রিস্টার্ট,পার্ট_৩০

0
690

#রিস্টার্ট,পার্ট_৩০
#পিকলি_পিকু

গায়ে চাদড় মুড়িয়ে একপাশে শুয়ে আছে জাহিদ। ওর আবার অনেক দুশ্চিন্তা হচ্ছে। নাদিয়া সানিকে দেখে ফেলেছে। ও এখন আস্তে আস্তে সব জেনে যাবে। এরপর কী হবে তা ভেবে ওর আবার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। নাদিয়া তা আবার কার্ড ও নিয়েছে। যদি যোগাযোগ করে? জাহিদ শোয়া থেকে উঠে বসে। এরপর নাদিয়ার ব্যাগ চেক করে সেই কার্ডটা নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে কুচি কুচি করে ছিড়ে ফ্লাশ করে দেয়।

এতক্ষণ এসব কথা ও বেনজিরকে বলছিল,

– তো তুমি নাদিয়ার ব্যাগে হাত দিয়েছ?
– জ্বী। জানি কাজটা অন্যায় তবুও।
– আমার উদ্দেশ্য তোমাকে দোষারোপ করা নয়, জিজ্ঞেস করা। ভয় পেও না। আমরা অনেক সময় এরকম অনেক কাজ না চাইতেও করে ফেলি। তোমার ক্ষেত্রে তুমি ঠিক কাজটাই করেছ।
– কিন্তু ম্যাডাম, আমি জানিনা। আমি জানিনা কেন আমি সেই মুহূর্তে শক্ত হয়ে গেলাম। আমি চোখ উঠিয়ে তাকাতেই পারিনি। ওর এত গুলো বাজে কথার একটা জবাব ও দিতে পারিনি। নাদিয়ার সামনে আমাকে এত আজেবাজে কথা বলল।
– মন খারাপ করোনা। এটা হওয়াটা স্বাভাবিক। তুমি কিছুক্ষণের জন্য অতীতে ফিরে গিয়েছিলে। তোমার মধ্যে সেই ভয়টাই কারণ। তোমার সেই ভয়টা কমাতে হবে।

নাদিয়া ম্যাগনেফিসেন্টের ভেতরে ঘুরে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করছে। ও খোঁজ পেয়েছে এখানে একজন পুরনো পিয়ন আছে। সে এখানে পনের বছর কাজ করে। এত বছর তো এখানে প্রিন্সিপাল ও থাকে না। এখানে প্রায় স্টাফ ছাঁটাই করে।

– চাচা, আপনি এখানে অনেক বছর না?
– অনেক।
– আচ্ছা, আপনি জানেন এখানকার পুরনো ছাত্রছাত্রীদের খোঁজ কোথায় পেতে পারি?
– তুমি ডেটা চোর না?
– না না!

নাদিয়া ভয় পেয়ে যায়। কী বলছে এসব!
– যদি হয়ে থাকো তো অনুরোধ চলি যাও। এখানে ডেটা চুরি করে ধরা খেলে আর কেউ খোঁজ পাবে না।
– আমি ডেটা চুরি করতে আসিনি। আমি এমনি জানতে চাই কে কোথায় আছেন। এত বড় স্কুল। ইন্টারনেটে খুব একটা কিছু নেই। অ্যালুমনাইরা কে কোথায় জানার খুব ইচ্ছা।
– যদি তা হয়, বলে রাখি। লাইব্রেরিতে ম্যাগনেফিসেন্ট হিস্টরি কর্ণারে পাবে। সব অ্যালুমনাইরা কে কোথায়।
– ওকে।
– তবে সবাই নেই সেখানে। শুধু বেছে বেছে বিখ্যাত লোকেরা আছে। আর স্কলারশিপ কেউ নেই। ভিভিআইপিরা আছে।
– স্কলারশিপ রা কোথায়?
– বলতে গেলে স্কলারশিপরা খুব একটা কেউ কমপ্লিট করতে পারে না। খুব কম। গন্ডারের চামড়া না হলে সম্ভব না। একটা ছেলে ছিল, অনেক বছর আগে। ওকে চড় মারলে নীচের দিকে তাকিয়ে থাকতো। চোখের পানিও ফেলত না। ও পেরেছিল।
– সে কোথায়?
– জানিনা। এই নরক থেকে বের হলে কেউ আর আসতে চায় না। ও হয়তো দেশেই নেই।
– তার মানে পুরনোদের কোনো হদিস নেই?
– যদি ডেটা চুরি করতে চাও তো অনেক কড়া সিকিউরিটি। হ্যাক করতে পারবে না। আরেকটা পথ আছে।
– কী?
– পুরনো স্টোর রুমে পুরনো খাতা রিপোর্ট কার্ড থাকতে পারে। ওখানে গিয়ে কারো নাম দেখতে পারো। আর আমরা এতক্ষণ কথা বলছি এসব সিসিটিভিতে দেখছে। জিজ্ঞেস করলে বলো আমরা ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের কথা বলছিলাম।

