কাঁদতে ও পারছিল না। বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছিল।
“শুদ্ধ!!! শুদ্ধ !!!! আমাকে বাঁচা!!!! বাঁচা আমাকে!!!”

কিন্তু কাপুরুষ শুদ্ধ কিছুই করতে পারছিল না। শুধু কেঁদেই গেছে আর, ” আমাদের ছেড়ে দাও। আমরা কাউকে কিচ্ছু বলব না।” বলে গেছে। ওর হাত খুলে দেওয়ার পর নিজের শার্ট খুলে প্রিয়মকে ঢাকা ছাড়া কিছুই করতে পারে নি। সানি এই পুরো ঘটনার ভিডিও করছিল। ওরা হাসছিল শুদ্ধ কীভাবে প্রিয়মকে শার্ট খুলে দিয়েছিল তা দেখে। আজফার আর ভিরাজ শুদ্ধকে পুরোপুরি ন*গ্ন করে, আর সানি সেই ভিডিও তোলে। অর্ঘ্যদীপ এসে শুদ্ধকে ব্যাট দিয়ে মারতে থাকে ইচ্ছেমতো। কিছুক্ষণ পর আজফার আর ভিরাজ ও যোগ দেয়। ফাইয়াজ সোফায় বসে সিগারেট টেনে যাচ্ছিল। প্রিয়ম অত্যন্ত ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। কেন ভালোবেসেছিল এই রাক্ষসটাকে? সত্যিই প্রিয়মের কোনো দুর্বলতা ছিল না, এই একটা দিকে দুর্বল ছিল। হৃদয়ের দিকে ওর আরেকটু কঠিন হওয়া উচিত ছিল। ফাইয়াজ প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে হাসে, এরপর শুদ্ধের শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিতে থাকে। বিকাল পর্যন্ত ওদের দুজনের উপর নির্যাতন চলে। পরবর্তীতে ওরা সেখান থেকে বের হয়। লকার থেকে ফিজিক্যাল এডুকেশন এর এক্সট্রা ড্রেস পরে ইনফারমারি তে যায়। সেখানকার একজন নার্স এসব দেখে ঘাবড়ে যান। ওরা পুলিশের কাছে যেতে পারবে না, কারণ এখানে ট্রাস্টি বোর্ডের ছেলেরা জড়িত। সেখান থেকে নিয়ে ওরা বাড়ি ফিরে আসে। শুদ্ধের মা চোখে কম দেখতে পেত , তাই ওর আঘাত গুলো দেখেনি। প্রিয়ম বলেছিল পড়ে গিয়েছিল। ওর শরীরের আঘাত গুলো ও মিথ্যে দিয়ে লুকিয়ে ফেলে। ওরা দুজন এরপর স্কুলে এসেছে। কিন্তু সেই আঘাত ভুলতে পারেনি। প্রিয়ম ওদের নামে কমপ্লেইন করতে চাইলেও শুদ্ধ করতে দেয়নি। কারণ ওরা ওদের গায়েব করে দিতে পারে। ওরা মেনে নিয়েছিল ওদের সাথে যা হয়েছে। আস্তে আস্তে ওদের শরীরের আঘাত শুকিয়ে গেল।

একমাস পর প্রিয়ম বুঝতে পারে ও প্রেগনেন্ট। শুদ্ধ আর প্রিয়ম হাসপাতালে গিয়েও টেস্ট করে। শুদ্ধ বিষয়টা সানি কে বলে। এখন প্রশ্ন উঠে এই বাচ্চা কার?

” কে প্রটেকশন ইউজ করেনি?” অর্ঘ্যদীপ।
” আই অলয়েজ কীপ মাই প্রটেকশন। ” ভিরাজ।
” আই ডিড অলসো। আই ইভেন গেইভ ওয়ান টু সানি।” আজফার।
” বাট স্টিল চান্স থাকে।” ফাইয়াজ।
” তুই ইউজ করিস নি।” সানি।
” পাগল নাকি?” ফাইয়াজ।
” লেটস ওয়াচ দ্যা ভিডিও।” সানি।

ভিডিও তে সবার টা আছে ফাইয়াজের সময় টা উধাও।

“আই থিংক ফাইয়াজ ইজ দ্য ফাদার।” আজফার।
” নট মি! আমাকে তো দেখাই যায়নি। হোয়াটেভার, লেটস গেট রিড অফ দ্য চাইল্ড।” ফাইয়াজ।

প্রিয়ম আর ফাইয়াজ ডার্করুমে বসে আছে। শুদ্ধ প্রিয়মের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।

– অ্যাব*র্শন এর সব খরচ আমার। কবে করছ?
– হু টোল্ড ইউ আমি অ্যাব*র্শন করছি?
– আর ইউ ম্যাড! এই বাচ্চা তুমি রাখবে?
– ইয়েস।
– কী বলবে? বাবা কে?
– বাচ্চা হলেই দেখা যাবে। আর বাচ্চা টা যখন হবে তখন তোমরা সবাই জেলে যাবে।
– কাম টু সেন্স!
– এখন তোমাদের বিচার হবে।

