রিস্টার্ট,পার্ট_৪৬

0
712

#রিস্টার্ট,পার্ট_৪৬
#পিকলি_পিকু

“আর কোনো পথ নেই ওদের শাস্তি দেওয়ার। ওদের মুখ থেকে সত্যি বের করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ” ওয়াজিরের কাছে এই কথা শুনে জাহিদের ও এটাই মনে হলো। ছোটবেলা থেকে সে শুনেছে আর মেনেছে একটা দরজা বন্ধ হয়ে গেলে অনেক গুলো জানালা খুলে যায়। কিন্তু সেই জানালা গুলোতে যে গ্রিল লাগানো থাকে তা কেউ বলে না। ওদের সাথে সেটাই হচ্ছে। অনেক গুলো জানালা ঠিকই খোলা আছে, কিন্তু গ্রিল লাগানো। আর এখন আস্তে আস্তে সেই জানালা গুলোও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ওয়াসি আর জাহিদ ভিডিও গেম খেলছিল। জাহিদ জিতে যাচ্ছিল। তাই সে ওয়াজিরের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেই ওয়াসি ওকে হারিয়ে দিল। জিতে যাওয়ার পর ওয়াসি উল্লাস করতে লাগলো। ওয়াজির হেসে ওয়াসিকে ঔষধ দিতে আসলো। তখনই জাহিদ বলল, “ঠিক এটাই। এটাই করতে হবে।” ওয়াজির বলল,

– কী?
– এই যে আমি যখন ভাবলাম আমি জিতে গেছি, আমি অমনোযোগী হয়ে তোমার সাথে কথা বলছিলাম।
– তো?
– আমি হেরে গেছি।
– এখন?
– একই জিনিস যদি আমরা ওদের সাথে করি?
– মানে?
– যদি ওদের দেখাই আমি হার মেনে নিয়েছি। আমি কেস করছি না। তা তো এমনিতেই সম্ভব না। এরপর ওরা কী করবে?
– ওরা অমনোযোগী হয়ে যাবে?
– হ্যাঁ।
– কিন্তু ওরা অনেক চালাক।
– একজন আছে, যে অনেক দুর্বল। শুধু দুর্বল না, তার দুর্বলতাও জানা আছে।

ওরা সারাকে টার্গেট করে আগালো। সারার দুর্বলতা ওদের জানা। সারার সোস্যাল মিডিয়াতে শুদ্ধের ব্যাপারে ইঙ্গিত পূর্ণ বিজ্ঞাপন দেখাতে থাকে ওয়াজির। বিভিন্ন প্রডাক্টে “শুদ্ধ ” “শুদ্ধতা” “পিউরিটি” এসব দেখে সারার মন দুর্বল হয়ে যায়। ফলাফল, সারার কল আসে জাহিদের কাছে। কিন্তু ওরা ভাবতেও পারেনি সারা একদম দেশেই চলে আসবে। জাহিদের জন্য কষ্টকর ছিল সারার সাথে কথা বলা। সেইসব দুঃসহ স্মৃতি যেন আবার ফিরে এসেছিল। হোটেলের রুমে লুকানো ক্যামেরা আর মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পাশের রুমেই ওয়াজির আর ওর সহকর্মীরা সব শুনছিল আর দেখছিল। সারার গলা চেপে ধরা দেখে ওরা কল করে জাহিদকে শান্ত করে। সবই নিখুঁত হয়েছে সেদিন। সারার কনফেশন ও ওদের হাতে। সেই ফুটেজ এখন সম্পাদন চলছে।

জাহিদের মানসিক অবস্থা ভালো না। তাই ওয়াজির পিপিকে ডেকে এনেছে। পিপি বুঝতে পারছে কী হয়েছে ওখানে। তবে জাহিদের মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলা যায়। আগে হলে একটা বড় প্যানিক অ্যাটাক আসতো। সব গন্ডগোল হয়ে যেত। কিন্তু এবার অনেক শান্ত ছিল। শেষে এসে সারার গলা চেপে ধরা টা ওর দোষ না, যেই কথা শুনেছিল তাতে যে কারো মাথা গরম হয়ে যাবে। জাহিদের একটা সেশন হচ্ছে বেনজিরের কাছে। সামনে আরো ঝামেলা আসবে। ওকে শক্ত থাকতে হবে।

ওয়াজির সব ফুটেজ প্রমাণ নিয়ে কেস করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তবে সিকান্দার সাহেব ওদের নিয়ে গেলেন অন্য জায়গায়। প্রধানমন্ত্রী সাইয়্যিদ আহমেদের কার্যালয়ের গোপন কক্ষে ওরা বসে আছে।