নাদিয়া দাঁড়িয়ে রইলো। এ যেন খড়ের গাদায় সুই খোঁজার মতো। পুরনো খাতা আর রিপোর্ট কার্ড! নাদিয়া হেঁটে হেঁটে লাইব্রেরিতে গিয়ে অ্যালুমনাইদের বইটি বের করল। প্রিয়মের বছরে ছিল অর্ঘ্যদীপ চৌধুরী! এই সোস্যাল মিডিয়া অ্যাকটিভিস্ট পলিটিশিয়ান! এর সাথে দেখা করা যাবে না। এরপর ভিরাজ আহলুওয়ালিয়া! ইনি তো ভারতীয়। এখন বাংলাদেশে থাকা লোকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় না আর ভারতীয়। এরপর একটা মেয়ে। নিশ্চয়ই প্রিয়মের বন্ধু হবে। মেয়েটার নাম সারা, ওউনার অফ সারা’স ইলিগ্যান্স লাক্সারি ব্র্যান্ড। ওনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট তো জীবনেও পাওয়া যাবে না। নামটা কোথায় শুনেছে ও। সেদিন সানি বলেছিল জাহিদ কে। মেইবি ও জাহিদের সেই ক্রাশ। এক্স ও হতে পারে। সানির কথার দাম দেওয়ার কী আছে? এই সারা আর ঐ সারা এক নাকি। নাদিয়া এবার খড়ের গাদায় ই সুই খুঁজতে গেল।

পুরনো স্টোর রুমে ঢুকে নাদিয়ার মাথা ঘুরে গেল। অনেক পুরনো টেক্সট বুক খাতা এসব। কিছু পুরনো রেকর্ড ও আছে। কিন্তু এলোমেলো। এত এত নামের মধ্যে কোনো আসল মানুষ কে খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। তাও আবার প্রিয়মের সহপাঠী। ওর নিজের স্কুলের সেকশনের নামই মনে নেই আর প্রিয়ম। এগুলো পুরনো মনে হলেও খুব একটা পুরনো নয়। এত আগের কিছু পাওয়া যাওয়া মিরাকেল হবে। নাদিয়া একটু পর বুঝতে পারল ওকে ভেতরে আটকে দেওয়া হয়েছে। ও এখন বের হবে কীভাবে? পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল নেটওয়ার্ক নেই। ওয়াসি কে ফোন করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু ওকে কী বলবে? ওকে এখন বের করবে কে? বের করলেও কী উত্তর দেবে? স্টোর রুমে কী করছে এর জবাব ও নেই। নাদিয়া দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ দরজা খুললেই না দেখে মতো পালিয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর কে যেন দরজা খুলল। নাদিয়া দরজার পেছনে লুকিয়ে আছে। দরজা খুলে কেউ ঢুকছে। ওয়াসি!!
– তুমি কী করছ?
– আগে তুমি বলো। এই, তুমি কী করছ?
– ঘুরে দেখছিলাম। ঢুকতেই আটকে দিল।
– কে?
– আমি দেখিনি।

নাদিয়া বের হয়ে যেতেই ওয়াসি ও বের হয়ে গেল। নাদিয়া ওয়াসির সাথে কথা বলছে না। ওকে সন্দেহজনক মনে হয়। ওয়াসি ওর সাথে ঝাঁকড়া চুল নাড়িয়ে নাদিয়ার কাছে এসে বলল,
– কফি খাবে?
– কেন?
– ভয় পেয়েছ মনে হচ্ছে।
– না। আর পিছু নেওয়া বন্ধ করো। আমরা টিচার।
– তুমি একবার বলতেই আমি বুঝে গেছি, তোমার উপর আমি আর ট্রাই মারছি না। অপাত্রে এই মন আমি দান করছি না। এমনিতেও পরকীয়া করা ঠিক না।
– ছিইই!
– বাই দ্য ওয়ে, তোমার হাসবেন্ড কী করে?
– জব করে।
– লাকি অনেক।
– মানে?
– আচ্ছা, একদিন দাওয়াত দিও তো।

