আসক্তি #Mr_Arrogant_4,পর্ব_১৪

0
1803

#আসক্তি #Mr_Arrogant_4,পর্ব_১৪
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

?
পুরো পার্ক এখান থেকে ওখানে দৌড়াচ্ছে নীল আর সুবহা। নীলের সাথে যেন সুবহাও বাচ্চা হয়ে গেছে। নীলের সাথে সব গুলো রাইডে চড়ছে ও আর সাথে রওশনকেও জোর করে নিজেদের সাথে নিচ্ছে।‌ অন্যদিকে ওদের পিছু দৌড়ে, ওদের সামলিয়ে হয়রান হচ্ছে রওশন। দু হাত ভর্তি বিভিন্ন জিনিস ওর। জুস, চিপস, পপকর্ন, আইসক্রিম সবকিছু আধা আধা খেয়ে রওশনের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে ওরা। এখন এগুলো পুরো খাওয়ানোর জন্য ওদের দুজনের পিছু পিছু ছুটতে হচ্ছে রওশনকে।

কিছুক্ষণ আগেও রওশন আর সুবহাকে নিয়ে রোলার কোস্টারে উঠেছিল নীল। ওটা থেকে নেমে নীল ঠিক থাকলেও সুবহার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণের জন্য যেন মাথা উঁচু করতে পারছিল না ও। চারপাশটা যেন ভনভন করে ঘুরছিল। ওর অবস্থা দেখে নীল হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল, আর রওশন! ওর অবস্থা আরো করুণ। এক সাথে দু দুটো বাচ্চা সামলাতে হচ্ছে ওকে।

একজনের পিছু দৌড়াতে দৌড়াতে অবস্থা খারাপ, আরেক জনকে রাইড থেকে নামার পর সামলানোর জ্বালা।

কিন্তু এতো কিছুর মধ্যে সুবহা আর নীল বেশ ইন্জয় করছে, শুধু মাত্র বেচারা রওশনেরই শান্তি নেই।

এখন ওরা এসেছে ওয়াটার স্লাইডে, স্লাইড করতে। নীল আগে আগে দৌড়ে এসে বোটে চড়ে বসে। সামনে রওশন আর সুবহা দাঁড়িয়ে। রওশন এবার ভেবে রেখেছে যে ও‌ উঠবে না এসবে। এখানে দাঁড়িয়ে ও সুবহা আর নীলের উপর খেয়াল রাখবে। অন্যদিকে রওশন উঠছে না দেখে সুবহাও দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দুজনকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীল দুজনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে।

নীলঃ তোমরা উঠে বসছো না কেন?

রওশনঃ আমি উঠবো না। তুমি আর সুবহা যাও‌ এটায়।

নীলঃ নাহ, একদম না। তোমাকেও যেতে হবে। যেতে হবে মানে যেতেই হবে।

নীল জেদ করছে। কিন্তু রওশন উঠবে না তো উঠবেই না। রওশনের বারন করায় নীল নাক ফুলিয়ে নেয় যার অর্থ ও রেগে গেছে। কিন্তু রওশন বুঝেও যেন না বুঝার ভান করে।

রওশনের এমন অবহেলিত ব্যবহারে নীল যেন রেগে নীল‌ কমলা হয়ে যাচ্ছে। রেগে গিয়ে হঠাৎ করেই ও রওশনের হাত ধরে টান দেয়। এমন আচমকা টানে রওশন টাল সামলাতে না পেরে বোটে আধশোয়া অবস্থায় বসে পড়ে।

ওকে এমন ভাবে পড়তে দেখে সাথে সাথে নীল আর সুবহা হেঁসে দেয়। রওশন যেন স্তব্ধ। এমন একটা পিচ্চি ছেলে ওকে এতোটা হেনস্থা করছে যা ওর নিজেরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। রওশন চোখ গরম করে তাকায় নীল আর সুবহার দিকে। ওর দৃষ্টির অর্থ হাঁসি বন্ধ করার নীরব হুমকি।

মুখে হাত দিয়ে হাসি থামানোর চেষ্টা করছে সুবহা কিন্তু তবুও রওশনের মুখের রিয়েকশন দেখে হাসি যেন থামছেই না বরং আরো বাড়ছে। নীল দুষ্টু হেসে তাকায় রওশনের দিকে তারপর আবার সুবহার দিকে।