– সবই দেখলাম, জানলাম, বুঝলাম। কিন্তু ওরা আমার কাছে কেন? এটা বিচার বিভাগের কাজ।
– কিন্তু আপনি তো জানেন, বিচার বিভাগ কতটা বিকৃত।
– তুমি কী বলতে চাইছ ব্যর্থ?
– সিস্টেম ব্যর্থ। আপনি চাইলে এটা ঠিক করতে পারেন। ওরা এর আগেও কেস করতে গিয়েছিল, কেস নেয়নি।
– এবার কেস নিতে বলব।
– কেস করে কয়দিন ঘুরবে? একটা স্কুল আছে, সেই স্কুলের ভেতর তার ছাত্র ছাত্রীরা অত্যাচারিত হয়, ছাত্রী ধ*র্ষিত হয়। কিন্তু বিচার হয় না কারণ দোষীরা ক্ষমতাধর।
– তুমি কী চাও? আমি ওদের ধরে নিয়ে আসি? এরপর? সবকিছুর একটা প্রক্রিয়া আছে। ওদের ধরে আনার পর কী হবে? যেই মেয়েটার কথা বলছ ও অনেক বছর আগেই মারা গেছে। ওর দেহাবশেষ অবশিষ্ট নেই। আইন প্রমাণে বিশ্বাস করে। এই মেয়েটির এই জবানবন্দি কোর্টে মিনিটেই খালাস হয়ে যাবে কারণ এটা অনুমতিতে হয়নি। বলতেই পারে ইডিটেড। কিন্তু আমি জানি এটা সত্য। কোর্টের সিদ্ধান্ত তো আর প্রধানমন্ত্রী নেয় না, বিচারপতি সেখানে আসা প্রমাণ দেখেই নেয়। অনেকটা অংকের মতো। দুই এ দুই এ চার। কিন্তু সবগুলো দুই কোথায়?

সিকান্দার সাহেব চুপ করে থাকেন। এতদূর এসেও ওদের করার মতো কিছুই নেয়। জাহিদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। ওয়াজির বুঝতে পারে ও ভেঙে পড়েছে। জাহিদ পিছন ফিরে হেঁটে চলে আসছে, সিকান্দার সাহেব আর ওকে আটকাচ্ছে না। দরজা পর্যন্ত যাওয়ার পর জাহিদ আবার ফেরত আসে,

– আচ্ছা, যদি প্রমাণ পাওয়া যায় আমাদের উপর অত্যাচারের তবে কী ওরা শাস্তি পাবে?
– পাবে। তবে মেয়েটি এই ভিডিওতে যা বলেছে তা ও কোর্টে বলবে না।
– না, মেয়েটির কথা না। আন্ডারগ্রাউন্ডে যে ডার্ক রুম ছিল সেখানে যে অত্যাচার হতো, সেখানে তো প্রমাণ থাকবে।
– এত বছর পর?
– হয়তো আমার অত্যাচারের না, অন্য ছাত্রছাত্রীদের।
– তুমি কী চাচ্ছ?
– একটা নির্দেশনা, আপনার পক্ষ থেকে। অত্যন্ত গোপন থাকবে। এক ফোঁটাও যদি এই খবর বাইরে যায় তো ওরা সব সরিয়ে ফেলবে।
– তুমি কী করবে?
– সেই ডার্ক রুম কোথায় আমি জানি। এত অত্যাচার করা হয়, সেখানে অবশ্যই অনৈতিক কাজ হয়। সেখানে কিছু না কিছু পাবেন। আর সেজন্যই সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।

প্রধানমন্ত্রী সাহেব ভাবছেন সেই ব্যাপারে। সিকান্দার সাহেব উত্তেজিত হয়ে বললেন,

– একদম ঠিক। ওটা কী কোনো আর্মি ক্যাম্প? আমার আন্ডারগ্রাউন্ডে হেড কোয়ার্টারে অনেক কনফিডেন্সিয়াল তথ্য থাকে। আর সে কারণে আমি কাউকে ঢুকতে দেব না। তবে ওরা কী কেন ঢুকতে দেয় না?
– কিন্তু সিকান্দার, যদি কিছু না পাও?
– তবে ঐ ক্ষমতাবান লোকেরা আপনার চেয়ার কেড়ে নেবে? মনে রাখবেন, আপনি ওদের ক্ষমতার জোরে নয়, জনতার ভোটে এসেছেন। জনগণের জন্য এতটুকু তো আপনার করা উচিত। আপনি একজন সৎ নেতা।

কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর ওয়াজির বলল,

– জাহিদ, সত্যিই তুমি বলছ কিছু আছে ওখানে?
– অবশ্যই।
– আমি তো পাইনি।
– ওরা চোখের সামনেই সব খুলে রাখে, তবে দেখা যায় না।