নাদিয়া ভাবছে ওয়াসি কী নির্লজ্জ! আরেকটা বিষয়, ও চাবি পেল কোথায়? ও কী নজর রাখছে ? ওকে বিশ্বাস করা উচিত হবে না। বাসায় এসে নাদিয়া ওর ব্যাগ চেক করছে। সানির কার্ড টা কোথায়? ওর ব্যাগে নেই তো। ও যা ভেবেছে তাই হয়েছে। সেদিন নাদিয়া ঘুমিয়ে ছিল ঠিকই, কিন্তু ঘুমোনোর আগে ও সানির কার্ডটার ছবি তুলে নিয়েছিল। জাহিদ কখনোই চাইবে না ও যোগাযোগ করুক সানির সাথে। তাই কার্ডটা ও সরিয়ে ফেলেছে। কার্ডে ওর তেমন কোনো তথ্য নেই। ফোন নাম্বার ইমেইল এসব। ইন্টারনেটে নাদিয়া ওকে নিয়ে সার্চ করতে করতে অবাক হয়ে গেল। এটা কী করে সম্ভব! জাহিদ আসতেই নাদিয়া ওর ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলো। পরদিন ও ম্যাগনেফিসেন্টে ক্লাস নিলো। ওর মন ভালো নেই। সানি ও কী ম্যাগনেফিসেন্টে পড়ত? তারমানে জাহিদ ও! এটা যদি সত্যি হয় তো ও অবশ্যই প্রিয়মকে চিনবে। আর চিনলে বলল না কেন? ওর ফোনে হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো।

– জ্বী, কে বলছেন?
– আমি মিশান। একটু সময় হবে? জরুরি , আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো দেখা করবো না।

নাদিয়া মিশানের সাথে একটি কফি শপে বসে আছে। কফি শপ টা ম্যাগনেফিসেন্টের কাছেই।

– আমি তোমাকে আর বিরক্ত করতে চাই না। ক্ষমা চাই।
– কেন? একজন স্লা*টের কাছে ক্ষমা চাইছ?
– সেদিন তোমাকে ওসব একদম বলতে চাইনি। আমি আসলে দেখাতে চেয়েছিলাম মাটির মানুষ জাহিদ কী করে হিংস্র হতে পারে।
– ওয়েল থ্যাংক ইউ।
– তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আবার আগের মতো হতে চাই। বন্ধু হিসেবে তোমার পাশে থাকতে চাই।
– বন্ধু! তুমি আমার ভাই ছিলে, ভাই ফেলে বন্ধু হবে কেন?
– নাদিয়া, তোমার জাহিদ না একদম অন্য একটা মানুষ। প্রচুর মিথ্যে বলে। তুমি এক কাজ করতে পারো। ওর পাসপোর্ট টা চেক করো। ও জার্মানে গেলে ওখানে ভিসা তো থাকবেই।
– স্যরি আই কান্ট ডাউট মাই হাসবেন্ড ফর আ গাই লাইক ইউ।

নাদিয়া উঠে চলে আসছিল। মিশান বলল,
– ওয়ান লাস্ট টাইম। আমি স্বীকার করছি আমিই ঝামেলা শুরু করেছি। কিন্তু জাহিদ আমাকে মেরেছিলো। ও মিথ্যা বলেছে তোমাকে যে ও যায় নি জার্মান। ও অনেক অদ্ভুত। ও সাইকো। সেদিন ও সব স্বীকার করে উন্মাদের মতো হাসতে হাসতে বলছিল, “আই লাভ অরনী।” এরপর আমি রেকর্ড করায় আমার ফোন ও রাস্তায় ফেলে দিল। ভয়ংকর লোক!

