প্রমত্ত_হৃদয়❤️,৩২

0
891

#প্রমত্ত_হৃদয়❤️,৩২
#লেখনীতে:সারা মেহেক

(গত পর্ব কষ্ট করে একবার পড়ে নিয়েন সবাই)

” কতদিন পারবে সাবিহার কাছ থেকে ওর বাবার মৃ’ত্যুর সত্য লুকিয়ে রাখতে?”
সালমা বেগমের শঙ্কিত গলার প্রশ্ন। রাগীব সালমা বেগমের এ প্রশ্ন শুনে কিয়ৎক্ষণ নত মস্তকে বসে রইলো। খানিক সময় পেরোতে প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
” জানি না। তবে শেষ অব্দি চেষ্টা করে যাবো। কারণ আমি সাবিহাকে হারাতে চাই না। যেকোনো মূল্যে ওকে আমার কাছে রাখতে চাই। এর জন্য শত মিথ্যের প্রশ্রয় নিতে হলেও আমি দ্বিধাবোধ করবো না। ”

রাগীবের কথায় সালমা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। জানালার ধার হতে এসে সোফায় বসলেন। রাগীব তার মুখোমুখি একটি চেয়ারে বসে আছে। রাগীবের চেহারায় স্পষ্ট দুঃশ্চিন্তার ছাপ। সে ভেবেছিলো রাত পেরোতেই সকালে সাবিহাকে তার বাবার বিষয়ে সবটা খুলে বলবে। কিন্তু এর পূর্বেই যে সাবিহা এমন এক আবদার করে বসবে তা কল্পনাও করেনি রাগীব।
ঠোঁটের আগায় দু হাতের তর্জনী আঙুল ঠেকিয়ে ভাবনায় নিমগ্ন রাগীব। তার ভাবনায় ঘুরছে সাবিহা। সালমা বেগম তা স্পষ্ট বুঝতে পারলেন। তিনি রাগীবকে কোমল গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
” সাবিহাকে এতো ভালোবাসো?”

রাগীব জবাব দিলো না৷ সালমা বেগমের দিকে নিষ্পলক চেয়ে বললো,
” হ্যাঁ। আর আমিই একমাত্র জানি, ওর প্রতি আমার ভালোবাসার কোনো সীমা নেই। ”

সালমা বেগম প্রথমে মৃদু হাসলেন। অতঃপর জানালার দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
” আমার মেয়ের কপাল ভালো। তোমার মতো জীবনসঙ্গী পেয়েছে বলে। মাঝে মাঝে ভাবি, ওর ভাগ্য যদি আমার মতো হতো? ও যদি ওর বাবার মতো কোনো ছেলেকে জীবনসঙ্গীকে হিসেবে পেতো তাহলে ওকে আমি কিভাবে সামলাতাম?”

রাগীব প্রত্যুত্তর করলো না। সালমা বেগমের দিকে কিয়ৎক্ষণ চেয়ে রইলো। অতঃপর অকস্মাৎ প্রশ্ন করে বসলো,
” আপনি যখন নিজ হাতে আপনার স্বামীকে গু’লি করলেন তখন আপনার একবারো হাত কাঁপেনি আন্টি?”

সালমা বেগম ঘাড় ঘুরিয়ে রাগীবের দিকে চাইলেন। নিষ্পলক চাহনিতে দৃঢ়তার সহিত জবাব দিলেন,
” না। একটুও হাত কাঁপেনি। বরং উনাকে গু’লি মা’রার পর মনে হচ্ছিলো আমার ভেতরকার কোনো বড় বোঝ যেনো নেমে গিয়েছে।
সাবিহার বাবাকে তুমি জানতে মাত্র কয়েক মাসের জন্য। অথচ উনার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো পঁচিশ বছরেরও বেশি সময়। এই পঁচিশ বছরে রোজ উনাকে দেখেছি আমি। উনার অত্যাচার সহ্য করেছি। উনার কুকীর্তি জেনেও মুখ বুজে সহ্য করেছি। কিন্তু কিছু করতে পারিনি। কারণ উনার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস ছিলো না আমার। আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ ছিলো না। আবার সাবিহা আর সাবিতকে নিয়েও খুব চিন্তা হতো। কিন্তু এতো বছর পর যখন তুমি এসে ওর বাবার করা পাপগুলো বর্ণনা দিলে, বিশ্বাস করো আমি নিজেকে কোনোমতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। হ্যাঁ, ভেতর থেকে ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু মনের কোনায় কোথাও তখন প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা জেগে উঠে। তবে সে সময় সময় ও সুযোগ ছিলো না। পরবর্তীতে যখন তুমি আমাকে তোমার প্ল্যানের কথা বললে তখন আমি বেশ সাহস জুগিয়েই তোমাকে কথাটা বলি। আর তুমিও রাজি হয়ে যাওয়ায় তখন সাহসটা আরো বেড়ে যায়৷
অবশ্য সাবিহা যদি ওর বাবার আড়ালে লুকিয়ে আমাকে কখনো শুটিং না শেখাতো তবে আজ হয়তো আমি উনাকে মা’রতে পারতাম না। ”
এই বলে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সালমা বেগম।