পরদিন ভোরেই প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা স্বাক্ষরিত করে সেই কাগজ নিয়ে সিকান্দার সাহেবের বিশেষ টিম সেখানে জাহিদ সহ পৌছালো। ছাত্রছাত্রীরা ঢোকার আগেই তারা হাজির। আর স্কুলে ক্লাসের উদ্দেশ্যে আসা ছাত্রছাত্রীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তারপর ও সবাই ভীড় করছে। ম্যাগনেফিসেন্ট স্টাফরা চিৎকার চেঁচামেচি করছে। এটা কোনো স্কুলে কেউ আশা করেনি। ওয়াজির কে সার্চ টিমে দেখে অবাক হলো সবাই। নাদিয়ার প্রাক্তন কলিগ ওকে সাথে সাথে মেসেজ করে জানিয়ে দেয়। নাদিয়া রাহু সহ ম্যাগনেফিসেন্টের বাইরে অপেক্ষা করছে। এত বড় স্কুল সব জায়গায় সার্চ চলছে।

” আস্তে আস্তে! এটা স্কুল। একটা আঁচড় ও যাতে না লাগে কোথাও। আজ যাই হবে, পরবর্তীতে বাচ্চারাই এখানে ক্লাস করবে।” ওয়াজির ওর সহকর্মীদের এই কথা বলল। মেইন গেইটের দিকে চোখ পড়তেই ওয়াজির নাদিয়া কে দেখল। “ওয়াসি!!! ওয়াসি!!” ওয়াজির সেদিকে এগিয়ে গেল,

– কী হয়েছে? এখানে কী করছো?
– তোমরা কী করছো? ভেতরে কী হচ্ছে?
– সার্চিং। তুমি ভেতরে এসো না। বাড়ি যাও।
– এই শোনো, জাহিদ কোথায়?
– ওর জন্য চিন্তা হচ্ছে? ও ভালো আছে। আর ভেতরেই আছে। এখানে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।

এই বলে ওয়াজির ভেতরে চলে এলো। বাইরে প্রেস মিডিয়া চলে এসেছে।

” তবে কী আজই হচ্ছে ম্যাগনেফিসেন্টের উপর বহুল আকাঙ্ক্ষিত রেইড? আজকেই কী হবে ম্যাগনেফিসেন্টের পতন? তবে কী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাইয়্যিদ আহমেদ ম্যাগনেফিসেন্টের রাঘব বোয়ালদের বাগে আনলেন? সব খবর ম্যাগনেফিসেন্ট থেকে আপনার বসার ঘরে সরাসরি পৌঁছে দেবো, আমি নুসরাত। সঙ্গে থাকুন।”

সাংবাদিকের মুখে এই কথা শুনে ফাইয়াজের ইচ্ছে হলো তার চুলের মুঠি ধরে দুটো লাগিয়ে দিতে। গাড়ি থেকে নেমেই দেখলো গেইটে অনেক ভীড়। নাদিয়া ফাইয়াজ ওরফে রোহানকে বলল,

– ওরা ভেতরে। তুমি কী ঢুকতে পারবে? আমি তো আর টিচার নেই।
– চেষ্টা করব।
– আমিও ঢুকতে চাই।
– আসো।
– রাহু তুই বাইরেই থাক।

রাহু চিৎকার করতে লাগলো, “অরনী ঢুকিস না! ঐ লোকটা মানা করলো।” ফাইয়াজ নাদিয়ার হাত ধরে ওকে নিয়ে ঢুকে পড়লো ম্যাগনেফিসেন্টে।

এদিকে জাহিদ লাইব্রেরির পেছনে আন্ডারগ্রাউন্ডের সেই দরজাটা খুঁজছে। কিন্তু সেটা পাচ্ছে না। কোনো গোপন দরকার নাম নিশানা নেই। সিকান্দার সাহেব বুঝতে পারলেন দরজা টা আর এখানে নেই। ওয়াজির ওর ধৈর্য্য শক্তি হারিয়ে একটা কোদাল নিয়ে মাটিতে চালাতে লাগলো। কারণ ও জানে, আজকের পর ওরা আর জাস্টিস পাবে না। ওর এত দিনের সাধনা সব বিফলে যাবে। সিকান্দার সাহেব ওয়াজিরকে বারণ করতে লাগলো, “ইউ কান্ট ডু দ্যাট। রিল্যাক্স !!!” ওয়াজির না থেমেই পুরো গার্ডেনটা ধ্বংস করে ফেলছে। এর মধ্যেই একজন ম্যাগনেফিসেন্ট স্টাফ এসে বলল, “স্টপ ইট! দিস গ্রাসেস আর ইম্পোরটেড ফ্রম কোরিয়া!” ওয়াজির লোকটির দিকে তাকালো। তো এটা আসল ঘাস না। মানে এটা একটা পরত! ওয়াজির সাথে সাথে বাগানের সেই ঘাসের পরত উঠাতে লাগলো। জাহিদ ও যোগ দিল। সিকান্দার সাহেব সেই স্টাফ কে জোর করে সরিয়ে দিলেন। বাগান থেকে সেই ঘাস গুলো সরানোর পর জাহিদ আবার সেই গোপন দরজা খুঁজতে লাগলো। পুরোটাই মাটি! কোনো দরজা দরজা নেই!