প্রিয়ম চলে আসে। শুদ্ধ প্রিয়মের পেছনে দৌঁড়াতে থাকে,

– অ্যাব*র্শন করবি না মানে? বাচ্চা কী তুই রাখবি?
– হ্যাঁ। আর এত কিছুর পর ও বেঁচে আছে, ভবিষ্যতে ও পারবে। বাচ্চাটার কী দোষ?
– নেই , কিন্তু কী বলবি সবাইকে?
– আমার বাচ্চার বাবার দরকার নেই। মা ই যথেষ্ট।
– বাসায় বলেছিস?
– না। বলব।
– অরনী?
– এখনো না। তবে সবাইকে বলবো। যখন বাচ্চা হবে, তখন সবাই জানবে ওরা দোষী।

পেছন থেকে অর্ঘ্যদীপ আসে,

– ভুল। তখন আমরা বলব এই লুজার ও আমাদের সাথে ছিল। ও তোমাকে রে*প করেছিল।
– আমি তো বলব না।
– এরপর রিপোর্টে এটা ওর বাচ্চা প্রমাণ করতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। ও হবে আমাদের স্কেপগোট।
– এত সোজা?
– হ্যাঁ। আমাদের বাবাদের চেন না। তুমি যাও, আমাদের কিছুই হবে না। এই লুজার টা ফাঁসবে।
– শুদ্ধের কিছু হবে না। তোমরা যাবে জেলে।

প্রিয়ম শুদ্ধ কে নিয়ে চলে আসে। শুদ্ধ খুব ভয় পেতে থাকে। এখন ওকেও ফাঁসিয়ে দেবে। সেই সুযোগ নিয়ে সানি শুদ্ধ কে একটা পিল দেয়। এই পিল প্রিয়মের খাবারে মেশালে ওর বাচ্চা মরে যাবে, আর ওর কষ্ট ও হবে না। প্রিয়মের ও কোনো সমস্যা হবে না, ওদের ও হবে না। শুদ্ধ পিল টা হাতে নিয়ে বসে আছে। প্রিয়ম আসতেই ওর হাতে দিয়ে বলে,
– ওরা বাচ্চাকে মারতে চাইছে।
– আই নো। থ্যাংক ইউ। প্রমিস মি আমার লড়াইয়ে তুই সাথে থাকবি?
– হ্যাঁ। আমি ওর মামা। আমি তোর ভাই। আমি তোকে সবসময় প্রটেক্ট করবো। সেদিন পারিনি তো কী হয়েছে?
– গুড বয়। তুই পাশে থাকলে আমার কোনো ভয় নেই।
– অরনীকে ও বল। উনিও নিশ্চয়ই কোনো সাহায্য করবে।
– এখন না। ওর ভাইয়ের এঙ্গেজমেন্ট। পরে বলব।

এরপর একদিন ফাইয়াজ ওকে রাস্তা আটকে দেয়,
– আ’ম স্যরি প্রিয়ম। আমাকে ক্ষমা করে দাও।
– কেন? আবার কী গেম খেলছ?
– আই লাভ ইউ। আবার শুরু করি?
– বন্ধুদের নিয়ে আমাকে ছিড়ে খাওয়ার সময় মনে ছিল না?
– স্যরি। আর হবে না। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
– ওকে। এখন তুমি কী আমায় বিয়ে করবে?
– হ্যাঁ, তবে বেবিটা অ্যাবর্ট করতে হবে।
– দেখিয়ে দিলে তো আসল রূপ! আমি জানতাম।
– তুমি বুঝতে চেষ্টা করো, এটা শুধুই বাঁধা। আর ওর বাবা কে তুমি জানো? আমরা এখনো ছোট। বিয়ে করে বাচ্চা এসব সম্ভব না।
– ক্রাইম করার জন্য বড়। দায়িত্ব নেওয়ার জন্য না। আই উইল বি হ্যাপি যদি ওর বাবা তুমি না হও! আই এম এনাফ ফর মাই চাইল্ড!
– তাহলে শোনো, আমি শিওর এটা আমার বেবি। আর আমি চাই না ও পৃথিবীতে আসুক। আর আই উইল মেইক শিওর ও যাতে না আসে!
– এত অত্যাচারের পর ও সে পৃথিবীতে আসছে তো তুমি কে ওকে আসতে না দেওয়ার?

