#রিস্টার্ট,পার্ট_২৮
#পিকলি_পিকু
স্কুলের ছাঁদের রেলিংয়ে দাঁড়ানো শুদ্ধ। ফাইয়াজ ওকে ছাঁদে উঠতে দেখেছিল। ও বাকিদের কল করে বলল শুদ্ধ কে পাওয়া গেছে। ওরা যাতে আসে। শুদ্ধ কে রেলিংয়ের উপর দেখে ফাইয়াজ দৌঁড়ে আসে। শুদ্ধ নিজের ডান পা বাড়িয়ে শরীরটা ঝুঁকিয়ে দিলো। ফাইয়াজ নিজের দুই হাত দিয়ে শুদ্ধকে ধরে ফেলল। শুদ্ধকে ছাড়ছে না ফাইয়াজ। স্কুলের ভেতর আত্ম*হ*ত্যা করলে ওরা ফেঁসে যেতে পারে। শুধু তাই না, দুইজন পরপর আত্ম*হ*ত্যা সন্দেহজনক। শুদ্ধ নিজেকে ছাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর অর্ঘ্যদীপ ও আসে। ওরা দুজন মিলে শুদ্ধকে তুলে ফেলল। শুদ্ধ আর ফাইয়াজ মেঝে তে পড়ে আছে। ফাইয়াজ জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। অনেক কষ্ট হয়েছে ওর। আর শুদ্ধ কান্না করছে। শুদ্ধের কান্না বন্ধ করতে ফাইয়াজ শুদ্ধকে একটা চড় মেরে চিৎকার করে বলে,
– কী করছিলি!!!
– আমি ম*রে যাব! প্রিয়মের মতো আমিও ম*রে যাব! আমি আর পারছি না।
– ওকে। ম*রে যা! তুই ম*রার পর যখন মিডিয়া আসবে যে কেন এই স্কুলের দুজন স্টুডেন্ট আত্ম*হ*ত্যা করেছে তখন আমরা ধরা পড়ে যাব।
– হ্যাঁ! আর তোমাদের শাস্তি হবে।
– না। কিছুই হবে না আমাদের। আমরা বলব তুই ও ছিলি। তুই ও রে*প করেছিস, আর সেই গিল্টে তুই সুই*সাইড করেছিস।
– নাহ্!
– হ্যাঁ। আমাদের ফ্যামিলি তো আমাদের বাঁচিয়ে নেবে। কিন্তু তোর ফ্যামিলি তোকে বাঁচাতে পারবে না। উল্টো তাদের লম্পট ছেলের জন্য লজ্জায় পড়বে।
– না। না!
– আর প্রিয়ম কে সবাই স্লা*ট বলবে। কারণ আমার কাছে আগে ও এসেছিল। নইলে পাঁচটা ছেলে চান্স পেত না।
– ফালতু কথা বলো না!!!
– সবাই প্রিয়মকে দুশ্চরিত্র বলবে। সাথে তোকেও। তুই ম*রলেই সব হবে। তুই দেখবি না। কিন্তু তোর পরিবার কাউকে মুখ দেখাতে পারবে না। তুই ভাবছিস মরলে সব শেষ! মরলে সব শুরু হবে। দুশ্চরিত্র শুদ্ধ! শুদ্ধ ধর্ষ*ক!
– আমি কাউকে রে*প করিনি! তোমরা করেছ।
– তুই ও করেছিস। এমনটা আমরা বলব। সাক্ষী দেওয়ার মতো কেউ নেই। প্রিয়ম ও নেই!
– অসম্ভব!
– তুই ওকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছিলি , তাই না?
– না।
– হ্যাঁ। আমরা বলব, তুই প্রিয়মকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছিলি মিথ্যা কথা বলে। এরপর আমরা সবাই করেছি। ডার্ক রুমে ও যদি না আসতো তবে আমাকে ওভাবে দেখত না। আর না দেখলে চিৎকার করত না। আমি গিয়ে ওকে দেখতাম না। আর আমরা এত মজা করতাম না। থ্যাংক ইউ! তুই পাঠিয়েছিস, তোর কারণে সব হয়েছে।
ফাইয়াজ একপেশে হেসে চোখ মারে। শুদ্ধ কানে হাত দিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বসে আছে। ফাইয়াজ হাসছে। অর্ঘ্যদীপ ও ওদের পাশে বসলো। একটু পর বাকিরাও আসে। ফাইয়াজ চিৎকার করে বলে,
– এভরিওয়ান! মিট দ্য মার্ডা*রার অফ প্রিয়ম!