পাশ থেকে ফাইয়াজ লুকিয়ে সব দেখছে। ফাইয়াজ সত্যিই সব চোখের সামনেই রাখে। দরজাটা ও এখানেই আছে। তবে ও এই দরজা বন্ধ করে রেখেছে। কবর দিয়ে দিয়েছে। নাদিয়া তাকিয়ে দেখছে জাহিদ আর ওয়াজির পুরো মাটি মাখা। ওর খারাপ লাগছে। কিন্তু কী বলবে ওদের। হঠাৎ ই জাহিদ সেখান থেকে দৌঁড় দিতে শুরু করে। ওয়াজির কিছু বুঝল না, তবুও দৌঁড় দিল ওর পেছনে। নাদিয়া ও সেদিকে যাচ্ছে। ফাইয়াজ এখনো খুব ঠান্ডা। কারণ ওর ব্যাক আপের ও ব্যাক আপ আছে। এত সোজাও না ওকে ধরা।

জাহিদ দৌঁড়ে লাইব্রেরিতে যায়। সেখানে লাইব্রেরির প্রতিটি টেবিলে সরিয়ে দেখতে থাকে। ওয়াজির ওর কাছে এসে ওকে থামাতে থামাতে বলল,
– শান্ত হও। আমাকে বলো। একসাথে খুঁজি।
– ঐ টা আসল দরজা ছিল। কিন্তু ওটা এখন বন্ধ। আরো একটা দরজা আছে।
– কোথায়?
– সেটাই খুঁজছি। মূল ডার্ক রুম টা এই লাইব্রেরির নীচেই ছিল। কিন্তু এর বিশেষত্ব এই যে এখানে আওয়াজ আসবে না।
– কেন?
– ওটা লুকানোর জায়গা। কোনো জ*ঙ্গি হামলা হলে, বা স*ন্ত্রাসীরা আক্রমণ করলে ছাত্রছাত্রীরা যাতে লুকাতে পারে। কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ডটা তুলনামূলকভাবে ছোট এটা। বেশী স্টুডেন্টের জায়গা হবে না। সে কারণে ব্যবহার হয়নি।
– আরেকটা দরজা কী লাইব্রেরিতেই তুমি শিওর?
– হ্যাঁ। তবে তখন সেটা বন্ধ ছিল। আমি ডার্ক রুম আর ডার্ক রুমের ওয়াশরুম পরিষ্কার করতাম। ওয়াশরুমটার কাছেই ছিল আরেকটা দরজা।
– ওকে। খুঁজো।

ওয়াজির আরো লোক এনে সেখানে খুঁজতে লাগলো। সবাই সুন্দর করেই খোঁজার চেষ্টা করছে। শুধু জাহিদ বিচলিত হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ওর নাদিয়ার দিকে চোখ গেল। নাদিয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছে না। ওয়াজির নাদিয়ার কাছে গেল,

– তুমি এখানে কী করে আসলে? তোমাকে না বাড়ি যেতে বললাম।
– আমার চিন্তা হচ্ছিল, তাই রোহানের সাথে এসেছি। এখানে তো দেখছি অবস্থা অনেক সিরিয়াস।
– প্লিজ, ও হাইপার হয়ে যাচ্ছে। আজকে ঐ পারবে সব ঠিক করতে।
– তোমরা কী শিওর এখানে কিছু পাবে?
– জাহিদ বলছে পাব।
– দেখো, তুমি পাওনি, ও কী করে পাবে?
– আমি আর জাহিদ আলাদা। জাহিদ এখানে পড়েছে। আমি পড়িনি।
– তো?
– আ’ম স্যরি, আমি পরে এক্সপ্লেইন করবো। এখনকার জন্য ওকে,
– দেখো, কিছু না পাওয়া গেলে পরে তোমরা কী সব দোষ ওর ওপর চাপাবে? তখন ওর কী হবে?
– কে বলছে এই কথা?