নাদিয়া সেখান থেকে চলে আসলো। ও গুরুত্ব দিলো না মিশানের একটি কথারও। বাড়ি ফিরে পোষাক না বদলেই বিছানায় শুয়ে পড়ল। ওর একটুও ভালো লাগছে না। ওর ইচ্ছে করছে না সন্দেহ করতে। তবুও মন মানছে না। জাহিদ কী সত্যিই পড়ত ম্যাগনেফিসেন্ট! বলল না কেন? ও কী কিছু জানে? ও যদি সব জেনে এভাবে এতদিন চুপ করে থাকে তো নাদিয়া খুব কষ্ট পাবে। নাদিয়া আর পারল না। নিজের চোখ মুছে জাহিদের আলমারি ঘাটতে লাগলো। ওর কাগজপত্র দেখতে লাগলো। আশ্চর্য! ওর কাগজপত্র কোথায়? ওর জামা কাপড় সব বের করে ঘাটতে লাগলো। ওর জানতে হবে জাহিদ কী আসলে কিছু লুকাচ্ছে কি না। এক দেড় ঘন্টার মতো খোঁজার পর ও নাদিয়া কিছু পেল না। কিছুই না। ওর কোনো কাগজ নেই। কোনো সার্টিফিকেট বা পাসপোর্ট। ও কী আদৌ এ বাড়িতে থাকে? যদি কেউ জানতে চায়, প্রমাণ চায় ওর সাথে কে থাকে তবে নাদিয়া কোনো প্রমাণ দিতে পারবে না। ওর সন্দেহ হতাশায় রূপ নেয়। নাদিয়া মেঝেতে অসহায়ের মতো বসে আছে। জাহিদ বেল বাজাতে বাজাতে শেষ পর্যন্ত চাবি দিয়ে ঢুকল। ঢুকে দেখে ওর সমস্ত কিছু লণ্ডভণ্ড।

– কী করেছেন এসব!
– জাহিদ! সত্যি বলো তো তোমার পেপারস কোথায়? তোমার কোনো পেপারস নেই কেন?
– কীসের?
– যে কোনো?

যে ভয়টা ছিল সেটাই হলো। নাদিয়া হয়তো সব জেনে গেছে। এখন ওর পক্ষে এসব সামলানো যাবে না। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।

– কী ধরনের?
– পাসপোর্ট।
– অফিসে। মাঝে মাঝে প্রয়োজন হয় সেজন্য।
– আর বাকি? স্কুলের? ভার্সিটির?

জাহিদ ওর চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছে। নাদিয়া মেঝে থেকে উঠে জাহিদের সামনে দাঁড়ায়।

– সানি তোমার বন্ধু না।
– হুহ?
– সানি ওয়াজ ইওর বুলি?
– পরে কথা বলি।
– ওকে। তোমরা একই স্কুলে ছিলে?
– আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টক আবাউট দিস!!! আমার ঘরের এ কী অবস্থা করেছেন! ঠিক করুন।

জাহিদ চিৎকার করতে লাগলো। চিৎকারের পাশাপাশি হাত ছুড়তে লাগলো। নিজেকে শান্ত করতে চাইছে। নাদিয়া ওর অদ্ভুত আচরণ দেখে বুঝতে পারল কিছু হয়েছে। খুব খারাপ স্মৃতি জড়িয়ে।

– ওকে ওকে, তোমাকে মনে করতে হবে না। কাম ডাউন! আমি তো ক্যাজুয়াল কাগজ দেখতে চাইছিলাম।
– আপনার কী আমাকে সন্দেহ হয়? আমি চোর না ডাকাত?
– তেমন কিছু না।
– ডোন্ট টাচ মি! আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন।

জাহিদ অন্য ঘরে গিয়ে বসে থাকে। এরপর পিপিকে মেসেজ দেয়। পিপি ওকে ওভাররিয়েক্ট না করে স্বাভাবিক থাকার পরামর্শ দেয়। সামনে ওরা দেখা করে ঠিক করবে কী বলা উচিত। তার আগে সন্দেহজনক আচরণ করা যাবে না।
নাদিয়ার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। কিন্তু এটাও সত্যি ও মিথ্যা বলেছে। আর ও এটাও জানে কোনো কারণ আছে অবশ্যই। এসব কিছুর কারণ ওকে একজন মানুষ ই দিতে পারে। আর সে হলো সানি।