রাগীব কিঞ্চিৎ বিস্মিত চাহনিতে সালমা বেগমের দিকে চেয়ে আছে। সে সাবিহার মা’কে নিজের মা মনে করে। তবে কখনো ঠিক ওভাবে সম্বোধন করা হয়ে উঠেনি তাকে। রাগীব জানে, মায়েরা কোমল হৃদয়ের হয়। পৃথিবীর সব ভালোবাসা, মায়া, মমতা তাদের মাঝে সমাহিত থাকে। মায়েরা কখনো খু’নি হয় না৷ মায়েরা কখনো কাউকে হ’ত্যা করতে পারে না৷ কিন্তু সাবিহার মা’কে দেখে তার সে ধারণা বদলে গিয়েছে। সে এখন জানে, মায়েরা কঠোর হয়। পরিস্থিতি ভেদে তারা নিজেদের প্রস্তরের ন্যায় দৃঢ় করে তুলতে পারে। মায়েদেরও সহ্য সীমা থাকে। যখন সে সহ্য সীমা অতিক্রম হয়ে যায় তখন তারা প্রতিবাদী হয়ে উঠে, রক্ষক হয়ে উঠে। প্রয়োজনে খু’ন করতেও তাদের হাত কাঁপে না।

সালমা বেগমকে বেশ কিছু কথা বলার ছিলো রাগীবের। কিন্তু অনিকের কল আসায় তা আর করা হয়ে উঠেনি। ফোনে অনিকের কল আসতেই সে উঠে চলে যায়৷

.

আফসার সাহেবের বাসা লোকেলোকারন্য। কোথাও যেনো তিল ধারণের ঠাই নেই। উপস্থিত প্রতিটা মানুষের চেহারা বিষন্নপূর্ণ। কারো কারো মুখে আফসোসের বাণী। প্রত্যেকেই আফসার সাহেবের মৃত্যু নিয়ে হা হুতাশ করছে।
আজ সকালে আফসার সাহেবের লা’শ পাওয়া গিয়েছে। তবে লা’শটা অক্ষত নেই। গলে পঁচে মাটিতে মিশে যাওয়ার জোগাড় হয়ে এসেছে। চেহারা দেখে বুঝার উপায় নেই এটা কার লা’শ।

তিনদিন পর গতকাল রাতে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন থেকে সাবিহার ফোনে কল আসে যে তার বাবার লা’শ পাওয়া গিয়েছে। সে এ খবর প্রথমে বিশ্বাস করতে চায়নি। এজন্য রাগীবকে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে ছুটে চলে গিয়েছে সে। সেখান থেকে গিয়েছে ম’র্গে। ম’র্গে রাখা আফসার সাহেবের লাশ দেখে কিছুতেই বুঝার উপায় ছিলো না যে এটি তার লা’শ। সাবিহা এটি বিশ্বাস করতে চায়নি৷ শেষমেশ ডিএনএ স্যাম্পল মিলিয়ে সে নিশ্চিত হয়েছে।
আফসার সাহেবের লা’শ এতোটাই পঁচে গিয়েছিলো যে তার শরীরে গুলিবিদ্ধ স্থানগুলোও এক দেখায় শনাক্ত করা যায়নি৷ অবশ্য এমনটাই চেয়েছিলো রাগীব। পুলিশদের সাহায্যে সে আফসার সাহেবের খু’নকে এক্সিডেন্টের রূপ দিয়েছে। সবাইকে দেখিয়েছে, সেদিন রাতে বাসা হতে বেরিয়ে একটি বারে গিয়ে ম’দ্য’পান করে মা’তাল হয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি। অতঃপর সুনসান একটি সড়কে গাছের সাথে বাড়ি খেয়ে গাড়িসহ পরিত্যক্ত একটি খালে পড়ে যান তিনি। পো’স্ট’মা’র্টা’মের এ রিপোর্টটাও খুব সহজেই বিশ্বাস করে নেয় সাবিহা। সে জানতো তার বাবা নিখোঁজ এবং সে চেয়েছিলো তার বাবা নিখোঁজই থাকুক। অন্ততঃ তার ধরাছোঁয়ার বাইরে যেনো থাকে তার বাবা এমনটাই চাওয়া ছিলো তার। কারণ আফসার সাহেবকে দেখলেই সাবিহার পুরোনো কথাগুলো মনে পড়ে যাবে, তার প্রতি ঘৃণা জন্মাবে, যা সে চায় না। এজন্যই সাবিহা এমনটা চাইছিলো। কিন্তু সে জানতো না তার বাবা এভাবে মা’রা যাবে৷ এভাবে তাকে ছেড়ে চলে যাবে।

