আসক্তি #Mr_Arrogant_4,পর্ব_১৫

0
1847

#আসক্তি #Mr_Arrogant_4,পর্ব_১৫
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

?
রাত আটটা, রওশনের গাড়ি এসে থামলো সুবহার ফ্ল্যাটের সামনে। কিন্তু নামতে পারছে না সুবহা। নামবেই বা কিভাবে, নীল ওর হাত ধরে ঘুমিয়ে আছে।

পা দুটো রওশনের উপর তুলে সুবহার সাথে লেগে ওর হাত ধরে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে নীল। সুবহা কিভাবে নিজের হাত ছাড়িয়ে নামবে বুঝতে পারছে না। যদি নাড়াচাড়ায় নীলের ঘুম ভেঙ্গে যায় সে ভয় পাচ্ছে ও।

সুবহার পরিস্থিতি বুঝতে পারছে রওশন‌‌। নীলকে ডাকার জন্য তার দিকে তাকাতেই রওশন খেয়াল করে নীল চোখ পিটপিট করছে। নিশ্চয়ই ঘুমের ভান ধরে আছে ও, এটা বুঝতে আর বেশি সময় লাগলো না রওশনের।

রওশন তবুও না বোঝার ভান করে নীলের মাথাটা আলতো ভাবে ধরে সুবহার উপর থেকে সরিয়ে নেয়। সুবহাও নীলের দিকে তাকিয়ে হালকা হেঁসে নেমে যায়। সীটে মাথা এলিয়ে দিয়েছে নীল। সুবহা বের হয়েই দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর গাড়ির জানালায় ঝুঁকে রওশনকে বলে।

সুবহাঃ থ্যাংক ইউ রওশন আজকের দিনটার জন্য। আমার লাইফের সবচেয়ে সুন্দর দিন ছিল আজ। থ্যাংক ইউ।

রওশন কিছু বলল না শুধু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সুবহার দিকে। সুবহা মুচকি হেসে বিদায় দিয়ে চলে যায়। ও যেতেই এক চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে নীল যে সত্যিই সুবহা গিয়েছে কিনা।

রওশনঃ চলে গেছে ও। ( সোজা হয়ে বসে )

নীলঃ আই নো। ( উঠে বসে )

রওশনঃ তুমি না ঘুমিয়েও ঘুমের ভান ধরে ছিলে কেন?

নীলঃ কারন আমি ভয় পাই।( মুখ মলিন করে )

রওশনঃ ভয় পাও? কিসের ভয় নীল?

নীল আচমকা রওশনকে জড়িয়ে ধরে চুপ হয়ে যায়। রওশন বুঝতে পারে না হঠাৎ কি হলো নীলের। এতক্ষন তো ঠিকই ছিল।

রওশন নীলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর নীল চুপ করে রওশনকে জড়িয়ে ধরে আছে।

কিছুক্ষণ পর,,,

বাসায় আসতেই নীল‌ ওর খেলনার ব্যাগ গুলো নিয়ে দৌড়ে ওর রুমে চলে আসে। রুম অন্ধকার। নীল দরজা খুলে ব্যাগ গুলো নিচে রেখে সুইচ অন করে।

আলো জ্বলে উঠতেই বেডের দিকে তাকিয়ে ঘাবড়ে যায় নীল। ওর বিছানায় কেউ একজন ঘুমিয়ে আছে।

হাত পা ছড়িয়ে উবু হয়ে শুয়ে আছে লোকটি। নীল ভয়ে ভয়ে পা পিছিয়ে দরজার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজার পেছনে থেকেই উঁকি মেরে দেখছে ও লোকটিকে।

নীলঃ কে এটা? আমার রুমে কি করছে? চোর নাতো? হয়তো চুরি করতে এসে দেখে আমার বেডটা অনেক সফ্ট তাই ঘুমিয়ে পরেছে। ভাইয়াকে ডাক দিব? না না ভাইয়াকে ডাক দিলে যদি ও উঠে যায় তারপর আমার উপর অ্যাটেক করে? কি করবো তখন আমি?