দুইদিন পর নাদিয়া সানির সাথে যোগাযোগ করে। এরপর সানি ওর প্রাইভেট অ্যাকাউন্ট নাদিয়াকে দেয়। নাদিয়া ও ইন্সটাগ্রামে ওকে ফলো দিয়ে বসে। তারপর সানি নিজেই নাদিয়া কে ফলো ব্যাক করে। এরপর ওর সব ছবিতে লাইক দিতে থাকে। নাদিয়া তখন সানি কে নক করে , আর এভাবেই কথা শুরু হয়। এক সপ্তাহ ধরে ওদের মধ্যে ডিএমে অনেক কথা হয়। এভাবে পরের শুক্রবার ওকে কফির দাওয়াত ও দেয় সানি। নাদিয়া জাহিদকে বাসায় একা রেখে সেজে বের হয়। জাহিদ কোনো প্রশ্ন করেনা। আবার দূরত্ব চলে এসেছে। এত সেজে কোথায় গেল? বলেও গেল না। ওর জন্য তো কখনো এত কড়া লাল লিপস্টিক লাগায় না। এই স্লিভলেস ব্লাউজ আর লাল শাড়ি সাথে খোলা চুল। এত মোহিনী হয়ে কোথায় যাচ্ছে? বিয়ের পর এতদিন তো কখনো দেখেনি এত কড়া করে সাজতে। নিশ্চয়ই কোনো স্পেশাল জায়গায় যাচ্ছে। একটিবার কী বলে যাওয়া প্রয়োজন বোধ করে না? আজ তো স্কুল ও নেই। ছুটির দিনে কী ওর ইচ্ছে হয় না দুটো কথা বলতে ওর সাথে।

নাদিয়া আর সানি একটি জনবহুল মলের নীচে ক্যাফে তে,

– তো মিস নাদিয়া, কেমন আছেন?
– আমি কিন্তু মিসেস।
– ভাবি হন। ভা বি! হাহাহাহ!
– জ্বী দেবর।
– আই লাইক ম্যারিড উইমেন। দে আর স্পেশাল।

নাদিয়া সানির দিকে খুব লাস্যময়ী দৃষ্টিতে তাকায়। সানি যেন নাদিয়ার জালে জড়িয়ে যাচ্ছে।

– আচ্ছা, ওর সাথে কী অ্যারেঞ্জ মারেজ?
– জ্বী।
– মনেই হয়েছিল। ওর তোমার মতো কাউকে ফাঁসাতে পারবে না। স্যরি তুমি বললাম।

সানি নাদিয়ার লাল ঠোঁটের দিকেই তাকিয়ে আছে। নাদিয়া হাসতে হাসতে ওর খোলা চুল নাড়িয়ে নেই। সানি এখন আর বসে থাকতে পারছে না।
– আমি ও কী বলতে পারি?
– কী?
– তুমি।
– অফকোর্স! এই গতিতে চললে তুমি আর আমি বেশি দিন মুখোমুখি বসতে পারব না।
– তো কীভাবে বসবে? পাশাপাশি?
– ভাবির যা ইচ্ছা। বললে পাশে শুয়ে পড়ব।
– বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, বসতে দিলে শুতে চায়।
– হাহাহাহ! বাই দ্য ওয়ে, ওর সাথে কেমন চলছে?
– ভালোই। বারবার ওর কথা বলছ কেন? (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
– জানতাম ভালো নেই। ঐ লুজার টা একটা পুরুষ নাকি! গুড ফর নাথিং! বাই দ্য ওয়ে, ওর টা ছোট তাই না? মজা পাও না? সামওয়ান লাইক ইউ ডিজার্ভস দ্য বেস্ট!

সানি হাসতে থাকে। নাদিয়ার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এত বাজে মানসিকতা। কিন্তু ক্যারেকটারে থাকতে হবে।

– লজ্জা পেও না। আমি জানি। সব জানি।
– কী করে?
– ওকে প্রায় জামা খুলে পেটানো হতো। কয়েক বার প্যান্ট ও খুলে পিটিয়েছি। লুজার কী শুধু শুধু বলি! ওকে অনেক টাইট দিয়েছি। কিন্তু কখনো চোখ তোলার সাহস পেত না। সেদিন ও চোখ নামিয়ে ছিল। ওর তো একটা ক্রাশ ছিল। ওকে কিস শেখাচ্ছিল। বেচারা ভয়ে কি কান্ড করল! হাহাহাহ!!! জোর করে প*র্ণ দেখালে বমি ও করে দিত। আমি তাই চিন্তা করি, তুমি কত দুঃখে আছ।

নাদিয়ার খুবই অস্বস্তি লাগছে। এসব শুনে জাহিদের জন্য আরো মায়া হচ্ছে। ও আরো ওকে সোজা প্রশ্ন করেছে স্কুলের ব্যাপারে। তাই তো ও চুপ হয়ে যায়।
– বাই দ্য ওয়ে, ওর দ্বারা আদৌ হয়?
– হুম।
– আ’ম সো স্যরি তোমার এই চায়না দিয়ে কাজ চালাতে হয়েছে। আমার টা অরিজিনাল!