কিছু একটা ভাবছে ও। সুবহা হাসছে অন্য কিছুতে খেয়াল নেই ওর। এ সুযোগে নীল সুবহাকে বোটে বসানোর জন্য ওর হাত ধরে টান দেয়।

রওশন উঠে সোজা হয়ে বসতে নিচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ করে সুবহা ওর কোলে বসে পরে।

হাতে টান পড়ায় সুবহা রওশনের কোলে পড়ে। ব্যালেন্স করার জন্য দু হাত দিয়ে রওশনের কাঁধ জড়িয়ে ধরেছে সুবহা। হঠাৎ এমন হওয়ায় দুজনেই থ হয়ে গেছে।

নীল দুষ্টু হাসছে। গলায় পোলারয়েড ক্যামেরা ঝুলানো ছিল নীলের। সব মুহুর্তের ছবি তোলার জন্য নিয়ে এসেছে ও। এখন অব্দি অনেক ছবি তুলেছে নীল। বেশির ভাগই রওশন আর সুবহার।

এই সময়টাও মিস করলো না নীল, সাথে সাথে, খ্যাচ খ্যাচ করে কত গুলো ছবি তুলে নিল ও।

সুবহা চোখ বড় করে ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রওশনের দিকে। অন্যদিকে রওশন চুপ হয়ে আছে, কিছুই বলছে না।

সুবহা তাড়াহুড়ো করে উঠার চেষ্টা করতেই নীল দু হাত তুলে চেঁচিয়ে বলে উঠে “লেট্স গোও” সাথে সাথে বোট নিচের দিকে স্লাইড করে নামতে শুরু করে।

সুবহা উঠতে গিয়েও আবার ধাম করে বসে পড়ে। কিন্তু এবার রওশন ওকে ধরে ফেলে। এক হাত দিয়ে সুবহার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে রওশন যেন সুবহা পড়ে না যায়।

নীল নিজের মতো জোরে জোরে চেঁচিয়ে স্লাইড ইন্জয় করছে।

কিছুক্ষণের মধেই ঠাস করে বোটটা নিচে নামে যার ফলে পানির ছিটে গুলো ওদের ভিজিয়ে দেয়।

?
হুইল চেয়ারে বসিয়ে অর্নবকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে আভি। ডক্টর চেকআপ করছেন তাকে। আভি সামনেই দাঁড়িয়ে। বেচারা সে তখন থেকেই চুপসে আছে। না জানি হাড়গোড় ভেঙ্গে যাওয়ার দুঃসংবাদ দেয় ডাক্তার সে ভয়ে আছে ও।

বেডে উবু হয়ে শুয়ে আছেন অর্নব। ডাক্তার এক্সরে রিপোর্ট হাতে নিয়ে চেক করছেন। পেছন থেকেই রিপোর্টের উপর উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে আভি, কিন্তু আগামাথা কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না।

রিপোর্ট চেক করেই ডাক্তার বলতে শুরু করলেন,,,

ডাক্তারঃ তেমন কিছু হয়নি, শুধু ফ্র্যাকচার হয়েছে।

আভিঃ তারমানে স্যারের হাড্ডি একদম পারফেক্ট আছে? ভাঙ্গে নি?( খুশি হয়ে ) গড! আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভেবেছিলাম মেরুদন্ড ভেঙ্গে স্যার কুঁজো হয়ে যাবেন।

আভির কথায় অর্নব রেগে গিয়ে সোয়া অবস্থাতেই বলতে শুরু করেন “তুমিতো সেই ব্যবস্থাই করেছিলে, আল্লাহ বাঁচিয়েছে আমায়।”

আভিঃ স্যার আমি সত্যিই ইচ্ছে করে করিনি।( অসহায় ভাবে ) তাছাড়া আপনার ক্ষতি হলে আমার কি হতো!( ঢোক গিলে ) পুলিশ থেকে সোজা আসামিতে ডিমোশন হয়ে যেত আমার। থ্যাংক গড আপনি ঠিক আছেন।

আর থ্যাংক ইউ ডক্টর, থ্যাংক ইউ সো মাচ! আপনি জানেন না আপনি আমার জীবন আমার ভবিষ্যত বাঁচিয়েছেন।