আফসার সাহেবের লা’শ নিয়ে যাওয়া হলো। সাবিহা নির্বাক। সে হতভম্বের ন্যায় বসে আছে। তার চোখ দিয়ে এক ফোঁটাও অশ্রু ঝড়ছে না। কিন্তু ছোট সাবিত কাঁদছে। বাঁধভাঙা মর্মযন্ত্রণায় কাঁদছে সে। এভাবে কাঁদতে কাঁদতেই সে সবার সাথে আফসার সাহেবের লা’শ নিয়ে কবরস্থানের দিকে গেলো।

এদিকে সালমা বেগম নিজের রুমের জানালার ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন। তার দৃষ্টি স্থির, শান্ত৷ মনের মাঝে নেই কোনো অস্থিরতা, নেই কোনো অপরাধবোধ। আছে যেনো শুধুই শান্তি। নিজ স্বামীকে নিজ হাতে খু’ন করে তিনি চিন্তিত নন। বরং এ কয়দিন ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে আছেন তিনি।
আফসার সাহেবের শেষ দর্শন করেননি সালমা বেগম। রুম হতে শুধু স্বামীর কফিনটাই দেখেছেন তিনি। এর মধ্যে কারোর সামনেই আসেননি তিনি৷ কারণ তিনি লোকেদের সামনে দুঃখী হওয়ার ভান করতে চাননি৷ মিথ্যে অশ্রু ঝরাতে চাননি৷ আর কার জন্যই বা অশ্রু ঝরাবেন তিনি? ঐ কলুষিত হৃদয়ের পাপীর জন্য! নাহ, আর ভান করা সম্ভব নয়৷ এখন হতে তিনি মুক্ত। সকলের সামনে মিথ্যে হাসি মুখে নিয়ে চলা হতে তিনি মুক্ত। এখন তিনি মন থেকে হাসবেন৷ হৃদয় খুলে হাসবেন। আজ হতে তিনি এ মিথ্যে বন্ধন হতে মুক্ত………..

.

কেটে গিয়েছে দুটো মাস। সাবিহার জীবনে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। এখন সে সুস্থ স্বাভাবিক। অথচ গত এক মাস পূর্বেও সে মানসিকভাবে পুরোপুরি স্থির ছিলো না। আফসার সাহেবের মৃ’ত্যু তাকে ভেতরে থেকে বেশ দূর্বল করে দিয়েছিলো। সেই এক মাস সাবিহা কারোর সাথেই ঠিকঠাক কথা বলেনি। প্রয়োজন ছাড়া একটি কথাও তার মুখ হতে বের হয়নি। তার এ অবস্থার উন্নতি ঘটেছে রাগীবের জন্য। এ সঙ্কটপূর্ণ পরিস্থিতিতে সে সাবিহার মনোবল বাড়িয়েছে। সাবিহাকে সাধ্যমতো সময় দিয়েছে। তারই এ আচরণে সাবিহা পূর্বের মতো জীবন ফিরে পেয়েছে। নিজেকে বানিয়েছে পুরোনো সেই সত্ত্বার ন্যায় মজবুত ও দৃঢ়।

গত দু দিন হলো রাগীব ও সাবিহা সিসিলি এসেছে। রাগীব চেয়েছিলে আর এক বছর পর সাবিহার সেমিস্টার শেষ হলে সে সাবিহাকে নিয়ে সিসিলিতে স্থায়ী হয়ে যাবে। এর পূর্বে সে সাবিহাকে সিসিলি আনতে চায়নি। কিন্তু সাবিহার জোরাজোরিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েই সে সাবিহাকে নিয়ে সিসিলি ঘুরতে চলে আসে। আপাতত তারা সিসিলিতে রাগীবের বাঙলোতে অবস্থান করছে।