হঠাৎ নীলের চোখ যায় দরজার পেছনে একটা লম্বা লাঠি রাখা। লাঠিটা হাতে নিয়ে নেয় নীল তারপর সাহস করে দরজার পেছন থেকে বেরিয়ে আসে।

নীলঃএই চোরটা আমার উপর অ্যাটেক করার আগে আমিই ওর উপর অ্যাটেক করে দিব, সেটাও ব্যাট’ম্যাট স্টাইলে।

ধীর পায়ে বেডের দিকে এগিয়ে যায় নীল। একদম বেডের সামনে গিয়ে উঁকি মেরে লোকটার চেহারা দেখার চেষ্টা করে ও কিন্তু দেখতে পায় না।

শুয়ে থাকা লোকটা হঠাৎ নড়ে উঠে। ঘুমের মধ্যে লাইটের আলো যেন সহ্য হচ্ছে না তার। বিরক্ত হয়ে ঘুমঘুম চোখেই চেঁচিয়ে বলতে শুরু করে সে,,,

>> কে লাইটটা জ্বালিয়ে আমার ঘুম নষ্ট করছে? উঠলে একদম ইনকাউন্টার করে দিব।

লোকটার কথায় আরো ভয় পেয়ে যায় নীল। ইনকাউন্টার করবে? তারমানে নিশ্চয়ই তার কাছে বন্দুকও আছে।

লাঠিটা আরো শক্ত করে ধরে নীল। লোকটা উঠলেই সোজা মাথায় দিয়ে বেহুঁশ করে দিবে।

লোকটা এবার আরও বিরক্ত হয়। এমন ভাবে বলার পরেও লাইটটা অফ করছে না কেউ। এবার রেগে চোখ দুটো খুলে উঠে বসে সে কিন্তু উঠতেই মাথায় যেন জোরে কিছু একটার আঘাত পেলো। সাথে পিচ্চি কন্ঠে “ চোর চোর ” বলে চেঁচানোর শব্দও কানে বাজছে।

লোকটা উঠতেই নীল তার মাথায় জোরে বারি মেরে বসে তারপর লাঠিটা ছিটকে ফেলে দিয়ে চোর চোর বলতে বলতে রুম থেকে দৌড়ে পালায় ও।

নীলের কন্ঠ শুনে দ্রুত নিজের রুম থেকে বের হয় রওশন। নীল এই দিকেই আসছে। এসেই রওশনকে জড়িয়ে ধরে ঘাবড়ে বলতে শুরু করে।

নীলঃ চোর চোর চোর, ভাইয়া আমার রুমে বড় একটা চোর।

রওশনঃ চোর?( অবাক স্বরে‌ )

নীল ভয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রওশনকে। শরীর সহ কাঁপছে বেচারার ভয়ে। রওশন নীলকে শান্ত করতে করতে সামনে তাকায়। রুমটা থেকে কেউ বের হচ্ছে। মানুষটা বের হয়ে এদিকে ফিরতেই অবাক হয় রওশন।

রওশনঃ আভি!

রওশনের মুখ থেকে নামটা শুনে নীল শান্ত হয়ে যায়। মাথা তুলে একপলক রওশনের দিকে তাকিয়ে পেছন ফিরে তাকায় ও।

সবে মাত্র কাঁচা ঘুম থেকে উঠা অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। চোখ দু’টো লাল চুল গুলো অগোছালো। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে বেচারার কপালে গোল করে আলুর মতো চাক হয়ে ফুলে আছে। রওশনের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আভির এ অবস্থা কে করতে পারে।

বিস্ময় দৃষ্টি নিয়ে তাকায় রওশন নীলের দিকে, আর নীল! বেচারা এখনো অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আভির দিকে।

?
কপালে আইসব্যাগ চেপে ধরে আছে আভি সামনেই রওশন আর নীল বসে আছে। নীলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে রওশনকে বলে আভি।

আভিঃ মানুষ ছেলে-মেয়ে এডপ্ট করে কিন্তু তুমি দেখি আমার জন্য নতুন ভাই এডপ্ট করেছো। বিষয়টা একটু বেশিই অ্যাডভান্সড হয়ে গেলো না?