নাদিয়া গিয়ে জাহিদকে বসালো। “রিল্যাক্স! মাথা ঠান্ডা রাখো। ঠান্ডা রেখে চিন্তা করো কী কী বদলেছে এত বছরে। যেটা বদলেছে, নিশ্চয়ই তার পেছনে কারণ আছে।” নাদিয়ার কথা লজিক তো আছে। জাহিদ মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে লাগলো। এই টেবিল চেয়ার সবই এক জায়গায় আছে। এই বুকশেল্ফ গুলো ও বলা যায় এক জায়গাতেই আছে। শুধু অন্যদিকে ফেরানো। ওসব জায়গায় দরজা হলে যাওয়া আসা কষ্টকর হবে। আস্তে আস্তে আরো ভালো করে দেখতে থাকে জাহিদ। কী কী বদলেছে? লাইব্রেরিয়ানের রিসেপশন, এটা এত বড় ছিল না। আর এটা অন্যদিকে ছিলো। সেখানে এখন একটা টেবিল চেয়ার। জাহিদ আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল রিসেপশনের দিকে। রিসেপশনের পেছনের দেয়ালে একটা শেল্ফ আছে। সেখানে হাবিজাবি শো পিস। এটা নতুন সংযোজন। এখানে আগে একটা পোট্রেইট ছিল। জাহিদ সেদিকে এগিয়ে যায়। এরপর সেই শেল্ফটিকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু সেটা সরছে না। ফাইয়াজ মুখে হাত দিয়ে মুচকি হেসে সেই দৃশ্য দেখছে। জাহিদের সাথে একে একে আরো কয়েকজন যোগ দিল। কিন্তু সেটাকে সরাতেই পারছে না। এখন এটা তো পরিষ্কার এখানে কিছু একটা তো আছে। কিন্তু এটা খুলবে কী করে?

“আমার মনে হয় এটা গোপন দরজা। এর একটা চাবি আছে। কী হোল টা কোথায়? ” ওয়াজিরের কথা শুনে জাহিদের মনে হলো সত্যিই এখানে কিছু একটা আছে। ফাইয়াজ সব কিছু চোখের সামনেই রাখে। চোখের সামনেই সব ক্লু আছে। ডার্ক রুমের দরজাটাও চোখের সামনেই ছিল। চাবিটা ও থাকবে। ফাইয়াজ লাইব্রেরির বাইরে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে, “শুদ্ধ সত্যিই বুদ্ধিমান। চোখের সামনেই সব রাখা, কেউ খুঁজে পায় না। এই ওয়াজির ও পেল না। চাবিটা কে পাবে? শুদ্ধ না ওয়াজির? দেখি, কে আমার মতো বুদ্ধিমান?”

সিকান্দার সাহেব লাইব্রেরিতে ঢুকতেই ফাইয়াজের সাথে ধাক্কা খেল। ফাইয়াজ স্যরি বলে অন্যদিকে ফিরে গেল। সিকান্দার সাহেব সবার সাথে কথা বলে বুঝলেন ওনারা যা খুঁজছেন তা এখানেই আছে।

“আমার মনে হয় কী হোল আশে পাশেই থাকবে। বেশি দূরে না। একটু দাঁড়াও, এটা বেশিদিন আগের না তাই না? তাহলে কী হোল না, সুইচ ও থাকতে পারে।” সিকান্দার সাহেবের কথা শুনে ফাইয়াজ মুচকি হেসে ভাবে, “ইম্প্রেসিভ। অনেক কাছাকাছি। ”

জাহিদ আশেপাশে তাকিয়ে দেখে। সব এখানেই আছে। ওয়াজির বলল, “ঐ লাইব্রেরিয়ানটা কোথায় নাদিয়া? ওকে বল তো এখানে কী কী জিনিসের কী কাজ?” নাদিয়া ফাইয়াজ কে খুঁজতেই ওকে আর খুঁজে পেল না। ফাইয়াজ এখন লাইব্রেরির ভেতরেই বুকশেল্ফ গুলোর মাঝখানেই আছে। ও সামনে যেত, বিভ্রান্ত করতো, কিন্তু জাহিদ ওকে চিনে ফেলতে পারে। তাই লুকিয়ে থাকাই ভালো।

ওয়াজির কলম দানি, ফুলদানি উঠিয়ে উঠিয়ে দেখছে। জাহিদ জিজ্ঞেস করল,

– এসব দেখছ কেন ?
– কারণ আমি যদি সুইচ লুকাতাম, এসব জায়গায় লুকাতাম।
– কিন্তু ও তো সব সামনেই রাখে। আমি যদি ভুল না করি এসব ফাইয়াজ করছে। ও সবসময় সামনেই থাকে। সামনে থেকেই খেলে, কিন্তু প্রতিপক্ষ ওকে চিনতে পারে না
– হ্যাঁ। এসব ও তো সামনেই আছে।