– না!!!
– তুই না পাঠালে আমরা রে*প করতাম না, আর ও আত্ম*হ*ত্যা করত না। তাই তুই খু*নী।
– আমি খু*ন করিনি!
– এখন যা আত্ম*হ*ত্যা কর! তোর ফ্যামিলি কে সবাই রেপি*স্টের ফ্যামিলি বলবে। তুই ঘৃণা করিস না রেপি*স্টদের? তোর পরিচয় হবে সেটা। কী ভালো বন্ধু দুজন। একটা স্লা*ট, আরেকটা রেপি*স্ট!
শুদ্ধ সেখানে বসে রইলো। বাকিরা চলে গেলেও অর্ঘ্যদীপ দাঁড়িয়ে রইলো। ফাইয়াজ ওকেও চলে আসতে বলে। কারণ ও জানে ও যা বলেছে এরপর শুদ্ধ জীবনেও আত্ম*হ*ত্যা করতে চাইবে না। এভাবে শুদ্ধ আর সুই*সাইড করল না। ও নীচে নেমে আসলো। আস্তে আস্তে প্রতিদিনের ক্লাসে ব্যস্ত হয়ে গেল। ও প্রতিদিন শুনত একটা মেয়ে এসে প্রিয়মের বন্ধুদের খোঁজ করে। ও ভয়ে অন্য গেট দিয়ে বের হয়। এভাবে ও এ লেভেল শেষ করলো। স্কুল থেকে ওকে কানাডায় স্কলারশিপ অফার করেছিল। কিন্তু সেখানেও ওদের সাথে দেখা হবে। তাই ও দেশেই পড়েছে। ভালো হয়েছিল, ওর মায়ের সাথে শেষ কয়েকটা দিন কাটাতে পেরেছে।
সেখানে ভার্সিটিতে গিয়ে ও ওর পার্সোনালিটি বদলানোর চেষ্টা করে। এভাবে ভীতু ভদ্র বেশে থাকলে সবাই ওর ফায়দা নিবে। প্রিয়ম বলেছিল ও নাকি অনেক ভীতু ছিল। তাই নতুন জায়গায় ও ওভাবে থাকতে চায়নি। এখানে কেউ ওকে চিনত না, ও যেমন ইচ্ছা তেমন হতে পারতো। ও নিজেকে স্ট্রং হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিল। আগেও যখন চাইতো কেউ না কেউ ওকে মনে করিয়ে দিতে ও দুর্বল। এখানে ওর কোনো দুর্বলতা ছিল না। শুধু একটাই ভুল করেছিল, ভালোবেসেছিল। শুদ্ধের কোনো দুর্বলতা থাকবে না। ওর সকল দুর্বলতা ওর পুরনো সত্তায়। তাই ওর মধ্যে পুরনো কোনো কিছুই থাকবে না। ও পরিবারের সবাইকে সেই নামে ডাকতে মানা করে দিলো। নিজেকে অন্যরকম করে গড়ে তুলল। ও আর ভয় পায় না। অনেক বছর পেরিয়ে যায়। জাহিদ আহমেদ হিসেবে ওর একটা পরিচয় হয়। নম্রতা আর কাঠিন্যের এক সুনিপুণ মিশ্রণ। কেউ ওর ফায়দা নিতে চাইলে বুঝিয়ে দিতো জাহিদ কেমন হতে পারে। তবে নিজের এই নকল সত্তার বাহিরে নিজের আসল সত্তাকে ওর খুব মনে পরে। তাই চেয়েছিল নিজের বিয়ে করে জীবনসাথী নিয়ে পরবাসে বাকি জীবনটা একটু সাধারণভাবেই কাটাবে। একটা মুখোশ পরে থাকতে আর ভালো লাগে না। শক্ত সোজা মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে আর ভালো লাগেনা। মাঝে মাঝে ঢলে পড়তে ইচ্ছে করে। বিশেষ করে রাতের বেলা যখন সেসব দুঃস্বপ্ন দেখে তখন কেউ থাকেনা ওর পাশে ওকে সামলানোর মতো। এই সব দুঃসহ স্মৃতি থেকে দূরে যেতে চায় ও। ধরতে চায় কারো হাত খুব আপন করে, যে ওকে মানুষ হিসেবে দেখবে। ও যেমন তেমনি ভাবেই