রওশনঃ তেমন কিছুই না। এখন তোকে বিষয়টা বুঝাতে পারবো না কিন্তু সঠিক সময় আসলেই সব জানতে পারবি।

আভিঃ ঠিক আছে কিছু জিজ্ঞেস করবো না। কিন্তু এটা ( নিজের কপালে আঙ্গুল তাক করে ) এটার জন্য কি এক্সপ্লিনেশন আছে তোমার কাছে?

রওশনঃ ও ভয় পেয়ে গিয়েছিল তাই একটু,,,

আভিঃ ভয়? সিরিয়াসলি! আমি কি ভুত না শাকচুন্নী যে আমাকে ভয় পেয়ে গেছে।

নীল‌ এতক্ষন চুপচাপ মাথা নিচু করে ছিল কিন্তু আভির কথা শুনে অসহায় ভাবে বলতে শুরু করে ও।

নীলঃ আমি ভুত শাকচুন্নীকে ভয় পাই না। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম কোনো চোর এসেছে তাই নিজেকে প্রটেক্ট করার জন্য….( বলেই চুপ হয়ে যায় )

আভিঃ চোর? আমাকে চোর মনে হয়েছে? কোন এজ্ঞেল দিয়ে আমাকে চোর মনে হয়?

রওশনঃ হয়েছে তো এবার চুপ কর। আর চোর ভাবাটাই তো স্বাভাবিক। এভাবে রাত বিরেতে যারা লুকিয়ে বাসায় ঢুকে তাদের চোরই বলে।

নীলঃ ঠিক।

আভিঃ ওয়াও! দুজন টিমআপ করেছো আমার বিরুদ্ধে তাই না? ( অসহায় ভাবে ) সমস্যা নেই আমি একাই নিজের জন্য একশো। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন, এই ভোটকা বিড়ালটার নাম কি? ( নীলকে দেখিয়ে )

আভির এমন কথায় রেগে যায় নীল। তারপর নাক ফুলিয়ে রাগি স্বরে বলে ও।

নীলঃ আমি ভোটকা বিড়াল না নীল!

আভিঃ দেখো পিচ্চি আমি কালারের নাম জিজ্ঞেস করিনি তোমার নাম জিজ্ঞেস করেছি।

নীলঃ এটাই আমার নাম। নীললললল!!!!( আরো রেগে )

ওদের দুজনের এমন তর্কাতর্কিতে রওশন বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায় তারপর বলে,,,

রওশনঃ মাথায় বরফ লাগানো শেষ হলে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরিস। আরেকটা কথা, নীলকে একদম জ্বালাবি না।

রওশন তার রুমের দিকে হাঁটা ধরে। পেছন থেকেই আভি চেঁচিয়ে উঠে,,,

আভিঃ এখন কি আমার এই ভোটকা বিড়ালটার সাথে রুম শেয়ার করতে হবে? সিরিয়াসলি! ভাই!!

কিন্তু রওশন শুনেও না শোনার ভান করে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।

রওশন চলে যাওয়ায় আভি ভরকে গিয়ে কপালে একটু জোরে চাপ লাগিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ ব্যাথায় ককিয়ে উঠে ও।

আভিঃ ধীরে ধীরে কর আভির বাচ্চা!( নিজে নিজেকে বলল )

আভি সামনে তাকাতেই দেখে নীল ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আভিঃ এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

নীলঃ তোমাকে আমি কোথাও দেখিছি।( গভীর দৃষ্টি নিয়ে পর্যবেক্ষন করে )

আভিঃ ওহ সে কথা। হ্যাঁ দেখেছো হয়তো।‌ টিভিতে, বা কোনো ম্যাগাজিনে, অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায়। আসলে আভি রায়জাদা সব জায়গাতেই অনেক ফেমাস।( ভাব নিয়ে ‌)

নীলঃ তুমি কি সত্যিই সিবিআই অফিসার?( সন্দেহের দৃষ্টিতে )

আভিঃ অবভিয়াসলি! কেন?