জাহিদ খেয়াল করলো টেবিলের উপর একটা বেল আছে। লাইব্রেরি একটা নীরব জায়গা। এখানে বেল না থাকারই কথা। বেল মূলত কারো মনোযোগ আকর্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। মনোযোগ দিয়ে পড়তে আসা পাঠকদের মনোযোগ নষ্টের জন্য। তখনই জাহিদ টেবিলের রাখা সেই বেলটি সরিয়ে দেখতে চাইলো, সেটা জায়গা থেকে সরছে না। জাহিদ কোনো কিছু না ভেবে বেলটা বাজিয়ে দিলো। বেলের শব্দে সবাই জাহিদের দিকে তাকালো। জাহিদ বেলের দিকেই তাকিয়ে রইলো। আর ফাইয়াজ মুচকি হাসলো। আশেপাশে সব নিস্তব্ধ হয়ে গেছে বেলের শব্দে, বেলের শব্দ ছাড়াও হঠাৎ একটা তালা খোলার শব্দ হলো আর সাথে সাথে শেল্ফটা নিজের জায়গা থেকে একটু সরে গেল। ওয়াজির পেছনে তাকিয়ে দেখে শেল্ফটা একটূ সরে গেছে। সে দৌঁড়ে গিয়ে শেল্ফটাকে সরিয়ে দিয়ে সেই খালি ঘরটায় ঢুকে পড়লো। জাহিদ ওয়াজির কে কিছু বলার আগেই বেচারা পা পিছলে সোজা নীচে পড়ে গেল। সবাই অবাক হয়ে সেদিকে গেল। জাহিদ কাছে গিয়ে বলল, “কী হয়েছে?” নীচ থেকে ওয়াজিরের ভাসা ভাসা কন্ঠে বলছে, ” আমি পড়ে গেছি। ব্যথা পেয়েছি অনেক। আহ!!” সিকান্দার সাহেব বললেন,”একটু ধৈর্য্য ধরা যায় না?” সবাই তাদের ফোনের আলো জ্বালিয়ে সেদিকে গেলো। সবাই এখানে নামবে। জাহিদ সবাইকে থামিয়ে বলল, “নীচে লাইটের সুইচ থাকবে। ওয়াজির, তুমি ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে সুইচ টা খোঁজো। ” ওয়াজির আস্তে আস্তে উঠে সুইচ খুঁজে আলো জ্বালিয়ে দিল। সেই লাল আলোয় আলোকিত হলো পুরো ডার্ক রুমে। নরকের মতো লাল, নরকের শাখা এই ডার্ক রুম। ওয়াজির খানিকক্ষণের জন্য ভয় পেয়ে গেল এই আলো দেখে। এ যেন শয়তানের আস্তানা।

জাহিদের চোখের মণি সেই লাল আভায় রক্তিম হয়ে আছে। হ্যাঁ, এটাই সেই চিরচেনা ডার্ক রুম। ওপর থেকে বাকি লোকেরা এই আলো দেখে ভাবছে নীচে হয়তো আগুন লেগেছে। তাদের মধ্য থেকেই একজন চিৎকার করে বলল, “তুমি ঠিক আছো? ওয়াজির বলল, “হ্যাঁ, সব কেমন লাল লাল।” সবাই একে একে সিঁড়ি ভেঙে নীচে নামলো। কয়েকজন উপরেই আছে। জাহিদ নীচে এসে দেখল সেই পরিচিত ডার্ক রুমের লাল বাতি ছাড়া আর তেমন কিছুই আগের মতো নেই। আস্তে আস্তে জাহিদ এগিয়ে আসে। এখানে বসেই সানি আর ভিরাজ নীল ছবি দেখতো। কিন্তু এখন সেটা খালি। পাশেই একটা জায়গায় আজফার আর অর্ঘ্য ড্রা*গস নিতো। এদিকেই ওদের ড্রাগ*স আর নীলছবির ডিভিডি থাকতো। আরেকটু সামনে যেতেই জাহিদের মনে পড়ে যায় সেই বিভৎস স্মৃতি। হ্যাঁ, এখানেই প্রিয়মকে রে*প করা হয়েছিল। এখানেই ওদের টর্চার করা হতো। এই ঘরেই থাকতো ওদের টর্চারের নানা সরঞ্জাম। কিন্তু এখন কিছুই নেই। তবে একটা কম্পিউটারের রুম ছিল। সেখানেই ফাইয়াজ সবার ভিডিও রাখতো। শুধুমাত্র সেই কম্পিউটারের রুমটাই আছে। সেখানে অনেক গুলো মনিটর ও আছে। হয়তো এখান থেকেই ক্যামেরা দিয়ে পুরো স্কুলে নজর রাখে কেউ। হয়তো এই কম্পিউটারের ফাইল ফোল্ডারে থাকবে কারো গোপন রহস্য। ওয়াজির গিয়ে সাথে সাথে সেই কম্পিউটার খুলে বসে বিভিন্ন ফাইল খুঁজতে লাগলো। ফাইল গুলো নাম খুব অদ্ভুত ভাবে লেখা। হয়তো কোডে। ভেতরেও অনেক কোড। “এসব কী?” ওয়াজির বলল। সিকান্দার সাহেব এসব দেখে বললেন, “অনেক চালাক! ওরা প্রমাণ গুলো এখানে চোখের সামনেই রাখেনি। আবার রেখেছেও। ” জাহিদ বলল, “মানে?” সিকান্দার সাহেব মুচকি হেসে বললেন, ” এগুলো একেকটা কোড, পাসওয়ার্ড। আমার মনে এই কোড গুলো দিয়ে এই সব ভিডিও পাওয়া যাবে কোনো ক্লাউডে। ডিজিটাল স্টোরেজ। ” ওয়াজির উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ” তারমানে স্যার?” সিকান্দার সাহেব এক গাল হাসি নিয়ে সম্মতি সূচক মাথা নাড়েন। ওয়াজির অতি আনন্দে কান্না করতে থাকে। ওর মিশন সফল হয়েছে। ও দৌঁড়ে গিয়ে জাহিদকে জড়িয়ে ধরে। জাহিদ সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে নীরবে চোখের জল ফেলে। ওয়াজির চিৎকার করে বলে, “উই ডিড ইট!!!” জাহিদ শান্ত কণ্ঠে বলে, “ইয়েস, উই ডিড ইট।”

