#রিস্টার্ট,পার্ট_৩১
#পিকলি_পিকু
জাহিদের এমন অস্বাভাবিক আচরণের পর নাদিয়ার সন্দেহ আরো বাড়ছে। এভাবে ও ম্যাগনেফিসেন্টের ব্যাপারে ও মনোযোগ দিতে পারছে না। নিজেকে শান্ত করতে বিজ্ঞ বন্ধুর সাথে কথা বলতে হয়। নাদিয়া পিপির কাছে ছুটে গেল। পিপি জানে নাদিয়া কেন এসেছে। তাও ওর মুখে সব শুনল,
– তুমি জাহিদ কে ডিরেক্ট জিজ্ঞেস করেছ?
– জ্বী।
– বুঝতে পারছি ওর খুব খারাপ স্মৃতি জড়িয়ে। তাই ওকে এরপর থেকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করো না।
– কিন্তু আমার অনেক প্রশ্ন আছে। আমি জানতে চাই ও কী সত্যিই ম্যাগনেফিসেন্টে পড়ত কি না? আর যদি পড়ে থাকে তো প্রিয়মকে চিনতো কি না? আর যদি চেনে আমি এতদিন ধরে সব বলছি তো আমায় কিছু বলে নি কেন? আমার জানা দরকার!
– না দরকার নেই। তুমি ওকে এভাবে সোজা এসব জিজ্ঞেস করতে পার না। তুমি নিজেই বললে জাহিদ কতটা ভয়ার্ত ছিল সানিকে দেখে। আর তুমি ওকে ডিরেক্ট এসব প্রশ্ন করবে আর ওর প্রতিক্রিয়া কি আশা করো? ছেলেটা কে শান্তি দাও। আর ওর এখন চিকিৎসা চলছে। এই সময়ে এসব করে ওর আরো অবনতি করছো।
– আমার জানা দরকার প্রিয়মের,
– প্রিয়ম মৃত। জাহিদ জীবিত। ওর প্রায়োরিটি আগে। আর আমার মনে হয় চেনে না। এত বড় স্কুল সবাই কী সবাইকে চেনে? তুমিও কী চিনতে?
– না।
– সেটাই। বাসায় গিয়ে ওর সাথে সব মিটমাট করে নাও।
– ওর কাজগুলো?
– বাসায় না রাখার অনেক কারণ আছে। হয়তো কোথাও সেফ এ রেখেছে। এখন তুমি যদি ওকে এভাবে সন্দেহ করো ওর ভেতরে কী যাবে? যারা বুলিইং এর স্বীকার হয়, যারা অ্যাবিউসের স্বীকার হয় তাদের আত্মবিশ্বাস এমনভাবে ধ্বংস হয় তা তুমি চিন্তা ও করতে পারবে না। সেখানে জাহিদ এত কষ্ট করে একটা পর্যায়ে এসেছে সেখানে আবার সানি এসে তোমার সামনে এসব না করল ওর ভেতরটা কেমন আছে চিন্তা করো।
নাদিয়া বাসায় এসে ভাবতে লাগলো ওর এখন কী করা উচিত? স্যরি বলা উচিত না সানির একটা ব্যবস্থা করা উচিত? ও আবার ইন্টারনেটে সার্চ করা শুরু করলো সানি কে নিয়ে। খুব একটা তথ্য নেই ওর ব্যাপারে। শুধুমাত্র ওর দাদা সাবেক মন্ত্রী এসব। একদম তলানিতে গিয়ে একটা বিদেশি আর্টিকেল পেল। সেই আর্টিকেল দেখে ওর চক্ষু চড়কগাছ! এই সানি একজন সেক্সুয়াল হ্যারাসার! এরপর আরো নানা ভাবে খুঁজে দেখল ওর বিরুদ্ধে এরকম অনেক আর্টিকেল আছে। কিন্তু সেসব আর্টিকৈল সার্চ করলেই আসছে না। একদম তলানির দিকে। নাদিয়া ওর কানাডায় অবস্থান করা বাঙালি বন্ধুকে বিষয়টা জানায়। ওরা খোঁজ নিয়ে দেখে সানি ফেরারি আসামি। ও পরিচয় গোপন করে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। ওখানে গেলেই ওর জেল হবে। নাদিয়ার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলল।
