একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৩৫

0
5735

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৩৫
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?

পহেলা ফাল্গুনের অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়েছে মুক্ত মঞ্চে। এই ব্যপারে অনেকটা বিরক্ত লাবিবা । মুক্ত মঞ্চে গিয়ে নাচ করা মানে পুরো শহরের মানুষের সামনে গিয়ে নাচ করা । অসহ্য লাগছে । শাড়ী হাতে নিয়ে লাবিবার কাছে এসে দাড়িয়েছে শারমিন । লাবিবা তুতুকে নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে সময় লাগবে সাজাতে । শারমিন রেগে গিয়ে বলে —তোর বেবিটাকে রেখে এখন একটু রেড়ি হয়ে নে মা । পরে আবার তারাহুরোয় ঠিকঠাক সাজতে পারবি না ।
লাবিবা উঠে বসে । শাড়ির দিক তাকায় । শাড়ি পড়তে হবে তাইনা ? সাজতে হবে । আমি সাজি না জন্য আমি অসুন্দর তাইনা ?
—দোস্ত রেড়ি হ । পার্লার থেকে সাজবো । সুন্দরী কাকে বলে আজ দেখিয়ে ছাড়বো । পুরো কলেজের ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে ।
—কি বলিস এগুলা দোস্ত?? বাবু ভাই তোকে ছাড়বে ভেবেছিস ?
—না ছাড়লে নাই । আল্লাহ যদি চান নিশ্চয় আমাকে রক্ষা করবেন ।তার ভয়ে আমি ঘরে বসে থাকবো নাকি ?
দুই বান্ধবীতে পার্লারে চলে যায় । সেখানেই সাজতে থাকে । কিন্তু লাবিবা মেকাপ করতে দেয়না । পরে এলার্জি হয় মুখে । ফেস পাওডার লাগায় মুখে । তানভীর ফোন দিচ্ছে । শারমিনের হাতে ব্যাগপত্র সবকিছু । ফোন বের করে দেখে ডলফিন নামে কেউ ফোন দিয়েছে । লাবিবার কাছে গিয়ে বলে —দোস্ত ডলফিন কে ? ডলফিন কল দিয়েছে ।
লাবিবা ফোন নিয়ে দেখে তিনবার কল । প্রথমবারে মিস করতে না করেছিলো আর তিনবারেও ধরতে পারেনি । এবার কি হপ্পে ? চতুর্থবার ফোন দিতেই টপ করে ধরে নেয় ।
—হ্যালো।
—কোথায় তুমি ?
—পার্লারে ।
–এখনো সাজগুজ শেষ হয়নি । ওহ তুমিতো আবার ডান্স করবে । কোন পার্লারে ?
—ওমেনস ফ্যাশন ।
—এতো দূরে কেনো গিয়েছো ? কাছাকাছি কোনো একটাতে গেলে কি হতো ?
—ঐগুলো ফুলফিল । তাই এখানে। আর এখানে মেকোভার সুন্দর করে করা হয় ।
—শেষ হয়নি ?