রাজীব সাহেবের রুমের রকিং চেয়ারে বসে আছে সাবিহা। হাতে “pride and prejudice” বই। গভীর মনোযোগ সহকারে বই পড়ছে সে। সিসিলিতে আসার পর হতে রাগীব বাইরে গেলেই সাবিহা রাজীব সাহেবের রুমে বসে সময় কাটায়। নির্বাক রাজীব সাহেবের সাথে কথা বলে। যদিও সেসব কথার প্রত্যুত্তর সে পায় না। কিন্তু কথা বলে। রাজীব সাহেবের মাঝে নিজের প্রয়াত বাবার ছবি দেখতে পায় সাবিহা। এজন্যই বোধহয় আরো বেশি সময় এ রুমে ব্যয় করে সে।

সাবিহার গভীর মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটে রুমের বাইরে চলমান কিছু শব্দের কারণে। এ ব্যাপারে রুমের বাইরে থাকা গার্ডদের সাথে কথা বলতে চেয়ার ছেড়ে উঠতে নিলেই ঘটলো এক আকস্মিক ঘটনা। ঝড়ের বেগের ন্যায় গার্ডের পোশাক পরিহিত দুজন লোক ঢুকলো রুমে। তাদের হাতে পি’স্ত’ল। সাদা শার্ট র’ক্তে রঞ্জিত। দরজা খুলেই অবিলম্বে তারা গুলি চালালো রুমের এদিক ওদিক। প্রথমে সিসিটিভি ক্যামেরা, রুমের লাইট অতঃপর দামী দামী কিছু ভাস ভেঙে চুরমার হলো। এখন রুম প্রায় অন্ধকারে ঢাকা। আলো বলতে বাইরে আবছায়া দিনের আলো প্রবেশ করছে রুমে। সে আলোতেই সাবিহা দেখতে পেলো গার্ড দুটোর হিং’স্র চেহারা।
এদিকে ঘটনার আকস্মিকতায় কিয়ৎক্ষণের জন্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়লো সাবিহা। অতঃপর তার টনক নড়লো যখন গার্ড দুজনের একজন রাজীব সাহেবের দিকে এবং অপরজন তার দিকে পি’স্ত’ল তাক করলো। কিন্তু সে পি’স্ত’লের ট্রিগার দাবানোর পূর্বেই সাবিহা তড়িতে হাতের বইটি প্রথম গার্ডের কব্জি বরাবর ছুঁড়ে মারলো। অতঃপর তার হাতের পি’স্ত’লটি গিয়ে মেঝেতে পড়লো। এরই মাঝে দ্বিতীয় গার্ডটি সাবিহার উপর গু’লি চালাতে উদ্যত হলো। কিন্তু সাবিহা তড়িৎ গতিতে এগিয়ে গিয়ে পা উঁচিয়ে গার্ডের হাত হতে পি’স্ত’ল ফেলে দিলো। অতঃপর নিজের ক্যারাটের টেকনিক খাটিয়ে গার্ড দুটোকে কোনোমতে ধরাশায়ী করলো৷ তবে গার্ড দুটোও কম কিসে। সাবিহার ক্যারাটে প্রয়োগ দেখে নিজেরাও সাবিহার উপর হামলা করলো৷ দুটো ছেলের সাথে এক হাতে পেরে উঠতে পারছে না সাবিহা। বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে নিমিষের জন্য গার্ডদের হতবুদ্ধি করলেও পরবর্তীতে তারা ঠিকই তাকে মা’রতে পেরেছে। সে প্রাণপণ চেষ্টা করছে যেনো গার্ড দুটোর হাতে কোনোমতেই পি’স্ত’লগুলো পুনরায় না আসে৷ গার্ডগুলোয় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। এভাবে দু মিনিটের মাথায় বাড়ির বাইরে হতে বেশ কয়েকজন গার্ড দ্রুত রাজীব সাহেবের রুমে প্রবেশ করলো। মুহূর্তেই নিজেদের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে তারা লেবাসধারী গার্ড দুটোকে পুরোপুরি ধরাশায়ী করে ফেললো। তন্মধ্যে একজন গার্ড জরুরি কণ্ঠে সাবিহাকে জিজ্ঞেস করলো,
” ম্যাম, আপনি ঠিক আছেন? ”