নাদিয়া আফরা সহ ওর ইউনিভার্সিটির কিছু বন্ধু কে নিয়ে একটি গ্রুপ চ্যাট খুলল। সেখানে ওদের আগে থেকেই সাবধান করে দিল, ওরা খুব ভয়ানক একটা মিশনে আছে। যারা রিস্ক নিতে পারবে না তারা যাতে লিভ নেয়। সবাই অধীর আগ্রহে জিজ্ঞেস করতে থাকে কী করতে যাচ্ছে ও? একজন অপরাধী কে ধরিয়ে দিতে চায়। নাদিয়া ওখানে সেই আর্টিকেল পাঠায়। সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বিদেশে গিয়ে এভাবে দেশের নাম ডোবানো! ওর দাদাও তো কম দুর্নীতি করে নি। ওকে একটা শিক্ষা দিতে হবে। এভাবে দেশের নাম ডুবিয়ে দেশের ভিতর গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো! ওকে তো পুলিশ ও ধরবে না। এমন কিছু করতে হবে যাতে চাপ তৈরি হয়। তখনই নাদিয়া বলল ওর “প্রজেক্ট ভাইরাল”। আফরা প্রস্তাব করলো ওর প্রিয় সাংবাদিক নুসরাতের কথা। কারণ নুসরাত সত্যের কথা বলে। নাদিয়ার অন্য বন্ধু রোমা বলল,
– তোমার নুসরাত যখন শুনবে এই লোক পলিটিশিয়ানের নাতি তখন এগিয়ে আসবে না। উল্টো ধরিয়ে দেবে আমাদের।
– না নুসরাত এমন না। নুসরাত সত্যের কথা বলে, সত্যের পথে চলে।
– আর ক্ষমতা ও কথা বলে, সত্যের চেয়ে জোর চিৎকার করে।
নাদিয়ার বন্ধু সায়েম বলল,
– রোমা ঠিক। আমরা নুসরাত কে বলব একজন আসামির দেখা পাবে , কিন্তু তার পরিচয় বলব না। আর আমরা অজ্ঞাত পরিচয়েই ওর সাথে কথা বলব।
– তোমার নুসরাত আর সুসময় টিভি চায় টিআরপি!
– তা ঠিক। আর আমাদের একজন ইনফ্লুয়েন্সার বন্ধু আছে না?
নাদিয়া বলল,
– মিনারা?
– হ্যাঁ। ওকেও ডাকতে হবে।
– ওকে কে ডাকবে? আর ও কী ফ্রি থাকবে? আমি ডাকলে এমনিতেও আসবে না।
– কল শুভ্র ভাই। ওর ও ফলোয়ার অনেক। যত বেশি ফলোয়ার, তত বেশি রিচ। আর শুভ্র ভাই ডাকলে মিনারা আসবে। ওর বোন মারিনাও আসবে।
– ও মাই গড! ঐ অ্যাকট্রেস?
– হ্যাঁ। আমরা সবাই এক টিম, টিম এ। আফরা ওর হাসবেন্ড এক টিম, টিম বি। রোমা তুই অন্য কাউকে নিয়ে আসিস ফলোয়ার ওয়ালা কেউ, টিম সি। আর নাদিয়া আর ওর মাছ এক টিম, টিম জি। ফরটি পার্সেন্ট ক্যাফে থাকবে আমাদের দখলে। আমরা যখন হৈ চৈ করবো,
– বাকি দের না চাইতেও দৃষ্টি আকর্ষণ হবে। বাকিরা ক্যাফের বাইরের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
– এখন সব নাদিয়ার ওপর।
রোমা বলল,
– নাদিয়া, ইউ উইল প্লে আ ফেমে ফেটাল।
– হোয়াট ডু ইউ মিন!