ভালোবাসবে। কিন্তু জাহিদ কোনোদিন ও কোনো নারীর সাথে একাকী সময় কাটায়নি। মিশতে ও পারেনি অন্যরকম ভাবে। ওর মনে কোথাও না কোথাও একটা দুশ্চরিত্র হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করতো। তাই ফুফু যখন অ্যারেঞ্জ মারেজ এর কথা বলল, ও রাজি হয়ে গেল। একে একে সবাই ওকে প্রথম দেখায় মানা করে দিলেও একটি মেয়ে ওকে হ্যাঁ বলে। তার নাম, নাদিয়া।
পৃথিবীটা গোল আর অনেক ছোট। তাই চাইলেও জাহিদ পালাতে পারেনি অতীত থেকে। ওর ভেতরের সেই দুশ্চরিত্র হয়ে যাওয়ার ভয়টা ওকে কখনো কোনো নারীর কাছে যেতে দেয়নি। কিন্তু নাদিয়ার কাছে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ওর ছিল। প্রিয়মের কথা মনে উঠলে ওর দম বন্ধ হয়ে আসতো। নাদিয়া ওর আশেপাশে থাকলে সেই ভয়টা আরো বেড়ে যেত। তাই প্রথম থেকেই ও চাইতো নাদিয়া ওকে ছেড়ে চলে যাক, নিজে থেকেই। কিন্তু কোথাও না কোথাও কৈশোরে ও যে অরনীর স্বামী হওয়ার স্বপ্ন দেখত ওর সেই সাধ আবার জেগে যায়। সে কারণেই পিপির কাছে যাওয়ার দিন তাই ওর হাত ধরে ফেলে। নাদিয়া কে ও বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে। হারাতে চায় না। কিন্তু সব কাহিনী জানার পর নাদিয়া আর ওর সাথে থাকতে চাইবে না। হয়তো মা*রা যাবে।
জাহিদ থেকে পিপি আর তার স্ত্রী সব কাহিনী শুনল। হিপনোসিস এর প্রভাবে জাহিদ এখন ঘুমাচ্ছে। পিপি, বেনজির আর পিপির পি এ ওর সামনে বসে আছে।
– এটা আমার জীবনের সবচাইতে কমপ্লিকেটেড কেস।
– আমার ও।
– তোমার কেস কবে থেকে?
– আজকে থেকে। আমি ওর চিকিৎসা করতে চাই পিপি। আমি যতটুকু বুঝলাম, ও নিজেও ভিকটিম। ওকে ফাইয়াজ নামের ছেলেটা উল্টো পাল্টা বুঝিয়েছে। ভীষণ ম্যানিপুলেটিভ, একটা সাইকোপ্যাথ! জাহিদকে আমাদের সেই চিন্তা ভাবনা থেকে বের করতে হবে। প্রিয়মের ঘটনাতে ওর কোনো হাত নেই। ও নিজেও প্রিয়মের মতো একজন ভিকটিম।
– কিন্তু প্রিয়মের জন্য খারাপ লাগছে। ওর বাচ্চা কে তো জন্ম দিতে চেয়েছিল। তাহলে আত্ম*হ*ত্যা করল কেন? কোনো কিন্তু অবশ্যই আছে।
– তুমি সাইকোলজি পড়ে এমন বলছ। হিউম্যান ব্রেইন ইজ দ্য মোস্ট কমপ্লিকেটেড থিং। ওর মনে হয়েছিল ও পারবে, কিন্তু পরের মুহূর্তে ও গিভ আপ করে। বুঝতে পেরেছিল এই বড় বাবার ছেলেদের সাথে ও পারবে না।
– আমার কিন্তু প্রিয়ম কে খুব স্ট্রং মনে হয়েছিল।
– নাদিয়াও স্ট্রং। ওকেও তো দেখলে।
– তবুও মন মানতে চাইছে না। কিন্তু এখন এই কথা গুলো তো নাদিয়াকে,
– ভুলেও বলা যাবে না। ওর অবস্থা নেই এসব সহ্য করার। আমরা অপরিচিত হয়ে এটা নিতে পারছি না আর ও বেস্টফ্রেন্ড হয়ে কী করে এটা সহ্য করবে?