—আর একটু । পাচ মিনিট লাগবে ।
—ওকে আসছি আমি নিতে ।
দশমিনিটেই তানভীর পৌছে যায় । লাবিবাকে সিড়িতে নামতে দেখেই গাড়ির সাথে লেগে যায় । চোখ পুড়ো ছানাবড়া হয়ে যাচ্ছে । মনে মনে একটাই কথা ফিরে ফিরে আসছে “তুমি অন্যায় করেছো পুতুল বউ । তোমার এই রুপ নিয়ে তুমি বাহিরে বের হয়েছো । এই অন্যায়ের চরম শাস্তি হওয়া উচিত তোমার।” লাবিবা সামনে এসে দাড়িয়ে খুব স্মার্টলি বলে –চলুন স্যার ।
তানভীর আর কি যাবে । নিজেকে সামলাতেই ব্যস্ত। শারমিনের কথায় হুস ফিরে । –স্যার আপনিই ডলফিন ? আপনাকে ডলফিন কেনো বলে ? লাবিবা স্যার তোর পরিচিতো আগেতো বলিসনি । কি হয় তোর ? তানভীর কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না । লাবিবা মুচকি মুচকি হাসছে তানভীরের অবস্থা দেখে । মাথায় তার অনেক শয়তানি ঘুরছে আজ । খুব জালাতে ইচ্ছা করছে । তানভীর গাড়িতে ওঠো বলে গেইট খুলে দেয় পেছনে । শারমিন উঠে পড়লেও লাবিবা উঠে না ।ঘুরে এসে সামনের সিটে বসে পড়ে ।তানভীর কিছু বলতে পারে না শারমিনের জন্য । গাড়িতে আড় চোখে কয়েকবার তাকিয়েছিলো তানভীর লাবিবার দিকে । কিন্তু লাবিবা এক মনে তানভীরের দিকেই তাকিয়ে । দুষ্টু পুতুল এমন কেনো ভেবে পায়না তানভীর । তোমার কি লজ্জা করে না একটুও ? আমার সামনে সেজেগুজে এসেছো তবুও লজ্জা করছেনা ? আমি যখন তুমার কাছে যাই তখন তোমার মাথা সহ গায়েও পোকা ধরে । দূরে সরিয়ে দাও আমাকে। আমার রোমান্সের তেরোটা বাজাও। এমন করো কেনো দুষ্টু পুতুল…আমার যে হৃদয় চোখ মন সব জলে যাচ্ছে তোমার রুপে । এবার মুখ খুললো তানভীর । অনুনয়ের সূরে বলে —দুষ্টু পুতুল মুক্তমঞ্চে না গেলে হয়না ? হোস্টেলে ফিরে যাও প্লিজ ।
–কেনো ? এতো কষ্ট করে এমনি এমনি রেড়ি হয়েছি নাকি ? আমার পারফরমেন্স আছে স্যার । আপনার মনে হয় জানা নেই । আমাকে যেতেই হবে । তানভীর আর কিছু বলেনা । কারন এখন কিছু বললে শারমিন ও পিছু থেকে কথা ধরবে । গাড়ি থেকে নেমেই তানভীরকে কিছু বলতে না দিয়ে লাবিবা শারমিন দৌড়। এদিকে প্রফেসররা তানভীরকে ঘিরে ধরে –স্যার আপনি কোথায় গিয়েছিলেন …মন্ত্রী স্যার আপনার জন্য ওয়েট করছে ব্লা ব্লা ..।
তাই আর লাবিবার দিক যেতে পারে না । লাবিবা ভিতরে যেতেই চোখে পড়ে বাবুর । বাবু সামনে এসে দাড়াতেই চমকে উঠে লাবিবা । বাবু মাথায় হাত দিয়ে বলে —আরেব্বাস সুন্দরী যে এতো সুন্দরী আগে তো জানতাম না । অন্তর জইলা ছারখার হয়ে যাইতেছে । সুন্দরী তোমারে এখনি আমার পেতে ইচ্ছা করছে। চলো একটা রাউন্ড দিয়ে আসি বাইকে ভুম ভুম ।
লাবিবার এবার কান্না আসছে । তখনি মিলি জবা এসে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায়। এযাত্রায় বেচে গেলাম বলে মনে হয় । পেছনে তাকিয়ে দেখে বাবু ডাকছে –এই সুন্দরী কোথাও যাও ..