কিছু সময়ের জন্য চলা মা’র’পি’টের দরুন সাবিহা শরীরের বেশ ক’জায়গায় আঘাত পেয়েছে৷ সেসব জায়গায় এ মুহূর্তে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। তা সত্ত্বেও সে গার্ডটিকে মিথ্যে বললো,
” আমি ঠিক আছি। আর বাবারও কিছু হয়নি। ”

গার্ডটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বললো,
” রাগীব স্যার ও অনিক স্যার যেকোনো মুহূর্তে চলে আসবেন। আপনি আপনার রুমে গিয়ে রেস্ট নিন ম্যাম। আমরা রাজীব স্যারকে অন্য রুমে শিফট করছি।”

সাবিহা আলতো মাথা দুলালো। গার্ডটি যেতে নিলেই সাবিহা পিছন হতে ডেকে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
” এই গার্ড দুটো কে? নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে কেউ না?”

” জি ম্যাম। এরা আমাদের লোক নয়৷”

” তাহলে এরা কারা? বাবাকে মা’রতে এসেছিলো কেনো?”

গার্ডটি নত মস্তকে বললো,
” এ প্রশ্নগুলোর জবাব রাগীব স্যারই আপনাকে দিয়ে দিবে ম্যাম৷ আপনি এখন রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে পারেন। ”

সাবিহা আর কথা বাড়ালো না। কিছুক্ষণ পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে নিজের মাঝেই আলোচনা করতে করতে রুমের দিকে পা বাড়ালো।

.

গার্ড দুটোর হাত এবং পা চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা। তাদের চোখে বিরাজ করছে ভয়। প্রাণ হারানোর ভয়। তারা রাগীবের চাহনি দেখছে। রাগীবের চাহনিতে স্পষ্ট রূপে হিং’স্রতার দেখা মিলছে। রাগীব তন্মধ্যে একজনের চুলের মুঠি ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
” গ্যাব্রিয়েল পাঠিয়েছে না তোদের?”

গার্ড দুটো মুখ বুজে রইলো। জবাব দিলো না। এতে রাগীব রেগে গিয়ে হাতের পি’স্ত’লটা দ্বিতীয় গার্ডের মাথায় তাক করতেই গার্ড সাথে সাথে জবাব দিলো,
” হ্যাঁ, হ্যাঁ, গ্যাব্রিয়েল স্যারই পাঠিয়েছে আমাদের। ”

রাগীব আর কথা বাড়ালো না। কয়েক কদম দূরে এসে গার্ডগুলোর দিকে পি’স্ত’ল তাক করে বললো,
” সাবিহা আর বাবার ক্ষতির চেষ্টা করার জন্য। ”
এই বলে সে পরপর দুটো গু’লি দুজন গার্ডের কপাল বরাবর মারলো। নিমিষের মাঝেই গার্ড দুটো প্রাণ হারালো। অতঃপর রাগীব মেঝেতে পি’স্ত’ল ছুঁড়ে দিয়ে বললো,
” গ্যাব্রিয়েল, ক্ষমতার লোভে আর কত নিচে নামবে তুমি? এতোদিন আমাদের পিছে লেগে ক্ষান্ত হওনি, এখন আমার বাবার সাথে সাবিহার পিছনেও পড়েছো! হয়তো তোমার শেষ সময় চলে এসেছে গ্যাব্রিয়েল। বয়সে বড় বলে অনেক ছাড় দিয়েছে তোমাকে। কিন্তু এখন আর না।”

.

সাবিহা অধীর আগ্রহে রাগীবের অপেক্ষা করছিলো। তার মনে উশখুশ করছে, ঐ গার্ড দুটোকে কে পাঠিয়েছে তা জানার জন্য৷ ফলে রাগীব আসতেই সে বিলম্ব ব্যতিত রাগীবকে জিজ্ঞেস করে বসে,
” ঐ গার্ড দুটোকে কে পাঠিয়েছে? আর তারা বাবাকে মা’র’তে এসেছিলো কেনো?”