– সেটাই। সেই বিভৎস জানোয়ার গুলো এখনো স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আচ্ছা ও এত কমপ্লেক্স আচরণ করছে কেন? কোনটা আসল জাহিদ কোনটা নকল জাহিদ?
– সেটা নিয়ে আমিও কনফিউজ। তবে ও ফাইয়াজদের মতো স্ট্রং হতে চায়। ক্ষমতার অভাবে কী হতে পারে সেটা ওর থেকে ভালো কে জানে।
– তারমানে ও ভালো হতে পারে।
– হ্যাঁ। যদি আমরা ওকে বোঝাতে পারি শুদ্ধ ভালো মানুষ। ওর আগের সত্তা দুর্বল কিন্তু হেরো নয়। তবে ও টোটালি ম্যানিয়াক সিচুয়েশন থেকে বাঁচতে পারে। এখন তো শুধু আমরা কনফিউজ। খুব দেরি নেই, এভাবে চললে ও নিজেও ইনসেইন হয়ে যাবে।
– ও হঠাৎ ট্রিগারড হয়ে যায়। যেমন আমি যেদিন বললাম প্রিয়মকে চেনে কি না।
– ভয় থেকে ট্রিগারড হয়। আরেকটা জিনিস তুমি বললে, সেদিন পুরো আকাশ পাতাল ইমোশন চেঞ্জ। আজকে বুঝতে পারলাম। ওর মধ্যে একটা ক্ষোভ জমা আছে সেই জানোয়ারদের প্রতি। তাই প্রতিবার স্লা*ট শব্দটি শুনলে ও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সেজন্যই মিঠাইয়ের বাড়ির ছাঁদে মিশানকে মেরেছিল।
– ও যদি স্লা*ট শেমিং বা হ্যারাসমেন্ট সহ্য করতে পারে না তাহলে নাদিয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল কেন?
– ঐ যে কনফিউশন। ওর নতুন পারসোনালিটি ফাইয়াজদের থেকে অনুপ্রাণিত। ক্ষমতাবান আর ম্যানিপুলেটিভ। সেখান থেকে স্ট্রং হলেও ওর মধ্যে খারাপ দিক গুলোও আসছে। বলতে গেলে সেদিন ওর স্ট্রং না হওয়ায় আফসোস ওকে সেই লোকগুলোর মতোই বানাচ্ছে যাদের সাথে ওকে লড়াই করতে হতো।
– এখন?
– ওকে বোঝাতে হবে, ও ওর মতো স্ট্রং। জাহিদ যা বলল, প্রিয়ম নিজেও অরনী থেকে অনুপ্রাণিত। ওরা ওদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব কে ঘৃণা করে। ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স। এজন্যই ওরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ওদের একটা দুর্বলতা থাকবেই। এটা ওদের পার্সোনালিটি না। তাই ওরা ভেঙে পড়ে।
– আচ্ছা প্রিয়ম তো অরনীকে আইডল ভাব তো, আর জাহিদ ফাইয়াজ কে ঘৃণা করে। তবে জাহিদ ওর মতো হতে চায় কেন?
– আফসোস থেকে। আর ও অজান্তেই এটা করছে। তুমি এমন ভাব করছো তুমি জান না।
– গোঁজামিল লাগছে। তাই নিশ্চিত হচ্ছি শুনে শুনে। ভেবেছিলাম ম্যারেজ কাউন্সিলিং শান্তির কাজ। ওরা দুজন আমাকে আবার আগের জায়গায় নিয়ে এসেছে।
জাহিদের ঘুম ভাঙার পর বেনজির আর পিপি ওকে খাবার খেতে দিল। ও এখনো অনেক ক্লান্ত। খাওয়া শেষে ওরা বসে কথা বলছে।
– আমি কী কী বলেছি?
– সব। মোটামুটি সব। আচ্ছা, কিছু মনে করো না। ফাইয়াজ আর বাকিরা এখন কোথায়?
– ফাইয়াজ আর সানির কথা জানিনা না। আজফার ওর বাবার ব্যবসা দেখছে। অর্ঘ্যদীপ বর্তমানে পলিটিক্স করছে।
– অর্ঘ্যদীপ চৌধুরী! বর্তমান সরকারের মন্ত্রীর ছেলে! ফেসবুকে লাখো মেয়েদের ক্রাশ আর ছেলেদের আইকন!