ডাক্তারঃ সত্যি বলতে আমি কিছুই করিনি। এটা জাস্ট সামান্য ইনজুরি ছিল। তাছাড়া মিস্টার অর্নব, আপনার বয়স হয়েছে, এ বয়সে একটু সাবধানে চলাফেরা করাটাই উচিত।

ডাক্তারের কথা অর্নব খাঁন যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। আসফাস করতে করতে বলতে শুরু করেন তিনি।

অর্নমঃ বয়স! মানে কি আপনার? এখনো পঞ্চাশও হয়নি আমার।

আভিঃ কিন্তু স্যার আমি আপনার আইডিতে দেখলাম আপনার বায়ান্ন বছর।( মিনমিন করে )

সাথে সাথে কুশন তুলে আভির দিকে ছুড়ে মারে অর্নব,,

অর্নবঃ চুপ কর বেয়াদব ছেলে! এখনো কিন্তু আমি ক্ষমা করিনি তোকে।

কুশনটা ক্যাচ করে চুপ হয়ে গেল আভি তারপর মুখটা কালো করে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিরবিরিয়ে বলল,,,
“বুইড়া ব্যাটা! এমন অবস্থাতেও এতো পাওয়ার দেখাচ্ছে” কথাটা অর্নব না শুনলেও ডাক্তারের কানে ঠিকই এসেছে। ফিক করে হেসে উঠলেন ডাক্তার। অর্নব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ডাক্তারের দিকে।

ডাক্তার সাহেব হালকা কেঁশে রিপোর্টে মনোযোগ দেন। পুলিশ মানুষের সাথে পাংগা নেওয়াটা সাংঘাতিক ব্যাপার। এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখাটাই ভালো মনে করছেন ডাক্তার সাহেব।

কিন্তু তবুও, অর্নব আর আভির ফাইটিং দেখে ডাক্তার সাহেব তার হাসি থামাতে পারেন না। দুজন পুলিশ, তাও সিবিআই অফিসার! তাদের এমন অদ্ভুত বিহেভিয়ারও হতে পারে আজ প্রথমবার দেখলেন তিনি।

?
ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটা ক্লোন মেশিন চোখে পড়ে যায় নীলের।

নীলঃ ওয়াও ক্লু ক্রেন মেশিন?( খুশি হয়ে )

সুবহাঃ কোথায়?( আসে পাশে খুঁজে )

নীলঃ ওইযে,,,( আঙুল দিয়ে ইশারা করে ) – দৌড়ে ও ক্রেন মেশিনটার সামনে চলে আসে।

রওশনঃ নীল দৌড়িও না, হেঁটে যাও,,,- নীলের পেছন যেতে যেতে চেঁচাচ্ছে রওশন।

সুবহাঃ ওয়াও! এটার ভেতরে কত সুন্দর সুন্দর টয়েজ।

নীলঃ তোমার কোনটা ভালো লাগে? ( সুবহাকে জিজ্ঞেস করলো )

সুবহাঃ সব গুলোই তো কিউট। কোনটা রেখে কোনটা বলবো। ( মুগ্ধ হয়ে দেখছে সুবহা টয় গুলো )

এতো গুলো জিনিসের মধ্যে নীলের চোখ যায় একটা ব্যাট’ম্যানের উপর।

নীলঃ ওয়াও! আমার এটা চাই। এখুনি বের করছি ওয়েইট।

নীল মেশিনে কয়েন দিয়ে খেলা শুরু করতে নিলেই রওশন বলতে শুরু করে।

রওশনঃ পারবে তুমি? ( ভ্রু কুঁচকে হালকা হেঁসে )

রওশন ওকে নিয়ে মজা করছে! ও ভাবছে নীল পারবে না! ভেবেই নাক ফুলিয়ে নেয় নীল। তারপর চোখ দুটো ছোট ছোট করে কপাল কুঁচকে রওশনকে বলতে শুরু করে ও।

নীলঃ ডোন্ট আন্ডারাস্টিমেট মি! নীল পারে না এমন কিছুই তৈরি হয়নি এই পৃথিবীতে।( গর্ব করে )

রওশনঃ পৃথিবী! আচ্ছা পৃথিবী দেখার জন্য তুমি একটু বেশিই ছোট হয়ে গেলে না?