প্রমাণ হিসেবে কম্পিউটারের সেই সিপিইউ জব্দ করা হয়। অত্যন্ত নিরাপত্তার সাথে ওপরে তোলা হয় সেই সিপিইউ। আস্তে আস্তে জাহিদ আর ওয়াজির ও উঠে আসে। নাদিয়া ওদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। ওরা আসতেই নাদিয়া জিজ্ঞেস করে,

– কী হয়েছে জাহিদ?
– প্রমাণ পাওয়া গেছে।
– আলহামদুলিল্লাহ। এখন ওদের গ্রেফতার কবে করবে?
– ওটার পরীক্ষা চলবে ফরেন্সিক ল্যাবে, তারপর। তুমি এখানে কী করে এলে?
– এখানে লাইব্রেরিয়ান, ওর সাথেই এসেছি।
– উনি কোথায়?

ওয়াজির ও এসে বলল, “আসলেই তো, রোহান কোথায়? কতক্ষণ ধরে শুনছি ও আছে। ওকে তো দেখছি না।” জাহিদ ও বলল, ” ম্যাগনেফিসেন্টের এত বড় বিপদের দিনে ওদের ট্রাস্টিরা কোথায়? একজন ও নেই?”

এই কথা বলতেই ফাইয়াজ একটি মিষ্টি হাসি নিয়ে আসলো। ওয়াজির গিয়ে ওর সাথে হাত মেলালো, “তোমাকে খুঁজছিলাম। কোথায় ছিলে?”
ফাইয়াজকে দেখেই জাহিদের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। এটা তো ফাইয়াজ! সাথে সাথেই জাহিদ গিয়ে ফাইয়াজের কলার চেপে ধরে, “তুই শয়তান! জালিমের বাচ্চা! এতদিন কোথায় ছিলি!”
নাদিয়া আর ওয়াজির গিয়ে জাহিদকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। জাহিদ কী পাগল হয়ে গেছে? রোহানকে ধরেছে কেন? অবশেষে জাহিদ ফাইয়াজকে ছাড়লো। নাদিয়া জাহিদকে টেনে নিয়ে আস্তে আস্তে বলল,
– ও কী করেছে ? ওর সাথে এমন কেন করছো?
– ও কী করেছে! ও ফাইয়াজ! ও আমাদের প্রিয়মকে ধোঁকা দিয়েছে! ল*ম্পট! প্রতারক! ধ*র্ষক!
– তোমার ভুল হচ্ছে হয়তো। ও ফাইয়াজ না, ও রোহান।
– ও ফাইয়াজ!

ফাইয়াজ চুপ করে আছে। ওর মুখে একটুও চিন্তার ছাপ নেই। ওর সাথে আরো কয়েকজন কালো কোট পরিহিত লোক এসেছে। সিকান্দার সাহেব ওর কাছে এগিয়ে এসে বলল,
– কী হয়েছে?
– কিছু না। আমার উকিল কথা বলবে। আমি কোনো কথা বলব না।