– ইয়েস।
– ভিরাজ?
– ভিরাজ আহলুওয়ালিয়া বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। ও এখন ইন্ডিয়ান পলিটিকস এ যোগ দেবে। দুজনেই সোস্যাল মিডিয়া তে খুব একটিভ। সবাই ওদের মতো হতে চায়। তবে সানির বাবাও বিরোধীদলের নেতা। সানিও সামনে পলিটিক্স করবে।
– অবাক হই! দেশের ভবিষ্যত এদের হাতে। আচ্ছা, তোমার হঠাৎ প্যানিক অ্যাটাক আসলো কেন?
– স্যার, আমি মনে হয় ধরা পড়ে যাব।
– কীসের জন্য?
– নাদিয়া, উনি ম্যাগনেফিসেন্টে চাকরি নিয়েছেন।
– ওহ শি*ট! আমাকে বলেছিল। তুমি ওকে বলোনি তুমি ঐ স্কুলে ছিলে?
– না। আমি বললে উনি প্রিয়মের কথা জিজ্ঞেস করত। আমি তো জানতাম ই এখানে চাকরি নিচ্ছে। আজ সকালে যখন দেখলাম।
বেনজির বললেন,
– ওকে জাহিদ, ও ওখানে চাকরি নিলে কী এমন হবে? রিল্যাক্স!
– উনি ওখানে সত্যি জানতেই গিয়েছেন। হোক না হোক উনি সত্যি জেনে যাবেন। এরপর আমি ধরা পড়ে যাব।
– জাহিদ তুমি কোনো ভুল করোনি। ধরা পড়ার প্রশ্ন আসছে না।
– আমি যে ঐ স্কুলে পড়তাম?
– তার কোনো প্রমাণ ও পাবে? না। আমি নিজেও ম্যাগনেফিসেন্টে গিয়েছি রিসার্চের জন্য। আমরা পারমিশন পাইনি ভেতরে ঢোকার। এরপর আমার কলিগ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাইয়্যিদ আহমেদ এর কাছ থেকে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে ঢুকি। কিছুই পাইনি। মূলত আমরা এক্স স্টুডেন্টদের তালিকা চাইছিলাম। ওখানে এত সহজে কোনো ডেটা পাওয়া যায় না। আর নাদিয়া ও পাবে না।
– কিন্তু আপনারা জানেন না। ওখানে যদি উনি ধরা পড়েন তবে অনেক ঝামেলা হবে। গায়েব ও হয়ে যেতে পারেন।
– ঐ স্কুলে হচ্ছে টা কী?
– অনেক কিছু। অনেক বাজে! ওনাকে ওখান থেকে আনতে ও পারব না। আর একবার যদি উনি জেনে যান,
– জানবে না। তবে পরে জানবে। এখন না। আমি আর পিপি ঠিক করেছি তোমার আর অরনীর চিকিৎসা হবে। তোমাদের মেন্টালি স্ট্রং হওয়া দরকার। যখন তোমরা স্ট্যাবল হবে আমাদের এখানেই ওকে সব বলবে। যাতে ও ভেঙে পড়লেও একটা সাপোর্ট থাকে। ওর আর তোমার মানসিক যে অবস্থা, একটা দুর্ঘটনা ঘটবে। ততদিন পর্যন্ত আমি বলব তুমি ওর সামনে তোমার আর ম্যাগনেফিসেন্টের কানেকশন আসতে দিও না। ও যদি জেনে যায় তখন ওকে অন্য কিছু বলে বোঝাও। আই থিংক তুমি পারবে।
– আর না পারলে?