চলোনা একটা রাউন্ড দিয়ে আসি বাইকে । অনেক কিছু দিবো চলোনা । লাবিবা জোরে হাটতে থাকে । যেইনা হাত ধরতে যাবে তখনি চিৎকার দিয়ে উঠে লাবিবা । স্টেজের সামনে উঠতে যাচ্ছিলো তানভীর । চার সিড়ির তিন সিড়িতে পা রাখতেই হালকা চিৎকারের আওয়াজ শুনে পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে লাবিবা সবার থেকে একটু দুরে ভয়ার্ত চোখে দাড়িয়ে । শারমিনরা এগিয়ে গিয়ে লাবিবাকে ধরে । তানভীর স্ট্রেজে না উঠে লাবিবার কাছে চলে আসে । লাবিবার সামনে গিয়ে হাত ধরে সামনে এনে বলে —চিৎকার করলে কেনো ? কি হয়েছে বলো । কেউ কিছু বলেছে ? অসভ্যতামি করেছে ? জবা বলে উঠে —স্যার বাবু ভাই সুন্দরী সুন্দরী বলে ডাকছিলো । বাইকে উঠার অফার দিচ্ছিলো । লাবিবা কেদে ফেলে এবার । তানভীর দু গালে হাত রেখে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে বলে
—উত্তর দেওয়া শিখো । তুমার হাজবেন্ড মার্সিডিজ ইউজ করে । তুমি কেনো ঐ ছোট বাইকে বসতে যাবে বলোতো ? কান্না অফ করো নাহলে কাজল নষ্ট হবে । পরে আবার আমার দুই নাম্বার বউকে বেশি খারাপ দেখতে লাগবে । দুই নাম্বার বউয়ের কথা শুনেই রাগ উঠে যায় লাবিবার । সরে দাড়িয়ে শারমিনদের নিয়ে প্রস্থান করে। তানভীর থ খেয়ে যায় । এতো তেজ কেনো মেয়েটার ? পারফর্মেন্সের আগে লাবিবা চুপ চাপ বসে বসে ফুলছে আর সবার পারফরমেন্স ইনজয় করছে । একদমি ভালো লাগছেনা । আমি যেনো তার দ্বিতীয় বউ হওয়ার জন্য বসে আছি । বেশি খারাপ দেখতে আমি ? কক্ষোনা না । আপনার বিলাতি বধু সুন্দরী হলে আমিও সুন্দরী । আমিও কম না । উঠে গিয়ে কমন রুমে এসে নিজেকে ঠিক ঠাক করে নেয় একবার । কাজল আরো গাড় করে লাগায় । আয়নায় একবার নিজেকে দেখে বলে –আপনার বিলাতি বধুকে একবার দেখতেই হবে আমার স্যার কতোটা সুন্দরী সে। আমার থেকেও নাকি ___

লাবিবার সিরিয়াল আসলে মিউজিক যে প্লে করছে তার কাছে গিয়ে বলে — ভাইয়া পাঞ্জাবী ওয়ালা গানটা প্লে করেন তো ।
—আপু আপনার তো পিন্দারে পলাশের বন গানের নাচ করার কথা ।
—এতো কথা বলো কেনো ছেলে ? প্রিন্সিপালকে ডাক দিবো ? যা বলছি তাই করো।
ছেলেটা গান চেঞ্জ করে প্লে করে । লাবিবা স্ট্রেজে উঠে খুব ডিপলি স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা অস্বাভাবিক এক্সপ্রেশন বডি ল্যাংগুয়েজে ডান্স করতে থাকে । হিরোইন দের মতো এক্সপ্রেশন দেখে পুরো গাউন্ডে হিডিক পড়ে যায় । তানভীর যেনো বসে থাকতে পারছেনা‌। ইচ্ছে করছে উঠে গিয়ে থাপ্পর দিয়ে নামিয়ে ফেলতে স্ট্রেজ থেকে । বেদ্দপ মেয়ে এইভাবে এতোগুলো লোকের সামনে কিভাবে নাচছে ..লজ্জা বলতে কি কিছু নেই নাকি । এই মেয়ে হবে আমার বউ। মান সম্মান সব শেষ হয়ে গেলো । লাবিবা স্ট্রেজ থেকে নামতেই চারিদিকে ছেলেরা চিল্লাতে থাকে
আগুনরে আগুন নাচলো রে ..জ্বলে গেলাম রে জ্বালিয়ে দিলো রে। তানভীর দু হাতে কানচেপে ধরেও রাগ থামাতে পারছেনা । অতিথিদের এক্সকিউজ মি বলে উঠে পড়ে তানভীর । ভার্সিটির ভিতরের দিকে যেতে থাকে । কমন রুমে গিয়ে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায় তানভীরের। বাবু আর লাবিবা একটা ফোন নিয়ে লাফালাফি করছে । লাবিবা ধরতে গিয়েও ধরতে পারছেনা । আসলে বাবু ধরতে দিচ্ছে না । তানভীর রেগে জোরে বলে —কি হচ্ছে এখানে ??