প্রিয়ম সেখান থেকে চলে আসে। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। ফাইয়াজ এত ভালো অভিনয় পারে! ঠকবাজ! ক্লাসে আসতেই সারা ল্যাং মেরে প্রিয়মকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু শুদ্ধ থাকায় ওর কিছু হলোনা।

– এখনো তো পুরো স্কুল জানে না। যখন জানবে, সবাই একসাথে শুরু করবে। তখন তোর জীবনের ঝুঁকি হবে।
– শুদ্ধ, আমি কী ঠিক করছি?
– আমরা কী পারব?
– আমার কী বিচার পাওয়ার অধিকার নেই? জানিস, আমি ভেবেছিলাম এই স্কুল ছেড়ে চলে যাব। কিন্তু এই বেবি আসার পর আমি বুঝতে পেরেছি এখনো একটা চান্স আছে। ওরা শাস্তি পেতে পারে।
– তাও। তুই স্কুল থেকে চলে গেলে আরেকটা লাইফ লিড করতে পারবি। ওরা আর তোকে বিরক্ত করতে পারবে না।
– ওদের কাছে যে ভিডিও আছে।
– আমি ডিলিট করে দেব।
– কী করে?
– লাইব্রেরির ভেতর দিয়ে ডার্ক রুমের আরেকটা রাস্তা আছে। আমি চিনি। ওখান দিয়ে ঢুকে ওদের কম্পিউটার থেকে ওদের ক্যামেরা থেকে সব ডিলিট করে দেব।
– ধরা পড়লে?
– মারবে। বড়জোর সাসপেন্ড করবে।
– এটাই তো তোর সবচেয়ে বড় ভয়, তাই না?
– হ্যাঁ। এখন আর ভয় লাগে না। এই নরক থেকে বের হলেই পারি।
– কোন স্কুলে যাবি?
– জানি না।
– তোর ফিউচার।
– বাদ দে। এখানে যা আছে তার থেকে বেটার হবে।
– আমি গিভ আপ করব না। আর তুই ভিডিও ডিলিট করবি না। পারলে নিয়ে আসবি।
– কেন?
– এটাই হবে প্রমাণ। ওদের নামে যখন কেস করবো, এগুলোই সাক্ষী দেবে।
– তাই?
– অনেক রিস্কি, বাট ভিডিও টা নিয়ে রাখিস।
– হুম।
– আমি বাচ্চাটাকে মারতে চাই না। ওরা যাই করুক। ও আমার বাচ্চা। ওকে আমি জন্ম দেব।
– অরনীকে বল না।
– বলব। আগে ওকেই বলব। তারপর ও সহ পুরো পরিবারকে বলব।

সেটাই ওদের শেষ কথা ছিল। পরদিন প্রিয়ম স্কুলে আসেনি। শুদ্ধ গিয়েছিল ডার্ক রুমে ভিডিও চুরি করতে। ভিডিও সরানোর ঠিক আগ মুহূর্তেই ফাইয়াজ রুমে ঢুকে। আর তার কিছুক্ষণ পর আজফার দৌঁড়ে আসে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, ” গুড নিউজ! প্রিয়ম, ঐ স্লা*টটা সুই*সাইড করেছে।”

শুদ্ধের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। এটা ও ভুল শুনছে। ওর চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পড়ল। ওরা বেরিয়ে যাওয়ার পর শুদ্ধ ও বের হলো। ছুটি নিয়ে প্রিয়মের বাড়ি গিয়ে জানতে পারলো, সত্যিই ও সুই*সাইড করেছে। কিন্তু ওর তো সুই*সাইড করার কথা না! ও তো বাচ্চাটাকে জন্ম দিতে চেয়েছিল। হঠাৎ এত নির্দয় হয়ে উঠল কেন? এরপর অরনীর গালে থাপ্পড় দেওয়া দেখে পালিয়ে আসে। এরপর স্কুলের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিংয়ের ছাঁদে উঠে , সেখান থেকে লাফিয়ে পড়ে নিজেকে শেষ করে দিতে। ছাঁদের রেলিংয়ের উপর শুদ্ধ দাঁড়িয়ে ছিল। বাম পা বাড়িয়ে চেষ্টা করছিল লাফ দেওয়ার। এরপর চোখ বন্ধ করে ডান পা বাড়িয়ে নিজের দু হাত খুলে শরীরটাকে শূন্যের দিকে ঝুঁকিয়ে দিল।

এতটুকু পর্যন্ত শুনে পিপি আর তার স্ত্রী হতভম্ব! এটা কী সত্যি কাহিনী? একটা স্কুলের ভেতর এত কিছু হলো, এর কর্তৃপক্ষরা কোথায় ছিল? কারো কী কোনো দায় নেই? স্কুলের বাচ্চা ছেলে দিনে দুপুরে ক্রাইম করেছে। দুটো নিষ্পাপের জীবন পুরো শেষ।

– পিপি, ও বেঁচে আছে কী করে?
– আমি ও তাই ভাবছি। এত কিছুর পর ও কী করে বেঁচে আছে? ঘুরে ফিরে ও অরনীকেই বিয়ে করল। প্রায় এক বছর সংসার করছে। আমি হলে এতদিনে দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here