– কাতিল হাসিনা। লাস্যময়ী রমনী। ওর ডি এমে যত হর্নি ব্যবহার করা যায় করবি। মানে তুই অনেক লোনলি কিন্তু লাস্যময়ী।
– ছি!
– ইটস ইওর প্রজেক্ট। সব রেডি। এখন তোর অ্যাপ্রোচ ঠিক না থাকলে দেখা গেল সে আসলোই না। নেক্সট উইক আ’ম গোইং টু প্যারি।
– ওকে।
– ওকে ক্লোজ ফ্রেন্ডে দিয়ে রাখ। এরপর সব সেক্সি সেলফি স্টোরি তে। তাহলে ও ভাববে তুই ইন্টারেস্টেড অ্যান্ড ডেস্পারেট!
নাদিয়া সোফার উপর শুয়ে মুখ চেপে হাসতে লাগলো। জাহিদ সব দেখছে। এখন আর নাদিয়া ওর সাথে কথা বলে না। এভাবে টি শার্ট এর গলা নামিয়ে ছবি তুলছে কেন? জাহিদের ভয় লাগছে। ও গিয়ে নাদিয়ার পেছনে দাঁড়ালো। নাদিয়া হকচকিয়ে গেল!
– খাবার খাবে না?
– তুমি খেয়ে ফেল।
– একা?
– খাইয়ে দেব?
জাহিদের রাগ হচ্ছে। এ কেমন ব্যবহার? নাদিয়া খেতে খেতে ও ফোনে চ্যাট করে যাচ্ছে আর হাসছে। কারণ সানি একদম ফেঁসে যাচ্ছে। জাহিদের কষ্ট হচ্ছে। ও ফোনের দিকে তাকাতে চাচ্ছে না , তাও দেখলো। নাদিয়া ইন্সটাগ্রাম চালাচ্ছে। এরপর রাতেও না ঘুমিয়েই ফোন চালাচ্ছে,
– ঘুমিয়ে পড়ো! স্কুল আছে সকালে।
– স্যরি।
একটু পর ও অন্য ঘরে চলে গেল। কষ্টে জাহিদের বুক ফেটে যাচ্ছে। এরপর ও নিজেও ইন্সটাগ্রামে ঢুকল। নাদিয়ার ক্লোজ ফ্রেন্ডের স্টোরি দেখে ও অবাক! এসব কী! এরপর ওর ইন্সটাগ্রামে একটি উদ্ভট আই ডি থেকে সব পোস্টে লাইক আর কমেন্ট। আই ডি টা প্রাইভেট। নামটা কেমন ভুজুংভাজুং। তবে ইংরেজি এস আর এইচ এর সংখ্যা বেশি। এইটা কী সেই শাখাওয়াত শুভ্র? এইটা হয়তো ওর প্রাইভেট অ্যাকাউন্ট। এভাবে নাদিয়া জাহিদকে এক সপ্তাহ ধরে ইগনোর করেই গেলো। আর আসলো শুক্রবার। সেদিন স্লিভলেস ব্লাউজ আর লাল শাড়ি পরে এক লাস্যময়ী সাজে নাদিয়া বের হচ্ছে। গাঢ় এক লাল লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট ভারি করে আয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো সে। নামাজ পড়ার জন্য তৈরি হতেই সেখানে চোখ আটকে গেল। খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল কোথায় যাচ্ছে? কিন্তু বলল না। খুব সম্ভবত সেই শাখাওয়াত। এসব কী ভাবছে সে! নাদিয়া এমন না।
নাদিয়া সানির সাথে হাসতে হাসতে ঢুকল। নাদিয়ার বন্ধুরা সবাই তৈরী। শাখাওয়াত ও জানে, তবে বাকি মেয়ে দুটো না। তারা বলে উঠে,
– নাদিয়া! শাখাওয়াত নাদিয়া!