সিকান্দার সাহেব ওর উকিলদের কাছে গেলো, ” আমরা ম্যাগনেফিসেন্টের ট্রাস্টি বোর্ডের উকিল। আপনারা কোনো রকম খবর ছাড়া হানা দিয়েছেন। বাইরে মিডিয়া ভীড় জমিয়েছে। এতে ম্যাগনেফিসেন্টের এত বছরের মান সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে।”
ওয়াজির এগিয়ে এসে বলল, “কী বলতে চান? সোজা কথা বলুন!”
উকিল একটি কাগজ বের করে বললেন, “সোজা বাংলায়, এখানে যদি কিছু না পাওয়া যায়? তারপর? ম্যাগনেফিসেন্টের হারানো মান তো ফেরত আসবে না। তখন আমার ক্লায়েন্ট মানহানির মামলা করবেন। শত কোটির মতো। তৈরী থাকুন।”

ফাইয়াজ আর ওর উকিলরা হেঁটে চলে আসছিল। নাদিয়া দৌঁড়ে গিয়ে ফাইয়াজ কে ধরল, “এই তুমি রোহান না? তুমি না সার্ভে করছিলে?” ফাইয়াজ নাদিয়াকে ছাড়িয়ে চশমা ঠিক করে বলল, “স্যরি অরনী। বাই দ্য ওয়ে, প্রিয়ম তোমার কথা বলতো। তুমি ওর বর্ণনার মতোই কিউট।” নাদিয়া রেগে ফাইয়াজকে চড় লাগিয়ে দেয়। ওয়াজির নাদিয়াকে ধরে আটকায়। জাহিদ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। প্রমাণ চোখের সামনেই আছে। ওখানে যা আছে সব দেখানো। ফাইয়াজ এটাই চেয়েছিল। আর ও ভাবছে ও জিতে গেছে। তাই এই কথা বলে গেছে। আর এদিকে ওরাও ভাবছে ওরা জিতে গেছে। কিন্তু সত্যি এটাই ফাইয়াজই ওদের ওখানে পাঠিয়েছে।

– সিকান্দার স্যার, ওরা আমাদের ঠকিয়েছে।
– তুমি প্যানিক করছো কেন? ও তোমাদের ভয় লাগাতে এসব বলেছে। প্রমাণ ওখানেই আছে।
– না স্যার! প্রমাণ ওখানে নেই। এসবই প্ল্যান। ও চাইতো আমরা ওটা জব্দ করি। ও একটা সাইকোপ্যাথ। ও এখানে থেকেই সব দেখেছে।
– তুমি ভয় পাচ্ছ কেন?
– স্যার, ও পিসি তে কোনো পাসওয়ার্ড দেয়নি। আমরা ঢুকতেই সব পেয়ে গেছি। মানে ও চাইতো আমরা ওটা পাই।
– তুমি খামোখা চিন্তা করছো। ল্যাব এ গেলেই বেরিয়ে আসবে,
– কিন্তু ওখানে কিছু নেই! সব চোখের সামনেই আছে। ও এত সহজে হার মানবে না।
– হোয়াট ডু ইউ মিন!

জাহিদ পুরো লাইব্রেরির সব গুলো বুক শেল্ফ থেকে পাগলের মতো বই ছুড়ে ফেলতে থাকে। সবাই তাকিয়ে থাকে। জাহিদ উন্মাদ হয়ে গেছে। নাদিয়া চিৎকার করতে থাকে , “থামো জাহিদ! থামো!!!” ওয়াজির ক্লান্ত হয়ে বসে আছে। আর কাকে কতক্ষণ আটকাবে? ফাইয়াজ দাঁড়িয়ে আছে, তবে ওর চেহারায় সেই নিশ্চিন্ত ভাব টা আর নেই। আস্তে আস্তে জাহিদ ও থেমে গেল। ফাইয়াজ মুচকি হেসে বলল, ” এই যে এসব নষ্ট হয়েছে, এসবের বিল আলাদা তোমার কাছ থেকে নেব। আন এম্প্লয়েড না তুমি?” জাহিদ ফাইয়াজের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, “এখানেই না সব? এখানেই রেখেছ তাই না?” ফাইয়াজ জোর করে হেসে বলল, “কিছুই নেই। বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নাও। সামনে তোমার আরো বিপদ আসছে।” জাহিদ রেগে গিয়ে আরো শেল্ফের বই ছুড়ে ফেলতে লাগলো। একটু পর জাহিদ খেয়াল করলো একটা অংশ, এই অংশ টা ওরা পড়ার সময় ছিলই না। জাহিদ সেখান থেকে একটা বই হাতে নিয়ে দেখল। এরপর পুরো শেল্ফটাই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। শেল্ফটা মাটিতে পড়তেই সবাই কানে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। আর ফাইয়াজ অনুভূতিহীন হয়ে তাকিয়ে রইলো। ওয়াজির আর ওর সহকর্মীরা জাহিদের দিকে এগিয়ে যেতেই অবাক হলো। কারণ এখানে শুধু বই না, আরো অনেক কিছুই আছে।

(চলব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here