লাবিবা তানভীরের কাছে এসে বলে —আমার ডান্স ভিডিও করেছে বাবু ভাই । তানভীর বাবুকে বলে —এসব কি বাবু ? ভিডিও যেনো না করা হয় এই দায়িত্ব তোমাদের দেওয়া হয়েছিলো আর তুমি ভিডিও করেছো । এটা মেনে নিতে পারছিনা আমি ।
—স্যার দেখুন আমরা তো আর ভাইরাল করতে যাচ্ছি না । ভালো লেগেছে তাই নিচ্ছি । ছোট বোন গুলোর নাচের ভিডিও আমার ফোনে থাকবে সমস্যা কি ? আমরা আমরাইতো ।
তানভীর লাবিবার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলে –সত্যি বাবু এলিজা অনেক সুন্দর ডান্স করে । ভিডিওটা আমারো দরকার বুঝলে ….সময়ে অসময়ে দেখলে ভালো লাগবে । দেখি আমার ফোনে ট্রান্সফার করোতো । তুমিই তো ভিডিও করেছো তাইনা ? অন্য কারো কাছে তো আর পাচ্ছি না ।
বাবু ডেভিল স্মাইল দিয়ে এগিয়ে আসে ফোন নিয়ে —জি স্যার আমার কাছেই পাবেন ।
— থ্যাংক ইউ ।
তানভীর ফোন নিয়ে নিজের ফোনে ভিডিও টা ট্রান্সফার করে। ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে —বাবু আর ভিডিও করো না । ছোটরা কি শিখবে বলোতো …প্রোগ্রাম সামলাও । বাবু চলে যেতেই কমন রুমের ডোর লাগিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে লাবিবাকে । গালের নিচে জঘন্য ভাবে কামড় দিতেই লাবিবা লাফিয়ে উঠে চিল্লানি দিয়ে । দুরে সরে যেতে চাইলে তানভীর নিজের সাথে চেপে ধরে । লাবিবা চোখে চোখ রাখতে পারে না । সে কি করেছে সে বুঝতে পারছে । চোখ বন্ধ করে নিলে তানভীর রেগে বলে —লুক এট মি । একদম চোখ নিচে নামাবে না । আমি বলেছিলাম হোস্টেলে ফিরে যেতে । শোন নি । ডান্স করতে দিয়েছি বলে এভাবে ডান্স করবে?? ছেলেদের মাথা পাগল করা তাইনা ? আজ থেকে তোমার ডান্স বন্ধ। ইচ্ছে করলে দরজা বন্ধ করে করবে নয়তো আমাকে ডাকবে আমি দর্শক হবো । মনে যেনো থাকে ।
তানভীর লাবিবাকে ছেড়ে চলে যেতে নিলে টেনে আবার নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয় । কাদো কাদো ফেইসে বলে —সরি।
—মানবো না ।
—সরি তো । প্লিজ । আর হবে না । তবে ডান্স করবোনা দুইটা শর্তে । রাজি থাকলে বলুন ।
—বলো ।
—সত্যি বলবো ?
–হুম
—আজকের বাকি সময়টা আমাকে আপনার সাথে সাথে রাখবেন ।
—ওকে । আর ?
—আর..সত্যি করে বলতে হবে আমি সুন্দর নাকি আপনার বিলাতি বধু সুন্দর ? দেখুন আমিও কিন্তু সেজেছি । শাড়ি পড়েছি । বলুননা..প্লিজ।
একমনে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে লাবিবার দিকে । তারপর বলে —আমার বিলাতি বধু হচ্ছে কালো গোলাপের কলি । আর তুমি হচ্ছো ফুটন্ত কালো গোলাপ । কলির এক সৌন্দর্য আর ফুটন্ত ফুলের আরেক সৌন্দর্য। তবে বরাবর ই কলির থেকে ফুটন্ত কালো গোলাপ ই নজর কাড়ে ।
—-আমি ওর থেকে সুন্দর তো ?
—হুম । সুন্দরী । এর জন্য এরকম করলে তুমি ??
লাবিবা মুখে হাসি ফুটিয়ে তানভীরের কলার চেপে বলে —নাতো । আমি শুধু দেখালাম আমিও পারি ।
তানভীর লাবিবার গলা চেপে ধরে বলে
–মেরে ফেলবো একদম বলে দিলাম ।

To be continue ___

®লাবিবা___?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here