– বাদ দাও!
– স্যরি তোমার এক্স। কিন্তু এটা কী ওর বর?
– আই ডোন্ট কেয়ার।
বার বার শাখাওয়াতের চোখ নাদিয়ার দিকে যাচ্ছে। অ্যাকটিং টা ভালোই পারে সে। করলেই পারতো। অ্যাকশন যখন শুরু হলো সবাই ঠিকঠাক করলো। নুসরাত আসতেই ওর হাতে সব রেখে নাদিয়া আর ওর বন্ধুরা চলে আসলো। সেই মেয়ে দুটো চলে গেল তাদের পরের গন্তব্যে। এতক্ষণে ওরাও পোস্টিং শুরু করে দিয়েছে। শাখাওয়াত সহ বাকিরা আইসক্রিম পার্লারে,
– সত্যি নাদিয়া, তুই না একটা শো করতে পারিস। নুসরাত থেকে হিট খাবে।
– আফরা, আমি এমনিতেই নুসরাত থেকে হিট!
– এই সাজে বের হলি, জাহিদ ভাই কিছু জিজ্ঞেস করেনি?
– না।
– কিচ্ছু না!
রোমা বলল,
– তোর কপাল ও! শুনেছিলাম তোর বর নাকি খুব ধার্মিক!
– কে বলেছে? আফরা?
– হ্যাঁ।
– আফরা! হাহাহাহ! রোমান্টিক তা জানিস না?
– তা তো দেখেছিলাম ফেসবুকে।
এসবের মধ্যে শাখাওয়াত চুপ। নাদিয়াকে খুব হাসিখুশি দেখাচ্ছে। নাদিয়া তেমনই একজন, যাকে ভালো না বেসে কেউই থাকতে পারে না। ওর এত তপস্যা করা লাগবে না। ও সেই অপ্সরী যে ঋষির তপস্যা ভাঙাতে সক্ষম। ওর স্বামী কেমন মানুষ তা জানার খুব ইচ্ছে হচ্ছে শাখাওয়াতের।
– আ’ম সো হ্যাপি ফর ইউ নাদিয়া।
– থ্যাংক ইউ শাখাওয়াত।
– একদিন দেখা করিয়ে দিও, তোমার বরের সাথে।
– ঠিক আছে।
এরপর ওরা সবাই কয়েকটা গ্রুপ ছবি তুলে বাড়ি ফিরে এলো। কিন্তু জাহিদের মন খারাপ। অনেক সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ও একটা কথাও বলছে না।
– এক কাপ চা হবে?
– হুম?
– চা খাব। বানিয়ে দিন।
জাহিদ এক হাড়ি রাগ নিয়ে চা বানাতে গেল। নাদিয়া ও ওর পেছনে পেছনে গেল। জাহিদ ওর দিকে তাকাচ্ছে না। নাদিয়া ভাবছে ও কী টিভি দেখেনি? ওর তো খুশি থাকার কথা। নাদিয়া রেডিও চালিয়ে দিল। যদিও শো এখন শেষের দিকে। শেষ একটা গান বাজাবে আরজে ঐশী। নাদিয়া গলা ঝেড়ে বলল, ” আজকে না খুব মজা হয়েছে।” জাহিদ কোনো প্রত্যুত্তর করল না। নাদিয়া ওর পাশে গুনগুন করেই যাচ্ছে। অনেকক্ষণ পর নিজেকে সামলে প্রশ্ন করেই ফেলল,
– কোথায় গিয়েছিলেন?
– বন্ধুদের সাথে দেখা করতে।
জাহিদ পানিতে চা পাতা দিতে থাকে। কিন্তু মন শান্ত হচ্ছে না।
– কারা কারা ছিল?