সাবিহার এ আগ্রহ দেখে রাগীব মৃদু শব্দে হাসলো। ভ্রু নাচিয়ে মিটিমিটি হেসে বললো,
” তোমাকে এর একটিরও জবাব দেওয়া যাবে না। কারণ তুমিই বলেছো, আমার এ জগত সম্পর্কে আর নতুন করে কিছু জানতে চাও না তুমি। সেক্ষেত্রে এটাও বলা যাবে না।”

সাবিহার মুখটা ছোট হয়ে এলো। তার আগ্রহ সকল হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। খানিকটা মিইয়ে এলো সে। তার এহেন রূপ দেখে রাগীব চুপিসারে হাসলো। ওয়াশরুমের দিকে এগুতে গিয়েও ফিরে এলো। অতঃপর সাবিহার নিকটে এসে তার বাহুতে হাত রেখে রাশভারি গলায় বললো,
” ক্ষমতার লোভ মানুষকে ব্যক্তি হতে জা’নো’য়ার বানিয়ে দেয়। শুধু এটুকু জেনে রাখো, যারা বাবাকে মা’রতে এসেছিলো তারা আমাদের পুরোনো শ’ত্রুর লোক। আমার বাবার সৎ ভাইয়ের ছেলের লোক ছিলো ওরা। ”
এই বলে সে পুনরায় যেতে নিলো। কিন্তু ফিরতি পথ ধরে আবারো পূর্বের স্থানে ফিরে এলো। সাবিহার দিকে সগর্বে চেয়ে বললো,
” থ্যাংকস স্নিগ্ধময়ী, আমার বাবাকে বাঁচানোর জন্য। বাই দা ওয়ে, ভাবছি, তোমার কাছ থেকে ক্যারাটের ট্রেইনিং নিবো। যেনো যখন তখন পি’স্ত’ল ছাড়াও শত্রুদের পুরোপুরি কাবু করতে পারি আমি৷ তো ম্যাডাম, কবে থেকে শুরু করবেন?”

সাবিহা মুহূর্তে দু হাত মুঠো করে সামনে দিয়ে ক্যারাটে শুরুর পজিশনে এসে বললো,
” আপনি বললে এখনই শুরু করে দিতে পারি স্যার। ”
এই বলেই সে ফিক করে হেসে ফেললো। হাসলো স্বয়ং রাগীবও।

হঠাৎ মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে রাগীব বললো,
” সাবিহা? ভেনিসের ফিরে চেরি ব্লোসম দেখতে যাবে?”

সাবিহা উৎফুল্লিত কণ্ঠে বললো,
” অবভিয়েসলি। এই প্রপোজাল আমি কিভাবে রিজেক্ট করতে পারি!”

রাগীব মৃদু হাসলো। বললো,
” ওকে ডান ম্যাডাম৷ তাহলে ভেনিসে ফিরেই আমরা চেরি ব্লোসম পার্কে যাচ্ছি। ”

সাবিহা রাগীবের কথার প্রত্যুত্তর করলো না৷ অতি খুশিতে জড়িয়ে ধরলো রাগীবকে। রাগীবও তাকে দু হাত দিয়ে দৃঢ়ভাবে আলিঙ্গন করলো।

.

” ম্যাম, আপনার নামে পার্সেল এসেছে।”
এই বলে ডেলিভারি ম্যান সাবিহার দিকে একটি মোটা খাম ধরিয়ে দিলো। সাবিহা তা হাতে নিয়ে এপাশ ওপাশ উল্টে দেখলো। তার নাম ও ঠিকানা বাদে আর কারোর নাম বা ঠিকানা নেই সেখানে।
সাবিহা ডেলিভারি ম্যানকে এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে ডেলিভারি ম্যান অজানা হওয়ার ভান করলো। সে সাবিহার হাতে পার্সেলটা দিয়ে চুপচাপ কেটে পড়লো সেখান থেকে।
ডেলিভারি ম্যান যেতেই সাবিহা পার্সেলটা খুললো। অতঃপর পার্সেল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে যা দেখলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

(অনেকদিন পর গল্পটা দিলাম। এতো দেরি করার জন্য যত সরি বলবো ততই কম হবে। আসলে হয়েছে কি, ইদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ায় জমিয়ে ছুটি কাটিয়েছি এবার। কারণ এরপর আর এমন ছুটি নেই। এই ছুটি শেষ হতেই চলে আসি হোস্টেলে। হোস্টেলে এসে রেস্ট নিতে না নিতেই ক্লাস আর আইটেমের প্যারা শুরু হয়ে যায়। এই আইটেমের জন্যই এ কয়দিন গল্প দিবো দিবো করেও দেওয়া হয়নি। দুঃখিত।)

#চলবে
(গল্প দেরিতে দেওয়ার কারণ বলে দিয়েছি উপরে। আর এ পর্ব পড়ার আগে ৩১ নং পর্ব একবার পড়ে নিবেন কষ্ট করে যেনো কাহিনির সাথে তাল মিলাতে পারেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here