– পারতে হবে। ওর সাথে স্ট্রং কানেকশন তৈরী করো। আমাকে কিছু সময় দাও, আমি তোমাদের শক্ত করতে চাই। এরপর আমরা ওকে সব বলব।
– উনি চলে যাবেন।
– না যাবে না। শুদ্ধ, আমি তোমাকে এখন থেকে শুদ্ধ ই ডাকবো। তুমি ইনোসেন্ট। তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে। প্রিয়ম তোমার জন্য মরেনি। তবে ও রাগ করতে পারে এই বিষয়ে যে আগে কেন বলনি বা ওর বন্ধুর সাথে এত খারাপ হলো তুমি জানতে এসব। তোমাকে ব্লেইম করবে না। ফাইয়াজ তোমাকে ভুল বুঝিয়েছে। এখন তোমার প্রথম কাজ বাড়ি যাওয়া। অলরেডি সাড়ে দশটা বাজে। নাদিয়ার প্রচুর কল এসেছে। আমরা তুলিনি।
পিপি বললেন,
– একটা গাড়ি ডেকে দিচ্ছি, বাড়ি যাও।
– আমার গাড়ি?
– আমার পিএ নিয়ে এসেছে। আমার এখানেই পার্ক। এই অবস্থায় গাড়ি চালানো সম্ভব না।
জাহিদ একটা গাড়ি নিয়ে বাসায় আসলো। ঘরে ঢুকতেই নাদিয়া বিচলিত হয়ে গেল,
– কোথায় ছিলেন? আমি ভয় পেয়েছিলাম। ফোন ধরছিলেন না কেন?
– কাজ ছিল। সাইটে।
– একটা কল করতে পারতেন! আমার কাছে কারো নাম্বার ও নেই। আমি ভেবেছি কিছু একটা হয়েছে।
– কিছু হয়নি।
জাহিদ এসে সোফায় বসলো। নাদিয়া ও ওর পাশে বসলো। নাদিয়া বসতেই জাহিদ ওর কোলে মাথা রেখে নাদিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরল। ব্যাপারটা অদ্ভুত! কিছু তো হয়ছে। নাদিয়া জাহিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
– কিছু হয়েছে?
– নাহ্!
– কিছু একটা তো হয়েছে। অফিসে?
– হুম।
– বস বকেছে?
– হুম।
জাহিদের খুব কান্না পাচ্ছে। তবে নাদিয়া ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তাই একটু ভালো লাগছে। কেন জানি নাদিয়ার কাছে নিজেকে অনেক নিরাপদ মনে হচ্ছে। এইটা ওর একটা স্বস্তির জায়গা।
– সব ঠিক হয়ে যাবে। কেউ আপনাকে বকলে আমাকে বলবেন।
– কী করবেন?
– বকে দিয়ে আসব।
জাহিদ হাসলো। নাদিয়া ও হাসলো। জাহিদের খুব ঘুম পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখানেই ঘুমিয়ে যেতে।
– আচ্ছা নাদিয়া,
– হুম।
– আমাকে একটা নামে ডাকতে পারবেন?
– কী নাম?
– যে কোনো?
– জাহিদ!
– ওটা বাদে।
– জাদু!
– ওটা ছাড়া।
– সোনা জাদু!
– উঁহু।
– জাদুমণি!
– শুদ্ধ।
– শুদ্ধ কে?
– আমি শুদ্ধ!
– আপনি শুদ্ধ মানে আপনি সহ ?
– আহ! সেই শুদ্ধ না। আমার নাম শুদ্ধ। শুদ্ধতা, শুদ্ধিকরণ।
– কী? আগে বলেননি তো!
– আমাকে তুমি করে বলবেন?
– আপনাকেও বলতে হবে।
– ওকে।
– শুদ্ধ, তুমি কেমন আছ?
– আমি খুব ভালো আছি অরনী। তুমি কেমন আছ?
– আমি ও ভালো আছি।
এরপর ওরা চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর জাহিদ আবার বলল,
– আমাকে আরো কিছুক্ষণ শুদ্ধ ডাকো।
– শুদ্ধ! শুদ্ধ! শুদ্ধ তোমার নামটা সুন্দর। কিন্তু আমার জাদু থেকে না। আমি তো জাদু ডাকবো।
– শুদ্ধ ডাকো। শুধু শুদ্ধ।
– আচ্ছা। শুদ্ধ!
নাদিয়ার মুখে শুদ্ধ ডাকটা শুনে ও কেমন কাতর হয়ে যাচ্ছে। নাদিয়া তা বুঝতে পারল। তাই আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
– শুদ্ধ, তুমি কী রাতের খাবার খেয়েছ?
– জ্বী।
– শুদ্ধ, তুমি কাল অফিসে যাবে না?
– যাব।
– শুদ্ধ, চলো ঘুমাতে চলো।
– চলো।
(চলবে)