– এই যে আফরা, রোমা, সায়েম আরো অনেকে। অনেক পুরনো বন্ধু।
– আর?
– আর। আর কে? শাখাওয়াত?
নাদিয়া ফিসফিসিয়ে বলে। ও বুঝতে পেরেছে জাহিদ জেলাস। ও আরো দুই চামচ চা পাতা দিয়ে ফেলল। নাদিয়া জাহিদের এই আচরণ খুব উপভোগ করছে।
– এত কড়া চা কে খাবে?
– যে এত কড়া লাল লিপস্টিক দিয়েছে।
– তাই? জানো, আমরা আইসক্রিম ও খেয়েছি।
– দেখে মনে হচ্ছে না।
– সেটাই তো। লং লাস্টিং লিপস্টিক। এই যে দেখো, একটুও উঠছে না।
– ও!
জাহিদ দাঁতে দাঁত চেপে আছে। ওর চোখে জল চলে এসেছে, তাই ও মুখ ফিরিয়ে নিলো। রেডিওতে গান চলছে,
“বধূয়া আমার চোখে
জল এনেছে হায় বিনা কারণে
নীল আকাশ থেকে
একি বাজ এনেছে হায় বিনা কারণে।”
নাদিয়া জাহিদের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চশমার বাইরে থেকেও অভিমান দেখা যাচ্ছে। আরজে ঐশীর গান পছন্দ আর সময় জ্ঞান দুটোই দারুণ। নাদিয়া জাহিদের চিবুক ধরে বলে, “দেখি।” জাহিদ ওর দিকে তাকাচ্ছেই না দেখে নাদিয়া হাসতে লাগলো।
– জাদু রাগ করেছে?
– কে জাদু?
– আমার জাদু, জাদুমণি।
– আমি কোনো জাদু টাদু না।
– জে ফর জাদু, জে ফর জেলাস!
– যা ইচ্ছা তাই ভাবুন। আপনার ই তো সময়।
জাহিদ কাপ নিয়ে চায়ে দুধ চিনি মেলাতে থাকে। নাদিয়া ভাবছে আবার আপনি তে ফেরত। অনেক রাগ! ও ওর পাশে এসে দাঁড়ায়,
– আমাকে কী আজকে খুব বেশি সুন্দর লাগছে?
– না। একদম না। এটা কী এত বাজে লাল লিপস্টিক! এত লাল লিপস্টিক কে লাগায়?
– বেশি লাল?
– হ্যাঁ। খুব কড়া।
– তো কমিয়ে দাও?
– কী করে?
– শেয়ার করে।
নাদিয়া জাহিদের সাথে মজা করছে। জাহিদ এবার চা এনে কাপে ঢালল। তারপর সেটা নাদিয়া কে দিল। নাদিয়া চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
– চা টা খুব ভালো হয়েছে।
– ….
– একদম আমার লিপস্টিকের মতো কড়া।
– ….
– কেউ চাইলে আমাকে সাহায্য করতে পারে।
জাহিদ এখনো রেগে। নাদিয়া কাপটা টেবিলে রেখে জাহিদের চশমাটা নিয়ে চলে যায়। জাহিদ চশমার জন্য আসতে গিয়ে হোঁচট খায়। নাদিয়া হাসতে হাসতে বলল, “এতই যখন সমস্যা আমার লিপস্টিকে তো চোখে না দেখলেই হয়।” জাহিদ সেখানে দাঁড়িয়েই মিনতি করতে থাকে চশমা ফেরত দেওয়ার। নাদিয়া জাহিদের সামনে আসে,
– একটা শর্তে চশমা দেব।
– কী শর্ত?