নাদিয়া মুচকি হেসে বলল,
– সানি, তুমি কী করো?
– আমার দাদা ফরমার মিনিস্টার।
– তুমি কী করো সেটা।
– আমি তো ফরেনে ছিলাম।
– বিজনেস করতে না?
– ফ্যামিলি বিজনেস।
– দেশেই থাকো?
– এখন আপাতত?
– কোথায় ছিল?
– কানাডা।
– কানাডা ছেড়ে এই দেশে কী করছ? দেশপ্রেমিক?
– বলতে পারো। কিন্তু এখন তো আমি তোমার প্রেমে পড়েছি।
– এখানে কেন এসেছ?
– মনে হচ্ছে তোমার টানে।
– গা ঢাকা দিতে?
– মানে?

সানি খানিকটা অবাক হলো। নাদিয়া সুর আর চেহারার ভঙ্গি সব পাল্টে গেছে। নাদিয়া ওর একটা ভ্রু উঁচু করে বলে,

– কানাডা তে থাকলে জেলে যেতে হতো, তাই না?
– কী বলছ?
– বলছি সেখানে কোন মেয়ে কে কী করলে?

সানি একটু বিব্রত হলো।

– তুমি কী করে জানো?
– যে তুমি সে*ক্স অফেন্ডার! সেক্সুয়াল হ্যারাসার!

নাদিয়া একটু জোরেই বলল। পাশ থেকে একটা মেয়ে এসে বলল, “কে ? কে? কে সেক্সুয়াল হ্যারাসার?” নাদিয়া ওর লাল ঠোঁট গুলো বাঁকিয়ে হাসলো। সানি খুব অপমান বোধ করছে। পাশের একটি টেবিল থেকে একটা ছেলে এসে বলল,
– আরে! আপনাকে তো আমি চিনি! আপনি একজন,
– সেক্সুয়াল হ্যারাসার। ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের।
– কী বলছেন!
– বাংলাদেশ থেকে কানাডা গিয়ে আফ্রিকান নারীকে অ্যাবিউস করে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে।

সানি এটা শুনে রেগে বলল, ” ইউ স্লা*ট!!!” আশপাশ থেকে তখন অন্য মহিলারা বলল প্রমাণ দিতে। নাদিয়া একটা আর্টিকেল বের করে দেখালো। সানি সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ওকে বাকিরা আটকে ফেলে। এবার বাকিরাও আর্টিকেল যাচাই করে দেখে সত্যিই ও এমন করেছে। সানি সেখানে সবার সাথে আরো বাজে ব্যবহার শুরু করে। এক পর্যায়ে সেখান থেকে বের হয়ে গেলে ক্যাফের সবাই ওর পেছনে পেছনে আসতে থাকে। সানি এসব দেখে ভয় পেয়ে যায়। এই জনবহুল জায়গায় উৎসুক জনতার অভাব হয় না। সবাই জিজ্ঞেস করতে থাকে কী হয়েছে? সবাই বলতে থাকে ও এভাবে একজন বিদেশিনী কে হ্যারাস করে দেশে পালিয়ে এসেছে। একজন ফেরারী আসামি। অনেকেই ওর ছবির তুলতে থাকে আর এর মধ্যে আগুনে ঘি হয়ে আগমন হয় সুসময় টিভির সাংবাদিক নুসরাতের। ওর মুখের সামনে ক্যামেরা আর মাইক ধরে প্রশ্ন করতে থাকে। আশেপাশের অনেকেই ফেসবুক লাইভে চলে আসে। সানি রেগে সেখানে চিৎকার করে বলতে থাকে, ” আমাকে চিনস? আমি কে? আমার দাদা মন্ত্রী!” ওর বাজে ব্যবহারে সেখানে কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসে আর ওকে ধরে নিয়ে যায়।

এদিকে এত সব কাহিনীর মধ্যে নাদিয়া আর ওর বন্ধুরা পাশের আইসক্রিম পার্লারে আইসক্রিম খেতে খেতে টিভিতে এসব লাইভ দেখছে। সেখানে ঐ ক্যাফের মোটামুটি সবাই আছে। নাদিয়া আইসক্রিম খেতে খেতে বলে, ” থ্যাংক ইউ গাইজ! আজকে তোমরা বাংলাদেশের ভাইরালের সূবর্ণ ইতিহাসের একটি অংশ হলে।”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here