নীলঃ দেখে মনে হয় না। তোমাকে জব দিলো কিভাবে তারা?

আভিঃ বাই এনি চান্স তুমি কি আমাকে ইনডিরেক্টলি ইনসাল্ট করছো?

নীলঃ‌ নাতো। আমি ডিরেক্টলি ইনসাল্ট করছি।

নীলের কথায় আভি হা হয়ে যায়। ছেলেটা কি পরিমান ধানিলঙ্কা সেটা যেন আন্দাজও হচ্ছে না ওর।

নীল চুপ করে উঠে নিজের নিজের রুমে দিকে চলে যায়। আভিও সাথে সাথে উঠে ওর পিছু পিছু যাচ্ছে আর ডাকছে ওকে।

আভিঃ লাল নানা হলুদ, কি যেন নাম ছিল তোমার? সবুজ, কমলা গোলাপী, বেগুনি,,, শোনো তো! – নীলকে রাগানোর জন্য এগুলো বলতে বলতে ওর পিছু হাঁটছে আভি। কিন্তু নীল কিছু বলছে না যেন খুব কষ্টে ধৈর্য্য ধরে আছে ও।

?
সকাল নয়টা,,,

মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির গতি এতক্ষন কম থাকলেও ধীরে ধীরে যেন বাড়ছে। ড্রাইভ করছিল রওশন। কিন্তু বৃষ্টির গতি বাড়তেই গাড়িটা সাইড করে দাঁড় করিয়ে দেয় ও।

এতো বেশি বৃষ্টিতে গাড়ি চালানো বিপজ্জনক। ড্রাইভারের জন্যও আর সাধারণ মানুষদের জন্যও। তাই ড্রাইভ করার সময় যদি কখনো বৃষ্টির গতি বেড়ে যায় গাড়ি থামিয়ে নেয় রওশন। অপেক্ষা করে বৃষ্টি থামার।

আজও তেমনটাই করলো ও। গাড়িটা সাইড করে থামিয়ে সীটে হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।

হঠাৎ ঝাপসা ঝাপসা কাউকে দেখতে পায় রওশন। ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখতেই ও বুঝতে পারে মানুষটি কে। একটা বন্ধ স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুবহা। বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য একদম দেয়ালের সাথে লেগে আছে ও তবুও বৃষ্টির পানি ওকে ভিজিয়ে দিচ্ছে।

গাড়ির পেছন থেকে দ্রুত ছাতাটা নিয়ে বেরিয়ে যায় রওশন। পা বাড়ায় সুবহার দিকে।

হাতের ব্যাগটা মাথার উপর দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো থেকে বাঁচার বৃথা চেষ্টা করছে সুবহা। চোখে মুখে বিরক্তি স্পষ্ট ওর।

সুবহাঃ সব সময় আমার সাথেই এমন কেন হয়? আমি বুঝিনা রিক্সাওয়ালা, অটোওয়ালা এদের শত্রুতা কি আমার সাথে? কখনোও বিপদের সময় এরা থামে না আমার জন্য। ভাই আমি কি টাকা দেই না তোদের? আমার সাথেই এমন পার্শালিটি কেন???

নিজে নিজে বকবক করছে সুবহা। হঠাৎ ও খেয়াল করে ওর উপর আর বৃষ্টির পানি পরছে না। অবাক হয় সুবহা‌।

পাশে কাউকে অনুভব করে ও। কোতুহল দৃষ্টি নিয়ে পাশে তাকাতেই দেখে রওশন দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতে ছাতা, যেটা অর্ধেক নিজের উপর আর সুবহার উপর ধরে আছে ও।

সুবহাঃ রওশন! – ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে উঠে সুবহার।

To be continued……

(গল্পটা এখন লিখতে ইচ্ছা করতাছে না তাই এইখানে অফ করে দিলাম। পরে দিব আবার। আমি দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here