– আমাকে পায়ে পায়ে ঘরে নিয়ে যেতে হবে।
– আমি দেখতে পারছি না।
– আমি রাস্তা বলে দেব।
নাদিয়া এসে জাহিদের ঘাড়ে হাত জড়িয়ে জাহিদের পায়ের ওপর দাঁড়ায়। এরপর জাহিদ ও নাদিয়া কে শক্ত করে ধরে এক পা দুই পা করে ওকে ঘরে নিয়ে যায়।
– এখন?
– বেড পর্যন্ত যাও।
– ওকে।
খাটের সামনে আনার পর জাহিদ দাঁড়িয়ে থাকে।
– এখন?
– চোখ বন্ধ।
– হুম।
নাদিয়া জাহিদের বুকে মাথা রেখে বলে,
– নাও ফিল মি।
– হুম।
– আমার কোনো লিপস্টিক নেই, আমি শুধু নাদিয়া …
জাহিদ আরো শক্ত করে ধরে নাদিয়া কে। এরপর ও আস্তে আস্তে নাদিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর ওর গলায় আলতো করে চুমু খেতে থাকে। আস্তে আস্তে ওর ঠোঁট পর্যন্ত এসে বলে,
– লিপস্টিক টা আমার অপছন্দ না, খুবই পছন্দ। খুব সুন্দর লাগছিল তাই বলেছি। স্যরি, রাগ করেছ?
– না। তবে আমার কড়া লিপস্টিক পছন্দ না।
– ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আই ক্যান হেল্প।
এদিকে সারা দেশে একটা ভাইরাল টপিক সানি। বিরোধীদলীয় সাবেক মন্ত্রীর নাতি এরকম জঘন্য কুকর্মে লিপ্ত। সারা দেশ একযোগে তার বিচার চায়। ইতিমধ্যে ভুক্তভোগী নারী ও সোস্যাল মিডিয়াতে এসে বক্তব্য দেয়। সে এভাবে ধরা পড়বে তারা বোঝেনি। সেই ইনফ্লুয়েন্সার দুজন আর শাখাওয়াত ও বিষয়টা ভাইরাল করতে সহায়তা করে। মোট কথা আগুন লেগে তাতে ঘি বারুদ পড়ে এক জমজমাট বিস্ফোরণ।
সানি পরিচয় বদলে এখান থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিল। ওকে এখন কী করে কানাডা পাঠাবে তা নিয়ে কথা হচ্ছে। থানা থেকে ওকে বাসায় নিয়ে এসেছে। সানির বাবা খুব রেগে আছে। সরকার দলে তার কিছু বন্ধু কে ঘুষ দিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই তাকে অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে হবে। তবে যাওয়ার আগে সানি প্রতিজ্ঞা করেছে, নাদিয়া কে যোগ্য শিক্ষা দেবে। সব জাহিদের চাল ছিল। ও বদলা নিয়েছে। সানি যখন জ্বলছিল, জাহিদ তখন প্রেমে মশগুল ছিল।
নাদিয়া আর জাহিদ একসাথে শুয়ে আছে। নাদিয়া জাহিদকে পাশ ফিরতে বলল। এরপর ও জাহিদের উদাম পিঠে আঙুল দিয়ে লিখতে লাগলো। জাহিদ হাসতে হাসতে বলে,
– সুরসুরি লাগছে তো!
– দাঁড়াও। আমি এখন যা লিখব, তা অনুমান করতে হবে।
– ওকে।
নাদিয়া লিখলো, ছোট হাতের আই। জাহিদ বললো, ” আই, ফুল স্টপ।”
নাদিয়া লিখলো হার্ট। জাহিদ বলল, “কোয়েশ্চন মার্ক, এস।”
নাদিয়া লিখলো ইউ। জাহিদ বললো, ” সি না না। রাউন্ড ব্র্যাকেট স্টার্ট। এর পর? আর নেই? মানে কী?”