নীলঃ বয়স দিয়ে কি আসে যায়? আমি ফোনেই পুরো পৃথিবী দেখে ফেলেছি। এটা মর্ডান এজ, এ যুগে ঘরে বসেই পুরো পৃথিবী ঘুরে ফেলা যায়।

রওশন চুপ হয়ে যায়। সুবহা মিটমিট হাসছে, রওশনকেও কেউ এভাবে কথার প্যাঁচে ফেলে চুপ করাতে পারে তা আজ প্রথম দেখলো ও।

রওশনঃ খেলায় মনোযোগ দাও। আমিও দেখি তুমি কত পারো হুহ! ( আড়ি চোখে তাকিয়ে )

নীলঃ দেখো আর শিখো।

নীল আর রওশনে যেন একে অপরের সাথে ইনভিজিবল যুদ্ধ করছে আর সুবহা দাঁড়িয়ে সেটা দেখছে। সীনটা বেশ ভালোই ইন্জয় করছে ও।

নীল রওশনের থেকে চোখ সরিয়ে নিজের খেলায় মনোযোগ দেয়। কিন্তু ওর পছন্দের ব্যাট’ম্যানের বদলে একটা গোলাপী রঙের খরগোশ উঠে আসে।

খরগোশটা দেখে মুখটা চুপসে যায় নীলের আর রওশন ফিক করে হেসে দেয়।

রওশনঃ ওয়াও নীল! বানিটা তো একদম তোমার মতো দেখতে।

রওশন খরগোশটা হাতে নিয়ে নীলের মুখের সামনে নিয়ে মিলিয়ে বলছে। রওশনের এমন কাজ যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো কাজ করছে নীলের। চোখ ভর্তি লাভা নিয়ে রওশনের দিকে তাকায় নীল। ছো মেরে রওশনের হাত থেকে বানিটা নিয়ে অন্য পাশ ফিরে মুখ ফুলিয়ে বলে ও।

নীলঃ এতো হাসার কিছুই নেই। সত্যিই বানিটা কিউট আর আমিও কিউট। এটা আমাকে স্যুট করে হুহ। আর এতো যখন হাসছো, তুমিই নিয়ে দেখাও। তোমার দ্বারাও হবে না কারণ এটা অনেক টাফ!

কথাটা বলে রওশনের দিকে তাকাতেই দেখে রওশন গেম খেলে ব্যাট’ম্যান নিয়ে নিয়েছে। সুবহা আর নীল হা হয়ে গেছে।

রওশন বাঁকা হেঁসে টয়টা নীলের হাতে ধরিয়ে দেয়। তারপর সুবহার দিকে ফিরে ওকে জিজ্ঞেস করে।

রওশনঃ তোমার কোনটা পছন্দ?

সুবহাঃ ওই সবুজ রঙের কচ্ছপটা।( আঙুল দিয়ে দেখিয়ে )

রওশন আবারো কয়েন দিয়ে গেমটা খেলে সুবহার জন্য কচ্ছপটা বের করে ওর হাতে ধরিয়ে দেয়।

পাশে একজন স্টাফ দাঁড়িয়ে ছিল। রওশন তার উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করে।

রওশনঃ আমার এই সব গুলো টয় লাগবে‌। প্যাকেট করে আমার গাড়িতে রেখে দিবেন।

স্টাফঃ জ্বি স্যার ঠিক আছে।

রওশনঃ চলো এখন দেরি হচ্ছে। ( সামনে হাঁটা ধরে )

রওশন সামনে হাঁটছে ওর পিছু পিছু নীল আর সুবহা। নীল এখনো অবাক হয়ে আছে। ওর থেকেও ইন্টেলিজেন্ট কেউ পৃথিবীতে আছে মেনে নিতে যেন কষ্ট হচ্ছে ওর। সুবহা নীলের এক্সপ্রেশন দেখে ওর মনের কথা ঠিকই বুঝতে পারছে।

সুবহাঃ কি হয়েছে নীল?

নীলঃ আমার রাগ লাগছে!( রওশনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল )

সুবহাঃ কেন? রওশন তোমাকে হারিয়ে দিয়েছে তাই?( হেসে )

নীলঃ মনে করিয়ে দিও না, কষ্ট হয়!( বুকে হাত রেখে )

নীলের এমন ড্রামা দেখে হেসে দেয় সুবহা। “ড্রামা কিং ”!- নীলের চুল গুলো হাত দিয়ে নেড়ে বলল ও।

To be continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here