নাদিয়া হাসলো। খেয়াল করল জাহিদের পিছনে অনেক আবছা দাগ। সানির কথা শোনার পর অনেক স্পষ্ট লাগছে এখন। ওর মা তো চোখে দেখত না, তাই হয়তো ঔষধও লাগায়নি। নাদিয়ার হাতের কাটা দাগ গুলো ঔষধের জন্য সেরে গেছে। কিন্তু জাহিদ দাগ গুলো হালকা হয়ে আছে। প্রতিদিনের মারের দাগ এগুলো। নাদিয়া আলতো করে ছুঁয়ে দেখে। জাহিদ বলে, “আবার কী লিখছো?” ও সাথে সাথে জাহিদ কে জড়িয়ে ধরে জাহিদ সামনে থেকে ওর হাত ধরে রাখে।
– আই লাভ ইউ !
– জ্বী!
– এটাই লিখেছি। I.?sc বা ( না।
জাহিদ সামনে ফিরতে চায়। নাদিয়া বলে, “এভাবেই থাকো না। ভালো লাগছে। ” জাহিদ মুচকি হেসে কিছুক্ষণ পর বলে,
– তোমার চেহারা টা যদি দেখতে পারতাম? আমার চশমা টা দাও না।
– দেখার দরকার নেই। ভেবে নাও। তুমি কী আমাকে অনুভব করতে পার না?
– কেন জানি মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।
– তো ঘুমিয়ে থাকো। জেগে গেলে ভেঙে যাবে।
সকালে অফিসে আসার সময় মনে হচ্ছিল নাদিয়া সব ভুলেই গেছে। আর জিজ্ঞেস করেনি ম্যাগনেফিসেন্টের ব্যাপারে। অফিসে আসার পর সবাই আলোচনা করেই যাচ্ছে। জাহিদ প্রথমে বুঝতে পারেনি। অনেকক্ষণ এড়িয়ে যাওয়ার পর পত্রিকা দেখে সে অবাক হয়ে যায়। সানি! সানি কী করেছে? এ ধরণের মানুষ কখনো বদলায়না। তবে সে অন্তত অন্য পাপের সাজা পাবে। সেই খুশিতেই জাহিদের দিন টা আজ ভালো গেল। এরপর বাড়ি ফেরার সময় নাদিয়ার জন্য ফুচকা নিয়ে আসলো। নাদিয়া ও আজ বাড়িতে।
– আজকে দেখছি অনেক খুশি?
– প্রতিদিনের মতোই তো।
– না। প্রতিদিন এরকম দাঁত কেলাও না। প্রতিদিন ফুচকা ও আনো না। আজকে কী হয়েছে? খুব ভালো কিছু হয়েছে?
– বলতে পারো।
হঠাৎ জাহিদের ফোন বাঁজতে লাগলো। নাদিয়া ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কে? জাহিদ ইশারায় বলল জানি না।
– রেকর্ড অন করো।
– কেন?
– অপরিচিত যখন এটা আমি সবসময় করি।
– ও!
জাহিদ রিসিভ করে রেকর্ড অন করল, ” কীরে লুজার! খুব আনন্দে না? বউকে দিয়ে আমার সর্বনাশ করে সেলিব্রেট করছিস!”
জাহিদ ঘাবড়ে গেল। এতো সানি! নাদিয়া স্পীকার অন করতে বলল, জাহিদ করলো না।
– কথা বলছিস না কেন শুয়োরের বাচ্চা!
– কী বলতে চাও?
– তুই বউ দিয়ে আমাকে ফাঁদে ফেলে এখন জিজ্ঞেস করছিস!
– বউ দিয়ে মানে? আমার বউ কী করল?
– তোর বউ আমাকে ফাঁসিয়ে কাল ক্যাফে তে এনে সবার সামনে ইনসাল্ট করেছে। আ’ম হিয়ার বিকজ অফ দ্যাট ফা*কিং স্লা*ট!
– মুখ সামলে কথা বল!
– অই ইম্পোটেন্ট! তোর বউ যে আমার সাথে এক সপ্তাহ ধরে ফোনে ফষ্টিনষ্টি করল তুই টের পেলি না। আমার সাথে শোয়ার জন্য শি সিডিউসড মি! কাল এমন স্লা*টের মতো আমার কাছে এসে শেষ পর্যন্ত আমাকে ফাঁসিয়ে দিল।
জাহিদ নির্বাক নাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। নাদিয়া বুঝতে পারছে না হচ্ছে টা কী?
– তুই এসবের পেছনে আমি জানি! ভুলে যাস না আমি কী! আগুনে হাত দিয়েছিস! আমি তোর বউয়ের সাথে কী কী করবো তুই ভাবতেও পারবি না। ঐ আফ্রিকানকে তো বাজি ধরে করেছিলাম। তোর বউকে সবার সামনে করবো। পুরো বাংলাদেশ দেখবে। কিচ্ছু করতে পারবি না তুই আমার!
– আমরা কিছু করিনি। আমি জানি না। তুমি হয়তো ভুল বুঝছ। ওর কোনো দোষ নেই।
– ওর দোষ গুণ আমি হিসাব করবো। আমি শাহনাওয়াজ খান সানি অস্ট্রেলিয়া চলে যাব, তুই আর তোর বউ যাবে জাহান্নামে। আমার লোকেরা তোদের গায়েব করে দেবে। তোর বউ আমাকে যে ঝলক দেখালো, উফফফ! আমি পাগল হয়ে গেছি। সেই হিসাব আমি সুদে আসলে তুলব। আফসোস! তোর ভাগ্য টাই খারাপ। লুজার!!!
– প্লিজ! প্লিজ! আমাদের ক্ষমা করে দাও। তোমার ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। (কাঁদতে কাঁদতে)
– আমার দাদা এখন মন্ত্রী না তা বলে আমাকে আন্ডারস্টিমিট করেছিস, তাই না? মনে রাখিস ক্ষমতার হাত বদল হয়, কিন্তু ক্ষমতা কমে না। এখন দেখবি একটু পর তোর বাসার সামনে কে আসে। এসেও পড়েছে, হয়তো বেল বাজবে।
জাহিদ ভয়ে ফোন কেটে দেয়। নাদিয়া জিজ্ঞেস করতে থাকে,
– কী হয়েছে?
– তুমি সানির সাথে দেখা করেছ?
– না , মানে।
– আর ইউ ইনসেইন! চলো এখন? কোথায় যাব আমরা ? কোথায় লুকাবো?
– কেন লুকাবো?
– পথে ডিসাইড করবো। চলো! ওরা আমাদের ছাড়বে না। আর একটা বড় ওড়না নিয়ে মুখ ঢেকে নাও।
নাদিয়াকে নিয়ে জাহিদ তাড়াতাড়ি বের হলো। ভয়ে গাড়ি না বের করেই সিএনজি তে উঠে। ওর হাত পা কাঁপছে। যাওয়ার আগে দাঁড়োয়ানকে বলল কেউ ওদের কথা জিজ্ঞেস করলে বলতে ওরা এখনো বাসায় আসেনি। সিএনজি তে ওঠার সময় ও একটা মাইক্রোবাস আর সামনে পেছনে দুটো বাইক দেখে। বাইকের ওপর দুজন করে লোক। এরাই হয়তো সানির লোক। জাহিদ সিএনজি ওয়ালাকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে বলে।
– হয়েছে টা কী?
– সানি! সানি লোক পাঠাচ্ছে! ফোন সুইচ অফ করতে হবে।
– কেন?
– আপনার টা ও করুন!
– আমরা কেন ভয় পাব?
– চুপ করুন!!! বোকা মেয়ে! খুব হিরো হওয়ার শখ! হিরো হওয়ার আগে সামনের লোকটাকেও দেখতে হয়!!! (চিৎকার করে)
(চলবে)